৩৯. ধ্বংস টাওয়ারের নীচে

চ্যাপ্টার

কামাল সুলাইমানের গুলীবিদ্ধ হাতের ক্ষত পরিষ্কার করছিল আহমদ ইব্রাহিম। তাকে সহাযোগিতা করছিল আহমদ ইব্রাহিমের স্ত্রী ডা. আয়েশা আহমদ।
কামাল সুলাইমানের মোবাইলটা বেজে উঠল।
‘আপনি টেলিফোন রিসিভ করবেন মি. কামাল সুলাইমান?’ জিজ্ঞাসা করল ডা. আয়েশা আহমদ কামাল সুলাইমানকে।
‘একটাই টেলিফোন আসবে পারে এবং সেটা খুবই জরুরি। দিন দয়া করে মোবাইলটা।’ বলল কামাল সুলাইমান।
ডা. আয়েশা আহমদ মোবাইলটা কামাল সুলাইমানের হাতে দিল।
মোবাইল স্ক্রীণে একবার নজর বুলিয়ে মুখের কাছে তুলে নিয়ে বলল, ‘জি ভাইয়া, আমি কোমার্ড সুলিভান।’
‘কেমন আছ? খবর কি? তোমার গলা ভারী কেন? গলায় কম্পন কেন?’ ওপার থেকে বিস্মিত কণ্ঠ আহমদ মুসার।
‘সব খবর ভাল। কিন্তু আমি সামান্য আহত ভাইয়া।’
‘আহত? কি হয়েছে?’ উদ্বেগ আহমদ মুসার কণ্ঠে।
‘বাম বাহুতে গুলী লেগেছে। তেমন সিরিয়াস নয়। গুলীটা বেরিয়ে গেছে।’
‘গুলী? তাঁর মানে তুমি শত্রুর ‘দূর্বলতা’ ও ‘ফাঁক’-এর সন্ধানে বেরিয়েছিলে? কিন্তু তোমাকে এমন ঝুঁকি নিতে বলিনি। শেষে তো বলেছিলাম, ওদের খবর রাখ।’
‘ভাইয়া আমি খুশি। আজ মরে গেলেও আমার আত্মা তৃপ্তি পেতো। তিনটি ডকুমেন্টই আমি হাত করতে পেরেছি।’ বলল কামাল সুলাইমান।
‘থ্যাংকস গড। তুমি এখন কোথায়?’
‘ফেরার পথে এক শুভাকাক্সিক্ষর বাড়িতে। ওঁরা আমার চিকিৎসা করছেন। আমাদের এক ভাই-বোন। বলা যায় আল্লাহ ওদের জুটিয়ে দিয়েছেন।’
‘থ্যাংকস গড। আমার শুভেচ্ছা দিও।’
‘ভাইয়া ওদিকের খবর কি?’
‘বলছি। কিন্তু আগে বল রিপোর্টে কি দেখলে? দেখেছো তো?’
‘দেখেছি। দারুণভাবে পজিটিভ।’
‘থ্যাংকস গড। অনেক ধন্যবাদ তাঁকে। এ দিকের খবর খুব ভাল। গণকবর খোঁড়া হয়েছে। ঠিক ১৪টি কংকালই সেখানে পাওয়া গেছে। দাঁত ও দেহাবশেষ পরীক্ষার জন্যে শিকাগো পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গণকবর থেকে আংটি, ঘড়ি ও কয়েনের এমন কিছু জিনিস পাওয়া গেছে, যা থেকে গণকবরের লোকদের জাতীয় পরিচিত নির্ধারণ করা যাচ্ছে।’
‘ভাইয়া, অস্বীকার করার কোন ফাঁক পাবে না তো তারা?’
‘তেমন কোন সুযোগ তাদের জন্যে রাখা হয়নি।’ আহমদ মুসা বলল।
‘থ্যাংকস গড। মাত্র রিমোর্ট কনট্রোলের বিষয়টাই এখন বাকি থাকল।’
‘হ্যাঁ। রিপোর্টটা পেলেই আমি ওদিকে মনোযোগ দেব।’ কথা শেষ করেই আহমদ মুসা বলল, ‘এখনকার মতো রাখছি। তুমি রেষ্ট নাও। পরে কথা বলব। বাই।’
‘বাই ভাইয়া।’
কামাল সুলাইমান অফ করে রেখে দিল মোবাইলটা। বলল আহমদ ইব্রাহিমের দিকে চেয়ে, ‘স্যরি।’
‘স্যরি’র প্রশ্ন নেই ভাইয়া। বরং আপনারই কষ্ট হলো। কিন্তু আপনাকে দারুণ খুশি দেখাচ্ছে।’ বলল আহমদ ইব্রাহিম।
‘সত্যিই আমরা আজ খুশি মি. আহমদ ইব্রাহিম। বললাম না, গুলীবিদ্ধ কেন আমি আজ গুলীতে মরে গেলেও আমার আত্মা তৃপ্তি পেত।’
ভ্রু কুঞ্চিত হলো আহমদ ইব্রাহিম ও তার স্ত্রী আয়েশা আহমদের। বিস্ময় তাদের চোখে-মুখে। বলল, ‘আপনি যেভাবে বললেন, তাতে আনন্দের ব্যাপারটা না শুনে তো থাকতে পারছি না। আরও জানতে ইচ্ছা করছে, গুলীবিদ্ধ হওয়ার মত ঘটনা কেন ঘটল। আপনি ক্রাইম করতে পারেন, একথা আমি বিশ্বাস করি না। তাছাড়া ভাইয়া, আপনি আমাকে তিন জায়গায় নিয়ে গেছেন, তিনটাই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান-ল্যাবরেটরি। শেষ ল্যাবরেটরি থেকে গুলীবিদ্ধ হয়ে এলেন, কিন্তু অন্য দুল্যাবরেটরি থেকেও ফেরার পর আপনার মধ্যে বেশ উত্তেজনা বা অস্থিরতা দেখেছি।’
কামাল সুলাইমান হাসল। বলল, ‘মি. আহমদ ইব্রাহিম, আপনি বলেছেন নিউইয়র্কের টুইনটাওয়ার কোন মুসলমান ধ্বংস করেনি। তাহলে কে করেছে বলে আপনি মনে করেন?’
‘যেই করুক, তারা মুসলমানদের উপর এই দায় চাপাবার জন্যেই করেছে। এই ঘটনায় কোন দিক দিয়েই মুসলমানদের কোন লাভ হয়নি। এতে আমাদের আমেরিকার কিছু ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু লাভ হয়েছে লাখোগুণ বেশি আমেরিকার এক ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর এবং তাদের মিত্র ইসরাইলের। অন্যদিকে মুসলমানদের কোনই লাভ হয়নি, কিন্তু ক্ষতি হয়েছে অবর্ণনীয়, অপূরণীয়। সুতরাং ক্রাইমের মটিভ-তত্ব অনুসারে মুসলমানরা এ কাজ করেনি। এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন মুসলমানের বিরুদ্ধেই কোন ‘হার্ড-এভিডেন্স’ দাঁড় করানো যায়নি। আর যে সংগঠনকে দায়ি করা হচ্ছে, সে নামে আদৌ কোন সংগঠন মুসলিম দুনিয়ায় মুসলমানদের পক্ষে কাজ করছে তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাদের কোন নেতাই টাওয়ার ধ্বংসের আগে বা পরে মুসলিম জনতার সামনে আসেনি, মুসলমানদের নেতা হিসাবে পরিচিতিও হয়নি। এমন কোন নেতাকে আমাদের আমেরিকা বা বাইরের কোন কোর্টে হাজিরও করা হয়নি, যাকে মুসলমানরা স্বীকৃতি দেয়। এই সংগঠনের কাজ দেখানো হচ্ছে ই-মেইল এবং অডিও-ভিডিও টেপে। এগুলো কোন দলিল নয়। যে কেউ এগুলো তৈরি করতে পারে। সুতরাং আমি মনে করি টাওয়ার ধ্বংসের দায় একটা অস্তিত্বহীন ইসলামী সংগঠনের উপর চাপিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের আসামী করা হয়েছিল।’ কথাগুলো বলল ডা. আয়েশা আহমদ তার স্বামী আহমদ ইব্রাহিমের কথা বলে ওঠার আগেই।
কামাল সুলাইমান বিস্ময়ের সাথে কথাগুলো শুনছিল। কথা শেষ হতেই বলল, ‘ধন্যবাদ বোন, কোন আমেরিকানের মুখে এত সত্য কথা এভাবে আমি শুনিনি। বুঝতে পারছি, এ কথাগুলো বহুদিন তোমার মনে জমে আছে। আজ এক সুযোগে তা বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু বোন, কারা করেছে এটাও ছিল আমার প্রশ্ন।’
‘স্যরি, ভাই সাহেব। এ ব্যাপারে অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু তার পক্ষেও কোন প্রমাণ হাজির করা হয়নি। তাই প্রমাণ ছাড়া কারও দিকে অংগুলি সংকেত করা মুষ্কিল।’ বলল ডা. আয়েশা আহমদ।
‘আমারও এই কথা ভাই সাহেব।’ ড. আয়েশা আহমদ থামতেই বলে উঠল আহমদ ইব্রাহিম।
‘একটু সুখবর দিতে পারি, প্রমাণ নিয়ে কেউ হাজির হচ্ছে।’ বলল কামাল সুলাইমান একটু হেসে।
থমকে গেল আহমদ ইব্রাহিমরা দুজনই। তারা বিস্ময়ভরা চোখে তাকাল কামাল সুলাইমানের দিকে। কথা বলে উঠল ডা. আয়েশা আহমদ, ‘ভাই সাহেব ফান করছেন না নিশ্চয়! কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিশ বছর পার হয়ে গেল, কেউ আসেনি প্রমাণ করার জন্যে। কে আর আসবে? মনে পড়ে আব্বার কথা। তিনি ‘আররাহমা’ নামক এক এনজিও’র কর্মকর্তা ছিলেন। এই এনজিও ইয়াতিম, বিধবা ও ছিন্নমূলদের সাহায্য করতো। ফিলিস্তিনের মত ভাগ্যবিড়ম্বিত এলাকা ছিল তাদের টার্গেট। টেররিষ্টদের কাছে অর্থ পাচার করা হয় এই অভিযোগে এনজিওটি বন্ধ করা হয়। আব্বাকে জেলে পুরা হয়, তা চ্যালেঞ্জ করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। বিশ বছর ধরে মিথ্যার এক জগদ্দল চেপে আছে আমেরিকার উপর। কে আসবে এই জগদ্দল পাথর সরাতে?’
হাসল কামাল সুলাইমান। বলল, ‘যিনি এই জগদ্দল সরাবেন, তিনি এতদিন আসেননি বোন। এখন তিনি এসেছেন।’
আহমদ ইব্রাহিম ও ডা. আয়েশা আহমদ দুজনেরই চোখে-মুখে বিস্ময় ও আনন্দের স্ফুরণ। বলল আহমদ ইব্রাহিম, ‘কে তিনি? আমরা কি জানতে পারি?’
‘আপনারা কি আহমদ মুসাকে চেনেন?’ বলল কামাল সুলাইমান।
‘চিনব না কেন? তার জন্যে আমরা গর্বিত। তিনি আমেরিকার অশেষ উপকার করেছেন এবং মুসলমানদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর কথা বলছেন কেন? শুনেছি, তিনি এখন আজরস আইল্যান্ডে। তাঁকে কেউ এ যুগের সিন্দাবাদ বলেন, কারো কাছে তিনি আধুনিক হাতেম তাই। কিন্তু আমার কাছে তিনি আধুনিক দুনিয়ার মুসলমানদের এক জিয়নকাঠি।’ বলল ডা. আয়েশা আহমদ।
‘সত্য উদ্ধারের দায়িত্ব তিনিই কাঁধে তুলে নিয়েছেন।’ বলল কামাল সুলাইমান।
‘আহমদ মুসা? তিনি এখন আমেরিকায়?’ এক সাথে বলে উঠল তারা দুজন।
‘হ্যাঁ, তিনি আমেরিকায়।’
দুজনের কেউ সংগে সংগে কথা বলল না।
তাদের চোখে-মুখে বিস্ময় ও আনন্দের ছাপ। একটু সময় নিয়ে বলল আহমদ ইব্রাহিম, ‘সত্যি আমেরিকানদের জন্যে এটা সুখবর। আশারও খবর এই যে, তার উপর চোখ বন্ধ করে আস্থা রাখা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ২০ বছর আগের জটিল ঘটনার প্রমাণ কি করে সম্ভব?’
হাসল কামাল সুলাইমান। বলল, ‘মি. আহমদ ইব্রাহিম আমার ব্যাগে তিনটি ফাইল আছে, ওগুলো দেখ। বিজ্ঞানও তোমাদের পড়তে হয়েছে। অনেক কিছু বুঝবে তোমার।’
আহমদ ইব্রাহিম ও ডা. আয়েশা আহমদ ফাইলগুলো বের করল এবং দেখল।
একটু পর আহমদ ইব্রাহিম বলল, ‘ভাই সাহেব, তিনটি ফাইলে তিনটি ল্যাবরেটরির বিল্ডিং-ডাষ্টের ফিজিক্যাল কম্পোজিশন দেখছি। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ডাষ্টের কম্পোজিট কেমিক্যালের মধ্যে অটো ডেমোলিশন অর্গানিজম রয়েছে, যা দিয়ে বহুতল বিল্ডিংকেও ধুলায় পরিণত করে বসিয়ে দেয়া যায়।’
‘মি. আহমদ ইব্রাহিম, ধ্বংস টাওয়ারের ডাষ্ট পরীক্ষা করে ল্যাবরেটরিগুলো এই রিপোর্ট দিয়েছে।’ বলল কামাল সুলাইমান।
বিস্ময়ে হা হয়ে উঠেছে আহমদ ইব্রাহিমের মুখ। বলল, ‘তার মানে ডেমোলিশন ডিভাইস দিয়ে টুইনটাওয়ার ধ্বংস করা হয়েছে!’
‘হ্যাঁ এটাই সত্য।’ বলল কামাল সুলাইমান।
‘তাহলে অনেকে যে সন্দেহ করেছিল, সেটাই সত্য? কিন্তু এ রিপোর্ট আপনার কাছে কি করে? মানে কিভাবে এই ডাষ্ট পরীক্ষা হলো? এ রিপোর্ট সংগ্রহের জন্যে রক্তাক্ত অভিযান আপনাকে করতে হলো কেন?’ বিস্ময়-জড়িত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল ডা. আয়েশা আহমদ।
কামাল সুলাইমান এ পর্যন্ত প্রমাণ সংগ্রহের জন্যে যা করা হয়েছে, তার বিবরণ দিয়ে বলল, ‘গণকবরটিতে ঠিক ১৪ জনেরই কংকাল পাওয়া গেছে। ডাষ্ট যেমন প্রমাণ করল টাওয়ার ধ্বংস হয়েছে বিমানের আঘাতে নয়, ধ্বংস হয়েছে ডেমোলিশ ডিভাইসের মাধ্যমে তেমনি কংকালগুলোও প্রমাণ করবে কথিত বিমান হাইজ্যাকাররা বিমানে ছিল না। তাদের হত্যা করে তাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।’
বিস্ময়-বিমূঢ় ডা. আয়েশা আহমদ জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনিই কি তাহলে আহমদ মুসা?’
হাসল কামাল সুলাইমান। বলল, ‘আমি কামাল সুলাইমান। আমি তাঁর একজন নগণ্য সহকর্মী। আমি এইমাত্র যার সাথে টেলিফোনে কথা বললাম তিনি ছিলেন আহমদ মুসা।’
‘আপনাকে স্বাগত। আমরা সৌভাগ্যবান যে, আপনার দেখা এইভাবে আমরা পেলাম এবং পেলাম বিশ বছরের সেরা খবর। আজ নিশ্চিতই মনে হচ্ছে, বিশ বছর ধরে ঘুনে ধরা জগদ্দল পাথর আমাদের বুক থেকে নামবে। আল্লাহর অশেষ শোকরিয়া।’ বলল আহমদ ইব্রাহিম।
আহমদ ইব্রাহিম থামতেই ডা. আয়েশা আহমদ কামাল সুলাইমানকে লক্ষ্য করে বলল, ‘ভাই সাহেব ধ্বংস টাওয়ারের নিচে লুকানো সত্য-সন্ধানের আপনার কাহিনী শুনে অনেক দিন আগে শুনা একটা কথা মনে পড়ছে। বিষয়টা টাওয়ার ধ্বংসের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। আমার মামা মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ‘সেফ এয়ার সার্ভিস’ (SAS)-এর একজন কর্মকর্তা ছিলেন। অনেক আগে তিনি রিটায়ার করেছেন এবং তিনি অমুসলিম। অমুসলিম হলেও আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক সব সময় ঠিক ছিল, ঠিক আছে। কয়েক বছর আগে ঘরোয়া পরিবেশে আমি মামি ও মামা গল্প করছিলাম। প্রসংগক্রমে টাওয়ার ধ্বংসের কথা ওঠে। আমাকে রাগিয়ে দেবার জন্যে মামি বলেছিলেন, ‘ধ্বংস টাওয়ার সাক্ষী হয়ে আছে যে, মুসলমানরা সন্ত্রাসী। তাদের কেউ সন্ত্রাস করে, কেউ একে সমর্থন করে। দেখ, আয়েশা আজও সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী বলে না।’
সেদিন মামা আমার পক্ষ নিয়েছিলেন। পাল্টা আক্রমণ করেন তিনি মামিকে এই বলে, ‘যদি জানতে পার মুসলিম হাইজ্যাকাররা বিমান দুটো টুইনটাওয়ারে নিয়ে যায়নি, অন্যকিছু বিমান দুটিকে টুইনটাওয়ারে টেনে নিয়ে গেছে, তাহলে সন্ত্রাসের অভিযোগ কার বিরুদ্ধে করবে?’
মামি বলেছিলেন, ‘যদি’ যদি ‘যদি’ না হতো, তাহলে উত্তর দেয়ার প্রয়োজন হতো।’
মামা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে পড়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যদি প্রত্যাহার করে নিলাম। এখন বল।’
মামির ভ্রুকুঞ্চিত হয়ে উঠেছিল। বলেছিল, ‘যা বলেছ, সত্যি বলেছ?’
‘হ্যাঁ।’ মামা বলেছিলেন।
‘কিন্তু যা বলছ, তা না তুমি বিশ্বাস করতে পার, না দুনিয়া বিশ্বাস করতে পারে?’ বলেছিলেন মামি।
মামা বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারি, কিন্তু দুনিয়া বিশ্বাস করতে পারে না। দুনিয়াকে বলাও যায় না। তাই তো বলিনি।’
‘কিন্তু এমন বিশ্বাসের জন্যে নিঃসন্দেহে ভিত্তি প্রয়োজন।’ মামি বলেছিলেন।
‘সূর্য উঠতে দেখে যদি বলি সূর্য উঠছে, তা যে ধরনের সত্য, আমার কথাও সে ধরনের সত্য।’
মামি একেবারে চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। একটু পর বলেছিলেন, ‘তোমার সত্যের স্বরূপটা কি ধরনের তা আমি আঁচ করতে পারি, কিন্তু স্বরূপটা কি বলতে পারি না। আমি জিজ্ঞাসাও করব না। আর এ নিয়ে তুমি কোন আলোচনাও করো না। এমনিতেই তোমার পরিবারের একটা অংশ মুসলিশ হয়ে গেছে।’
‘বলতে চাইনি। কথাচ্ছলে এসেছে।’ বলে মামা চুপ হয়ে গিয়েছিলেন।
মামি ও মামার না জানা ও না জানানোর বিষয়ে আপোশ হয়ে গেলেও আমার ভেতর একটা জিজ্ঞাসা কিন্তু বেড়েই চলছিল। একদিন সুযোগ বুঝে মামাকে বলেছিলাম, ‘মামা একটা সত্য আপনার কাছে জানতে চাই। বলবেন?’
‘সত্য বলারই বিষয়। কিন্তু তোমার ও আমাদের জন্যে ক্ষতিকর নয় তো?’
‘না।’
‘তাহলে বলব। সত্যটা কি বল?’
আমি তাকে সেই দিনের সে আলোচনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললাম, ‘সূর্যের মত দেখা সেই সত্যটা কি মামা।’
‘কিন্তু এ সত্যের প্রকাশ তোমার ও আমাদের পরিবারের জন্যে ক্ষতিকর।’
‘ক্ষতিকর অবশ্যই যদি ক্ষতিকারীরা এটা জানতে পারে। কিন্তু ক্ষতিকারীরা জানার কোনই সুযোগ নেই মামা।’
মামা অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলেন। পরে ধীরে ধীরে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ মা, তোমাকে বলতে পারি। আমার তো বয়স হচ্ছে। আমার পরে কেউ একজন সত্যটার স্বাক্ষী থাকা প্রয়োজন।’
মামা একটু থামার পর একটা দম নিয়ে বলেছিলেন, ‘টাওয়ার ধ্বংসের ঘটনার দিন ‘সেফ এয়ার সার্ভিস’ সেন্টারের অবজারভেটরিতে রাডার স্ক্রীন মনিটরের দায়িত্ব আমার ছিল। প্রতি মুহূর্তের ছবি ও বিবরণ আমি রেকর্ড করছিলাম। এটা করতে গিয়ে আমি দেখেছিলাম আমাদের ‘গ্লোবাল হক’ নামের বিশেষ বিমান দুটি সিভিল বিমানকে রিমোর্ট কনট্রোলের মাধ্যমে পরপর টেনে নিয়ে গিয়ে টাওয়ারে আঘাত করায়।’
বলতে বলতে মামার দুচোখ ভয়ে বিস্ফোরিত হয়ে উঠেছিল। আমারও অবস্থা হয়েছিল সামনে ভূত দেখার মত।
বলেই মামা উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘মনে রেখ, শুধু জেনে রাখার জন্যেই বললাম।’
সংগে সংগেই আমি বলেছিলাম, ‘তোমার কথা তুমি সত্য প্রমাণ করবে কি করে মামা?’
‘আমি সত্য প্রমাণ করতে চাই না। সত্য প্রমাণ করার প্রয়োজনও নেই।’ বলেছিলেন মামা।
আমি নাছোড়বান্দার মত বলেছিলাম, ‘যদি কেউ সত্য প্রমাণ করতে চায়?’
‘পারবে না। সে টাওয়ারের মত ধ্বংস হয়ে যাবে। ষড়যন্ত্রের যোগ্যতায় তারা আমেরিকার দেশপ্রেমিকদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।’ কথা শেষ করেই মামা চলে গিয়েছিলেন। কোন কথা তাঁকে আর বলানো যায়নি।’
দীর্ঘ এই বিবরণ শেষ করার পর বলল ডা. আয়েশা আহমদ কামাল সুলাইমানকে লক্ষ্য করে, ‘আমার মনে হয় মামা যা দেখেছেন তা এক সাংঘাতিক প্রমাণ হতে পারে টাওয়ার ধ্বংসের অপরাধী নির্ধারণে।’
কামাল সুলাইমান গোগ্রাসে গিলছিল ডা. আয়েশা আহমদের কথা। আনন্দ ও বিস্ময়ের ঢেউ তার চোখে-মুখে।
ডা. আয়েশা আহমদ থামতেই কামাল সুলাইমান বলল, ‘বোন, আহমদ মুসা ভাই এটুকু সংগ্রহ করেছেন যে, ‘সিভিল প্লেন টুইনটাওয়ারে চালনা করার জন্যে ‘গ্লোবাল হক’ ব্যবহার করা হয়। তিনি এটা প্রমাণের জন্য ‘গ্লোবাল হক’-এর ‘উড্ডয়েরন লগ’ খুঁজছেন। কিন্তু আপনার মামার কথায় মনে হয় সূর্যের ন্যায় দেখা অর্থে তিনি ‘গ্লোবাল হক’-এর গতিপথ এবং উড্ডয়নের ফটোগ্রাফের কথা বলেছেন। আমার মতে এটা হবে সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও অকাট্য এক প্রমাণ। কিন্তু এটা পাওয়া যাবে কি করে? আপনার মামা কোথায় থাকেন?’
‘তিনি নিউইয়র্কের উপকণ্ঠে এক কাউন্ট্রিতে নিরিবিলি বাস করেন। আপনি দেখা করতে চান তার সাথে?’ বলল ডা. আয়েশা আহমদ।
‘না, এখন নয়। আহমদ মুসা ভাইকে বলতে হবে। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।’ কামাল সুলাইমান বলল।
খুশি হলো ডা. আয়েশা আহমদ। বলল, ‘মামা আহমদ মুসার একজন ভক্ত। খুব ভালো হয় তিনি যদি দেখা করেন। মামা তার কাছে না করতে পারবেন না।’
ডা. আয়েশার কথা শেষ হতেই উঠে দাঁড়াল আহমদ ইব্রাহিম। বলল, ‘থ্যাকস গড। সাংঘাতিক গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য পাওয়া গেল। আল্লাহ সাহায্য করুন একে যাতে কাজে লাগানো যায়।’
স্বগত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলে ডা. আয়েশাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘লাঞ্চের সময় কিন্তু পার হয়ে যাচ্ছে। তুমি ওদিকে লাঞ্চের ব্যবস্থা করো। আমি ভাই সাহেবকে নিয়ে আসছি।’
‘আমার কিন্তু এখনই ফেরা দরকার। অনেক কাজ পড়ে আছে।’ কামাল সুলাইমান বলল।
‘আপনাকে আটকে রাখা যাবে না ভাই সাহেব। চলুন, খেয়ে আসি।’ বলল আহমদ ইব্রাহিম।
কামাল সুলাইমান উঠল।
দুজনে এগুলো ডাইনিং-এর দিকে।

চারসিটের একটা হেলিকপ্টার দ্রুত ছুটে চলেছে ‘মাউন্ট মার্সি’র দিকে। সামনে একটাই সিট, ড্রাইভারের।
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top