২৬. ক্যারিবিয়ানের দ্বীপদেশে

চ্যাপ্টার

ঘাটের তিনদিক ঘিরে লোকজনদের বসিয়ে দিয়ে আহমদ মুসা ইসহাক আবদুল্লাহ, নোয়ানকো ও কলিন কামালকে সাথে নিয়ে উঠে এল সেই টিলায়।
আহমদ মুসার ব্যবস্থা অনুসারে ঘাটের পূর্ব দিকে থাকবে নোয়ানকো, মধ্য অঞ্চলে থাকবে কলিন কামাল এবং পশ্চিম ঘাট থেকে আসা যাওয়ার পথ অঞ্চলে থাকবে ইসহাক আবদুল্লাহ।
সম্ভাব্য ঘটনাবলী তাদের সামনে তুলে ধরে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছে সবাইকে আহমদ মুসা।
ইসহাক আবদুল্লাহ, নোয়ানকো ও কামাল প্রত্যেকের সাথে থাকবে ১০জন লোক। সকলেই তারা ষ্টেনগান সজ্জিত।
টিলার মাথায় সবে বসেছে আহমদ মুসা এবং ওরা দু’জন। এ সময় ঘাট থেকে কিছু দূরে অন্ধকার সাগর বক্ষে হঠাৎ জ্বলে উঠল সার্চ লাইটের আলো।
আহমদ মুসাদের তিনজনের চোখই আঠার মত লেগে গেল দৃশ্যটির প্রতি।
সার্চ লাইটের আলো উত্তরমুখী অর্থাৎ ঘাটের দিকে নয়।
আহমদ মুসা বুঝল এটা ক্যামোফ্লেজ। তারা বুঝতে দিতে চায়না যে আলোটা ঘাটে আসছে।
আলোটা তিনবার নিভল, তিনবার জ্বলল। আহমদ মুসার বুঝতে বাকি রইল না যে ওরা সিগন্যাল দিচ্ছে, এবার ওরা সিগন্যাল আশা করছে।
আহমদ মুসা তাড়াতাড়ি নীল কাগজ নিয়ে টর্চের মাথা মুড়ে নিল।
ইসহাক আবদুল্লাহ বলে উঠল, ‘ভাইয়া, লাল সংকেত দিয়ে ওদের বিদায় দেয়া যায় না?’
আহমদ মুসা ইসহাক আবদুল্লাহর দিকে তাকাল। হাসল। বলল, ‘তোমার কি ভয় করছে?’
‘ভয় নয়। ওদের বোকা বানিয়ে বিদায় করা।’ বলল ইসহাক আবদুল্লাহ।
‘বোকা বানিয়ে বিদায় করলে চালাক হয়ে আবার ফিরে আসবে। সেই ফিরে আসাটা আমাদের জন্যে আরও মারাত্মক হতে পারে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক কথা।’ বলল ইসহাক আবদুল্লাহ।
আহমদ মুসা টর্চ জ্বালিয়ে তিনবার নীল আলোর সংকেত দিল।
আহমদ মুসা নীল সংকেত দেয়ার পর মুহূর্তেই একটা হেড লাইট জ্বলে উঠল। হেড লাইট এগিয়ে আসতে লাগল ঘাটের দিকে।
দশ মিনিটের মধ্যেই হেড লাইটটি ঘাটে এসে পৌছল। তার পাশে জ্বলে উঠল আরও চারটি হেড লাইট।
আহমদ মুসা বুঝল, পাঁচটি বোট এসে নোঙর করেছে ঘাটে।
পাঁচটি হেড লাইটের আলোতে গোটা ঘাট আলোকিত হয়ে উঠেছে। পরে এক সাথেই পাঁচটি হেড লাইট নিভে গেল।
প্রথমে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢেকে গেল ঘাট। পরে অন্ধকার ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে গেল। চাঁদ না থাকলেও কুয়াশা ও মেঘহীন আকাশের তারার আলো গাছ-গাছড়ার ছায়াহীন ঘাটকে বেশ স্বচ্ছ করে তুলেছে। বোটে মানুষের চলাফেরা বেশ দেখা যাচ্ছে।
আহমদ মুসার চোখে ইনফ্রারেড গগলস। বেশ ক’মিনিট গেল। কোন বোট থেকেই কাউকে নামতে দেখলো না আহমদ মুসা।
হঠাৎ আহমদ মুসার মনে হলো সংকেতের পর আছে ব্রিফিং। এর অর্থ কি তাহলে এই যে, ওরা ঘাটে আসার পর এদিকের অবস্থা সম্পর্কে ব্রিফিং নেবার পর তারা অভিযান শুরু করবে! তাহলে তাকে তো ঘাটে যেতে হবে।
ঠিক এই সময়েই ঘাট থেকে হ্যান্ড মাইকের অনুচ্চ শব্দ ভেসে এল। বলা হলো, ‘মিঃ ওবোটে মাইকেল, আপনি তাড়াতাড়ি আসুন। আমরা দেরী করতে চাই না।’
আহ্বান শোনার সাথে সাথে আহমদ মুসা বলল, ‘বুঝা গেছে, অভিযান শুরুর আগে ওরা ব্রিফিং এর অপেক্ষায় আছে। সুতরাং আমাকে ওখানে যেতে হবে।’
‘আপনি তো ওবোটে মাইকেল নন, আপনি যাবেন কি করে? বলল কলিন কামাল।
‘আমি তো ওবোটে মাইকেল এর জায়গায় অভিনয় করছি।’
‘সেটা তো অভিনয়। আপনি গেলেই ধরা পড়ে যাবেন।’ বলল নোয়ানকো।
‘কিন্তু সম্ভবত ওরা ওবোটে মাইকেলের ব্রিফিং না পেলে অভিযানেই নামবে না।’
‘তাতে আমাদের তো ক্ষতি নেই।’ বলল ইসহাক আবদুল্লাহ।
‘অভিযানে নামবে না অর্থ অভিযান করবে না, সেটা নয়। তারা আরও কোন একটা বিপজ্জনক পথ বেছে নিয়ে এগুতে পারে। সুযোগ তাদের না দিয়ে আমরা চাই আমাদের পরিকল্পনার আওতার মধ্যে এনে শত্রুদের বিনাশ করতে। ওদের চলে যাবার সুযোগ দিতে চাই না।’
‘সেটা অন্যভাবে হয় না? আমরা এখন ওদের আক্রমণ করতে পারি না?’ বলল ইসহাক আবদুল্লাহ।
‘আক্রমণের আগে ওদের সবাইকে পাঁচটি বোট থেকে মাটিতে নামাতে হবে। বোটে থাকলে বেশির ভাগ পালিয়ে যাবার সুযোগ পাবে। এ সুযোগ আমরা কাউকেই দিতে চাই না।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আপনি গেলেই কি ওরা নামবে? আপনাকে চিনে ফেললে তো উল্টো ঘটবে।’
‘তা ঘটতে পারে। ঝুঁকি না নিয়ে উপায় নেই। আমার ধারণা, আমাকে যেতে দেখলেই ওরা ওদের বাহিনীকে ঘাটে নামাবে এবং অভিযানের প্রস্তুতি নেবে। ব্রিফিং পাওয়ার পর কিভাবে কোনদিকে যাত্রা শুরু করবে তা ঠিক করবে।’
‘বুঝলাম, কিন্তু আপনি ওখানে গেলেই তো ধরা পড়বেন।’ বলল নোয়ানকো উদ্বিগ্ন কণ্ঠে।
‘ধরা পড়ার ঝুঁকি অবশ্যই আছে। কিন্তু এমনও হতে পারে, আমি ব্রিফিং-এর জন্যে ওদের বোটে উঠার পর শত্রুদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার সুযোগ আমাদের হবে।’
‘কিভাবে?’ বলল ইসহাক আবদুল্লাহ।
নোয়ানকো থাকছে পূর্ব দিকে। কলিন কামাল থাকছে মধ্য অঞ্চলে অর্থাৎ উত্তরে, ইসহাক আবদুল্লাহ থাকছে পশ্চিমে এবং দক্ষিণে।’
আহমদ মুসা থামতেই নোয়ানকো কিছু বলতে যাচ্ছিল। আহমদ মুসা তাকে বাধা দিয়ে বলল, ‘আর কোন কথা নয়। দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি উঠলাম।’
বলে আহমদ মুসা মাটিতে তোয়ালের উপর পড়ে থাকা হ্যাটটা তুলে মাথায় নিয়ে উঠে দাঁড়াল। বলল, তোমরা যে যার জায়গায় চলে যাও। ঘাট থেকে যখন গুলী বর্ষণের শব্দ পাবে, তখন পরিকল্পনা অনুসারে তোমরা আক্রমণ শুরু করবে। আর আমি ঘাটে পৌছার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে যদি ওদিক থেকে গুলীর শব্দ না পাও, তাহলে তোমরাই পরিকল্পনা অনুসারে আক্রমণ শুরু করবে এবং নিজেদের বুদ্ধিবিবেক অনুসারে কাজ করবে।’
‘ওদিক থেকে গুলীর শব্দ না পাবার অর্থ?’ শুকনো কণ্ঠে প্রশ্ন করল ইসহাক আবদুল্লাহ।
‘আমি যদি বন্দী হয়ে যাই বিনা যুদ্ধে তাহলে গুলীর শব্দ পাবে কি করে/’
বলেই আহমদ মুসা ওদের আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সকলকে সালাম জানিয়ে টিলা থেকে ঘাটের উদ্দেশ্যে নামতে শুরু করল।
আর ইসহাক আবদুল্লাহ, কলিন কামাল ও নোয়ানকো হতবুদ্ধি হবার মত নির্বাক হয়ে আহমদ মুসার গমন পথের দিকে চেয়ে রইল।
এক সময় ঠোঁট ফেড়ে কথা বেরুল ইসহাক আবদুল্লাহ। বলল, ‘একজন মানুষ কত বড় হলে এভাবে পরার্থে নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে।’ আবেগে কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল ইসহাক আবদুল্লাহর।
‘না উনি মানুষ নন ইসহাক ভাই, আল্লাহ নিশ্চয় আমাদের সাহায্যের জন্যে ফেরেশতা পাঠিয়েছেন।’ কথা বলতে বলতে চোখ মুছল নোয়ানকো।
কলিন কামাল কিছু বলতে যাচ্ছিল। ইসহাক আবদুল্লাহ বাধা দিয়ে বলল, ভাইয়েরা, আর কোন কথা নয়। চলুন আমরা তাঁর আদেশ পালন করি। যে যার নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যাই। আর যাবার আগে এসো আমাদের তিনজনের ৬ হাত একত্র করে আল্লাহর নামে শপথ করি, আমাদের ভাই আহমদ আবদুল্লাহ যেমন মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকাননি, তেমনি আমরা আমাদের একজন বেঁচে থাকা পর্যন্ত লড়াই করে যাব, পরাজয় নিয়ে কেউ ঘরে ফিরবো না।
তারা ছয় হাত একত্র করে শপথ গ্রহণ করল।
তাদের তিনজনের চোখ থেকেই অশ্রু গড়াচ্ছিল। তাদের চোখে মুখে অপার্থিক এক আলো। নতুন মানুষ যেন তারা।

‘ঐ যে ওবোটে মাইকেল আসছে।’ উচ্ছসিত কণ্ঠে বলল জন ব্ল্যাংক।
জন ব্ল্যাংক তার কমান্ড বোটের ডেক কেবিনে বসে উন্মুক্ত দরজা দিয়ে তাকিয়েছিল ঘাট থেকে যে পথটা চলে গেছে দ্বীপের অভ্যন্তরে সে পথের দিকে।
পাঁচ বোটের শতাধিকে লোক নিয়ে যে অপারেশন টিম সাউথ টার্কো দ্বীপে অভিযানে এসেছে জন ব্ল্যাংক তার অধিনায়ক।
জন ব্ল্যাংকের পাশেই আরেকটা চেয়ারে বসেছিল জিম টেইলর।
জন ব্ল্যাংকের কথা শেষ হতেই জিম টেইলর বলল, ‘কি দেখে বুঝলেন ওবোটে মাইকেল আসছে, ঐ নীল টর্চের আলো?’
‘হ্যাঁ তাই। ঐ নীল টর্চই আমাদের কূলে আসার সবুজ সংকেত দিয়েছে।’
‘পাশের বোট থেকে রবার্ট ফুটকে ডাকলে ভালো হয় না। ওবোটে মাইকেলদেরকে তো তার মাধ্যমেই এই এ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছিল।’ বলল জিম টেইলর।
‘হ্যাঁ তাকে ডাক। সেও তো এই টার্কস দ্বীপপুঞ্জের লোক। ব্রিফিং-এর সাথে সাথে আলোচনাও সেরে নেয়া যাবে।’
জিম টেইলর চেয়ার থেকে উঠে ডেক কেবিন থেকে ডেকে বেরিয়ে গেল।
কমান্ড বোটের গায়ের সাথে গা লাগিয়ে দু’পাশে দু’টি করে চারটি বোট নোঙর করা।
পাশের প্রথম বোটেই ছিল রবার্ট ফুট।
দু’মিনিটের মধ্যেই জিম টেইলর রবার্ট ফুটকে ডেকে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করল।
তারা কেবিনে ঢুকতেই জন ব্ল্যাংক জিমকে লক্ষ্য করে বলল, ‘জিম তুমি আমাদের সকল বোটের সবাইকে নির্দেশ দাও আর্মস-এ্যমুনিশন নিয়ে এখনি ঘাটে নামতে। ওবোটে মাইকেলের সাথে কথা বলার পর আমরা আর এক মিনিটও অপেক্ষা করবো না। যাও, কুইক।’
জিম ডেকে বেরিয়ে দেখল, ওবোটে মাইকেল তখনও ঘাট থেকে বেশ খানিকটা দূরে।
সে বোটগুলোর ক্যাপ্টেনদের ডেকে নির্দেশ জারি করল, ‘এখনি তোমরা তোমাদের লোক ও সকল আর্মস-এ্যামুনিশনসহ ঘাটে নেমে যাও এবং ফরমেশন নিয়ে দাঁড়াও।’
হুকুম জারির দু’মিনিটের মধ্যে পাঁচটি বোটের শতাধিক লোক অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঘাটে নেমে ফরমেশন নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
জেটির পরেই ইট-পাথর বিছানো একটা ছোট্ট চত্বর। জেলেরা বোট থেকে মাছ ও মালপত্র নামিয়ে প্রথমে এখানেই জমা করে, অনেক সময় ভাগ-বাটোয়ারা করে। গাড়িও এসে এখানেই দাঁড়ায়। এই চত্বর থেকেই একটা রাস্ত বেরিয়ে গেছে দ্বীপের অভ্যন্তরে।
এই চত্বরের উপরে ঘাসে ঢাকা অনেকখানি ফাঁকা জায়গা। বোট থেকে নেমে সবাই সেই ফাঁকা জায়গাতেই শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে।
এই ফাঁকা জায়গার পর আগাছা ও ছোট ছোট গাছ-গাছালীতে পূর্ণ এবড়ো-থেবড়ো এলাকা শুরু হয়েছে।
নির্দেশ দিয়ে এসে জিম টেইলর জন ব্ল্যাংকের পাশে এসে বসল। জন ব্ল্যাংকের অন্যপাশে বসেছে রবার্ট ফুট।
‘ওবোটে মাইকেল এসেছে।’ বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল জন ব্ল্যাংক।
কথা শেষ করেই আবার বলল, ‘জিম যাও তাকে এই কেবিনে নিয়ে এস।’
জিম কেবিন থেকে বেরিয়ে কেবিনের দরজায় একপাশে দাঁড়িয়ে জন ব্ল্যাংকের পারসোনাল গার্ড জনকে ঘাটের দিকে এগিয়ে ওবোটে মাইকেলকে দেখিয়ে বলল, ‘ওঁকে এই বোটে নিয়ে এস।’
গার্ড বোট থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে ওবোটে মাইকেলের মুখোমুখি হয়ে বলল, ‘মিঃ ওবোটে আসুন। মিঃ জন ব্ল্যাংক ঐ বোটে আছেন।’
মিঃ ওবোটের মাথার হ্যাটটা তার কপাল পর্যন্ত নেমে এসেছে। ফলে মুখের অবয়বটা স্পষ্ট নয়।
‘সিওর।’ মাত্র এই শব্দটা উচ্চারণ করে ওবোটে বোটের দিকে যাত্রা শুরু করল। পেছনে গার্ড।
বোটের ডেকে দাঁড়িয়ে ছিল জিম টেইলর।
ওবোটে বোটে উঠল। গার্ড বোটের নিচে জেটিতেই দাঁড়িয়ে থাকল। ডেক থেকে ওবোটেকে ভেতরে নিয়ে যাবার দায়িত্ব জিম টেইলরের।
জিম টেইলর ওবোটের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘ওয়েলকাম মিঃ ওবোটে। চলুন, মিঃ ব্ল্যাংক আপনার অপেক্ষা করছেন।
‘ধন্যবাদ।’ বলে ওবোটে কেবিনের দিকে পা বাড়াবার আগে পেছন ফিরে চারদিকটা একবার দেখল। দেখল সে বোটের গলুই-এর কাছে জেটিতে দাঁড়ানো গার্ডকেও।
ওবোটে কেবিনে প্রবেশ করল।
জিম টেইলর আগেই প্রবেশ করেছিল। সে গিয়ে বসেছিল তার চেয়ারে।
ওবোটে বেশধারী আহমদ মুসা কেবিনে প্রবেশ করে কপাল পর্যন্ত নেমে যাওয়া হ্যাট কপালের উপরে তুলে দিল।
জন ব্ল্যাংক, জিম টেইলর এবং রবার্ট ফুট আহমদ মুসার মুখের দিকে তাকিয়ে ভুত দেখার মত চমকে উঠেছিল। একজন কৃষ্ণাংগ টার্কসবাসীর বদলে দেখছে একজন কালার্ড এশিয়ানকে!
তারা তাদের বিমূঢ় ভাব কাটিয়ে উঠার আগেই আহমদ মুসা কাঁধের ষ্টেনগান হাতে নিয়ে তাদের দিকে তাক করে বলল, ‘হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আমি আপনাদের ওবোটে নই।’
বলেই ষ্টেনগানের ট্রিগারে হাত চেপে ওদের দিকে চেয়ে কঠোর কণ্ঠে বলল, ‘তোমাদের আজকের খেলাটা শেষ। বেঘোরে জীবন দিতে না চাইলে তোমরা অস্ত্র ফেলে দাও, তোমাদের লোকদের অস্ত্র ফেলে দিতে বল এবং আত্মসমর্পণ…….।’
আহমদ মুসার কথা শেষ হতে পারল না। একটা আঘাত এসে পড়ল মাথায়।
আহমদ মুসা টের পায়নি যে, গার্ড জনকে সে বোটের নিচে গলূই-এর কাছৈ দেখে এসেছিল, আহমদ মুসা ও জিম টেইলর কেবিনে ঢোকার পর সে বোটে উঠে এসে কেবিনের দরজার পাশেই দাঁড়িয়েছিল। কেবিনের দরজা বন্ধ না থাকায় আহমদ মুসার সব কথাই সে শুনতে পেয়েছিল। সে বিপদটা আঁচ করতে পেরে বিড়ালের মত নিঃশব্দে আহমদ মুসার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিল এবং ষ্টেনগানের বাঁট দিয়ে আঘাত করেছিল আহমদ মুসার মাথায়।
ষ্টেনগানের বাঁটের বাড়িটা আহমদ মুসার ঠিকই লাগল। তবে কেবিনের ছাদটা নিচু হওয়ায় ষ্টেনগানের বাঁট ছাদে একটা বাড়ি খেয়ে তারপর আহমদ মুসার মাথায় গিয়ে আঘাত করে।
সুতরাং আঘাতটা যতটা ভয়াবহ হবার কথা তা হলো না। কিন্তু দেখা গেল আহমদ মুসা মাথায় আঘাত খাওয়ার সংগে সংগেই টলে উঠে একটা পাক খেয়ে কাত হয়ে পড়ে গেল কেবিনের মেঝেয়। ডান হাত থেকে তার ষ্টেনগান খসে পড়েছিল।
ওরা তিনজনই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছিল।
‘ধন্যবাদ জন, তুমি ঠিক সময়ে এসে পড়েছিলে।’ বলল জন ব্ল্যাংক।
একটু থেকে ক্রুদ্ধ চোখে আহমদ মুসার দিকে চেয়ে সে বলল, ‘এই তাহলে সেই শয়তান এশিয়ান যার কথা তোমরা এত বলেছ। তাই না রবার্ট ফুট।’
রবার্ট ফুট কথা বলতে যাচ্ছিল। সে কথা বলার আগেই জন ব্ল্যাংক আবার বলল, ‘জন তাড়াতাড়ি ওকে সার্চ কর। জ্ঞান ফেরার আগেই ওকে বেঁধে ফেল। ওর জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না। তার কাছ থেকে কথা বের করতে হবে তারা কি জেনেছে, কতটা জেনেছে।’
আহমদ মুসার দেহটা পড়েছিল বোটের আড়াআড়ি এবং জনের বিপরীত দিকে অর্থাৎ জন ব্ল্যাংকের দিকে কাত হয়ে।
নির্দেশ পেয়ে জন ব্ল্যাংক আহমদ মুসার পেছন দিকটা ঘুরে আহমদ মুসার সামনের দিকে এগিয়ে সবে কোমর বরাবর পৌছেছে।
চোখের পলকে এই সময় আহমদ মুসার দু’টি পা বিদ্যুত বেগে উঠে এসে জনের গলা সাঁড়াশির মত চেপে ধরৈ তাকে আছড়ে ফেলল কেবিনের মেঝেতে। সেই সাথে কোটের পকেটের উপর পড়ে থাকা আহমদ মুসার বাম হাত পকেট থেকে রিভলবার বের করে তিনজনকে লক্ষ্য করে তিনটি গুলী ছুঁড়ল পর পর।
ওরা তিনজন কিছু বুঝে উঠার আগেই গুলী খেয়ে ঢলে পড়ে গেল মেঝের উপর।
ওদিকে জন আহমদ মুসার দু’পায়ের সাঁড়াশিতে বন্দী হয়ে মেঝেতে আছড়ে পড়েও তার ডান হাত দিয়ে যখন সঁড়াশির চাপ ঢিলা করার চেষ্টা করছে, বাম হাত দিয়ে তখন সে বেল্টে গুজে রাখা রিভলবার বের করে আহমদ মুসার বুক অথবা মাথা তাক করার চেষ্টা করছে।
তিনজনকে গুলী করেই আহমদ মুসা মনোযোগ দিয়েছিল জনের দিকে। সে দেখতে পেল জনের কসরত। আহমদ মুসা সময় নষ্ট করল না। চতুর্থ গুলী করল জনকে লক্ষ্য করে।
জন একেবারে বুকে গুলী বিদ্ধ হলো।
আহমদ মুসা উঠে বসল। ভাবছিল সে, নিশ্চয় ওদের লোকেরা বোটের কেবিনে গুলীর শব্দ শুনে এদিকে ছুটে আসছে।
আহমদ মুসা উঠে বসেই ছিটকে পড়া ষ্টেনগানটা টেনে নিল কাছে।
উঠে দাঁড়াচ্ছে আহমদ মুসা। এ সময়ই ঘাটের তিন দিক থেকে প্রায় এক সাথেই অনেকগুলো ষ্টেনগান গর্জে উঠল।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়িয়েছে। তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। এদিকে গুলীর শব্দ শুনে এরা এদিকে আসার আগেই গুলীর শব্দ পাওয়ার সাথে সাথে আহমদ মুসার লোকেরা আক্রমণ শুরু করেছে।
এদিক থেকেও গুলী বর্ষণ শুরু হয়েছে। তখন গুলী বৃষ্টির পালা চলছিল।
আহমদ মুসা কেবির দরজায় উঁকি দিল। দেখল, ডজনখানেক লোক ছুটে আসছে কেবিনের দিকে। তাদের হাতে উদ্যত ষ্টেনগান। তারা মুখ দিয়ে চিৎকার করছে, ‘স্যার, এখানে কি ঘটেছে? আপনারা আসুন। হুকুম দিন, তিনদিক থেকেই শত্রু আক্রমণ করেছে।’
আহমদ মুসা কেবিনের দরজায় এসে চিৎকার করে বলল, ‘হুকুম দেবার মত তোমাদের নেতারা কেউ বেঁচে নেই। তোমরা অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পণ কর।’
আহমদ মুসার কণ্ঠস্বর শোনার সাথে সাথে ওদের ডজনখানেক ষ্টেনগান নড়ে উঠল। আহমদ মুসা এর জন্যে তৈরিই ছিল। নিজের শেষ কণ্ঠস্বর বাতাসে মেলাবার আগেই তার ষ্টেনগান অগ্নি বৃষ্টি করল। এক ঝাঁক গুলী গিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরল।
এদের পরিণতি দেখে বোটের দিকে আসার চেষ্টা আর কেউ করল না। তবু আহমদ মুসা তার গুলী অব্যাহত রাখল যাতে ওরা এদিকে আক্রমণে আসার বা পিছু হটে পালাবার কোন সুযোগ না পায়।
প্রায় পনের মিনিট গুলী চলার পর গুলী থেমে গেল। বোটের সামনে ঘাটের উপরে উন্মুক্ত জায়গা টুকুতে তখন লাশ আর লাশ। কেউ বাঁচেনি। চারদিক থেকে আক্রান্ত হওয়ায় কেউ পালাতেও পারেনি।
ইসহাক আবদুল্লাহর দল, কলিন কামালের দল এবং নোয়ানকোর দল প্রায় এক সাথেই ছুটে এল বোটের দিকে আহমদ মুসার কাছে।
ইসহাক, কলিন কামাল ও নোয়ানকো এসে আহমদ মুসাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। বলল, ‘আল্লাহ আমাদের বিজয় দিয়েছেন। আপনি ভাল আছেন তো?’
আহমদ মুসা বলল, ‘আমি ভাল আছি। তোমরা সবাই ভাল তো? আমাদের লোকদের কি অবস্থা?’
‘মাত্র তিনজন আহত। তাছাড়া সবাই ভাল।’ বলল ইসহাক আবদুল্লাহ।
‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘প্রথমে এদিক থেকে চারটা গুলীর শব্দ পাওয়া গেছে। কি ঘটেছিল?’ বলল নোয়ানকো।
‘দেখবে ভেতরে এস।’
বলে আহমদ মুসা বোটের কেবিনের দিকে চলতে শুরু করল।
আহমদ মুসার সাথে ইসহাক আবদুল্লাহ, কলিন কামাল ও নোয়ানকো প্রবেশ করল কেবিনে।
কেবিনে পড়ে থাকা চারটি লাশের দিকে চোখ পড়তেই ইসহাক আবদুল্লাহ বলে উঠল, ‘তাহলে এই চারজনকে গুলী করার শব্দ আমরা পেয়েছিলাম?’
ইসহাক টর্চ জ্বেলে লাশগুলো দেখছিল।
‘হ্যাঁ। এই চারজনের ঐ তিনজন হলো নেতা। আর এ ছিল শীর্ষ নেতার ব্যক্তিগত গার্ড।’ লাশগুলোর দিকে ইংগিত করে বলল আহমদ মুসা।
‘তাহলে নেতা নেতাদের মেরেছেন কর্মীরা কর্মীদের মেরেছে।’ বলল নোয়ানকো।
‘না নোয়ানকো, তুমি খেয়াল করনি, কর্মীদের যারাই যখন বোটের দিকে আসার চেষ্টা করেছে, তারা মারা পড়েছে আহমদ আবদুল্লাহ ভাইয়ের হাতে। তিনি পেছন দিক থেকে এভাবে পাহারা না দিলে হয়তো শত্রুদের বেশির ভাগই পালিয়ে যেত। এখন সংবাদ পৌছাবার মত একজনও পালাতে পারেনি।’
‘আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি যে, আহমদ আবদুল্লাহ ভাই বোটে নেতাদের কাছে আসার দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন।’ বলল কলিন কামাল।
ইসহাক আবদুল্লাহ টর্চের আলো ঘুরাতে গিয়ে হঠাৎ চোখ পড়ল আহমদ মুসার মুখে। আহমদ মুসার মাথা ও মুখের ডান পাশ রক্তাক্ত দেখে আঁৎকে উঠল ইসহাক আবদুল্লাহ। বলল, ‘একি, আহমদ আবদুল্লাহ ভাই আপনি তো আহত!’
ইসহাক আবদুল্লাহর কথার সাথে সাথেই অন্য দু’জনও ঝুকে পড়ল আহমদ মুসার দিকে।
‘আপনার কি গুলী লেগেছে আহমদ আবদুল্লাহ ভাই?’
‘তোমরা ব্যস্ত হয়ো না। গুলী লাগেনি। পেছন থেকে ঐ গার্ড চুপি চুপি এসে ষ্টেনগানের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করেছিল। মাথার ডান পাশের কিছুটা থেঁথলে গেছে।’
বলে ঘুরে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘চল বাইরে, অনেক কাজ আছে।’
আহমদ মুসা বেরিয়ে এল। তার সাথে ওরা তিনজনও।
‘অন্তত ফাষ্ট এইড আপনার এখনি নেয়া দরকার।’ বলল কলিন কামাল।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘ঠিক আছে ডাঃ কলিন কামাল, প্রথম কাজটা সেরে নেই। তারপর তোমার ডাক্তারী বিদ্যা প্রদর্শনের সুযোগ দেব।’
বলে একটু থেমেই আহমদ মুসা ইসহাক আবদুল্লাহর দিকে চেয়ে বলল, ‘কয়েকটা জরুরী কাজ করতে হবে। এক. ওদের সমস্ত লাশ বোটে তুলে গভীর সাগরে ফেলে দিয়ে আসতে হবে। দুই. ঘাটের সব রক্ত ধুয়ে-মুছে সাফ করে ফেলতে হবে রাতের মধ্যেই। তিন. আগের তিনটি বোটের মত এ পাঁচটি বোটকেও আমাদের সেবু নদীতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। চার. ভোর রাতেই থানায় গিয়ে ডায়েরী করতে হবে, কয়েকটি বোটে করে ডাকাত এসেছিল। আমাদের চারজন লোককে খুন ও তিনজনকে আহত করেছে। তারপর গ্রামবাসী জেগে উঠে একযোগে ধাওয়া করলে ওরা পালিয়ে গেছে। ইদানিং এই ধরনের ডাকাতের আনাগোন বেড়ে গেছে। ওকারী গ্রাম বা ওকারী ঘাট এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি বা রাত্রিকালীন পাহারা চাই। পাঁচ. কিছু পয়সা খরচ করে হলেও খবরের কাগজে ডাকাতের হানা, চারজন নিহত ও তিনজন আহত হওয়ার খবর ভালো করে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এই নিউজে এই এলাকার জন্যে স্বতন্ত্র পুলিশ ফাঁড়ি ও সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা দাবী করতে হবে। ছয়. এদের কাছ থেকে পাওয়অ শতখানেক ষ্টেনগান, শতখানেক রিভলবার, বিপুল গোলাবারুদ এই রাতেই লুকিয়ে ফেলতে হবে এবং ঔষধগুলো আমারে ষ্টোরে জমা করতে হবে। সাত. আজকের এই খবর সিডি কাকেম গ্রামে এখনি পৌছতে হবে এবং জর্জকে আসতে বলতে হবে সকালের মধ্যেই। আট. অবিলম্বে আরও দু’শ যুবককে যুদ্ধ ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বিভিন্ন দ্বীপ থেকে আস্থাভাজন দু’শ যুবক সংগ্রহ করতে হবে। নয়. আরও কয়েকটি দ্বীপে অন্তত ভিজকায়া মামুন্ড এবং গ্রান্ড টার্কস দ্বীপে আমাদের নতুন ঘাঁটি গড়ে তুলতে হবে। প্রধান ঘাঁটি এখানেই থাকবে। দশ. এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ৮টি মোটর বোট সমন্বয়ে একটা নৌবহর আমাদের থাকবে। এগুলোর জন্যে তেল ও প্রয়োজনীয় সবকিছু প্রস্তুত রাখতে হবে। যে কোন জরুরী মুহূর্তে যাতে এগুলো কাজে লাগানো যায়। এগার. আমাদের এ দ্বীপের খৃষ্টান ও অন্যধর্মী অধ্যুসিত উত্তরাংশের উপর নজর রাখা এবং অন্যান্য দ্বীপ থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহের জন্য একটা গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করতে হবে।’ দীর্ঘ বক্তব্যের পর থামল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা থামতেই আনন্দে চিৎকার করে উঠল ইসহাক আবদুল্লাহ ও কলিন কামাল। তারা বলল, ‘আজকের এই ঘটনার পর মহাকিছু ঘটাতে পারে শত্রুরা, এ নিয়ে আমরা আনন্দের মধ্যেও উদ্বিগ্ন ছিলাম। আপনার এই পরিকল্পনা তার জবাব দিয়েছে, যা আমরা আশা করছিলাম, তার চেয়েও অনেক বেশি। জিন্দাবাদ, আহমদ আবদুল্লাহ ভাই জিন্দাবাদ। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আপনাকে এই জ্ঞান দিয়েছেন এবং আমাদের মধ্যে দয়া করে পাঠিয়েছেন।’
শেষের কথাগুলো তাদের আবেগে ভারি হয়ে উঠল।
আহমদ মুসা এসব কথার দিকে কান না দিয়ে বলল, ‘নোয়ানকো তুমি একজন কাউকে সাথে নিয়ে গ্রামে যাও। লোকদেরকে এখানে পাঠিয়ে তুমি যাবে সিডি কাকেম গ্রামে। আর ইসহাক আবদুল্লাহ তুমি থানার জন্যে এফ আই আর লিখতে বস। আর ডাঃ কলিন তুমি দেখ আহতরা কি অবস্থায় আছে।’
কথা শেষ করে আহমদ মুসা বোটের সামনে চত্বরে দন্ডায়মান সাথীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াল। বলল, ‘বিজয়ী সাথী ভাইরা, তোমাদের মোবারকবা। আল্লাহ তোমাদের একটা বড় বিজয় দিয়েছেন। বিজয়ের কৃতিত্ব তোমাদের। তোমাদের যা আছে তাই নিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে দাঁড়িয়েছ এবং যা সাধ্য তোমাদের, তা করেছ। এ জন্যেই আল্লাহ তোমাদের বিজয় দিয়েছেন। আমরা আনন্দিত হবো, কিন্তু গর্বিত হবো না, অলস হবো না। শত্রুদের পরাজয় শুরু হয়েছে বটে, কিন্তু অনেক দীর্ঘ পথ আমাদের পাড়ি দিতে হবে। তোমাদেরকে আরও সতর্ক, আরও দক্ষ, আরও কুশলী হতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে আরও বড় বিজয় দেবেন।’ থামল আহমদ মুসা।
সামনের ওরা সমস্বরে ধ্বনি দিল, ‘আল্লাহু আকবর।’
ওদের একজন দাঁড়িয়ে থাকা সারি থেকে দু’ধাপ এগিয়ে এল। বলল, ‘নিপীড়ন, পরাজয়, আত্মসমর্পণ এবং নিশ্চি‎হ্ণ হয়ে যাওয়াকে যখন আমরা আমাদের ভাগ্য লেখা হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম, তখন আপনার আগমন আমাদের নতুন জীবন দিয়েছে। আপনার উসিলায় আমরা পরাজয়ের জায়গায় বিজয় পেতে শুরু করেছি। আল্লাহর অসীম দয়া হিসেবে আপনাকে আমরা পেয়েছি। আপনি যে নির্দেশ আমাদের দেবেন, সে নির্দেশ আমরা পালন করব, জীবনের বিনিময়ে হলেও।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ ভাইয়েরা। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন।’
বলে আহমদ মুসা তাকাল ইসহাক আবদুল্লাহর দিকে। দেখল, নোয়ানকো গ্রামে যাবার জন্যে তৈরি হয়েছে। নেমে গেছে বোট থেকে।
‘খসড়ার জন্যে কাগজ তো দরকার। আমার কাছে কাগজ তো নেই।’ আহমদ মুসা তাদের দিকে মনোযোগ দিতেই বলে উঠল ইসহাক আবদুল্লাহ।
আহমদ মুসা তার পিঠে ঝুলানো ব্যাগের দিকে ইংগিত করে বলল, ব্যাগের পকেটে দেখ তোমার প্রয়োজন মত কাগজ পাবে।’
কাগজ নিয়ে নিল ইসহাক আবদুল্লাহ।
এবার এগিয়ে এল কলিন কামাল আহমদ মুসার দিকে।
‘ডাঃ কলিন তুমি আগে অন্য আহতদের প্রয়োজনটা সেরে এসো।’
‘ওদের ব্যবস্থা আগেই করেছি। ওদের আঘাতগুলেঅ অপারেশনের মত গুরুতর নয়।’ বলল কলিন কামাল।
‘ধন্যবাদ।’ বলে আহমদ মুসা বসল ফাষ্ট এইড নেবার জন্যে।

বাহামার সানসালভাদর।
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top