৪
গার্লস ক্যাডেট কোরের রেস্টহাউস। রেস্টহাউসের লাউঞ্জ।
লাউঞ্জে বসে আছে রালফ, ডেবরা, ক্লাউডিয়া, জিয়ানা, সুমাইয়া এবং অন্যান্যরা। শুধু হাজির নেই আহমদ মুসা। সে টয়লেটে।
কথা বলছিল ডেবরা, ‘আহমদ মুসা সম্পর্কে গল্প শুনে বুঝতে পারতাম না তিনি কত বড়। আজ চোখে দেখে বুঝলাম।’
‘কোন ঘটনার কথা বলছ?’ ক্লাউডিয়া জিজ্ঞেস করল।
‘কোন ঘটনার কথা বলব! সব ঘটনাই একটা করে বিস্ময়। মনে হয়, যেন যাদুবলে আগে থেকেই তিনি সব জানতে পারেন। দেখ, তিনি আব্বার কিডন্যাপ হওয়ার কথা বললেন, ঠিক ঠিক তা ঘটে গেল। আবার দেখ, আমরা কিছুই বুঝলাম না, উনি ব্ল্যাক ক্রস-এর গাড়ি চিনে ফেললেন। তার নাম্বারও মুখস্থ করলেন কখন যেন। পরে প্রমাণ হলো, ঠিকই ব্ল্যাক ক্রস-এর গাড়ি।’
‘আমরা সবাই গাড়ি দেখেছিলাম, কিন্তু রং না শুনলে এখন বলতে পারতাম না।’ বলল ক্লাউডিয়া।
‘ঠিক, শোনার পর আমার মনে পড়েছিল গাড়িটা নীল ছিল।’ বলল জিয়ানা।
‘আমি তো ওর পাশে ছিলাম। কোন কিছু বুঝতে, সিদ্ধান্ত নিতে এবং তা সম্পাদন করতে কোন সময় তার নষ্ট হয় না। এমন ব্রেইন খুবই দুর্লভ, খুব অল্পই এরা পৃথিবীতে আসেন।’ বলল রালফ।
‘অদ্ভুত ঠাণ্ডা মানুষ তিনি। কোন কিছুই যেন তাকে উত্তেজিত করতে পারে না। প্রথম পরিচয় তার সাথে এক হোটেলে। একজন নিগ্রোকে বাঁচাবার জন্যে একদল গুণ্ডার সাথে লড়ে তাদের মেরে ফ্ল্যাট করে দিলেন। খেতে খেতে উঠে গিয়েছিলেন, মারামারির পর আবার এসে খেলেন। যেন কিছুই ঘটেনি।’ বলল সুমাইয়া।
এ সময় আহমদ মুসা প্রবেশ করল লাউঞ্জে। তার মাথায় টুপি। এশার নামায পড়ে এলো সে।
বসল আহমদ মুসা গদিওয়ালা একটা মোড়ায়। চার সোফাই অকুপাইড। পাঁচটি সিঙ্গেল সোফায় বসেছে রালফ, ডেবরা, নেকা, রিশলা ও জিয়ানা এবং ট্রিপল সিটের দু’টি সোফার একটিতে বসেছে ক্লাউডিয়া, অন্যটিতে সুমাইয়া। তাদের দু’জনের পাশেই দুটো করে সিট খালি। আহমদ মুসা সেখানে বসলো না।
‘মাফ করবেন জনাব, ক্লাউডিয়া ও সুমাইয়া আপার মত আপনার ঘনিষ্ঠজনদের পাশে বসাও কি নিষেধ?’ বলল ডেবরা।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘এমন প্রশ্ন তুললে কেন?’
‘তুললাম এ কারণে যে, ক্লাউডিয়া এবং সুমাইয়া আপার পাশে দু’জনের জায়গা খালি থাকতেও সেখানে না বসে আপনি তাদের অপমান করেছেন।’ বলল ডেবরা।
‘কি বলছ তুমি ডেবরা?’ ক্লাউডিয়া এবং সুমাইয়া দু’জনেই বলে উঠল।
‘না আপা, ওকে জবাব দিতে দাও।’ বলল ডেবরা জেদের স্বরে।
মিষ্টি একটা হাসি আহমদ মুসার ঠোঁটে। বলল, ‘ঘনিষ্ঠজনদের নিকটবর্তী হওয়ার ব্যাপারেই নিষেধ বেশি।’
‘কেন?’ বলল ডেবরা।
‘ছেলে ও মেয়েদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার মধ্যে বিপদ রযেছে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘যে বিপদের কথা বলছেন বুঝতে পেরেছি। ছেলে-মেয়েদের নিজস্ব শক্তির প্রতি এটা অনাস্থা নয় কি? মাফ করবেন, আপনি, ক্লাউডিয়া ও সুমাইয়ার প্রতি এই অনাস্থা কি কেউ পোষণ করতে পারে?’
গম্ভীর হলো আহমদ মুসা। বলল, ‘দেখ ডেবরা, আইন বিশেষ করে খোদায়ী আইন তৈরি হয়েছে ব্যক্তিকে সামনে রেখে নয়। আল্লাহ্ তাঁর আইন দিয়েছেন মানুষের প্রকৃতি ও প্রবণতা সামনে রেখে, যা তিনিই সৃষ্টি করেছেন।’
‘মানুষের প্রকৃতি ও প্রবণতার গতি কি সব সময় মন্দের দিকে?’ বলল ডেবরা।
‘তুমি একটা জটিল প্রসংগ তুলেছ ডেবরা। মানুষের মধ্যে ভালো প্রকৃতি ও প্রবণতা এবং মন্দ প্রকৃতি ও প্রবণতা দুই-ই সুপ্ত আছে। বাইরের কোন দৃশ্য বা কথা বা ঘটনা মন্দ প্রবণতাকে উস্কে দেয়, আবার কোন দৃশ্য বা কথা বা ঘটনা ভালো প্রবণতাকে জাগিয়ে তোলে। আল্লাহ্র আইনের লক্ষ্য হলো, যে দৃশ্য বা যে কথা বা যে ঘটনা বা পরিবেশ মন্দ প্রবণতাকে উস্কে দেয়, তাকে বন্ধ করা। এটা মেনে চললে মানুষ সুস্থ থাকে, সমাজ সুস্থ থাকে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আপনাদের মত অনড় নৈতিকতা ও দৃঢ় চরিত্রের লোকদের এসব মেনে চলা কি জরুরি?’ বলল ডেবরা।
‘একজন সুস্থ–সবল ব্যক্তির শরীরে রোগ-জীবাণু কখন প্রবেশ করে, সে জানতে পারে না। যখন জানতে পারে, তখন দেখে সে আক্রান্ত। এভাবেই একজন দৃঢ় চরিত্রের লোকও ঘটনা ও পরিবেশের কারণে তার অজান্তেই মন্দ প্রবণতায় আক্রান্ত হতে পারে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আপনার নিজের প্রতিও এ অনাস্থা আপনার আছে?’ ডেবরা বলল।
‘মানবসুলভ সকল দোষ–গুণ নিয়ে আমি একজন মানুষ। অন্যদের মধ্যে যে দুর্বলতাগুলো রয়েছে, সে সব আমার মধ্যেও আছে। আল্লাহর আইন মেনে চলে আমি সে দুর্বলতা থেকে বাঁচতে চাই।’
‘আমাদের পশ্চিমী সমাজে এই নৈতিকতা নেই। মাথায় রুমাল পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে সহ্য করা হচ্ছে না। আপনি যে দুর্বলতা থেকে বাঁচতে চাচ্ছেন, সে দুর্বলতা থেকে বাঁচার কোন সুযোগ পাশ্চাত্য সমাজে নেই। এই অবস্থায় পাশ্চাত্যের মেয়েদের জন্যে আপনার বক্তব্য কি?’ বলল জিয়ানা।
‘এদিক থেকে পাশ্চাত্যের মেয়েরা অবস্থার একটা অসহায় শিকার। তবে সমাজ ব্যবস্থা যা-ই হোক, রীতি–সংস্কৃতি যা-ই হোক, প্রতিটি মানুষের মনে স্রষ্টার মোতায়েন করা বিবেক নামক এক প্রহরী আছে, যে সব সময় ভাল কোনটা বলে দেয়, ন্যায় কোনটা বলে দেয় এবং সকল অনুচিত কাজ ও অন্যায়ের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। ছেলেমেয়েদের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিবেকের এই খবরদারি আছে। পাশ্চাত্যের যে মেয়েরা বিবেকের এই নির্দেশ মেনে চলতে পারে, তারা পাশ্চাত্য সমাজে থেকেও অনন্য চরিত্রের অধিকারী হয়।’
‘নর-নারীর মধ্যে হৃদয়ের সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ার যে স্বাভাবিকতা, তাকে তাহলে অস্বীকার করতে হবে?’ বলল ডেবরা।
‘না, ডেবরা। স্বাভাবিক হলে তা অস্বীকার করা যাবে না।’ বলল আহমদ মুসা।
‘এর মধ্যে স্বাভাবিক–অস্বাভাবিক বলে কি দুই ভাগ আছে?’ জিয়ানার প্রশ্ন।
‘অবশ্যই আছে। ঘনিষ্ঠ না হবার পরেও হৃদয়ের সম্পর্ক কখনও সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু তা নীতি–সংস্কৃতির সীমা যদি লংঘন না করে এবং যদি তা কোন পরিবার ও সমাজ–সম্পর্কের প্রতি হস্তক্ষেপকারী না হয়, তাহলে একে স্বাভাবিক বলা যাবে।’
‘মানুষ ও সমাজ সম্পর্কের এত গভীরে গিয়ে আপনি ভাবেন?’ বলল জিয়ানা।
‘খুব গভীরের কথা এটা নয় ডাঃ জিয়ানা। মানুষ কে, কি দায়িত্ব নিয়ে সে দুনিয়ায় এসেছে এবং কোথায় কেন সে যাচ্ছে- এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সন্ধান করলে মানুষ ও সমাজ সম্পর্কের এ বিষয়গুলো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের হয়ে দাঁড়ায়।’
‘বিপ্লবী হতে আপনাকে কে বলেছিল? কেন আপনি দার্শনিক কিংবা ধর্মপ্রচারক হননি?’ সোফা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল ক্লাউডিয়া।
সোফা থেকে উঠে ক্লাউডিয়া আহমদ মুসার কাছে এসে বলল, ‘আপনি ওখানে গিয়ে বসুন।’
‘আমি বসে আছি, এটা কি আসন নয়?’ বলল আহমদ মুসা।
‘দেখুন, তাহলে আমি মেঝেতে বসে পড়ব।’
আহমদ মুসার ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল। সে উঠে গিয়ে ক্লাউডিয়ার সোফায় গিয়ে বসতে বসতে বলল, ‘এ জেদটা ঠিক ডোনার মত হলো।’
‘আকাশের চাঁদের সাথে মাটির প্রদীপের তুলনা করা ঠিক হলো না।’ বলল ক্লাউডিয়া ম্লান হেসে।
‘চাঁদ এবং মাটির প্রদীপের এই তুলনা তুমি ঠিক করলে না।’ বলল আহমদ মুসা।
‘কেন? সে রাজকুমারী এবং একজন বিশ্ববিপ্লবীকে জয় করে নেয়ার মত দুর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারী।’ ক্লাউডিয়া বলল।
‘হয়তো এতে সে জেতেনি। অনিশ্চিত ও দুঃখের এক জীবন সে বেছে নিয়েছে।’
‘এ যদি জিত না হয়, তাহলে এ পরাজয় লাখো জয়ের চেয়ে মধুর।’ বলল জিয়ানা।
এদিকে আহমদ মুসা তার মোড়ার সিট থেকে উঠার সঙ্গে সঙ্গে ডেবরা ছুটে এসে সেখানে বসে বলল, ‘আপা, আপনি ঐ সোফায় গিয়ে বসুন।’
‘বেশ ভাল, আমি রালফের পাশে গিয়ে বসি, তাই না? ওর সামনেই ওর কথা ভায়োলেট করতে বল?’
ডেবরা হাসল। বলল, ‘থ্যাংকস। আমি ভুলে গিয়েছিলাম।’ বলে ডেবরা উঠে তার সোফায় ফিরে গেল।
ক্লাউডিয়া বসল আহমদ মুসার সিটে।
আহমদ মুসা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিল।
‘ভাইয়া, আপনি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ক্লাউডিয়া আপার প্রশ্ন চাপা দিতে পারবেন না।’ আহমদ মুসাকে উদ্দেশ্য করে বলল ডেবরা।
‘আমাকে বেরুতে হবে বোন।’ বলে একটু থামল আহমদ মুসা। শুরু করল আবার, ‘ক্লাউডিয়ার প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজা। আল্লাহর জীবন বিধান ইসলামে প্রত্যেকেই বিপ্লবী, প্রত্যেকেই ধর্মপ্রচারক এবং দার্শনিক। ইসলামী সমাজে ধর্মপ্রচারের দায়িত্ব পালনে যিনি শীর্ষে, তিনিই রাষ্ট্রপ্রধান হন, তিনিই যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতিত্বের দায়িত্ব পালন করেন।’
কথা শেষ করেই আহমদ মুসা বলল, ‘রাত একটু ভারি হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম। এখন রাত এগারটা। বেরুতে হবে আমাকে এখন।’
‘কোথায়?’ সুমাইয়া বলল।
‘ব্ল্যাক ক্রসের ঘাঁটিতে।’
‘ব্ল্যাক ক্রসের ঘাঁটি? কোথায়?’ বলল ক্লাউডিয়া।
আহমদ মুসা পকেট থেকে মাইক্রো রিমোট সেন্সর বের করল। বোতামে চাপ দিয়ে দেখল, লাল অ্যারো ইন্ডিকেটরটি ঠিক পশ্চিম দিকে ইংগিত করছে। আহমদ মুসা বলল, ‘পশ্চিম দিকে।’
আহমদ মুসাকে ছোট বস্তুটি নিয়ে ব্যস্ত হতে দেখে সবাই উঠে এসেছিল। ঘিরে দাঁড়িয়েছিল আহমদ মুসাকে। মাইক্রো স্ক্রীনে রেড অ্যারোটি সবারই নজরে পড়েছিল।
আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই ক্লাউডিয়া বলে উঠল, ‘অ্যারো হেডের মাথা দেখে কি পশ্চিম দিকের কথা বললেন?’
‘হ্যাঁ।’ বলল আহমদ মুসা।
‘কি জিনিস এটা?’ বলল ক্লাউডিয়া।
‘মাইক্রো সেন্সর।’
‘কিভাবে কাজ করে?’
‘এখান থেকে পঞ্চাশ বর্গমাইলের যে কোন স্থানের মাইক্রো ট্রান্সমিটারের লোকেশন এ বলে দিতে পারে দূরত্বসহ।’
‘ব্ল্যাক ক্রসের ঘাঁটি এখান থেকে কতদূর?’ বলল রালফ।
‘সাত পয়েন্ট ছয় শূন্য কিলোমিটার।’
‘কি করে এটা সম্ভব হলো? ওখানে মাইক্রো ট্রান্সমিটার এল কোত্থেকে?’
‘তোমাদের মনে আছে, এয়ারপোর্ট টার্মিনালের সামনে যখন আমি গাড়ি থামিয়ে নেমেছিলাম, তখন ব্ল্যাক ক্রসের ঐ গাড়ি লক্ষ্যে দু’বার গুলি ছুঁড়েছিলাম। ঐ গুলিতে ছিল রাবার বুলেট। রাবার বুলেটে জড়ানো ছিল মাইক্রো ট্রান্সমিটারের চিপ। রাবার বুলেট গাড়িতে আঘাত করার সাথে সাথে চুম্বক আকর্ষণে তা সেঁটে গেছে গাড়ির বডি বা কোন পার্টসের গায়ে। সেই মাইক্রো ট্রান্সমিটারকেই এ সেন্সর এখন চিহ্নিত করছে।’
সকলের চোখে বিস্ময়! আহমদ মুসা থামলেও কারও মুখেই যেন তৎক্ষণাৎ কথা যোগাল না।
মুহূর্ত কয়েক পরে ডেবরা মুখ খুলল। বলল, ‘চোখের পলক পড়ার মত ঐ অল্প সময়ে এই বুদ্ধি আপনার মাথায় এল কি করে?’
ডেবরা থামতেই জিয়ানা বলল, ‘বলা যায়, এই সেন্সর লোকেট করছে গাড়িটাকে। কিন্তু গাড়িটা যদি হেডকোয়ার্টারে না থাকে?’
‘তাহলে অনিশ্চয়তার এক সমুদ্রে পড়ে যাব।’
‘কিছু মনে করবেন না, আমার কৌতুহল, সেই অবস্থায় আপনি কি করবেন?’ বলল ডেবরা।
‘কি করব, কি করব! গাড়ির জানালা ভেঙ্গে ঢুকে গাড়ির মালিকের ঠিকানা জেনে নেব লাইসেন্স অথবা ব্লু বুক থেকে। এ চেষ্টা ব্যর্থ হলে গাড়ির নাম্বার কাজে লাগিয়ে ভেহিকেল রেজিস্ট্রেশন অফিস থেকে গাড়ির মালিকের ঠিকানা জেনে নেব। এ উদ্যোগ কোন ফল না দিলে বিপদেই পড়ব। সে ক্ষেত্রে রালফের নাম ও ঠিকানাসহ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেব তার বাবার সন্ধান চেয়ে। নিশ্চয় ব্ল্যাক ক্রস তখন হানা দেবে রালফের ঠিকানায়। পালানো শিকার ধরে তাদের দু’জন লোক হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্যে। ব্ল্যাক ক্রস ব্যর্থ হবে, কিন্তু তাদের অনুসরণ করে আমি তাদের ঘাঁটিতে পৌঁছতে পারব।’
শ্বাসরুদ্ধভাবে ওরা শুনছিল আহমদ মুসার কথা। ওদের চোখে অপার বিস্ময় এবং আনন্দ।
‘দুনিয়ার সব বুদ্ধি আপনার মাথায় কম্পিউটারের মত প্রোগ্রাম করে ঢোকানো আছে নাকি?’ বলল ডেবরা।
‘সব মাথাই এক আল্লাহর সৃষ্টি ডেবরা।’ বলে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘আমি একটু তৈরি হয়ে আসি। বেরুবো এখনই।’
‘শুধু আপনি তৈরি হবেন, আমরা তৈরি হবো না?’ বলল রালফ।
আহমদ মুসা দু’পা এগিয়ে থমকে দাঁড়াল। একটু হাসল। বলল, ‘না, তোমরা যাবে না।’
‘তা হয় না।’ বলল রালফ।
‘আপনাকে একা আমরা কি করে ছাড়ব?’ বলল ক্লাউডিয়া।
‘দেখো, আমি যাচ্ছি অনেকটা অনিশ্চিতভাবে। গাড়ি কোথায় আছে জানি না। তোমাদের যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ক্ষতি তো নেই।’ বলল জিয়ানা।
‘ক্ষতি আছে। বেশি লোক গেলে বেশি লোকক্ষয়ের সম্ভাবনা।’
‘এখানে কম লোকক্ষয় হলে যে ক্ষতি হবে সেটাই বেশি ক্ষতিকর।’ বলল ক্লাউডিয়া।
‘তোমরা বুঝছ না, এটা যুদ্ধক্ষেত্র।’ বলল আহমদ মুসা।
‘দেখুন, আমাদের প্রত্যেকের পিস্তল আছে। আমরা পিস্তল চালাতে জানি।’
‘তোমাদের বাপ-মা আছে। সাময়িক আবেগ থেকে এমন সিদ্ধান্ত তোমরা নিতে পারো না।’
‘সাময়িক আবেগ এটা আমাদের নয়। ওমর বায়া আপনার কে? তার জন্যে আপনি জীবন বাজি রেখেছেন। ডঃ ডিফরজিস আপনার কেউ নয়, কিন্তু তার জন্যে আপনি ছুটছেন মৃত্যু ভয় মাড়িয়ে। এসব কি আমাদের কোনই শিক্ষা দেয় না?’ বলল ক্লাউডিয়া আবেগপ্লাবিত স্বরে।
আহমদ মুসা সোফায় বসে পড়ল পিছিয়ে এসে। বলল, ‘আমি তোমাদের বোঝাতে পারছি না। এটা দল বেঁধে যুদ্ধ করার ক্ষেত্র নয়। দুই কারণে। এক. ওরা সংখ্যায় বেশি, দুই. ওরা আগে জানতে পারলে বন্দীদের সরিয়ে নিতে পারে অথবা বন্দীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে।’
‘ঠিক আছে। আমরা বাইরে কোথাও অপেক্ষা করতে পারি না?’ বলল রালফ।
একটু ভাবল আহমদ মুসা। তারপর বলল, ‘ঠিক আছে। পারো। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমরা তৈরি হয়ে নাও।’
ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওরা দুই গাড়িতে করে রেস্টহাউস থেকে বেরিয়ে এল।
সবুজ টিলার উপর অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে ব্ল্যাক ক্রসের সেই বাড়িটি। বাড়িটার আশেপাশে বাড়ি নেই বলে এবং গাছপালা থাকার কারণে আশপাশটা অন্ধকার। অন্ধকারের আরও একটা কারণ, বাড়ির বাইরের অংশে কোন আলো জ্বালানো নেই।
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »