২. অপারেশন তেলআবিব-২

কিন্তু কিছুতেই মন নেই মাহমুদের। কাল রাত থেকে সে ভাবছে। ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে সে এক অসহ্য যন্ত্রণায়। কিন্তু এ যন্ত্রণা কাউকে জানানোর নয়। এমিলিয়াকে সে ভালবাসে। এ ভালবাসাই তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে, শুষে নিচ্ছে শক্তি ও উদ্যম। ইসরাইলী বর্বরতার হাত থেকে ওকে বের করে আনতে হলে ঝুঁকি নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু তার এমিলিয়ার জন্য সহকর্মীদের মূল্যবান জীবনকে সে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে কেন?
তেলআবিবের সকল সাইমুম-সদস্যদের মধ্যেও এসেছে ভাবান্তর। এমিলিয়ার ঘটনা সকলের মনকেই পীড়া দিচ্ছে। তারা সকলেই অপেক্ষা করছে নির্দেশের, কিন্তু পাথরের মত নীরব-নিস্পন্দ মাহমুদের কাছ থেকে কোন সাড়া তারা পায়নি।
চিন্তার অথৈ স্রোতে ডুবে গিয়েছিল মাহমুদ। পায়ের শব্দে চমকে দরজার দিকে চোখ ফিরালো সে। দেখল, রায়হান ঘরে ঢুকছে। রায়হানকে দেখে সোজা হয়ে বসে মাহমুদ বলল, কোন মেসেজ রায়হান?
-হেড কোয়ার্টার থেকে আপনার কল, মুসা ভাই কথা বলবেন।
লাফ দিয়ে উঠল মাহমুদ। খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলে আহমদ মুসা লাইনে আসে না, মেসেজ পাঠায়। মাহমুদ দ্রুত রেডিও রুমে চলল।
সালাম বিনিময়ের পর প্রথমেই জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা, এমিলিয়ার খবর কি?
-পরবর্তী কোন খবর আর পাইনি।
-কোথায় রেখেছে তাকে?
-বোধ হয় কারাগারে।
-বোধ হয় কেন? এ খবরটুকুও নেওনি?
মাহমুদ নীরব। কি জবাব দেবে সে? কি বোঝাবে, কেমন করে সে বোঝাবে আহমদ মুসাকে। আহমদ মুসা বোধ হয় আঁচ করতে পারল মাহমুদের অবস্থা। সেও আনমনা হয়ে পড়ল। অনেক আগে ফেলে আসা এক অতীতে হারিয়ে গেল সে। হিমালয়ের এক অন্ধকার গুহায় ফেলে আসা ফারজানার মুখটি অনেকদিন পর আজ তার চোখে ভেসে উঠল। আহমদ মুসা ধীর স্বরে ডাকল, মাহমুদ!
-জি! উত্তর দিল মাহমুদ।
-তোমার দুর্বলতা ঢাকতে গিয়ে, একটি জীবনকে তুমি এক অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে, তা তো আমি ধারণা করতে পারিনি। তুমি কি জান না, ইসরাইলের Indoor Operation-এর শয়তানরা কত নরপশু।
কেঁপে উঠলো মাহমুদ। তার গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল অসহ্য এক যন্ত্রণা। কোন জবাব দিতে পারল না সে।
আহমদ মুসা আবার বলল, শোন আমার নির্দেশ, যে কোন মূল্যে এমিলিয়াকে বাঁচাতে হবে। সে আমাদেরই একজন। তার প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। আমাদের জন্য সে যা করেছে, তা আমরা কেউই ভুলতে পারিনা।
আপনার আদেশ আমরা পালন করব জনাব। ধীর কন্ঠে বলল মাহমুদ। তার চোখে মুখে দৃঢ় সংকল্পের ছাপ।
-আর শোন, আগামী ২৫শে ফেব্রুয়ারী মিসর, সিরিয়া, জর্দান ও লেবাননের সঙ্গে ইসরাইলের শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে। আর ২৭ শে ফেব্রুয়ারী ইসরাইলের ‘সাবাত দিবস’। আজ থেকে ঠিক ১ মাস ১ দিন পর। ইনশাআল্লাহ ঐ দিনটিই হবে ইসরাইল রাষ্ট্রের শেষ আনন্দের দিন। আমি ১১ ই ফেব্রুয়ারী ইসরাইলের শেষ কৃত্যের জন্য তেলআবিব আসছি।

মাহমুদ রেডিও রুম থেকে বেরিয়ে ঘরে প্রবেশ করে দেখে শেখ জামাল বসে আছে।
-কি সংবাদ জামাল? মাহমুদ বলল।
-এইমাত্র কিছু খবর খলিলের কাছ থেকে পাওয়া গেল।
-কি খবর?
-মিস্‌ এমিলিয়াকে আজ সকালে সিনবেথের অপারেশন চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত দু’দিন তাঁর উপর নির্মম অত্যাচার চলেছে, পানিও খেতে দেয়া হয়নি।
-হুঁ! দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে একটি ছোট্ট জবাব দিল মাহমুদ। এক ঘন্টা সময় আছে, যাও প্রস্তুত হও। শেখ জামাল বেরিয়ে গেল। | ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top