মিঃ বেনহাম অর্থাৎ বিজ্ঞানী বেনহাম ওমর বায়ার ফ্ল্যাটের পাশের আর একটা ফ্ল্যাটে থাকেন। এলিসা গ্রেসের কাছে তাঁর পরিচয় সে ব্ল্যাক ক্রসেরই একজন নেতা।
বিজ্ঞানী বেনহামের থাকার ঘরটি ওমর বায়ার ঘরের সোজা দক্ষিনে প্রাচীরের মধ্যেই। একটু দুরে, তা না হলে ওমর বায়ার ঘরের জানালা দিয়ে মিঃ বেনহামের ঘরের লোকজনকে দেখা যেত। বিজ্ঞানী বেনহাম তাঁর ভিশনের অংশ হিসাবেই পরিকল্পিতভাবে ঐ ফ্ল্যাটের ঐ ঘর বেছে নিয়েছে।
এলিসা গ্রেস ভাবছিল, মিঃ বেনহাম চান ওমর বায়া দরজা খুলে রাখুক। কিন্তু তিনি এও চান যে, এই কথা ওমর বায়াকে না বলা হোক। নির্দেশ হয়েছে, এলিসাকে পরোক্ষ চেষ্টা করতে হবে যাতে সে দরজা খোলা রাখে। সরাসরি তাঁকে দরজা খোলা রাখতে বললে ওমর বায়া আরও সন্দিগ্ধ হয়ে পড়তে পারে।
এলিসা ওমর বায়ার দরজায় নক করল। বরাবরের মতই তিনবার নক করল সে।
দরজা খুলে গেল। দরজা খুলে দিল ওমর বায়া। তাঁর গায়ে চাদর জড়ানো।
খালি গায়ে কিংবা শুধু গেঞ্জি গায়ে এলিসা কোন সময়ই ওমর বায়াকে দেখেনি। এলিসার মনে হয়েছে ওমর বায়া খুব লাজুক।
এলিসা গ্রেসের হাতে ছিল দুধের গ্লাস।
দুধের গ্লাস নিয়ে এলিসা গ্রেস ঘরে প্রবেশ করল। দরজা খুলে দিয়েই ওমর বায়া গিয়ে চেয়ারে বসেছে।
এলিসা গ্রেস দুধের গ্লাস টেবিলে রাখল। প্রথম দিকে দুধের গ্লাস ওমর বায়ার হাতে দেয়ার চেষ্টা করত। কিন্তু ওমর বায়া কোন জিনিসই হাত পেতে নেয় না। এলিসা এখন আর চেষ্টা করে না হাতে দেয়ার।
‘একটা কথা বলতে পারি?’ চলে যাবার জন্যে হাঁটতে শুরু করেও আবার ঘুরে দাড়িয়ে বলল এলিসা।
‘বলুন’। বলল ওমর বায়া।
‘সব সময় ঘরের দরজা লক করে রাখেন কেন?’
‘ও কিছু না। অভ্যাস বলতে পারেন’।
‘না আমাকে ভয় করেন?’
‘আপনাকে?’
‘তাছাড়া আর কে? আমি ছাড়া এখানে আর যারা আছে চাকর বা পরিচারিকারা তাঁদের তো ভয় করার কোন প্রশ্নই উঠে না’।
‘না আপনাকে ভয় পাই না’।
‘তাহলে?’
‘ওই তো বললাম, অভ্যাস’।
‘না, অভ্যাস নয়, অভ্যাস হলে বেরিয়ে যাবার সময় ঘর বন্ধ করেন না কেন?’
সংগে সংগে উত্তর দিল না ওমর বায়া। একটু পরে ধীরে ধীরে বলল, ‘ভয়ের কারন আমি নিজেই। অর্থাৎ আমি আমাকেই ভয় পাই’।
‘কেন?’
‘অনেক কারন থাকতে পারে। একটা কারন হলো, আমি নিজে দুর্বল’।
‘কোন দিক দিয়ে?’
‘মনের দিক দিয়ে’।
‘মনের দিক দিয়ে আপনি দুর্বল নন আমি জানি। তবে হ্যাঁ, আপনি আমাকে ভয় করেন। এটা মনের ভয়’।
‘আপনাকে ভয় করি তার প্রমাণ?’
‘চাকর-পরিচারিকাদের কাছ থেকে হাত পেতে জিনিস নেন কিন্তু আমার কাছ থেকে নেন না। গায়ে চাদর চাপানো বা জামা পড়া ছাড়াই চাকর-পরিচারিকাদের সাথে আপনি দেখা করেন, কিন্তু আমার সাথে করেন না’।
এলিসা গ্রেস কথা শেষ করলে ওমর বায়া নীরব থাকল। ওমর বায়া মুখ নিচু করল। বেশ সময় নিয়ে বলল, ‘কিন্তু আপনাকে কেন ভয় করব আমি?’
‘সে প্রশ্নতাই তো আমি করেছি’।
‘এর উত্তর আমি জানি না’। মুখ নিচু রেখেই ধীরে ধীরে বলল ওমর বায়া।
‘কারন আপনি সম্ভবত আপনাকেও জানেন না’। বলে এলিসা গ্রেস বেরিয়ে এল ঘর থেকে।
যাবার সময় এলিসা নিজেই নব টিপে দরজা নক করে গেল।
এলিসার শেষ কথাটা মনের কোথায় যেন কাঁটার মতো বিধতে লাগল ওমর বায়ার। ওমর বায়া কি সত্যি নিজেকে জানে না! না জানলে এতো নির্যাতন এবং এই বন্দী জীবন যাপন করছে সে কেন? ওদের কথায় সে রাজি হতে পারছে না কেন? একটিই কারন, ওমর বায়া নিজেকে, নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বোধ, বিশ্বাসকে জানে বলেই। তবে হ্যাঁ এলিসা গ্রেস সম্পর্কে সে নিজের মনের গভীর থেকে ভয় পায়। প্রথম দৃষ্টিতেই এলিসা গ্রেসকে সে শুধু অপরূপা নয়, আরও বেশি কিছু যেন মনে করেছে। অবশ্য সে সংগে সংগেই বুঝেছে এলিসা শত্রুর অতি ধারাল এক তরবারি। এই দ্বন্দের পরিণতির দিকে তাকালে ওমর বায়া ভয় পায়। এই ভয়ই ওমর বায়ার কাছে এলিসা গ্রেসকে অন্য সব থেকে আলাদা করেছে। যার কারনে এলিসা গ্রেসের সাথে তাঁর আচরণও আলাদা হয়েছে।
ঘর থেকে বেরিয়ে এলিসার আজ বেশ ভালো লাগছে, কতকগুলো কথা বলা গেছে তাঁকে। কথাগুলো ভালই বলতে পেরেছে এলিসা। তাঁর ওপর নির্দেশ পরোক্ষ চেষ্টার মাধ্যমে ওমর বায়ার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে হবে।
এসব কথা ভাবতে গিয়ে এলিসা গ্রেসের অবাক লাগছে। সত্যিই ওমর বায়া তাঁর কাছে এক অদ্ভুত যুবক। মাঝে মাঝে তাঁর সন্দেহ হয়, ওর মধ্যে কোন আবেগ, কোন সজীব মন আছে কিনা। কোন যুবক যে এমন স্বাত্তিক বা এমন চরিত্রের হতে পারে, তা কল্পনারও বাইরে ছিল তার। কিন্তু আজকের আলোচনায় এলিসার মনে হয়েছে ওমর বায়ার বাইরের কঠিন আবরণের নিচে সুন্দর সবুজ একটা মন আছে। বাইরের এ কঠিন আবরন ভাঙ্গাই আমার এ্যাসাইনমেন্ট, আমার দায়িত্ব।
এ সময় মিশেল লিটল নামক সেই মাংশ পিণ্ডটি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, তাল পাতার সেপাই কি যেন নাম, হ্যাঁ, বেনহাম আপনাকে ডাকছে।
মিঃ লিটল মোটেই দেখতে পারে না বিজ্ঞানী বেনহামকে। সে বেনহামকে পাথরের মানুষ মনে করে। লিটলের মন্তব্য, বেনহামের চোখ দেখলে মনে হয় সবাইকে সে ঘৃণা করে, যেমনটা দেখা যায় ইহুদীদের চোখে। ব্ল্যাক ক্রসের কোন নেতাই তাঁর মত নয়।
ব্ল্যাক ক্রস চরিত্রগতভাবে ইহুদী বিদ্বেষী। ক্লিনহেড জাতীয়তাবাদীরা ব্ল্যাক ক্রসের সাথে মিলিত হবার পর ব্ল্যাক ক্রসের এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। মশিয়ে লিটল এই মনোভাবেরই প্রতিধ্বনি করে।
মশিয়ে লিটল-এর এই মনোভাব এলিসা গ্রেসকেও স্পর্শ করেছে। সেও বেনহামকে খুব একটা পছন্দ করে না। তাকে দেখলেই এলিসার মনে হয় কি এক ষড়যন্ত্র তার চোখে-মুখে। সে যা বলে, তার পেছনে যেন আরও কথা থাকে। ব্ল্যাক ক্রসের লোকরা নিষ্ঠুর খুনী। কিন্তু এই কাজে তারা রাখ-ঢাক করে না। তাদেরকে বুঝা যায়, কিন্তু বেনহাম দূর্বোধ্য। ব্ল্যাক ক্রসের হয়েও সে এমন কেন।
বেনহামের পরিচয় এলিসা এবং অন্য কেউ জানে না। ব্ল্যাক ক্রসের একজন হিসাবে ওমর বায়ার তদারকির জন্যে পৃথক একটা ভিলায় তাকে রাখা হয়েছে।
এলিসা গ্রেস গিয়ে বিজ্ঞানী বেনহামের দরজায় নক করল।
ভেতর থেকে ভারী কণ্ঠের আওয়াজ এল, ‘এস।’
দরজায় চাপ দিল এলিসা গ্রেস। খুলে গেল দরজা।
বিজ্ঞানী বেনহাম ছিল পড়ার টেবিলে। একটা মোটা বইয়ের উপর ঝুঁকে পড়েছিল সে।
এলিসা গ্রেস ঘরে ঢুকে একটু দাঁড়াল। বিজ্ঞানী বেনহামের চোখ বইয়ের উপর নিবদ্ধ।
এলিসা গ্রেস বসবে কি বসবে না চিন্তা করছিল।
এই সময় বিজ্ঞানী বেনহাম মাথা না তুলেই বলল, ‘তোমাকে ধন্যবাদ এলিসা গ্রেস।’
‘আমি কিছু বুঝতে পারছি না স্যার।’ বলল এলিসা গ্রেস।
‘তুমি ওমর বায়াকে অনেক কাছে এনেছ।’
‘কখন, কিভাবে স্যার?’
‘না, তুমি আজ চমৎকার কথা বলেছ ওমর বায়ার সাথে।’
‘আজকের কথা?’
‘হ্যাঁ।’
‘আপনি কি করে জানলেন স্যার?’ এলিসা গ্রেসের চোখে-মুখে বিস্ময়।
‘শুনেছি। সে কথা যাক। তুমি কেমন বুঝছ ওমর বায়াকে?’
‘খুব শক্ত স্যার।’
‘যেমন?’
‘সে সব সময় দরজা বন্ধ করে রাখে, এমনকি আমার হাতে থেকে কোন জিনিস পর্যন্ত নেয় না। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না।’
‘কিন্তু আজকের তার সব কথার মধ্যে দিয়ে তাকে অতটা শক্ত মনে হয়নি।’
‘সব কথা আপনি শুনেছেন স্যার?’ আবারও বিস্ময় ফুটে উঠল এলিসার কথায়।
কিন্তু বিস্মিত এলিসা গ্রেস একটু মাথা খাটালেই বুঝতে পারতো, এই জানার মধ্যে কোন বাহাদুরি নেই। ওমর বায়ার টেবিলের তলায় অত্যন্ত পাওয়ারফুল কিন্তু অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটা ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে।
‘তুমি কিভাবে এগোবে মনে করছ?’ এলিসার প্রশ্নের দিকে কান না দিয়েই বলল মি. বেনহাম।
‘চেষ্টা করছি। আগের চেয়ে অনেকখানি ওপেন হয়েছে সে। কিন্তু ঘর বন্ধ করে একা থাকতেই ভালোবাসে। তার এ একাকীত্ব দূর করতে না পারলে তার মনকে সম্পুর্ণ ফ্রি করা যাবে না।’
‘তাঁর এ একাকীত্ব দূর করার জন্যে তো তুমি।’
‘কিন্তু কিভাবে? ঐভাবে যদি সে দরজা বন্ধ করে থাকে। কোন চাপ দিতেও তো আপনি নিষেধ করেছেন।’
‘অবশ্যই চাপ দেয়া চলবে না। স্বাভাবিক চেষ্টার মাধ্যমেই তোমাকে ওর ঘনিষ্ঠ হতে হবে। ওকে হাসি-খুশিতে ভরে দিয়ে মনের দিক দিয়ে সম্পুর্ণ ফ্রি করে তুলতে হবে।’
‘সর্বক্ষণ মেশার সুযোগ না পেলে এটা সম্ভব কিভাবে?’
‘সর্বক্ষণ মেশার সুযোগ তোমাকেই সৃষ্টি করতে হবে।’
‘জানি। আজ তো ওকে দরজা খুলে রাখার কথা বলেছি।’
‘তোমার উপস্থাপনা খুব সুন্দর হয়েছে। ওর কাছে এই কথা তুলে ধরার দরকার ছিল। দেখবে আগামী দু’দিনের মধ্যে ওর দরজা আপনাতেই খুলে যাব।’
‘দু’দিনের মধ্যে?’
‘হ্যাঁ, দু’দিনের মধ্যে।’
‘আর কি ঘটবে?’
‘পরবর্তী দু’দিনের মধ্যে তোমার হাত থেকে সরাসরি জিনিসপত্রও নেবে। তবে শর্ত একটা। আজ থেকে দু’দিন পর রাতে যখন দুধ দিতে যাবে, তখন তার হাতে দুধ দিতে চেষ্টা করবে। যখন দুধ নেবে না, তখন তোমাকে তাকে কিছু বলতে হবে।’
‘এটাও দু’দিনের মধ্যে? আপনি কি মনোবিজ্ঞানী স্যার?’ এলিসার চোখে বিস্ময় মিশ্রিত অনুসন্ধান।
‘তারপর তুমি কি করবে?’ এবারও বেনহাম এলিসার প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে গেল।
‘সর্বক্ষণ মেশার সুযোগ পেলে তাকে মনের দিক দিয়ে প্রফুল্ল ও ফ্রি করে তোলা যাবে।’
‘আমাদের চাওয়া কিন্তু আরও অনেক বেশি।’
‘কি সেটা?’
‘চারদিন পরে বলব। তবে এটুকু জেনে রেখ, তুমি যা বলবে সে তাই করবে, এ পর্যায়ে তাকে নিয়ে আসতে হবে।’
কথা শেষ করে বিজ্ঞানী বেনহাম বইটা টেনে নিয়ে তাতে আবার মনোনিবেশ করল।
এলিসা গ্রেস কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর বুঝল, কথা শেষ।
ঘর থেকে বেরিয়ে এল এলিসা গ্রেস।
ঘর থেকে বেরিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে ফিরে আসতে আসতে ভাবল এলিসা গ্রেস, সৌজন্যবর্জিত লোকটা নিশ্চয় বেশি কথা বলে না।
কিন্তু দু’দিন পর রাত দশটায় এলিসা গ্রেস হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে যখন ওমর বায়ার দরজায় গিয়ে চাপ দিল দরজা খুলে গেল, তখন এলিসা গ্রেস সত্যিই বিস্মিত হলো। মি. বেনহামের কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে অন্তত এই ক্ষেত্রে।
ঈষৎ ফাঁক হওয়া দরজায় দাঁড়িয়ে এলিসা গ্রেস বলল, আসতে পারি?’
‘আসুন।’ বলল ওমর বায়া।
ভেতরে প্রবেশ করল এলিসা গ্রেস। এগোলো ওমর বায়ার দিকে।
আজ দুধের গ্লাসটা টেবিলে না রেখে ওমর বায়ার দিকে বাড়িয়ে দিল।
ওমর বায়া তার হাত না বাড়িয়ে বলল, ‘টেবিলে রাখুন।’ এলিসা গ্রেসের দিকে না তাকিয়ে কথাগুলো বলল ওমর বায়া।
এলিসা গ্রেস দুধের গ্লাস রাখল টেবিলে। তারপর বলল, ‘আপনি আমার হাত থেকে কিছু নেন না, আমাকে অথবা আপনি নিজেকেই ভয় করেন বলে। এ ভয় কি যাবে না?’
‘সেদিনও আপনি এ কথাই বলেছেন। আসলে ভয় আমি কাউকে করি না। এটা আমার বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রশ্ন। যা আপনি বুঝবেন না।’
‘ধন্যবাদ। কোন সংস্কৃতিই কিন্তু মানুষকে ছোট করতে বলে না।’
‘এটা ছোট করা নয়, আরও মর্যাদা দেয়া।’
‘প্রত্যাখ্যানকে কি মর্যাদা বুঝায়?’
‘অন্যায়কে প্রত্যাখ্যানের অর্থ অবশ্যই ন্যায়কে মর্যাদা দান।’
‘বা! আপনি সুন্দর কথা বলেন। আজ আর কথা বাড়াব না। চলি। শুভরাত্রি।’ বলে এলিসা গ্রেস বেরিয়ে এল ঘর থেকে।
দু’দিন পর রাত দশটায় দুধের গ্লাস হাতে এলিসা গ্রেস ঘরে প্রবেশ করল। দু’দিন আগের সেই সময় থেকে ওমর বায়ার দরজা আর লক হয় না।
বিজ্ঞানী বেনহাম কথিত দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দিন। তার বক্তব্য অনুসারে আজ ওমর বায়ার এলিসার হাত থেকে জিনিস অর্থাৎ এখন দুধের গ্লাস নেবার কথা।
দোদুল্যমান মন নিয়ে এলিসা গ্রেস দুধের গ্লাস নিয়ে এগোলো ওমর বায়ার দিকে। বলা যায় কম্পমান হাতেই সে দুধের গ্লাস বাড়িয়ে দিল ওমর বায়ার দিকে।
দুধের গ্লাস সামনে যেতেই ওমর বায়া চকিতে একবার তাকাল এলিসা গ্রেসের দিকে। তারপর ডান হাত বাড়িয়ে ওমর বায়া এলিসাকে অবাক করে দিয়ে তার হাত থেকে দুধের গ্লাস নিয়ে নিল।
এলিসা গ্রেসের চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া হয়ে উঠল। ওমর বায়ার দৃষ্টি নিচু না থাকলে সেও এলিসার বিস্ময় বিমূঢ় চেহারা দেখতে পেত।
এলিসার মুখে কোন কথা যোগাচ্ছিল না। সে ভাবছিল, মি. বেনহামের দু’টি কথাই একেবারে অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল। এটা কি করে সম্ভব। অনুমান করে বা কার্যকারণ দেখে অথবা মানস-প্রবণতা লক্ষ্য করে কেউ ভবিষ্যৎ বাণী করতে পারে কিন্তু এভাবে দিনক্ষণ বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এই অসম্ভব কাজ মি. বেনহাম সম্ভব করলেন কিভাবে?
প্রাথমিক বিস্ময়ের ধাক্কা কাটিয়ে এলিসা গ্রেস বলল, ‘ধন্যবাদ।’
‘কেন?’
‘আমি খুশি হয়েছি।’
‘কেন?’
‘আপনার হাতে কিছু তুলে দেবার সৌভাগ্য হলো।’
‘এতে অস্বাভাবিকতার কি আছে?’
ওমর বায়ার কথায় বিস্মিত হলো এলিসা গ্রেস। ওমর বায়ার সেদিনের এবং আজকের কথার মধ্যে কত পার্থক্য! সেদিন যাকে ওমর
বায়া তার বিশ্বাস ও সংস্কৃতির অংগ বলল, আজ সে ওমর বায়াই তার বিশ্বাস ও সংস্কৃতি ভংগ হওয়ার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা দেখছে না। মাত্র দু’দিনে কি পরিবর্তন! কোন যাদুমন্ত্র যেন ভোজবাজী ঘটিয়েছে।
‘ধন্যবাদ। অস্বাভাবিকতা নেই বরং এটা স্বাভাবিক।’ বলল এলিসা গ্রেস।
ওমর বায়া দুধ খেয়ে গ্লাস ফেরত দিল এলিসা গ্রেসের হাতে। এই প্রথম ওমর বায়া এলিসা গ্রেসের হাতে সরাসরি কিছু দিল।
বিস্মিত এলিসা গ্রেস ওমর বায়ার দিকে চোখ তুলে বলল, ‘ধন্যবাদ।’
গ্লাস হাতে নিয়ে ঘরের চারদিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে বলল, ‘কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো আপনার?’
‘অসুবিধা নেই, কষ্ট আছে।’
‘কি কষ্ট?’ উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল এলিসা গ্রেস।
‘ব্ল্যাক ক্রস আমাকে বিনা কারণে বন্দী করে রেখেছে। অথচ ওদের কোন স্বার্থ নেই।’
ওমর বায়ার কথা শুনে এলিসা গ্রেসের উদ্বেগ কেটে গেল। হেসে উঠল। হাসল প্রাণ খুলে।
‘হাসছি আপনার অমূলক কষ্টের কথা শুনে। আপনি বরং বাইরে থাকার চেয়ে এখানে ভালো আছেন। ব্ল্যাক ক্রস আপনাকে নিরাপদে রেখেছে। বাইরে থাকলে ওকুয়া’র ভয়ে হয় পালিয়ে বেড়াতে হতো, নয়তো ওদের হাতে বন্দী হতে হতো।’
‘এখনো তো আমি বন্দী আছি।’
‘সত্যিই কি এখন আপনার বন্দী থাকার মত মনে হয়?’
‘তা হয় না। এজন্যে ধন্যবাদ ব্ল্যাক ক্রসকে। কিন্তু তবুও তো আমি বন্দী।’
‘ব্ল্যাক ক্রস আপনার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। আপনি শীঘ্রই ছাড়া পেয়ে যাবেন। ব্ল্যাক ক্রসকে বন্ধু ভাবুন।’
‘হ্যাঁ, আমিও এখন এ রকম ভাবছি।’
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »