৪. পামিরের আর্তনাদ

চ্যাপ্টার

জাম্বুয়াংগো বন্দর থেকে একটা রাস্তা সোজা তীরের মত এগিয়ে গেছে উত্তর দিকে। এই রাস্তা ধরে পাঁচ মাইল যাবার পর একটা উঁচু টিলার কাছে এসে দেখা যাবে রাস্তা পূর্ব দিকে বেঁকে গেছে। রাস্তাটি ছয় মাইল পূর্বে আর্মি হেড কোয়াটার্সে গিয়ে শেষ হয়েছে। আর্মি হেড কোয়াটার্স পাবার আগেই রাস্তার উত্তর পাশে একটা বিশাল বাড়ী। বাড়ীটার সামনে এর পরিচয় সূচক কোন সাইনবোর্ড নেই। বাড়ীর দেয়ালে অনেক উঁচুতে পিতলের প্লেটে খোদাই করা অক্ষরে লেখা আছে, ‘ফিলিপিন আর্মির সম্পত্তি’। বাড়ীর চারদিক ঘিরে উঁচু দেয়াল। সামনে বিরাট ইস্পাতের গেট। গেটের গা ঘেঁষে পূর্ব পাশে গার্ডরুম। গার্ড রুমের একটা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। চব্বিশ ঘন্টাই এখান থেকে দু’টো সন্ধানী চোখ রাস্তার ওপরে নিবদ্ধ থাকে। একটু লক্ষ্য করলে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের ফুটো দিয়ে মেশিন গানের তেল চকচকে মাথাও দেখা যাবে। গার্ড রুম থেকে গেট খোলার একটা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে। যারা বাড়ীতে ঢুকতে আসে তারা গেটের সামনে এসে এক নির্দিষ্ট নিয়মে একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দাঁড়ায় এবং এক নির্দিষ্ট তালে হর্ণ দিতে থাকে। গার্ড সব দেখে নিঃসন্দেহ হবার পর সুইচ বোর্ডের নীল বোতামটা টিপে ধরে। গেটের ভারি ইস্পাতের পাল্লা নিঃশব্দে পাশের দেয়ালে ঢুকে যায়।
জাম্বুায়াংগোর উত্তপ্ত মধ্যাহ্ন। রাস্তার ওপাশের গীর্জার পেটা ঘড়ি থেকে ১২-টা বাজার ঘন্টা ধ্বনি এইমাত্র শেষ হলো। গার্ড রুমের বেয়ারা টম বেঞ্চিতে বসে সেদিনের দৈনিকটি নিয়ে নাড়া চড়া করছিল। হঠাৎ একটা খবরের ওপর তার চোখটা যেন আঠার মতই আটকে গেল। আটের পাতার শেষ কলমে সিংগল কলমের একটা নিউজ। নিউজের হেডিং ‘দিবাও ও কোটাবাটো থেকে লোক অপসারণ’। দিবাও একটা প্রাদেশিক রাজধানী শহর, আর কোটাবাটো দক্ষিণ মিন্দানাওয়ের সামরিক ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। খবরে বলা হয়েছে, বিদ্রোহীরা দিবাও ও কোটাবাটোর বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ বিনষ্ট এবং শহর দু’টির সামরিক ঘাঁটিতে উপর্যুপরি হামলা চালানোর পর সরকার বেসামরিক সকল শ্বেতাংগ নর নারীকে সেখান থেকে সরিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বৃহত্তম নিরাপত্তা ও সামরিক প্রয়োজনেই এটা করা হচ্ছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
খবরটি পড়ে টমের ঠোঁটে একটি সূক্ষ্ম হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠল। ঝুলে পড়া গোঁফের আড়ালে থাকায় তা বাইরে থেকে দেখতে পাওয়ার মত নয়। কিন্তু চোখের ঔজ্জ্বল্যকে ভ্রুর অপর্যাপ্ত বেড়াজাল আটকে রাখতে পারলো না। এই আনন্দের ঔজ্বল্যের মধ্যে মনে হয প্রতিহিংসার আগুনও প্রচ্ছন্ন ছিল। এই ‘টম’ তো টম নয়? তার পিতৃদত্ত নাম আবু সালেহ, তার পিতা হাজী আলী ইয়াসিন কোটাবাটোর একটা মাদ্রাসায় পড়াতেন। মাদ্রাসাটি তিনিই গড়েছিলেন, তিনিই সেখানে পড়াতেন। মাদ্রাসার পাশেই ছিল তাদের বাড়ী। সেই ছোটবেলা থেকেই মাদ্রাসায় ছিল তার জন্য অবারিত দ্বার। পিতার হাতেই আবু সালেহের হাতে খড়ি হয়। প্রতিদিন পড়া শেষ হবার পর তার পিতা ছাত্রদের নিয়ে গল্পের আসর বসাতেন। সেই আসরে তিনি কত যে গল্প শোনাতেন! কিভাবে নবী মুহাম্মদ এলেন, কিভাবে তিনি মানুষকে সকল অন্যায়-অবিচার যুলুম ও অজ্ঞতা থেকে মুক্ত করলেন, কিভাবে কাদের দ্বারা ইসলাম গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল, কিভাবে কোন ভূলে শাসকের জাতি মুসলমানরা শাসিতের জাতিতে পরিণত হলো, তারপর কিভাবে পতনের অন্ধকার থেকে উঠবার প্রচেষ্ঠা শুরু হলো, ইমাম ইবনে তাইমিয়া, জামালুদ্দিন আফগানী, মুহাম্মাদ বিন আবদুল ওহাব, শাহ ওয়ালীউল্লাহ প্রমূখ কিভাবে কেমন কষ্টের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের মাঝে জাগরণের দীপ জ্বালালেন, ইত্যাকার কত গল্প তিনি করতেন। গল্প শুনতে শুনতে স্বপ্নের জগতে চলে যেত সবাই। ভাবত তারা, শীঘ্রই তারা আবার দুনিয়ায় সবার থেকে বড় হবে, সবাই তাদের হুকুম মেনে চলবে। কিন্তু হঠাৎ একদিন এই স্বপ্নের নীড়, শান্তির নীড় ভেঙে গেল। আবু সালেহের এখনও সব কথাই স্পষ্ট মনে আছে। পঁচিশ বছর আগের ঘটনা, তার বয়স দশ। সমুদ্র পথে আসা খৃস্টান শ্বেতাংগদের সশস্ত্র সন্ত্রাস চলছিল তখন চারদিকে। বন্দুকের জোরে বন্দর এলাকায় তারা একটা কলোনীও গড়ে তুলেছিল।
একদিন শুক্রবার। জুমার আযান হয়ে গেছে। আবু সালেহের পিতা হাজী ইয়াসিন মসজিদে ঢুকছেন। তিনিই মসজিদের ইমাম। এমন সময় দুটো গাড়ী এসে দাঁড়াল। গাড়ী থেকে যারা নামলো সবাই সশস্ত্র। তারা এসে হাজী ইয়াসিনকে গাড়ীতে উঠতে নির্দেশ দিল। কিন্তু তিনি নামায শেষ না করে যেতে চাইলেন না। জোর করে তাঁকে গাড়ীতে উঠিয়ে নিয়ে গেল ওরা। সেই যে হাজী ইয়াসিন গেলেন আর ফিরে এলেন না। সেদিনই রাতে মসজিদ-মাদ্রাসা সমেত আবু সালেহদের বাড়ি ঘর সব পুড়ে গেল। লুন্ঠিত হলো তাদের সব কিছু। তার বড় বোন আকলিমাকেও ওরা ছিনিয়ে নিয়ে গেল। সব হারিয়ে পথে বসল আবু সালেহরা। সেদিন ভোরেই তারা কোটাবাটো শহর ছেড়ে জংগলে পালিয়ে গেল। রোগে-শোকে মাস তিনেক পরে আবু সালেহ’র মা মারা গেলেন। আবু সালেহ এখন নির্বান্ধব- বন্ধনহীন। মাকে কবরে শায়িত করে আবু সালেহ যখন পেছনে ফিরে দাঁড়াল তখন গোটা জগতটাই তার ফাঁকা মনে হলো। চোখ ফেটে দু’গন্ড বেয়ে নেমে এল অশ্রু। হঠাৎ তার মনে পড়ল তার আব্বার কথা, আকলিমার কথা। দু’হাতে বুক চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল সে। আমি ওদের খুঁজে বের করব। তারপর সে একবার পেছনে ফিরে মায়ের কবর, আর পাশেই বাড়ি নামক পাতার ঝুপড়ির দিকে শেষ বারের মত এক নজর চেয়ে পথ ধরল কোটাবাটোর দিকে।
কোটাবাটো শহরের পথঘাট, অলিতে-গলিতে সে ঘুরে বেড়াল দিনের পর দিন। না, কোথাও তার আব্বা নেই, বোন আকলিমা নেই। সে কতদিন কত বাড়ির পেছনে, সামনের দরজায় সজল চোখে দাঁড়িয়ে থেকেছে আব্বার ডাক, বোনের গলা শোনার জন্য। চোখের পানি তার শুকিয়ে যেত, চোখ তার ক্লান্ত হয়ে পড়তো। কিন্তু তার হৃদয়ের ব্যাকুলতার ইতি ঘটত না। বন্দরের ফুটপাতে শায়িত ক্ষুধাপীড়িত জ্বরে কাতর আবু সালেহকে অজ্ঞান অবস্থায় একজন খৃস্টান ব্যবসায়ী তুলে নিয়ে গেল। সেই থেকে সে শ্বেতাংগ খৃস্টানের সার্ভেন্ট কোয়াটার্সে তার আশ্রয় হলো। নাম হলো টম। শ্বেতাংগ ব্যবসায়ী দেশে চলে যাবার সময় গার্ড রুমের এই চাকুরী জুটিয়ে দিয়ে গেছে। সে প্রায় আজ পাঁচ বছরের কথা। শুধূ জাম্বুায়াংগো নয়, গোটা মিন্দানাওয়ের শ্বেত শাসনের নার্ভ সেন্টার এই সমরিক গোয়েন্দা ভবনের একজন অতি বিশ্বস্ত কর্মচারী টম। টমের চোখে তার বড় বোন আকলিমা এবং তার আব্বার স্মৃতি আজ অনেক ব্যাপক, অনেক বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা মিন্দানাও ও সোলো দ্বীপপুঞ্জই আজ তার পিতা ও আকলিমার রূপ পরিগ্রহ করেছে। এই ভুখন্ডের দুর্ভাগা মুসলমানদের মুক্তিই তার জীবনের একমাত্র ব্রত। এই মুক্তির লক্ষ্যে টম প্রায় বছর কয়েক আগে ‘পিসিডা’য় যোগ দিয়েছে। সে উত্তর জাম্বুয়াংগোর পিসিডা ইউনিটের একজন সক্রিয় সদস্য।
‘দিবাও’ ও ‘কোটাবাটো’ থেকে সন্ত্রাসবাদী খৃস্টান বাহিনীর পিছু হটার খবর পড়ে আবু সালেহের মুখে হাসি ফুটে উঠল। খুশী মনে হিসেব করল, উত্তর মিন্দানাও থেকে ওরা বিতাড়িত হবার পথে। দক্ষিণের দিবাও এবং কোটাবাটোও ওদের এখন হাতছাড়া। এখন এ জাম্বুয়াংগোই ওদের শেষ ভরসা। কিন্তু এখানেও ওদের পায়ের তলায় মাটি নেই। শুধু হুকুমের আপেক্ষা -এক রাতেই সব খেলা সাঙ্গ হয়ে যাবে ওদের।
আবু সালেহের মাথার ওপর বেসুরো শব্দের কলিং বেল তার চিন্তাসূত্র ছিন্ন করে দিল। সে হাতের কাগজ পাশের বেঞ্চিতে ছুঁড়ে ফেলে উঠে দাঁড়াল। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখল, লালমুখো, টেকো মাথা গার্ড সাইমন তখনও মদ গিলছে। আবু সালেহ সামনে দাঁড়াতেই সে বলল, কি যে এসব রাবিশ একটু ও ভালো লাগছে না, একটুও নেশা ধরাতে পারছে না। জানিসরে টম, রাজকুমারীকে কোন ঘরে কোথায় রাখা হলো?
কোন রাজকুমারী? আবু সালেহের চোখে একরাশ জিজ্ঞাসা।
বেটা ন্যাকা! জানিস না মরো রাজকুমারী এখানে তশরীফ এনেছেন। আঃ কি সুন্দর নাম ‘শিরী’। জানিস টম, ফারসী সহিত্যের ইংরেজী অনুবাদে আমার খুর আগ্রহ। শিরী-ফরহাদের কাহিনী আমি পড়েছি। ডেভিল মুর হামসারের এ বোনটি কাহিনীর শিরীকে হার মানায়।……..
সাইমন আরো কত কি বলছিল। কিন্তু টমের মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। তার পায়ের মাটি যেন সরে যাচ্ছে, সামনের জগৎটা যেন তার সামনে ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। পিসিডার সহকারী প্রধান মুর হামসারের বোন এখানে! কেমন করে কিভাবে ওরা নিয়ে এল? এই সাংঘাতিক সময়ে কি তার করণীয়?
সাইমন তার দিকে চেয়ে বলল, ব্যাটা, তোরও নেশা ধরল নাকি? যা, এ রাবিশগুলো সরিয়ে নিয়ে যা। বলে পা দিয়ে টিপয়টিতে দিল এক ধাক্কা। টেবিল উল্টে গিয়ে মদের বোতল আর গ্লাস বিশ্রী এক শব্দ করে টুকরো টুকরো হয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। আবু সালেহ টেবিলটি ঠিক করে, কাঁচের টুকরোগুলো কুড়িয়ে মেঝেটা ভাল করে মুছে বাইরে বেরিয়ে এল। তারপর বাথরুমে গিয়ে ভালো করে হাত পরিস্কার করে অজু করে নিল। দেখল, যোহরের নামাযের সময় এসে গেছে। সে বাথরুম থেকে বেরিয়ে গার্ড রুমে প্রবেশ করল। চেয়ারে গা এলিয়ে উর্ধমুখী হয়ে কড়িকাঠ গুণতে থাকা মেজর সাইমনকে লক্ষ্য করে সে বলল, স্যার, শোবার ঘর থেকে একটু আসি।
শোবার ঘরে ঢুকে প্রথমে দরজা তারপর সবগুলো জানালা বন্ধ করে দিল। অতঃপর জায়নামায় বিছিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াল। জায়নামায সাদা একখন্ড কাপড়। জায়নামাযের সিজদা দেবার জায়গাটা তুলো দিয়ে নরম করা। যাতে কপালে সিজাদার দাগ না পড়ে সে জন্যই এই সতর্কতা। সবার সতর্ক দৃষ্টির সামনেই তাকে গোপনে নামায পড়তে হয়। অনেক সময় আসর এবং মাগরিবের নামায কাজা করতে তাকে বাধ্য হতে হয়। কিন্তু রাতের নামাযের সাথে এ কাজাগুলো সে সেরে নেয়। তার বিশ্বাস আছে, তার অসুবিধার কথা বিবেচনা করে দয়ালু আল্লাহ নিশ্চয় তাকে মাফ করে দেবেন। সবচেয়ে তার মুস্কিল হয় রমযানের রোযা নিয়ে। মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে নামায পড়ার মত সময় করে নেয়া যায়, কিন্তু রোযা অসম্ভব। অন্যদিকে মানুষের ভয়ে রোযা না করে মুসলমান থাকা যাবে, এ বিশ্বাস তার নেই। মুসলমানরা সত্য প্রচারের জাতি, সত্য গোপন করার জাতি নয়। মুসলমানরা জীবন দিয়েছে, দেশ ত্যাগ করেছে, কিন্তু সত্যের পতাকা অবনত করেনি। বিলাল, ইয়াসার, সোহায়েব প্রমুখদের জীবন তো এ ত্যাগেরই স্বাক্ষর। আবু সালেহও সত্য গোপন করেত রাজি হয়নি। সে চাকরী ছেড়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু পিসিডা এ গুরুত্বপূর্ণ চাকুরি জাতির স্বার্থেই ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছে। জাম্বুয়াংগোর ওস্তাদ ইয়হিয়া আলী তাকে বলেছেন, মাঝে মাঝে রোযা রেখে কাজাগুলো বছরে অন্য সময়ে করে নিও। আমাদের অসহায়তা ও প্রয়োজন আল্লাহ দেখছেন, তিনি অবশ্যই মাফ করবেন আমাদেরকে। আবু সালেহ তারপর থেকে ঐভাবেই রোযা পালন করে আসছে।
আবু সালেহ নামায শেষ করে উঠতেই গেটে গাড়ির হর্ণ বেজে উঠল। থেমে থেমে বাজছিলো সেই সাংকেতিক হর্ণ। তাড়াতাড়ি সে শোবার ঘর থেকে গার্ড রুমে এল! যেমন সে প্রায়ই যায়, তেমনি আজও সে উঠে গেল পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি সামরিক ভ্যান। সামরিক উর্দিপরা ড্রাইভারের পাশেই ব্রিগেডিয়ার র‍্যাঙ্কের জনৈক অফিসার। ভ্যানের পেছনে ছয়জন সামরিক প্রহরী। পিকআপ ভ্যানের মেঝের ওপর চোখ পড়তেই চমকে উঠলো আবু সালেহ। ওকি! লোকটির গায়ে পিসিডার ইউনিফর্ম। লোকটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। এ সময় গাড়িটি নড়ে উঠল। ইতিমধ্যেই গেটটি খুলে গেছে। খোলা গেট-পথে এগিয়ে এল গাড়িটি। চোখের নিমেষে ভেতরে ঢুকে গেল গাড়ি। মুহূর্তের জন্য লোকটির মুখ সে দেখতে পেল। এক নজর দেখেই বুঝল, লোকটি এদেশী নয়। তাহলে? বিদেশীর গায়ে পিসিডার ইউনিফর্ম কেন?
ধীরে ধীরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে নেমে এল আবু সালেহ। রাজকুমারী এবং এই মুহূর্তের দৃশ্যটা এক সাথে মিলিয়ে বুঝল, একটা বড় ধরনের কিছু ঘটে গেছে। বুকটা তার ধক করে উঠল। এক অব্যক্ত যন্ত্রণা যেন ছড়িয়ে পড়ল গোটা দেহে এক অজানা আশঙ্কায়। তার মন বলল, বসে থাকার সময় এটা নয়। এই মুহূর্তে এই খবর দু’টো পিসিডা অফিসে পৌঁছানো দরকার।

জাম্বুয়াংগো বন্দরের রয়াল স্কোয়ার শহরের প্রাণকেন্দ্র। এই স্কোয়ারের পশ্চিমে সেন্ট এলিস রোড ধরে কেয়েক গজ এগুলেই টেলিফোন ভবন। তার বিশাল অয়্যারলেস টাওয়ার বলতে গেলে গোটা মিন্দানাওয়ের মুখ আর কান। বলা যায় দক্ষিণ ফিলিপিনের অয়্যারলেস যোগাযোগের রাজধানী এটা। বিশেষ করে কাগায়ান, দিবাও ও কোটাবাটোর পতনের পর ফিলিপিন সরকারের কাছে এর গুরুত্ব আজ অপরিসীম। এ টেলিফোন ভবন এখন সামরিক যোগাযোগের কাজেই বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে। তার নজীর টেলিফোন ভবনটির বিশাল গেটের দিকে তাকালেই আঁচ করা যায়। সেখানে আগে ছিল সাধারণ পুলিশ প্রহরী। তার জায়গায় এখন পাহারা দিচ্ছে বাহুতে টকটকে লাল ব্যান্ড বাঁধা মিলিটারী পুলিশ। টেলিফোন ভবনের গোটা চৌহদ্দিই এখন ফিলিপিনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। রয়াল স্কোয়ারের পূর্ব পাশে বিদ্যুৎ স্টেশন। জাম্বুয়াংগো হাইড্রোইলেকট্রিক প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ এখানে আসে, এখান থেকেই তা ছড়িয়ে দেয়া হয় গোটা দক্ষিণ মিন্দানাওয়ে।
এই রয়াল স্ট্রিটেরই উত্তর পাশে বিশাল গীর্জা, দক্ষিণমুখী। তীরের মত সোজা বন্দর রোড দিয়ে সাগরের বাতাস এখানে এসেই প্রথমে বড় রকমের ধাক্কা খায়। গীর্জার পশ্চিম পাশ দিয়ে একটা সরু গলি। গলির পশ্চিম পাশে একটা দ্বিতল মসজিদ। মসজিদের মিনার নেই। একটা উঁচু উন্মুক্ত সোপানে দাঁড়িয়ে মুয়াজ্জিন আযান দেয়। ভালো করে লক্ষ্য করলে একটা বিধ্বস্ত মিনারের চিহ্ন সেখানে দেখা যাবে। গীর্জা যখন তৈরী হয়, তখন এ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। উল্লেখ্য, গীর্জাটি তৈরী মসজিদের জায়গার ওপরেই। মসজিদটির সাথে যুক্ত ছিল মার্কেট, মাদ্রাসা ও ছাত্রাবাসের একটা বিরাট কমপ্লেক্স। শ্বেতাংগ খৃস্টানরা যখন জাম্বুয়াংগো দখল করে, যখন তাদের নিষ্ঠুর হত্যা ও জ্বালাও-পোড়াও অভিযানের মুখে শহরের মুসলমান ছিন্ন ভিন্ন, তখন তারা মসজিদের এ জায়গা দখল করে মার্কেট-মাদ্রাসা সব ভেংগে এখানে গীর্জা গড়ে। মসজিদের সুউচ্চ মিনার তারা ভেঙে ফেলে। কিন্তু মসজিদটি ভাঙেনি। না ভাঙার কারণ, সোনার ক্রস বুকে ঝুলানো শুভ্র কেশ শ্বেতাংগ ফাদার নাকি বলেছিল, উঁচু গীর্জার আশ্রয়ে মাথা নিচু করে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকনা মসজিদটা। এতে গীর্জার গৌরবই বৃদ্ধি পাবে।
গীর্জা ও মসজিদের মধ্যকার গলি দিয়ে কিছুদূর এগুলে একদম গলির মাথায় একটা বিশাল সাইনবোর্ড দেখা যাবেঃ ‘ফিলিপিন ওভারসীজ করপোরেশন’। ইনডেন্ট ও শিপিং এজেন্সীর সবচেয়ে বড় ফার্ম। গোটা মিন্দানাওয়ে এই ফার্মের সুনাম। কসমেটিক থেকে মিল মেশিনারী পর্যন্ত প্রায় শ’খানেক বিদেশী পণ্যের সোল এজেন্সী রয়েছে এই ফার্মের। প্রবেশ পথেই ইস্পাতের বড় গেট। গেটের পাশে গার্ড রুমে দারোয়ান। তার পাশেই সুসজ্জিত তথ্যকেন্দ্র। সবাই প্রথমে তথ্যকেন্দ্রে যায়। তথ্যকেন্দ্র প্রয়োজন জেনে নিয়ে টেলিফোনে ভেতরের সাথে যোগাযোগ করে কোথায় যেতে হবে তার স্লিপ দিয়ে লোক ভেতরে পাঠায়।
গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার পর প্রথমেই একটা ছোট্ট উঠান। উঠান পেরোলেই অফিসে প্রবেশের স্বয়ংক্রিয়ং দরজা।
ত্রিতল ভবন। মনে হবে অসংখ্য রুম। কিন্তু কোন শব্দ নেই। বহু টাইপ রাইটারের অব্যাহত খটখট গুঞ্জন ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। তিনটি তলার সামনের সবগুলো রুমই কোম্পানীর বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। পেছনের অংশটা রেসিডেনসিয়াল ব্লক। প্রায় শ’তিনেক কর্মচারী অফিসে। জাম্বুয়াংগো শহরে এটাই পিসিডার হেডকোয়াটার্স। এখানকার সব কর্মচারীই পিসিডার কর্মী। কোম্পানীর মালিক মিঃ একিনো ওরফে হাজী উমর তার সবকিছু পিসিডার জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছেন। হাজী উমরের বাড়ি ছিল পূর্ব মিন্দানাওয়ের দিবাও শহরে। সেখানে সব হারিয়ে খালি হাতে আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে তিনি জাম্বুয়াংগো এসে আত্মগোপন করেন। তারপর নাম ভাঁড়িয়ে খৃষ্টান নাম গ্রহণ করে ইনডেন্ট বিজনেস শুরু করেন, আর সেই সাথে স্থানীয় মুসলমানদের সাথে একটা গোপন যোগযোগের কাজও শুরু করে দেন। হাজী উমরে সেদিনের সে ছোট্ট ইনডেন্ট বিজনেস আজ ‘ফিলিপিন ওভারসিজ করপোরেশন’। সেই সাথে জাম্বুয়াংগো পিসিডার হেডকোয়াটার্সও এটা। হাজী উমরের নিরলস পরিশ্রমে জাম্বুয়াংগো এবং এই এলাকার প্রতিটি মুসলিম সংগঠিত হয়েছে। তাদের সুখ -দুঃখের সাথী হাজী উমর। হেঁটে-খেটে এবং পকেট থেকে পানির মত পয়সা খরচ করে তিনি বিভিন্ন অফিস-আদালতে মুসলিম যুবকদের চাকুরী জুটিয়ে দিয়েছেন। তার ফলে আজ সব সরকারী অফিস, পুলেশ ফোর্স, নিরাপত্তা এজেন্সী, টেলিফোন ভবন, পাওয়ার স্টেশনসহ সব জায়গায় পিসিডাকে মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
সেদিন বেলা তিনটা। ফিলিপিন ওভারসীজ করপোরেশনের রেসিডেন্সিয়াল ব্লকের একটি কক্ষ। একটা বড় টেবিল ঘিরে বসে আছে সাতজন। জাম্বুয়াংগো অপারেশন সেলের বৈঠক। কথা বলছেন জাম্বুয়াংগোর পিসিডা প্রধান এহসান সাবরী। সবার অখন্ড মনোযোগ তাঁর দিকে।
তিনি বলছিলেন আবু সালেহের কাছ থেকে নিশ্চিত খবর পাওয়া গেল, আহমদ মুসাকে ওরা জাম্বুয়াংগো নিয়ে এসেছে। আল্লাহর হাজার শোকর যে, তাঁকে শিপে করে অন্য কোথাও নিয়ে যায়নি, যা ছিল খুবই স্বাভাবিক। তবে তাঁকে অতি শীঘ্রই এখান থেকে সরিয়ে ফেলবে, তাতে কিছুমাত্রও সন্দেহ নেই। ইরগুন জাই লিউমি এবং বিশ্ব রেড ফোর্স (W.R.F.) তাঁকে হাতে পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে আছে। মনে হয় মিন্দানাওয়ের কু-ক্লাক্স-ক্লান আহমদ মুসার কাছ থেকে প্রথমেই ‘রেডিয়েশান বম্ব’ এর খবর উদ্ধার করতে চায় বলেই সম্ভবতঃ নিজেদের হাতের মধ্যে জাম্বুয়াংগোর আর্মি ইনটেলিজেন্স হেড কোয়াটার্সে এনে তুলেছে।
একটু দম নিল এহসান সাবরী। তারপর বলল, আমরা শত্রুকে কোন সময় দিতে পারি না। আজকে রাতের মধ্যেই উদ্ধার করতে হবে আমাদের নেতাকে, সেই সাথে আজই নির্ধারিত হবে শুধু জাম্বুয়াংগোর নয়, গোটা মিন্দানাওয়ের ভবিষ্যত।
এহসান সাবরীর শেষের কথাগুলো যেন সাগর বক্ষের মতই অতলান্ত ও স্থির, বুলেটের মতই দৃঢ়-শক্তিমান। বলতে বলতে তাঁর চোখ দু’টি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল।
এহসান সাবরীর ডান পাশে বসা নূর আহমদ প্রথমে কথা বলল। বলল সে বোধহয় ওরাও এটা আঁচ করেছে। বন্দর এলাকায় বলতে গেলে কারফিউ এর মত। অপরিচিত সকল নৌযানের বন্দরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরগামী সবগুলো সড়ক বন্ধ। শহরের তিনদিক ঘিরে সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড।
নূর আহমদ জাম্বুয়াংগো পিসিডা’র গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান। তার কথা শুনে একটু হাসলেন এহসান সাবরী। বললেন, তোমার কথা ঠিক নূর আহমদ। তবে ফাইনাল খেলার জন্য ওরা তৈরী নয়। ওরা যা করছে সেটা সতর্কতার জন্য। আহমদ মুসাকে হাতে পাওয়ার পর তাদের এটুকু সতর্কতাকে আমি খুব স্বাভাবিক বলে মনে করি। কিন্তু ওরা যা কল্পনা করেনি, সেই আঘাত আমরা দিতে চাই। কাগায়ান, দিবাও ও কোটাবাটোর পর তাদের শক্তির শেষ শক্ত গাছটি আমরা উপড়ে ফেলতে চাই।
থামলেন এহসান সাবরী। মুখ তুলল এবার হামিদ উনিতো। উনিতো এখানে এহসান সাবরীর প্রধান সহকারী। সে বলল, পুলিশ বাদ দিলে জাম্বুয়াংগোতে ওদের সৈন্য সংখ্যা আজকের দিন পর্যন্ত পাঁচ হাজারে পৌঁছেছে।
আমরা পুলিশ ফোর্সকে তাদের সাথে ধরেই হিসেব করছি -বললেন এহসান সাবরী।
এই সংখ্যা শক্তি মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। কাগায়ান, দিবাও কোটাবাটো সহ হাজারো জায়গায়, হাজারো বার এটা প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে রাতের গেরিলা যুদ্ধে ওরা অকেজো। তার ওপর মানসিকভাবে ওরা আজ খুব দুর্বল। কথাগুলো বললেন মাইকেল সুনম ওরফে সালেম ইব্রাহিম। ইনি জাম্বুয়াংগো পুলিশের একজন উর্ধতন অফিসার। গত দশ বছর ধরে তিনি মরো মুক্তি আন্দোলনের সাথে জড়িত। তিন বছর আগে তিনি পিসিডা’য় যোগ দেন। আজ তিনি পিসিডা’র প্রথম সারির একজন নেতা।
তবু আমাদের প্রস্তুতিতে কোন দুর্বলতা আমরা রাখতে চাই না। ত্রিশটি গানবোটের আমাদের নৌ-ইউনিট রাত ন’টার মধ্যে জাম্বুয়াংগো বন্দরে এসে পৌঁছবে। তারা বন্দরে পৌঁছার আগেই কোটাবাটো এলাকার পিসিডার একটা ইউনিটকে শহরের পূর্ব প্রান্তে নামিয়ে দিয়ে আসবে। ওরা পূর্ব দিক দিয়ে শহরে ঢুকবে। আর উত্তর ও পশ্চিম দিক দিয়ে শহরে ঢুকছে লুকমান রশিদের বাহিনী। শহরে আমাদের দায়িত্ব হলো শহরের গোটা ব্যবস্থাকে অচল করে দেয়া, সেনাবাহিনীর ট্যাংক ও ভারি যানবাহনের গতিরোধের জন্য সেনা ব্যারাক থেকে বহির্মূখী সব ব্রিজ-কালভার্ট ধ্বংস করে দেয়া। এই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার দায়িত্ব নিল সালেহ ইব্রাহিম। আর টেলিফোন ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নষ্ট করার দায়িত্ব নূর আহমদের। নূর আহমদের কাজ দিয়ে আজ রাত ন’টায় আমাদের অপারেশন শুরু হবে- থামলেন এহসান সাবরী। একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন, জাম্বুয়াংগো শহরের সকল পিসিডা ইউনিট এখন থেকেই এ্যাকশনের জন্য তৈরী। অন্ধকারে ডুবে যাওয়া জাম্বুয়াংগো নগরীতে অপারেশন শুরু হবার সংগে সংগে প্রতিটি ইউনিট তাদের স্ব স্ব এলকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে এবং সকল বাধা কাঠোর হাতে নির্মূল করবে।
আবার একটু থামলেন এহসান সাবরী। বোধ হয় ঢোক গিললেন একটা। তারপর টেবিলের ওপর একটু ঝুঁকে ধীরে গম্ভীর কন্ঠে বললেন, আমি সেন্ট্রাল স্কোয়াড নিয়ে যাব মিলিটারী ইনটেলিজেন্স হেড কোয়াটার্সে। আমার সাথে থাকবে হামিদ উনিতো। আমি ন’টায় ইনটেলিজেন্স হেড কোয়াটার্সের গেটে পৌঁছব। সার্বিক অপারেশন শুরুর সময়ও এটাই। তাদের কিছু অপ্রস্তুত ও কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থার আমি সুযোগ নিতে চাই।
কথা শেষ করে এহসান সাবরী নূর আহমদের দিকে তার প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তুলে ধরলেন।
বুঝতে অসুবিধা হলো না নূর আহমদের। বলল, আমরা প্রস্তুত হচ্ছি, ইনশাআল্লাহ কোন অসুবিধা হবে না। অয়্যারলেস ভবন ও বিদ্যুৎ স্টেশনের পিসিডা কর্মীরা তাদের ডিউটি বদল করে রাতের ডিউটি নিয়েছে খবর পেয়েছি। আর আল্লাহর হাজার শোকর, মাত্র একজন ছাড়া আমাদের সব রেডিও কর্মীরই ডিউটি রাতে।
নূর আহমদের কথা শেষ হতেই সালেহ ইব্রাহিম বলে উঠলেন, আমার পুলিশ ইউনিটের কর্মীরা ও তৈরী। তাছাড়া পুলিশের ইউনিফরমও যোগাড় করেছি প্রচুর। আমার কাজের জন্য এগুলোই যথেষ্ট হবে।
এতক্ষণে কথা বললেন হাজী উমর- বন্দরে পাঁচটি সওদাগরী জাহাজ নোঙর করা আছে। নৌ ঘাঁটিতে গোটা পাঁচেক গানবোট এবং দূর পাল্লার কামানবাহী একটি যুদ্ধ জাহাজ আছে। তাছাড়া রয়েছে ডজন দুয়েক পেট্রোলবোট। আমার মতে শহরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিার আগে আমাদের গানবোটগুলোকে এ্যাকশনে নেয়া ঠিক হবে না। নৌঘাঁটি এবং উপকূলের কামান শ্রেণী হাতে পাওয়ার পর আমাদের গানবোটগুলো কাজ শুরু করলে ওদের নৌ শক্তিও আমাদের কাছ আত্মসমর্পণে বাধ্য হবে।
এহসান সাবরী বলল, এ পরিকল্পনা ঠিক আছে। তবে একটা জিনিস নিশ্চিত করতে হবে, রাত ন’টার পর কোন জাহাজই যাতে বন্দর ত্যাগ করতে না পারে।
হাজী উমর মাথা নাড়ল, ঠিক আছে। উল্লেখ্য, হাজী উমর পিসিডার বন্দর কামান্ডের প্রধান। এহসান সাবরী ঘড়ির দিকে চাইলেন। তারপর বললেন, এবার আমরা উঠি। তার আগে আসুন আমরা আমাদের মহান ভাই, আমাদের নেতা আহমদ মুসার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তাঁকে ভাল রাখুন। কাগায়ানে তিনি আহত হয়েছিলেন। জাম্বুয়াংগো আসার পথে সংঘর্ষে তিনি মনে হয় আরও আঘাত পেয়েছিলেন। তিনি কি অবস্থায় আছেন আমারা জানি না। বলতে বলতে এহসান সাবরীর কন্ঠ ভারি হয়ে উঠল। তিনি থামলেন। সেই সাথে সাত জোড়া হাত প্রভূর সমীপে মুনাজাতের জন্য উত্তোলিত হলো।