১. অপারেশন তেলআবিব-১

১০

তেলআবিব সেক্রেটারীয়েট ভবনের প্রতিরক্ষা বিভাগ। বিরাট সিটিং রুম। কাল কার্পেটে মোড়া মেঝে। সোফা দিয়ে সুন্দর করে সাজানো ঘর। মাঝখানের সোফাটিতে বসে আছেন প্রধানমন্ত্রী স্যামুয়েল শার্লটক, তাঁর ডান পাশের সোফাটিতে রয়েছে ডেভিড বেঞ্জামিন এবং বাম পাশে আছেন এস্কোল। তারপর একে একে বসেছেন নিরাপত্তা ও কাউন্টার ইনটোলিজেন্স কার্যক্রমের জন্য দায়ীত্বশীল ‘সিনবেথ’ এর প্রধান জেনারেল শামিল এরফান,বিদেশে গোয়েন্দা কর্ম পরিচালসার প্রতিষ্ঠান ‘মোসাদ’ প্রধান মেজর জেনারেল লুইস কোহেন,মিলিটারী ইনটেলিজেন্স বিভাগ‘শোরুত মোদিন’এর প্রাধন জেনারেল মরদেশাই হড, রাজনৈতিক তথ্যাদির গোয়েন্দা কর্ম পরিচালনার প্রতিষ্ঠান ‘রিসুত’ এর প্রধান ইসাক রিজোক। ডেভিড বেঞ্জামিনের ডান পাশে বসেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে হায়ান এবং ইসরাইল সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ইসরাইল তাল। এ ছাড়া উপস্থিত আছেন ইসরাইল পার্লামেন্টের তিনজন প্রতিনিধি সদস্য।

ইসরাইলের সুপ্রীম সিকিউরিটি কাউন্সিলের এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী স্যামুয়েল শার্লটক। তিনি ধীরে ধীরে বললেন, ‘‘ইসরাইলের সুসন্তান উপস্থিত ভদ্রমহোদয়গণ, বিগত কিছু দিনের ঘটনা প্রবাহ আমাদের জন্য বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে তেলআবিবের নিরাপত্তা প্রধান মিঃ চেচিনের মৃত্যু, ওসেয়ান কিং জাহাজের ভয়াবহ র্দুঘটনা এবং জেরুজালেম ও ইলাতের ক্ষেপনাস্ত্র ঘাঁটির সর্বাত্মক ক্ষতি সাধন শুধু সামরিক দিক দিয়ে উদ্বেগের নয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিকে ও দুর্বল করে দিয়েছে। দেশের ভিতরে এবং বাইরে আমরা তীব্র সমালোচনা সম্মুখীন হয়েছি। ইসরাইলের সুমান ক্ষুণ্ণ হয়েছে অনেকখানি। এখানেই শেষ নয়, এক দুর্যোগের কালো মেঘ আমাদের পৃতিভূমিকে গ্রাস করতে আসছে। আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করবেন। মোশে হায়ান নড়ে চড়ে বসলেন। ফাইলটি নেড়ে চেড়ে সামনে ধরলেন। তাঁর গম্ভীর কন্ঠে ধ্বনিত হলো ‘‘ভদ্রমহোদয়গণ, আমাদের তথ্য সরবরাহকারী এজেন্সি সমূহ যে সব তথ্য সরবরাহ করছেন, যা আমার সামনে উপস্থিত আছে তার আলোকে বলতে হচ্ছে, সম্প্রতি পরিস্থিতির বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ মোড়া নিয়েছে। আপনারা জানেন, ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বহুপূর্ব থেকে একটি সুপরিকল্পিত ব্যবস্থার অধীনে ইহুদী তরুণ তরুণীরা আরব রাষ্ট্রসমূহে মুসলিম নামের ছদ্মবেশ নিয়ে মুসলমান হিসেবে বাস করছিল। আরব রাষ্ট্রসমূহের সামরিক ও বেসামরিক তথ্য সরবরাহের এরাই ছিল উৎস। এরা

নিজের জীবন বিপন্ন করে হলে ও দায়িত্বপালন থেকে পিছ পা হয়নি। ‘কামাল আমিন তাবিজ’ নামের ছদ্মবেশে এলিস কোহেন সিরীয় সেনা বাহিনীর যে তথ্যাদি সরবরাহ করেছিল, আপনারা তা জানেন। স্বীকার করতে হয়, তারই দেয়া তথ্যের উপর নির্ভর করে আমাদের সেনাবাহিনী ১৯৬৭ সালে গোলান হাইট দখল করতে পেরেছিল। এলিস কোহেনের মত হাজার হাজার ইসরাইল সন্তান পিতৃভূমির জন্য তথ্যাদি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু গভীর দুঃখ ও বেদাসান সাথে আমি আপনাদের জানাচ্ছি যে, মিসর থেকে জর্দান ও সিরীয়ার মধ্য দিয়ে লেবানন পর্যন্ত আমাদের যে স্পাই রিং ছিল, তা আজ ধবংসহয়ে গেছে। এই স্পাই রিং এ কার্য্যরত তিন হাজার ইহুদী যুবক, তিন হাজার পাঁচশত ছাব্বিশ জন ইহুদী নারী নিখোঁজ হয়েছে। এদের অনেকের লাশ পরে পাওয়া গেছে কিন্তু অধিকাংশের লাশ ও পাওয়া যায়নি। এছাড়া ‘মোসাদ’ এবং ‘শেরুত মোদিন’ এর ৫১ জন সুদক্ষ গোয়েন্দা কমী গত দু’বছরে প্রাণ দিয়েছে সীমান্তের ওপারে। সীমান্তের ওপারের এলাকা আমাদের জন্য অন্ধকার হয়ে গেছে।

এ অবস্থায় আমরা WRF (World Red Forces) এর সহযোগিতায় ফিলিস্তিন সংযুক্ত জনফ্রন্ট ও গণতন্ত্রী জনফ্রন্টের বন্ধুত্ব অর্জন করতে পেরেছিলাম এবং তাদের সহযোগিতায় নতুন ‘স্পাই রিং প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু সে প্রচেষ্টা ও আমাদের ব্যর্থ হয়েছে। সংযুক্ত জনফ্রন্টের চেয়ারম্যান জর্জ বাহাশ ছাড়া ফ্রন্টের সব নেতৃবৃন্দই ধরা পড়েছেন এবং তাদের ৫ হাজার মুজাহিদ বন্দী হয়েছে। আমরা সংবাদ পেয়েছি, নেতৃবৃন্দের দু’ জন ছাড়া সকলেরই মৃত্যুদন্ড হয়েছে এবং বন্দী মুজাহিদরা ক্ষমা লাভ করে সবাই সাইমুমে যোগ দিয়েছে।

আমরা জনফ্রন্ট সূত্রে জানতে পেরেছিলাম, সাইমুমের অসংখ্য কর্মী ইসরাইলের অভ্যন্তরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। সাইমুমের কিছু আস্তানার সন্ধান আমরা পেয়েছিলাম, কিন্তু কোন ফল হয়নি। অদৃশ্য কোন সংকেতে ওরা

যেন হাওয়া হয়ে গেছে। এই পর্যন্ত বলে মোশে হায়ান চুপ করলেন। রুমাল দিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছে নিলেন তিনি।

পার্লামেন্ট সদস্য মিঃ রোজন বার্জ্জ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,‘‘আমাদের সুপরিকল্পিত গোয়েন্দা কার্যক্রমের এতবড় বিপর্যয় কেমন করে সম্ভব হলো? মাননীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অলৌকিক কিছু বিশ্বাস করাতে চাইবেন নাতো?

মোশে হায়ান আবার বললেন,‘‘অলৌকিক কিছু ঘটে নাই বটে, কিন্তু অলৌকিক ভাবেই আমাদের ‘স্পাই রিং’ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে, আর এটা সম্ভব হয়েছে ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা সাইমুমের দ্বারা। এই প্রতিষ্ঠানই আমাদের বন্ধু প্রতিষ্ঠান জনফ্রন্টকে  উৎখাত করেছে।

-এই সাইমুম কারা? ২৪ বছরে আরব রাষ্ট্রগুলো যার সন্ধান করতে পারেনি তারা তার ধবংস সাধন করলো কেমন করে? অপর একজন পার্লামেন্ট সদস্য মিঃ সিমমন উত্তেজিতেভাবে প্রশ্নটি করলেন।

মোশে হায়ান বললেন,‘‘ইসরাইল থেকে বিতাড়িত মুসলিম মোহাজের নিয়ে এই সাইমুম গঠিত। চীনের সিংকিয়াং থেকে বিতাড়িত আহমদ মুসা এই সংগঠনের প্রধান। ইখওয়ানুল মুসলিমুনের কর্মীরা এ সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছে। ইখওয়ানুল মুসলিমুনের স্বেচ্ছাসেবকরা এ সংগঠনের মূল শক্তি। ১৯৩৮ সালের যুদ্ধ অগ্রবর্তী ঘাঁটিগুলোতে মিসরীয় বাহিনীর পাশে অত্যন্ত সক্রিয় যে শত্রু ভয়হীন স্বেচ্ছাসেবকদের দেখেছিলাম আমরা, এরা তাদেরই উত্তরসূরী।

মোশে হায়ান থামলে জেনারেল শামিল এরফান বললেন, ওরা অত্যন্ত বিপদজনকে। মনে পড়ছে আমার সেই যুদ্ধের কথা আমি তখন ইষ্টার্ণ কমান্ডের দায়িত্বে ছিলাম। খবর এল, জেরুজালেমের পার্শ্ববতী ‘সুর বাহির এ ঘাঁটি করে একদল মুসলিম সৈন্য সামনে এগুবার চেষ্টা করছে। ধূর্ত ও কুশলী সেনানায়ক লেঃ কর্ণেল এরিক স্যারনকে ‘আমি এক ব্রিগেড সৈন্য দিয়ে সেখানে পাঠালাম। স্যারন কিন্তু ‘সুর বাহির’ আক্রমণ না করে ৫০ মাইল দক্ষিণে মিসরীয়ে বাহিনীর ডিভিশন পোষ্ট ‘বির সুবীরে’র দিকে চলে গেল। পরে আমি তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিয়েছিলঃ

‘‘আমার সুর বাহির আক্রমণ করি নাই, কারণ সেখানে ইখওয়ানুল মুসলিমুনের এক বিরাট স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী মোতায়েন ছিল। ইখওয়ানুল মুসলিমুনের স্বেচ্ছাসেবকরা নিয়মিত সৈন্যবাহিনী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের সাধারণ সৈন্যের মত এরা যুদ্ধকে আদেশ সাপেক্ষ নিছক এক দায়িত্ব মনে করে না বরং এ যুদ্ধ এদের কাছে এক ধর্মীয় আবেগের ফল এবং হৃদয়ের একাগ্রতা তারা এ যুদ্ধে নিয়োজিত করে। এ দিক দিয়ে তারা ইসরাইলের জন্য সংগ্রামরত আমাদের সৈন্যবাহিনীর সাথে তুলনীয়। কিন্তু পার্থক্য এই যে, আমরা আমাদের আবাসভূমি জাতীয় রাষ্ট প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছি, আর ওদের কামনা হলো মৃত্যু। শুধু মৃত্যু ভয়হীন নয়, মৃত্যু কামনাকারী এসব মানুষকে আক্রমণ করা হিংস্র বন্যজন্তুর মিছিলে হামলা চালানোর শামিল। আমি এই ঝুঁকি এড়াতে চেয়েছিলাম। তাদের ধর্মীয় আবেগ উদ্দীপ্ত হবার সুযোগ দেয়াকে আমরা উচিত মনে করি নাই। তাদের সে আবেগ অন্যদের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারত যার ফলে ষোল আনা লাভ হতো তাদেরই আর সর্বনাশ হতো আমাদের।’’ জেনারেল একটু থামলেন। তারপর আবার শুরু করলেন, ‘‘আমি আমার এ উদাহরণের দ্বারা কিন্তু সাইমুমের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণকে নিরুৎসাহ করতে চাইনি বরং তারা যে কত বিপদজনক তাই বোঝাতে চেয়েছি। সম্মিলিত আরব কমান্ড আণবিক বোমা দিয়েও আমাদের যা না করতে পারবে, এদের ধর্মীয় আবেগ আমাদের সর্বনাশ করতে পারবে তার চেয়ে বেশী। আরব রাষ্ট্রগুলোর সরকারসমুহের এবং সেনাবাহিনীর উপর সাইমুমের প্রভাব আমাদের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার। ওরা যদি ওদের ধর্মীয় আবেগ সকলের মধ্যে সংক্রামিত করতে পারে তা হলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারি না।’’ জেনারেল শামিল এরফান তার কথা শেষ করলেন।

জেনারেল মরদেশাই হড বললেন, ‘‘আরব সরকারসমূহ এবং তাদের সেনাবাহিনীর উপর সাইমুমের প্রভাবের সুস্পষ্ট প্রমাণ আমরা পেয়েছি। গত তিনমাসে লেবানন, সিরিয়া, জর্দান ও মিসর সরবার তাদের সেনাবাহিনীর মোট ৩০০ জন উচ্চ পদস্থ অফিসারকে বরখাস্ত ও অন্তরীণাবদ্ধ করেছে। এ ছাড়া ১৫০০ এর মতো ননকমিশনড অফিসার ও সাধারণ সৈন্যকে বরখাস্ত ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই সমস্ত উচ্চ পদস্থ ও ননকমিশনড অফিসারদের শতকরা নব্বই জনের সাথে আমাদের ছদ্মবেশী গোয়েন্দাদের সম্পর্ক ছিল। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, এটা কত নিখুঁত অনুসন্ধানের ফল। আমরা জানতে পেরেছি, সাইমুমের দেয়া তালিকা মোতাবেকই সেনাবাহিনীর ঐ সব অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা আরও জানতে পেরেছি মদ্যপান, নাইট ক্লাবে গমণ প্রভৃতিকে আরব সেনাবাহিনীর জওয়ান ও অফিসারদের জন্য অমার্জনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে আরব সেনাবাহিনীকে নতুন নৈতিক ভিত্তির উপর গড়ে তোলা হচ্ছে। ধর্মান্ধ সাইমুমের প্রভাবেরই যে ফল এটা, তা সহজেই অনুমেয়। আপনারা জানেন, নারী, নাইট ক্লাব আর মদ গোয়েন্দা কাজের প্রধান হাতিয়ার সাইমুমকে এ তিনটির কোন একটির আওতায় আনা যায় না বলে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম দুর্ভেদ্য বাধার সম্মুখীন হয়েছে। আমরা অনুভব করছি, আরবরা এতদিনে ব্যর্থতার তাদের প্রকৃত কারণ অনুধাবন করেছে। তারা সংশোধিত হচ্ছে ও পূর্ণগঠিত হচ্ছে। আর এ পূনর্গঠন ও সংশোধনের কাজে প্রধান ভূমিকা পালন করছে সাইমুম।’’ জেনারেল হড থামলেন।

সবাই মুখ নীচু করে চুপ বসে আছে। অখন্ড নীরবতা। দেয়ালের ঘড়িটি টিক্ টিক্ করে সময় নির্দেশ করে চলেছে। ধীরে মাথা তুললেন স্যামুয়েল শার্লটক। বললেন, IIt is now all clear, another war is coming near, কিন্তু পথ কি বলুন?’’

আবার নীরবতা। নীরবতা ভঙ্গ করে পার্লামেন্ট প্রতিনিধি মিঃ সিমসন বললেন, ‘‘আমরা ১৯৬৭ সালের পুনরাবৃত্তি করব।’’ মিঃ সিমসনের কথায় ইসরাইল সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল ইসরাইল তালের ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা খেলে গেল। কিন্তু কিছু বললেন না। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রধান ডেভিড বেঞ্জামিন এতক্ষণ চুপ করে বসেছিলেন। এবার তিনি ধীরকন্ঠে বললেন,‘‘১৯৬৭ সালে আমাদের সেনাবাহিনীর সামনে ছিল সিনাই এবং জর্দান উপত্যকার অনুকুল যুদ্ধ পরিবেশ।

দ্বিতীয়তঃ আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্পাই রিং বিধ্বস্ত এবং তৃতীয়তঃ আরব সেনাবাহিনীর নৈতিক উন্নতি ও তাদের সচেতনতা। সুতরাং ১৯৬৭ সালকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারব না।’’ তিনি একটু থামলেন। ধীরে ধীরে আবার শুরু করলেন, ‘‘আমাদের সামনে আজ তিনটি পথ খোলা আছে, এর যে কোন একটি আমাদের অনুসরণ করতে হবে।

১। অবিলম্বে আমাদের যুদ্ধে নামতে হবে এবং গঠনমুখী আরব বাহিনীকে ১৯৬৭ সালের মত বিধ্বস্ত করতে হবে। কিন্তু এটা যে যুক্তিসম্মত নয়, তা আমি আগেই বলেছি।

২। অধিকৃত সব আরব এলাকা ছেড়ে দিয়ে তাদের সাথে আপোষ করতে হবে। কিন্তু আমাদের জাতির কেউই এ সিদ্ধান্ত মেনে নিবে না বিধায় এ সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না।

৩। যুদ্ধ এড়াতে হবে এবং সেই সুযোগে আরব এলাকায় আমাদের ‘স্পাই রিং, পূনর্গঠিত করে একদিকে তাদের সব তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে অপরদিকে ভিতর থেকে তাদের মধ্যে বিভেদের বীজ বপন করতে হবে। বাইরে থেকে নয় ভিতর থেকে আঘাত দিয়েই শুরু মুসলমানদেরকে পর্যুদস্ত করা সম্ভব। আপনারা জেনারেল শামিল এর ফানের বক্তব্য থেকে বুঝেছেন সাইমুমকে বাইরে থেকে আঘাত দিয়ে ওদের শক্তিকে শুধু বাড়িয়েই তোলা হবে, ক্ষতি কিছু করা যাবে না সুতরাং শক্তির পথ পরিহার করে কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার। কিন্তু যুদ্ধ এড়াতে না পারলে কিছুই সম্ভব নয়। যুদ্ধ এড়াতে হলে জাতিসংঘের মাধ্যম গ্রহণ করেত হবে। জাতিসংঘের মাধ্যমে আরবদের সামনে আশার আলো জালিয়ে কালক্ষেপণ করা যেতে হবে। আমাদের সরকার এবং রাশিয়া, বৃটেন, আমেরিকা ও জাতিসংঘ চত্তরের সুযোগ্য ইসরাইল সন্তানরা এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ আছেন।’’

সবাই করতালি দিয়ে ডেভিড বেঞ্জামিনের শেষোক্ত প্রস্তাবকে সমর্থন জানাল। পন্থাটির খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আলোচনা চলল তাদের মধ্যে।

ঢং ঢং করে ঘড়িতে রাত ১১ টা বাজল। মিটিং সমাপ্ত করে সবাই উঠে দাঁড়াল। সবার মুখে হাসি কিন্তু জোর করে টেনে আনা রুটিন হাসি, তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না মোটেই। যুদ্ধ এড়ানোর আশা সবাই করছে, কিন্তু চাইলেই কি যুদ্ধ এড়ানো যাবে? তাছাড়া আরবদের আসন্ন সংগ্রামের প্রকৃতি কেমন হবে, তাই বা কে জানে? প্রধানমন্ত্রীর কথা সকলের মনে নতুন করে জাগছে – ‘‘দুর্যোগের এক কালো মেঘ আমাদের পিতৃভূমিকে গ্রাস করতে এগিয়ে আসছে।’’