১৯. ক্রস এবং ক্রিসেন্ট

চ্যাপ্টার

‘স্যার, আপনি শহরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখবেন, না কোন ঠিকানায় যাবেন?’ বলল ড্রাইভার।
‘আমার এক পুরানো বন্ধুর ঠিকানা খুঁজছি। চিন্তা করো না, তোমাকে আমি ঠিকই নিয়ে যাব।’
‘ধন্যবাদ স্যার।’
‘গাড়ি কোথায় থাকতে পারে’– ভাবছিল আহমদ মুসা। ব্ল্যাক ক্রসের কোন বাড়িতে বা ঘাঁটিতে থাকাটাই স্বাভাবিক। যেখানেই থাক, বোঝা যাচ্ছে, গাড়িটা স্থির দাঁড়িয়ে আছে।
রিমোট সেন্সরে দেখা যাচ্ছে, গাড়িটা এক মাইল দূরে রয়েছে।
লোকেশন ইন্ডিকেটর অনুসরণ করে আরও দুটো রাস্তা পরিবর্তন করল আহমদ মুসা।
রিমোট সেন্সরের ডিস্ট্যান্ট ইন্ডিকেটরে দ্রুত দূরত্ব কমে আসল।
‘আর পাঁচশ’ গজ’ দেখল আহমদ মুসা। মন চঞ্চল হয়ে উঠল তার।
তখন বেশ প্রশস্ত একটা রাস্তা দিয়ে চলছিল গাড়ি দক্ষিণ দিকে। লোকেশন ইন্ডিকেটরের ‘অ্যারো হেড’ তখন বিশ ডিগ্রী অ্যাংগেলে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বাঁকানো।
যতই দূরত্ব কমছে, ডিগ্রী বেড়ে যাচ্ছে। আহমদ মুসা বুঝল, এই রাস্তার পুবপাশের কোন বাড়িতে রাখা আছে গাড়িটা।
এক সময় স্থান নির্দেশক তীর চিহ্নের কৌণিক দূরত্ব নব্বই ডিগ্রীতে উঠল। দূরত্বজ্ঞাপক নির্দেশকে দূরত্ব তখন পঞ্চাশ গজ।
আহমদ মুসা গাড়ি দাঁড় করাতে নির্দেশ দিল। আহমদ মুসা জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখল, বাড়িটা একটা ‘অটোমোবাইল সার্ভিস সেন্টার।’ বুঝতে বিলম্ব হলো না আহমদ মুসার, সার্ভিসিং–এর জন্যে সার্ভিস সেন্টারে রেখে যাওয়া হয়েছে গাড়ি।
তেতো হয়ে উঠল আহমদ মুসার মন। পরক্ষণেই মনটা আবার সজীব হয়ে উঠল, একটু সময় বেশি যাবে তাতে কি? সার্ভিস সেন্টার থেকে ঠিকানা নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া যাবে। আশংকার একটা কাল মেঘ মনের কোণায় উঁকি দিল, ব্ল্যাক ক্রসের ওরা যদি গাড়ি বদল করে কুমেট থেকে চলে গিয়ে থাকে! গাড়ির ঠিকানা নিয়ে সে কি করবে!
আহমদ মুসা মন থেকে এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মনে মনে বলল, পরের কাজ পরে। এখনকার কাজ হলো, গাড়ির মালিক ব্ল্যাক ক্রস–এর ঠিকানা যোগাড় করা।
আহমদ মুসা গাড়ি থেকে নামল।
ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে প্রবেশ করল সার্ভিস সেন্টারে।
সার্ভিস সেন্টারে আট-দশটার মত গাড়ি আছে। আহমদ মুসা ঢুকেই ব্ল্যাক ক্রসের গাড়িটা চিনতে পারল।
চত্বর পেরোলে সামনেই সার্ভিস শেড। সার্ভিস শেডের বাম পাশে অফিস বিল্ডিং। মাল্টি স্টোরিড।
সার্ভিস সেন্টারের সেলস ম্যানেজারের অফিস নিচতলায়, নেমপ্লেট দেখেই তা বুঝল আহমদ মুসা।
গট গট করে হেঁটে গিয়ে আহমদ মুসা প্রবেশ করল সেলস ম্যানেজারের অফিসে।
‘গুড মর্নিং।’ বলে শুভেচ্ছা জানাল আহমদ মুসা টেবিলের পেছনে বসা মাঝবয়সী লোকটিকে লক্ষ্য করে।
‘গুড মর্নিং।’ লোকটি আহমদ মুসার জবাব দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বসল। তারপর বলল, ‘বসুন।’
‘থ্যাংকস। বসতে পারছি না। তাড়া আছে। ‘প্যারিস-৯–৮৭৫৬২১’ নং গাড়ির মালিক আমাকে পাঠালেন সার্ভিস লিস্টে আরও কয়েকটা বিষয় যোগ করার জন্যে। দয়া করে অর্ডার ফর্মটা দিন, লিখে দেই।’
‘স্যরি, উনি কোন অর্ডার ফর্ম ফিলআপ করেননি। শুধু ওয়াশিং-এর জন্যে দিয়ে গেছেন। এর জন্যে আমাদের কোন অর্ডার শীট পূরণ করতে হয় না। শুধু ওয়াশিং টোকেন নিয়ে গেলেই চলে। টোকেনের ডুপ্লিকেট আমরা রাখি।’
বলে সেলস ম্যানেজার একটা ডুপ্লিকেট টোকেন বের করে টেবিলে রেখে বলল, ‘এটাই ওর ডুপ্লিকেট টোকেন।’
আহমদ মুসা সেদিকে তাকিয়ে দেখল, টোকেনে নাম্বার ছাড়া আর কিছু নেই।
হঠাৎ করে একরাশ হতাশায় ছেয়ে গেল আহমদ মুসার মন।
মনের ভাবটা গোপন করে আহমদ মুসা বলল, ‘তাহলে দয়া করে নতুন অর্ডারটায় লিখে নিন।’
সেলস ম্যানেজার অর্ডার শীট বের করল। আহমদ মুসা বলে গেল এবং সে লিখল। তারপর টোকেনের সাথে অর্ডার শীটকে অ্যাড করে রেখে দিল।
‘থ্যাংকস। গুড মর্নিং’ বলে বেরিয়ে এল আহমদ মুসা।
সার্ভিস সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসার সময় আহমদ মুসা নিজেকে খুব দুর্বল ভাবল। আবার ব্ল্যাক ক্রস তার নাগালের বাইরে চলে গেল। ওমর বায়াকে হাতে পেয়েও রাখতে পারল না সে। বেচারার এখন কি অবস্থা কে জানে! আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন।
‘সান্ত্বনার কথা এই, ওমর বায়াকে তারা হত্যা করবে না’- ভাবল আহমদ মুসা। ওমর বায়া বেঁচে থাকলেই শুধু তার সম্পত্তির আইনগত অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকে। এ অধিকার আদায়ের জন্যে ব্ল্যাক ক্রস এবার কোন পথে এগোবে কে জানে।
আহমদ মুসারও মাঝে মাঝে আজকাল বিস্ময় সৃষ্টি হচ্ছে, ওমর বায়ার দশ হাজার একরের একখণ্ড জমিকে ‘কোক’, ‘ওকুয়া’ এবং ‘ব্ল্যাক ক্রস’ এত গুরুত্ব দিচ্ছে কেন? এটা কি একটা জেদে পরিণত হয়েছে তাদের! ওমর বায়াকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ব্ল্যাক ক্রস-এর যে ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ ওমর বায়ার জমির মত শত খণ্ড জমির মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। অনুন্নত ক্যামেরুনের ম্যালেরিয়া ও পীতজ্বর পীড়িত এবং ভয়ানক সিসি মাছি অধ্যুষিত একখণ্ড জমি নিয়ে জেদ এতদূর পর্যন্ত যাওয়া কিছুতেই স্বাভাবিক নয়।
‘আসল কারণ খৃস্টবাদের স্বার্থ। ‘কোক’, ‘ওকুয়া’ এবং ‘ব্ল্যাক ক্রস’ সবাই তাদের ভাষায় যিশুর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করছে- ভাবল আহমদ মুসা। এই দিক দিয়ে বিচার করলে তবেই তাদের জেদের তাৎপর্য বোঝা যাবে। এ বিষয়ে ভাবতে গিয়ে আহমদ মুসার চোখে ভেসে উঠল আফ্রিকার মানচিত্র। খৃস্টানদের তৈরি মানচিত্র। এই মানচিত্রে ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে আফ্রিকাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। মুসলিম মেজরিটি অঞ্চল, খৃস্টান মেজরিটি অঞ্চল এবং গোত্র-ধর্ম মেজরিটি অঞ্চল। সুদান, চাদ ও নাইজেরিয়া থেকে উত্তরে গোটা উত্তর আফ্রিকা মুসলিম মেজরিটি এলাকা। এই মুসলিম মেজরিটি এলাকার দক্ষিণে বিশাল আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ও পশ্চিম উপকূলের দু’টি পকেটে গোত্র-ধর্ম বিশ্বাসীরা মেজরিটি। পূর্ব উপকূলের দক্ষিণাংশে মোজাম্বিক, জাম্বিয়া ও বতসোয়ানা এবং পশ্চিম উপকূলের মধ্য অঞ্চলে গ্যাবন ও ক্যামেরুন অঞ্চলে গোত্র-ধর্ম বিশ্বাসীরা সংখ্যাগুরু। তবে বতসোয়ানা খৃস্টানদের হাতে চলে যাবার মুখে। সেখানে খৃস্টান ও গোত্র-ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা সমান সমান। এই দুই পকেটসহ ইথিওপিয়া, তাঞ্জানিয়া ও সোমালিয়াকে (ইথিওপিয়া ও তাঞ্জানিয়ায় মুসলিম ও খৃস্টান সমান সমান এবং সোমালিয়ায় প্রায় সবাই মুসলমান) বাদ দিলে মুসলিম উত্তর আফ্রিকার দক্ষিণে এগারটি রাষ্ট্রে খৃস্টানরা সংখ্যাগুরু। আফ্রিকার ধর্মীয় মানচিত্রে আরেকটা বিষয় লক্ষ্যণীয়। আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের সব দেশেই মুসলমানদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি আছে। যেমন মোজাম্বিকে দশভাগ, তাঞ্জানিয়ায় তেত্রিশ ভাগ, কেনিয়ায় ছয় ভাগ এবং ইথিওপিয়ায় চল্লিশ ভাগ মুসলিম দেখানো হয়েছে খৃস্টান মানচিত্রে। কিন্তু পশ্চিম উপকূল প্রায় মুসলিম শূন্য হয়ে পড়েছে। পশ্চিম উপকূলের নামিবিয়া, অ্যাংগোলা, কংগো, গ্যাবন ও নিরক্ষীয় গিনি- এই কয়টি দেশে মুসলিম নেই বললেই চলে। কংগোতে যে দুই পারসেন্ট মুসলমান দেখানো হয়েছে, সেটাও মনে হয় উত্তর কংগোর সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সন্নিহিত অঞ্চলে। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে ছাব্বিশ পারসেন্ট মুসলমান। আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলীয় ধর্মীয় মানচিত্রের এই বৈশিষ্ট্যের প্রতি গভীর দৃষ্টি দিলে বোঝা যায়, খৃস্টানদের মুসলিম শূন্যকরণ বা মুসলিম নির্মূলকরণ অভিযান অব্যাহত গতিতে উত্তরে অগ্রসর হচ্ছে। খৃস্টানদের মুসলিম নির্মূলকরণ এই অভিযান আজ ক্যামেরুনে এসে উপস্থিত হয়েছে। দক্ষিণ ক্যামেরুনকে মুসলিম শূন্য করার কাজ তাদের প্রায় সম্পূর্ণ। ওমর বায়ার দশ হাজার একর জমির এলাকা খৃস্টানরা পেয়ে গেলেই দক্ষিণ ক্যামেরুন দখল তাদের সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এই কারণেই ওমর বায়ার জমি নিয়ে ‘কোক’, ‘ওকুয়া’ ও ‘ব্ল্যাক ক্রস’ এই জেদ করছে এবং এই কারণেই তারা জমিটা হাত করার জন্যে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করেছে। সুতরাং, আসল সংঘাতটা ক্রস ও ক্রিসেন্টের মধ্যে। ওমর বায়ার জমি দক্ষিণ ক্যামেরুনে ক্রিসেন্ট-এর এক অসহনীয় অস্তিত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে খৃস্টানদের কাছে। ওমর বায়ার জমি দখল পাকাপোক্ত করার সাথে ক্রস-এর বিজয় একাত্ম হয়ে পড়েছে।
সার্ভিস সেন্টার থেকে বেরিয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আহমদ মুসা ফুটপাত ধরে অনির্দিষ্টভাবে হাঁটছিল। কোথায় যাবে সে? ‘ব্ল্যাক ক্রস’-এর নিকটবর্তী হবার সূত্র তার ছিঁড়ে গেছে। আবার নতুন করে সূত্র তাকে তৈরি করতে হবে। এ জন্যে আরও ভাবা প্রয়োজন। তার এখন ক্লাউডিয়ার ওখানে ফিরে যাওয়াই ভাল। ভাবল আহমদ মুসা।
একটা ট্যাক্সি ডাকল সে।
ট্যাক্সিতে চড়ে বলল, ‘খাঁড়ির মুখে পুব পাশের পাহাড়ে মহিলা ক্যাডেট কোরের রেস্টহাউস।’
গাড়ি স্টার্ট নিল। চলতে শুরু করল গাড়ি।

বিরাট এক ঘুম দিয়েছিল আহমদ মুসা।
যখন ঘুম থেকে উঠল, দেখল, আসরের নামায যায় যায় অবস্থা। তাড়াতাড়ি আসরের নামায সেরে রেস্টহাউসের কমন লাউঞ্জটাতে এসে বসল।
সেখানে আগে থেকেই বসেছিল সুমাইয়া, জিয়ানা এবং ডেবরা।
আহমদ মুসা বসতেই জিয়ানা বলে উঠল, ‘সুমাইয়া কিন্তু আপনার মতই নামায পড়ে।’
‘নতুন কথা হলো বুঝি, গতবার পাউয়ে তো ভাইয়াই আমাদের গোটা পরিবারকে নামায শিখিয়েছিলেন। তারপর আমরা কেউ নামায ছাড়িনি। অনেক কষ্ট করে কিছু সূরা শিখেছি আমরা।’
এ সময় লাউঞ্জে প্রবেশ করল ক্লাউডিয়া। লাউঞ্জে ঢুকতে ঢুকতেই বলল, ‘ম্যারাথন ঘুম দিয়েছেন আপনি।’
বসল ক্লাউডিয়া। বসেই বলল, ‘বলতে পারি, আপনি ক’রাত নিশ্চয় ঘুমাননি। কি বল জিয়ানা তুমি?’
‘ক্লান্তি কিংবা অন্য কারণেও এমন বড় ঘুম দিতে হতে পারে।’ বলল জিয়ানা।
‘ক্লাউডিয়া ঠিকই বলেছে। গতকাল বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আমি বন্দী ছিলাম। তারপর ভোররাত পর্যন্ত লড়াই হয়েছে। সে লড়াইয়ে মারা গেছে জনাতিরিশেক লোক। ওমর বায়াকে মুক্ত করেছিলাম অবশেষে। কিন্তু ভোররাতেই তাকে আবার কিডন্যাপ করা হয়। কিডন্যাপকারীদের অনুসরণ করেই এখান পর্যন্ত এসেছি। সুতরাং, ঘুমাবার প্রথম সুযোগ পেয়েই এখানে এসেছি।’
ইতোমধ্যে রালফ ফ্রিক ও অন্য দু’জন এসে লাউঞ্জে বসেছিল। রালফ অবাক চোখে গিলছিল কথাগুলো। ডেবরা এবং রালফ ফ্রিক রেস্টহাউসে আসার পর ক্লাউডিয়ার কাছে আহমদ মুসার সব কথা শুনেছে।
‘আপনার সব কথা আমরা শুনেছি। দু’টি সৌভাগ্যের আমরা মালিক হয়েছি। এক. আপনাকে দেখার এবং আপনার সাথে কথা বলার দুর্লভ সৌভাগ্য আমাদের হলো। দুই. আপনার মত বিশ্ববিখ্যাত মানুষের সাহায্যে আমরা প্রাণে বেঁচেছি- এ কাহিনী আমরা বংশানুক্রমে বলতে পারব।’ বলল ডেবরা।
‘আমাকে এভাবে ভাবলে আমি কষ্ট পাই। এমন বড় লোকদের মাথার উপরে বসানো যায়। তারা মানুষের বন্ধু বা সাথী হতে পারে না।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আপনি খুব সুন্দর বলেছেন। কিন্তু নেতৃত্ব যারা দেন তাদের স্থান তো মাথার উপরেই হয়।’ বলল ক্লাউডিয়া।
‘মাথার উপরে একজনই আছেন। তিনি আল্লাহ, তিনি স্রষ্টা। আমাদের সর্বকালের নেতা যিনি সেই মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের হৃদয়ের মানুষ। বন্ধু তিনি, সাথী তিনি আমাদের। পথপ্রদর্শককে পথযাত্রীদের একজন হয়ে সবার সাথেই থাকতে হয়।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কঠিন কথাগুলো আপনি সুন্দর করে বলতে পারেন। আমাদের যিশুও কি তাই?’ বলল ডেবরা।
‘অবশ্যই। যিশু আমাদের রাসূল (সাঃ)-এর পূর্বসূরী মাত্র।’
কফি এল এ সময়।
সুমাইয়া গিয়ে কফি নিয়ে এসেছিল। সে বলল, ‘দীর্ঘ ঘুমের পর কফি আপনার ভাল লাগবে।’
‘ধন্যবাদ বোন। জানি না এমন সুখের ঘুম আবার কখন ঘুমাতে পারব।’
আহমদ মুসার এ কথার সাথে সাথে সুমাইয়া, ক্লাউডিয়া, জিয়ানা সবার মুখ ম্লান হয়ে গেল। তারা জেনেছে, শুনেছে, আহমদ মুসার নিশ্চিন্ত বিশ্রামের সুযোগ খুব কমই হয়। শাটল কর্কের মতই অস্থিরভাবে সে দেশ থেকে দেশে, এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ছুটে বেড়াচ্ছে।
‘মাফ করবেন, শান্তির, স্বস্তির একটা স্থির গৃহাঙ্গনের স্বপ্ন আপনি দেখেন না? কিংবা এর প্রতি লোভ আপনার জাগে না?’ বেদনার্ত চোখে বলল ক্লাউডিয়া।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘শান্তি ও স্বস্তির সংজ্ঞা কি ক্লাউডিয়া? শান্তি ও স্বস্তি দু’ধরনের আছে। দেহের শান্তি-স্বস্তি এবং মনের শান্তি-স্বস্তি। দেহের শান্তি ও স্বস্তির জন্যে প্রয়োজন বিশ্রাম। এর জন্যে আল্লাহ রাত এবং রাতের ঘুমকে নির্দিষ্ট করেছেন। কিন্তু মনের শান্তি ও স্বস্তি দিনের বিশ্রাম ও রাতের ঘুম থেকে আসে না। স্থির গৃহাঙ্গনও মনের এ শান্তি-স্বস্তি দিতে পারে না।’
‘তাহলে এ শান্তি ও স্বস্তি কোথা থেকে আসবে?’ বলল ডেবরা।
‘মানব জীবনের স্রষ্টা নির্ধারিত একটা লক্ষ্য আছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্যে মানুষের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্যও নির্দিষ্ট রয়েছে। মানব বিবেকের প্রবণতা এই দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের সাথে সংগতিশীল। মানুষ যখন এই দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে, তখন সমাজে, পরিবারে ও ব্যক্তির জীবনে শান্তি ও স্বস্তির সৃষ্টি হয়। সমাজ ও পরিবারকে বাদ দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তির জীবনে শান্তি ও স্বস্তি আসতে পারে না।’
‘কথাগুলো খুব ভারি। ব্যক্তির শান্তি ও স্বস্তি কি পরিবার ও সমাজের সাথে এতটাই সম্পর্কিত?’ বলল ক্লাউডিয়া।
‘দেহের বিভিন্ন অংশ ও অঙ্গ আছে। সব অঙ্গের সুস্থতাই দেহের শান্তি ও সুস্থতা। অনুরূপভাবে ব্যক্তি, পরিবার ও রাষ্ট্র বা সমাজ মানবজীবনের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন অংশ হলেও অখণ্ড জীবনেরই সে সব অংশ। সুতরাং, সবগুলোর সুস্থতাই জীবনের বা ব্যক্তি জীবনের শান্তি ও সুস্থতা।’ বলল আহমদ মুসা।
‘এক কথায় আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?’ বলল ডেবরা।
‘বলতে চাচ্ছি, সুস্থ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্যে সুস্থ পরিবার এবং তার মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তি গঠনের আবার অন্য কথায়, সুস্থ ব্যক্তি গঠনের মাধ্যমে সুস্থ পরিবার ও সুস্থ সমাজ গঠনের যে আন্দোলন বা যে কাজ তা আঞ্জাম দেয়ার মধ্যেই মানসিক শান্তি ও স্বস্তি নিহিত। অন্য কথায়, এই কাজকে সুকৃতির প্রতিষ্ঠা ও দুষ্কৃতির প্রতিরোধও বলা যেতে পারে।’
‘আপনি বোধ হয় শেষ কাজটাই করছেন?’ বলল রালফ ফ্রিক।
‘এ কাজ কমবেশি সবাই করে, তোমরাও কর।’
‘বিন্দুও পানি, সিন্ধুও পানি। কিন্তু তাই বলে বিন্দু কখনই সিন্ধু নয়।’
‘তুমি বুঝি হাইড্রোলজির ছাত্র?’
‘হ্যাঁ। আপনি জানলেন কি করে?’ বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে বলল রালফ ফ্রিক।
‘তোমার বিন্দু ও সিন্ধুর সুন্দর তুলনা দেখে। যাক এসব। তোমাদের ঘটনা এখনও জানতে পারিনি আমি।’
‘ঠিক আছে, বলছি।’ বলে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকল রালফ। তারপর শুরু করল, ‘আমার আব্বা ডঃ ডিফরজিস। আমার পিতা আইনের অধ্যাপক এবং প্যারিসের সবচেয়ে নামকরা আইন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। একটা আন্তর্জাতিক চক্র তাকে দিয়ে একটি কাজ করাতে চাচ্ছিল। কিন্তু রাজি হননি তিনি। আমাদের কিডন্যাপ করা হয় আব্বার উপর প্রতিশোধ নেবার জন্যে। আমাদের পণবন্দী রেখে আব্বাকে রাজি হতে বাধ্য করতে চেয়েছিল ওরা।’ থামল রালফ।
আহমদ মুসার চোখে-মুখে গভীর ঔৎসুক্য। বলল, ‘কি কাজ করাতে চেয়েছিল বলতে পার কি?’
‘ক্যামেরুনের চীফ জাস্টিস ডঃ উসাম বাইক আমার আব্বার পালক পুত্র এবং ছাত্র। তারা চাচ্ছিল, আব্বার মাধ্যমে চীফ জাস্টিসকে দিয়ে একটা কাজ করাতে।’
‘সেই কাজটা কি?’
‘আমি ঠিক জানি না, তবে এটুকু শুনেছি যে, সেটা একটা সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যাপার।’
‘সম্পত্তি!’ আহমদ মুসার কণ্ঠে বিস্ময়ের যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল।
‘তাই শুনেছি।’ আহমদ মুসার কণ্ঠ রালফকে অবাক করেছে এবং অন্য সবাইকেও।
‘সেই আন্তর্জাতিক চক্র কারা? ‘ব্ল্যাক ক্রস’ কি?’
আহমদ মুসার কণ্ঠে ব্ল্যাক ক্রস-এর নাম উচ্চারিত হবার সাথে সাথেই রালফ ফ্রিক ও ডেবরার চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল ভয়ে।
রালফ সোজা হয়ে বসে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল, ‘ঠিক বলেছেন, কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?’
‘ঠিক বলছ, ব্ল্যাক ক্রস?’ বলতে বলতে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। তার চোখে-মুখে উত্তেজনার ছাপ।
কয়েকবার এদিক-ওদিক পায়চারী করল। তারপর এসে সোফায় বসে বলল, ‘রালফ, তোমার আব্বাকে এখনি টেলিফোন কর। তোমাদের খবর জানাও এবং তাকে সাবধানে থাকতে বল।’
‘কেন বলছেন এ কথা?’
‘যা বলছি, দয়া করে শোন।’
রালফ আর কোন কথা বলল না। উঠে গেল তার কক্ষে। দু’মিনিটও যায়নি, ফিরে এল সে। লাউঞ্জে ঢুকতে ঢুকতে বলল, ‘আব্বা কুমেট চলে এসেছেন।’
‘কুমেট চলে এসেছেন? কবে?’
‘আজ। সন্ধ্যা ছয়টায় পৌঁছার কথা।’
আহমদ মুসা সময় শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তার ঘড়ির দিকে তাকাল। বেলা সোয়া ছয়টা। আহমদ মুসা বলল, ‘রালফ, তৈরি হয়ে নাও। এয়ারপোর্ট যেতে হবে।’
আহমদ মুসার মুখের দিকে তাকিয়ে রালফ কোন কথা না বলে উঠে দাঁড়াল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘মাফ করবেন, আপনি কি কোন আশংকা করছেন?’
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘আমি ব্ল্যাক ক্রসকে যতটা জানি, তাতে আমার অনুমান, তোমার আব্বাকে তারা কিডন্যাপ করবে।’
রালফ এবং ডেবরার মুখ ছাইয়ের মত সাদা হয়ে গেল। কোন কথা রালফের মুখে যোগাল না। মুহূর্ত কয়েক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল আহমদ মুসার দিকে।
ক্লাউডিয়ারাও উঠে দাঁড়িয়ে ছিল। ক্লাউডিয়া বলল, ‘আমরা যেতে পারি না? গাড়ি আছে।’
ক্লাউডিয়ার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আহমদ মুসা রালফের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমার আব্বা তোমার খালাম্মার ওখানে উঠতে পারেন?’
‘জ্বি, হ্যাঁ।’ বলল রালফ।
‘তোমার খালু সাহেব, খালাম্মা নিশ্চয় এয়ারপোর্টে যাবেন তোমার আব্বাকে রিসিভ করতে?’
‘অবশ্যই।’
‘তাহলে ক্লাউডিয়া, তোমরা যেতে পার।’ বলল আহমদ মুসা ক্লাউডিয়ার দিকে চেয়ে।
ক্লাউডিয়া, জিয়ানা, সুমাইয়াদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আনন্দে। এরকম একটা মুহূর্তে আহমদ মুসার পাশে থাকতে পারাকে তারা তাদের সৌভাগ্য মনে করছে।
সবাই প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে এল।
আহমদ মুসা ও রালফ উঠল এক গাড়িতে এবং ক্লাউডিয়ার নেতৃত্বে মেয়েরা উঠল অন্য গাড়িতে।
আহমদ মুসা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘দেরি হয়ে গেল রালফ। প্লেনের যদি দেরি না হয়, ঠিক সময়ে পৌঁছা আমাদের জন্যে কঠিন হবে।’
বলে আহমদ মুসা গাড়িতে স্টার্ট দিল।
দুইটি গাড়ি ছুটে চলল এয়ারপোর্টের দিকে।
শহরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে এয়ারপোর্ট।
প্রায় এসে গেছে আহমদ মুসারা এয়ারপোর্টে।
আহমদ মুসার গাড়ি আগে এবং পেছনে ক্লাউডিয়ার গাড়ি।
আহমদ মুসা সামনের সিগন্যাল দেখে বুঝল, তাকে একটু সামনে গিয়ে বাঁয়ে ঘুরতে হবে ‘আগমন’ টার্মিনালের কারপার্কে গাড়ি রাখার জন্যে।
আহমদ মুসা গিয়ারে হাত রাখল গাড়ি স্লো করে মোড় নেবার জন্যে।
ঠিক এই সময়েই আহমদ মুসা দেখল, আগমন টার্মিনালের কারপার্কের দিক থেকে রাস্তার নির্গমন লেন দিয়ে একটা গাড়ি পাগলের মত ছুটে বেরিয়ে আসছে। সামনের গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে হর্নও দিল অত্যন্ত দ্রুত তালে।
হর্ন শুনে চমকে উঠল আহমদ মুসা। ব্ল্যাক ক্রসের কোড। তাহলে কি…।
চিন্তার সাথে সাথেই আহমদ মুসা রিয়ার ভিউ-এর দিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত গাড়িটা ডান দিকে ঘুরিয়ে রাস্তার পাশে নিয়ে নিল। কিন্তু রাস্তার নির্গমন লেনে যাওয়ার কোন উপায় নেই। মাঝখানে লোহার জালের ডাবল বেড়া। পেছনে গাড়ির সারি। কোনদিকে নড়ার উপায় নেই।
সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল আহমদ মুসা।
গাড়ির দরজা খুলে এক ঝটকায় বেরিয়ে এল সে। হাতে সাদা নলের একটা পিস্তল। পিস্তলের বাঁটের দিকটা হাতের মধ্যে, শুধু লম্বা নলটাই দেখা যায়।
গাড়ি থেকে বের হবার সঙ্গে সঙ্গেই তার ডান হাতটি বিদ্যুৎ গতিতে উপরে উঠল।
নির্গমন লেনের পাগলা গতির গাড়িটা তখন আহমদ মুসার সমান্তরাল থেকে অনেকখানি সামনে এগিয়ে গেছে। পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রী কৌণিক অবস্থান নিয়ে আহমদ মুসার হাত উপরে উঠেছিল। পর পর দু’টি দুপ দুপ শব্দ উঠল।
রাস্তার দু’টি লেনই মহাব্যস্ত। কারও ভ্রূক্ষেপ এদিকে নেই। দু’একজনের দৃষ্টি এদিকে পড়লেও তাদের মনে সামান্য অলস ঔৎসুক্য জাগল মাত্র।
আহমদ মুসা সাইলেন্সার ও পিস্তলটি পকেটে ফেলে গাড়ির দিকে ফিরল।
আহমদ মুসার গাড়ি রাস্তার পাশে চলে আসার সাথে সাথেই ক্লাউডিয়া তার গাড়িটিও আহমদ মুসার গাড়ির পেছনে রাস্তার পাশে এনে দাঁড় করিয়েছিল।
রালফ, ক্লাউডিয়া, ডেবরা, জিয়ানা, সুমাইয়াসহ সকলেরই চোখ-মুখ উদ্বেগে ভরা। ঠোঁট শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে সকলের। তারা বুঝতে পারছে না কি ঘটেছে। ভেলকিবাজীর মতই মনে হচ্ছে আহমদ মুসার গোটা কাজ।
রালফ গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। ক্লাউডিয়ারাও এসে দাঁড়াল সেখানে। কিন্তু তাদের মুখে কোন কথা নেই।
‘চল আমরা অ্যারাইভাল টার্মিনালে যাই। সেখানে গেলে সব জানতে পারব। এদিক দিয়ে পাগলের মত যে গাড়িটা গেল সেটা ব্ল্যাক ক্রসের বলে আমি মনে করছি।’
‘তার অর্থ…।’ কথা শেষ করতে পারল না রালফ। রুদ্ধ হয়ে গেল তার কণ্ঠ।
আহমদ মুসা রালফের পিঠ চাপড়ে বলল, ‘ভেংগে পড়ো না। চল আমরা টার্মিনালে যাই।’
বলে আহমদ মুসা গাড়ির দিকে অগ্রসর হল।
সবাই গিয়ে গাড়িতে উঠল।
পৌঁছল গিয়ে টার্মিনালে।
পুলিশে-মানুষে মিলে সেখানে ছোট-খাট একটা জটলা।
আহমদ মুসা, রালফ এবং ডেবরা সেখানে গাড়ি থেকে নামল। তারা নামতেই একজন মধ্যবয়সী মহিলা এসে জড়িয়ে ধরল রালফকে। চিৎকার করে বলল, ‘তোরা কোত্থেকে এলি বাবা? তোদের জন্যে তোর আব্বা এসেছিলেন, কিন্তু সর্বনাশ হয়ে গেছে!’
মধ্যবয়সী একজন ভদ্রলোক এসে দাঁড়াল ডেবরার পাশে। কাছে টেনে নিয়ে বলল, ‘তোমরা কোত্থেকে এলে? কিভাবে মুক্তি পেলে? বাসায় গিয়েছিলে?’
ডেবরা আহমদ মুসাকে দেখিয়ে বলল, ‘উনি আমাদের মুক্ত করেছেন। বাসার উপর ওরা চোখ রেখেছে বলে আমরা বাসায় যাইনি।’
রালফের খালাম্মা রালফের কাছ থেকে এসে জড়িয়ে ধরল ডেবরাকে। বলল, ‘কেমন ছিলে মা তোমরা? তোমার শ্বশুর কি যে খুশি হতো তোমাদের দেখলে! কিন্তু সর্বনাশ হয়ে গেল। এখন কি হবে?’
আহমদ মুসা এগিয়ে গেল মধ্যবয়সী সেই ভদ্রলোকের দিকে। এ সময় রালফও এগিয়ে এল তার খালুর দিকে। আহমদ মুসাকে দেখিযে বলল, ‘ইনি আমাদের জীবন বাঁচিয়েছেন এবং আমাদের মুক্ত করেছেন।’
‘তোমার নাম কি? তুমি কে বাবা? ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন।’ বলল রালফের খালু।
রালফের খালাও তাদের কাছে এগিয়ে এসেছিল।
রালফ মুখ খুলেছিল তার খালু সাহেবের প্রশ্নের উত্তরে কিছু বলার জন্যে। কিন্তু তার আগেই আহমদ মুসা বলল, ‘এসব পরে হবে। দয়া করে বলুন, যে গাড়িতে করে রালফের আব্বাকে ওরা নিয়ে গেছে, তার নাম্বার কি আপনি দেখেছেন?’
‘দেখেছি। কিন্তু…।’ বলে একটু থামল। বোঝা গেল, স্মরণ করার চেষ্টা করছে গাড়ির নাম্বার। বলল, ‘কুমেট-২৩৫…।’ থেমে গেল। স্মরণ করতে পারল না।
‘২৩৫৪৫৬ কি?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক এ রকমই। তুমি জানলে কি করে?’
‘গাড়ির রং কি নীল?’ বলল আহমদ মুসা।
‘হ্যাঁ, নীল। তুমি দেখেছ গাড়ি?’
‘দেখেছি।’ বলে আহমদ মুসা একটু থামল। তারপর বলল, ‘আমরা এখান থেকে যেতে পারি।’
‘হ্যাঁ, পুলিশ গাড়ির নাম্বার নিয়েছে। ওরা কি করল খোঁজ নিতে হবে।’
গাড়ি থেকে ক্লাউডিয়ারা সবাই নেমে এসেছিল। সবারই উদ্বেগ ভরা মুখ।
‘গাড়ির নাম্বারটা ভুয়া। পুলিশ কিছুই খুঁজে পাবে না।’
‘ভুয়া? বুঝলে কি করে তুমি?’ বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে বলল রালফের খালু ভদ্রলোকটি।
‘গাড়িতে ঠিক নাম্বার প্লেটটি রেখে কি কেউ কিডন্যাপের মত কাজ করতে আসে জনাব?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক বলেছ তুমি। তোমার তো সাংঘাতিক বুদ্ধি! গাড়ির নাম্বার কেমন গড় গড় করে বলে গেলে!’
‘তাহলে আমরা এখন যেতে পারি’ আহমদ মুসা বলল।
‘যেতে পারি। একবার পুলিশ অফিসে যাওয়া দরকার কিনা। ওরা কি করছে দেখা দরকার। তাড়াও দেয়া দরকার।’
‘ঠিক আছে যেতে পারেন। আমার একটু ভিন্ন কাজ আছে।’
‘ঠিক আছে। আমি তাহলে রালফ ও ডেবরাকে নিয়ে পুলিশ অফিসের দিকে যাই।’
আহমদ মুসা কিছু বলার আগেই রালফ ফ্রিক তার খালু ভদ্রলোককে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘খালু সাহেব, আপনি একে জানেন না। পরে বলব আপনাকে। কোন উপকার করলে ইনিই করতে পারেন। ডেবরা আপনার সাথে যাক। আমি এর সাথে থাকতে চাই।’
‘আমার ভয় করছে। দু’জন একসাথে থাকব।’ বলল ডেবরা।
‘আমার মনে হয়, রালফের আব্বাকে তাদের কাজ করিয়ে দিতে বাধ্য করার জন্যে ওরা সব উপায়েরই সদ্ব্যবহার করবে। সুতরাং, রালফ এবং ডেবরাকে একটু সরেই থাকা দরকার।’ বলল আহমদ মুসা।
রালফের খালু ও খালাম্মার চোখে নতুন করে ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠল। তার খালাম্মা বলল, ‘সেটাই ভাল। ওরা একটু সরে থাক। সব সময় যোগাযোগ রাখলেই চলবে।’ বলে স্বামীর দিকে চেয়ে বলল, ‘চল, আমরা দু’জন পুলিশ অফিস দিয়ে যাই।’
কথা শেষ করে ভদ্রমহিলা ডেবরাকে একটু চুমু খেয়ে ক্লাউডিয়াদের দিকে চেয়ে বলল, ‘তোমরা বোধ হয় একসাথেই থাকছ? ওদের দেখো বাছারা।’
বলে সে গাড়ির দিকে এগোলো। রালফের খালুও গিয়ে গাড়িতে উঠল।
আহমদ মুসারাও গাড়িতে উঠল তাদের সাথে সাথেই।
তিনটি গাড়িই একসাথে ছাড়ল। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে তারা দু’টি ভিন্ন পথে এগিয়ে চলল। | ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top