এরা সবাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট নাগরিক। সবাই এরা বিজনেস ম্যাগনেট এবং টাকার কুমীর।
এরা বড় একটা টেবিল ঘিরে বসে আছে। হোস্টের চেয়ার তখনও খালি। হোস্ট স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এ্যাডামস হ্যারিসন। প্রেসিডেন্ট তখনও আসেনি।
প্রেসিডেন্ট এলো। সবাই দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানালভ
প্রেসিডেন্ট বসতে বসতে বলল, ‘স্যরি, একটা জরুরী টেলিফোন এ্যাটেন্ড করতে যেয়ে ২ মিনিট দেরী হয়েছে।’
‘এ কিছুই নয় মহামান্য প্রেসিডেন্ট। আমরা বরং ভয়ে ভয়ে আছি মহামান্য প্রেসিডেন্ট আমাদের চিনবেন কিনা?’ বলল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ভারত ভূষণ শিবাজী।
প্রেসিডেন্ট হাসল। বলল, ‘আমি কি মিঃ শিবাজী, মিঃ সেন, মিঃ বর্মন ও মিঃ মালাকরদের মত লোকদের ভূলতে পারি, না ভুলা উচিত! আমি ভুলব কি করে যে, একদিনের একটা অনুষ্ঠানে আমার ইলেকশন ফান্ডে আপনারা ৩০ লাখ ডলার ডোনেট করেছিলেন। ওটাই ছিল সে বছর আমার ইলেকশন ফান্ডের সর্বোচ্চ ডোনেশন। আপনাদের এ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক করা দেখে আমিই বরং লজ্জা পেয়েছি। যেখানে আমার ডাকা উচিত ছিল, সেখানে আপনারাই আমাকে ডেকেছেন। সত্যিই আমি দুঃখিত।’
‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, এই বিনয়ের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা খুশী হয়েছি যে, আপনার স্মৃতি থেকে আমরা কেউই মুছে যাইনি।’ বলল মিঃ শিবাজী।
‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, তিনি ভুলিয়ে দেননি।’
বলে প্রেসিডেন্ট একটু থেমে সকলের উপর একবার চোখ বুলিয়ে বলল, ‘বলুন, আমি আপনাদের জন্যে কি করতে পারি?’
‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আমরা একটা বড় বিষয় নিয়ে এসেছি। আমরা আপনার ফেভার চাই।’ বলল শিব শংকর সেন।
‘আমার ফেভার আপনাদের প্রতি রয়েছে, বলুন বড় ব্যাপারটা কি?’ প্রেসিডেন্ট বলল।
‘মহামন্য প্রেসিডেন্ট, আপনার সরকার ইহুদীদের উপর ক্র্যাক ডাউন করছে, এ বিষয়টি আমরা পুনর্বিবেচনার জন্যে অনুরোধ জানাতে চাই। ডেভিড উইলিয়াম জোনস ও জেনারেল শ্যারনের উপর ওয়ারেন্ট জারীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। আমাদের অনুরোধ তাদের ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করুন।’
প্রেসিডেন্টর হাসি মুখ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে উঠল। বলল, ‘আপনারা এই চাওয়াটা চাচ্ছেন কেন, বলুন?’
‘তারা আমাদের দীর্ঘ দিনের সহযোগী। সীমাহীন উপকার তাদের কাছ থেকে পেয়েছি। আমেরিকার শান্তি-সমৃদ্ধিতে তাদের অবদান বিরাট। আমরা যারা আমেরিকাকে ভালবাসি এই বিপর্যয়ে তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে আমাদের উপায় নেই।’ বলল ভারত ভূষণ শিবাজী।
‘আপনারা সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো কি দেখেছেন? প্রেসিডেন্ট বলল।
‘দেখেছি মহামান্য প্রেসিডেন্ট। পত্রিকার দলিল দস্তাবেজ সব সময় ঠিক হয় না। তাছাড়া মহামান্য প্রেসিডেন্ট আমাদের মনে হচ্ছে, কোথাও যেন একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে। তা না হলে জন জ্যাকবের মত সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানী বিশ্বাসঘাতক হয়ে যাবেন, এ কেমন কথা!’ বলল শিব শংকর সেন।
‘ভুল হওয়ার সুযোগ কোথায়? লস আলামোসে যে গোয়েন্দা সুড়ঙ্গ রয়েছে তা জন জ্যাকবের বাড়ি থেকে এবং তা তার সময়েই তৈরী। এই জলজ্যান্ত সত্যকে কিভাবে মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে?’ বলল প্রেসিডেন্ট।
‘আপনার কথা ঠিক মিঃ প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এর মধ্যেও কোথাও একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে, যা বলার জন্যে আজ বিজ্ঞানী জন জ্যাকব বেঁচে নেই। যখন বেঁচে নেই, তখন তাকে বিশ্বাসঘাতক না সাজিয়ে ঠান্ডা মাথায় আরও চিন্তা করা দরকার। তাহলে আমরা মনে করি, ঠান্ডা যুদ্ধের সেই ঘোরতর দিনে ঐ সুড়ঙ্গ খোঁড়ার নতুন কোন তাৎপর্য বেরিয়ে আসবে।’ বলল ভারত ভূষণ শিবাজী।
‘শুধু তো ঐ সুড়ঙ্গই নয়, আরও অনেক কিছুর মধ্যে আচে আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের হত্যা। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে যে, এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন জেনারেল শ্যারন এবং উইলিয়াম ডেভিড জোনস। তাদের পক্ষে এখন আর বলঅর কি আছে?’ প্রেসিডেন্ট বলল।
‘ভিডিও টেপ কিংবা অডিও টেপ কোন সন্দেহাতীত প্রমাণ নয়।’ বলল শিব শংকর সেন।’ বলল শিব শংকর সেন।
‘শুধু তো অডিও টেপ নয়, আমাদের গোয়েন্দারা প্রমাণ পেয়েছে, যেখানে আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন খুন হয়েছেন, সে বাড়ির মালিক মিঃ ডেভিড জোনস। তাছাড়ড়া যে বুলেটে মারা গেছে সে বুলেটের স্পেসিফিকেশনের সাথে জেনারেল শ্যারনের রিভলবার মিলে যায়। আরও কথা হলো, হ্যারি ময়নিহানের কিডন্যাপের কি ব্যাখ্যা দেয়া যাবে?’ প্রেসিডেন্ট বলল।
‘এসব কথা আমরা পত্রিকায় পড়েছি। তারপরও আমরা বলছি, কারও শতবছরের সেবা ও অবদান মাত্র এ কয়টি ঘটনা দিয়ে মুছে ফেলা যায় না, তা ঠিকও নয় মহামান্য প্রেসিডেন্ট।’ বলল আবার শিব শংকর সেনই।’আপনাদের কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু ঘটনা কয়টি যাই হোক তা এখন অনুসন্ধান ও আদালতের বিচার্য বিষয়। আসুন, আমরা বিচারের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করি।’ বলল প্রেসিডেন্ট।
‘অবশ্যই করব মহামান্য প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তার আগে মহামান্য প্রেসিডেন্ট, জেনারেল শ্যারন ও মিঃ জোনসের জন্যে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিন এবং তাদের বিরুদ্ধে, ইহুদীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে অপপ্রচার চলছে, তা বন্ধ করুন মহামান্য প্রেসিডেন্ট।’ বলল ভারত ভূষণ শিবাজী।
‘স্যরি মিঃ শিবাজী, আপনিও জানেন ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থে আমেরিকায় আেনের স্বাভাবিক গতিরুদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই। অন্যদিকে স্বাধীন প্রেসের মুখে হাত চাপা দেবার কোন শক্তি তো মার্কিন সরকারের নেই।’
বলে প্রেসিডেন্ট থামল। একটু থেমেই আবার বলে উঠল, ‘ওরা আহমদ মুসাকে কিডন্যাপ করেছে, এটা একটা বড় ইস্যু হয়ে পড়েছে। সরকার খুবই বেকায়দায় পড়েছে মুসলিম দেশগুলোর কাছে। এই কাজ কেন করল ওরা?’
‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, ওরা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ অস্বীকৃতির পর ওরা ঐ কাজ করেছে তা প্রমাণ হবার আগে তাদেরকে আর অভিযুক্ত করা ঠিক নয়।’ বলল ভারত ভূষণ শিবাজী।
‘আপনার এ কথা যেমন ঠিক, তেমনি শুধু অস্বীকার করেছে বলেই কাদেরকে সন্দেহ থেকে মুক্ত রাখা যাচ্ছে না। এই বাস্তবতাকেও আপনাদের জানতে হবে।’ প্রেসিডেন্ট বলল।
‘ঠিক মহামান্য প্রেসিডেন্ট।’ বলে একটু থামল ভারত ভূষণ শিবাজী। তারপর বলল, ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, তাহলে আমরা কি নিয়ে ফিরছি?’
‘আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।’ বলল প্রেসিডেন্ট ।
‘শুভেচ্ছা আমাদের যে বিষয়ে অনুরোধ সে পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে না মহামান্য প্রেসিডেন্ট?’
‘এই ক্ষেত্রে আমি এ টুকু আশ্বাস দিতে পারি যে, আমি কোন অন্যায় ও উদ্দেশ্যমূলক কিছুকে প্রশ্রয় দেব না।’
‘ধন্যবাদ মিঃ প্রেসিডেন্ট। আমাদের শুভেচ্ছা সব সময় আপনার সাথে থাকবে।’ বলল ভারত ভূষণ শিবাজী।
‘ধন্যবাদ, আপনাদের কথা ভুলবো না।’ প্রেসিডেন্ট বলল।
সবাই উঠে দাঁড়াল। | ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »
৩১. ফ্রি আমেরিকা

Tags