২৭. মিসিসিপির তীরে

চ্যাপ্টার

রাস্তার নিচে খাদে উল্টে পড়া আহমদ মুসার গাড়ির উপর চোখ পড়তেই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে গোল্ড ওয়াটার বলল, ‘সর্বনাশ জেনারেল শ্যারণ, আহমদ মুসা এ্যাকসিডেন্ট করেছে। মারা গেল নাকি?’
জেনারেল শ্যারণ তার চোখের দূরবীণ সেদিকে ঘুরিয়ে উল্টে পড়া গাড়িটা দেখে বলল, ‘উদ্বিগ্ন হচ্ছেন কেন মি: গোল্ড ওয়াটার। তার এবং তার খয়েরখাঁ মুসলিম দেশগুলোর উপর যে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম, তা না হওয়ায় ক্ষতি আমাদের হবে। কিন্তু ব্যাটা শেষ হলে আমরা বাঁচি। এটাও কম লাভ নয়।’
‘আপনার হিসাবে আপনি ঠিক আছেন জেনারেল। কিন্তু আমাদের হিসাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’
‘কোন হিসাব? তিন বিলিয়ন ডলারের? হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, সে প্রশ্নটা এখন উঠতেই পারে।’
‘কিন্তু জেনারেল, প্রশ্নটা আসলেই উঠতে পারে কি? তাকে তো আপনাদের হাতে দিয়েছি আমরা। সুতরাং বিনিময় তো হয়েই গেছে।’
‘তাই যদি হয়, তাহলে উদ্বিগ্ন কেন বলুন তো আপনার হিসাব নিয়ে? উদ্বেগের কারণ, আপনিও বোঝেন যে, তিন বিলিয়ন ডলারের প্রতি আপনার দাবী এখন খুবই দুর্বল।’
গোল্ড ওয়াটার কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু হেলিকপ্টার তখন এ্যাকসিডেন্টে পড়া আহমদ মুসার গাড়ির পাশেই ল্যান্ড করেছে।
গোল্ড ওয়াটার ও জেনারেল শ্যারণ দ্রুত নেমে এল হেলিকপ্টার থেকে।
হেলিকপ্টার থেকে নেমে আসা অন্যান্যরা ইতিমধ্যেই উল্টানো গাড়ি সোজা করেছে।
গাড়ির দিকে তাকিয়ে গোল্ড ওয়াটার এবং জেনারেল শ্যারণের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। গাড়িতে কেউ নেই।
কিছুক্ষণ তারা কথা বলতে পারল না।
কোথায় গেল জলজ্যান্ত তিনজন লোক? এ্যাকসিডেন্টের পর ওরা কি গাড়ি থেকে বেরিয়ে পালিয়েছে? এত অল্প সময়ে এটা কি সম্ভব? বলল গোল্ড ওয়াটার বিস্ময়ের সাথে, ‘এ্যাকসিডেন্ট হওয়ার দু’চার মিনিটের মধ্যেই স্পটটি আমার নজরে এসেছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে এত বড় এ্যাকসিডেন্ট থেকে বেঁচে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যাওয়া বাস্তব নয়।’
‘কিন্তু মি: গোল্ড ওয়াটার, তারা যখন গাড়িতে নেই, তখন পালিয়েছে এটাই বাস্তবতা।’ বলল জেনারেল শ্যারণ।
তিনটি গাড়িও এসে পৌঁছল এ সময়। গাড়ি থেকে নামল ওরা ১৪ জন।
‘পালিয়ে ওরা বেশিদূর যেতে পারেনি অবশ্যই, কথাগুলো স্বগোতোক্তির মত সকলের দিকে তাকিয়ে বলল গোল্ড ওয়াটার, তোমরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়। নদীর তীরটাও তোমরা দেখ। তিনজন লোক পালিয়ে বেশিদূর যেতে পারবে না।’
‘মি: গোল্ড ওয়াটার, ওরা এদিকে দেখুক। চলুন আমরা হেলিকপ্টারে যাই। লো-ফ্লাই করে সার্চ করাটা বেশি ফলপ্রসূ হবে।’ বলল জেনারেল শ্যারণ।
হেলিকপ্টারের দিকে চলল গোল্ড ওয়াটার এবং জেনারেল শ্যারণ।

হঠাৎ গোল্ড ওয়াটারের বাড়ির সামনে ছুটাছুটি দেখে রাস্তার পাশে গাড়ি নিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছিল শিলা সুসান।
সে দেখল ভীষণ উত্তেজিত ও ব্যস্তসমস্ত ডজনেরও বেশি লোক তিন গাড়ি বোঝাই হয়ে বাড়ির পাশের রোড ধরে ছুটল পশ্চিম দিকে।
ব্যাপারটা দেখে বিস্মিত হলো শিলা সুসান। ভাবল, কিছু একটা ঘটেছে।
আরও কিছুটা সময় পার হলো। বাড়ির দিক থেকে আর কেউ বের হলো না। হৈ চৈ কিছু শোনা গেল না।
বাড়ির দিকে এগুবে। ভাবল শিলা সুসান।
ঠিক এই সময় ব্যস্ত ও উত্তেজিত গোল্ড ওয়াটার আরও কয়েকজনকে নিয়ে প্রধান গেট দিয়ে বেরিয়ে এল। বেরিয়েই ছুটল তারা বাড়ির পুব পাশের উন্মুক্ত লনে দাঁড়ানো হেলিকপ্টারের দিকে।
ওরা সবাই হেলিকপ্টারে উঠল এবং উঠার সাথে সাথেই হেলিকপ্টার উড়ল আকাশে।
শিলা সুসান এবার সত্যি সত্যি উদ্বেগ বোধ করল। কি ঘটেছে? কোথায় যাচ্ছে ওরা?
গেটে স্টেনগানধারী দারওয়ান দাঁড়িয়ে, দেখতে পাচ্ছে সে।
কৌতূহলকে দমিয়ে রাখতে পারলো না শিলা সুসান। ভাবল সে দারোয়ানকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে।
ভাবার সাথে সাথেই শিলা সুসান গাড়ি চালিয়ে গোল্ড ওয়াটারের গেটে গিয়ে দাঁড়াল।
গেটম্যান এগিয়ে এল শিলা সুসানের গাড়ির কাছে। তার হাতে স্টেনগান। বলল, ‘বলুন, কি সাহায্য করতে পারি ম্যাডাম।’
কথা আগেই গুছিয়ে রেখেছিল শিলা সুসান। বলল, ‘আমি গোল্ড ওয়াটার আংকেলের সাথে দেখা করতে এসেছি।’
‘কে আপনি?’
‘শিলা সুসান। উনি আমার বাবার বন্ধু।’
গার্ড একটু চিন্তা করল। বলল, ‘একটা বড় ঘটনা ঘটে গেছে। খুব ব্যস্ত ওরা আজ। উনিও বেরিয়ে গেছেন।’
‘কি ঘটেছে? কারও অসুখ-বিসুখ?’
‘না অসুখ-বিসুখ নয়। একজন আরেকজনকে সাথে নিয়ে পালিয়ে গেছে? তাদেরকে ধরার জন্যেই বেরিয়েছেন ওরা।’
পালাবার কথায় চমকে উঠল শিলা সুসান। কারা পালাল? আহমদ মুসা কি? জিজ্ঞেস করল গোবেচারা ঢংয়ে, ‘কাজের লোক পালিয়েছে কিছু চুরি করে?’
গেটম্যানের চোখে-মুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুটে উঠল। বলল, ‘কাজের লোক হবে কেন? তারা আর কি চুরি করবে? দু’জন দুষ্ট লোককে ধরে রাখা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে। তারাই পালিয়েছে।’
শিহরিত হলো দেহটা শিলা সুসানের। তাহলে আহমদ মুসা ও সান ওয়াকার পালিয়েছে, তারা যেমনটা ভেবেছিল। মনে আনন্দের একটা ঢেউ খেলে গেল।
কিন্তু গেটম্যানের সামনে মুখটা ভার করে বলল, ‘খুবই দুঃসংবাদ। আমি চলি।’
বলে শিলা সুসান গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে এল রাস্তায়। ছুটল সে মেরী রোজ-এর কাছে তাকে সুখবরটা জানানোর জন্যে।
কিন্তু মেরী রোজ যেখানে ছিল গাড়ি পার্ক করে, সেখানে পেল না তাকে।
শুধু বিস্মিত নয়, উদ্বিগ্নও হলো শিলা সুসান। মেরী রোজ অবশ্যই অন্য কোথাও যাবার কথা নয়। কোন বিপদে পড়েনি তো সে?
হঠাৎ তার মনে হলো, আহমদ মুসা ও সান ওয়াকার পালাবার সাথে তার অন্তর্ধানের কোন যোগ নেই তো? কিংবা হোয়াইট ঈগলের লোকরা মেরী রোজকে চিনতে পেরে তাদের সাথে নিয়ে যায়নি তো?
এই শেষ কথাটা ভাবার সাথে সাথে শিলা সুসানের বুকটা কেঁপে উঠল ভয়ে এবং সিদ্ধান্ত নিল ওদের অনুসরণ অবশ্যই করতে হবে তাকে।
সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি স্টার্ট দিল শিলা সুসান। ঝড়ের বেগে গাড়ি এগিয়ে চলল। | ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top