৭
সামনে একটু নিচেই গ্রীনভ্যালি।
পাহাড়টা ছোট হলেও উপত্যকার প্রায় গোটাই দৃষ্টিতে আসছে।
আহমদ মুসারা শেষ উৎরাই হয়ে নামছে।
নিচে গ্রীনভ্যালি উপত্যকা।
এই সময়ই শুরু হলো প্রচণ্ড গুলীগোলা। চলল দু’আড়াই মিনিট ধরে।
এক সময় থেমে গেল গুলীর আওয়াজ।
শাহ বানুরা সবাই তাকাল আহমদ মুসার দিকে। মুখ তাদের শুকনো উদ্বিগ্ন তারা। বলল শাহ বানু, কিছু বুঝছেন ভাইয়া?
‘কিছু বুঝা তো যাচ্ছে। দু’আড়াই মিনিটে যেগুলী হয়েছে, তাকে তিনটি ওয়েভে বিভক্ত করা যায়। তিন ওয়েভের মধ্যে প্রথম ও তৃতীয়টি আমি মনে করি আমাদের লোকদের। আমাদের লোকরা পেছন থেকে শংকরাচার্যের পলায়নরত লোকদের উপর গুলীবর্ষণ করে। পলায়নরতরা এর জবাব দিতে শুরু করে। গোলা-গুলীর প্রাবল্য এই সময় বেশি ছিল। এর পর গুলীবর্ষণ শুরু হয় হাইওয়েগামী রাস্তার পাশে ওঁৎ পেতে থাকা আমাদের লোকদের পক্ষ থেকে। এই ওয়েভ-গুলীর পাল্টাগুলীর শব্দ তেমন পাওয়া যায়নি। এ থেকে বুঝা যায়, এমন অবস্থায় এমন আকস্মিকভাবে এই আক্রমণ আসে পাল্টা গুলী চালানোর সময় ও সুযোগ তাদের ছিল না। আর এর অর্থ হলো, শত্রুরা সম্পূর্ণ পরাভূত। হয়তো সবাই মরে গেছে’।
‘তাহলে আমরা মুক্ত। আমাদের আর কোন ভয় নেই’। আনন্দ-উচ্ছ্বাস কম্পিত কণ্ঠে বলল শাহ বানু।
‘আলহামদুলিল্লাহ’। বলল সাহারা বানু।
পাহাড়ের গোড়ায় নেমে এসেছে আহমদ মুসারা।
এই সময় আহমদ মুসারা দেখতে পেল, উপত্যকার পথ ধরে পাহাড়ের দিকে ছুটে আসছে একদল আদিবাসী নারী-পুরুষ। তাদের সামনে ড্যানিশ দেবানন্দ এবং সুস্মিতা বালাজী। আনন্দে হৈচৈ করছে সবাই।
ওরা এসে গেছে। আহমদ মুসারা দাঁড়িয়ে পড়েছে।
ড্যানিশ দেবানন্দ নিজে ছুটে গিয়ে আহমদ মুসার কাঁধ থেকে লাইট মেশিন গান ও গ্রেনেড লাঞ্চার নামিয়ে নিয়ে ওগুলো দু’জন আদিবাসীর হাতে দিয়ে দিল। আহমদ মুসা জড়িয়ে ধরল ড্যানিশ দেবানন্দকে।
ওদিকে সুস্মিতা বালাজী নিজে এগিয়ে প্রথমে সাহারা বানুর কাঁধ থেকে ষ্টেনগানগুলো এবং পরে শাহ বানুর মাথা থেকে গুলীর বাক্সটি নামিয়ে নিয়ে কয়েকজন আদিবাসী মেয়ের হাতে তুলে দিল। তারপর সে একসাথে জড়িয়ে ধরল সাহারা বানু ও শাহ বানু দু’জনকে। বলল সে, ‘ওয়েলকাম, ওয়েলকাম ওয়েলকাম’। গভীর আবেগ তার কণ্ঠে।
বাহুর বন্ধন থেকে দু’জনকে ছেড়ে দিয়ে সুস্মিতা বালাজী সাহারা বানুর হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে বলল, ‘খুশি হয়েছি খুব। উম্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছি আপনাদের’। তারপর মুখ ঘুরাল সুস্মিতা বালাজী শাহ বানুর দিকে। এক হাতে নত মুখটি তুলে ধরে বলল, ‘আর মোগল শাহজাদী! তোমাকে যেমন ভেবেছি, তার চেয়েও তুমি মিষ্টি। তুমি সুষমার বন্ধু না? তোমার কাছে তার অনেক গল্প শুনব’। বলে শাহ বানুকে কাছে টেনে তার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল, ‘আমার সৌভাগ্য তোমাদের পেয়েছি। গত বিশ বছরে এই প্রথম এমন আনন্দ’।
বলেই সুস্মিতা বালাজী আবার ঘুরল সাহারা বানুর দিকে। বলল, ‘জানেন আপনারা আমার কত ঘনিষ্ঠ অত্মীয়?’
‘জানি মা, আমার হবু বউমা সুষমার তুমি বোন। সেই সূত্রে আমি তোমারও ‘মা’ হবার দাবী করতে পারি’। বলল সাহারা বানু।
সুস্মিতা বালাজী আবার জড়িয়ে ধরল সাহারা বানুকে।
‘সুষি, ওরা কিন্তু খুব ক্লান্ত। চল আমরা ওদের নিয়ে ফিরি’। বলল ড্যানিশ দেবানন্দ সুস্মিতা বালাজীকে লক্ষ্য করে।
সুস্মিতা বালাজী সাহারা বানুর বুক থেকে মুখ তুলে ড্যানিশ দেবানন্দকে সাহারা বানু ও শাহ্ বানুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। তারিকেরও পরিচয় দিতে যাচ্ছিল। কিন্তু ড্যানিশ বলল, ‘এই ইয়ংম্যানকে আমি ইতিমধ্যেই জেনে ফেলেছি। ছোট ভাই আহমদ মুসা আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তারপর শাহ বানুর দিকে স্নেহময় হাসিতে চেয়ে বলল, এও জেনেছি খালাম্মা যে, শাহ বানুর রিভলবার ইতিমধ্যেই দু’টি শিকার এবং তারিকের রিভলবার একটি সফল শিকারের কৃতিত্ব অর্জন করেছে’।
ড্যানিশ দেবানন্দের কথা শেষ হতেই সেখানে হাজির হলো আহমদ মুসা। বলল দ্রুত কণ্ঠে, ‘ভাই সাহেব, আহত শংকরাচার্যের ওখানে এখনই পৌঁছা দরকার’।
সুস্মিতা বালাজী এগিয়ে এল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ছোট ভাই শংকরাচার্যকে আপনি জীবিত চেয়েছিলেন, জীবিতই পাবেন’।
‘ধন্যবাদ আপা। চলুন সকলে আমরা যাই’। বলল আহমদ মুসা।
সবাই চলতে শুরু করল উপত্যকার অভ্যন্তরে।
সবার আগে হাঁটছে সুস্মিতা বালাজী দু’পাশে সাহারা বানু ও শাহ বানুকে নিয়ে। তার পেছনে আহমদ মুসা ও ড্যানিশ দেবানন্দ পাশা পাশি। পরে অন্য সকলে হাঁটছে।
আহমদ মুসারা পৌঁছল স্কুলের পূর্বে হাইওয়েগামী রাস্তাটায়। এখানেই একটা উঁচু জায়গায় ঘাসের উপর রাখা হয়েছে মহাগুরু শংকরাচার্যকে। তার দু’পায়েই গুলী লেগেছে। একটা গুলী বেরিয়ে গেছে। আর একটা পায়ে আটকে আছে।
সেখানে পৌঁছেই আহমদ মুসা বলল, ‘গুলীটা এখনই বের করার ব্যবস্থা করতে হয় ভাই সাহেব’।
পাশেই ছিল সুস্মিতা বালাজী। সে বলে উঠল, ‘অপারেশনের ব্যবস্থা আগেই এনে রেখেছি। কিন্তু অপারেশন করতে রাজি নন তিনি।
আহমদ মুসা তাকাল মহাগুরু শংকরাচার্যের দিকে। বলল, ‘আপনার আপত্তি কেন?’
মহাগুরু শংকারাচার্যের চোখে-মুখে মহাক্রুব্ধ ভাব। বলল, ‘আমাদের হয় ছেড়ে দেবে, নয় মেরে ফেলবে। আমি তোমাদের কোন চিকিৎসা চাই না, মরে গেলেও না’।
‘কি মনে করেন? আপনাকে ছাড়া হবে?’ বলল আহমদ মুসা।
‘তুমি সেই বিভেন বার্গম্যান মার্কিন নাগরিক। কিন্তু আসলে তুমি তো বিভেন বার্গম্যান নও। কে তুমি?’ বলল শংকরাচার্য।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘আমার পরিচয় এখন ইস্যু নয়। আপনাকেই নিয়েই কথা। এখন কথা বলুন তো, আন্দামানের এত লোককে আপনারা খুন করলেন কেন? কেন আপনারা আটকে রেখেছেন আহমদ শাহ আলমগীরকে?’
‘তুমি জানতে চাইলে না যে, তোমরা আমাকে ছাড়বে কিনা, এ সম্পর্কে আমি কি মনে করি? দেখ তোমরা আমাকে ছাড়বে, এমন ভাবার মত বোকা আমি নই। তবে তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে পার, কিন্তু আটকে রাখতে পারো না, যেমন আমরা আটকে রেখেছি আহমদ শাহ আলমগীরকে। ড্যানিশ দেবানন্দও আমাকে হত্যা করতে পারে। কারণ আমি তার পিতা-মাতাকে হত্যা করেছি এবং তার সম্পত্তি গ্রাস করে তাদের বনবাসী করেছি’।
‘কিন্তু আপনি এসব অপরাধ স্বীকার করছেন কেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘এজন্যে যে আমার বাড়তি কোন ক্ষতি করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। বরং আমি এসব কথা বলে আনন্দ পাচ্ছি এ কারণে যে, তোমাদের মনে যাতনা কিছু বাড়াতে পারছি’। বলল শংকরাচার্য।
‘আপনার আন্দামানের এত লোককে হত্যা করেছেন, আহমদ শাহ আলমগীরকে আটকে রেখেছেন, এ অপরাধও কি স্বীকার করবেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘স্বীকার করবো না কেন? এটা করতে পারাটা আমাদের জন্যে গর্বের’।
‘আহমদ শাহ আলমগীরসহ ওদের অপরাধ কি তা বলার মত সাহস কি আপনার আছে?’
‘আহমদ শাহ আলমগীরের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। তার প্রথম অপরাধ হলো, পবিত্র বংশ পেশোয়া পরিবারের এক কন্যাকে সে ভাগাতে চেয়েছিল। তার দ্বিতীয় অপরাধ হলো, তার কাছে মূল্যবান কিছু জিনিস আছে যা আমাদেরকে উদ্ধার করতেই হবে। কিন্তু সে রাজি হচ্ছে না। কিন্তু তাকে আমরা ছাড়ছি না’।
‘ছাড়া, না ছাড়ার সবটা আপনাদের হাতে নয়, আপনার আজকের এই অবস্থা তার একটা প্রমাণ। সে যাক, এখন বলুন, ডজন ডজন যুবককে আপনার হত্যা করেছেন, তাদের কি দোষ ছিল?’
‘আন্দামানের ইতিহাস থেকে মুসলমানদের নাম মুছি ফেলেছি। এখানকার মাটি থেকেও মুসরমানদের দর্শনীয় অস্তিত্ব আমরা মুছে ফেলব।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘ইতিহাস থেকে কি মুছে ফেলতে পেরেছেন?
‘আন্দামানের জেলখানা কিংবা কোথাও, মুসলমানদের উপস্থিতি এবং অবদানের কথা নেই। আন্দামানের সেলুলার জেলখানা উৎসর্গ করা হয়েছে দামোদর সাভারকারের নামে। অথচ ইতিহাস মানলে এ জেলখানা ‘শের আলী’র নাম উৎসর্গ হওয়া উচিত ছিল। শের আলীর মত সফল স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারতে আর দ্বিতীয় জন্মেনি। আন্দামানে নিজ হাতে সে ভারতের বৃটিশ শাসক লর্ড মেয়োকে খুন করে এবং এই কৃতিত্বের জন্যে গর্ব ভরে সেই এই সেলুলার জেলখানায় ফাঁসিতে জীবন উৎসর্গ করে। শের আলীর পর যার নামে সেলুলার উৎসর্গ হওয়া উচিত ছিল তিনি মওলানা ফজলে হক খয়রাবাদী। ভারতে প্রথম আজাদী সংগ্রামের একজন নায়ক ছিলেন তিনি এবং জেলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। এমন আরও বহু নাম আছে যাদের প্রায় সবাই মুসলিম। তাদের নামে জেল উৎসর্গ হতে পারতো। কিন্তু আমরা শের আলী ও মাওলানা ফজল হকসহ সবার নাম আন্দামানের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে পেরেছি। তাদের নাম জ্বেলের কোন দর্শনীয় অস্তিত্ব মুছে ফেলতে পারব’।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘আন্দামানের কয়েকটা ডকুমেন্ট ইতিহাসের সব নয়। আন্দামানের কয়েকটা লিষ্ট থেকে এদের নাম মুছে ফেললেও ইতিহাসে এদের নাম ঠিকই থাকবে। আর দামোদর সাভারকারকে গায়ের জোরে হিরো বানানো হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদ হয়েছে ভারতের পত্র-পত্রিকার তরফ থেকেই। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা ‘ফ্রন্টলাইন’ দামোদর সাভারকারকে স্বপক্ষত্যাগী ও বৃটিশের অনুগ্রহভোজী হিসাবে চিত্রিত করেছে। দামোদর সাভারকার জ্বেলে থেকে বৃটিশ সরকারের কাছে যে চিঠি লিখে ছিলেন তার পুরোটা ছেপে দিয়েছে পত্রিকাটি। ঐ চিঠিতে সাভারকার বৃটিশের বিরোধিতা করা ভুল হয়েছিল স্বীকার করে বৃটিশ সরকারের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেছিলেন এবং বলেছিলেন, কারগার থেকে ছেড়ে দিলে তিনি এবং তার ভাই যতদিন সরকার চায় ততদিন কোন প্রকার রাজনীতিতে জড়িত হবেন না (I and my brother are perfectly willing to give a pledge of not participating in politics………..I am sincere in expressing my earnest intention of treading the constitutional path and trying my humble best to render the hands of the British dominion a bond of love and respect and respect and a mutual help.” ‘Front line’, April 8, 2005) বৃটিশের কাছে আনুগত্যের শপথগ্রহণকারী এই দামোদর সাভারকারকেই স্বাধীনতা সংগ্রামী বানিয়ে তার নামে সেলুলার উৎসর্গ করেছেন। এই মিথ্যাচার টিকবে না। ইতিহাসের এই প্রতিবাদ শুরু হওয়াই তার প্রমাণ। সুতরাং আন্দামানের মাটি থেকে আলমগীরদের মুছে ফেলা যাবে না’।
‘তোমার বক্তৃতা শুনলাম। বৃক্তৃতা বা দু’কলম লিখে ইতিহাস লেখা যায় না। ইতিহাস লিখতে শক্তিরও দরকার হয়। শক্তিমানরাই ইতিহাস গড়ে। আমাদের এই শক্তি আছে’।
‘আপনি এই কথা বলছেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘কেন বলব না। মনে করেছ, আমি ধরা পড়ে গেছি, আর সব শেষ হয়ে গেল। তা নয়। আমি ডুবো পাহাড়ের এক আইসবার্গ মাত্র।নিজেকে যতই টাইটানিক মনে কর, ডুবো পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।‘
‘এই ডুবো পাহাড় কে?’
‘তা আমি বলব না’।
‘না বলে তুমি যে মরতেও পারবে না, মরণও যে আসবে না’।
‘আমি জানি। কিন্তু তুমি জীবন্ত কাউকে আমাদের ধরতে পেরেছ এখনও? কিংবা কাউকে ধরে রাখতে পেরেছ? পারনি। আমাকেও পাবে না’।
‘পারিনি বলে পারা যাবে না, একথা ঠিক নয়’। বলল আহমদ মুসা।
এ কথা বললেও আহমদ মুসা সতর্ক হয়েছিল শংকরাচার্যের মতলব সম্পর্কে। চঞ্চল হয়ে উঠেছিল তার চোখ। শংকরাচার্যের না বলা কথাও পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল আহমদ মুসা কাছে।
আহমদ মুসার বঞ্চল চোখ ঘুরছিল শংকরাচার্যের দু’হাত ও তার জামার বোতামের উপর। শংকরাচার্যের বাম হাতটা ডান হাতের উপর রাখা ছিল বলে ডান হাতের পুরোটা দেখতে পাচ্ছিল না আহমদ মুসা।
‘আপনার ডান হাতটা দেখি’ বলে আহমদ মুসা নিচু হচ্ছিল শংকরাচার্যের ডান হাত ধরার জন্যে।
কিন্তু শংকরাচার্য চোখের পলকে তার ডান হাত টেনে নিয়ে তর্জনিটা মুখে পুরল।
আহমদ মুসা ঝাঁপিয়ে পড়র শংকরাচার্যের উপর। চেষ্টা করর তার ডান হাতের তর্জনিটা মুখ থেকে টেনে নেবার জন্যে। কিন্তু পারল না আহমদ মুসা। শংকরাচার্য তার সর্বশক্তি দিয়ে তার দেহটাকে উপুড় করে ফেলল।
আহমদ মুসা যখন তাকে আবার চিৎ করল এবং তার হাত মুখ থেকে বের করল, তখন শংকরাচার্যের দেহটা নীল হয়ে গেছে।
তার হাতটা দেহের উপর ছুঁড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল আহমদ মুসা। হতাশ কণ্ঠে বলল, ‘পারলাম না তাকে বাঁচাতে’।
‘আংটিতে তাহলে পটাসিয়াম সাইনাইড ছিল’। বলল সুস্মিতা বালাজী।
‘শয়তানকে শাস্তি তাহলে শয়তান নিজেই দিল। ড্যানিস দেবানন্দ বলল।
‘হ্যাঁ, ভাই সাহেব। ব্যক্তি শয়তান নিজেকে শাস্তি দিয়ে শয়তানের ‘ডুবো পাহাড়’কে বাঁচিয়ে গেল’।
‘ছোট ভাই আপনার উদ্যোগ আর একটু আগে হলে কি হতো জানি না’। বলল সুস্মিতা বালাজী।
‘তার ডান হাতেই যে পটাসিয়াম সাইনাইড আংটি আছে, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে একটু দেরি হয়েছে আমার’।
‘দুঃখ করবেন না ছোট ভাই। শয়তানের এইভাবে চলে যাওয়াই আল্লাহর ইচ্ছা ছিল। আমি খুশি হয়েছি। একটা কুগ্রহ আমাদের জীবন থেকে সরে গেল। আমাদের স্বেচ্ছা-নির্বাসন জীবনের ইতি ঘটল। আমি ও সুস্মি আজ থেকে মুক্ত’।
‘কনগ্রাচুলেশন আপা, ভাই সাহেব’। বলল আহমদ মুসা।
‘ধন্যবাদ ছোট ভাই। কিন্তু আপনি তো শয়তানের ‘ডুবো পাহড়ে’র সন্ধান পেলেন না। তার কি হবে?’ সুস্মিতা বালাজী বলল।
গম্ভীর হলো আহমদ মুসা। বলল, ‘আইসবার্গ হারিয়ে যাওয়ায়, শয়তানের, ‘ডুবো পাহাড়’ পানির তলায় অদৃশ্য হয়ে গেল বটে, কিন্তু শয়তানের জিন্দানখানা নামক আইসবার্গ, যেখানে এক মোগল শাহজাদা বন্দী আছেন, তা আমার সামনে রয়েছে। সেখানে গেলে আমি বন্দী শাহজাদাকে উদ্ধার করতে পারব এবং শয়তানের ‘ডুবো পাহাড়ে’র সন্ধানও আরেকবার পেয়ে যাব’।
আহমদ মুসা থামল।
সঙ্গে সঙ্গে ‘আমিন’ বলে উঠল সাহারা বানু, শাহ বানু এবং তারিক একই সঙ্গে। তারপর সুস্মিতা বালাজি এবং ড্যানিস দেবানন্দও।
‘ইনশাআল্লাহ’। বলল আহমদ মুসাও।
পরবর্তী বই
‘ডুবো পাহাড়’