৩৯. ধ্বংস টাওয়ারের নীচে

চ্যাপ্টার

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিস। প্রেসিডেন্ট এ্যাডামস হ্যারিসন তার আসনে বসে। সামনে খোলা একটা ফাইলের উপর তার মনোযোগ নিবিষ্ট। আনন্দ-উৎকণ্ঠার মিশ্র খেলা তার চোখে-মুখে।
এক সময় সে ফাইল ধীরে ধীরে বন্ধ করল। সোজা হয়ে বসল চেয়ারে। তারপর বাম হাত বাড়িয়ে বাম দিকের ডেষ্কের এক প্রান্তে রাখা ইন্টারকমের নীল বোতাম চেপে বলল, ‘ওঁদের এখন পাঠিয়ে দাও।’
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ঘরে এসে ঢুকল সেক্রেটারী অব ষ্টেট বব.এইচ ব্রুস, সেক্রেটারী অব ডিফেন্স সান্ড্রা ষ্টোন, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা এলিজা উড, মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রোনাল্ড ওয়ার্শিটন। সি.আই.এ প্রধান এডমিরাল ম্যাক আর্থার, এফ.বি.আই প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসন এবং সিনেট গোয়েন্দা কমিটির প্রধান আনা প্যাট্রেসিয়া।
সবাইকে স্বাগত জানাল প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন। বলল, এই মিটিংটা ২৪ ঘণ্টা আগে হবার কথা ছিল, কিন্তু কাকতারীয়ভাবে মিস এলিজা উড, মিস সান্ড্রা ষ্টোন ও বব. এইচ. ব্রুস তিনজনই ওয়াশিংটনের বাইরে থাকায় মিটিং পিছিয়ে দেয়া হয়। আর আমরা এই সাত সকালে বসেছি তার কারণ হলো, আমার মনে হচ্ছে সকাল দশটার মধ্যেই প্রেসের সাথে আমাদের কথা বলতে হবে।’ থামল প্রেসিডেন্ট।
সবাই নিরব। প্রেসিডেন্ট আবার কথা বলল। এফ.বি.আই প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসনকে লক্ষ্য করে বলল, ‘মি. জর্জ, লা-মন্ডের কালকের নিউজ আইটেমটা পড়–ন।’
পড়া শুরু করল জর্জ আব্রাহাম জনসন,
‘প্যারিস, ১১ই সেপ্টেম্বর। নিউইয়র্ক ষ্টেটের মাউন্ট মার্সি’র রেডইন্ডিয়ান গ্রেভইয়ার্ডের পাশে গোপন একটি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছে। একজন পুরাতত্ববিদ অধ্যাপকের কৌতূহলমূলক এক খননকালে এই গণকবর আবিষ্কৃত হয়।
গণকবরে ১৪টি কংকাল ছাড়াও হাতের আংগুটি, প্লাষ্টিক মানিব্যাগ, প্লাষ্টিক নেমকার্ড, কয়েন, ইত্যাদিসহ বেশ কিছু এমন নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে যা ইতিমধ্যেই সবার মধ্যে প্রবল চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে একটা নেমকার্ডে এমন একজনের নাম পাওয়া গেছে যিনি নিউইয়র্কের টুইনটাওয়ার ধ্বংসের হাইজ্যাকার হিসাবে বিমান ধ্বংসের সাথে সাথে নিহত হয়েছে বলে প্রচারিত হয়েছে। প্রাপ্ত একটা আংটিতে এমন একটা আরবী অক্ষর পাওয়া গেছে যা টাওয়ার ধ্বংসকারী বলে কথিত একজন সন্ত্রাসীর নামের আদ্যাক্ষরের সাথে মিলে যায়। এছাড়া খননকারী ও উপস্থিত পুরাতত্ববিদ ও প্রতœতত্ববিদদের প্রাথমিক ধারণায় গণকবরটি বিশ বছরের মত পুরানো হবে।
কংকালগুলো উত্তোলনের পরপরই দাঁত ও দেহাবশেষ এর নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্যে অধ্যাপক নিয়ে গেছেন। অধ্যাপকের ধারণা গণকবরটি রেডইন্ডিয়ান ভিকটিমদেরও হতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে মনে করা হচ্ছে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তবে এলাকার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অধিকাংশের অভিমত হলো, আবিষ্কৃত গণকবরের সাথে নিউইয়র্কের টুইনটাওয়ার ধ্বংসের সম্পর্ক আছে। প্রাপ্ত আরবী নাম, আরবী বর্ণমালা, টাওয়ার ধ্বংসে নিহত ১৪ সন্ত্রাসীর সাথে গণকবরের কংকাল সংখ্যা মিলে যাওয়াই শুধু নয়, গণকবর আবিষ্কারের পর একটি অপরিচিত মহল হঠাৎ তৎপর হয়ে ওঠাকেও পর্যবেক্ষক মহল তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিহিত করছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, গণকবর আবিষ্কারের পরদিন নিউইয়র্কের পুলিশ প্রধানকে সাথে নিয়ে দুজন অজ্ঞাতনামা লোক হেলিকপ্টার নিয়ে মাউন্ট মার্সিতে গিয়েছিলেন। ওয়াকিফহাল সূত্রে জানা গেছে, তারা টাকা-পয়সা দিয়ে কংকাল ও প্রাপ্ত জিনিসপত্র গায়েব করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার সাথে রেডইন্ডিয়ানদের স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় ফেডারেল কমিশন অফিস ও পুলিশ লিখিত-পড়িতভাবে জড়িত হয়ে পড়ায় এবং কংকালগুলোর অংশবিশেষ পরীক্ষার জন্যে চলে যাওয়ায় তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। মনে করা হচ্ছে, বিশেষ কোন মহলের চাপের ফলে কিংবা প্রভাবিত হয়ে নিউইয়র্কের পুলিশ প্রধান অজ্ঞাতনামা দুজনের সাথে তাদের বা তাদেরই সংগৃহিত হেলিকপ্টারে মাউন্ট মার্সিতে গিয়েছিলেন। পুলিশ প্রধান মি. ওয়াটসন বলতে পারবেন ঐ লোক দুজন কে? পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, মাউন্ট মার্সি’র গণকবরটি যদি নিউইয়র্কের টাওয়ার ধ্বংসের সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে, তাহলে নিউইয়র্কের পুলিশ প্রধানকে যারা মাউন্ট মার্সিতে নিয়ে গিয়েছিল তাদেরও সম্পর্ক আছে টাওয়ার ধ্বংসের সাথে।’
পড়া শেষ করে থামল এফ.বি.আই প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসন। পড়া শেষ হতেই প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন ডিফেন্স সেক্রেটারী সান্ড্রা ষ্টোনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনি রিপোর্ট নিশ্চয় পড়েছেন?’
‘পড়েছি মি. প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এটা তো পত্রিকার রিপোর্ট। আমাদের নিজস্ব রিপোর্টও আমাদের সামনে আসা দরকার।’ বলল সান্ড্রা ষ্টোন।
প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন তার সামনের ফাইল সান্ড্রা ষ্টোনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এফ.বি.আই. এর রিপোর্টটা আপনি সবাইকে পড়ে শুনান।
‘ধন্যবাদ মি. প্রেসিডেন্ট’ বলে সান্ড্রা ষ্টোন ফাইলটি হাতে নিল। পড়তে শুরু করল সে ঃ
“ক’দিন আগে ড. হাইম হাইকেল উদ্ধার হবার পর তার কাছ থেকেই প্রথম জানা গেল টাওয়ার ধ্বংসের পিছনে তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের কথা। ড. হাইম হাইকেলকে এই ষড়যন্ত্রকারীরাই কিডন্যাপ করেছিল তার মুখ বন্ধ রাখার জন্যে। বিশ বছর আগে যুবক ড. হাইম হাইকেলও এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি অনুতপ্ত হন এবং সিনাগগে গিয়ে তিনি ঈশ্বরের কাছে তার পাপের কনফেশন করেন। এই কনফেশন রেকর্ড ঘটনাক্রমে ফ্রান্স-জার্মানির প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা ‘স্পুটনিক’ পেয়ে যায়। এই গোয়েন্দা সংস্থা আপনা থেকেই টাওয়ার ধ্বংসের পেছনে প্রকৃত সত্য কি তা উদ্ধারের জন্যে তদন্ত কাজ হাতে নিয়েছিল। ষড়যন্ত্রকারী সেই তৃতীয় পক্ষ সমস্ত রেকর্ড ও দলিল-পত্রসহ স্পুটনিক অফিস ধ্বংস করে এবং এর সাত গোয়েন্দাকে কিডন্যাপ করে। সম্প্রতি আজোরস দ্বীপপুঞ্জ থেকে তারা উদ্ধার হয়। তারা উদ্ধার হবার পর টাওয়র ধ্বংসের ব্যাপারে আবার তদন্ত শুরু হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতেই ড. হাইম হাইকেল যাতে ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেবার সুযোগ না পায় এজন্যেই ড. হাইম হাইকেলকে কিডন্যাপ করা হয়।
ড. হাইম হাইকেলকে স্পুটনিকের লোকেরাই উদ্ধার করে এবং ড. হাইম হাইকেল টাওয়ার ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের সাথে যতটুকু জড়িত ছিলেন, ততটুকু তারা জেনে নেয়। তার ভিত্তিতে তদন্তে এগিয়ে তারা আজ গোটা ষড়যন্ত্রই উদঘাটন করেছে। ভয়ংকর ও উদ্বেগজনক সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে, গণকবর থেকে উদ্ধারকৃত ১৪টি কংকালের সবাই আরব এবং তারা নিহত হয়েছে টাওয়ার ধ্বংসের দিনগত রাতে এক সাথে। টাওয়ার ধ্বংসের ডাষ্ট তারা নিউইয়র্কের তিনটি বিশ্ববিখ্যাত ল্যাবে পরীক্ষা করেছে। তাতে প্রমাণ হয়েছে, বিশেষ ধরনের অতি ক্ষমতাশালী ‘সেফ ডেমোলিশ এক্সপ্লোসিভ’ দিয়ে দুটি টাওয়ার গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বিমানের আঘাতটা ছিল লোক দেখানো। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, আমাদের অতি গোপনীয় ও অত্যাধুনিক ‘গ্লোবাল হক’ বিমান সিভিল এয়ার লাইনস-এর দুটি বিমানকে টেনে নিয়ে টাওয়ারে আঘাত করানোর কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এই বিমানের সেদিনের অফিসিয়াল লগ-এর ফটোকপিসহ গ্লোবাল হকের সেদিনের ‘এরিয়েল রুট’ ও ‘উড্ডয়ন তৎপরতার’ ছবি স্পুটনিকের হাতে পড়েছে। উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টগুলোর কপি আমাদেরও হাতে এসেছে। শুধু ‘গ্লোবাল হক’ এরিয়েল ফটোগ্রাফ নেই। তবে দুএক দিনের মধ্যে পেয়ে যাব।
ষড়যন্ত্রকারী তৃতীয় পক্ষ সম্পর্কে আমরাও খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমরা নিউইয়র্কের পুলিশ প্রধানের সাথে আলোচনা করেছি। যে দুজন মাউন্ট মার্সিতে তাকে সাথে নিয়েছিলেন, তাদের নাম পাওয়া গেছে। একজন আজর ওয়াইজম্যান। তিনি গোপন ইহুদী সংগঠন ‘ওয়ার্ল্ড আর্মি’-এর নেতা এবং এখন আমাদের হাজতে বন্দী ইহুদী গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল শ্যারনের সে বন্ধু। ”
পড়া থামাল সান্ড্রা ষ্টোন। বলল প্রেসিডেন্ট হ্যারিসনকে লক্ষ্য করে, ‘মি. প্রেসিডেন্ট রিপোর্ট-এর ‘সার সংক্ষেপ’ পড়লাম। এরপর বিস্তারিত। পড়ব কি?’
‘এখনকার মত সার-সংক্ষেপই যথেষ্ট। ধন্যবাদ আপনাকে।’ বলল প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট থামতেই সিনেট গোয়েন্দা কমিটির প্রধান আনা প্যাট্রেসিয়া বলে উঠল, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, গোটা ব্যাপারটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত মনে হচ্ছে আমার কাছে। তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্রের সাথে মার্কিন সরকারের সম্পর্ক কতটুকু ছিল, এ ব্যাপারে রিপোর্টের সার-সংক্ষেপে কিছু বলা নেই। এ ব্যাপারটাই আমাদের কাছে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এখন প্রেসের সাথে কথা বলতে যাই, তাহলে আমাদের প্রধান কথা হবে এ ব্যাপারেই।’
‘ধন্যবাদ মিসেস প্যাট্রেসিয়া। এ বিষয়টা আলোচনার জন্যেই আমরা বসেছি।’ বলে প্রেসিডেন্ট এফ.বি.আই প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল। এ সময় তাঁর ইন্টারকমে লাল একটা সিগন্যাল জ্বলে উঠল। প্রেসিডেন্ট টেলিফোনের রিসিভার হাতে তুলে নিল। ওপারের কথা শুনল। গম্ভীর হয়ে উঠল তার মুখ। উত্তরে শুধু বলল, ‘পাঠিয়ে দাও।’
প্রেসিডেন্ট টেলিফোনের রিসিভার রেখে সোজা হয়ে বসে বলল, ‘আজকের ‘লা-মন্ডে’ আসছে। ওতে নাকি বিশাল রিপোর্ট আছে টাওয়ার ধ্বংসের উপর।’
কথা শেষ করেই প্রেসিডেন্ট ঘড়ির স্ক্রীনের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বলে উঠল, ‘এস।’
সেকেন্ডের মধ্যেই একটা ফাইল নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করল প্রেসিডেন্টের একজন পি.এস।
ফাইলটি সে প্রেসিডেন্টের সামনে রেখে বেরিয়ে গেল।
প্রেসিডেন্ট ফাইল থেকে লা-মন্ডে বের করে নিল। দেখল লীড হেডিংটা। শোল্ডারে বলা হয়েছে ঃ ‘বৃহত্তম ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন।’ আর আট কলামব্যাপী মূল হেডিং হলো ঃ ‘টাওয়ার ধ্বংস করে ডেমোলিশন এক্সপ্লোসিভ ॥ বিমান হাইজ্যাক হয় গ্লোবাল হকের দ্বারা।’
প্রেসিডেন্টের মুখ বিষণœ হয়ে উঠেছে। তাতে কিছু উদ্বেগও ছায়া ফেলেছে। লা-মন্ডে কাগজটা জর্জ আব্রাহামের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘আপনার রিপোর্টে নেই, এমন কি আছে এখানে, সে ব্যাপারে ব্রিফ করুন।’
কাগজটি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াল জর্জ আব্রাহাম জনসন। বলল, ‘মি. প্রেসিডেন্ট আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।’
জর্জ আব্রাহাম জনসন বেরিয়ে গেল। ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আবার ফিরে এল। বসল। বলল, ‘মি. প্রেসিডেন্ট গোটা রিপোর্টের উপর আমি চোখ বুলিয়েছি। আমাদের রিপোর্টের চেয়ে আলাদা যে দিক তাহলো, লা-মন্ডের রিপোর্টটি বেশি প্রত্যক্ষ ও ঘনিষ্ঠ। তাছাড়া তারা ১৪টি কংকালের ফরেনসিক রিপোর্ট আলাদা আলাদা দিয়েছে, আমরা ১৪টা কংকাল মিলিয়ে একটা রিপোর্ট করেছি। অনুরূপভাবে ধ্বংস টাওয়ারের ডাষ্ট তিনটি ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা হয়েছে। পত্রিকা তিনটি ল্যাবরেটরির রিপোর্টই আলাদা আলাদা করে দিয়েছে, আমরা দিয়েছি তিন ল্যাবের একটা সামারি। সিভিল এয়ারলাইন্স-এর দুটি বিমানকে টাওয়ারে হাইজ্যাক করে নিয়ে যাবার জন্যে ‘গ্লোবাল হক’কে কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ পত্রিকা ‘সেফ এয়ার সার্ভিস’এর কর্মকর্তা মরিস মরগ্যান-এর ষ্টেটমেন্ট আকারে বিস্তারিত তুলে ধরেছে। আমরা অতটা পারিনি। তবে একটা জিনিস লা-মন্ডে এক্সক্লুসিভ করেছে, যা আমাদের রিপোর্টে নেই। সেটা হলো ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারের চোখে ধুলা দিয়ে কিভাবে ‘গ্লোবাল হক’কে তাদের কাজে ব্যবহার করতে সমর্থ হয়। পত্রিকার বিবরণটা এই রকম ঃ ‘গ্লোবাল হক’ সপ্তাহে একদিন রুটিন মহড়ায় আকাশে উড়ে থাকে। ষড়যন্ত্রকারীরা গ্লোবাল হক’কে ব্যবহারের জন্যে এই দিনটাকেই বেছে নেয় এবং ঐদিন গ্রাউন্ড কমান্ডে ‘গ্লোবাল হক’-এর দায়িত্বে যে ছিল তাকে কৌশলে ঐদিন ছুটি নেয়ানো হয় এবং তাঁর স্থানে ঘুষ খেয়ে আত্মবিক্রি করা একজনকে বসানো হয়। তারই কমান্ডে ‘গ্লোবাল হক’ বিমান হাইজ্যাক করে টাওয়ারে নিয়ে যায়। পরে ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে খুন করে চিরতরে তার মুখ বন্ধ করা হয়।’ থামল জর্জ আব্রাহাম।
জর্জ আব্রাহাম থামলে আনা প্যাট্রেসিয়াই প্রথম কথা বলে উঠল। বলল, ‘লা-মন্ডের রিপোর্ট কোথাও কোনোভাবে সরকারকে জড়িয়েছে কিনা?’
‘না জড়ানো হয়নি। বরং সেফ এয়ার সার্ভিস-এর কর্মকর্তা মরিস মরগ্যানের ষ্টেটমেন্ট এবং সর্বশেষ ‘গ্লোবাল হক’-এর গ্রাউন্ড কনট্রোলের যে কথা লা-মন্ডে থেকে বললাম তা মার্কিন সরকারকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।
‘কিন্তু মরিস মরগ্যান তার বিবরণ এবং ‘গ্লোবাল হক’ টাওয়ার ধ্বংসে যে ভুমিকা পালন করেছে তার ফটো অফিসিয়ালি উপরে দিয়েও কোন বিচার পাননি, বরং তার বিভাগীয় চীফ প্রতিকার চাইতে গিয়ে ফোর্স রিটায়ারমেন্টের শিকার হয়েছেন তার ব্যাখ্যা কি?’ বলল আনা প্যাট্রেসিয়া।
‘সরকার জড়িত নেই মানে এই কাজ সরকারের সিদ্ধান্তক্রমে হয়েছে তার কোন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সরকারের শীর্ষ থেকে নি¤œ পর্যায় পর্যন্ত এক বা একাধিক লোক এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকতে পারে। তাদের মাধ্যমে ভূয়া তথ্য, ভূয়া খবর দিয়ে তখন সরকারের কথা ও কাজকে বিপথগামী করা হয়েছে। এবং এই ভাবেই বিনা তদন্তে এবং উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই টাওয়ার ধ্বংসের দায় একটা পক্ষের উপর চাপান হয়েছে, তাদের শাস্তিও দেয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এটা পরিকল্পিতভাবে করিয়েছে। লা-মন্ডের রিপোর্টে এ কথা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। ড. হাইম হাইকেলের মতে তাদের ষড়যন্ত্রের কয়েকটা দিক ছিল। প্রধান একটা দিক ছিল সরকার ও মিডিয়ায় অবস্থানকারী তাদের লোক দিয়ে এমন কথা বলানো, এমন তথ্য ছড়ানো যাতে করে তাদের পরিকল্পনা অনুসারে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ অবধারিত হয়ে পড়ে এবং এর পক্ষে জনমতও সৃষ্টি হয়। এটাই ঘটেছে। সরকার ষড়যন্ত্রের বাহন হিসাবে কাজ করেছে, ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে নয়।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল। জর্জ আব্রাহাম জনসন থামলেও সংগে সংগে কেউ কথা বলে উঠল না।
সোজা হয়ে বসল প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন।
বলল, ‘ধন্যবাদ মি. জর্জ। আপনি যেটা বলেছেন, সেটাই সম্ভবত সত্য। কিন্তু ……….।’
প্রেসিডেন্ট কথা শেষ করল না। লাল আলো জ্বলছে তার ইন্টারকম প্যানেলে। কথা বন্ধ করে সবার উদ্দেশ্যে ‘মাফ করবেন’ বলে টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিল। টেলিফোনে ওপারের কথা শুনে ‘ওকে’ বলে টেলিফোন রেখে দিল। সবার দিকে মুখ ফিরিয়ে প্রথমেই জর্জ আব্রাহাম জনসনকে লক্ষ্য করে বলল, আপনার জন্যে মেসেজ আজর ওয়াইজম্যান এবং ইলিয়া ওবেরয় ধরা পড়েছে। আপনার জন্যে আরেকটা সুখবর হলো, তাদের ধরে এফ.বি.আই-এর হাতে তুলে দিয়েছে মি. আহমদ মুসা।’ শেষ কথাটা বলার সময় প্রেসিডেন্টের ঠোঁটে এক টুকরো মিষ্টি হাসি ফুটে উঠেছিল।
প্রেসিডেন্ট একটু থামতেই জর্জ আব্রাহাম জনসন কিছু বলার জন্যে মুখ খুলেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট তাকে বাধা দিয়ে বলল, ‘আমার কথা শেষ হয়নি মি. জর্জ।’
‘স্যরি স্যার।’ বলল জর্জ আব্রাহাম।
‘ওয়েলকাম জর্জ।’ বলে প্রেসিডেন্ট সবার দিকে মুখ ফিরাল। বলল, ‘খবরের আরেকটা সংযোজন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দুনিয়ার সব টিভি ও রেডিও লা-মন্ডের খবরের ফলাও প্রচার শুরু হয়েছে। আজ ভোর রাত থেকে ফ্রি ওয়ার্ল্ড টিভি টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনার উপর বিস্তারিত রিপোর্ট শুরু করেছে। সকাল থেকে দুনিয়ার সব টিভি চ্যানেলও এর সাথে যোগ দিয়েছে। পার্লামেন্ট সদস্যসহ সব জায়গা থেকে টেলিফোন আসা শুরু হয়েছে। আমি মিটিং-এ আছি বলে সব কল ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদেরকে অবশ্যই অবিলম্বে প্রেসের সাথে কথা বলতে হবে। কি বলব এটাই এখনকার বড় প্রশ্ন।’
থামল প্রেসিডেন্ট। তাকাল জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে। বলল, ‘বলুন মি. জর্জ কি যেন বলতে চেয়েছিলেন।’
‘মি. প্রেসিডেন্ট, আহমদ মুসা শুধু আজর ওয়াইজম্যান ও ইলিয়া ওবেরয়কেই শুধু ধরলেন না, ড. হাইম হাইকেলকে উদ্ধারসহ গোটা অপারেশনটাই তিনি করেছেন।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।
‘স্পুটনিক-এর কথা শুনেই এ চিন্তা আমার মাথায় এসেছে। কয়েকজন মুসলিম যুবকের তৈরি স্পুটনিক ইতিহাস সৃষ্টি করবে, আর তার সাথে আহমদ মুসা থাকবে না, এটা অবিশ্বাস্য। তারপর যখন আজর ওয়াইজম্যানের পাকড়াও করার কথা শুনলাম, তখনি আমার কাছে বিষয়টা দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে গেছে। ধন্যবাদ জর্জ বিষয়টা ফরমালি জানানোর জন্যে।’ বলল প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন।
কথা বলার জন্যে হাত তুলল সশস্ত্র বাহিনী প্রধান রোনাল্ড ওয়াশিংটন। বলল, ‘আহমদ মুসা আমারও ¯েœহের পাত্র। কিন্তু স্যার, আহমদ মুসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এবার বিপদে ফেলল।’
হাসল প্রেসিডেন্ট। ‘মি. রোনাল্ড ওয়াশিংটন আপনি ঠিক বলেছেন। তবে তা ঠিক এই অর্থে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এখন একটা কৈফিয়ত বা ব্যাখ্যা দিতে হবে। কিন্তু আরেক দিক থেকে এই আবিষ্কার মুসলমানদের রাহুমুক্তি ঘটাবার সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও কলংক মোচন করল। আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু লোক ছাড়া দুনিয়ার অবশিষ্ট মানুষ বিশ্বাস করতো টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনা খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘটিয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যে। আর এটাও ঠিক যে মার্কিন সরকার তখন এই ঘটনার সুযোগ গ্রহণও করেছিল। তার বড় কয়েকটি একতরফা সামরিক অভিযান-এর সাক্ষী হয়ে আছে। এইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সন্ত্রাসকে ইস্যু বানিয়েছিল, সে সন্ত্রাসের দায়েই সেও অভিযুক্ত হয়েছিল। বিশ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই কলংকের বোঝা বহন করে চলেছে। আজ টাওয়ার ধ্বংসের রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন জাতি অন্যের যাত্রা ভংগের সেদিনের দায় থেকে মুক্ত না হলেও ‘নিজের নাক কেটে’ অন্যের ‘যাত্রা ভংগ’ করতে গিয়েছিল, এই জঘন্য ধরনের দ্বৈত অপরাধের দায় থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু থাক এসব কথা। আমরা আসল কথায় ফিরে আসি। বলছিলাম প্রেস ব্রিফিং-এর কথা। কি বলব সেটা ঠিক হওয়া দরকার।’
‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমরা প্রেস ব্রিফিং করব, না প্রেস ষ্টেটমেন্ট করব? ষ্টেটমেন্ট রিলিজ করলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হয় না।’ বলল সেক্রেটারী অব ষ্টেট বব.এইচ ব্রুস।
‘সাংবাদিকদের এড়িয়ে লাভ নেই মি. বব। সত্য যেটা সেটাই আমরা বলব। জনগণের কাছে অবশ্যই আমাদের স্বচ্ছ থাকতে হবে। তাছাড়া দেশ, সরকার কোনটার জন্যেই আমি কোন সমস্যা দেখছি না।’ বলল প্রেসিডেন্ট।
‘আমিও তাই মনে করছি মি. প্রেসিডেন্ট।’ বলল সেক্রেটারী অব ডিফেন্স সান্ড্রা ষ্টোন।
প্রেসিডেন্ট নিরাপত্তা প্রধান এলিজা উড, সি.আই.এ প্রধান এডমিরাল ম্যাক আর্থার এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রধান রোনাল্ড ওয়াশিংটনের দিকে তাকাল।
তারা একে একে বলল, ‘প্রেসিডেন্টের কথাই ঠিক। সত্যের মুখোমুখি আমাদের দাঁড়ানো উচিত। যতটুকু ভুল ততটুকুকে ভুলই বলতে হবে। এতে আমাদের জাতিগত মর্যাদা আরও সমুন্নতই হবে। গোটা পৃথিবী এই মুহূর্তে উন্মুখ হয়ে আছে আমরা কি বলি তা শোনার জন্যে। আমরা এখন যা বলব, তা শুধু আমাদের নয় গোটা আমেরিকার কথা হয়ে দাঁড়াবে। ব্যক্তিগতভাবে আমরা মিথ্যা বলতেও পারি, সত্য গোপন করতে পারি, কিন্তু জাতির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে আমরা তা পারি না। প্রমাণ হচ্ছে আমরা নিজেদের নাক-কেটে অন্যদের যাত্রা ভংগ করিনি। সুযোগ গ্রহণের উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা নিজেরা টুইন টাওয়ার ধ্বংস করিনি। কিন্তু এভাবে আমরা নিজেরা নিজেদের নাক না কেটেও পৃথিবীর অনেক দেশ, অনেক মানুষদের আমরা যাত্রা ভংগ করেছি। সেটা আজ উন্মুখ বিশ্ববাসীর কাছে অকপটে আমাদের স্বীকার করা উচিত। এতে দু’চার জন অখুশি হলেও আমাদের ফাউন্ডার ফাদারসরা খুশি হবেন।’
‘সবাইকে ধন্যবাদ। আমি মানে প্রেসিডেন্ট নিজেই আজ প্রেসিডেন্ট নিজেই আজ প্রেস ব্রিফিং করবেন। মিস এলিজা উড আপনি সবার সাথে পরামর্শ করে একটা ব্রিফিং দাঁড় করান। ঠিক দশটায় হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ডাকা হোক।’ একটু থামল প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন। তাকাল জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে। বলল, ‘মি. জর্জ আপনি নিশ্চয় জানেন আহমদ মুসা এখন কোথায়। আপনি নিজে তার কাছে যাবেন। তাঁকে আমার দাওয়াত দেবেন। আজ তাঁর পছন্দমত যে কোন সময় আমি তাঁর সাথে কথা বলতে চাই।’ আবার একটু থামল প্রেসিডেন্ট। কথা বলল আবার জর্জ আব্রাহামকে লক্ষ্য করেই, ‘প্রেসিডেন্টের প্রেস ব্রিফিং-এর পর ড. হাইম হাইকেল ও মি. মরিস মরগ্যান-এর সাংবাদিক সম্মেলন হবে। সে ব্যবস্থাও করতে হবে।’ বলল প্রেসিডেন্ট হ্যারিসন।
‘ইয়েস মি. প্রেসিডেন্ট। আপনার নির্দেশ অনুসারে কাজ হবে।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।
‘ধন্যবাদ জর্জ। সবাইকে ধন্যবাদ।’ বলে প্রেসিডেন্ট উঠে দাঁড়াল।
উঠে দাঁড়াল সবাই।

জেফারসন হাউজ।
দুতলার বিশাল লাউঞ্জে কামাল সুলাইমান, ড. হাইম হাইকেল বসে। তাদের সামনের টি টেবিলে ফ্রান্সের দৈনিক লা-মন্ডে পড়ে আছে। আর তাদের সামনে কয়েকটি টেলিভিশন সেট। বিভিন্ন টিভি স্ক্রীনে বিভিন্ন চ্যানেল। কিন্তু তাদের সামনে তাদের বিষয়টাই ঃ ধ্বংস টাওয়ারের অন্তরাল থেকে সত্য উদ্ধার, ষড়যন্ত্রে মুখোশ উন্মোচন।
সবারই দৃষ্টি টিভি স্ক্রীনের দিকে।
‘কামাল সুলাইমান, এখনও আমার স্বপ্ন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা। এমন কিছু ঘটেছে! ঘটতে পারে! খবরের এমন ভয়াবহ বোমা কোথাও কোন দিন ফাটেনি।’ বলল ড. হাইম হাইকেল।
‘মিথ্যার প্রাসাদ যত বড় ছিল, যত দৃঢ় ছিল, বোমাটি ততখানিই শক্তিশালী হয়েছে। যাতে মিথ্যার প্রাসাদ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।’ কামাল সুলাইমান বলল।
বুমেদীন বিল্লাহ লাউঞ্জে প্রবেশ করল। তার মুখ বিষণœ। একটা সোফায় বসতে বসতে বলল, ‘গত রাতে আহমদ মুসা ভাই যে কোথায় গেলেন, এখনও কিছুই জানালেন না তিনি। এদিকে তার নামে তিনটা ই-মেইল এসেছে।’ থামল বুমেদীন বিল্লাহ।
কামাল সুলাইমান ও ড. হাইম হাইকেল দুজনেরই মুখে নেমে এল দুশ্চিন্তার ছাপ। কামাল সুলাইমান বলল, ‘গত রাতে উনি আজর ওয়াইজম্যানের পিছু নেবার জন্যে বেরিয়েছেন। ব্যাপারটা উদ্বেগেরই বটে। কিন্তু আল্লাহ ভরসা। বর্তমান মিশনের শেষ কাজটি করার জন্যে তিনি বেরিয়েছেন। আল্লাহ তাকে সফল করবেন।’
‘আমিন।’ বলল ড. হাইম হাইকেল এবং বুমেদীন বিল্লাহ দুজনেই।
‘কোত্থেকে ই-মেইল এসেছে? কি ই-মেইল?’ জিজ্ঞাসা ড. হাইম হাইকেলের।
‘তিনটা ই-মেইল এসেছে। একটা মক্কার রাবেতা আলম আল-ইসলামী থেকে। আর অবশিষ্ট দুটি ই-মেইল এসেছে জোসেফাইন ভাবীর কাছ থেকে। এ দুটি ই-মেইলই জরুরি।’ কামাল সুলাইমান বলল।
‘জরুরি বিষয়টা কি? আপনারা পড়েছেন তো?’ বলল ড. হাইম হাইকেল।
‘জি না। ভাইয়ার পার্সোনাল ই-মেইল আমরা দেখি না।’ বলল বুমেদীন বিল্লাহ।
কথা শেষ করেই চিৎকার করে উঠল বুমেদীন বিল্লাহ, ‘ভাইয়া আসছেন।’
সবাই তাকাল। দেখল, আহমদ মুসা সিঁড়ি দিয়ে দুতলায় উঠে আসছে। সিঁড়ি মুখেই কামাল সুলাইমান ও বুমেদীন বিল্লাহ তাকে জড়িয়ে ধরল।
ড. হাইম হাইকেলও উঠে দাঁড়িয়েছিল। বলল, ‘মোবারকবাদ আহমদ মুসা। মানুষ স্বপ্নেও যা ভাবেনি, তা আজ বাস্তব হলো।’
‘আজকের হিরো তো বিল্লাহ। তার সাংবাদিকতার ‘গোল্ডেন ডে’ আজ।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আর এই গোল্ডেন ডে’র মেকার তো আপনি।’ বলল বিল্লাহ প্রতিবাদের সুরে।
‘না। আজকের গোল্ডেন ডে’র মেকার আমাদের স্যার ড. হাইম হাইকেল। তাঁর দেখানো পথে আমরা হেঁটেছি মাত্র।’ আহমদ মুসা বলল।
‘শক্তি, বুদ্ধি কোন কিছুতেই আপনাদের সাথে পারব না। বিনয়েও পারব কি করে? যাক, আজকের দিনের মেকার আমরা কেউ নই, আল্লাহ।’ বলল ড. হাইম হাইকেল।
‘আলহামদুলিল্লাহ।’ সবাই এক সাথে বলে উঠল।
আহমদ মুসা বসতে যাচ্ছিল সোফায়। কামাল সুলাইমান বাধা দিয়ে বলল, ‘ভাইয়া বসবেন না, ভাবীর জরুরি ই-মেইল এসেছে। আগে সেটা দেখুন।’
আহমদ মুসা কোন কথা না বলে ছুটল তার ঘরের দিকে।
আহমদ মুসার মনে তখন নানা কথার ভীড়। কি খবর দিয়েছে ডোনা? সে ভাল আছে তো? গত কদিন ধরে সে একটা খবরের জন্যে উদগ্রীব, সে খবর এল কি?
দ্রুত আহমদ মুসা কম্পিউটার খুলল। ওপেন করল মেইল বক্স।
পরপর দুটি ই-মেইল। পড়ল।
প্রথমটি পড়েই ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলে সিজদায় গেল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসার পেছনে কামাল সুলাইমানরাও আহমদ মুসার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছিল।
তারা আহমদ মুসাকে সিজদায় যেতে দেখল। সিজদা থেকে উঠলে কামাল সুলাইমান বলল, ‘কি খবর ভাইয়া?’
ঘুরে দাঁড়াল আহমদ মুসা। তার মুখে হাসি, চোখে পানি। বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সুখবর। তোমাদের ভাতিজা হয়েছে।’
কামাল সুলাইমান ও বুমেদীন বিল্লাহ ছুটে গিয়ে আনন্দে জড়িয়ে ধরল আহমদ মুসাকে। কামাল সুলাইমান বলল, ‘আজ খুশির উপর মহাখুশির সংবাদ। ভাতিজার একটা ভাল নাম চাই ভাইয়া। নিশ্চয় ঠিক করেছেন?’
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘এ প্রসংগ একটু পরে। তোমার ভাবী দ্বিতীয় ই-মেইলটায় কি লিখেছে পড়ে নেই।’ বলে আহমদ মুসা আবার কম্পিউটারে বসল।
কামাল সুলাইমানরা ঘরের সোফায় গিয়ে বসল।
একটুপর আহমদ মুসা কামাল সুলাইমানদের দিকে ফিরে তাকাল। হেসে বলল, ‘নাম করণে একটু জটিলতা আছে।’ বলে ঘড়ির দিকে তাকাল। বলল, ‘এখন ১২টা বাজতে যাচ্ছে। ঠিক ১২ টা ১ মিনিটে তোমাদের ভাবী ই-মেইলে একটা নাম সাজেষ্ট করবে। আর ঠিক ১২ টা ১ মিনিটে আমিও একটা নাম সাজেষ্ট করব। দুটো নামের মধ্যে লটারি করে একটা নাম ঠিক করা হবে।’
‘ই-মেইল কেন ভাইয়া। টেলিফোনে কথা বলুন।’ বুমেদীন বিল্লাহ বলল।
‘না তা হবে না। কেউ তার নাম আগে বলতে রাজি নয়। কারণ আশংকা হলো, পরে যে বলবে, সে তার নাম আর নাও বলতে পারে।’
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আহমদ মুসা আবার বসল কম্পিউটারে।
রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে কামাল সুলাইমানরা। একটু পরপর ঘড়ি দেখছে।
তাদের অপেক্ষার ইতি ঘটিয়ে আহমদ মুসা ঘুরে বসল তাদের দিকে। তার মুখ ভরা হাসি। বলল, ‘মিরাকল।’
‘মিরাকল! কি ঘটেছে ভাইয়া।’ বলল বুমেদীন বিল্লাহ।
‘মিরাকল মানে, দুপ্রান্ত থেকে দুজনের চয়েস এক। একই সময়ে দুজনের ই-মেইলে একই নাম সাজেষ্ট করা হয়েছে। দুপক্ষের সাজেষ্ট করা সে নাম ‘আহমদ আবদুল্লাহ।’ বলল আহমদ মুসা। ‘আহমদ আবদুল্লাহ?’ বলে দুজনে এক সাথে চিৎকার করে উঠল।
এ সময় ঘরে ঢুকল ড. হাইম হাইকেল। তার হাতে দুটি প্যাকেট।
‘কি ব্যাপার এত চিৎকার কেন? ‘আহমদ আবদুল্লাহ’ কে?’ বলল ড. হাইম হাইকেল।
দুজনে এক সাথে বলে উঠল, ‘আমাদের নবজাত ভাতিজা।’
‘ও! নামকরণ হয়ে গেছে? তাহলে মিষ্টিমুখে তো দেরি করা যায় না?’ বলে ড. হাইম হাইকেল কাগজের প্লেটে একটা খেজুর ও একটা করে মিষ্টি সবাইকে বিতরণ করল। বলল, ‘হতাশ হবার কারণ নেই, এটা উপস্থিত পরে আরও হবে।’
‘নিউইয়র্কে খেজুর কোথায় পাওয়া গেল এ সময়?’ বলল কামাল সুলাইমান।
‘শুধু খেজুর কেন, নিউইয়র্কে গোটা দুনিয়া পাওয়া যায়।’ ড. হাইম হাইকেল বলল।
তারপর পকেট থেকে দুপিস ক্যান্ডি বের করে কামাল সুলাইমান ও বুমেদীন বিল্লাহকে দিয়ে বলল, ‘ভাতিজার জিনিস চাচারা খেতে পারে, বাপকে দেয়া যাবে না।’
হেসে উঠল সবাই।
‘ভাইয়া, রাবেতা থেকে একটা ই-মেইল এসেছিল, ওটা কি দেখেছেন?’ বলল বুমেদীন বিল্লাহ।
‘দেখেছি, কিন্তু পড়িনি। প্রিন্ট নিয়েছি। এদিকের সব কাজ শেষ হলে পড়ব।’ আহমদ মুসা বলল মুখে একটু হাসি টেনে।
‘তার মানে ভাইয়া, নতুন কোন মিশন………।’ কামাল সুলাইমান বাক্য শেষ না করেই থেমে গেল।
‘থাক এ কথা এখন। বললাম তো ও প্রসংগটা পরে। আমি এখন একটা জরুরি টেলিফোন করব।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ঠিক আছে ভাইয়া। আমরা পরে আসছি। ভাবীকে আমাদের সালাম ও মোবারকবাদ, আর আহমদ আবদুল্লাহর জন্যে দোয়া দেবেন।’
ঘর থেকে বেরিয়ে গেল কামাল সুলাইমানরা সকলে।
আহমদ মুসা দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিতেই রিং হতে লাগল মোবাইলে।
আহমদ মুসা দেখল ডোনা জোসেফাইনের টেলিফোন।
‘আস্সালামু আলাইকুম। মোবারকবাদ জোসেফাইন। কেমন আছ তুমি? কেমন আছ আবদুল্লাহ।’
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমি ও বাচ্চা ভাল, আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে কনগ্রাচুলেশন।’ ওপ্রান্ত থেকে বলল ডোনা জোসেফাইন।
‘আমাকে মোবারকবাদ কেন? অসীম খুশির এক ভান্ডার তুমি উপহার দিয়েছ, তাই হাজারো মোবারকবাদ তোমার প্রাপ্য।’
‘আমাদের এই খুশি তোমার আমার এবং আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের জন্যেই শুধু, কিন্তু তুমি যে আনন্দ সংবাদ সৃষ্টি করেছ, যে আনন্দ সংবাদ আজ ভোর থেকে হাজারো সংবাদপত্র ও হাজারো টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে পৃথিবীর পৃথিবীর ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। সে আনন্দ শুধু পৃথিবীর দেড়শ কোটি মুসলমানের নয়, পৃথিবীর সব শান্তি ও সুবিচারকামী মানুষের। তোমাকে লাখো মোবারকবাদ দিলেও তা কম হবে।’
‘জোসেফাইন, আমরা এখন আমাদের কথা বলছি। বাইরের কথা থাক না।’
‘ঠিক বলেছ। কিন্তু ঘর বাহির নিয়েই তো আমাদের জীবন এবং আমাদের আনন্দও। জান, আজ রাতে হাসপাতালের বেডে শুয়ে বারবার তোমাকে মোবাইল করেছি, সকালেও। কিন্তু তোমাকে পাইনি। এক সময় অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। বুক ভরে গিয়েছিল ক্ষোভে। পরক্ষণেই যখন মনে হলো, শান্তির শয্যা ছেড়ে তুমি কাঁটা বিছানো পথে ঘুরে বেড়াচ্ছ, অবিরাম ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছ তোমার জন্যে নয়, আল্লাহর জন্যে, আল্লাহর বান্দাদের জন্যে, তখন হৃদয়ের সকল ক্ষোভ আনন্দের অশ্রু হয়ে বের হয়ে এল দুচোখ দিয়ে। জান, দুনিয়ার কোন কষ্টই এ আনন্দের চেয় বড় নয়। আমাদের ঘর বাহির আলাদা নয কোনো ভাবেই।’
‘ধন্যবাদ জোসেফাইন। তোমার কাছ থেকে এ শক্তি না পেলে আমি এত কাজ করতে পারতাম না।’
‘গতরাত এবং সকালে তুমি কোথায় ছিলে। মোবাইল সাথে নাওনি কেন?’
‘আমি আজর ওয়াইজম্যানের পিছু নিয়েছিলাম। মোবাইল বন্ধ রেখেছিলাম। সকালে তাকে ধরা গেছে। তাকে ধরার পর আমাদের সাফল্য পূর্ণ হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। তুমি এখন কোথায়? বাইরে কোথাও, না জেফারসন হাউজে?’
‘জেফারসন হাউজে।’
‘আমাদের সোনামনির খবর সারাকে দিয়েছি। ও এখন ইস্তাম্বুলে।’
‘সারাকে কেমন করে পেলে?’
‘তুমি যখন তার টেলিফোন নাম্বার দিতে পারলে না, তখন ভার্জিনিয়াতে ওঁর আম্মার কাছ থেকে টেলিফোন নাম্বার নিয়েছিলাম।’
‘জোসেফাইন, আবদুল্লাহর কথা যে কিছু বলছ না! বল সে কেমন হয়েছে। আজই ই-মেইলে ওর একটা ছবি পাঠাও!’
‘কেমন আছে বলব না, ছবিও পাঠাব না।’ বলে হেসে উঠল ডোনা জোসেফাইন।
‘আমি তো আসছি। অতএব এই কষ্ট না দিয়ে কিছু বল এবং ছবি পাঠাও।’
‘আমি বলব না। কারণ তার বর্ণনা দেবার মত ভাষা আমার জানা নেই। ছবি পাঠাব না, কারণ ছবি কখনই আসল হয় না।’
‘ধন্যবাদ। তোমার যুক্তি মোক্ষম। দুধের সাধ ঘোলে মিটানো ঠিক নয়। জান্নাত থেকে আসা সোনার টুকরাকে প্রথম সরেজমিনেই স্বাগত জানানো উচিত। আমি আসছি।’
‘তুমি কষ্ট পাচ্ছ। শোন, দুধের সাথে যদি সুন্দর অনুপাতে তরল সোনা মেশাও, তাহলে কেমন রং হবে সেটা সামনে রেখে কল্পনা কর আবদুল্লাহর রং-এর কথা। আর তোমার শিশু চেহারাকে তো তুমি দেখনি, দেখলে বলতাম সে এক শিশু আহমদ মুসা। তবে আব্বা-আম্মা বলেন, ‘ওঁর মুখ আমার মতো, আর চোখ-চুল কপাল তোমার……..।’
ডোনা জোসেফাইন কথা শেষ করতে পারল না। তাকে বাধা দিয়ে আহমদ মুসা বলে উঠল, ‘আর বলতে হবে না, আবদুল্লাহর একটি চবি আমি এঁকে ফেলেছি জোসেফাইন।’
‘তোমার মধ্যে এ পরিবর্তন কেন?’ হঠাৎ জিজ্ঞাসা জোসেফাইনের।
‘কি পরিবর্তন?’
‘আমাকে কখনও ‘জোসেফাইন’ ডাকতে না, ‘ডোনা’ বলতে।
‘ডোনার আসন থেকে তুমি এখন অনেক উঁচুতে উঠেছ। পূর্ণ মানুষের এক মহিয়ান-গরিয়ান আসনে এখন তুমি। ছোটবেলার ছোট্ট ডাক নাম ‘ডোনা’র মধ্যে আমার মনে হচ্ছে তোমার এই পরিচয় সার্থক হয়ে উঠছে না। খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে ‘জোসেফাইন’ নামে ডাকতে। এই নামেই যেন তুমি আমার কাছে পূর্ণ হয়ে উঠেছো।’ বলল আহমদ মুসা। আবেগে ভারী হয়ে উঠেছে তার কণ্ঠ।
‘ধন্যবাদ।’ বলে একটু থামল জোসেফাইন। তারপর ধীর কণ্ঠে বলল, ‘তুমি অনেক ভাবছ আমাকে নিয়ে। অতদূর থেকে এমন ঘনিষ্ঠভাবে ভাবতে নেই। কষ্ট তাতে বাড়ে। এখন বল ওদিকের কাজ শেষ কিনা? কবে আসছ?’ আবেগ-জড়িত ভারী কণ্ঠ জোসেফাইনেরও।
‘এখানে আমার কাজ শেষ। এখন যা করণীয় তা করবে মার্কিন সরকার। তবে যাওয়ার দিন ঠিক করিনি। সবার সাথে আলোচনা করে দেখি। জানাব তোমাকে। আব্বা আম্মাসহ ওদিকে সবাই কেমন?’
‘ভাল আছেন। জান, মসজিদে নববীর ইমাম সাহেব এসেছিরেন আহমদ আবদুল্লাহকে দেখতে। তিনি কি উপহার দিয়েছেন জান? রূপার ফ্রেমে কাঁচের আধারে রাখা রূপোর প্লেটে খোদিত সোনা বিছানো ইসলামী বিশ্বের একটা মানচিত্র। আহমদ আবদুল্লাহর পাওয়া এটাই প্রথম গিফট।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। আব্বার মাধ্যমে ইমাম সাহেবের কাছে আমার সালাম পৌছাবে।’ আহমদ মুসা বলল।
এ সময় দরজায় এসে দাঁড়াল কামাল সুলাইমান। তার হাতে মোবাইল। ইশারায় সে আহমদ মুসাকে জানাল তার টেলিফোন এসেছে। কামাল সুলাইমানের মোবাইলে।
‘জোসেফাইন একটু হোল্ড কর। সম্ভবত আমার টেলিফোন এসেছে। কার টেলিফোন জেনে নেই।’ বলে মোবাইলটা মুখ থেকে নামিয়ে বলল, ‘কার টেলিফোন কামাল সুলাইমান?’
‘এফ.বি.আই প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসন। কয়েকবার আপনার টেলিফোনে চেষ্টা করেছে। না পেয়ে আমাকে টেলিফোন করেছে। কি একটা জরুরি বিষয়।’ বলল কামাল সুলাইমান।
আহমদ মুসা তার মোবাইল তুলে নিল। কিছু বলার জন্যে মুখ খুলেছিল। কিন্তু তার আগেই ওপার থেকে ডোনা জোসেফাইন বলল, ‘শুনেছি আমি, মি. জর্জ আব্রাহাম জনসন তোমার জন্যে টেলিফোনে অপেক্ষা করছে! এখন রাখছি। পরে টেলিফোন করব। আস্সালামু আলাইকুম।’
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ধন্যবাদ জোসেফাইন।’
আহমদ মুসা তাড়াতাড়ি মোবাইলটা রেখে কামাল সুলাইমানের মোবাইল হাতে নিল।
আহমদ মুসার কণ্ঠ ওপার থেকে শুনতে পেয়েই জর্জ আব্রাহাম জনসন আহমদ মুসাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল, ‘আসসালামু আলাইকুম। আহমদ মুসা তোমাকে প্রেসিডেন্টের তরফ থেকে এবং আমার তরফ থেকে মোবারকবাদ। তুমি অসাধ্য সাধন করেছো। তোমার জন্যে আমার গর্ব হচ্ছে আহমদ মুসা।’
‘ধন্যবাদ জনাব।’ বলল আহমদ মুসা।
‘অল্পক্ষণের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নিজে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন টাওয়ার ধ্বংসের প্রসঙ্গ নিয়ে। আর ড. হাইম হাইকেল ও মি. মরিস মরগ্যানের সাথে আমি কথা বলেছি। তারা নিউইয়র্কে আজ একটি সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলতে রাজি হয়েছেন। আমাদের লোকেরা সব ব্যবস্থা করবে। আমরা চাই, তুমি তাদের একটু গাইড করো।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।
‘ধন্যবাদ। খুব ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। ড. হাইকেল এবং মরিস মরগ্যানের সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা খুব জরুরি। আমি ওঁদের সাথে অবশ্যই কথা বলব।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ধন্যবাদ আহমদ মুসা। প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তোমার জন্যে একটা মেসেজ আছে।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।
‘কি মেসেজ?’
‘তিনি আজ তোমার সাথে কথা বলতে চান। তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনের পর যে কোন সময়ে। বিমান বাহিনীর একটা হেলিকপ্টার তোমাকে নিয়ে আসবে। কখন আসতে পারছ, সময়টা আমাকে দাও।’
‘প্রেসিডেন্ট আমাকে ডেকেছেন, আমি কৃতজ্ঞ। তবে আমার গাড়িতে যাব, সামরিক হেলিকপ্টারে নয়। বাদ মাগরিব সাক্ষাতের সময় নির্দিষ্ট করলে ভাল হয়ে জনাব।’
‘হেলিকপ্টারে আপত্তি কেন? দ্রুত আসার জন্যেই এই ব্যবস্থা।’
‘আমি সরকারের কোন মেহমান নই, কিংবা ‘আসামী’ও নই। সরকারি বা সামরিক হেলিকপ্টার আমাকে দেয়া হবে কেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘বুঝেছি তুমি সরকারকে সম্মানিত হবার সুযোগ দিতে চাচ্ছ না। ঠিক আছে, তোমার জন্যে প্রাইভেট হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করছি।’
‘আপনি আপনার বক্তব্যের প্রথম অংশকে যদি সত্যিই ‘মিন’ করে থাকেন, তাহলে সামরিক হেলিকপ্টারেই আমাকে যেতে হবে।’ বলল আহমদ মুসা।
হেসে উঠল জর্জ আব্রাহাম জনসন। বলল, ‘আমি তা ‘মিন’ করিনি আহমদ মুসা। একটু রসিকতা করলাম। তোমার বেসরকারি হেলিকপ্টারে আসাই সব দিক থেকে ভাল হবে।’
‘ধন্যবাদ। তাহলে সময়টা বাদ মাগরিব মানে সাড়ে ছটার দিকে হলেই ভাল হয়।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ধন্যবাদ আহমদ মুসা।’ তখনই তোমার সাথে দেখা হচ্ছে ইনশাআল্লাহ। এখনকার মত শেষ করছি। বাই।’
‘ধন্যবাদ জনাব। বাই।’ বলে মোবাইল রেখে দিল আহমদ মুসা।
ড. হাইম হাইকেল এসে দাঁড়িয়েছিল সেখানে।
আহমদ মুসা তাকে বলল, ‘স্যার আপনি ও মরিস মরগ্যানের সাথে আমার কিছু কথা বলা দরকার। আসুন আমরা বসি।’
‘আমিও সেটাই আশা করছি। কিন্তু তুমি উপস্থিত না থাকলে আমাকে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন হবে না।’
আমি নিউইয়র্কে থাকলেও আপনার সাথে সাংবাদিক সম্মেলনে থাকতে পারবো না। তার দরকারও হবে না। যা প্রয়োজন আমরা এখনি আলোচনা করে নিতে পারি।’
বলে আহমদ মুসা এগুলো সোফার দিকে বসার জন্যে। তার সাথে এগুলো সকলেই।

পরবর্তী বই
কালাপানির আন্দামানে

Top