২০. অন্ধকার আফ্রিকায়

চ্যাপ্টার

রোসেলিন ড্রইং রুমে প্রবেশ করছিল। সে এসে তার আব্বার পাশে বসতে বসতে বলল, ‘সব ঠিক-ঠাক আব্বা, কোন চিন্তা করো না।’
রোসেলিন ডোনাদের দাওয়াত দিয়েছিল চায়ের। কিন্তু চীফ জাস্টিস ডোনার আব্বার পরিচয় পেয়ে শুধু চায়ের দাওয়াত দিতে রাজী হয়নি। ডোনার কার্ড দেখেই চীফ জাস্টিস চিনতে পেরেছিল ডোনার আব্বা মিশেল প্লাতিনি ডি-বেরী লুইকে।
‘জানো তো মা, ফ্রান্সের সম্রাট লুই-এর পরিবারের লোক ওরা। রাজত্ব না থাকলেও ঐ পরিবারের মান একটুও কমেনি। ওদের রুচি তো জানি না।’ বলল চীফ জাস্টিস।
‘তুমি কিছু ভেবনা আব্বা। আম্মাও তো ফরাসী মেয়ে। সব তিনি দেখেছেন। আর সেদিন আমি আংকেলকে দেখেছি, মারিয়াদের সাথে কথা বলেছি। খুব খোলা-মেলা ওঁরা। রাজকীয় মেজাজ বা গাম্ভীর্যের চিহ্ন ওদের মধ্যে নেই। আমার খুব ভালো লেগেছে। বলত আব্বা, মিস মারিয়া তোমার ভাষায় রাজকুমারী হয়েও যেভাবে শ্রমিকের মত আমার গাড়ি ঠিক করে দিয়েছে, ক্যামেরুনের গাড়ির মালিক কোন মেয়ে কি এটা করতো?’
‘বড়দের বড় হৃদয় হওয়া উচিত। ওঁদের ওটা আছে।’
কাঁটায় কাঁটায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এল ডোনা, ডোনার আব্বা এবং এলিসা গ্রেস।
রোসেলিন, তার আম্মা এবং তার আব্বা চীফ জাস্টিস উসাম বাইক তাদেরকে স্বাগত জানালেন বাড়ির গেটে।
ডিনার হলো রাত আটটায়।

ডিনার শেষে চীফ জাস্টিস উসাম বাইক এবং ডোনার আব্বা মিশেল প্লাতিনি বসে আলাপ করছে ড্রইং রুমে।
তখন কথা বলছিল চীফ জাস্টিস উসাম বাইক, হ্যাঁ, আমার জন্ম ক্যামেরুনে বটে, কিন্তু আমি মানুষ হয়েছি ফ্রান্সে। আমি তখন ১০ বছরের বালক। ডঃ ডিফরজিস আমাকে ফ্রান্সে নিয়ে যান। তাঁর বাড়িতে রেখে তিনি আমাকে লেখাপড়া শেখান। আইন শাস্ত্রে ডক্টরেট করার পর ২৫ বছর বয়সে আমি ক্যামেরুনে চলে আসি। ফ্রান্সে তিনি আমাকে বিয়েও করান।‘
‘কোন ডঃ ডিফরজিস? সাবেক কুটনীতিক এবং প্যারিস আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ ডিফরজিস? তিনি তো আমার বন্ধু।’
‘জি, হ্যাঁ, তিনিই।’
ডোনার আব্বা একটু দ্বিধা করল। কিন্তু শেষে বললই, ‘ডঃ ডিফরজিসের খবর কিছু জানেন?’
চমকে উঠল চীফ জাস্টিস উসাম বাইক। বলল, তাঁর সম্পর্কে কিছু জানেন আপনি?
‘জানি।’
‘তাকে কিডন্যাপ করে ক্যামেরুনে আনা হয়েছে, জানেন আপনি?’
‘জানি। ব্ল্যাকক্রস ও ওকুয়া তাঁকে কিডন্যাপ করেছে।’
‘আর কিছু জানেন?’
‘মনে হয় সবটাই জানি। তাঁকে পণবন্দী করে আনা হয়েছে। চীফ জাস্টিসের কাছ থেকে কিছু আদায় করার জন্যে।’
‘কি আদায় করতে চায়, সেটাও কি আপনি জানেন?’
‘জানি। ওমর বায়ার জমি আত্মসাতকে তারা বৈধ করে নিতে চায়।’
‘আপনি সবই জানেন। এসব কি ডঃ ডিফরজিস কিংবা র‍্যালফ–এর কাছে আপনি শুনেছেন?’
‘এখানে আসার আগে কুমেটে র‍্যালফ, ডেবরা এবং আমরা এক রেস্ট হাউসে এক সাথেই ছিলাম। কিন্তু ওমর বায়ার ঘটনা আমি আগে থেকেই জানি।’
‘আগে থেকে?’
‘আপনি হয়তো জানেন, ব্ল্যাক ক্রস র‌্যালফ এবং ডেবরাকেও কিডন্যাপ করেছিল। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।’
চমকে সোজা হয়ে বসল চীফ জাস্টিস উসাম বাইক। বলল, ‘তারাও কিডন্যাপ হয়েছিল? কেন?’
‘তাদেরকে কিডন্যাপ করে ডঃ ডিফরজিসকে তারা বাধ্য করতে চেয়েছিল যাতে তিনি আপনাকে বলে তাদের কাজটা করিয়ে দেন। কিন্তু র‌্যালফরা মুক্ত হওয়ায় তাদের উদ্দেশ্য বানচাল হয়ে যায়। তখন তারা খোদ ডঃ ডিফরজিসকেই পণবন্দী করে ক্যামেরুনে নিয়ে এসেছে।’
বিস্ময় ও বেদনায় চীফ জাস্টিসের চেহারা ভারি হয়ে উঠেছে। কিছুক্ষণ কথা বলতে পারলো না। কথা বলল অনেকক্ষণ পর। বলল, ‘এত কিছু ঘটেছে, কিছুই জানতে পারিনি আমি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। তিনি আপনার সাথে দেখা করিয়ে দিয়েছেন।’
‘আমি আরও কিছু জানি মিঃ চীফ জাস্টিস।’
ডোনার আব্বার কথা শেষ হতেই চীফ জাস্টিস বলল, ‘দেখুন আপনি আমার সবচেয়ে সম্মানিত গুরুজনের বন্ধু। আপনিও আমার গুরুজন। মিষ্টার বলে সম্বোধন করলে আমি দুঃখ পাব। আর এখানে চীফ জাস্টিস হিসেবে কথা বলছি না।’
একটু থামল চীফ জাস্টিস। তারপর বলল, ‘এ সম্পর্কে যা জানেন দয়া করে বললে বাধিত হবো।’
ডোনার আব্বা র‌্যালফদের উদ্ধারের কথা, ডঃ ডিফরজিসের কিডন্যাপ এবং তাকে ও ওমর বায়াকে উদ্ধার প্রচেষ্টার সব কাহিনী বর্ণনার পর বলল, ‘যিনি র‌্যালফদের উদ্ধার করেছিলেন এবং ডঃ ডিফরজিসদের উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলেন, তিনি এখন ক্যামেরুনে।’
‘ক্যামেরুনে? কে তিনি?’ চীফ জাস্টিসের চোখে একরাশ বিস্ময়।
‘তিনি একজন সমাজসেবী। যেখানে মানুষের বিপদ সেখানে তিনি।’
‘র‌্যালফ কি তাকে নিয়োগ করেছে?’
‘আসলে তিনি চেষ্টা করছেন ওমর বায়াকে উদ্ধার করতে। এখন তো ওমর বায়া এবং ডঃ ডিফরজিস এক হয়ে গেছেন।’
‘তাহলে লোকটি মুসলমান।’
‘হ্যা। কিন্তু আপনি বুঝলেন কি করে?’
‘কোন খৃষ্টান ব্ল্যাক ক্রস ও ওকুয়া’র বিরোধিতার মুখে ওমর বায়াকে সাহায্য করতে যাবে না বা যেতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, আপনারা তাকে চেনেন। আপনারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন এটা রোসেলিনের কাছে শুনেছি।’
‘আপনার অনুমান ঠিক।’
‘আপনার খবর আমার জন্যে পরম সুসংবাদ। কিন্তু তিনি একা কি করবেন বিরাট শক্তির বিরুদ্ধে!’
‘এটা বলা মুস্কিল। তবে তার অতীত হলো, ‘তিনি যেখানে যান একাই এক বিশ্ব হয়ে দাঁড়ান।’
‘তার সাফল্য কামনা করি। যে কাজ আমার করার ছিল, তা তিনি করছেন। জানেন, তিনি কোথায় কি করছেন?’
‘আপনার সবই জানা দরকার। আসলে আমরা এসেছি তাঁরই সন্ধানে। আমরা জানি না তিনি কোথায়।’
‘কিন্তু আপনাদের সাথে তাঁর সম্পর্ক কি? আপনারা তাঁর খোঁজে কেন আসলেন?’
ডোনার আব্বা উত্তর দিল না তৎক্ষণা। একটু ভাবল। তারপর মুখ তুলে তাকাল চীফ জাস্টিসের দিকে। বলল, ‘একটু স্বার্থের সম্পর্ক আছে। মারিয়া (ডোনা) আমার একমাত্র মেয়ে। তার স্বার্থেই এসেছি।’
চীফ জাস্টিসের মুখে এক টুকরো প্রসন্ন হাসি ফুটে উঠল। বলল, ‘মাফ করবেন। আপনাদের পারিবারিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছি। কিন্তু একটা কৌতুহল আমি চেপে রাখতে পারছি না।’
‘বলুন।’
‘ঐ মুসলিম ছেলেটি কে, যার সাথে ‘লুই’ রাজকুমারীর বিয়ে হচ্ছে এবং যার জন্যে ‘লুই’ পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারীরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আর ছেলেটি কে যে, বিনা স্বার্থে অন্যের জন্যে এ ভাবে জীবনের ঝুঁকি নেয়।’
ডোনার আব্বা চুপ করে থাকল। কোন উত্তর দিলনা তৎক্ষণাৎ। পরে ধীরে ধীরে বলল, ‘আমি বুঝতে পারছি না, তার পরিচয়ের প্রকাশ, তার, আপনার এবং আমাদের সকলের জন্যে কল্যাণকর হবে কিনা।’
‘আমি এখানে আপনাদের সাথে আলোচনা করছি আপনাদের একজন এবং ডঃ ডিফরজিসের একজন দত্তক সন্তান হিসেবে, চীফ জাস্টিস হিসেবে কিংবা সরকারী কোন লোক হিসেবে নয়।’
‘ধন্যবাদ। আপনি কি আহমদ মুসার নাম শুনেছেন?’
চীফ জাষ্টিস ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করল। তারপর বলল, ‘একটা নাম শুনেছি। মানে তার সম্পর্কে অনেক পড়েছি। সে তো একজন ভয়ানক বিপ্লবী। ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে অনেক দেশের অনেক পরিবর্তনের সাথে সে জড়িত। এর কথা বলছেন কেন?’
‘আপনি যে ছেলেটির পরিচয় জানতে চাচ্ছেন সেই ছেলেটিই আহমদ মুসা।’
ডোনার আব্বার শেষ দু’টি শব্দ বিদ্যুত শকের মত কাজ করল যেন চীফ জাস্টিসের উপর। তাঁর চেহারায় হতবাক ও হতবুদ্ধির ভাব ফুটে উঠল। অনেকক্ষণ সে বিহ্বল চোখে তাকিয়ে থাকল ডোনার আব্বার দিকে। অনেক সময় নিয়ে সে ধীরে ধীরে বলল, ‘আপনি কি সত্যি বলছেন? তাঁর মত বিপ্লবী কেন কোন কাজে এ ঘটনায় জড়াবে? লুই পরিবারই বা তাঁর সাথে জড়িয়ে পড়বার হেতু কি?’
‘সে এক দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যখন আহমদ মুসা স্পেনে কাজ করছিল, তখন সে আমার মেয়েকে অবধারিত কিডন্যাপ হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। সেই থেকেই তার সাথে আমাদের পরিচয় ঐ সময়ই সে ওমর বায়ার সাথে পরিচিত হয় তাকে গুন্ডাদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে।’
তারপর ডোনার আব্বা ওমর বায়ার সাথে আহমদ মুসার পরবর্তী সম্পর্কের বিষয় তুলে ধরে বলল, ‘আসলে আহমদ মুসার ব্যক্তি, দেশ ও জাতি প্রেম সবই অমূল্য।’
‘ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন। আপনার শেষ সুখবরটি শুনে আমি মনে বল পাচ্ছি, একটা বড় সংকট থেকে হয়তো আমি বাঁচবো এবং ডঃ ডিফরজিসেরও জীবন বাঁচবে। কিন্তু উদ্বেগ বোধ হচ্ছে, সে তো একা। অন্যদিকে ‘ব্ল্যাক ক্রস’, ‘ওকুয়া’ এবং ‘কোক’-এর মিলিত শক্তি তার বিরুদ্ধে।’
‘সে কোথায় জানি না। কি করছে জানি না। প্রার্থনা ছাড়া আমাদের আর কি করার আছে!’
‘তার যদি সন্ধান পাওয়া যেত।’
ডোনার আব্বা ও চীফ জাস্টিস উসাম বাইক যখন এই আলোচনা করছিল, তখন বাড়ির বাগান ঘেরা একটা ছোট্ট লনে ডোনা, রোসেলিন এবং এলিসা গ্রেসদের মধ্যে গল্প চলছিল।
ডোনা বলছিল, ‘রোসেলিন আপনার সাথে দেখা হয়ে কি যে ভালো লাগছে! কখনও কোন প্রয়োজন বোধ করলে আপনাকে টেলিফোন করা যাবে, ক্যামেরুন সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে আপনাকে টেলিফোন করা যাবে’।
‘আর আমাদের পরিবারের সাথে আপনাদের পরিচয় আমার জন্যে ঈশ্বরের আশীর্বাদের মত হয়েছে’।
‘কেমন করে?’ বলল ডোনা।
‘লুই’ পরিবারের উত্তরাধিকারীরা মুসলমান হয়েছে এটা আব্বার জানা এবং আপনাদের দেখা আব্বার প্রয়োজন ছিল।’
‘কেন? কেন?’ বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলল ডোনা।
‘এ ‘কেন’-এর উত্তর অনেক বড়। আজ থাক।’ বলল রোসেলিন সলজ্জ হেসে।
‘কিন্তু আপনার জন্যে এটা আশীর্বাদ হলো কি করে, এর উত্তর আপনি এক বাক্যেও দিতে পারেন।’ বলল ডোনা।
কথা বলল না রোসেলিন। মুখ সে নিচু করল। তার ঠৌঁটে এক টুকরো সলজ্জ হাসি।
ডোনা এই হাসি দেখে লায়লা ইয়েসুগোর কথা বলতে গিয়ে সেদিন রোসেলিনের মুখে যে হাসি দেখেছিল তার কথা মনে পড়ল। অনুরাগরঞ্জিত সলজ্জ এই হাসি ডোনার অপরিচিত নয়।
‘আজ থাক, আরেকদিন বলব।’ নীরবতা ভেঙে বলল রোসেলিন।
‘দেখুন মিস রোসেলিন, আমি কুটনীতিকের মেয়ে। কথার কুটনীতি দিয়ে ঠিক বের করে ফেলব কথা।’ হেসে বলল ডোনা।
‘ঠিক আছে বের করুন। শুধু তো কুটনীতিক নয়, আপনি রাজারও মেয়ে।’ হাসতে হাসতে বলল রোসেলিন।
ডোনা একটু ভাবল। তারপর বলল, ‘নিশ্চয় আপনার আব্বা কোন মুসলিমের সাথে আপনার সম্পর্ককে ভালো চোখে দেখেন না বা দেখবেন না, এমন আশংকা আছে।’
রোসেলিনের মুখ ভরা হাসিতে একটু ভাটা পড়ল তার চোখের দৃষ্টিতে কিছুটা বিস্ময় ফুটে উঠল। ঠৌঁটে সেই সলজ্জ হাসি ছড়িয়ে বলল, ‘এটুকু ঠিক আছে।’
‘নিশ্চয় সেই সম্পর্কের সাথে আপনার এবং আপনার আব্বার একটা স্বার্থের প্রশ্ন জড়িত আছে।’ রোসেলিনের চোখে চোখ রেখে ব্যারিস্টারের মত প্রশ্ন করল ডোনা।
‘এমন প্রশ্ন করছেন কোন যুক্তিতে?’ মুখে কৃত্রিম গাম্ভীর্য টেনে প্রশ্ন করল রোসেলিন।
‘না, আগে প্রশ্নের ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ উত্তর দিন। আপনার প্রশ্নের জবাব পরে দিচ্ছি।’ ঝানু উকিলের মত ডোনা চাপ দিল রোসেলিনকে।
রোসেলিন হেসে উঠল। বলল, ‘উত্তর ‘হ্যাঁ’।’
‘এখন আপনার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। স্বার্থের সম্পর্ক না থাকলে আপনার আব্বা এমন আচরণ কেন করবেন যাতে আপনার আহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে? দ্বিতীয়ত বড় কোন স্বার্থের সম্পর্ক না থাকলে আপনার আব্বার মনোভাব পরিবর্তনের সম্ভবনাকে অবশ্যই আপনি আশীর্বাদ বলতেন না।’
রোসেলিন হেসে উঠল। বলল, ‘খুব সুন্দর যুক্তি। আপনার ব্যবসায় বা যুডিসিয়াল প্রফেশনে আসা উচিত। আমি আংকলকে বলব।’
‘ধন্যবাদ। আমার তৃতীয় প্রশ্ন হলোঃ ঐ স্বার্থের সম্পর্ক যার সাথে তিনি অবশ্যই লায়লা ইয়েসুগো কিংবা কোন মেয়ে নন’।
ডোনার এই প্রশ্নের সাথে সাথে রোসেলিনের মুখের হাসি বিব্রতকর লজ্জায় রুপান্তরিত হল। বলল, ‘এই প্রশ্ন কেন আসে?’
‘এ প্রশ্নেরও জবাব পাবেন। কিন্তু আগে উত্তর দিন ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’।’
রোসেলিন নিচু হয়ে পড়া তার চোখ তুলে তাকাল ডোনার দিকে। তারপর একটু সলজ্জ হেসে বলল, ‘হ্যাঁ।’
মুখ টিপে হাসল ডোনা। বলল, ‘এবার আপনার প্রশ্নের উত্তর: কোন মেয়ের সাথে কোন মেয়ের স্বার্থের সম্পর্ক এমন হয় না যার বিরোধিতায় নামতে হবে আংকলকে এবং যে সম্পর্কের রক্ষাকে আপনি আর্শীবাদ মনে করবেন।’
উজ্জ্বল হাসিতে ভরে উঠল রোসেলিনের মুখ। বলল, ‘আপনি চমৎকার। এরপরের প্রশ্নে আপনি কি বলেন, দেখি।’
ডোনা হাসল, বলল, ‘এটাই শেষ প্রশ্ন। বলুন প্রশ্নটা করবো তো?’
‘অবশ্যই।’ রোসেলিনের মুখের হাসিতে এবার লজ্জা মেশানো।
‘ঠিক আছে, আমার দিকে তাকান।’ ডোনা বলল রোসেলিনকে। রোসেলিন তাকাল ডোনার দিকে।
ডোনা তার চোখে চোখ রেখে মুখ টিপে হেসে বলল, ‘মুসলিম ছেলেটি কে?’
রোসেলিন দু’হাতে মুখ ঢেকে উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘চলুন যাই, আংকলরা একা আছেন।’
ডোনা উঠে দাঁড়াল। রোসেলিনকে কাছে টেনে নিল হাত ধরে। বলল,‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আপনি উত্তর দেবার জন্যে।’
‘আপনি শুনতে খারাপ লাগছে। আমরা তো বন্ধু।’ বলল রোসেলিন ডোনার একটা হাত আঁকড়ে ধরে।
ডোনা রোসেলিনের কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘ঠিক আছে বন্ধু। উত্তর দাও এবার প্রশ্নের।’
রোসেলিন ডোনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘প্লিজ আজ থাক। চল ওদিকে যাই।’
‘বেশ চল।’ বলে তিনজনই হাঁটতে লাগল ড্রইং রুমের দিকে। হাঁটতে হাঁটতে এলিসা গ্রেস বলল, ‘মারিয়া আপার প্রশ্ন শেষ। আমি একটা প্রশ্ন করি?’
হাসল রোসেলিন। বলল, ‘ভয় করছি এখন প্রশ্নকে।’
‘খুব সহজ প্রশ্ন। মুসলিম ছেলেটা লায়লা ইয়েসুগোর কেউ?’
দৌড়ে পালাতে যাচ্ছিল রোসেলিন। ধরে ফেলল ডোনা। বলল, ‘ধরা পড়ে গেছ, আর পালিয়ে লাভ কি?’
দাঁড়িয়ে পড়ল রোসেলিন। লজ্জায় রাঙা গোটা মুখ। বলল, ‘কি বলব, বোধহয় একটা অসম্ভব সুখ স্বপ্ন দেখছি আমি।’ কথাগুলো শেষের দিকে ভারি হয়ে উঠল তার।
ডোনা রোসেলিনের পিঠে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিয়ে বলল, ‘স্বপ্ন সফল হওয়ার আগে এমনটাই মনে হয়। নাম কি ছেলেটার? জানতে পারি না আমরা?’
রোসেলিন মুখ নিচু করল। ঠোঁটে লাজ-রাঙা হাসি ফুটে উঠল। বলল, ‘আবদুল্লাহ রাশিদি ইয়েসুগো, লায়লার ভাই।’
বলেই রোসেলিন দৌড় দিল ড্রইংরুমের দিকে।
পেছনে পেছনে ছুটল ডোনা এবং এলিসা গ্রেস। | ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top