২. অপারেশন তেলআবিব-২

১৫

দানবীয় গতিতে এগিয়ে চলেছে ‘প্যানামে’র বোয়িংটি। নীচে আরব সাগরের অথৈ জল। জেদ্দা ছেড়ে অনেকক্ষণ, আরব-উপদ্বীপের আদিগন্ত বালির রাজ্য আর দেখা যায় না। ইবরাহীম-ইসমাইল (আঃ)-এর স্মৃতিভূমি, মহানবী (সঃ)-এর পূর্ণ কর্মক্ষেত্র, নীল গম্বুজের দেশ শাহ ফয়সলের দেশের ওপর প্রসারিত আকুল দু’টো চোখ এবার আহমদ মুসা বিমানের অভ্যন্তরে সরিয়ে নিল।
বিমানের মধ্যভাগ দিয়ে লম্বালম্বী এক সরু গলিপথ। এর দু’পার্শ্বে সারিবদ্ধ আসন।
প্রথম শ্রেণীর বাম ধারের দ্বিতীয় সারির একেবারে বামপ্রান্তে জানালার ধারে বসেছে আহমদ মুসা।
জানালা থেকে চোখ ঘুরিয়ে ডানপাশে তাকাতে গিয়ে একটি লোকের সাথে হঠাৎ চোখাচোখি হয়ে গেল আহমদ মুসার। লোকটি বসেছে ওধারে দ্বিতীয় সারির প্রথম সিটটিতেই।
শ্বেতাংগ লোকটি। গাঢ় নীল স্যুট পরনে। লম্বাটে মুখ। খাড়া নাক। জোড়া ভ্রু। ছোট করে ছাঁটাচুল। ডান ভ্রুর নীচে চোখের মোহনায় একটি আঁচিল। সবচেয়ে লক্ষণীয় তার কুতকুতে কুৎসিত দু’টো চোখ।
চোখাচোখি হতেই লোকটি অপ্রতিভভাবে চোখ সরিয়ে নিল। মুখও ঘুরে গেল তার সেই সাথেই।
বিস্মিত হল আহমদ মুসা। লোকটি অমন করে মুখ ঘুরিয়ে নিল কেন? তার দিকে অমন করে চোরা দৃষ্টি রাখার কারণ কি লোকটির? সমগ্র অতীতকে সে একবার হাতড়িয়ে দেখল না এই মুখ সে কখনও দেখেনি। হঠাৎ তার মনে পড়ল জেদ্দার রেস্ট হাউসে তার পাশের রুমটিতে এই লোকটিকেই তো সে ঢুকতে দেখেছিল। তখন তার ছিল আরবী পোশাক-আরবী রমাল ছিল মাথায়।
সেই যে মুখ ঘুরিয়েছে লোকটি, আর ফিরে তাকালো না। আহমদ মুসার সন্ধানী মনের কোথায় যেন খচ খচ করতে লাগল।
কেবিন-মাইক থেকে ক্যাপটেনের কণ্ঠ শোনা গেল, লেডিজ এন্ড জেন্টলম্যান, আমরা এখন ৩৩ হাজার ফিট ওপর দিয়ে ঘন্টায় ৫৫০ মাইল বেগে এগিয়ে চলেছি। আর আধ ঘন্টর মধ্যে করাচীতে ল্যান্ড করব।
ক্যাপ্টেনের কথা শেষ হবার সাথে সাথে রোলিং টেবিলে করে নাস্তার ট্রে নিয়ে আগমন ঘটল বিমান বালাদের। স্টুয়ার্ট ককপিটের দিক থেকে নেমে এসে ফার্স্ট ক্লাস রুম হয়ে পিছনের দিকে চলে গেল।
এমন সময় সারির দু’টো আসন থেকে দু’জন লোক উঠে দাঁড়াল। দু’জনেই কালো ধরনের ঢিলা প্যান্ট ও ওভারকোট গায়ে। ওরা সামনের পার্টিসন ডোর ঠেলে অতি দ্রুত চলে গেল ককপিঠের দিকে।
এক মিনিটও অতিক্রান্ত হয়নি। ওদের একজন ফিরে এল। ডান হাতে তার রিভলভার। বাম হাতে বাঘা সাইজের একটি গ্রেনেড সেফটিফিন তুলে নেয়া।
এই সময় বিমানটি দ্রুত বড় ধরনের একটি মোড় নিল। থর থর করে কেঁপে উঠল বিমানটি। ক্যাপ্টেনের কণ্ঠ শোনা গেল কেবিন লাউডস্পীকারে, ভদ্রমহিলা, ভদ্রমহোদয়গণ, আমি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিমানের গতিপথ পরিবর্তন করতে আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। মহাশূন্যের বুকে বিমানের ৯০ জন যাত্রীর মূল্যবান জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার চাইতে, বিমান দস্যুদের নির্দেশ পালন অধিকতর শ্রেয় বলে মনে করেছি। আমরা তাদের নির্দেশে এখন দক্ষিণে গভীর সাগরের দিকে এগিয়ে চলেছি। ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুন।
যাত্রীদের মধ্যে প্রথমে মৃদু গুঞ্জন এবং পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি হল। কিন্তু তারপরই তাদের মধ্যে মৃত্যু স্তব্ধতা বিরাজ করতে লাগল। প্রত্যেকের চোখে উদ্বেগ-আতংকের ঢেউ।
আহমদ মুসা শান্ত চোখে পার্টিশন ডোরে দাঁড়ানো লোকটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। শ্বেতবর্ণ চেহারা কিন্তু মুখাকৃতি ও দেহের মাপে লোকটি জাপানী ও ফিলিপিনোদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। লোকটি পাথরের মুর্তির মত স্থির অচঞ্চল দাঁড়িয়ে আছে।
এ বিমান-দস্যুতার কারণ কি? অর্থ লাভ, না কোন যাত্রী অপহরণের বিশেষ উদ্দেশ্য? কিন্তু কোন যাত্রীর প্রতিই তাদের মন দিতে দেখা যাচ্ছে না তো। আহমদ মুসা জেদ্দার রেস্টহাউসে দেখা সেই সহযাত্রীটির দিকে তাকাল। দেখল, সে তাকিয়ে আছে সেই বিমানদস্যুর দিকে। তার মুখে কিন্তু উদ্বেগ-আতংকের লেশমাত্র নেই, বরং কেমন একটা উন্মুখ ভাব তার চোখে। বিস্মিত হলো আহমদ মুসা।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল আহমদ মুসা। নিঃসীম নীল জলরাশি। নীল জলের নীল সীমানা নীল আকাশের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সে নীলের সীমানা পেরিয়ে হারিয়ে গেল আহমদ মুসার মন। পাকিস্তান হয়ে কারাকোরামের সিল্ক রোডের পথ ধরে সে প্রবেশ করবে মধ্য এশিয়ায়-এই ছিল তার পরিকল্পনা। কিন্তু কোথায় এখন চলেছে সে? অবশ্য কোন দুঃশ্চিন্তা তার মনে নেই। জ্ঞান ও বিবেকের রায় নিয়ে সে কাজ করে যেতে পারে, ফল তো তার হাতে নেই। আর ফলদানের যিনি মালিক তিনি সর্বজ্ঞ। সুতরাং চিন্তা কি তার!
আহমদ মুসার চিন্তা স্রোতে বাধা পড়ল। কেবিন-মাইক থেকে ঘোষিত হল, ভদ্রমহিলা, ভদ্রমহোদয়গণ! আমরা অল্পক্ষণের মধ্যেই ভারত মহাসাগরের কোন এক দ্বীপে ল্যান্ড করছি। আমি বেল্ট বেধে নেবার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।
আহমদ মুসা তার সন্ধানী চোখ নীচের নীল জলরাশির ওপর মেলে ধরল। আহমদ মুসা মনে মনে হিসেব করে দেখল, বিমান দু’হাজার মাইলের মত এসেছে। বিমান নীচে নামতে শুরু করেছে।
আরো দশ মিনিট কেটে গেল। অবশেষে দৃষ্টির পরিসীমায় ভেসে উঠল ছবির মত একটি দ্বীপ। ক্রমশ স্পষ্টতর হয়ে উঠল দ্বীপটি। চারদিকে অথৈ সাগর জলের মাঝে ছোট একখন্ড মরুদ্যানের মত মনে হচ্ছে দ্বীপটিকে।
চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে বিমানটি নেমে যেতে লাগল দ্বীপের ওপর, গভীর অরণ্যে আচ্ছাদিত দ্বীপ। আহমদ মুসা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করল অল্প কিছু দুরত্বে পাশাপাশি দু’টি গাছের ওপর দু’টি সাদা নিশান উঠে এল। দু’টি নিশানের পাশ দিয়ে মেটে রংয়ের দীর্ঘ একটি রানওয়েও স্পষ্ট হয়ে উঠল।
ভৌতিক সে রানওয়েতে ল্যান্ড করল বোয়িংটি। বিমান দস্যুদের মত একটি চেহারার একদল লোক এসে ঘিরে দাঁড়াল বিমানটিকে। ভিতরের বিমান-দস্যুটি কিন্তু যেমন দাঁড়িয়ে ছিল, তেমনিভাবে দাঁড়িয়ে রইল।
কি ঘটে কি হয় রুদ্ধ নিঃশ্বাসে সবাই মুহূর্ত গুণছে। বিমানের ফ্লোরে অনেক পায়ের শব্দ শোনা গেল। সাত আটজন ওরা উঠে এসেছে বিমানে। হাতে ওদের সাব-মেশিন গান। ওদের কয়েকজন এসে ঢুকল প্রথম শ্রেণীর কেবিনে। ইতিমধ্যে ককপিটের বিমান-দস্যুও এসে প্রবেশ করল এখানে। ওদের একজন বলল, ভদ্র মহিলা, ভদ্র মহোদয়গণ, “আমরা দুঃখিত যে একজন মাত্র লোকের জন্য আপনাদের কষ্ট দিয়েছি। আমরা তাকে নিয়ে যাচ্ছি। এরপর আপনারা মুক্ত।”
বক্তার দেহটি দামী কাল স্যুটে আবৃত। টাইটিও কাল। কাল টাইয়ের বুকে ধবধবে সাদা একটি সাপ আঁকা। সাপের মুখে রক্তাক্ত তিনটি ‘‌C’। উষ্ণ এক রক্তস্রোত বয়ে গেল আহমদ মুসার গোটা শরীরে। ট্রিপল সি? সেই কুখ্যাত ‘কু ক্লাক্স ক্লান’ এরা, যাদের হাতের প্রাণ দিচ্ছে লক্ষ লক্ষ অশ্বেতাংগ মানুষ?
লোকটির কথা শেষ হতেই রিভলভার নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা বিমান দস্যুটি অকস্মাৎ সামনের আসনের একজন লোকের মাথায় রিভলভারের বাঁট দিয়ে আঘাত করে বলল, “হ্যালো, কালো বাজ, এখনও তোমার ঘুম ভাঙেনি, বুঝতে পারনি যম এসেছে তোমার?
‘কালো বাজ’ নামক লোকটি উঠে দাঁড়াল। সেও জাপানী বা ফিলিপাইনোদের মতই খাটো। কিন্তু তার নাসিকা উন্নত, নীল টানা চোখ, মাথায় ঘন কাল কোঁকড়ানো চুল।
লোকটি উঠে দাঁড়াতেই আরও দু’জন বিমান দস্যু তার দিকে এগিয়ে এল এবং তারা তাকে দু’দিক থেকে ধরে টেনে নামিয়ে নিয়ে গেল বিমান থেকে।
বিমান দস্যুদের সবাই বিমান থেকে নেমে গেল। আহমদ মুসা দেখল, জেদ্দা রেস্টহাউসে দেখা সেই কুতকুতে চোখের সহযাত্রীটিও তাদের পিছনে নেমে যাচ্ছে।
বিমান এবার মুক্ত। কেবিন-মাইকে ক্যাপ্টেন বললেন, আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশে উড়ব। বিমানের গেট বন্ধ হতে যাবে, এমন সময় কয়েকজন বিমান দস্যু, আর সেই কুতকুতে চোখের লোকটি দ্রুত ফিরে এল। বিমানে প্রবেশ করল তারা। সোজা এসে তারা দাঁড়াল আহমদ মুসার সামনে। একজন আহমদ মুসাকে বলল, আপনি নেমে আসুন।
এই অভাবিত ঘটনা আহমদ মুসাকে চমকে দিয়েছিল। সে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়েও চুপ করে গেল কি মনে করে। তারপর শান্তভাবে নেমে গেল বিমান থেকে তাদের সাথে।
বিমান থেকে নেমে মেটে রংয়ের রানওয়ে ছেড়ে সরু পাথরের গুড়ি বিছানো পথ ধরে তারা এগিয়ে চলল। দু’দিকেই জংগল। অপরূপ সবুজের রাজ্য এই দ্বীপটি। আহমদ মুসা ভাবল, বিচ্ছিন্ন ও বিজন এই দ্বীপে এত বিরাট, এত সুদৃঢ় রানওয়ে এল কোথা থেকে? রানওয়েটি বেশ পুরাতন। তাহলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে কোন শক্তির কি গোপন কোন বিমান ঘাঁটি ছিল এটা?
সেই সরু পথটি তাদেরকে সবুজ বৃহ্ম-লতা পরিবেষ্টিত একতলা এক সবুজ বাড়িতে নিয়ে এল। বাড়িটি একতলা হলেও বিরাট পাথরের তৈরী বাড়িটি খুবই মজবুত।
ইসপাতের দরজাওয়ালা দু’টি ঘর পেরিয়ে তারা এসে পৌঁছল এক হল ঘরে। ঘরে তখন তিনটি প্রাণী। কালো টাইয়ে সাদা সাপওয়ালা সেই লোকটি গা এলিয়ে বসে আছে সোফার পিছনে। আর কিছুক্ষণ আগে বিমান থেকে ধরে আনা ‘কালোবাজ’ নামক লোকটি পড়ে আছে মেঝেতে। তার নগ্ন পিঠে চাবুকের রক্তাক্ত দাগ। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে লোকটি জ্ঞান হারিয়েছে। আহমদ মুসা হল ঘরে প্রবেশ করতে করতে ভাবলো, ঐ চাবুক হয়তো তারই অপেক্ষা করছে। এক যন্ত্রণাদায়ক অনুভুতি এসে তার মনকে আচ্ছন্ন করতে চাইল। কিন্তু আহমদ মুসা আমল দিল না সে চিন্তাকে।
পায়ের শব্দে সোফায় গা এলিয়ে দেয়া সেই লোকটি চোখ খুলল। একবার আহমদ মুসার ওপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে কুতকুতে চোখের সেই লোকটিকে বলল, এই কি আপনার আহমদ মুসা, মিঃ কোহেন?
-হাঁ, মিঃ স্মিথ।
এবার মিঃ স্মিথ নামক লোকটি সরাসরি আহমদ মুসার দিকে চেয়ে বলল, সত্যিই আপনি কি সেই আহমদ মুসা? আপনি কি সাইমুমের অধিনায়ক?
-হাঁ। পরিষ্কার কন্ঠে বলল আহমদ মুসা।
মিঃ স্মিথ উঠে দাঁড়িয়ে মিঃ কোহেনের দিকে চেয়ে বললেন, ‘আমাদের দাবী মেনে নিলে আমরা আপনার প্রস্তাবে রাজী আছি। জানিয়ে দিন আপনার বসদের। তারপর সে চাবুকধারীদের দিকে চেয়ে বলল, এ ঘরেই এরা থাকবে, বাইরে থেকে তালা দিয়ে চাবি মিস মার্গারেটকে দিয়ে দিও। আর তোমরা চারজন বাইরের ফটক ছেড়ে কোথাও যেও না।
সবাই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। দরজা বন্ধ হল, দরজায় তালা লাগানোর শব্দ পাওয়া গেল সেই সাথে। ওপরে কয়েকটি ঘুলঘুলি এবং ঐ একটি মাত্র দরজা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার আর দ্বিতীয় কোন পথ নেই।
এবার মেঝেতে পড়ে থাকা লোকটির দিকে মনোযোগ দিল আহমদ মুসা। তার মুখের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে দু’হাতে তার মুখ একটু তুলে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে লোকটির চোখ দু’টিও খুলে গেল। নির্বিকার ও নিরুত্তাপ তার দৃষ্টি। আবার চোখ বুজল সে।
-এখন কেমন বোধ করছেন?
লোকটি চোখ খুলল। বিস্ময় তার চোখে। বলল সে, কে আপনি?
-বিমান থেকে আমাকেও ওরা ধরে এনেছে। ‘এ ব্যাপারে আমি আপনার মতই অন্ধকারে।’ বলেই আহমদ মুসা পকেট থেকে রুমাল বের করে তার পিঠের রক্ত ধীরে ধীরে মুছে দিতে লাগল।
-আমাদের অস্তিত্বই আমাদের অপরাধ।
-অর্থাৎ?
-আমাদেরকে ওরা পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলতে চায়।
-আপনার দেশ কোথায়?
-মিন্দানাও।
-ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপে! আপনি মুসলমান?
-হাঁ, আমি মুসলমান।
আহমদ মুসা চিন্তা করল। যেন কিছু মিলিয়ে নিচ্ছে সে। তারপর বলল, আপনি কি আবদুল্লাহ হাত্তা? প্যাসেফিক ক্রিসেন্ট ডিফেন্স আর্মির অধিনায়ক কি আপনিই?
-হাঁ, কিন্তু আপনি কে? এত কথা জানেন কেমন করে? চোখে তার একরাশ বিস্ময়।
আহমদ মুসা অপলক চোখে তাকিয়ে ছিল আবদুল্লাহ হাত্তার দিকে। তার চোখে-মুখে বিস্ময় ও আনন্দের অপূর্ব জ্যোতি। তারপর ধীরে ধীরে মুখ খুলল সে। বলল, ফুল ফুটলে সৌরভ ছোটে।
-কিন্তু আপনি কে?
-আমি আহমদ মুসা।
-কোন আহমদ মুসা। ফিলিস্তিন বিজয়ী সাইমুমের অধিনায়ক আহমদ মুসা?
-হাঁ, সেই হতভাগা আমি।
দু’জনের চোখেই আনন্দের উজ্জ্বল ঢেউ। জড়িয়ে ধরল দু’জন দু’জন কে। আবদুল্লাহ হাত্তা ভুলে গেছে যেন সব বেদনা-সব যন্ত্রণা। তার দু’চোখ বেয়ে নামছে আনন্দের অশ্রু।

গভীর রাত। প্যাসেফিক শিপিং লাইনের একটি জাহাজ এসে নোঙ্গর ফেলল সেই দ্বীপে। আহমদ মুসা ও আবদুল্লাহ হাত্তাকে এনে হাত-পা বেধে ঢুকিয়ে দেয়া হল সেই জাহাজের অন্ধকার সেলে। এরপরই জাহাজ নোঙ্গর তুলল। ভারত মহাসাগরের পানি কেটে কেটে সে জাহাজ এগিয়ে চলল ফিলিপাইনের মিন্দানাও দ্বীপের দিকে।

পরবর্তী কাহিনীর জন্য পড়ুন
মিন্দানাওয়ের বন্দী

Top