৩৩. সুরিনামের সংকটে

চ্যাপ্টার

‘হ্যাঁ, আমাদের কিছু অসুবিধা হয়েছে। গত তিন দিনে আমাদের মূল্যবান লোকক্ষয় হয়েছে ও আমাদের প্রায় অর্ধডজন পরিকল্পনা মাঠে মারা গেছে। আহমদ হাত্তা এর ফলে কিছু প্রচার সুবিধা পেয়ে গেছে। কিন্তু আমরা পরাজিত হইনি। গত তিন দিনের ব্যর্থতা আহমদ হাত্তাদের কাছে আমাদের পরাজয় নয়। বাইরে থেকে হায়ার করা শক্তি দিয়ে যে বিজয় অর্জন করেছে, তা তাদের বিজয় নয়। আমরা তাদের সাময়িক এ সাফল্যের উৎস বের করার কাজে হাত দিয়েছি। আমরা……….’।
রোনাল্ড রঙ্গলাল বাধা পেল। সামনে বসা সুরিনাম কংগ্রেসের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন ‘মি. চেয়ারম্যান’ বলে উঠে দাঁড়িয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনার জন্যে সুরিনাম পিপলস কংগ্রেসের নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে দলের চেয়ারম্যান রোনাল্ড রঙ্গলাল। বৈঠকে ‘মায়ের সূর্য সন্তান’ সংগঠনের অস্থায়ী প্রধান শিবরাম শিবাজীসহ নির্বাহী কমিটির সকলকেই দাওয়াত দেয়া হয়েছে।
প্রেসিডিয়াম সদস্যটি ‘মি. চেয়ারম্যান’ বলে উঠে দাঁড়ালে রোনাল্ড রঙ্গলাল থেমে গিয়ে বলল, ‘বলুন কি বলতে চান’।
বলল সদস্যটি, ‘আপনি যে সব কথা বলেছেন, তা আমরা সকলেই জানি। আহমদ হাত্তার একজন ড্রাইভারের কাছে গতকাল আপনাদের সব পরিকল্পনা ধরা পড়ে গেছে, এই লজ্জার কথা শুনে আমাদের লাভ নেই। হায়ার করা লোকের কথা বলছেন। গতকালকের তিনটি ঘটনায় কোথায় ছিল হায়ার করা লোক? গত তিন দিনের ঘটনা সম্পর্কে আমরা অন্ধকারে ছিলাম। এখন বলছেন, ওদের সাফল্যের উৎস খুঁজতে শুরু করেছেন। চোখের সামনে যে ঘটনা ঘটল, তার সাফল্যের উৎস কি ঘটনার সাথেই নেই? অনুসন্ধানের কি কোন প্রয়োজন আছে? এসব কথা শুনে কোন লাভ নেই। জানতে চাই, আপনার কাছে ভবিষ্যতের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা’।
রোনাল্ড রঙ্গলালের চোখ-মুখ অপমানে লাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু কিছু বলার নেই। প্রেসিডিয়াম সদস্যটি যা বলেছে, তা অযৌক্তিক নয়।
প্রেসিডিয়াম সদস্যটি থামলেও রোনাল্ড রঙ্গলাল সংগে সংগে কিছু বলতে পারল না। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল, ‘সম্মানিত যুবক সদস্য যে আবেগ নিয়ে কথা বলেছেন, তাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। সেই সাথে বাস্তবতা অনুধাবন করার অনুরোধ করছি। আমি বুঝতে পারছি যুবক প্রেসিডিয়াম সদস্যের আবেগ দারুনভাবে আহত হয়েছে, কিন্তু গত তিন দিনের ঘটনায় আমার গোটা অস্তিত্বে আগুন ধরে গেছে। দিশেহারা হয়ে গেছি আমি। মনে হচ্ছে, মহাকালীর কৃপাণ, শিবের মহাস্ত্র চক্র যেন ওরা পেয়ে গেছে। মহাকালীর কৃপাণ ও শিবের চক্রে আমরা কচুকাটা হয়ে গেলাম! কিন্তু এটা ঠিক মহাকালীর কৃপাণ ও শিবের চক্র ওদের পাবার কথা নয় এবং পায়নি। তাহলে এই অসাধ্য সাধন ওরা করছে কোন শক্তিতে? এই শক্তিকে চিহ্নিত করতে পারলেই শুধু তার প্রতিরোধ ও প্রতিকার আমরা করতে পারবো। এই কথাই আমি বলছিলাম সম্মানিত প্রেসিডিয়াম সদস্যগন’। থামল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
প্রেসিডিয়াম সদস্যরা কেউ সংগে সংগে কথা বলল না। ভাবনার প্রকাশ তাদের চোখে-মুখে।
সেই যুবক প্রেসিডিয়াম সদস্যই আবার উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘স্যরি মি. চেয়ারম্যান, আমার বক্তব্য হলো ‘চিহ্নিত করতে হবে’ এটা আমরা শুনতে চাই না, চিহ্নিত করা হয়েছে, প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, আমরা শুনতে চাই এই খবর’।
‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করার জন্য অংগীকার করছি সত্বরই এ খবর আপনাদের দেব’। বলল রঙ্গলাল।
‘মি. চেয়ারম্যান আপনি বলেছেন আপনি ওদের সাফল্যের উৎস বের করার কাজে হাত দিয়েছেন, সে কাজটা কি?’ বলল আর একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
‘আমরা মনে করি, আমাদের মোকাবিলা করার জন্যে শক্তিশালী কোন মাফিয়া গ্রুপকে আমদানী করেছেন আহমদ হাত্তা। আমরাও আমেরিকার সবচেয়ে সেরা, সব চেয়ে শক্তিশালী মাফিয়া গ্রুপকে নিয়ে আসছি। তাদের অগ্রবর্তী একটা দল ইতোমধ্যেই পারামারিবো পৌঁছে গেছে। আমি এ বৈঠকের পর তাদের সাথে বসব’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
রোনাল্ড রঙ্গলালের কথা শেষ হতেই একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য চট করে উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের সাথে মাফিয়াদের জড়িত করা কি ঠিক হবে? ওরা টাকায় ক্রয়যোগ্য দুধারী তলোয়ার। টাকা দিয়ে শত্রুরাও ওদের কাজে লাগাতে পারে। তাছাড়া আমাদের দুর্বলতা টের পাবার পর আমাদের ঘাড়ে যদি ওরা সিন্দাবাদের ভূতের মত চেপে বসে?’
হাসল রোনাল্ড রঙ্গলাল। বলল, ‘এ ভয় অমূলক সম্মানিত সদস্য। মাফিয়ারা তাদের অংগীকারের প্রতি বিশ্বস্ত হয়ে থাকে। যে কাজের জন্যে তারা টাকা নেয়, জীবন দিয়ে হলেও তা তারা সমাধা করে। না পারলে তাদের নিজের থেকেই টাকা ফেরত দেবার দৃষ্টান্তও আছে। আর তাদের না ডেকে উপায়ও তো নেই। আহমদ হাত্তারা যে অস্ত্র দিয়ে লড়াই করছে, সে অস্ত্র আমাদেরও ব্যবহার করতে হবে’।
‘কিন্তু আহমদ হাত্তারা মাফিয়াদের ডেকেছে, তাতো প্রমাণিত হয়নি’।বলল অন্য আর একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
‘তা ঠিক, প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু আমাদের অনুমান মিথ্যা নয়। গত তিন দিনে আমাদের ট্রেইন্ড ও অত্যন্ত সুদক্ষ সত্তর আশিজন লোক যেভাবে কচুকাটা হয়েছে তা প্রফেশনাল কিলার মাফিয়াদের পক্ষেই শুধু সম্ভব। প্রথম যে ঘটনায় ওয়াং হাতছাড়া হয়, সে ঘটনা ঘটিয়েছে মাত্র একজন লোক। অসম্ভব ক্ষিপ্র ও অবিশ্বাস্য দুঃসাহসী সে লোক। ব্রুকোপনডো হাইওয়ের যে হত্যাকান্ড তাও ঘটিয়েছে মাত্র দুজন লোক। আগাম খবর পেয়ে আমাদের দুগাড়ি লোক তাদেরকে দুদিক থেকে ঘিরে ফেলেও সবাই নিহত হয়েছে। টেরেক স্টেটের গেটের যে হত্যাকান্ড তাও ঘটিয়েছে একজন লোক। এমন লোক আহমদ হাত্তার রিপাবলিকান পার্টিতে কেন, কোন দেশের কোন রাজনৈতিক দলের হাতে থাকা অসম্ভব। আসলে আহমদ হাত্তারা চূড়ান্ত মার খাবার পর অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে মাফিয়াদেরই আশ্রয় নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী অবস্থা থেকে ছাড়া পাবার পর সে ওখানেই মাফিয়াদের সাথে একটা বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। তা না হলে সে এবং তার মেয়ে ফাতিমা এদেশে পা রাখার সাহস পায়?’
‘আমরা আমাদের ‘মাসুস’ (মায়ের সূর্য সন্তান) কর্মীদের খুব দুর্ধর্ষ্য মনে করতাম। তারা কি করল? দুগাড়ি স্টেনগানধারী সাথে থাকার পরও মাত্র একজনের মোকাবিলায় তিলক লাজপত পালের মত ব্যক্তিত্বও বাঁচতে পারেনি। তাহলে কি দিয়ে আমরা ‘মায়ের রাজ্য’ কায়েম করার আশা করছি? বলল আরেকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
‘আমাদের উদ্বেগ তো ওখানেই। আমাদের ‘মাসুস’ সদস্যরা অযোগ্য নয়। তারাই তো গত চার মাসে আহমদ হাত্তা, তার রিপাবলিকান পার্টি, সুরিনামের মুসলিম জনশক্তি ও তাদের সহযোগীদের ‘জিরো’তে নিয়ে এসেছিল। এ নির্বাচনে আহমদ হাত্তা দাঁড়াবারই সাহস পেত না এবং কোন মুসলমান ও তাদের সহযোগীরা এই নির্বাচনে নির্বাচিত হবার সুযোগ পেত না। কিন্তু মাত্র তিন দিনের ঘটনা সব ওলট পালট করে দিল। যারা এই ওলটপালট করে দিল, তারাই এখন আমাদের টার্গেট। তাদের শেষ করতে পারলে আহমদ হাত্তাদের ‘জিরো’ তে নিয়ে যেতে আমাদের দেরী হবে না’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
কথা শেষ করে একটু থেমেই রোনাল্ড রঙ্গলাল আবার বলে উঠল, ‘বৈঠকের অবশিষ্ট এজেন্ডাগুলো আলোচনায় আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব সভাপতিত্ব করুন। মাফিয়া প্রতিনিধিরা অপেক্ষা করছে। আমি ওখানে যাচ্ছি। আমার সাথে শিবরাম শিবাজীও আসুন’।
বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল রোনাল্ড রঙ্গলাল। রোনাল্ড রঙ্গলাল ও শিবরাম শিবাজী মিটিং কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল।

রোনাল্ড রঙ্গলাল ও শিবরাম শিবাজী পাশাপাশি সোফায় বসে।
তাদের সামনের সোফায় বসে আরও দুজন। তীরের মত ঋজু তাদের শরীর। গায়ের রং বাদামী। মিশ্র চেহারা, তবে মধ্য আমেরিকান ধাঁচটা বেশি।
দুজনের একজন ন্যাড়া মাথা। অন্যজনের চুল লম্বা, পেছনে ঘোড়ার লেজের মত করে বাঁধা। দুজনেরই উচ্চতা ছ’ফুটের কম হবে না।
দুজনেরই চোখ ছুরির মত ধারাল। মুখে কাঠিন্য ও আক্রমনাত্মক ভাব। দেখে মনে হয় এখনি যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে। খুন এদের কাছে কথা বলার মত সহজ, তা দেখেই বোঝা যায়।
খুশি হয়েছে রোনাল্ড রঙ্গলাল ও শিবরাম শিবাজী। একেই বলে প্রফেশনাল। এ রকম লোকই তো তাদের চাই।
কথা বলছিল রোনাল্ড রঙ্গলাল। গত তিন দিনে তাদের কি বিপদ ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বলল, ‘সুরিনামে আমদানি হওয়া এই শত্রুদের আমরা সমূলে শেষ করতে চাই, এজন্যেই আমরা আপনাদের দ্বারস্থ হয়েছি। বলুন কিভাবে আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন’।
‘টাকার অংক আমরা জানিয়েছি। আপনারা রাজী?’ বলল বড় চুলওয়ালা লোকটা।
‘এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে চাই’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
‘না, আমরা এক কথায় কাজ করি। আমরা যা বলেছি তাতে ইয়েস করলে আপনারা যা বলেছেন তাতেও আমরা ইয়েস করব। তৃতীয় কোন কথার সুযোগ নেই’। বলল চুলওয়ালা সেই লোকটিই।
‘ঠিক আছে। কিন্তু শত্রুর বিনাশ চাই’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
‘আপনাদের সেই শত্রুদের তালিকা দিন। টাকা অর্ধেক পাওয়ার পর কাজ শুরু করব’। বলল সেই চুল ওয়ালা।
‘অর্ধেকটা আজই পেমেন্ট করব। কিন্তু গত তিন দিনে যে বা যারা ঘটনা ঘটাল, তাদের নাম পরিচয় তো আমরা জানি না। তবে আহমদ হাত্তা, তার মেয়ে ফাতিমা, হবু জামাতা ওয়াং এবং রিপাবলিকান পার্টির অন্যান্য নেতাদের তালিকা তৈরী করে দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের ইচ্ছা হলো, নির্বাচনের আগে এদের হত্যা করা যাবে না। ‘এ্যাকসিডেন্টের মত ঘটনায় তাদের নিহত হতে হবে’।
‘সেটা আমরা জানি। লিস্টটা দিন। লিস্ট ধরে টান দিলেই অদৃশ্যরাও এসে হাজির হবে, নাম পারিচয় দরকার নেই।
বলে একটু থেমেই চুলওয়ালা বলে উঠল, ‘টেরেক দুর্গের সোনা উদ্ধার সম্পর্কে বলুন। এক চতুর্থাংশ সোনা চেয়েছি এবং টাকার একটি অংক চেয়েছি। সোনা বের না হলে ঐ টাকার বাইরে আমাদের কোন দাবী থাকবেনা। আপনারা রাজী?’
রোনাল্ড ও শিবরাম শিবাজী পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ী করল। শেষে শিবরাম শিবাজী ইতিবাচক মাথা নাড়ল। রোনাল্ড রঙ্গলাল সংগে সংগে বলে উঠল, ‘আমরা রাজি’।
‘টেরেক পরিবারের একটা তালিকা আমাদের দিন’। বলল চুলওয়ালা লোকটি।
‘সেটা রেডি’। বলল রঙ্গলাল।
কথা শেষ করে পরক্ষণেই আবার রোনাল্ড রঙ্গলাল বলে উঠল, ‘আপনাদের নেতা জোয়াও গোলার্ট কবে আসছেন? তার সাথে আরও কিছু কথা বলতে পারলে আমরা খুশী হবো’।
চুলওয়ালা লোকটির চোখ দুটো হঠাৎ জ্বলে উঠল। বলল, ‘জোয়াও গোলার্ট এর সাথে কোনদিনই আপনাদের দেখা হবে না। আপনারা কাজ নেবেন। আমাদের ব্যাপারে কোন কৌতুহল যেন আপনাদের মধ্যে না জাগে। আর ‘জোয়াও গোলার্ট’ নামটা ভূলে যাবেন’।
‘ঠিক আছে। আপনাদের থাকার বন্দোবস্ত…….’।
কথা শেষ করতে পারল না রোনাল্ড রঙ্গলাল। বাধা দিল চুলওয়ালা। বলল, ‘একবার তো বলেছি, শুধু কাজ বুঝে নেয়া ছাড়া আমাদের কোন ব্যাপারে কোন কিছু ভাববেন না আপনারা। আমরা থাকব আকাশে না পাতালে সেটা আমাদের ব্যাপার’। বিরক্তির সাথে কথাগুলো বলল চুলওয়ালা।
রঙ্গলাল ও শিবরাম শিবাজী দুজনেই বিব্রত হয়ে পড়েছিল চুলওয়ালার কথার ধরনে। নিজেকে সামলে নিয়ে রঙ্গলাল বলল, ‘ধন্যবাদ, বুঝেছি’।
রিপাবলিকান পার্টির অফিসগুলোর ঠিকানা এবং যে নামগুলো আমাদের দিয়েছেন তাদের ঠিকানা আমাদের দেবেন’। বলল চুলওয়ালা।
‘রেডি আছে সবকিছু। আমাদের লোকেরা তাদের বাড়ি ও অফিসগুলো দেখিয়েও দেবে’। বলল রঙ্গলাল।
‘খুঁজে বের করা আমাদের কাজ। আপনাদের কোন লোক কখনই আমাদের সাথে কোথাও যাবেনা। এই দেখা হবে কাজ শেষ হলে ফাইনাল পেমেন্টের সময়’। চুলওয়ালা বলল।
কথা শুনে একদিকে খুশি হলো রঙ্গলাল যে, নিজেদের কোন দায়দায়িত্ব থাকছে না। অন্যদিকে ভাবনার সৃষ্টি হলো। পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে যদি কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এই চিন্তা থেকে রোনাল্ড রঙ্গলাল বলল, ‘যদি কিছু বলার প্রয়োজন হয়, যদি কোন সংশোধনের বা সংযোজনের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটা কিভাবে হবে?’
‘সে চিন্তা আজকেই করতে হবে’। বলল চুলওয়ালা।
‘ভাবনায় পড়ে গেল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
কিন্তু শিবরাম শিবাজী বলল, ‘বাদ দিন এ চিন্তা। সে ধরনের কোন কিছুর প্রয়োজন হবে না’।
‘ঠিক আছে। প্রয়োজন হবে না’। বলল রঙ্গলালও।
‘বলে রোনাল্ড রঙ্গলাল টেবিলের উপর হতে নাম ও ঠিকানা সম্বলিত একটা ইনভেলাপ তুলে নিল হাতে। এগিয়ে দিল চুলওয়ালার দিকে।
চুলওয়ালা ব্রীফ কেস খুলে টাকার বান্ডিলগুলো নিয়ে ব্রীফকেস বন্ধ করল। ইনভেলাপ পকেটে পুরল।
উঠে দাঁড়াল এবং ‘গুডবাই’ বলে হাঁটা শুরু করে দিল।
ওরা দুজন বেরিয়ে যেতেই শিবরাম শিবাজী বলে উঠল, ‘মাফিয়াদের ‘ভদ্র’ হতে নেই নাকি?’
‘রাখুন ওসব। এখন যদি কেউ গালে একটা থাপ্পড় দিয়েও কাজ করে দেয়, সেটাই ভাল’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
‘মাফিয়া এ গ্রুপটার নাম কি?’ জিজ্ঞেস করল শিবরাম শিবাজী।
‘কে জিজ্ঞেস করবে বলুন। জিজ্ঞেস করলে হয়তো ডিল বাতিল করে উঠে যেত’। বলল রঙ্গলাল।
হেসে উঠল শিবরাম শিবাজী এবং উঠে দাঁড়াল।
রোনাল্ড রঙ্গলাল ও উঠল।

‘পরনাম’ শহর থেকে পারামারিবো ফিরছিল আহমদ হাত্তা। বেলা দেড়টার মত ‘অড’ সময় তখন।
আহমদ মুসা ড্রাইভ করছে। আহমদ হাত্তা তার পাশের সিটে। পেছনের সিটে আহমদ হাত্তার সেক্রেটারী এবং ওয়াং।
রাস্তায় গাড়ি খুব কম।
রিয়ারভিউতে আহমদ মুসা দেখল পেছনে একটা কার দেড়গুণ বেশী গতিতে ছুটে আসছে।
সামনেই একটা ক্রসিং।
ক্রসিং এ প্রায় পৌঁছে যাচ্ছে আহমদ মুসার গাড়ি। পেছনের গাড়িটিও এসে গেছে তার গাড়ির সমান্তরালে।
সমান্তরালে এসেই গাড়িটি তার বাড়তি স্পীড কমিয়ে দিয়েছে।
আহমদ মুসা কিছুটা বিষ্মিত হয়ে সেদিকে চোখ ফেরাতে যাচ্ছিল।
ঠিক এই সময়েই আহমদ মুসার নজরে পড়ল, বাম পাশের ‘পরনাম’ গামী সড়ক দিয়ে ছুটে আসা একটা ট্রাক হঠাৎ ক্রসিং এ বাঁক নিয়ে ক্রসিং দিয়ে তাদের রাস্তার দিকে ছুটে আসছে।
ট্রাকটি একেবারে আহমদ মুসার গাড়ির ঘাড়ে পড়ার যোগাড়। ডান দিকে টার্ন নেবার পথ বন্ধ পেছনের গাড়িটি পাশে চলে আসায়।
একটা চিন্তা হঠাৎ আহমদ মুসার মাথায় ঝিলিক দিয়ে উঠল এটা কি তার গাড়ি পিষে ফেলার একটা ফাঁদ?

পরবর্তী বই
সুরিনামে মাফিয়া

Top