৩
রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে একজন পুলিশ অফিসার লাল পতাকা নাড়ছে।
আহমদ মুসা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল সামনের পরিস্থিতিটা।
বড় একটি পুলিশ ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে। তার সমান্তরালে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছে একটা পুলিশ জীপ। একজন উচ্চপদস্থ অফিসার বসে আছে জীপে। পুলিশ ভ্যান, জীপ ও রাস্তায় দাঁড়ানো মোট পুলিশ দশ-বারো জন।
আহমদ মুসা গাড়ি নিয়ে দাঁড় করাল জীপটির সামনে রাস্তার ঠিক মাঝ বরাবর। জীপ এবং পুলিশ ভ্যান দুটোই তার ডান পাশে থাকল।
আহমদ মুসার গাড়ি থামতেই ছুটে এল জীপে বসা পুলিশ অফিসারটি। ড্রাইভিং উইনডো’তে এসে পুলিশ অফিসারটি বলল, ‘সিংজী, আপনি কোত্থেকে আসছেন?’
‘তাল্লিন।’
‘সাথে ওরা কে?’
‘একটা শিখ দম্পতি।’
‘কোথায় যাবেন?’
‘তারতু।’
‘একটু থানা হয়ে যেতে হবে সিংজী।’
‘কেন?’
‘নির্দেশ হয়েছে, সব বিদেশীকেই থানার সাথে কথা বলে যেতে হবে। সার্চ করা ও কথা বলার পর চলে যাবেন।’
‘কিন্তু আমি তো এক মিনিট সময়ও দিতে পারবো না।’
‘পারতে হবে সিংজী, এটা নির্দেশ।’
‘এটা অন্যায়।’
‘দুঃখিত সিংজী।’ বলে পুলিশ অফিসারটি পাশে দাঁড়ানো পুলিশের দিকে চেয়ে বলল, ‘তুমি সিংজীকে নামিয়ে গাড়ি নিয়ে থানায় চল। আমি সিংজীকে নিয়ে আসছি।’
আহমদ মুসা বলল, ‘ঠিক আছে অফিসার, যাচ্ছি থানায়। চলুন।’ বলে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিল।
‘ধন্যবাদ।’ বলে পুলিশ অফিসারটি পাশের পুলিশকে ইংগিতে আহমদ মুসার পাশের সিটে উঠতে নির্দেশ দিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগোলো। আর পুলিশটি গাড়ির পেছন ঘুরে আহমদ মুসার পাশে উঠার জন্যে এগোলো।
আহমদ মুসা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাম হাতে শক্ত করে স্টিয়ারিং ধরে ডান হাত দিয়ে পকেট থেকে রিভলভার বের করে বিদ্যুৎ বেগে তা উপরে তুলে পর পর দু’টি গুলি ছুঁড়ল। একটি গুলি জীপের সামনের চাকা, অন্যটি পুলিশ ভ্যানের সামনের চাকা গুঁড়িয়ে দিল।
আর গুলির সাথে সাথেই আহমদ মুসার গাড়ি বিদ্যুৎ বেগে ছুটে চলল সামনের দিকে।
কি ঘটে গেল বুঝে উঠতে উঠতে আহমদ মুসার গাড়ি লক্ষ্যে বন্দুক তোলার আগেই গাড়ি তাদের নাগালের বাইরে চলে এল।
শহরে প্রবেশ করল আহমদ মুসার গাড়ি।
আহমদ মুসা পেছন দিকে তাকিয়ে কেলা এলভাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘কোন আড়াল পাওয়া যাবে গাড়ির নেমপ্লেট পাল্টাবার?’
‘একটু সামনে বাঁ দিকে যাবার একটা রাস্তা পাওয়া যাবে, সেটা একটা পার্কের পাশ দিয়ে গেছে।’
‘ধন্যবাদ।’
পার্ক পাওয়া গেল। পার্কে গাড়ি একটা ঝোপের আড়ালে দাঁড় করিয়েই আহমদ মুসা লাফ দিয়ে নেমে সামনের নেমপ্লেটটা উল্টে দেবার কাজে লেগে গেল। আর কেলা এলভা পেছনের নেমপ্লেটটা উল্টিয়ে লাগিয়ে দিল।
আহমদ মুসা শিখের দাড়ি ও পাগড়ী খুলে ছুঁড়ে দিল ডোনার কাছে এবং কেলা এলভাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘আপনি এবার দাড়ি-পাগড়ী খুলে কেলা এলভা সেজে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসুন।’
‘ধন্যবাদ। আমি আর পারছি না দাড়ি আর পাগড়ী পরে থাকতে। চুলকাতে শুরু করেছে।’
বলে কেলা এলভা ওগুলো খুলে ডোনাকে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসল। বলল, ‘খুবই মজার হবে। এখন ‘পেদে’ এবং সামনের রাস্তার পুলিশরা শিখ ড্রাইভারের শিখ দম্পতির গাড়ি খুঁজে মরবে। আমরা আরাম করে এগিয়ে যাব।’
কেলা এলভার গাড়ি অন্য আরেকটা পথ দিয়ে প্রধান সড়কে উঠে ছুটে চলল পুব দিকে।
রাস্তায় পুলিশের গাড়ির ছুটোছুটি। কয়েক জায়গায় কেলা এলভার গাড়ি থামাল। কিন্তু থামিয়েই তারা বলে উঠল, ‘না, এ গাড়ি নয়। শিখ ড্রাইভারের সে গাড়িতে আছে একজন শিখ পুরুষ এবং একজন মহিলা।’
গাড়ি বেরিয়ে এল ‘পেদে’ শহর থেকে।
আহমদ মুসা বলল, ‘সামনেই তো পোলি শহর। পোলি থেকে ‘ভিলিজান’ ঘুরে কি আমরা ‘তারতু’তে ঢুকব?’
‘দরকার নেই। তারতু আমার নিজের শহর। এবার আমার উপর সবকিছু ছেড়ে দিন। পুলিশ এখন বিভ্রান্ত। আর ভয় নেই।’
‘নিজের শহর মানে? তারতু আপনার জন্মস্থান?’ বলল ডোনা।
‘হ্যাঁ, আমার জন্মস্থান।’
‘কিন্তু আপনি থাকেন তো তাল্লিনে।’
‘তাল্লিন আমার চাকরী কেন্দ্র। কিন্তু বাড়ি আমার তারতু’তে।’
‘আপনার মিস্টার কোথায় থাকেন?’
মুহূর্তে মুখটা ম্লান হয়ে গেল কেলা এলভার। বেদনার একটা উচ্ছ্বাস উপচে উঠল সে মুখে।
সঙ্গে সঙ্গে কোন উত্তর দিল না কেলা এলভা। গাড়ি নিয়ে হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠল।
একটু পর কেলা এলভা মুখে হাসি টেনে বলল, ‘মিঃ আহমদ মুসা, অদ্বিতীয় আপনার পরিস্থিতি পর্যালোচনার ক্ষমতা। গাড়ির নাম্বার আর বেশ না পাল্টালে হয়তো বিপদে পড়তে হতো। কিন্তু এ চিন্তাটা আপনার মাথায় এল কি করে? আমি সহকর্মী গোয়েন্দা ইন্সপেক্টরকে যে কাহিনী বলেছি, সে কাহিনী বলেই সামনে এগোবার চেষ্টা করতাম।’
‘চিন্তাটা খুবই সাধারণ। আপনার বলা কাহিনীতে যথেষ্ট ফাঁক ছিল। ছাড়া পাওয়ার পর আপনার প্রথম দায়িত্ব ছিল হেডকোয়ার্টারে খবর দেয়া বা সেখানে হাজির হওয়া, কাউকে লিফট দেয়া নয়। সুতরাং আপনার পরিচয় নিয়ে আপনি ‘পেদে’ ঢুকলে আপনাকে অবশ্যই সেখানকার পুলিশ হেডকোয়ার্টারে তাল্লিনের সাথে কথা বলতে হতো। সেখানকার পুলিশরাও আপনার কাছে এটাই চাইতো।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ওয়ান্ডারফুল! আপনার প্রত্যেকটা কথা সত্য। কিন্তু এমন চিন্তা আমার মাথায় আসেনি। সামনের শহর পোলি’তে এ বিপদ নেই?’
‘নেই। এখন শিখ ড্রাইভার ও শিখ দম্পতির বিষয়টা সামনে এসেছে। আপনাকে দেখলে সবাই এখন বুঝবে, আপনি বাড়িতে যাচ্ছেন।’
‘ঠিক বলেছেন।’
কথা শেষ করেই কেলা এলভা কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলেছিল। তার আগেই ডোনা কেলা এলভাকে লক্ষ্য করে বলে উঠল, ‘মাফ করবেন, একটা জিজ্ঞাসা আমি ধরে রাখতে পারছি না।’
‘আমাকে?’
‘হ্যাঁ।’
মুখটা পেছনে ডোনার দিকে একটু ঘুরিয়ে হেসে বলল, ‘বলুন গ্রেট লেডি।’
‘গ্রেট লেডি! আমাকে বলছেন?’
‘আর কাকে বলব। আপনার মত মহা সৌভাগ্যবতী আর দ্বিতীয় নেই।’
‘আমি বিদ্রূপ বলে ধরে নেব।’
‘বিদ্রূপ বলে ধরে নেবেন? মিঃ আহমদ মুসাকে আপনি বিপ্লবের বিশ্বনায়ক মানেন না?’
‘তাতে কি?’
‘আহমদ মুসা বিশ্বনায়ক হলে বিশ্বনায়িকার মুকুট আপনার মাথায় ওঠে না?’
‘ও এই কথা!’ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল ডোনার মুখ।
‘আপনাকে আপনি বুঝবেন না ম্যাডাম। বুঝবে আমার মত লাখো মেয়েরা।’ মুখে হাসি টেনেই বলল কেলা এলভা।
কথা শেষ করেই কেলা এলভা বলল, ‘দুঃখিত অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার জন্যে। আপনার জিজ্ঞাসা বলুন।’
গম্ভীর হলো ডোনা। বলল কেলা এলভাকে লক্ষ্য করে, ‘কিছু মনে করবেন না তো? ব্যাক্তিগত প্রশ্ন।’
মুখে সপ্রতিভ একটা হাসি টেনে কেলা এলভা বলল, ‘কি ব্যক্তিগত প্রশ্ন! বলুন?’
‘আমার মনে হয়েছে, আপনি মিস না মিসেস, আপনার মিস্টার কোথায়- এই দুই প্রশ্নের জবাব আপনি এড়িয়ে গেছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রশ্ন দু’টিতে আপনি কষ্ট পেয়েছেন।’
আবার ম্লান হয়ে গেল কেলা এলভার মুখ। ধীরে ধীরে তার ঠোঁটে কান্নার মত করুণ একটা হাসি ফুটে উঠল।
অনেকক্ষণ পর বলল, ‘দুঃখিত মিসেস মারিয়া।’
বলেই একটু থামল। তারপর শুরু করল, ‘প্রত্যেকেরই জীবনে একটা ব্যক্তিগত অংশ থাকে যা তার একান্ত নিজস্ব। সেখানকার হাসি-কান্না হৃদয়ের কথার মতই সংগোপন। তবু বলছি আমি।’ থামল কেলা এলভা।
একটু পরে আবার মুখ খুলল।
সূক্ষ্ম কম্পন দেখা দিল তার ঠোঁটে। ঠোঁটের কম্পন তার বেড়ে গেল। ঠোঁট ফেঁড়ে তার কথা বেরিয়ে এল, ‘আমার স্বামী নেই- একথা বলতে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে, আবার আছে তাও বলতে পারছি না।’
কেলা এলভার শেষের কথাগুলো ভেঙে পড়ল কান্নার চাপা উদ্দামে।
দু’চোখ থেকে তার নেমে এল দু’টি অশ্রুর ধারা।
ডোনা এবং আহমদ মুসা দু’জনেই স্তম্ভিত, বিব্রত।
পেছন থেকে ডোনা ধীরে ধীরে কেলা এলভার কাঁধে হাত রাখল। বলল, ‘আমি দুঃখিত কেলা এলভা। আমি বুঝতে পারিনি।’
কেলা এলভা ডান হাত স্টিয়ারিং-এ রেখে বাম হাত দিয়ে কাঁধে রাখা ডোনার হাত চেপে ধরল। বলল, ‘না মিসেস ডোনা। আপনি আমার উপকার করেছেন। আমার কাঁদা দরকার। না কাঁদলে আমি বাঁচব না, বুক ফেটে যাবে আমার।’
বলে কেলা এলভা কান্নায় লুটিয়ে পড়ল স্টিয়ারিং-এর উপর।
গাড়ির ব্রেক কষেছে সে। দাঁড়িয়ে পড়েছে গাড়ি।
ডোনা সিট থেকে উঠে কেলা এলভার মাথায় হাত রাখল। সান্ত্বনা দিল।
আহমদ মুসা বিমূঢ়। কর্তব্যপরায়ণ আনন্দ-উচ্ছল মেয়েটার বুকে দুঃখের এতবড় সমুদ্র লুকিয়ে আছে! দুঃখটা তার আসলে কি? স্বামী তার নেই বলেই মনে হয়। পশ্চিমী সমাজে স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়াকে খুব বড় ঘটনা বলে দেখা হয় না। কেলা এলভার স্বামী না থাকার মধ্যে এতবড় দুঃখটা কিসের! ভেবে কোনই কূল পেল না আহমদ মুসা।
অল্প পরেই স্টিয়ারিং থেকে মাথা তুলে রুমাল বের করে চোখ মুছে পেছনে তাকিয়ে বলল, ‘ধন্যবাদ মিসেস আহমদ মুসা। আমি দুঃখিত।’
বলে সোজা হয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। ছুটে চলল আবার গাড়ি।
কেলা এলভাই কথা শুরু করল। বলল, ‘স্যরি, খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।’ থামল কেলা এলভা।
শুরু করল আবার, ‘জানতে চেয়েছেন আমি মিস না মিসেস, আমার স্বামী কোথায়! তিনি এস্টোনিয়া কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স-এর অপারেশন চীফ। অত্যন্ত প্রতিভাবান হিসেবে তরুণ বয়সেই তিনি এ দায়িত্ব পেয়ে যান। আজ ছ’মাস আমরা বিয়ে করেছি।’ থামল কেলা এলভা।
‘তারপর?’ বলল ডোনা।
‘বিয়ের পর দিনই তাকে একটা অপারেশনে বের হতে হয়। সে আর ফিরে আসেনি।’ শেষের কথাগুলো কান্নায় জড়িয়ে গেল কেলা এলভার।
থামল কেলা এলভা।
ডোনারাও তৎক্ষণাৎ কিছু বলল না। কিছুক্ষণ নীরবতা।
নীরবতা ভাঙল আহমদ মুসা। বলল, ‘সত্যিই এ এক মর্মান্তিক ঘটনা ম্যাডাম। আমার একটা প্রশ্ন, এই নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে এস্টোনীয় গোয়েন্দা বিভাগ কি তথ্য জোগাড় করেছে?’
‘তাদের রিপোর্টে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্যই নেই যা নিয়ে সামনে এগোনো যায়।’
‘তার ঐ অপারেশনটা কোন পক্ষ বা কোন দেশের বিরুদ্ধে ছিল?’
‘এ ব্যাপারে কোনই তথ্য নেই ঐ রিপোর্টে।’
‘রিপোর্টের সুপারিশেও কিছু নেই?’
‘কোন দেশকেই অভিযুক্ত করা হয়নি।’
‘দুঃখিত মিসেস এলভা, ঐ রিপোর্টটা ভুয়া।’
চট করে মুখ ঘুরিয়ে কেলা এলভা আহমদ মুসার দিকে একবার তাকাল। তার চোখে-মুখে বিস্ময়। বলল, ‘অল্প জেনেই একদম প্রান্তিক মন্তব্য করে ফেলেছেন। অন্য কেউ এ কথা বললে আমি হাসতাম। কিন্তু আপনার কথা আমাকে হাসার বদলে আতংকিত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন, কেন আপনি এই রিপোর্টকে ভুয়া বলছেন?’
‘একটা দেশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট যখন তার সাধারণ শত্রুও চিহ্নিত না করতে পারে, তখন বুঝতে হবে তার মধ্যে গণ্ডগোল আছে।’
‘সাধারণ শত্রু চিহ্নিত করা এবং একটি মারাত্মক অভ্যন্তরীণ ঘটনার জন্যে কোন দেশকে দায়ী করা কি এক জিনিস?’
‘এক জিনিস নয়। কিন্তু একটা দেশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের চীফ যখন কোন গুরুতর অপারেশনে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়, তখন অবশ্যই বিশেষ শত্রু দেশটির উপর গিয়ে নজর পড়তে হবে। রিপোর্টে এই ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হওয়াই রিপোর্টটি ভুয়া হওয়ার প্রমাণ।’
কেলা এলভার মুখটি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আহমদ মুসা থামতেই সে বলে উঠল, ‘প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়াই দায়ী করা যায়, এমন শত্রু দেশ কি এস্টোনিয়ার আছে?’
‘এ প্রশ্ন তো আমিই আপনাকে করব।’
‘মাফ করবেন, আমি মিলিয়ে নিতে চাচ্ছি।’
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘সুইডেন, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, জার্মানী, রাশিয়া- সবাই এস্টোনিয়ার শত্রুর তালিকায় পড়ে। কিন্তু আজ এস্টোনিয়ার অস্তিত্বের শত্রু একটাই। সে হলো রাশিয়া।’
‘কেন?’
‘একমাত্র রাশিয়া ছাড়া ঐ দেশগুলোর কারোরই এই মুহূর্তে ভূখণ্ডগত সম্প্রসারণের কোন লক্ষ্য নেই। রাশিয়া বিশেষ করে রাশিয়ার একটি বিশেষ ক্ষমতাধর মহল সোভিয়েত ইউনিয়নের আকার ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।’
‘ধন্যবাদ।’ বলল কেলা এলভা।
কথা শেষ করেই বলে উঠল, ‘রাশিয়ার সেই ক্ষমতাধর মহলটি কে? সরকার? না বাইরের কেউ?’
‘আপাতত সরকার নয়।’
‘তাহলে?’
‘কারণ, সেখানে সরকারের মধ্যে সরকার আছে, সরকারের বাইরেও ছায়া সরকার আছে। কারা করেছে ব্যাপারটা বলা মুশকিল।’
‘ছায়া সরকার বলতে কি আপনি ‘গ্রেট বিয়ারকে’ ইংগিত করছেন?’
‘হ্যাঁ, তারা লেনিনীয় পন্থায় ক্ষমতা দখল করতে চাচ্ছে। ঠিক লেনিন ১৯১৭ সালে যেভাবে মেনশেভিখদের কাছ থেকে ক্ষমতা হাইজ্যাক করেছিল, ঠিক সেভাবেই।’
‘বুঝেছি। তাহলে কি আপনি নিশ্চিত, রাশিয়ারই কারও হাতে পড়েছিল আমার স্বামী?’
‘আপনার স্বামীর অপারেশন অভিযানের পথ সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছিলেন?’
‘তার গাড়িটি শেষবারের মত লোকেট করা হয় সামনের ‘তারতু’ থেকে উত্তরে।’
‘আমি নিশ্চিত ম্যাডাম। আপনার স্বামী রুশদের হাতেই পড়েছিল।’
উত্তরে কেলা এলভা কোন কথা বলল না। স্টিয়ারিং-এ রাখা তার ডান হাতটি শুধু মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠল। তার অচঞ্চল দৃষ্টি প্রসারিত সামনের রাস্তার উপর। অনেকক্ষণ পর বলল, ‘আপনারও তো লড়াই রুশদের বিরুদ্ধে?’
‘রুশদের বিরুদ্ধে নয়, সেখানকার এক রুশ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে।’
‘একই কথা। গ্রেট বিয়ার এখন লেনিনের প্রতিভূ, আইভান দি টেরিবলের মত জারদেরও প্রতিভূ। এক কথায়, সমগ্র রুশ মানসের প্রতিভূ।’
‘ঠিক। তবু তারা রাশিয়ার একটা গ্রুপ মাত্র।’
‘আপনার সাথে তর্কে যাবো না। রাশিয়ার সেই ষড়যন্ত্রকারী পক্ষ, আমি দেখছি, আমাদের কমন এনিমি। আপনি আমাকে সাহায্য করবেন, না আমি আপনাকে সাহায্য করব?’
‘দু’টোই প্রয়োজন।’
বলেই আহমদ মুসা কেলা এলভাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘আপনার ‘পোলে’ শহর এসে গেল।’
‘কোন চিন্তা নেই। আমার উপর সবকিছু ছেড়ে দিন।’
কথা শেষ করেই নড়ে-চড়ে বসল কেলা এলভা। তার গাড়ির স্পীড বেড়ে গেল।
মস্কোভা নদী তীরের গ্রেট বিয়ারের সেই হেডকোয়ার্টার। পঁচিশ চেয়ারের সেই হলরুম। পঁচিশটি চেয়ারে পঁচিশ জন মানুষ। তাদের সামনে সাত ফুট উঁচু পাঁচ বর্গফুটের সেই মঞ্চ।
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »