৩৬. গুলাগ অভিযান

চ্যাপ্টার

আহমদ মুসা ও হাসান তারিক রেষ্টুরেন্ট থেকে এক পিস করে ডিমের ফ্রাই ও চা খেয়ে রাস্তায় নামল। হাঁটতে শুরু করল ফুটপাত ধরে।
আজ সকাল ছ’টায় তারা গনজালো রোডের মুখে এসে নেমেছে। আর হারতায় এসেছে তারা একদিন আগে। সার্গিও ও ভ্যানিসা তাদেরকে হেলিকপ্টারে করে পৌছে দিয়ে গেছে তারও একদিন আগে। হেলিকপ্টার নিয়ে তারা নামে হারতা থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ উপকূলের ছোট শহর ‘ফেটেরা’র সমুদ্র তটে।
ফেটেরা আজোরস দ্বীপপুঞ্জের এ দ্বীপটির কোষ্টাল হাইওয়ে নেটওয়ার্কের উপর তৈরি একটা ব্যস্ত শহর। শহর থেকে উপকূলটা দুমাইল দূরে। আহমদ মুসাদের হেলিকপ্টার এখানেই অবতরণ করে।
দ্বীপের চারদিকে বৃত্তাকারে বেষ্টিত কোষ্টাল হাইওয়ের শহরগুলো নিয়মিত কমার্শিয়াল বাসলাইনের দ্বারা যুক্ত। একটা দিন আহমদ মুসারা ফেটেরা শহরে অবস্থান করে হারতা সম্পর্কে মোটামুটি জেনে নিয়ে ভোরের বাসে হারতা আসে। হোটেলে উঠে একটা দিন হারতা শহর ও এই দ্বীপ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে তারা কাটায়। পরদিন সকালে এসে তারা প্রবেশ করেছে গনজালো রোডে।
সকাল ছ’টায় গনজালো রোডে নেমে পায়ে হেঁটে রোডের দুপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিয়েছে। গনজালো ১১ নং বাড়িটাও তারা দেখেছে। খুবই সাধারণ দুতলা বাড়িটায় দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট।
রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে ফুটপাত ধরে আহমদ মুসারা পায়চারী করার মত হেঁটে ১১ নং বাড়িটার দিকেই এগুচ্ছিল।
আহমদ মুসা ও হাসান তারিক দুজনের মুখেই ছোট করে ছাঁটা মুখভরা দাড়ি। পরণে ট্যুরিষ্টের পোশাক। চুলে সোনালী রং করা। দাড়িও সোনালী। মুখেও আছে হাল্কা মেকআপ। তাদেরকে এশীয় বলে চেনার কোন উপায় নেই। মনে হবে ইউরোপের কোন দেশ থেকে আজোরস সফরে এসেছে।
ফুটপাত ধরে তারা হাঁটছিল।
দুজন পাশাপাশি কথা বলতে বলতে হাঁটছিল। একজন প্রৌঢ়া তাদের সামনে পড়ে গেল। থমকে দাঁড়িয়েছিল প্রৌঢ়া।
আহমদ মুসারা গল্পের তালেই দুজন দুদিকে সরে গিয়ে প্রৌঢ়াকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগুলো।
প্রৌঢ়া কিন্তু দাঁড়িয়েই রইল। ভাবছিল সে। সে হঠাৎ পেছন ফিরে আহমদ মুসাদের দিকে দৌড় দিল।
পেছন থেকে পর্তুগীজ ভাষায় ‘হ্যাল্লো’ আহবান করল। আহমদ মুসা ও হাসান তারিক দুজনেই এক সাথে পেছন ফিরল। দেখল যাকে পাশ কাটিয়ে এসেছে সেই প্রৌঢ়া।
এবার প্রৌঢ়া মহিলাটির দিকে ভালো করে তাকাল আহমদ মুসা। প্রৌঢ়া এ মহিলাকে কোথাও দেখেছে বলে মনে হলো আহমদ মুসার। দ্রুত মনে করার চেষ্টা করতে লাগল। প্রৌঢ়া মহিলাটি ততক্ষণে সামনে এসে পৌছেছে। বলল প্রৌঢ়া মহিলাট উচ্ছসিত কণ্ঠে, ‘তোমরা বাছা তারা না? আমি ঠিক চিনতে পেরেছি। ‘ফেটেরা’ থেকে আসার পথে বাসে আমাকে ও আমার মেয়েকে বসতে দিয়ে সারাটা পথ তোমরা দাঁড়িয়েছিলে। তা তোমরা বাছা এখানে কোথায়?’
আহমদ মুসা ও হাসান তারিকও প্রৌঢ়া মহিলাকে চিনতে পেরেছে। ঠিক, ফেটেরা থেকে আসার পথে বাসে এই মহিলার সাথে তাদের দেখা হয়েছিল। এই মহিলা ও তার সাথের একটি মেয়েকে তাদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে সারা পথ তারা দাঁড়িয়ে এসেছে।
সেদিন ভোরে যাত্রী ছিল প্রচুর। বাসের সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। ওই প্রৌঢ়া মহিলা ও তার সাথের মেয়ে এসে টিকিট পায়নি কিন্তু তাদের আসতেই হবে হারতায় সকালে। নাছোড়বান্দা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবার শর্তে তারা বাসে ওঠে। আহমদ মুসা ও হাসান তারিক নিজেদের জায়গায় প্রৌঢ়া মহিলা ও তার সাথের মেয়েকে বসিয়ে নিজেরা দাঁড়িয়ে আসে। মহিলারা বসতে কিছুতেই রাজী হয়নি। কিন্তু যখন আহমদ মুসারা বলে যে, মায়ের মত গুরুজনকে দাঁড় করিয়ে রেখে তারা বসে থাকতে পারবে না, তারাও তাদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে, তখন প্রৌঢ়া ও তার মেয়ে সিটে বসে। বসতে বসতে মহিলাটি বলে, ঈশ্বর তোমাদের ভাল করুন বাছা, সত্যিই আমার ছেলের কাজ করেছ।’
প্রৌঢ়ার কথার উত্তরে আহমদ মুসা বলল, ‘স্যরি বুড়িমা, প্রথমে চিনতে পারিনি। এখন ঠিক চিনতে পারছি। ভাল আছেন আপনি?’
‘ভাল আছি বাছা। তবে আমাকে মা বলো না। মা ডাক শুনলে আমার ছেলের কথা মনে পড়বে। কান্না পাবে। তার চেয়ে ‘আন্টি’ বলো।’
প্রৌঢ়া একটু থামল। থেমেই আবার বলে উঠল, ‘তোমরা কোথায় যাচ্ছ? কোথায় উঠেছ? ও বুঝতে পেরেছি মেইন ল্যান্ড থেকে তোমরা বেড়াতে এসেছ।’
আহমদ মুসা ভাবছিল। প্রৌঢ়া মহিলা থামতেই বলে উঠল, ‘হ্যাঁ আন্টি, আমরা বেড়াতে এসেছি। আশে-পাশে একটা বাসা খুঁজছি ভাড়া নেবার জন্যে।’
শুনেই প্রৌঢ়া মহিলাটি আহমদ মুসাদের দিকে চোখ তুলে পরিপূর্ণভাবে একবার তাকাল। তার চোখে-মুখে আকস্মিক ভাবনার একটা ছায়া। মুহূর্তেই চোখ আবার নামিয়ে নিল সে। ‘আমার বাসায় কি তোমরা উঠবে বাছা? পছন্দ হবে কি? আমরা দুতলায় থাকি। নিচ তলাটা খালিই থাকে। মাঝে মাঝে অবশ্য মেহমান আসে। কিন্তু নিচে চারটি শোবার ঘর আছে। তোমরা দুটোয় থাকলেও দুটো খালি থাকবে।’
‘কোন অসুবিধা নেই। আপনার কাছে দুটো ঘর ভাড়া পেলে আমরা খুবই খুশি হবো আন্টি।’ আহমদ মুসা বলল।
‘সত্যিই তোমরা ভাড়া নেবে? অন্য আর কোন অসুবিধা নেই। ঐ একটু মেহমানের জ্বালাতন। তোমরা উঠলে সে জ্বালাতন কমাবারও একটা পথ হবে। আমি খুব খুশি হবো বাছা তোমরা এলে।’ বলল প্রৌঢ়া মহিলা।
একটু থামল। আবার বলে উঠল প্রৌঢ়া, ‘তাহলে বাছা কেনা-কাটায় এখন যাচ্ছি না। চল তোমরা বাড়িটা দেখবে। এস।’
বলে প্রৌঢ়া ফিরে দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করল।
আহমদ মুসা ও হাসান তারিক পাশাপাশি হেঁটে মহিলাটির পেছনে চলছিল।
প্রৌঢ়া মহিলাটি এসে নক করল এগার নম্বর বাড়িতে।
‘এটা আপনার বাড়ি আন্টি?’ প্রবল আনন্দ ও বিস্ময় চেপে জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
হাসান তারিকের চোখে-মুখেও উপচে পড়া আনন্দ।
‘হ্যাঁ, আমার বাড়ি। কেমন মনে হচ্ছে বাছা?’ পেছন ফিরে আহমদ মুসার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল প্রৌঢ়া মহিলা।
‘আন্টির বাড়ি কি কখনও খারাপ হতে পারে?’ মুখে হাসি টেনে বলল আহমদ মুসা। কিন্তু মনে মনে বলল, ‘আল্লাহর অসীম রহমত যে, তিনি তাদেরকে এই বাড়িতে ঢোকার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই বাড়িটার লক্ষ্যেই তো তারা তেরসিয়েরা দ্বীপ থেকে এখানে ছুটে এসেছে।
দরজা খুলে গেল।
দরজায় দেখা গেল প্যান্ট-সার্ট পরা একজন সুন্দরী তরুণীকে। তরুণীটি দরজা খুলে মাকে দেখেই কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু একটু পেছনে দাঁড়ানো আহমদ মুসাদের উপর নজর পড়তেই থেমে গেল তরুণীটি। দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে বলল, ‘এস মা।’
প্রৌঢ়া পেছন ফিরে আহমদ মুসাদের দিকে তাকিয়ে ‘এস বাছা’ বলে ভেতরে প্রবেশ করল।
আহমদ মুসারাও প্রবেশ করল।
মেয়েটি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ‘গুড মর্নিং’ বলে স্বাগত জানাল আহমদ মুসাদের।
ভেতরে ঢুকেই ঘুরে দাঁড়াল এবং মেয়েটিকে দেখিয়ে আহমদ মুসাদের লক্ষ্য করে বলল, ‘চিনতে পারছ? আমার মেয়ে ‘পলা জোনস।’ তারপর মেয়েকে বলল, ‘চিনতে পারছিস পলা? ফেটেরার বাসে দেখেছিলি। মনে পড়ছে?’
মেয়েটি হাসল। বলল, ‘এখন পুরোপুরি মনে পড়ছে মা।’ বলে মেয়েটি আহমদ মুসাদের লক্ষ্য করে সহাস্যে সপ্রতিভ কণ্ঠে বলল, ‘ওয়েলকাম, আসুন।’
আহমদ মুসাদের নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে সোফা দেখিয়ে দিল বসার জন্যে।
‘ধন্যবাদ’ বলে আহমদ মুসারা বসল।
প্রৌঢ়া আহমদ মুসাদের দিকে দুধাপ এগিয়ে এসে বলল, ‘বাছা তোমরা একটু বস। আমি পলাকে নিয়ে গিয়ে কয়েকটা কাজ বুঝিয়ে দিয়ে একটু বেরুব।’
বলে প্রৌঢ়া দুতলার ওঠার সিঁড়ির পাশ দিয়ে আরেকটা ঘরের দরজার দিকে এগুলো।
মেয়েটি আহমদ মুসাদের লক্ষ্য করে বলল, ‘আপনাদের নাস্তা হয়নি নিশ্চয়?’
‘ধন্যবাদ। নাস্তা করেছি।’ সৌজন্যমূলক একটু হেসে বলল আহমদ মুসা।
‘একটু বসুন’ বলে দুতলায় ওঠার সিঁড়ির দিকে এগুলো। তার মা যে ঘরে গেছে সেদিকে তাকিয়ে একটু কণ্ঠটা বাড়িয়ে বলল, ‘একটু বসুন। আমি এক্ষণি আসছি।’
বলে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে দুতলায় উঠে গেল।
মিনিট দুই পরেই দুহাতে ট্রে ধরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল।
ট্রেতে বিয়ারের দুটি ক্যান। দুটি গ্লাস। একটা পানির বোতল। একটা বাটিতে কিছু বরফ। চিপসের একটা ঠোঙা।
মেয়েটা ট্রে এনে আহমদ মুসাদের সামনে টেবিলে রেখে হেসে বলল, ‘শুধু শুধু বসে থাকার চেয়ে কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। আমি মার সাথে কথা বলে আসি।’
বলেই পলা জোনস ধন্যবাদ দেবার মত সময়টুকু না দিয়েই ছুটল তার মায়ের কাছে।
পলা জোনস চলে যাবার পর আহমদ মুসা বলল, ‘মেয়েটি খুব বুদ্ধিমতী, ভদ্র ও দিলখোলা। কিন্তু তার চোখে-মুখে একটা অস্বস্তির ছায়া আছে।’
কথাগুলো অনেকটা স্বগোতক্তির মত বলেই আহমদ মুসা তার ব্যাগটা টেনে নিয়ে হাসান তারিক ও তার মাঝে রাখল। দ্রুত হাতে খুলে ফেলল ব্যাগের চেন। বের করল রিমোট সাউন্ড মনিটরিং যন্ত্রটা। যন্ত্রটা অন করে দিয়ে স্পিকারের ভলিয়ম কমিয়ে দিল।
‘ওদের ব্যক্তিগত পারিবারিক কথা জানা আমাদের ঠিক হবে ভাইয়া?’ হাসান তারিক বলল।
‘তা নিশ্চয় ঠিক নয়। কিন্তু হাসান তারিক, দশটা ব্যক্তিগত পারিবারিক কথার মধ্যে একটি কথাও WFA (ওয়ার্ল্ড ফ্রিডোম আর্মি) সম্পর্কে যদি থাকে সেটা আমাদের জন্যে মূল্যবান। এই মুহূর্তে আমাদের জানা দরকার চিঠিতে আমরা যেটা পড়েছি, সেটা ঠিক কিনা? WFA -এর লোকরা এখানে আছে কিনা, আসে কিনা?’
‘ঠিক ভাইয়া।’ হাসান তারিক বলল।
আহমদ মুসা আর কথা বাড়াল না। মনিটরের স্পিকার কথা বলতে শুরু করেছে ফিসফিস কণ্ঠে।
শোনা যাচ্ছিল প্রৌঢ়ার কণ্ঠ। বলছিল, ‘বাছারা খুব ভালো। ওরা বাসা খুঁজছিল। আমি নিয়ে এলাম। নিচের তলাটা ওদের দিয়ে দেব।’
‘বুঝেছি মা তুমি কি চাও। কিন্তু ওদের সাথে সংঘাতে যাওয়া কি ভালো হবে?’ বলল মেয়েটি মানে পলা জোনস।
‘সংঘাতে কেন? আমরা চলতে পারছি না। তোমার চাকরীর ব্যবস্থা এখনও হয়নি। বাসা আমাদের ভাড়া দেয়া প্রয়োজন।’ বলল প্রৌঢ়া।
‘কিন্তু ওরা এমনভাবে জেঁকে বসেছে। মনে করছে ওদেরই বাড়ি এটা।’ বলল মেয়েটি।
‘তুমি ওদের প্রশ্রয় দিচ্ছ পলা। তার ফলেই ওরা আরও জেঁকে বসেছে। ওরা লোক ভাল নয়।’ বলল প্রৌঢ়া।
‘আমি ওদের প্রশ্রয় দিচ্ছি না মা। ওদের সব কিছু সহ্য করে যাচ্ছি। না করে উপায় কি। আমাদের আত্মরক্ষার শক্তি নেই। ওরা যখন ইচ্ছা, যা ইচ্ছা করতে পারে। কৌশল করেই না এখনও বেঁচে আছি।’ বলল পলা জোনস।
‘এই জন্যেই তো নিচতলা ভাড়া দিতে চাচ্ছি। এতে আমাদের একটা নিরাপত্তারও ব্যবস্থা হবে।’ প্রৌঢ়া মহিলা বলল।
‘নিরাপত্তা নয় মা, বরং ঐ নিরীহ দুজন মানুষকে বিপদে ফেলা হবে। ওদের আমি যতটুকু জানি, তুমি ততটুকু জান না। ওরা দিন-দুপুরে আমাদের সকলকে খুন করে চলে যেতে পারে। আমরা সত্যিই সংকটে আছি মা। ভাইয়া নিখোঁজ। ওদের সাথে ঝগড়া করে বাঁচবো না। ভাইয়াকে আমরা ফিরে পেতে পারি তাদের মাধ্যমেই।’ বলল পলা জোনস।
সংগে সংগে প্রৌঢ়া মহিলা, পলার মা কথা বললো না। একটু পর ধীরে ধীরে বলল, ‘ধন্যবাদ পলা। তুমি যতটা ভেবেছ, আমি ততটা ভাবিনি। তারপরও আমার মন বলছে, একটা অবলম্বন আমাদের খুঁজে নেয়া দরকার। আমার মনে হচ্ছে ওদের দুজনকে যখন হাতের কাছে পেয়েছি, তখন এ সুযোগ আমাদের হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। আমাদের হারতার লোকরা শান্তি শান্তি করতে গিয়ে মেরুদন্ডহীন হয়ে গেছে। এদের কারও উপর ভরসা করা যাবে না। মেইনল্যান্ড ইউরোপের লোকরা এমন নয়।’
‘তোমার যুক্তি আমি মানছি মা। ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করুন। তবে এদের ভাড়া দিয়েছ, একথা ওদের জানিও না। বলতে হবে, ‘ফেটেরা’তে এদের সাথে পরিচয়। হারতায় এসেছে, কদিন থাকবে।’ পলা জোনস বলল।
‘ধন্যবাদ পলা। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। খাসা বুদ্ধি বের করেছ। কদিন চলুক। দেখা যাক কি হয়।’ বলল পলার মা।
পলার মার কণ্ঠ থেমে যাবার পর আবার তা কথা বলে উঠল, ‘তাহলে পলা, আমি কেনাকাটা সেরে আসি। তুমি বাছাদেরকে এ দিকের দুটো ঘর ঠিক করে দাও।’
‘ঠিক আছে মা।’ বলল পলা।
‘আমার মনে হয় ছেলে দুটো ভালই হবে, কি বলিস। আমাদের আজোরসের কেউ এভাবে জেদ করে জায়গা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো না।’ পলার মা বলল।
‘একটা পার্থক্য ইতিমধ্যে আমার কাছে ধরা পড়েছে মা। কোন সুন্দরী মেয়ে সামনে পেলে সবাই দুচোখ দিয়ে গোগ্রাসে গেলে। কিন্তু এরা এখনও আমার দিকে একবারও পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায়নি।’ বলল পলা জোনস।
‘ঈশ্বর বাছাদের ভালো করুন।’ পলার মা বলল।
নিরব হয়ে গেল মনিটরিং যন্ত্র।
‘ওরা তাহলে আসছে’ স্বগতভাবে কথাটা বলার সাথে সাথে দ্রুত যন্ত্রটা আহমদ মুসা ব্যাগে পুরল।
ড্রইংরুমে ঢুকেই পলার মা আহমদ মুসাদের লক্ষ্য করে বলল, ‘বাছারা, তোমরা বস। পলা তোমাদের ঘর ঠিক-ঠাক করে দেবে। আমি একটু আসি।’
‘আন্টি, আপনাদের অসুবিধা করছি না তো? আমরা চেষ্টা করলে অন্যত্রও বাসা ঠিক করে নিতে পারব।’ বলল আহমদ মুসা।
‘না বাছা, আমাদের কোন অসুবিধা নেই। ভাবছি, তোমাদের অসুবিধা হবে কিনা। মাঝে মাঝেই নানারকম মেহমান আসে। থাকেও তারা দুচারদিন। অবশ্য নিচে ঘর আছে চারটা। দুটো ঘর মেহমানদের জন্য থাকবে। অসুবিধা হবার কথা নয়।’ বলল পলার মা।
‘এতে আমাদের কোন অসুবিধা নেই আন্টি। আপনাদের মেহমান মানে আমাদেরও মেহমান। আমাদের জন্যে তাদের কোন অসুবিধা হবে না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ধন্যবাদ বাছা। আমি জানি তোমরা খুব ভালো ছেলে।’
বলে পলার মা বেরিয়ে গেল।
পলার মা বেরিয়ে যাবার পর পলা জোনস বলল, ‘আপনারা একটু বসুন। আমি ঘর দুটো ঠিক করে দিয়ে আসছি।’
বলে পলা দৌড়ে ঘরের দিকে চলে গেল।
দশ মিনিট পরে ফিরে এলো পলা। বলল, ‘আসুন, ঘর দুটো আপনাদের বুঝিয়ে দেই।’
আহমদ মুসারা চলল পলার সাথে। ড্রইং রুম থেকে দুতলায় ওঠার সিঁড়ির পাশ দিয়ে একটা করিডোর বাড়ির দক্ষিণের শেষ দেয়াল পর্যন্ত গেছে। এই করিডোরের দুপাশে দুটি ঘর। দরজা মুখোমুখি।
দুটোই সাধারণভাবে সুসজ্জিত ঘর। শোবার খাট, লেখার টেবিল, পোশাকের জন্যে ওয়াল ক্যাবিনেট, মিনি ফ্রিজার প্রভৃতি সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় সবই রয়েছে। তবে একটি ঘরের দক্ষিণ ওয়ালে একটা বাড়তি দরজা রয়েছে। পলা জানাল ওটা একটা ইমারজেন্সী দরজা। নিচের তলা থেকে জরুরী অবস্থায় বের হবার এটা একটা বিকল্প দরজা। দরজা দিয়ে বেরিয়ে একটা সংকীর্ণ পথ দিয়ে উত্তরের রাস্তায় বের হওয়া যায়।’
‘মেহমানরা এলে কোথায় থাকে সাধারণত।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ড্রইংরুমের পূর্ব পাশে দুটো ঘর আছে। ঘর দুটো আরও প্রশস্ত। রাস্তার দিকে জানালা আছে। মেহমানরা ও ঘর দুটোই ব্যবহার করে এ জন্যেই এ ঘর দুটো আপনাদের দেয়া হলো।’
আহমদ মুসা বিকল্প দরজাওয়ালা ঘরটাই বেছে নিল।
যাওয়ার আগে পলা বলল আহমদ মুসাদের লক্ষ্য করে, ‘আম্মা বলেননি, কিন্তু একটা কথা আপনাদের বলি, যাদের আমরা মেহমান বলছি, তারা আমাদের আত্মীয় নন। আমার ভাইয়া সূত্রে ওরা আসেন। আমার ভাইয়াকে ওরা একটা ভালো চাকুরী দিয়েছেন।’
‘আপনার ভাইয়া কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। সৌজন্যের খাতিরেই এটা জিজ্ঞাসা করা।
চোখ-মুখ ম্লান হয়ে উঠল পলা জোনসের। বলল, ‘উনি চাকুরী নিয়ে ৪ মাস আগে লিসবনে গেছেন।’
‘বেশি তো দূরে নয়, কাছেই।’ বলল আহমদ মুসা।
‘তবু মনে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দূর।’ পলা জোনস বলল।
‘কেন?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ভাইয়া নিয়মিত টেলিফোনে কথা বলত। ধীরে ধীরে তার টেলিফোনে কথা বলা কমে যাচ্ছে। তার কথাবার্তায় ভয় ও রাখ-ঢাকের ব্যাপার ক্রমেই স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। আম্মা একটা জরুরী চিঠি পাঠিয়েছেন। তার উত্তর পাওয়া যায়নি। আজ ৭ দিন কোন টেলিফোনও তার আসেনি।’
আহমদ মুসার দেহ-মনে যন্ত্রণার একটা স্রোত বয়ে গেল। তার ভাইয়াকে যে চাকুরী দেয়া হয়েছিল সেটা যে চাকুরী নয়, এক সন্ত্রাসী কাজ এবং সে কাজ করতে গিয়েই সে নিহত হয়েছে, একথা জানতে পারলে এ অসহায় পরিবারটির কি অবস্থা দাঁড়াবে! আর এ নিহত হওয়ার ঘটনা যে আহমদ মুসাদের হাতে হয়েছে এটাও আহমদ মুসাদের জন্যে খুবই বিব্রতকর ও বেদনাদায়ক। হঠাৎ আহমদ মুসার মনে হলো, তারা যে এ পরিবারের সাথে এভাবে জড়িয়ে পড়ল, এর পেছনে নিশ্চয় আল্লাহর কোন ইচ্ছা আচ্ছে। এ পরিবারের একটা দায় কি আল্লাহ এভাবে তাদের উপর তুলে দিলেন? চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেল আহমদ মুসার।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নামল পলা জোন্সের বুক থেকে। বলল, ‘আমাদের দুঃখের কথা আপনাদের জানানোর প্রয়োজন ছিল না। তবু বললাম এ কারণে যে, অনেক কথাই হয়তো আপনারা জানতে পারবেন।’
‘মিস পলা জোন্স, প্রয়োজনটা কার বেশি, সেটা না আমরা জানি আর না আপনি জানেন। আমি বলব প্রয়োজনেই আপনি বলেছেন।’ বলল আহমদ মুসা।
ম্লান হাসল পলা জোন্স। বলল, ‘দার্শনিকের মত কথা বললেন। তবু যা হোক সান্তনা পেলাম। ধন্যবাদ।’
‘দর্শনই হলো অন্তর্নিহিত বাস্তবতা। আমরা আজ এখানে এসে উঠব, তা আপনারা বা আমরা কেউ ভাবিনি। এই অভাবনীয় বিষয়ের একটা দার্শনিক বাস্তবতা নিশ্চয় আছে।’ আহমদ মুসা বলল।
পলা জোন্স মুখ তুলে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলল, ‘দর্শনের কথাটা আমি ‘ফান’ করে বলেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি আপনি সত্যিই দার্শনিক।’
বলে একটু থামল পলা জোন্স। বলল আবার, ‘আপনারা এখানে ওঠার অভাবনীয় ঘটনার মধ্যে কোন দার্শনিক তাৎপর্য আছে বলে মনে করেন?’
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘জগতে দৃশ্যমান যা ঘটে, অদৃশ্যমানের সংখ্যা তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি। সুতরাং দৃশ্যমান ঘটনার পেছনে অদৃশ্যমান কার্যকরণ থাকবে, এটা একটা বিশ্বাস।’
পলা জোন্সের চোখ-মুখের বিস্ময়টা আরও বাড়ল। তার বিস্ময় দৃষ্টি আবার নিবদ্ধ হলো আহমদ মুসার উপর। সেই সাথে তার চোখে জিজ্ঞাসাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে সে বলল, ‘আপনাদের পরিচয় কিন্তু জানা হয়নি। যারা ট্যুরে যান তারা ট্যুরিষ্ট। কিন্তু ট্যুরিষ্টদের একটা পেশা ও পরিচয় থাকে, আপনাদের সেই পরিচয় আমরা জানি না। তবে আমি নিশ্চিত, আমরা চারদিকে যাদের দেখি, যারা এখানে আসেন, তাদের থেকে আপনারা আলাদা। দেখলাম, আপনারা বিয়ার খাননি।’
এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল আহমদ মুসার ঠোঁটে। বলল, ‘আমরা দু’জনেই সুনির্দিষ্ট কোন পেশার সাথে জড়িত নই। সুতরাং সে ধরনের কোন পরিচয় আমাদের নেই। এদিক থেকে হয়তো কিছু আলাদা আমরা অন্যদের থেকে।’
‘পেশা নয়, মন-মানসিকতায় পার্থক্যের কথা আমি বলেছি।’ বলেই হেসে উঠল পলা জোন্স। বলল আবার, ‘অনেক কথা বলেছি। যাই, প্রয়োজন হলে ডাকবেন। যে কোন সময় দু’তলায় আসতে পারেন। পলা বলবেন, মিস বলার প্রয়োজন নেই। অন্তত বয়সে ছোট হিসেবে এ দাবী আমি করতে পারি।’
একথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল পলা জোন্স।
রিডিং টেবিলের সাথে একটা মাত্র চেয়ার। আহমদ মুসা চেয়ারটাতে গিয়ে বসল।
হাসান তারিক গিয়ে বসল খাটে। বসেই বলল, ‘এখন কি ভাবছেন ভাইয়া?’
‘মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতী, ভালই হলো।’ আহমদ মুসা বলল।
‘হ্যাঁ, এপর্যন্ত সবকিছু ভালই যাচ্ছে। কিন্তু আসল পক্ষ তো সিনে এখনও আসেনি।’ বলল হাসান তারিক।
‘দোয়া করো, সিনে তারা যত তাড়াতাড়ি আসে ততই মঙ্গল। আসল কাজে কিন্তু আমরা এখনও এক ইঞ্চিও এগুতে পারিনি।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। আমরা প্রথম বারের মত WFA-এর লোকদের সবচেয়ে নিকটে পৌছতে যাচ্ছি।’
‘আলহামদুলিল্লাহ, প্রতিপদেই আল্লাহ আমাদের সাহায্য করছেন।’
‘আমার ভয় হচ্ছে, আজর ওয়াইজম্যান সাও তোরাহ থেকে সবাইকে নিয়ে ভাগবে না তো?’ বলল হাসান তারিক।
‘হ্যাঁ, তোমার কথায় যুক্তি আছে। আজর ওয়াইজম্যান আহত এবং তেরসিয়েরা দ্বীপে তার সর্বাত্মক অভিযান চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু সাও তোরাহ দ্বীপ তেরসিয়েরা দ্বীপ থেকে অনেক দূরে। আরও একটা ব্যাপারে তারা আশ্বস্ত আছে যে, তেরসিয়েরা দ্বীপে তারা আমাদেরকে ধরতে না পারলেও এবং তাদের অনেক ক্ষতি হলেও তারা আমাদেরকে আমাদের প্লানমত অগ্রসর হতে দেয়নি, আমাদের পরিকল্পিত অগ্রযাত্রাকে তারা ব্যর্থ করে দিয়েছে। এটা তাদের সাফল্য। অতএব সাও তোরাহ দ্বীপে আমরা আমাদের পরিকল্পনা মত পৌছে যেতে পারব, এটা নিশ্চয় আজর ওয়াইজম্যান মনে করছে না। সুতরাং সাও তোরাহ দ্বীপ থেকে তাদের সরার কোন প্রশ্ন নেই।’ আহমদ মুসা বলল।
হঠাৎ খুশি হয়ে উঠল হাসান তারিক। বলল, ‘আমাদের ভাগ্য যদি ভালো হয়, ওরা যদি এখানে আসে, তাহলে আজর ওয়াইজম্যানের গতিবিধি সম্পর্কে অবশ্যই কিছু জানা যাবে।’
‘এখানে আমাদের আসার একটা বড় উদ্দেশ্য এটাই।’ বলল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই বাইরের দরজায় নক হতে শুরু করল।
উচ্চ ও অসভ্য রকমের নক হচ্ছে দরজায়। কেউ যেন অস্থির হয়ে উঠেছে দরজা খোলার জন্যে।
পলা জোন্স দোতলা থেকে ছুটে নামছিল। সে দোতলার সিঁড়িমুখে পৌছতেই দেখল, আহমদ মুসা গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছে। সে দোতলার সিঁড়ি মুখেই থমকে দাঁড়াল। দরজা তার নজরে পড়েছে। আহমদ মুসার পাশ দিয়ে তাকিয়ে দরজার ওপাশে দাঁড়ানো লোক দু’জনকে চিনতে পারল পলা। তাদের ঘাড়ে যারা চেপে বসে আছে সেই মেহমানরাই এসেছে। পলা জোন্স নিজেকে সিঁড়ির রেলিং-এর আড়ালে নেবার চেষ্টা করল।
আহমদ মুসা দরজা খুলতেই দরজার বাইরে দু’জনকে দাঁড়ানো দেখল। দু’জনেরই খালি হাত। লম্বা-চওড়া শক্ত-সামর্থ গায়ের গড়ন। চোখে সাপের মত ঠান্ডা দৃষ্টি এবং তাতে শেয়ালের মত ধূর্ততার ছাপ।
আহমদ মুসাকে দেখেই দু’জনের সামনের জন বিরক্তির সাথে বলে উঠল, ‘কে হে তুমি? কোত্থেকে?’
বলে সে আহমদ মুসাকে পাশ কাটিয়ে ঢুকতে যাচ্ছিল।
আহমদ মুসা তাকে বাধা দিয়ে বলল, ‘কে আপনারা? কাকে চাই? কি প্রয়োজন বলুন?’
আহমদ মুসা ওদের নক করার ধরন এবং ওদের দেখেই বুঝতে পেরেছে ওরা কারা, তবু আহমদ মুসা যে প্রশ্নগুলো একান্তই না করলে নয় অপরিচিত লোকদের সে প্রশ্নগুলো করেছে।
লোকটি থমকে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তুমি কেন? বুড়ি অথবা পলাকে ডাক।’
‘আপনি পলা জোন্স ও তার মাকে যেভাবে সম্বোধন করছেন, তাতে বুঝলাম যে, আপনারা এঁদের আত্মীয়। স্যরি। আপনারা আসুন। ওয়েলকাম।’ হাসি মুখে বলল আহমদ মুসা।
‘আত্মীয় নই, আত্মীয়ের চেয়ে বড়। কিন্তু তোমরা কে? এবার তোমাদের পরিচয় বল।’ ভেতরে ঢুকে বলল লোকটি।
আহমদ মুসা ওদের দু’জনের সাথে ড্রইংরুমের দিকে এগুতে এগুতে বলল, ‘মিস পলা জোন্সের মা মিসেস জোন্সের সাথে পূর্ব পরিচয় আছে। সেই পরিচয়েই এখানে উঠেছি।’
‘বাড়ি কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
মুহূর্তের জন্য দ্বিধা করল আহমদ মুসা। কিন্তু পরক্ষণেই বলে উঠল দ্বিধাহীন কণ্ঠে, ‘ক্যাষ্টেলো ব্রাংকো।’
ক্যাষ্টেলো ব্রাংকো এই দ্বীপেরই দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের একটা শহর। আহমদ মুসা শহরটাকে চোখে দেখেনি।
‘কিন্তু তোমরা তো ওখানকার বাসিন্দা নও। তোমাদের চেহারাতো তা বলেনা।’ বলল লোকটি।
‘চেহারা কি বলে?’ হেসে বলল আহমদ মুসা।
‘আজোরীদের সাথে মেলে না।’ বলল লোকটি।
‘সেটা আজোরসের দুর্ভাগ্য। আজ আজোরসে আসল আজোরীদের চেয়ে নকল আজোরীদের সংখ্যা বেশি। নকলের সাথে আসল মিলবে না, এটাই স্বাভাবিক এবং এটা অন্যায় নয়।’
‘থাক, থাক। এধরনের জটিল আলোচনা আমার ভাল লাগে না। ঠিক আছে আপনার আসল-নকল সবাই আজোরী। এখন বলুন, আপনারা ক’দিন থাকছেন?’ বলল লোকটি।
‘এ প্রশ্নও আপনি করছেন? প্রশ্নটা মিসেস জোন্সের জন্যে রেখে দিলেই ভালো হয়।’ হেসে বলল আহমদ মুসা।
লোকটি মুখ ঘুরিয়ে আহমদ মুসার দিকে তাকাল। বলল, ‘দেখুন এ বাড়িতে আমার কথা ও মিসেস জোন্সের কথা আলাদা নয়।’
‘স্যরি, জানতাম না একথা। এর পর মনে থাকবে।’ মুখে কৃত্রিম গাম্ভীর্য টেনে বলল আহমদ মুসা।
সোফার কাছে তারা সবাই পৌছে গেছে।
আহমদ মুসা ওদের দু’জনকে বসার আহবান জানিয়ে বলল, ‘আপনারা বসুন। আমি মিস পলা জোন্সকে ডাকছি। মিসেস জোন্স বাসায় নেই।’
‘থাক থাক। আমাকে মেহমান সাজানোর প্রয়োজন নেই। মিস জোন্স এখনি আসবেন। আর আমাদের ঘর আমরা চিনি। কারও দেখিয়ে দেয়ারও প্রয়োজন নেই। এ বাড়িতে আমরা মেহমান নই। মিস জোন্সদের বাড়ি আমাদেরই বাড়ি।’
‘স্যার, তাহলে তো আর কোন কথা নেই। আমরা আসি। বাই।’ বলে আহমদ মুসা ও হাসান তারিক হাঁটতে লাগলো তাদের ঘরের উদ্দেশ্যে।
সিঁড়ির আড়ালে দাঁড়িয়ে হাসছিল পলা জোন্স উড়ে এসে জুড়ে বসা মেহমানদের সাথে আহমদ মুসার কথা শুনে।

Top