১৭. ব্ল্যাক ক্রসের কবলে

চ্যাপ্টার

গেরিলা সদৃশ ওয়াট তার চাবুক থামাল। চিৎকারও থেমে গেল ওমর বায়ার। চিৎকার রূপান্তরিত হলো গোঙানিতে।
ওমর বায়ার দেহটা ওবু করে টাঙানো ঘরের ছাদের সাথে। ঝুলে পড়েছে তার দু’টি হাত নিচের দিকে। দেহ তার রক্তাক্ত। তার হাত, তার চুল বেয়ে ফোটা ফোটা রক্ত গিয়ে পড়ছে মেঝেতে।
ওয়াট তার চাবুকের রক্ত স্পঞ্জে মুছে চামড়ার তৈরী চাবুকের সাপের মত লকলকে লেজটা হাতে গুটিয়ে নিল। বাম হাত দিয়ে এ্যাসট্রে থেকে জ্বলন্ত সিগারেট তুলে নিয়ে এগুলো ওমর বায়ার দিকে। ওয়াটের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখে-মুখে চরম অধৈর্য্যের ভাব।
বাম হাতের সিগারেটটা সে চেপে ধরল ওমর বায়ার কাঁধে।
কেঁপে উঠল ওমর বায়ার দেহ। চিৎকার করে চোখ খুলল ওমর বায়া।
হো হো করে হেসে উঠল ওয়াট। মুখ বিকৃত করে সে বলল, এমন পেটানো হাতিকে পেটালেও সে কথা বলত। শেয়ালের বাচ্চা তোর মুখ খুলতে পারলাম না, তোর বিড়ালের বংশে জন্ম নেয়া উচিত ছিল।
একটু থাকল ওয়াট। তারপর গলার স্বরটা একটু নামিয়ে বলল, সামান্য দু’টো কথা বলে দিলে এসব তোর কিছুই হতো না। বল, তোর জমি জমার কাগজ-পত্র কার কাছে, কোথায় রেখেছিস? অথবা বল, ক্যামেরুনের কোর্ট থেকে তোর কেসটা তুই তুলে নিবি।
সমগ্র দক্ষিণ ক্যামেরুনের একমাত্র অবশিষ্ট মুসলিম ল্যান্ড ওমর বায়ার জমিদারী কুক্ষিগত করার এ দু’টি পথই খোলা আছে ‘কিং ডোম অব ক্রাইস্ট’ (KOC-কোক) এবং ‘আর্মি অব ক্রাইস্ট অব ওয়েস্ট আফ্রিকা’ (AOCOWA-ওকুয়া) এর কাছে। ওমর বায়ার জমি জমার কাগজপত্র যদি পেয়ে যায়, তাহলে ওমর বায়া প্রমাণ করতে পারবে না যে জমি জমা গুলো তার। তাছাড়া কাগজ-পত্র প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করে নিজেরা কাজে লাগাতে পারবে। ওমর বায়ার কাগজপত্রের যে কপি ক্যামেরুনের সহকারী সেরেস্তায় জমা ছিল তা ওকুয়া ইতিমধ্যেই গায়েব করে ফেলেছে। সুতরাং ওমর বায়ার কাছের কাগজপত্র একবার হাত করতে পারলেই কেল্লাফতে।
ওমর বায়া ধীরে ধীরে ডান হাতটা তুলে কাধের ফোস্কাটার উপর হাত বুলিয়ে বলল, তোমাদের আমি চিনি না। তোমাদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই, তোমরা এসব চাও কেন?
ওমর বায়ার ঝুলন্ত হাতটার উপর ফুটবলের মত একটা লাথি চালিয়ে ওয়াট বলল, আবার বলছিস সেই একই কথা। দুনিয়ার কেউ আমাদের মিত্র নয়, আমাদের মিত্র আমাদের স্বার্থ। আমাদের স্বার্থেই ‘ওকুয়া’ এখন আমাদের মিত্র, আর তুই আমাদের শত্রু। এবার আমার প্রশ্নের জবাব দে।
‘জবাব আমি বহুবার দিয়েছি’।
‘কি জবাব দিয়েছিস?’
‘তোমরা যা চাও তার কোনটাই পাবে না’।
চোখ দু’টি জ্বলে উঠল ওয়াটের। কিন্তু পরক্ষণেই শান্ত হয়ে বলল, তুই কি পাগল? জংগল ভরা ক্যামেরুনের কাম্পু উপত্যকায় ১০ হাজার একর জমি বড় হলো, না তোর জীবন বড়?
‘তুমি ফরাসী না?’
‘হ্যা। কেন?’
’১০ হাজার নয়, তোমার ফ্রান্সের ১০ একর জমি কি তুমি বৃটিশের হাতে তুলে দিতে পার?’
‘বৃটেন ভিন্ন রাষ্ট্র, তার হাতে আমার দেশের মাটি তুলে দেব কেন?’
‘তাহলে আমি দেব কেন?’
‘ওকুয়া’ কিংবা ‘কোক’ তো ভিন্ন রাষ্ট্র নয়। তোমার এ তুলনা ঠিক নয়।
‘ভিন্ন রাষ্ট্র নয় কেন? খৃষ্টান জাতিস্বার্থ নিয়ে ওকুয়া ক্যামেরুন ভুমি দখলের যে অভিযান চালাচ্ছে, তা পুরোপুরিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রসূত। এ রাজনীতির উদ্দেশ্য হলো ক্যামেরুনে একক খৃষ্টান জাতি স্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্যে মুসলিম জাতি-স্বার্থের সম্পূর্ণ বিনাশ সাধন করা। সুতরাং আমার যে দশ হাজার একর জমি তা শুধু জমি নয়, আমার অস্তিত্ব, আমার জাতির অস্তিত্ব। আমাকে তোমরা যা ইচ্ছা তাই করো, আমার জাতির অস্তিত্ব তোমাদের হাতে তুলে দিতে পারি না’।
চোখ জ্বলে উঠল ওয়াটের। হাতের চাবুক নাচিয়ে সে বলল, দিতে হবে তোমাকে। ‘ওকুয়া’ নয়, ব্ল্যাক ক্রসের হাতে তুমি পড়েছ। কথা তোমাকে বলিয়েই ছাড়ব।
‘ওকুয়ার হাতে মৃত্যু একটা, তোমাদের হাতে দুইটা মৃত্যু আছে না কি?’
‘বিদ্রুপ করছ ব্ল্যাক ক্রসকে?’ চোখ থেকে আগুন ঝরল ওয়াটের। লাফিয়ে উঠল তার চাবুক। বিদ্যুতের গতি নিয়ে ছোবল মারল ওমর বায়ার দেহে। এই ছোবলে ফিনকি দিয়ে রক্ত নামছে ওমর বায়ার দেহ থেকে। আঘাতের সাথে সাথে ওমর বায়ার মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে চিৎকার।
দু’হাতে বাট ধরে চাবুক চালাচ্ছে ওয়াট। ওমর বায়ার চিকার ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে এল। থেকে গেল একসময়। চোখ দু’টি তার বুজে গেল, ঝুলে পড়ল হাত দু’টি নিঃসাড় হয়ে। জ্ঞান হারিয়েছে ওমর বায়া।
থামল ওয়াট।
ঘরে দ্রুত প্রবেশ করল পিয়েরে পল। ব্ল্যাক ক্রসের প্রধান। বলল, ‘কি ওয়াট, মেরে ফেললে নাকি?’
‘ও কুত্তার বাচ্চা কথা বলবে না’।
‘কথা ওকে বলাতেই হবে, ওকে মেরে কোন লাভ নেই আমাদের মক্কেলদের’।
‘কেন ও ব্যাটা মরে গেলেই তো সব শেষ, ওদের বংশে তো আর কেউ নেই। সুতরাং ওর জমি পাকা ফলের মত এসে পড়বে আমাদের মক্কেল ‘ওকুয়া’দের হাতে’।
‘সেটা হলে ভালই হতো। কিন্তু সে পথ ও ব্যাটা বন্ধ করে রেখেছে। সে আদালতে যেমন দলিল পেশ করে রেখেছে যে, সে ক্যামেরুনের আদালতে হাজির হয়ে জমি হস্তান্তর না করলে কোন হস্তান্তর দলিল বৈধ বলে গণ্য হবে না, তেমনি সে আদালতে উইল রেজিষ্ট্রি করে রেখেছে যে, তার মৃত্যু ঘটলে বা সে ৫ বছরের বেশি নিখোঁজ থাকলে তার সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ‘ক্যামেরুন মুসলিম ট্রাস্টের’ হস্থান্তর যোগ্য মালিকানায় চলে যাবে। সুতরাং তাকে বাচিয়ে রাখতে হবে এবং আমরা যা চাই তা আদায় করতে হবে’। ঘরে প্রবেশ করতে করতে কথাগুলো বলল, ফাদার ফ্রান্সিস বাইক। ফাদার বাইক ‘কিংডোম অব ক্রাইস্ট’ (কোক) এর প্রধান এবং ‘আর্মি অব ক্রাইস্ট অব ওয়েস্ট আফ্রিকা’ (ওকুয়া)- এর প্রধান উপদেষ্টা।
‘ও কুত্তার বিড়ালের জীবন। নিশ্চিন্ত থাকুন ও মরবে না’। বলল ওয়াট।
পিয়েরে পল ওমর বায়ার নিশ্বাস পরীক্ষা করে বলল, ‘একে নামিয়ে নিতে বল ওয়াট’।
বলে পিয়েরে পল ফাদার বাইককে নিয়ে বেরিয়ে এল।
ওরা এসে প্রবেশ করল পিয়েরে পলের অফিস কক্ষে। বসল ওরা। চিন্তা করছে পিয়েরে পল।
‘কি ভাবছেন মিঃ পিয়েরে?’ বলল ফাদার বাইক।
‘ভাবছি ওয়াট ঠিকই বলেছে শয়তানটা কথা বলবে না। বৈদ্যুতিক আসনে বসিয়েও তার কাছ থেকে বথা আদায় করা যায়নি বৈদ্যুতিক। বৈদ্যুতিক শকও যে হজম করে, বাগে আসে না, তাকে আর কি শাস্তি দেয়া যাবে?
‘শয়তানটা এত শক্ত? অবিশ্বাস্য’।
‘অবিশ্বাস্য হলেও সত্য’।
‘কিন্তু কেমন করে?’
‘মুসলমানদের তো আপনি জানেন। শত্রুর হাতে মৃত্যু ওদের কাছে শাহাদাত। শাহাদাত ওদের পরম কাম্য বস্তু। মৃত্যুকে যারা এইভাবে আলিংগন করে, তাদের বাগে আনা কঠিন’।
‘তাহলে?’
‘সেটাই ভাবছি’।
‘শয়তানটা যে ব্যবস্থা করে রেখেছে তাতে তাকে রাজী করানো ছাড়া কোন পথ নেই’।
‘এই কাজটাই অত্যন্ত কঠিন। আচ্ছা বলুন তো, সবই তো আপনাদের দখলে এই দশ হাজার একর জমি না হলে আপনাদের হয় না?’
‘জমি দখল আমাদের লক্ষ্য নয়, আমাদের লক্ষ্য হলো মুসলমানদের উচ্ছেদ করা। দক্ষিণ ক্যামেরুনের কাম্পু উপত্যকার এই দশ হাজার একর জমি আমরা ছাড়তে পারি না দু’টো কারণে। এক, মুসলমানরা বসে থাকার জাতি নয়। তারা ঐ দশ হাজার একরকে কেন্দ্র করে যে শক্তি গড়ে তুলবে, তার মোকাবিলা করা আমাদের জন্যে কঠিন হতে পারে। কারণ দক্ষিণ ক্যামেরুনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানদের যে জমি আমরা দখল করেছি, তার আইনগত কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং মুসলমানরা যদি ঐ দশ হাজার একর এলাকাকে কেন্দ্র করে সোজা হয়ে একবার দাঁড়াতে পারে তাহলে শক্তি না হলেও আইনের যুদ্ধে তারা নামবে। সে যুদ্ধে আমরা খৃষ্টানরা পারবো না। দুই, আমরা জানতে পেরেছি ওমর বায়ার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে রাবেতা ও ওয়ামির মত মুসলিম সংস্থা। ওরা ক্যাম্প ভ্যালিতে ওমর বায়ার ঐ দশ হাজার একর জমিকে ভিত্তি করে নিরক্ষীয় গিনী ও গ্যাবন (যেখানে থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ প্রায় সম্পন্ন) এলাকার জন্যে শক্তিশালী একটি ইসলামী ঘাটি গড়ে তুলতে চায়। যে কোন মূল্যে এর পথ আমরা বন্ধ করতে চাই। সুতরাং ওমর বায়ার দশ হাজার একর জমি আমাদের কাছে আজ সমগ্র দক্ষিণ ক্যামেরুন, নিরক্ষীয় গিনী ও গ্যাবন এলাকার সমান মূল্যবান’।
থামল ফাদার ফ্রান্সিস বাইক।
‘বুঝেছি, মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন। ওমর বায়ার জমি আপনাদের পেতেই হবে’। বলল পিয়েরে পল, ব্ল্যাক ক্রস-এর প্রধান।
‘হ্যাঁ পেতেই হবে’।
‘এবং পেতে হবে ওমর বায়ার সম্মতিতে। তাকে ক্যামেরুনের কোর্টে গিয়ে নিজে সাক্ষ্য দিতে হবে যে, সে জমি হস্তান্তর করছে’।
‘ঠিক বলেছেন’।
‘অথচ জীবন দিতে হলেও ওমর বায়া জমি হস্তান্তরে সম্মত হবে না, একথা এ কয়েকদিন পরিষ্কার বুঝা গেছে’।
‘কিন্তু পথ একটা বের করতেই হবে?’
‘সে কথাই ভাবছি’। কথাটা বলা শেষ করেই পিয়েরে পল সোজা হয়ে বসল। আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার মুখ। খুশীতে চকচকে দেখাল তার চোখ দু’টোকে। যেন হঠাৎ বড় কিছু পেয়ে গেছে সে।
বলল, ‘মিঃ ফ্রান্সিস বাইক, পেয়ে গেছি’।
‘কি বলেন?’ খুশী হয়ে বলল ফাদার ফ্রান্সিস বাইক।
‘পেয়েছি সন্ধান এক অব্যর্থ অস্ত্রের’।
‘কি সেই অস্ত্র?’
‘বলব না, দেখাব’। বলে উঠে দাঁড়াল পিয়েরে পল।
তার সাথে সাথে ফ্রান্সিস বাইকও।

দরজা খোলার শব্দে চোখ খুলল ওমর বায়া।
দরজা খোলার সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠল ঘরে। ঘরের আলোর সুইচটি সম্ভবঃত কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল বোর্ডে। ওরাই ইচ্ছমত আলো জ্বালায় এবং নিভায়।
ওমর বায়ার ঘরটি ছোট্ট একটা সেল। ছাদ বিরাট উঁচুতে। উঁচু ছাদটির গায়ে লুকানো বৈদ্যুতিক বাল্ব থেকে আলো আসছে ঘরে। ঘরে একটা খাটিয়া এবং পানির একটা প্লাষ্টিকের জাগ ছাড়া আর কিছু নেই। খাটিয়াটা প্লাষ্টিকের, মেঝের সাথে এটে দেয়া।
ঘরের সাথে এটাস্ট একটা টয়লেট। অটোমেটিক ফ্লাস সিস্টেমের টয়লেট টিস্যু পেপার ছাড়া আর কিছুই নেই।
অর্থাৎ ঘরে এমন কিছু রাখা হয়নি যা দিয়ে আক্রমণাত্মক কোন কাজ বা মুক্তির কোন চেষ্টা ওমর বায়া করতে পারে।
দরজা খুলে গেলে ওমর বায়া শোয়া থেকে উঠে বসল। সে লক্ষ্য করল, আজ শোয়া থেকে উঠতে আর ব্যথা লাগল না গায়ে। ঘাগুলো সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। কিন্তু দেহের দুর্বলতা যায়নি। এ দুর্বলতার একটা বড় কারণ হলো, ওমর বায়া অনশন করেছিল শুকরের গোশত এবং শুকরের চর্বি দেয়া খাবারের বিরুদ্ধে। ব্ল্যাক ক্রস কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে খাবারের মেনু পাল্টাতে রাজী হয় নি। কিন্তু ওমর বায়া তিনদিন অনশনের পর তারা নতি স্বীকার করেছে। শুকরের গোশত ও শুকরের চর্বিযুক্ত খাবার সরবরাহ বন্ধ করা সহ হালাল খাদ্য সরবরাহ করার পর ওমর বায়া অনশন ভেঙেছে।
খাবার নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল ডুপ্লে। কয়েকদিন পর ডুপ্লেকে দেখে বিস্মিত হলো ওমর বায়া।
ডুপ্লেই শুরু থেকে ওমর বায়ার ঘরে খাবার সরবরাহ করে। কিন্তু ওমর বায়া অনশন করার সময় থেকে সে বেশ কয়দিন ছিল না। ডুপ্লে বেশী কথা বলে। ওমর বায়া তাকে পছন্দ করে। তার তুলনায় অন্যেরা যন্ত্রের মত। যন্ত্রের মত নীরবে খাবার দিয়ে যায় এবং পরে থালাবাসন নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসা না করলে একটা কথাও বলে না।
ডু্প্লে ঘরে ঢোকার পর ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। ডুপ্লে খাবারের বাক্স নিয়ে এগুলো ওমর বায়ার দিকে।
এগুতে এগুতে বলল, তুমি জিতে গেছ হিদেন।
ডুপ্লে ওমর বায়ার অনশনের দিকে ইংগিত করল।
‘জয় কোথায়, মৃত্যু থেকে রক্ষা। তুমি যে ক’দিন ছিলে না?’
ডুপ্লের মুখটা কালো হয়ে উঠল। খাবার বাক্সটা ওমর বায়ার খাটিয়ার উপর রাখতে বলল, ‘আমার মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে বাড়ি গিয়েছিলাম’।
‘তারপর?’ উদগ্রীব কন্ঠে বলল ওমর বায়া।
‘আমার মাকে দেখতে পাইনি যাওয়ার আগেই….’।
কথা শেষ করতে পারলো না ডুপ্লে। কান্নায় জড়িয়ে গেল তার কথা।
ওমর বায়া সান্ত্বনার সুরে বলল, দুঃখ করো না ডুপ্লে। তোমার চেয়েও বড় দুর্ভাগা আমি। আমি আমাকে বাঁচাতে গিয়ে আম্মাকে বাঁচাতে পারিনি। হত্যা করেছে ওরা আমার আম্মাকে’।
‘কারা হত্যা করেছে তোমার মাকে?’
‘ওকুয়া’। যাদের পক্ষে তোমরা কাজ করছ’।
ডুপ্লে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ওমর বায়ার দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর বেরিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর খাবার বাক্স ফেরত নিতে এল।
খাবার বাক্স গুছিয়ে নিচ্ছিল ডুপ্লে। তার চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। চোখে নরম দৃষ্টি। একবার ওমর বায়ার দিকে চকিতে তাকিয়ে মুখ নিচু করে নিচু স্বরে বলল, ‘তুমি যদি কাউকে কোন কথা পৌঁছাতে চাও, তাহলে লিখে রেখ ঠিকানা সমেত’।
বলেই ডুপ্লে খাবার বাক্স নিয়ে উঠে দাঁড়াল।
সে উঠে দাঁড়াবার সাথে সাথে তার কোল থেকে একটা দামী সিগারেটের প্যাকেট পড়ে গেল। ডুপ্লে উঠেই ঘুরে দাড়িয়ে দরজার দিকে চলল।
‘ডুপ্লে তুমি সিগারেট ফেলে গেলে’।
কিন্তু ডুপ্লে ওমর বায়ার কথা যেন শুনতেই পেল না এইভাবে বেরিয়ে গেল।
ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল ওমর বায়া সিগারেটের প্যাকেট হাতে তুলে নিল। অত্যন্ত দামী সিগারেটের প্যাকেট। খুব হালকা মনে হলো। অর্থাৎ সিগারেট নেই বা দু’একটা আছে। ওমর বায়া খুলল সিগারেটের প্যাকেট। খুলে বিস্মিত হলো ওমর বায়া, সিগারেটের একটা শলাও নেই, আছে ছোট্ট একটা পেন্সিল।
পেন্সিল দেখার সাথে সাথে ডুপ্লের শেষ কথাটা মনে পড়ল, কোথাও কোন কথা যদি পৌছাতে চাই তাহলে ঠিকানা সমেত যেন লিখে রাখি।
শিউরে উঠল ওমর বায়া। ব্ল্যাক ক্রসের ডুপ্লে তার পক্ষে এই কাজ করবে!
কিন্তু ওমর বায়া লিখবে কিসে? পরক্ষনেই খুশী হয়ে উঠল ওমর বায়া। প্যাকেটের ভেতরের সিগারেটের মোড়ক কাগজটিতে যথেষ্ট বড় একটা চিঠি সে লিখতে পারে।
ওমর বায়া প্রশংসা করল ডুপ্লের বুদ্ধির।
খুশি হয়ে ওমর বায়া তখনই প্যাকেটের ভেতর থেকে মোড়ক কাগজটি বের করে ফিলিস্তিন দুতাবাসের নামে একটা চিঠি লিখে ফেলল। দুতাবাসের ঠিকানাও লিখল। লিখার পর কাগজটি পেন্সিল সমেত আবার প্যাকেটে ঢুকিয়ে রাখল। তারপর প্যাকেটটিকে খাটিয়া ও দেয়ালের ফাঁক দিয়ে নিচে ফেলে দিল। ডুপ্লে এলে ওখান থেকে তুলে নেবে।
মনটা একটু হাল্কা হলো ওমর বায়ার। ওমর বায়া কোথায় ও কার হাতে বন্দী আছে এটা যদি ফিলিস্তিন দুতাবাস জানতে পারে, তাহলে তারা সাহায্যের ব্যবস্থা করতে পারবে এবং জানাতে পারবে আহমদ মুসাকেও।
মেঝেয় কিছুক্ষণ পায়চারী করল ওমর বায়া। হাত ও পা শিকল দিয়ে বাঁধা। এক ফুটের বেশী হাত-পা ফাঁক করা যায় না। এই অবস্থায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাটি করে ওমর বায়া এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
কিন্তু খাটিয়ায় শুয়ে তামাকে অনভ্যস্ত ওমর বায়া তামাকের গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। বুঝল ঠিক মাথার কাছাকাছি খাটিয়ার নিচের সিগারেটের প্যাকেট থেকে এই গন্ধ আসছে।
ওমর বায়া খাটিয়ার নিচে হাত দিয়ে সিগারেটের প্যাকেটটাকে খাটিয়ার পেছন দিকে ছুড়ে দিল। এতে গন্ধের তীব্রতা একটু কমল।
ঘুমিয়ে পড়েছিল ওমর বায়া।
দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল তার।
চোখ খুলে দেখল, ঘরে প্রবেশ করছে মশিয়ে লিলি, ব্ল্যাক ক্রস প্রধান পিয়েরে পলের দক্ষিণ হস্ত। লোকটির সাপের মত ঠান্ডা কথা এবং তাপমাত্রায় ভদ্র ব্যবহার দেখে ওমর বায়া বুঝেছে লোকটা ভীষণ বুদ্ধিমান। ওয়াটের ঠিক বিপরীত। ওয়াট চাবুক দিয়ে কথা বের করতে চায়, আর এ সুন্দর কথার পরশ বুলিয়ে কাজ হাসিল করতে চায়।
মশিয়ে লালি দু’একদিন পরপরই আসে। এসে বার বার একই কথা বলে, ওমর বায়ার জমি হস্তান্তর সমস্যাকে এতদুর আনা ঠিক হয়নি ওকুয়া’র। ভালো ব্যবহার করলে উপযুক্ত দামে ওমর বায়া জমি অবশ্যই দিয়ে দিত। সবাই যখন কাম্পু উপত্যকা থেকে চলে গেছে, তখন সে একা থেকে আর লাভ কি! যাই হোক, বিষয়টা নিয়ে আবেগমুক্ত মন নিয়ে ওমর বায়ার ভাবা দরকার। দশ হাজার একর জমির জন্যে জীবন দেয়ার কোন মানে হয় না। ব্ল্যাক ক্রস ওকুয়া’কে কথা দিয়ে বিপদে পড়েছে। এ বিপদ থেকে ওমর বায়া ব্ল্যাক ক্রসকে উদ্ধার করলে ব্ল্যাক ক্রস ওমর বায়াকে অন্যান্য সাহায্য যা সে চায় দিতে রাজী আছে। ইত্যাদি…।
ওমর বায়া বিছানায় উঠে বসল। ভাবল, ঘন্টা খানেক সময় এখন তাকে ঐ একই বকবকানি শুনতে হবে।
ঘরে ঢুকে ওমর বায়ার দিকে নজর ফেলেই বলে উঠল মশিয়ে লালি, বাঃ তোমার স্বাস্থ্য তো বেশ ইমপ্রুভ করেছে। তিন দিন আগে এসেছিলাম, সেদিনের চেয়ে আজ তুমি অনেক ভাল। মনও ভাল আছে নিশ্চয়।
কিন্তু দরজা থেকে ওমর বায়ার দিকে কয়েক ধাপ এগুতেই মশিয়ে লালির চোখটা তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। দু’একবার নাক টেনে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল, তোমার ঘরে ভি.আই.পি কেউ আজ এসেছিল?
‘না, কেন?’
‘ইম্পিয়াল সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছি। কেউ খেয়েছে এখানে, তোমাকে কেউ কি দিয়েছে?’
‘আমি তো সিগারেট খাই না’।
‘তুমি ঠিক বলছ না’।
বলে মশিয়ে লালি এগিয়ে এসে বিছানার কম্বল, বালিশ, ইত্যাদি উঠিয়ে দেখতে লাগল। কিছুই পেল না। এরপর সে বসে খাটের তলায় উকি দিল। দেখতে পেল সে সিগারেটের প্যাকেট। মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। বলল, ‘ভেবেছিলাম তুমি খাটিঁ মুসলমান, নিশ্চয় মিথ্যা কথা বল না। কিন্তু ধরা পড়ে গেলে। সিগারেট খেতে শুরু করেছ। পেলে কোথায় সিগারেট? আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিশ্চয় কোথায় ফাঁক আছে’।
এসব কথা বলতে বলতে খাটিয়ার তলা থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে আনল মশিয়ে লালি।
উঠে দাঁড়াল সে।
খুলল সে সিগারেটের প্যাকেট।
ওমর বায়ার মুখটা ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল।
সিগারেটের প্যাকেট খুলে চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছিল মশিয়ে লালির।
সিগারেটের প্যাকেট থেকে সে ছোট্ট পেন্সিলটা বের করে হাতে নিল। তারপর মোড়ক কাগজটি বের করে মেলে ধরল চোখের সামনে।
মিনিট খানেক পর সে ধীরে ধীরে চোখ তুলল ওমর বায়ার দিকে। তার সেই সাপের মত ঠান্ডা চোখ।
ওমর বায়ার ভয় তখন কেটে গিয়েছিল। তার চোখে তখন বেপরোয়া ভাবের একটা স্ফুলিংগ।
‘ওমর বায়া, সিগারেটের এই প্যাকেট এবং এই পেন্সিল তোমাকে কে এনে দিয়েছে?’ ঠান্ডা অথচ অত্যন্ত শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করল মশিয়ে লালি।
ওমর বায়া তার চোখ নিচু করল। কথা বলল না।
‘তোমাকে কথা বলতে হবে ওমর বায়া। তোমার চিঠি আমাদের কাছে দোষণীয় নয়, তুমি সুযোগ পেলে এটা করতেই পার। কিন্তু আমরা জানতে চাই কোন শয়তান তোমাকে সাহায্য করেছে’। চিবিয়ে চিবিয়ে অত্যন্ত কঠোর কন্ঠে বলল মশিয়ে লালি।
কোন উত্তর দিল না ওমর বায়া।
চোখ দু’টি জ্বলে উঠল মশিয়ে লালির। বারুদের ঘরে যেন আগুন লাগল।
ওমর বায়া শেকল বাঁধা দু’টি পা মেঝেতে রেখে খাটিয়ার উপর বসেছিল। মশিয়ে লালি ছুটে এসে জুতার গোড়ালী দিয়ে ওমর বায়ার ডান পায়ের আঙুলের উপর প্রচন্ডভাবে আঘাত করল। চিৎকার করে উঠে মেঝের উপর বসে পড়ল ওমর বায়া। পায়ের আঙুলগুলো একদম থেতলে গেছে তার। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে থেতলানো জায়গা দিয়ে।
‘দাড়াও তোমাকে কথা বলতে হবে’। বলে মশিয়ে লালি মুখ দরজার দিকে ফিরিয়ে হাততালি দিল। দু’জন প্রহরী প্রবেশ করল ভেতরে।
‘তোমরা ওয়াটকে আসতে বল। আর বল, গত পরশু থেকে এ ঘরে যারাই এসেছে তাদের এখানে হাজির করতে’। গর্জে উঠল মশিয়ে লালির কন্ঠ।
কয়েক মিনিটের মধ্যে সবাই এসে হাজির হলো ঘরে।
গত পরশু থেকে ওমর বায়া ঘরে খাদ্য পরিবেশনকারী তিনজন, চারজন প্রহরী, একজন ডাক্তার এবং টয়লেটের জন্যে একজন ফিটার প্রবেশ করেছে। সবাইকে হাজির করা হয়েছে মশিয়ে লালির সামনে।
সবার মুখই ভয়ে ফ্যাকাসে। ব্ল্যাক ক্রসের সাথে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করলে শাস্তি একটাই- মৃত্যুদন্ড। সকলেরই বুক দুরু দুরু করছে। ওমর বায়া সত্য-মিথ্যা যার নামই বলুক, তার আর রক্ষা নেই। সবাই ভয়ে ভয়ে চোরা চোখে তাকাচ্ছে ওমর বায়ার দিকে। ডুপ্লের অবস্থায় সবচেয়ে বেশী খারপ। তার চোখের সামনে মৃত্যু এসে নাচছে। বাড়িতে স্ত্রী ও মেয়ে আছে। তাদের ছবি এসে ভাসছে তার চোখে। সে মশিয়ে লালির চোখ এড়িয়ে ঘন ঘন তাকাচ্ছে ওমর বায়ার দিকে। কিন্তু ওমর বায়ার চোখ কারও দিকে নেই। সে মুখ নিচু করে পাথরের মত বসে আছে।
‘শোন ওমর বায়া, সবাইকে হাজির করেছি। এই আটজনের কেউ একজন তোমাকে সিগারেটের প্যাকেট সরবরাহ করেছে। দেখিয়ে দাও কে সেই কুত্তা’। শান্ত কিন্তু অত্যন্ত কঠোর কণ্ঠে বলল মশিয়ে লালি।
মুখ তুলল ওমর বায়া। তার শান্ত চোখ, ঠোটে এক টুকরো হাসি। বলল, ‘এত আয়োজন বৃথাই করেছেন মিঃ মশিয়ে লালি। সিগারেটের প্যাকেট কেউ আমাকে দেয়নি। আমি মেঝেতে কুড়িয়ে পেয়েছি’।
‘মিথ্যা কথা। পেন্সিল কোথায় পেলে তুমি’।
‘পেন্সিলও ঐভাবেই পেয়েছি’।
‘শয়তানের বাচ্চা তুমি। কথা তোমাকে বলতে হবে। ওয়াট তোমার কাজ শুরু কর’।
ওয়াট এক গাল হেসে এগিয়ে এল ওমর বায়ার দিকে। হাতে তার বিখ্যাত অপারেশন বাক্স।
‘তোমাকে যখন বাচিয়েঁ রাখা আমাদের দায়িত্ব, তখন তোমার গা আর পচাব না’। বলতে বলতে ওয়াট ওমর বায়ার হাত বিশেষ ভাবে তৈরী কাঠের জালির মধ্যে ঢুকিয়ে হাত সমেত ওটাকে খাটিয়ার সাথে বেঁধে ফেলল। বলল, ‘ওমর বায়া আজ বড় কিছু নয়, কথা বলানোর ক, খ পদ্ধতি প্রয়োগ করব’।
বলে ক্রুব হেসে ওয়াট তার বাক্স থেকে লম্বা সুচ বের করে আনল। বলল, ‘বাম হাত থেকেই শুরু করা যাক’।
বলে ক্রুর হেসে ওয়াট তার বাক্স থেকে লম্বা সুচ বের করে আনল। বলল, ‘বাম হাত থেকেই শুরু করা যাক’।
ওমর বায়ার হাত তো দূরে আঙুলগুলোও নড়াবার কোন উপায় ছিল না।
ওয়াট ওমর বায়ার বাম হাতের মধ্যমাটি বাম হাতে শক্ত করে ধরে ডান হাত দিয়ে নখের নিচ দিয়ে সুচ ঢুকিয়ে দিল।
ওমর বায়া চোখ বন্ধ করে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে চুপ থাকার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারল না। আর্তনাদ করে উঠল। যন্ত্রণায় বিকৃত হয়ে গেল তার মুখ।
ডুপ্লে এবং ডেকে আনা অন্যান্যরা ভয়ে চোখ বুজেছিল। তাদের কারও মুখে রক্ত ছিল না।
মশিয়ে লালি বলল, ‘আমরা তোমার উপর এই অত্যাচার করতে চাইনি তুমি আমাদের বাধ্য করেছ। এখনও নাম বল সেই শয়তারটার, যে তোমাকে ওগুলো সরবরাহ করেছিল’।
ওমর বায়া যন্ত্রণায় ধুকছিল। কোন উত্তর দিল না।
‘এ শয়তানের শয়তান মশিয়ে’। বলে ওয়াট আরেকটা সুচ ওমর বায়ার তর্জনিতে ঢুকিয়ে দিল।
আবার সেই বুক ফাটা চিৎকার করে উঠল ওমর বায়া। দেহ তার কাঁপছে যন্ত্রণায়। হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে বাঁধন থেকে। কিন্তু বাঁধন চুল পরিমাণ ঢিলাও হচ্ছে না।
ওয়াট ওমর বায়ার যন্ত্রণা কাতর মুখে একটা ঘুষি চালিয়ে বলল, ‘কথা বল শয়তানের বাচ্চা শয়তান’।
নাক ফেটে রক্ত বেরিয়ে এল ওমর বায়ার। চোখ খুলল সে। বলল, তোমরা আমাকে মেরে ফেল, কিন্তু যা বলেছি তার বাইরে আমার কোন কথা নেই’।
‘ওরে নেড়ি কুত্তা’ বলে ওয়াট এবার সুচ ঢুকিয়ে দিল বাম হাতের বুড়ো আঙুলে। আবার ওমর বায়ার সেই বুক ফাটা আর্তনাদ। প্রচন্ড এক ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল সে। হাতটা খুলে নেবার চেষ্টা করল। কিন্তু কোন ফল হলো না। নাইলনের সরু দড়ি বরং কেটে বসল তার হাতে। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এল রক্ত। আঙুলের রক্তের সাথে সে রক্ত একাকার হয়ে গেল।
ডুপ্লেরা আটজন ভয়ে আঁৎকে গুটিয়ে গিয়েছিল। ওমর বায়া দিশেহারা হয়ে কার নাম করে বসে, এই তাদের বড় ভয়। তাদের প্রতি মুহুর্তেই মনে হচ্ছে এই বুঝি নাম করে বসে। কেউ কেউ ভাবছে, ওমর বায়ার পর নির্যাতন তাদের উপর শুরু হবে কি? ডুপ্লের মনে তখন প্রবল ঝড়। তার মনে এখন ভয়ের চেয়ে অপরাধ বোধই বেশী। সে ভাবছে, তার কারণেই বেচারা ওমর বায়ার এই দুর্দশা। অযাচিত ভাবেই সে তাকে চিঠি দেয়ার কথা বলেছে এবং পেন্সিল ও সিগারেটের প্যাকেট সরবরাহ করেছে।
ওমর বায়া আবার হৃদয় বিদারক চিৎকার দিয়ে উঠল। চমকে উঠে চোখ তুলল ডুপ্লে ওমর বায়ার দিকে। আরেকটা সুচ ঢুকানো হয়েছে ওমর বায়ার অনামিকায়। যন্ত্রণায় বিকৃত ওমর বায়ার মুখ। তার চোখ দু’টি বোজা। মুখে কোন কথা নেই। মশিয়ে লালি ও ওয়াটের হুমকি-ধমকি নির্যাতন তার মুখ খুলতে পারছে না। ডুপ্লের সমগ্র অন্তর ওমর বায়ার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তিতে নুয়ে পড়ল।
‘তোকে কথা বলতেই হবে শয়তান। ব্ল্যাক ক্রস পরাজয় মানে না। তোর হাত-পায়ের সব আঙুল শেষ করব। তারপর চামড়া কাটব। কথা বলতে হবে তোকে’। চিৎকার করে বলল ওয়াট। তারপর টেনে নিল ওমর বায়ার অন্য একটা আঙুল।
চলল এই নির্যাতন।
ক্লান্ত দেহ নেতিয়ে পড়েছে ওমর বায়ার। চিৎকার শক্তিও কমে যাচ্ছে তার। মেঝের অনেকখানি জায়গা ওমর বায়ার লাল রক্তে ভাসছে।
হাত শেষ করে যখন ওয়াট ওমর বায়ার পায়ের দিকে এগুচ্ছে, এই সময় ঘরে দ্রুত প্রবেশ করল পিয়েরে পল ব্ল্যাক ক্রসের প্রধান। বলল, ‘থাম ওয়াট’।
সুচ সমেত হাত সরিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল ওয়াট। মশিয়ে লালি বলল, ‘শুনেছেন সব কিছু?’
‘হ্যাঁ শুনেছি লালি। এভাবে তাকে কথা বলানো যাবে না। তাকে নিয়ে অন্য কিছু ভাবছি’। তারপর ওয়াটের দিকে ফিরে বলল, ওকে ছেড়ে দাও ওয়াট। ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা কর। তুমি এস লালি। এদের যেতে বল’।
বলে ফিরে দাড়িয়েঁ দরজার দিকে হাঁটা শুরু করল পিয়েরে পল। মশিয়ে লালিও বেরিয়ে এল পিয়েরে পলের সাথে সাথে।
‘নতুন কি ভাবছ শয়তানটাকে নিয়ে?’ বলল মশিয়ে লালি।
‘দৈহিক শাস্তি দিয়ে ওর কাছ থেকে কিছুই পাওয়া যায় নি তুমি ফুসলিয়েও দেখেছ, কোন লাভ হয় নি’।
‘তাহলে উপায় কি?’
‘উপায় আছে। ওর মাথাটা আমাদের দখল করতে হবে’।
‘মাথা? কিভাবে?
‘সবই জানবে, মানুষ যদি চাঁদ জয় করতে পারে, তাহলে মানুষের মাথা দখল করতে পারবে না কেন?’
‘কোন সাইকিয়াট্রিক পদ্ধতি কি?
‘তার চেয়েও উন্নত ও নিরাপদ। সেটা কম্পিউটার পরিচালিত ইলেকট্রোয়েনস ফিলোগ্রাম ও ইলেকট্রমিওগ্রাম’।
‘ওতো সাংঘাতিক জটিল ব্যাপার। মানুষের ক্ষেত্রেও ওটা কাজ করে?’
‘তাই শুনেছি। কিন্তু কয়েকজন বিজ্ঞানীই এটা পারেন। তাদের সন্ধান করছি। যাক একথা। শোন, আজকেই ওমর বায়াকে এখান থেকে সরিয়ে নাও আমাদের এক নম্বর ঘাটিতে। আর যে আটজনকে সন্দেহ করছ, তাদের এই মুহুর্তে কিছু বলার দরকার নেই। আটজনের বাইরেও এটা কেউ করতে পারে। ওমর বায়াকে ইচ্ছানুসারে কথা বলাতে পারলেই সব জানা যাবে’।
‘কিন্তু এটা এখনও তো সম্ভাবনার ব্যাপার’।
‘তা বটে। কিন্তু বিজ্ঞানীকে পাওয়া যাবে’।
কথা বলতে বলতে দু’জন পিয়েরে পল-এর অফিসে এসে প্রবেশ করল।
বিশাল অফিস। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর কক্ষও এত বড় নয়। তা হবে, কারণ ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী শুধুই ফ্রান্সের। কিন্তু পিয়েরে পল গোটা দুনিয়া জোড়া সংগঠনের নেতা। ব্ল্যাক ক্রস-এর হাত দুনিয়ার সব জায়গায়। যেখানেই খৃষ্টান এনজিও কিংবা মিশনারীরা বাধার সম্মুখীন হয় এবং পেছন দরজা দিয়ে সাহায্যের তাদের প্রয়োজন হয়, সেখানেই গিয়ে হাজির হয় ব্ল্যাক ক্রস। ‘ব্ল্যাক ক্রস’ নামকরণ এই কারণেই যে এ সব সময় পর্দার আড়ালে অর্থাৎ অন্ধকারে থেকেই কাজ করে। বিশাল এর নেটওয়ার্ক, বিরাট এর শক্তি এবং বিপুল এর সম্পদ। বসনিয়ার যুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সার্বীয়দের অস্ত্রের কোন অভাব হয়নি এদের কারণেই। এরা কালো বাজারে পিস্তল থেকে ট্যাংক পর্যন্ত যোগান দিতে পারে। খৃষ্টান সরকারগুলোর উপর এদের বিরাট প্রভাব। কোন সরকারের কোন বেয়াড়া সিদ্ধান্তকে অনুরোধে না হলে হুমকি দিয়েও বাগে আনতে পারে এরা। এদের ভরসাতেই বসনিয়ার সার্বীয়রা লন্ডন, প্যারিসে বোমা ফাটানোর হুমকি দিতে পেরেছিল। এ হুমকিতে কাজও হয়েছিল। ইউরোপীয় দেশগুলো কোন সময়ই মজলুম বসনীয় মুসলমানদের জন্যে কার্যকর কিছু করতে পারে নি কিছুটা এদের ভয়েই।
পিয়েরে পল তার চেয়ারে বসেই টেলিফোনটা টেনে নিল। বলল, বিজ্ঞানীকে পাওয়ার ব্যাপারে কতদুর এগুতে পারল দেখি।

দক্ষিণ প্যারিসের আবাসিক এলাকায় ১০ তলার একটা ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটটি ডুপ্লের।
ডুপ্লে শুয়ে আছে তার বেডরুমে। চোখ বুজে শুয়ে আছে সে। বাম হাতটি তার কপালের উপর ন্যস্ত।
মুখের ফ্যাকাসে ভাব এখনও তার কাটেনি।
একটি তরুণী ঘরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে ডুপ্লের পাশে এসে দাঁড়াল। বলল, আব্বু শরীর খারাপ করেছে?
তরুনীটি ডুপ্লের মেয়ে রোসা। ডুপ্লের মেয়ে এবং স্ত্রী দু’জনেই বিস্মিত হয়েছিল ডুপ্লেকে অসময়ে অফিস থেকে এসে শুয়ে পড়তে দেখে। এ সময় ডুপ্লে অফিস থেকে কখনই ফিরে না, তার উপর এসে শুয়ে পড়েছে।
‘না মা শরীল খারাপ করেনি’। কপাল থেকে হাতটা নামিয়ে বলল ডুপ্লে।
‘না, আব্বু এভাবে এসে তোমার শুয়ে পড়া…’ কথা শেষ করল না রোসা।
এ সময় ঘরে এসে প্রবেশ করল রোসা’র মা ডুপ্লের স্ত্রী। বলল, ‘কি তোমার শরীর খারাপ করেনিতো ডুপ্লে?’
‘না শরীর খারাপ নয়, মনটা খুব খারাপ লেটি’। ডুপ্লের স্ত্রীর নাম লেটিছিয়া।
‘কেন? কিছু ঘটেছে?’
‘সাংঘাতিক একটা ঘটনা ঘটেছে লেটি’।
‘কি ঘটেছে?’ উদ্বেগে চোখ বড় বড় করে বলল লেটিছিয়া।
উদ্বিগ্ন রোসা তার আব্বার মাথার কাছে মেঝেতে বসল।
‘একটা নিগ্রো বন্দীর কথা তোমাদের বলেছিলাম না? তাকে নিয়ে বড় ঘটনা ঘটেছে’।
‘কি ঘটনা?’ জিজ্ঞাসা করল ডুপ্লের স্ত্রী।
ওমর বায়ার কাগজ ও পেন্সিল পাওয়া, তার চিঠি লেখা, ধরা পড়া তার উপর অমানুষিক নির্যাতন, তবুও সরবরাহকারীর নাম না বলা সব ঘটনা বলল ডুপ্লে।
উদ্বিগ্ন ভাবে শুনলো কথাগুলো মা ও মেয়ে। ডুপ্লে কথা শেষ করলেও কিছুক্ষণ কথা বলল না ওরা দু’জন। পরে তরুণী রোসা বলল, ‘আমাদের এক ম্যাডামের কাছে গল্প শুনেছি, মিথ্যা না বলা ও ওয়াদা রক্ষা করা মুসলমানদের ধর্ম। তোমার এ নিগ্রো বন্দী তো মুসলমান’।
‘ঠিক বলেছ মা। লোকটির সততা আমাকে অভিভূত করেছে। আমরা কেউ হলে নাম বলে দিতাম। সত্য না বললেও মিথ্যা-মিথ্যি কারো নাম বলে ভয়ানক নির্যাতন থেকে বাঁচার চেষ্টা করতাম। শত্রু বিশেষ করে ব্ল্যাক ক্রস- এর সবাই প্রকৃত পক্ষে শত্রু। সুতরাং তাদের কারও উপর দোষ চাপিয়ে বাঁচার পথ খুজতাম’।
‘শুধু ঐ নির্যাতন দেখেই কি তুমি এতটা মুষড়ে পড়েছ?’ বলল ডুপ্লের স্ত্রী লেটি।
‘ওর ঐ নির্যাতনের জন্যে আমি দায়ী লেটি’।
‘কেমন করে?’
‘আমিই ওকে চিঠি লেখার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমিই ওকে পেন্সিল ও সিগারেটের প্যাকেটে কাগজ দিয়েছিলাম’।
‘তুমি?’ আতংকে চোখ দু’টি বিস্ফোরিত হয়ে উঠল লেটিছিয়ার। তরুণী রোসারও মুখ ভয়ে সাদা হয়ে গিয়েছিল।
লেটিছিয়া খাটের এক পাশে বসতে বসতে বলল, ‘তুমি ব্ল্যাক ক্রসকে চেন না? নিগ্রো লোকটা যদি মুখ খুলতো তাহলে তো এতক্ষণে কিয়ামত হয়ে যেত’।
‘হঠাৎ করেই লোকটার প্রতি মমতা এসে গিয়েছিল। লোকটা একদম বিনা অপরাধে নির্যাতন ভোগ করছে’।
‘লোকটার উপর যদি আবারও নির্যাতন হয়, বলে দেয় যদি লোকটা তোমার নাম?’ রোসার মুখ থেকে ভয়ের ছাপ এখনও যায়নি।
‘জানি না কি হবে। তবে মনে হয় লোকটাকে নির্যাতন নয়, অন্য কোনভাবে হাত করার চেষ্টা করবে’।
‘লোকটা চিঠিতে কি বলতে চেয়েছিল, তাও জান না?’
‘জানি না। একথা জিজ্ঞাসা করছ কেন?’
লেটিছিয়া কিছু বলার আগেই রোসা বলল, ‘আব্বু লোকটা তোমার নাম বলে দিতে পারে বলে মনে কর?’ রোসার কন্ঠস্বর ভারি।
ডুপ্লে মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, চিন্তা করো না মা। ওমর বায়া মুসলমান না হয়ে অন্য জাতির লোক হলে আমি ভয় করতাম। কিন্তু মুসলমান ওমর বায়ার কাছ থেকে এ ভয় নেই। জান, মুসলমানরা সত্যিকার মুসলমান হলে লোহার চেয়ে শক্ত হয়, পাহাড়ের চেয়ে ওজনদার হয়, আকাশের চেয়ে উঁচু হয় এবং স্বর্ণের চেয়ে সুন্দর হয়। ওদের থেকে কোন ভয় নেই মা’।
‘ওমর বায়া কি সত্যিকার মুসলমান?’ বলল রোসা।
‘আমার তাই মনে হয়। হাত-পা শিকল বাঁধা অবস্থাতেও সে নামায পড়ে। ইসলাম ধর্মে শুকর খাওয়া এবং আল্লাহর নাম নিয়ে জবেহ নয় এমন গোশত খাওয়াও নিষেধ। ওমর বায়া ক’দিন না খেয়ে থেকেছে তবু এসব জিনিস খেতে রাজী হয়নি’।
‘লোকটাকে আমরা কোন সাহায্য করতে পারি না?’ ফিস ফিস কন্ঠে বলল লেটিছিয়া।
‘সাহায্য করতে তো চেষ্টা করেছিলাম’।
‘এখন কিছু করার নেই? দেখ, তাকে সাহায্য করলে আমাদের দু’টো লাভ। একটা ভালো মানুষের উপকার হলো এবং আমরা তোমার নাম প্রকাশ হওয়ার ভয় থেকে বাঁচলাম’।
একটু ভাবল ডুপ্লে। বলল, ‘পেয়েছি। তাকে কিডন্যাপ করার আগে সে ফিলিস্তিন দুতাবাসে ছিল। সুতরাং ফিলিস্তিন দুতাবাস অবশ্যই তাকে চেনে’। আনন্দে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল ডুপ্লের।
‘ঠিক। তুমি একটা চিঠি লিখে ওমর বায়ার কথা ওদের জানিয়ে দাও’। বলল লেটি।
‘গিয়ে সব বললে ভালো হয় না’।
‘তোমার মাথা খারাপ হয়েছে, ব্ল্যাক ক্রস নিশ্চয় দুতাবাসের উপর চোখ রাখছে। খবরদার ওমুখো হবে না’।
ডুপ্লে স্তম্ভিত ভাবে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বলল, ‘তোমার এত দুরদৃষ্টি লেটি। এ সহজ কথাটা ঘুর্নাক্ষরেও আমার মনে আসেনি। ধন্যবাদ তোমাকে’।
‘ধন্যবাদ দরকার নেই। তুমি ব্ল্যাক ক্রস- এর একজন। তুমি আগুনের মধ্যে দাড়িয়েঁ। তোমাকে আরও সাবধান হতে হবে’। বলল লেটি।
ডুপ্লের স্ত্রী লেটি থামতেই মেয়ে রোসা বলে উঠল, ‘ব্ল্যাক ক্রস তুমি ছেড়ে দাও আব্বু’।
ডুপ্লের মুখটি ম্লান হয়ে উঠল। বলল, ‘ব্ল্যাক ক্রসে ঢোকার পথ আছে মা বের হবার কোন পথ নেই’।
‘কিন্তু তুমি এক সময় বলেছিলে এটা একটা মহান সংগঠন। যারা নির্দোষ মানুষের রক্তপাত করে, হিংসাই যাদের মুলধন, তারা আবার কিসের মহান সংগঠন?’ ক্ষোভে ফুসে উঠল ডুপ্লের স্ত্রী।
‘সংগঠনের কি দোষ? আমাদের খৃষ্টান ধর্মের স্বার্থেই তো এ সংগঠনের সৃষ্টি’। বলল ডুপ্লে।
‘দেখ ব্ল্যাক ক্রস নামটাই খারাপ। ক্রস ব্ল্যাক হবে কেন? ব্ল্যাক তো শয়তানের প্রতীক’। বলল লেটি।
‘এ ব্ল্যাক সে ব্ল্যাক নয়। এ ব্ল্যাক অর্থ ‘গুপ্ত’-‘আন্ডার গ্রাউন্ড’।
‘কিন্তু একটা ন্যায়নিষ্ঠ দল কেন আন্ডার গ্রাউন্ড হবে? তোমরা কি শত্রু দেশে না শত্রু পরিবেশে কাজ করছ?’
‘না তা নয়। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের এমন অনেক কাজ এসে পড়ে যা প্রকাশ্যে করা যায় না’।
‘থাকতে পারে। কিন্তু ব্ল্যাক ক্রস খৃষ্টান স্বার্থের প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার যে নীতি গ্রহণ করেছে সেটা কি জাতীয় স্বার্থ? ওমর বায়াকে তোমরা যে নির্যাতন করছ, পৃথিবীর কোন আইনে তা বৈধ?’
‘লেটি, অতীতে ব্যাপারটা এমন ছিল না। নানা প্রয়োজন ও বিবেচনা থেকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে’।
দেখ, খুঁজলে অজুহাত, যুক্তি সব কাজের পক্ষেই পাওয়া যাবে। যাক, এসব কথা। রোসা যা বলেছে, আমারও সেটাই কথা। সরাসরি সরে আসতে পারবে না। ধীরে ধীরে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়। ওদের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়লে বেরিয়ে আসার একটা পথ হয়ে যাবে’। বলল লেটি।
লেটিছিয়ার কথা শেষ হলেও ডুপ্লে কিছুক্ষণ কথা বলল না। পরে ধীরে ধীরে বলল, শারীরিক ও পারিবারিক বিভিন্ন কারণে আমি এক মাসের ছুটি চেয়েছিলাম। মঞ্জুরও হয়েছে। কিন্তু অফিসের এ গন্ডগোলের কারণে দু’একদিন অপেক্ষা করে তারপর ছুটিতে যেতে চাচ্ছি, ‘তোমরা যা বললে ছুটির এ সময়ে আরও চিন্তা করতে পারব’।
তার আব্বার ছুটির খবরে ভীষণ খুশী হয়ে উঠল রোসা। বলল, আব্বু আমাদেরও কলেজ বন্ধ হচ্ছে। চল না আব্বু আমাদের গ্রামে গিয়ে কিছুদিন থেকে আসি’।
ডুপ্লে ও লেটি পরস্পরের দিকে চাইল। তাদেরও মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
‘ধন্যবাদ রোসা। তোমার প্রস্তাব আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে’। বলল লেটি।
রোসা ছুটে এসে তার আব্বা ও আম্মার মাঝখানে বসে দু’জনকেই জড়িয়ে বলল।