৩২. অক্টোপাশের বিদায়

চ্যাপ্টার

আহমদ মুসার রক্ষা নেই। তাকে ফাঁদে পড়তেই হবে।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘কিছুক্ষণ আগে শশাংকের সাথে কথা হলো। সে বলল, ‘আজ সন্ধ্যার দিকে নাকি আহমদ মুসা আনাপোলিশে যাচ্ছে। অথচ তার যাওয়ার কথা ছিল না। শশাংক ও সাগরিকাই ওয়াশিংটনে যাবে শুনেছিলাম।’ বলল নোয়ান নাবিলা।
‘ধন্যবাদ নাবিলা। এখন দেখবে আহমদ মুসার পরবর্তী কাজ হবে তোমাকে ফলো করা। সে নিশ্চিত মনে করেছে তুমি আমাদের সাথে জড়িত এবং তুমি সারা জেফারসন সম্পর্কে সবকিছু জান।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘এটাইতো চাই। আমাকে ফলো করবে আর আমি তাকে ফাঁদের মধ্যে নিয়ে যাব।’ নোয়ান নাবিলা বলল।
‘আর আমরা তাকে টুক করে খাঁচায় পুরব।’ বলে হেসে উঠল জেনারেল শ্যারন।
‘আমি সবচেয়ে বেশি খুশি, সাগরিকাকে তার হাত থেকে রক্ষা করার এটা একটা পথ হবে।’ নাবিলা বলল।
‘শুধু তো সাগরিকা সেন নয়, আমাদের তথ্য মতে শশাংক সেনও আহমদ মুসার দারুণ ভক্ত হয়ে উঠেছে।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘সেটা আহমদ মুসা সাগরিকার বন্ধু হওয়ার কারণে। সাগরিকাকে সরাতে পারলে শশাংক এমনি সরে যাবে।’ নাবিলা বলল।
‘মি. শ্যারন, আহমদ মুসাকে আটকাবার আরও সুযোগ পাচ্ছি, এটা আশার কথা। কিন্তু আমি মামলা নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন। মামলার চার্জশিটগুলো আমি পড়েছি। আমাদের জন্য আইনি লড়াই চালাবার কোন সুযোগই নেই।’ বলল আমেরিকান কাউন্সিলর জুইস এ্যাসোসিয়েশনস এর প্রধান ডেভিড উইলিয়াম জোনস। তার কন্ঠে উদ্বেগ।
‘এ জন্যেই আইনের চোখকে অন্যদিকে ঘুরাতে হবে।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘কিভাবে?’ জিজ্ঞেস করল ডেভিড উইলিয়াম জোনস।
‘কেন আপনিও তো জানেন, বিজয়ের আনন্দে আহমদ মুসা এমন কিছু করে বসবে যা তাকে আমেরিকানদের কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত করবে।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘সেটা কি? কি রকম? দারুণ উৎসুক কন্ঠে জানতে চাইল নোয়ান নাবিলা।
জেনারেল শ্যারন ও ডেভিড জোনস দু’জনেই তাকাল নোয়ান নাবিলার দিকে। কিছুটা বিব্রত ভাব দু’জনের চোখে-মুখেই। জবাব দিল জেনারেল শ্যারন। বলল মুখে হাসি টেনে, ‘ও কিছুনা । আহমদ মুসা আমেরিকার ইহুদীদের বিরুদ্ধে আরেকটা ষড়যন্ত্র করছে।’
‘কি ষড়যন্ত্র?’ নোয়ান নাবিলা বলল।
‘সবই জানতে পারবে। এইটুকু জেনে রাখ, বিজয়ের আনন্দে অন্ধ হয়ে সে হিটলার সাজতে চাচ্ছে।’
দরজায় এ সময় নক হলো।
সেদিকে না তাকিয়েই জেনারেল শ্যারন বলল, ‘এস বেন ইয়ামিন।’
দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করল বেন ইয়ামিন।
নিরেট ইহুদী চেহারা বেন ইয়ামিনের। স্পাই হিসেবে, যে কোন ষড়যন্ত্রের সফল অপারেটর হিসেবে জেনারেল শ্যারনের অস্ত্রশালায় সে অদ্বিতীয়।
সে ঘরে ঢুকতেই জেনারেল শ্যারন বলল, ‘কি খবর বেন?’
‘সব ঠিক-ঠাক।’
‘মিশন কয়টায় যাচ্ছে?’
‘সন্ধ্যা ছ’টায়।’
‘কি বুঝলে কোন রেসিষ্ট্যান্স হবে? কিংবা কোন অসুবিধা?’
‘তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে সমস্যা হলো, দু’জন সাংবাদিক সেখানে থাকে। তবে যে সময় আমাদের অপারেশন, সে সময় তারা অফিসে থাকবে।’
‘গুড।’ উচ্ছসিত কন্ঠে বলে উঠল জেনারেল শ্যারন।
একটু থেমেই সে আবার বলল, ‘ওখানে সাংবাদিকের বাসা থাকায় সুবিধাই হলো। মিডিয়াগুলো ইস্যুটাকে সাংঘাতিকভাবে হাতে তুলে নেবে।’
‘আরেকটা সুবিধা আছে স্যার। আমেরিকার পূর্ব উপকূলে এটাই ইহুদীদের প্রথম বসতি। মার্কিন ইহুদীদের পিতা বলে কথিত দি গ্রেট ডেভিড দানিয়েল এই বসতিতেই জন্মগ্রহন করেন। তার জন্মস্থানটা এখন সিনাগগে পরিণত হয়েছে। সিনাগগের পাশেই তার ভূমিষ্ট হওয়ার ঘরটি এখনও বর্তমান। ওটা মার্কিন ইহুদীদের একটা পবিত্র স্থান। ওখানে কেউ হাত দিলে মার্কিন ইহুদীদের কলিজায় হাত দেয়া হবে।’
‘ব্রাভো, ব্রাভো। ওটায় শুধু হাত দেয়া নয়, নিশ্চয় ওটা আগুনের গ্রাসে যাবে।’ বলতে বলতে জেনারেল শ্যারনের মুখে একটা ক্রুর হাসি ফুটে উঠল।
নোয়ান নাবিলা জেনারেল শ্যারনের সামনে মুখোমুখি এক শোফায় বসেছিল। তার ভ্রুদুটি কুঞ্চিত হয়ে উঠেছে। অনাহুতভাবে এ রকম আলোচনায় অংশগ্রহন অসংগত বলে নোয়ান নাবিলা কিছু বলল না। কিন্তু মনটি তার খুব উৎসুক হয়ে উঠল।
কথা শেষ করে একটু দম নিয়েছিল জেনারেল শ্যারন। তারপর একটু নড়ে-চড়ে বসে পকেট থেকে একটা অদ্ভুত লাল মোড়ক বের করে বেন ইয়ামিনের দিকে তুলে ধরে বলল, ‘এটা তোমার মিশনের কমান্ডারকে দিয়ে দিও। পরিকল্পনার সাথে এটাও যুক্ত হবে। অপারেশন শেষে ফেরার সময় সে যেন এটা ওখানে ফেলে রেখে আসে।’
বেন ইয়ামিন ওটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলল, ‘ভয়ংকর বিস্ফোরক। তৈরী হয়েছে লিবিয়ার ত্রিপোলীতে। অতএব…………।’
কথা শেষ না করেই হো হো করে হেসে উঠল বেন ইয়ামিন।
‘অতএব বেরিয়ে পড়বে আহমদ মুসার কানেশন। শুধু এটাই নয় আরও কিছু জিনিস এটা প্রমাণ করবে।’ বেন ইয়ামিনের সাথে হাসিতে যোগ দিয়ে বলল জেনারেল শ্যারন।
বেন ইয়ামিন বেরিয়ে গেল।
নোয়ান নাবিলাও বেরুতে চাচ্ছিল। জেনারেল শ্যারন তাকে লক্ষ করে বলল, ‘নাবিলা আনাপোলিশে তুমি কখন ফিরছ?’
‘বিকেলে একটা প্রোগ্রাম আছে। সন্ধ্যায় যাব আমি।’ বলল নাবিলা।
‘তুমি তো বললে আহমদ মুসাও সন্ধ্যায় আনাপোলিশে পৌছবে। রোড না ইয়ারে যাচ্ছে জানতে পেরেছো কিছু?’
‘না জানতে পারিনি। সাগরিকা জানে কি না জানি না।’
‘খুব ভালো হতো যদি আহমদ মুসা সাড়ে আটটা নয়টা পর্যন্ত রাস্তায় থাকতো।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘কেন?’
‘আমাদের পরিকল্পনাকে পাকা-পোক্ত করার জন্য এটা প্রয়োজন।’
একটু থেমেই আবার বলে উঠল জেনারেল শ্যারন, ‘সন্ধ্যা ক’টায় আহমদ মুসা আনাপোলিশে পৌছবে সেটা আমাদের জানা প্রয়োজন।’
‘আমি জানাতে পারি, আপনারাও টেলিফোন করতে পারেন।’
‘ধন্যবাদ নাবিলা, তোমার টেলিফোন না পেলে ন’টার দিকে আমি টেলিফোন করব।’
‘আমাকে কোন কারণে না পেলে শশাংককে জিজ্ঞেস করলেও জানতে পারবেন।’ বলল নোয়ান নাবিলা।
বলে নোয়ান নাবিলা উঠে দাড়াল।

সন্ধ্যা তখন সাড়ে সাতটা।
নোয়ান নাবিলার গাড়ি তীর বেগে এগিয়ে চলছিল আনাপোলিশের দিকে।
এক্সপ্রেস হাইওয়ে থেকে কাউন্টি রোডে পড়ার পর গাড়ির গতি কমে গিয়েছিল। তার উপর সেভেরা নদীর খাড়ি অতিক্রম করার সময় ব্রীজের উপর গাড়ির গতি আরও কমে যায়। এই আয়েশি গতিতেই নোয়ান নাবিলার গাড়ি নিউ হারমানে প্রবেশ করল।
প্রবেশ করেই বন্দুকের বিক্ষিপ্ত গুলীর শব্দে চমকে উঠল নোয়ান নাবিলা। আরও কিছুটা অগ্রসর হলো তার গাড়ি। রাস্তার দু’পাশ থেকেই মানুষের আর্ত চিৎকার কানে এল তার।
উৎকর্ণ হলো নোয়ান নাবিলা।
আপনাতেই যেন থেমে গেল তার গাড়ি।
ঠিক এ সময় কয়েকটা গাড়ি দু’পাশের বসতি থেকে মাতালের গতিতে বেরিয়ে উত্তরের এক্সপ্রেস হাইওয়ের দিকে ছুটে গেল। সবগুলো গাড়ির আলো নেভানো। শুধু তার কাছের একটা বাইলেন দিয়ে ছুটে যাওয়া একটা গাড়ির পেছনের নেমপ্লেটে আলো দেখতে পেল। নাম্বারটাও পড়তে পারল সে।
প্রবল সন্দেহ নিয়ে গাড়ি থেকে নামল নোয়ান নাবিলা।
নিউ হারমান এলাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা প্রাচীন ইহুদী বসতি। নিউইয়র্ক নগরীর পত্তনের সময়ই আনাপোলিশের প্রতিষ্ঠা হয়। আনাপোলিশের পরেই মেরিল্যান্ডে যে প্রথম জনবসতি গড়ে ওঠে, সেটা নিউ হারমান। এখানে প্রথম বসতি গড়ে কিছু জার্মান ক্যাথলিক। পরে জার্মান ক্যাথলিকরা নিউ হারমান বিক্রি করে দিয়ে আরও উত্তরে উৎকৃষ্টতর জায়গায় সরে যায়। ইহুদীরা ক্যাথলিকের ছদ্ম পরিচয়ে নিউ হারমান কিনেছিল। অনেক পরে তাদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে। এখন নিউ হারমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা বনেদী ইহুদী বসতি।
নিউ হারমান বসতিটা খুবই সুন্দর লোকেশনে। নিউ হারমান থেকে আধা কিলোমিটার পুবে আনাপোলিশের গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী নৌ-ঘাঁটি। আর পৌনে এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মেরিল্যান্ডের ঐতিহাসিক ষ্টেট হাউজ। নিউ হারমান থেকে আনাপোলিশের দূরত্ব এক কিলোমিটারের কম।
নিউ হারমান নোয়ান নাবিলার পরিচিত। তার এক আত্মীয় পরিবার এখানে থাকে। নাবিলা এখানে আসে।
নোয়ান নাবিলা এক পা দু’পা করে কিছুটা এগিয়েছিল। সে দেখল, একজন লোক এদিকে টলতে টলতে এগিয়ে আসছে।
নোয়ান নাবিলা এগুলো তার দিকে।
কিন্তু নাবিলা লোকটার কাছে পৌছার আগেই লোকটা লুটিয়ে পড়ল মাটির উপর।
নোয়ান নাবিলা ছুটে গিয়ে তার পাশে বসল।
লোকটা রক্তাক্ত।
দেখেই বুঝল নোয়ান নাবিলা, লোকটা বুলেট বিদ্ধ হয়েছে।
মারা গেল নাকি লোকটা?
নোয়ান নাবিলা তাড়াতাড়ি লোকটার একটা হাত তুলে নিয়ে নাড়ি দেখল। নাড়ি নেই। মারা গেছে লোকটা।
উঠে দাড়াচ্ছিল নাবিলা। হঠাৎ তার চোখে পড়ল, লোকটার হাতে একটা ক্যাসেট-ভিডিও ক্যাসেট। ভ্রুকুঞ্চিত হলো নাবিলার।
নাবিলা লোকটার হাত থেকে ক্যাসেটটা নিয়ে উঠে দাঁড়াল।
শংকা ও উদ্বেগে মন তখন অস্থির হয়ে উঠেছে নাবিলার। নিউ হারমানে বড় কিছু ঘটেনি তো! গাড়িগুলো ওভাবে আলো নিভিয়ে পালালো কেন?
নাবিলা দ্রুত গাড়িতে উঠে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আত্মীয়ের বাসার দিকে চলল।
দু’পাশে বাড়ি, মাঝ দিয়ে চলছে নাবিলার গাড়ি। ঘর বাড়িতে আলো জ্বলছে। কিন্তু চারদিকে মৃতের স্তব্ধতা। বাতাস যেন ভারী। কিসের গন্ধ! তাজা রক্তের? লোকটার রক্তের গন্ধ কি তার নাকে লেগে আছে এখনও?
চলছে তার গাড়ি।
দেখল একটা বাড়ির বারান্দার পাশ দিয়ে একটা লাল স্রোত গড়িয়ে মাটিতে এসে পড়ছে।
শিউরে উঠল নাবিলা। চলছে তার গাড়ি।
সামনেই দু’টো বাড়ি।
আনমনা হয়ে পড়া নাবিলা হঠাৎ সামনের একটা দৃশ্যে আঁৎকে উঠে ব্রেক করল গাড়ির। একবারে গাড়ির মুখের কাছে রাস্তার উপর দু’টো রক্তাক্ত লাশ।
সামনে আশে-পাশে তাকাল নাবিলা কম্পিত বুকে। দেখল, দু’পাশের বাড়ির লনে আরও রক্তাক্ত মানুষ পড়ে আছে।
রাজ্যের আতংক এসে ঘিরে ধরল নাবিলাকে। কোন লোকজন নেই কেন? মানুষ এভাবে খুন হয়েছে দেখেও মানুষ আসছে না কেন? কোথাও কারো কোন কথা নেই কেন? সবাই মরে গেছে নাকি?
থর থর করে কেঁপে উঠল নাবিলার গোটা শরীর। গাড়ি ঘুরিয়ে লাশ দু’টিকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগুলো নাবিলা। সামনেই তার আত্মীয়ের বাড়ি।
তার ফুফুর বাড়ি এটা।
গাড়ি নিয়ে খোলা গেট দিয়ে প্রবেশ করল।
কারো কোন সাড়া শব্দ নেই বাড়িতে।
লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বারান্দায় উঠল।
ভেতরে ঢোকার দরজা খোলা।
ভেতরে ঢুকতে গিয়ে রক্তের স্রোতে ধাক্কা খেল নাবিলা।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘরের মেঝে। রক্তে ভাসছে কয়েকটি মানুষ।
ভীত নাবিলার কন্ঠে আপনা থেকেই একটা আর্ত-চিৎকার বেরিয়ে এল, ‘আন্টি’।
তার এ চিৎকার উঠার সাথে সাথে ঘরের মেঝেতে লুটোপুটি খাওয়া একটা লাশের মাথা নড়ে উঠল। একটু উপরে উঠল মাথা। ধ্বনিত হলো একটা আর্তনাদ, ‘কে, বাঁচাও আমাদের, বাঁচাও।’ মেয়েলি কন্ঠ।
নাবিলা চিনতে পারল তার আন্টির কন্ঠ।
নাবিলা পাগলের মত ছুটল তার আন্টির কাছে।
তার আন্টির মাথার কাছে বসে পড়ে কোলে তুলে নিল তার মাথা।
‘ওরা সবাইকে মেরে ফেলেছে। আমি কেন মরলাম না। আমি গুলী বৃষ্টির মুখে পড়ে গেলে ওরা মনে করেছে আমিও মরে গেছি।’ কান্নায় ভেঙে পড়ে বলল নাবিলার আন্টি।
‘ওরা কারা আন্টি? তুমি এখানে কখন এলে? তুমি তো আনাপোলিশে ছিলে?’ বলল নোয়ান নাবিলা।
‘সন্ধ্যায় এসেছি।’
বলে মাথাটা নাবিলার কোলে এলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ওরা শয়তান কশাই। যাবার সময় আবার বলে গেল, তোদের কোরবানী দিলাম আমেরিকার ইহুদীদের বাঁচাবার জন্যে।’
কথাগুলো নোয়ান নাবিলার কানে গেল, কিন্তু তার মনোযোগ তখন অন্যদিকে। সে দেখল তার আন্টির কাঁধ, বাহু ও উরুতে গুলী লেগেছে।
বলে উঠল দ্রুত নোয়ান নাবিলা, ‘আন্টি তুমি মারাত্মক আহত। আর কথা বলো না তুমি। এখনি তোমাকে ক্লিনিকে নিতে হবে।’
বলে নাবিলা তার আন্টিকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিল।
বহুকষ্টে টলতে টলতে তার আন্টিকে নিয়ে গাড়িতে তুলল।
গাড়ি ষ্টার্ট দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল।
এ সময় চারদিক থেকে সাইরেনের শব্দ এল। পুলিশ আসছে। এবার মনে সাহস পেল নাবিলা।
চলতে লাগল নাবিলার গাড়ি।
কয়েক গজ সামনে এগুতেই পথ রোধ করে দাঁড়াল পুলিশের গাড়ি।
গাড়ি থেকে নামল এক পুলিশ অফিসার।
নাবিলাও নামল গাড়ি থেকে।
পুলিশ কথা বলার আগেই নোয়ান নাবিলা নিজের পরিচয় দিয়ে বলল, ‘আমি আমার গুলীবিদ্ধ মূমুর্ষ আন্টিকে নিয়ে যাচ্ছি।’
পুলিশ অফিসারটিও আনাপোলিশের। চিনতে পারল নোয়ান নাবিলাকে। বলল, ‘কিন্তু আপনি এখানে কোত্থেকে?’
নোয়ান নাবিলা সংক্ষেপে তার সব কথা বলল। শুধু ভুলে গেল ভিডিও ক্যাসেট ও গাড়ির নাম্বারের কথা বলতে। উদ্বেগ-উত্তেজনায় সব কথা সে গুছিয়েও বলতে পারছিল না।
‘আপনার ও আপনার আন্টির ষ্টেটমেন্ট আমাদের দরকার হবে। তাকে কোন ক্লিনিকে রাখছেন দয়া করে জানাবেন। আপনাদের দেরী করাবার জন্য দুঃখিত। বাই।’
বলে পুলিশ অফিসারটি তার গাড়িটি নাবিলার গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে আরও সামনে এগুলো।
গাড়ি আবার ষ্টার্ট দিল নোয়ান নাবিলা। ছুটে চলল তার গাড়ি আনাপোলিশ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

জর্জ আব্রাহাম জনসন পাথরের মত বসে আছে তার চেয়ারে।
| | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top