৪৩. পাত্তানীর সবুজ অরণ্যে

চ্যাপ্টার

আহমদ মুসা কর্নেল সুরেন্দ্রের কাছে টেলিফোন সেরে মোবাইলটি জ্যাকেটের পকেটে রেখে গুহার গায়ে হেলান দিল। মনে মনে ভাবল, ১৫ মিনিট পরে সে যাত্রা করবে। তাহলে কর্নেল সুরেন্দ্ররা এবং সে একই সময়ে ‘মহাসংঘ’র আন্ডার গ্রাউন্ড ঘাঁটির মুখে প্রত্নতত্ব অফিস এলাকায় পৌছে যাবে। এদিকে তার ১৫ মিনিটের একটা বিশ্রামও হয়ে যাবে।
আহমদ মুসা তার গোটা শরীর ঢিলা করে চোখ বুঝল।
শুধু তার কানটাই সক্রিয় রইল। তার দুই কানে লাগানো ছিল ‘সাউন্ড মনিটরিং’-এর দুই রিসিভার। কি যেন ভেবে পনের মিনিটের জন্যে মনিটরিং-এর রিসিভার কান থেকে নামিয়ে নেবার জন্যে ওদিকে হাত বাড়াতেই হালকা শব্দে একটা কোরাস ভেসে এল তার কানে।
হাত সরিয়ে নিল আহমদ মুসা। রিসিভার থামাল না।
সোজা হয়ে বসে শব্দের কোরাস বুঝার চেষ্টা করল।
কিছুটা শোনার পর তার মনে হলো অনেকগুলো লোকের এক সঙ্গে চলার জমাট শব্দ এটা। শব্দগুলো ক্রমেই স্পষ্টতর হচ্ছে। তার মানে একদল লোক এদিকে এগিয়ে আসছে।
কথাটা মনে আসতেই তড়াক করে উঠে দাঁড়াল। কারা আসছে? মহাসংঘ’র লোকরা নিশ্চয়। কিন্তু দল বেঁধে এদিকে আসছে কেন? ওদের একটা অংশ কি এখান থেকে চলে যাচ্ছে? বোট দুটো কি এজন্যেই প্রস্তুত রাখা হয়েছে? এটা কি ওদের রুটিন যাতায়াত? ওরা এক নম্বর নেভি ডকে সিবিআই-এর লোকদের আসা টের পায়নি তো?
আহমদ মুসা গুহা থেকে বেরিয়ে দ্রুত গাছ-পালা ও আগাছার আড়াল নিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠতে লাগল।
সামনের এলাকা নজরে আসে এমন জায়গায় উঠে একটা গাছের আড়ালে বসল। পাহাড়ের গা গাছ-গাছড়া ও নানারকম আগাছায় ঢাকা। আহমদ মুসা বসলে ঢেকে গেলো তার দেহ। ব্যাগ থেকে দূরবীণ বের করে চোখে লাগাল সে।
সামনের এলাকাটা এবড়ো-থেবড়ো পাথুরে জমি। ঘাস-আগাছায় ঢাকা। মাঝে মাঝে বড় গাছ আছে, কিন্তু তার সংখ্যা খুব বেশি নয়। সুতরাং সামনে বহুদূর দেখা যায়। দৃষ্টি সার্কেলের প্রান্ত পর্যন্ত।
দূরবীনের চোখ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নেবার সময় হঠাৎ দূরবীনের চোখে ভেসে উঠল মানুষের সারি। যুদ্ধক্ষেত্রের ব্যুহের মত সারি বেঁধে এগিয়ে আসছে দশ বারোজন লোক। প্রত্যেকের হাতে কিছু লাগেজ এবং অস্ত্র। তার মধ্যে বেশ কয়েকজনের কাঁধে বড় বড় ব্যাগ। আর দুজন বহন করছে কফিনাকৃতির লম্বা একটি কাঠের বাক্স।
দূরবীনের চোখ এই গোটা দলের ওপর ঘুরে আসার আগেই স্নায়ু তন্ত্রীতে একটা শক ওয়েভ খেলে গেল। জেগে উঠল গোটা শরীর, শক্ত হয়ে উঠল গোটা দেহ।
হঠাৎ তার মনে জাগল, এই ঘাঁটি থেকে মহাসংঘের ওরা পালাচ্ছে শাহ আলমগীরকে নিয়ে। ওরা তাহলে অবশ্যই জেনেছে যে, নৌবাহিনীর ১নং ডকে সিবিআই-এর একটা দল নেমেছে, কিন্তু তারা বুঝতেও পেরেছে যে, সিবিআই-এর টার্গেট তাদের এই ঘাঁটি। এটা বুঝেই তারা পেছনের এই দরজা দিয়ে পালাবার জন্যে ছুটে আসছে।
আহমদ মুসা দূরবীন থেকে চোখ সরিয়ে নিল।
আনন্দের একটা অনুভূতি তাকে আচ্ছন্ন করল। সে নিশ্চিত এই দলের মধ্যে রয়েছে আন্দামানের গভর্নর বালাজী বাজি রাও মাধব এবং আহমদ শাহ আলমগীর। কফিনের মত লম্বা কাঠের বাক্সটায় যে আহমদ শাহ আলমগীরকে বহন করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই।
আহমদ মুসার ভাবনা দ্রুত হলো।
প্রথমেই ভাবল ব্যাপারটা কর্নেল সুরেন্দ্রকে জানানো দরকার।
পকেট থেকে মোবাইল তুলে নিল হাতে। মোবাইল করল সিবিআই-এর কর্নেল সুরেন্দ্রকে।
সব শুনে কর্নেল সুরেন্দ্র বলল, ‘ধন্যবাদ স্যার, আমরা ৫ মিনিটের মধ্যে যাত্রা করছি। কিন্তু স্যার, গাড়ি চলবে না। যতটা পারি আমরা দৌড়ে এগুবো। এতেও তো সময় লেগে যাবে। ওরা ততক্ষণে…………।’ দ্রুত, উত্তেজিত কণ্ঠ কর্নেল সুরেন্দ্রের।
আহমদ মুসা তার কথার মাঝখানেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল, ‘চিন্তা নেই কর্নেল। আমি ওদের আটকে রাখব। ওদের হত্যা নয়, সারেন্ডার করাবার চেষ্টা করতে হবে। এজন্যই আপনাদের তাড়াতাড়ি এখানে পৌছা প্রয়োজন।’
‘ওকে স্যার আমরা আসছি যতটা পারি দ্রুত।’ বলল কর্নেল সুরেন্দ্র।
‘ঈশ্বর সাহায্য করুন। বাই।’
মোবাইল পকেটে রেখে দিল আহমদ মুসা।
আবার চোখে দূরবীন লাগাল। দেখল ওরা আরও অনেকখানি পথ এগিয়ে এসেছে। ওরাও দ্রুত হাঁটছে।
দূরবীন চোখ থেকে নামাল আহমদ মুসা।
ওদের ঠেকানোর বিষয়টি মাথায় এসেছে।
ভাবছে সে। তার দরকার ফায়ারিং গান। কিন্তু তার ব্যাগে যে সাবমেশিনগান আছে, তা ছোট ম্যাগাজিনের এবং হালকা।
বোটে দেখা বাক্সগুলোর কথা মনে পড়ল আহমদ মুসার। ওগুলোর কয়েকটিতে হেভি মেশিনগান ও হেভি সাব-মেশিনগান রয়েছে। কিন্তু বোটে যাওয়া, আসা এবং অস্ত্রগুলো সংযোজন করার জন্যে যে সময় দরকার তা তার নেই।
হঠাৎ আহমদ মুসার মাথায় এল, সে বোট দুটোর নোঙর তুলে লেকের মাঝামাঝি কিংবা ওপারে গিয়ে অপেক্ষা করতে পারে। বোট দখল তাদের জন্য অসম্ভব হবে। তখন তারা ফিরে যাবার চিন্তা করবে। ভাববে যে, দ্বীপের জংগলে আত্মগোপন করে সুযোগ মত পালাবে। কয়েকটা গোপন ঘাটে তাদের বোটও রাখা আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু তারা ফেরার পথে গিরিপথ পার হবার আগেই কর্নেল সুরেন্দ্ররা এসে পড়বে।
খুশি হলো আহমদ মুসা। ওদের ফাঁদে ফেলার এটাই সবচেয়ে ভাল উপায় হবে।
আহমদ মুসা পাহাড় থেকে নেমে এল।
গিরিপথ ধরে ফিরে চলল লেকের দিকে বোটের উদ্দেশ্যে।
গিরিপথ বড়, ছোট নানা সাইজের পাথরে ভরা। যাবার সময় ধীরে-সুস্থে গেছে খুব অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এখন তাড়াহুড়া করতে গিয়ে পথ চলাটা খুব কষ্টকর মনে হচ্ছে।
লেকের কিনারায় পৌছে আহমদ মুসা বোট দুটির নোঙর খুলে একটি আরেকটির পেছনে বাঁধল। বোট চালিয়ে নিয়ে গেলো লেকের মাঝখানে।
লেকের পানি যেমন শান্ত, নিস্তরংগ, তেমনি লেকের আবহাওয়াও একেবারে মৌন। লেকের তিন দিক জুড়ে পাহাড়। একদিক দক্ষিণ পাশটা মাত্র খোলা, তাও ঘন বনে ঢাকা। সুতরাং দক্ষিণ দিকে পাহাড়ের দেয়াল না থাকলেও দাঁড়িয়ে আছে জংগলের প্রাচীর। এই জংগলের প্রাচীরকে দুভাগ করে একটা খাড়ি বেরিয়ে সাগরে গিয়ে মিশেছে। চার দিক এভাবে ঘেরা বলেই বাতাসের প্রবাহহীন স্থির, শান্ত লেকটা।
বোটগুলোও স্থির, শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।
আহমদ মুসা বোটের কেবিনে ঢুকে বাক্সগুলো পরীক্ষা করতে লাগল। সবগুলো বাক্সেই দেখল অস্ত্র। আহমদ মুসা বিশেষ ধলনের অটো রিভলবার রাইফেল বের করে নিল। এ রাইফেলে একবার ট্রিগার টিপলেই এক এক করে বারটি গুলী বেরিয়ে যায় যদি না অটো ষ্টপ ফাংশন অন করা থাকে। রাইফেলটির রেঞ্জও সাধারণ রাইফেল থেকে বেশি।
আহমদ মুসা রাইফেলটা নিয়ে কেবিনের দরজার পাশে বসল। এখান থেকে গিরিপথসহ লেকের উত্তর উপকূলের প্রায় গোটাটাই দেখা যাচ্ছে।
মোবাইলটা বেজে উঠল আহমদ মুসার।
মোবাইল কানের সামনে নিয়ে আসতেই কণ্ঠ শুনতে পেল সিবিআই কর্মকর্তা কর্নেল সুরেন্দ্রের।
‘হ্যালো কর্নেল, কোন খবর?’ বলল আহমদ মুসা।
‘না মি. বার্গম্যান, খবর তেমন নয়। আমরা পুরাতত্ব অফিস মানে ওদের পরিত্যক্ত ঘাঁটি পর্যন্ত এসেছি। ওদের খবর কি?’ কর্নেল সুরেন্দ্র বলল।
‘আমি এখন লেকে। ওদের পালিয়ে যাবার বোট দুটি দখল করে লেকের মাঝ বরাবর নিয়ে এসে বসে আছি। মিনিট পনের ওদের খবর জানি না। তবে ওরা যে গতিতে আসছিল, তাতে আর পনের মিনিটের মধ্যে লেকের ধারে পৌছে যাবে। ওরা নিশ্চয় এখন গিরিপথের কাছাকাছি পৌছে গেছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘মি. বার্গম্যান, আপনি এনকাউন্টার নিয়ে কি ভাবছেন?’ কর্নেল সুরেন্দ্র বলল।
‘আমার ধারণা ওরা যখন লেকের ধারে পৌছবে, তখন আপনারা গিরিপথের মুখে পৌছে যাবেন। তখন ওরা বোট হাতের নাগালে না পেয়ে কি করে, সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ভাল হয় যদি আপনি গিরিপথের মুখে এসে আমাকে একটা কল দেন।’
‘ওকে মি. বার্গম্যান। আমরা আরও দ্রুত গিরিপথের মুখে পৌছার চেষ্টা করছি।’
‘ওকে। বাই’ বলে আহমদ মুসা কল অফ করে দিল।
আহমদ মুসা মোবাইল পকেটে রেখে দুপা সামনের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে বাক্সের স্তুপে ঠেস দিয়ে বসল।
দেহটাকে শিথিল করে দিল সে।
চোখ তার গিরিপথের দিকে নিবদ্ধ। কিন্তু তাতে শূন্য দৃষ্টি।
ভাবছে আহমদ মুসা।
ভাবছে সামনের এনকাউন্টার নিয়ে। কতটা সহজে আহমদ শাহ আলমগীরকে উদ্ধার এবং আন্দামানের গভর্নর বিবি মাধবসহ অন্যদের বন্দী করা যায়, এই চিন্তা এসে পেয়ে বসল আহমদ মুসাকে।
মনে মনে অনেক অংক কষার পর আহমদ মুসা এক নজরে বোঝার জন্য একটা ছক আঁকল। মনটা তার প্রসন্ন হয়ে উঠল। বিবি মাধবরা গিরিপথের এপ্রান্তে পৌছলেই কর্নেল সুরেন্দ্রকে এ একশন প্ল্যান সে জানিয়ে দেবে।

বিবি মাধবরা বারো জনের একটা দল।
মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র’র ছদ্মবেশে বিবি মাধব সবার সামনে।
মুখে তার লম্বা, গোঁফ, দাড়ি। গৈরিক রং করা। মাথায় গৈরিক পাগড়ী। গায়েও গৈরিক বসন। গলায় এক গুচ্ছ রুদ্রাক্ষের মালা। কপালে চন্দনের তিলক।
ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রেখে দ্রুতই হাঁটছে বলা যায়। দীর্ঘদেহী বিবি মাধবের দ্রুত হাঁটা অনেকের জন্যে ডবল মার্চের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র ওরফে গভর্নর বিবি মাধবের পাশাপাশি হাঁটছিল সাবেক জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি।
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি আন্দামানে মহাসংঘের দ্বিতীয় ব্যক্তি এবং রস দ্বীপের ‘মহাসংঘ’ ঘাঁটির প্রধান। সে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আগাম অবসর দেয়া একজন মেজর। তার চরমপন্থী মতামতের জন্য তাকে আগাম অবসর দেয়া হয়। অবসর দেয়ার পরদিনই সে ‘শিবাজী সন্তান সেনা’য় যোগ দেয়। সেই সূত্রে এখন ‘মহাসংঘ’-এর প্রথম সারির নেতাদের একজন সে।
‘মহামুনি প্রভু, সিবিআই আমাদের এই ঘাঁটি তো দূরে থাক কোন ঘাঁটির খবরই জানতো না। আজ একেবারে আমাদের এই ঘাঁটিতে এসে হাজির! কিভাবে?’ বলল জেনারেল (অব) কৃষ্ণমূর্তি মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্রকে লক্ষ্য করে।
‘এটা বিস্ময়ের নয়, এর চেয়ে বড় বিস্ময়ের হলো সিবিআই একবার এসে চলে গেল, আবার ফিরে এল কেন? আসলে সবকিছুর মূলে রয়েছে আমেরিকান নাগরিক ছদ্মবেশে আসা বিভেন বার্গম্যান। সেই নয়া দিল্লীস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও তাদের সরকারকে ম্যানেজ করে আমাদের সরকারকে কোনভাবে বুঝিয়ে সর্বনাশটা করেছে।’ বলল মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র ওরফে গভর্নর বিবি মাধব।
‘প্রভু আমাদেরও তো লোক আছে। তারা কি করল?’ জেনারেল (অব) কৃষ্ণমূর্তি বলল।
‘সিবিআই’-এর এই অপারেশন প্রধানমন্ত্রী নিজেই তদারক করছেন। কারুরই কিছু করার সুযোগ নেই।’ বলল বিবি মাধব।
‘বিপদ এভাবেই বোধহয় আরেকটি বিপদ ডেকে আনে। প্রভু, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি? আমার তো মনে হচ্ছে, আমাদের কোন ঘাঁটির সন্ধানই ওদের অজানা নেই।’
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির কথা শেষ হতেই থমকে দাঁড়াল বিবি মাধব। তাকাল সে জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির দিকে। তার চোখ থেকে আগুন ছিটকে বেরুল। বলল, ‘আজ মাফ করে দিলাম। এই ধরনের হতাশার কোন কথা দ্বিতীয়বার শুনলে শুধু আমাদের সাথে চলার নয়, বেঁচে থাকারও অধিকার হারাবে।’
‘মাফ করুন গুরুজী।’ সঙ্গে সঙ্গেই কাঁচু-মাচু মুখে ভয় জড়িত কণ্ঠে বলল জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি।
কথা শেষ করেই জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি বলল, ‘গুরুজী আমরা গিরিপথটার মুখে এসে গেছি।’
‘অলরাইট। সবাই আমাকে ফলো করো। আমার পেছনেই আহমদ শাহ আলমগীরের বাস্কেটের সাথে তুমি থাকবে। সবাইকে দ্রুত আসতে হবে। ওরা যদি ঘাঁটির উপর চোখ রেখে থাকে, তাহলে আমাদের চলে আসা ওদের কাছে সংগে সংগেই ধরা পড়ে গেছে। তাহলে বুঝতে হবে অনেক আগেই ওরা আমাদের পিছু নিয়েছে।’ গভর্নর বিবি মাধব বলল।
সংকীর্ণ গিরিপথ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে সকলেই ছুটল।
লেকের ধারে প্রথমেই পৌছল বিবি মাধব।
লেকের দিকে চোখ পড়তেই এক রাশ বিস্ময় এসে তাকে গ্রাস করল। দেখল যে, এই ঘাটে নোঙর করা তাদের দুটি বোট লেকের মাঝখানে ভাসছে।
‘জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি, তুমি বোট দুটিকে ঠিকমত নোঙর করেছিলে? বোটগুলো ভেসে গেল কি করে?’ চিৎকার করে বলল বিবি মাধব।
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি ছুটে এসে বিবি মাধবের পেছনে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বলল, ‘প্রভু আমি বোট দুটো ভালভাবে নোঙর করেছিলাম। নোঙর আটকানো ছাড়াও চেন দিয়ে বেঁধেছিলাম পাথরের সাথে’
মহামুনিরূপী গভর্নর বিবি মাধব কোন জবাব দিল না। সে তাকিয়েছিল ভাসমান দুবোটের দিকে। ভাবছিল সে।
বোটের দিকে চোখ রেখেই হাতের ষ্টেনগানটা ফেলে দিয়ে ডান হাতটা পেছনে প্রসারিত করে বলল, ‘অটো রাইফেলটা দাও।’
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি তার পিঠে ঝুলন্ত অটো রাইফেলটা বিবি মাধবের হাতে তুলে দিল।
রাইফেলটা হাতে নিয়ে বিবি মাধব দুটি বোট লক্ষে অবিরাম গুলী চালাল। বারটা গুলীর গোটা ম্যাগাজিন শেষ করল সে।
তারপরও কিছুক্ষণ চোখ রাখল সে বোট দুটির উপর। তারপর চোখ ফেরাল সে জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির দিকে। বলল, ‘নিশ্চিত হলাম বোট খালি কিনা। লোক থাকলে গুলী বৃষ্টির জবাব আসত কিংবা লোকদের নড়াচড়ায় বোট দুলত অথবা বোট সরিয়ে নেবার উদ্যোগ নিত। কোন কিছুই হয়নি। আর লোক থাকলে তারা বোট নিয়ে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে কেন! সুতরাং বোটে কেউ নেই।’
কথা শেষ করে মুহূর্তকাল থেমেই জেনারেল কৃষ্ণমূর্তিকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তুমি কয়েকজনকে পাঠিয়ে দাও। ওরা গিয়ে বোট দুটি নিয়ে আসুক।’
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির পেছনেই দাঁড়িয়ে থাকা দুজন লোকের দিকে চোখ ফিরিয়ে সে বলল, ‘তোমরা যাও, কুইক। দুজন দুটো বোট চালিয়ে নিয়ে এসো।’
ওরা দুজন আহমদ শাহ আলমগীরকে রাখা কাঠের লম্বা বাক্সটি বহন করে এনেছিল। লেকের কিনারায় পৌছে ওরা বাক্সটি নামিয়ে রাখলো।
হুকুম পেয়েই ওরা তৈরি হলো।
ওরা লেকের পানিতে নামতে যাচ্ছিল। এই সময় মেশিনগানের অব্যাহত গুলীর শব্দ এল গিরিপথের উত্তর প্রান্তের দিক থেকে।
চমকে উঠল বিবি মাধব।
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ওরা এসে গেছে। গিরিপথে ঢুকে গেছে। আক্রমণ করেছে ওরা আমাদের লোকদের।’
থামল বিবি মাধব। তার চোখ-মুখে সীমাহীন উদ্বেগ ও ভীতির চিহ্ন।
‘হ্যাঁ, গুরুজী ওরা এসে গেছে। বোটও কাছে নেই আমরা সরে পড়তে পারছি না। এখন আমাদের ওদের প্রতিরোধ করতে হবে।’ বলল জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি। তারও মুখে বিমূঢ় ভাব।
‘বোট আনা ও প্রতিরোধ দুই-ই আমাদের করতে হবে।’ গভর্ণর বিবি মাধব।
‘অতদূর থেকে বোট তীরে আনা পর্যন্ত নিরাপদ সময় আমরা পাব কিনা?’ বলল জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি।
‘ঠিক বলেছ জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি। তাহলে কি করা যায়?’ বিবি মাধব বলল।
‘গুরুজী আপনার নিরাপত্তার বিষয়টিই এখানে সবচেয়ে বড়। চলুন আমরা এ দুজনের সাথে বোটে চলে যাই। আপনি একটা বোটে অপেক্ষা করবেন, আমি আরেকটা বোট নিয়ে এসে এদের তুলে নিয়ে যাব।’ বলল জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি।
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি যখন কথা বলছিল, তখন তাদের কয়েকজন লোক তীরে এসে পৌছল। এই সময় গিরিপথের উত্তর প্রান্তের দিক থেকে বোম ফাটারও শব্দ এল।
‘আমাদের লোকদের হাতে তো বোম নেই। তাহলে বোম ওরাই ফেলছে নাকি?’ উদ্বিগ্ন ও দ্রুত কণ্ঠে বলল বিবি মাধব।
‘ঠিক গুরুজী।’ বলল জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি।
‘তাহলে তো ওরা আরও দ্রুত এসে পড়বে।!’
‘হ্যাঁ প্রভু। আর দেরি করা ঠিক হবে না। আপনি পানিতে নেমে পড়ুন। আমি এদের কিছু নির্দেশ দিয়ে আসছি।’
জেনারেল কৃষ্ণমূতির কথা শেষ হবার সাথে সাথে বিবি মাধব গায়ের আলখেল্লা ও পায়ের জুতা খুলে ফেলে এবং গলায় ঝুলানো চাদর কোমরে বেঁধে পানিতে নেমে পড়ল।
ওরা চারজন সাঁতরে আসছে বোটের দিকে। বিবি মাধব সবার আগে। তারপর জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি। তাদের পেছনে মহাসংঘের সৈনিক দুজন এক সাথে সাঁতরাচ্ছে।
দেখা গেল বিবি মাধব ও জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি ভাল সাঁতরাতে পারে। ওরা পেছনের দুজনকে প্রায় আট-দশ হাত পেছনে ফেলে বোটের কাছে পৌছে গেল।
বোটে প্রথমে উঠল মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র’ ওরফে গভর্নর বিবি মাধব। তার পরেই জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি।
তারা উঠে বসে একটু রেষ্ট নিচ্ছিল আর দেখছিল তীরের পরিস্থিতি।
আহমদ মুসা কেবিন থেকে বেরিয়ে এসেছে। তার দুহাতে দুটি রিভলবার।
আহমদ মুসা কেবিন থেকে বেরিয়ে দুতিন ধাপ আসতেই সম্ভবত বোট দুলে উঠা দেখেই বিবি মাধব ও জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি দুজনেই এক সাথে পেছনে তাকাল। তাদের দিকে তাক করা রিভলবার হাতে আহমদ মুসাকে দেখে তারা ভূত দেখার মত আঁতকে উঠল। তাদের আতংকিত বোবা দৃষ্টি যেন আটকে গেল আহমদ মুসার মুখে।
‘স্রষ্টাকে ধন্যবাদ। আপনাকেই নৌকায় চেয়েছিলাম বিবি মাধব। আপনার খেলা শেষ। এবার দুজনেই ডেকের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন।’ আহমদ মুসার কণ্ঠ এবার কঠোর।
মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্রকে গভর্নর বিবি মাধব নামে সম্বোধন করায় জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি চোখ ছানাবড়া করে তাকাল তাদের নেতা মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্রের দিকে। তার চোখে-মুখে অপার বিস্ময়। সে আহমদ মুসার দিকেও তাকাল। চোখে তার একরাশ প্রশ্ন, অবিশ্বাসও কিছুটা।
আহমদ মুসা তার কথাটা শেষ করেই জেনারেল কৃষ্ণমূর্তিকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তাহলে তোমরা জাননা তোমাদের মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্রই গভর্নর বিবি মাধব। তিনি আইনের লোক হয়ে ছদ্মবেশে তোমাদের নিয়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছেন।’
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির বিস্ময়ে বোবা হয়ে যাওয়া দৃষ্টি আবার ঘুরে গেল বিবি মাধবের দিকে।
গভর্নর বিবি মাধব কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে ঘুরে দাঁড়াবার ক্রুব্ধ ভাব নিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল।
আহমদ মুসা রিভলবার নেড়ে ধমকে উঠে বলল, ‘কোন কথা নয়, আগে দুজনে উপুড় হয়ে ডেকের উপর শুয়ে পড়ুন।’
কিন্তু তারা ডেকে শুয়ে পড়তে ইতস্তত করছিল।
আহমদ মুসার বাম হাতে ধরা রিভলবারটা একটু নড়ে উঠল। গর্জন করে ওঠা রিভলবার থেকে একটা গুলী বেরিয়ে বিবি মাধবের কানটা প্রায় স্পর্শ করে ছুটে গেল।
সংগে সংগেই বিবি মাধব এবং জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি দুজনই শুয়ে পড়ল উপুড় হয়ে।
আহমদ মুসা পকেট থেকে কয়েক খন্ড রশি বের করে জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল, ‘গভর্নর বিবি মাধবকে পা’সহ পিছ মোড়া করে বেঁধে ফেল।’
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি ভয়ের সাথে তাকাল বিবি মাধবের দিকে। নির্দেশ পালনের কথা যেন সে ভুলে গেল।
নড়ে ওঠল এবার আহমদ মুসার ডান হাতের রিভলবার। গর্জে ওঠল আবার। একটা গুলী গিয়ে জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির কানের একটা অংশ ছিড়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল।
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি চিৎকার করে উঠে বসে রশি কুড়িয়ে নিয়ে গভর্নর বিবি মাধবের পা দুটি ও পরে পিছ মোড়া করে হাত দুটি বাঁধল।
‘বিভেন বার্গম্যান ওরফে আহমদ মুসা’, গর্জে উঠল গভর্নর বিবি মাধব, ‘মনে রেখ আমি শুধু আন্দামানের গভর্নর নই, আমি ভারতে একজন রাজনীতিক। তোমাকে এই আচরণের জন্যে চরম মূল্য দিতে হবে।’
‘আমার কথা পরে, আপনি নিজের কথা আগে ভাবুন বিবি মাধব। ভারতে সংবিধান এবং ভারতের জনগনের বিরুদ্ধে আপনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। অন্যান্য সব প্রমাণ যোগড় হয়েছে। আজ আপনাকে হাতে-নাতে ধরায় সবচেয়ে বড় প্রমাণ যোগাড় হয়ে গেল।’
আহমদ মুসা এ কথাগুলো বলছিল আর বাঁধছিল জেনারেল কৃষ্ণমূর্তিকে। বাঁধা হয়ে গেলে উঠে দাঁড়াল আহমদ মুসা।
তাকাল আহমদ মুসা সাঁতরে আসা বাকি দুই জনের দিকে। ওরা কূলের দিকে পালাচ্ছিল। আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘তোমরা তীরেই যাও, বোটে জায়গা হবে না।’
আহমদ মুসা রিভলবার পকেটে রেখে মোবাইল বের করল। কল করার জন্য মোবাইল মুখের কাছে তুলে নিল। ওপার থেকে কর্নেল সুরেন্দ্রের কণ্ঠ পেয়ে বলল, ‘গুড নিউজ কর্ণেল মি. সুরেন্দ্র। পরিকল্পনা কাজ দিয়েছে। মহামুনি শিবনাথ সংঘমিত্র ওরফে গভর্নর বিবি মাধব একজন সংগীকে নিয়ে বোটে এসেছেন সাঁতরে। তাঁকে বন্দী করা হয়েছে। ওপার থেকে আপনার ভয় দেখানো খুব কাজ দিয়েছে।’
‘স্যার, এটা তো ছিল আপনারই পরিকল্পনা। ধন্যবাদ স্যার। এখন কি করণীয় বলুন। গুলী করতে করতে তীর পর্যন্ত কি আমরা এডভান্স করব?’ ওপার থেকে বলল সিবিআই-এর কর্নেল সুরেন্দ্র।
‘তাতে রক্তপাত হবে মি. সুরেন্দ্র। অনেক লোক মারা যেতে পারে। আমি অন্য চিন্তা করছি। বোটে মাইক্রোফোন আছে। আর ওরা প্রায় সবাই তীরে এসে দাঁড়িয়েছে এবং দুএকজন গিরিপথের এদিকের মুখ পর্যন্ত পৌছে গেছে। মাইক্রোফোনে আমি ওদেরকে আত্মসমর্পণের জন্যে আহবান জানাতে চাই। তাদের নেতা ধরা পড়ে গেছে। তারাও ধরা পড়ার অবস্থায়। তারা আত্মসমর্পণ করবে বলে মনে করি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আপনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের চিন্তা করছেন। ধন্যবাদ স্যার। আপনার আশা ব্যর্থ হলে তারপর আমরা অপারেশন শুরু করব।’ কর্নেল সুরেন্দ্র বলল।
‘মি. সুরেন্দ্র, এখন থেকে মিনিট খানেক পর আপনি আকাশের দিকে ফাঁকা গুলী ছুঁড়ে এদিকে এগুতে থাকবেন। ইতিমধ্যে ওদেরকে আত্মসমর্পনের আহবান জানানো আমার শেষ হয়ে যাবে। ফাঁকা গোলাগুলী ছুঁড়ে ঐভাবে আপনার অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রাখবেন যতক্ষণ না আমি মোবাইল করি।
ধন্যবাদ।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ওকে স্যার।’ কর্নেল সুরেন্দ্র বলল।
মোবাইল পকেটে রেখে আহমদ মুসা জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি ওরফে ভাস্করের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলল, ‘তোমার পরিচয় জানা হয়নি। তুমি কে? তোমার নাম কি?’
জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি এবার জবাব দিতে দেরি করল না। বলল, ‘আমার নাম জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সাবেক জেনারেল আমি। ‘মহাসংঘ’ এর রস দ্বীপের ঘাঁটির প্রধান।’
‘গুড।’ খুশি হলো আহমদ মুসা এই ভেবে যে, সর্বোচ্চ নেতা এবং এখানকার স্থানীয় নেতা দুজনেই ধরা পড়েছে। এতে ওদের আত্মসমর্পণ করানো সহজ হবে।
আহমদ মুসা বোটের পজিশন ঠিক-ঠাক করে নিয়ে হর্নটাকে তীরের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে মাউথ পীস মুখের সামনে ধরে উচ্চ কণ্ঠে বলতে লাগল, ‘মহাসংঘের কর্মীবৃন্দ, আপনাদের শীর্ষ নেতা মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র এবং রস দ্বীপের ঘাঁটি প্রধান জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি ধরা পড়েছেন। তারা আমাদের হাতে বন্দী। আপনারও ঘেরাওয়ের মধ্যে আছেন। পেছন থেকে সিবিআই-এর সৈন্যরা আপনাদের ঘিরে ফেলেছে। সামনে লেক। পালাবার পথ নেই। অতএব আত্মসমর্পণই বুদ্ধিমানের কাজ। না হলে সবাই মারা পড়বেন। আমি আপনাদের আত্মসমর্পণের আহবান জানাচ্ছি, চিন্তা করার জন্যে পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। রাজি হলে সবাই গিয়ে সব অস্ত্র লেক-তীরের কাঠে বাক্সটার উপর রেখে হাত তুলে দাঁড়াবেন।’
আহমদ মুসার কথা শেষ হওয়ার সংগে সংগেই গিরিপথের উত্তর প্রান্ত থেকে বন্দুক ও মেশিনগানের গর্জন ভেসে আসতে লাগল। আহমদ মুসা বুঝল কর্নেল সুরেন্দ্ররা ফাঁকাগুলী করতে করতে অগ্রসর হওয়া শুরু করেছে।
মিনিট তিনেক পার হলো।
এর পরেই দেখা গেল মহাসংঘের অস্ত্রধারী কর্মীরা এক এক করে গিয়ে কাঠের বাক্সটার উপর অস্ত্রপাতি রেখে সার বেঁধে হাত তুলে দাঁড়াল।
আহমদ মুসা গুনে দেখল ওরা দশজন।
আহমদ মুসা জেনারেল কৃষ্ণমূর্তিকে লক্ষ্য করে বলল, ‘জেনারেল তোমরা মোট কজন এসেছ?’
‘আমাদেরসহ মোট বারজন।’ বলল জেনারেল কৃষ্ণমূর্তি।
‘ধন্যবাদ জেনারেল।’ বলে আহমদ মুসা পকেট থেকে মোবাইল বের করল। কল করল কর্নেল সুরেন্দ্রের নাম্বারে।
ওপার থেকে কর্নেল সুরেন্দ্রের কণ্ঠ পেতেই আহমদ মুসা বলে উঠল, ‘কর্নেল মি. সুরেন্দ্র, ওরা আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছে। ওরা নির্দিষ্ট করে দেয়া জায়গায় অস্ত্র জমা দিয়ে এসে সবাই হাত তুলে দাঁড়িয়েছে। এবার দ্রুত আপনারা চলে আসুন।’
‘ধন্যবাদ স্যার, আপনার প্ল্যান কামিয়াব হয়েছে। আমরা আসছি।

আত্মসমর্পণকারী দশ জনকে সিবিআই জওয়ানরা পিছমোড়া করে বাঁধছিল, আহমদ মুসা দুই বোট তীরে এনে নোঙর করল।
| | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top