৪৩. পাত্তানীর সবুজ অরণ্যে

চ্যাপ্টার

রাত তখন ১টা।
আহমদ মুসা তার নতুন একতলা ভাড়া বাড়ির দরজা নিশব্দে লক করে বারান্দা পার হয়ে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামল। তারপর দু’শ গজের জায়গা পেরিয়ে রাস্তায় উঠে এল।
আহমদ মুসা সে মেলার দিনের ঘটনার পরই হোটেল ছেড়ে এই ভাড়া বাড়িতে এসে উঠেছে। বাছির থানমই তার পাড়ায় এই বাড়ি খুঁজে দিয়েছে। আহমদ মুসার সবচেয়ে সুবিধা হলো, এই পাড়া থেকে যয়নব যোবায়দাদের বাড়ি সোজা হিসাবে মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বে। কিন্তু মাঝখানে একটা পাহাড়, দু’টি উপত্যকা থাকায় ৫ মিনিটের জায়গায় আধা-ঘণ্টা সময় লাগে।
ঠিক আধা ঘণ্টাতেই আহমদ মুসা যয়নব যোবায়দার বাড়ি যে পাহাড়ের উপর তার গোড়ায় গিয়ে পৌছল। একটা পাথরের সিঁড়ি আকাবাঁকা হয়ে শাহ বাড়ি পর্যন্ত উঠে গেছে। বাড়িতে গাড়ি নিয়ে উঠার জন্যে পাহাড়ের গা বেয়ে ভিন্ন পাকা রাস্তা রয়েছে।
আহমদ মুসা সিঁড়ি ব্যবহার না করে সিঁড়ি থেকে একটু দূরে ছোট ছোট গাছ-গাছড়ার আড়াল নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগল।
দূর থেকে দেখলে মনে হয় না, কিন্তু উঠতে গিয়ে দেখল পাহাড় তার ধারণার চেয়ে অনেক উঁচু। শাহ বাড়ির পাশের লনে গিয়ে যখন উঠল, তখন ঘামে নেয়ে উঠেছে আহমদ মুসা।
লনে উঠার পর আহমদ মুসা বাড়ির চারদিক একবার ঘুরে এল। গাড়ি বারান্দা পার হওয়অর সময় দাঁড়ানো দুটি গাড়ির একটি গাড়ি থেকে আসা উত্তাপ অনুভব করল।
আহমদ মুসা গাড়ি দু’টির দিকে এগোলো। স্পর্শ করল দুটি গাড়িই। একটা একেবারেই ঠান্ডা, অন্যটি পুরোপুরি গরম। মনে হচ্ছে দু’চার মিনিট আগে ইঞ্জিনের ষ্টার্ট বন্ধ হয়েছে। দুটি গাড়িই ভালো করে দেখল আহমদ মুসা। গরম গাড়িটায় সাইলেন্সার লাগানো। দ্বিতীয় গাড়িটায় নেই। এই ধরনের সাইলেন্সার যেসব গাড়িতে লাগানো হয়, সেসব গাড়ি কোন গোপন মিশনে যায়। এই রাত ২টায় গোপন মিশনে কে এল এই বাড়িতে? আহমদ মুসা নিশ্চিত ঠান্ডা গাড়িটাই যয়নব যোবায়দাদের হবে। আর গরম গাড়িটা নিশ্চয় কোন আগন্তুকের। এই আগন্তুক কি যয়নব যোবায়দা-পরিবারের বন্ধু, না শত্রু?
সতর্ক হলো আহমদ মুসা।
ধীরে ধীরে বারান্দায় উঠে গেল সে। ভেতরে ঢোকার দরজাটা বন্ধ। দরজার সামনে আসতেই বাতাসে লোহা পোড়ার একটা গন্ধ পেল আহমদ মুসা। এটা নিশ্চয় লেসার বীম দিয়ে লক পোড়ানোর গন্ধ। উদ্বেগ দেখা দিল আহমদ মুসার মনে। তাহলে শত্রুই ভেতরে ঢুকেছে দেখা যায়। কারা হতে পারে? ব্ল্যাক ঈগলরা? তারাই হবে। নিশ্চয় জাবের জহীর উদ্দিনকে হাতে নেয়ার জন্যে যয়নব যোবায়দা তাদের টার্গেট। আজ যয়নব যোবায়দা কি এ বাড়িতে আছে? খোঁজ না নিয়ে এরা আসেনি নিশ্চয়!
বিসমিল্লাহ বলে আহমদ মুসা দরজার হাতল ঘোরাল। দরজা খোলা। দরজা খুলে বিড়ালের মত নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করল আহমদ মুসা। ঘরে আলো নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার।
পেছনে দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকল আহমদ মুসা অন্ধকারকে গা সহা করে নেবার জন্য।
আহমদ মুসা দরজার পেছনে সোজা বিপরীত দিকে তাকিয়েছিল। তার ধারণা এ ঘর থেকে ভেতরে যাবার দরজাটা সোজা বিপরীত দিকেই হবে। কিন্তু না, সেদিকে জমাট অন্ধকার। ঘর লম্বালম্বি, ঘরের বাম ও ডান দিকে তাকাল।
ডান দিকে চোখ পড়তেই একটা আলোর রেশ পেল। ওটাই দরজা।
দরজায় পৌছল আহমদ মুসা।
দরজার পরেই একটা করিডোর। করিডোরটা আরও স্বচ্ছ।
করিডোর সোজা সামনে তাকিয়ে দেখল, করিডোরটা একটা বড় বারান্দায় গিয়ে শেষ হয়েছে।
বারান্দা আরও একটু উজ্জ্বল।
কোত্থেকে সরাসরি একটা আলোর রেশ এসে পড়েছে বারান্দায়।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল আহমদ মুসা।
বারান্দাটি বিশাল বৃত্তাকার একটা অংশ। এই বৃত্তাকার বারান্দার মাঝখানে বিশাল উঁচু একটা পাথুরে বেদি। কয়েকশ’ লোক বসতে পারে সে বেদিতে। বেদির ডান প্রান্তে সিংহাসনকৃতির একটা বড় সুদৃশ্য চেয়ার। সে সিংহাসনের পেছনেই বারান্দায় এসে মিশে যাওয়া উপরে উঠার সিঁড়ি। সিঁড়ির মুখে উজ্জ্বল আলো। সে আলোই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
নিশ্চিত বুঝল আহমদ মুসা, বেদিটি একটা দরবার হল। সুলতান বসতেন সিংহাসনাকৃতির এ চেয়ারে। চেয়ারের দু’পাশ দিয়ে বেদি থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে বারান্দায়। সুলতান সিঁড়ি দিয়ে দু’তলা বা তিন তলা থেকে নেমে চেয়ারের পাশের সিঁড়ি দিয়ে এসে সিংহাসনে বসতেন। এই চেয়ারই একদিন ছিল পাত্তানীর শাসনের আসন।
আহমদ মুসা সিঁড়ির দিকে এগোবে এমন সময় ওপর থেকে নারী কণ্ঠের চিৎকার। কান্নাকাটি। তারপরেই গুলীর শব্দ।
চমকে উঠে আহমদ মুসা সিঁড়ির দিকে ছুটল। বেড়ালের মত নিঃশব্দে ছুটে গিয়ে দু’তলায় উঠল।
তখন কান্না, চিৎকার থেমে গেছে।
উৎকর্ণ হলো আহমদ মুসা। কান্নার শব্দ কি দু’তলা থেকে এসেছিল, না তিন তলা থেকে?
হঠাৎ একটা কণ্ঠ শুনতে পেল সে। ভারী ক্রুব্ধ কণ্ঠ। বলছে, ‘আমরা শুধু যোবায়দাকে নিয়ে যাব। কিন্তু যারা বাধা দেবে সবাইকে হত্যা করব।’
বলে একটু থেমেই কণ্ঠটি চিৎকার করে উঠল, ‘সরে যাও সামনে থেকে।’ পর মুহূর্তেই পরপর দু’টি গুলীর শব্দ। সেই সাথে আর্তচিৎকার।
আহমদ মুসা দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে তিন তলায় উঠল।
দক্ষিণ দিক থেকে শব্দ আসছে। ছুটল সেদিকে।
পৌছল দক্ষিণ প্রান্তে। দেখতে পেল ঘরটি।
কিন্তু ঘরের দরজায় দু’জন দাঁড়িয়ে আছে ষ্টেনগান নিয়ে, ওরা দেখতে পেয়েছে আহমদ মুসাকে। ষ্টেনগান তুলে ধরল ওরা।
উপায়ন্তর না দেখে আহমদ মুসা বাম পাশে নিজেকে মাটির উপর ছুড়ে দিল চোখের পলকে। এক ঝাঁক গুলী উড়ে গেল যেখানে সে দাঁড়িয়েছিল সেখান দিয়ে।
মাটিতে পড়েই আহমদ মুসা পরপর দু’টি গুলী করল দরজার ষ্টেনগানধারী দু’জনকে। ওরা ষ্টেনগানের নতুন লক্ষ্য স্থির করার আগেই গুলী খেয়ে পড়ে গেল।
গুলী করেই আহমদ মুসা গড়িয়ে দরজার সরাসরি সামনের অবস্থান থেকে একপাশে সরে গেল যাতে গুলীর শব্দ শুনে ভেতর থেকে যারা ছুটে আসবে প্রথমেই তাদের চোখে পড়ে না যায় সে। গুলীর শব্দ শুনেই গুলী করতে করতে ভেতর থেকে দু’জন বেরিয়ে এল। সামনে কাউকে না দেখে পাশে খোঁজ করার জন্যে তাকাতে লাগল। এই সময়টায় তাদের গুলী বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই সময়টুকুই আহমদ মুসার জন্যে যথেষ্ট। তার রিভলবার ওদের তাক করল। শেষ মুর্হর্তে ওরা দেখতে পেয়েছিল আহমদ মুসাকে। কিন্তু ষ্টেনগান সক্রিয় হবার আগেই আহমদ মুসার রিভলবারের দু’টি গুলী ওদের ওপর মোক্ষম আঘাত হানল। ভূমি শয্যা নিল ওরা।
গুলী করেই আবার স্থান পরিবর্তনে এগোলো আহমদ মুসা। ভাবল সে, ভেতরে অস্ত্রধারী যারা আছে, তারা এখন সাবধান হবে। না দেখে শুনে গেটের সামনে দৌড়ে আসবে না। সুতরাং আহমদ মুসাকেই এখন ওদের কাছাকাছি পৌছতে হবে।
আহমদ মুসা ফুটবলের মত দ্রুত গড়িয়ে দরজার পাশে দেয়ালের আড়ালে পৌছে উঠে দাঁড়াল। রিভলবারে নতুন করে গুলী লোড করল। তারপর রিভলবার বাগিয়ে দরজার চৌকাঠের সমান্তরাল হবার জন্যে এগোলো।
চৌকাঠের সমান্তরাল থেকে একটু মুখ বাড়াতেই আরেকজন ষ্টেনগানধারীর একেবারে মুখোমুখি হয়ে গেল। সে দরজার এদিকের দেয়াল ঘেঁষে সামনে আসছিল। তারও ষ্টেনগান উদ্যত ছিল, কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল সামনে। সে ট্রিগার টিপে ষ্টেনগানের মুখ ঘুরাতে গিয়েছিল। তবে তার আগেই আহমদ মুসার প্রস্তুত রিভলবারের গুলী তার মাথা গুড়িয়ে দিল।
গুলীর সাথে সাথেই আহমদ মুসা তার মুখটা দরজায় আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তার চোখের অনুসরণ করে তার রিভলবারের নলও ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
ঘরের ভেতরে চোখ পড়তেই আহমদ মুসা দেখল, প্রায় ছয় ফুটের মত লম্বা বডি বিল্ডার জাতীয় একজন লোকের ভয়ংকর বেল্ট মেশিনগান। তার মেশিনগানটা দরজার দিকে তাক করা থাকলেও তার চোখ এসে পড়েছে আহমদ মুসার ওপর। তার চোখে এক বিমূঢ় ভাব ফুটে উঠেছে। সেটা কাটতেই তার পকেট মেশিনগারে ছোট্ট ব্যারেল আহমদ মুসার দিকে ফেরাতে যাচ্ছিল।
আহমদ মুসা কঠোর কণ্ঠে। বলল, ‘তোমার মেশিনগানের ব্যারেল সুঁচ পরিমাণ নড়লে আমি গুলী করব। আর আমার গুলী…………।’
আহমদ মুসা কথা শেষ করতে পারল না। বেপরোয়া লোকটির মেশিনগানের ব্যারেল ঘুরে আসছিল। কথার মাঝখানেই আহমদ মুসার তর্জনি রিভলবারের ট্রিগার টিপে দিয়েছিল।
গুলী গিয়ে বিদ্ধ করল তার হাতকে। মেশিনগান পড়ে গেল তার হাত থেকে।
তার সামনেই পড়েছিল একজন তরুণীর লাশ। সেই লাশের ওদিকে পালংকের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে অভিজাত চেহারার অপরূপ একটি মেয়ে। কিন্তু অসীম আতংকে মুষড়ে গেছে তার চেহারা। মেয়েটিকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে আরেকজন তরুণী। তার মধ্যে রুখে দাঁড়ানো ভাব। আর পালংকের ওপ্রান্তে পালংকের খুঁটিতে ঠেশ দিয়ে আছে এক স্বর্গীয় চেহারার বৃদ্ধা। কিন্তু তার চোখ-মুখে বিপর্যস্ত-বিহবল দৃষ্টি।
হাতে গুলী খেয়েই ছয় ফুট দৈর্ঘ্যের বডি বিল্ডার লোকটি ঝড়ের গতিতে এগোলো মেয়ে দু’টির দিকে। সে বাম হাত দিয়ে পকেট থেকে আরেকটি রিভলবার বের করে নিয়েছিল।
আহমদ মুসা তার মতলব বুঝে ফেলল। সে মেয়ে দু’টিকে ঢাল বানিয়ে নতুন আক্রমণের পথ করতে চাচ্ছে।
‘দাড়াও।’ আহমদ মুসা তীব্র কণ্ঠে বলল।
কিন্তু তার দাঁড়ানোর কোন লক্ষণ নেই। সে প্রায় মেয়েদের পেছনে চলে গিয়েছিল। মেয়ে দু’টিকে সামনে টেনে নেবার জন্য সে হাতও বাড়িয়েছিল।
আহমদ মুসার তর্জনি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার রিভলবারের গুলী সামনের মেয়েটির কানের পাশ দিয়ে গিয়ে বিদ্ধ করল লোকটির বুকের বাম পাশ।
লোকটির দেহ টলে উঠে ছিটকে পড়ে গেল উল্টো দিকে।
আহমদ মুসার মুখে একটা বেদনার ছায়া নামল। মুখটা তার একটু উপর উঠল। তার মুখ থেকে স্বগত বেরিয়ে এল, ‘উঃ স্যরি। এই লোকটিকে মারতে চাইনি। এ জন্যেই প্রথম গুলীটা হাতে করেছিলাম। কিন্তু মারতেই হলো। বাঁচানো গেলে তার কাছ থেকে অনেক কথা আদায় করা যেত।’
বলেই আহমদ মুসা মাটিতে পড়ে থাকা গুলীবিদ্ধ মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। তার আহত স্থানের রক্তে তখনও কাপড় ভিজে উঠতে দেখা যাচ্ছিল। এটা তার বেঁচে থাকার লক্ষণ।
আহমদ মুসা মেয়েটির গলার শা-রগে হাত রেখে দেখল তার নাড়ী সচল। বেঁচে আছে মেয়েটি।
আহমদ মুসা ঘরে ঢুকেই বুঝতে পেরেছে তরুণী মেয়েটার পেছনে পালংকের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অভিজাত সুন্দর মেয়েটিই যয়নব যোবায়দা। আর ওপাশের বয়স্কা মহিলাই যয়নব যোবায়দার দাদী। বাছির থানম বলেছিল যয়নব যোবায়দারা এ বাড়িতেই সময় সময় থাকে। অন্যদিকে যয়নব যোবায়দার সামনের তরুণীটি এবং গুলীবিদ্ধ মেয়েটি বাড়ির পরিচারিকা হবে তা দেখেই বুঝতে পেরেছে আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা দাদীর দিকে চেয়ে বলল, ‘দাদীমা, মেয়েটি এখনও বেঁচে আছে।’
বলেই আহমদ মুসা তাকাল যয়নব যোবায়দার দিকে। তারপর সামনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তুমি এসো। এর আহত জায়গার জামা ছিঁড়ে ফেল। ওখানকার রক্ত মুছে দাও।’
যয়নব যোবায়দা, দাদী এবং পরিচারিকা নূরী রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিল আহমদ মুসার দিকে। যেন আকাশ থেকে পড়ল মেলার মাঠের চ্যাম্পিয়ন সেই লোকটিকে দেখে! সে কি করে এল এখানে? নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে কেন বাঁচাচ্ছে সে তাদেরকে?
দাদীকে উদ্দেশ্য করে আহমদ মুসার কথা এবং পরিচারিকাকে কাজের জন্যে আহবান করা থেকে তারা সম্বিত ফিরে পেল।
আহমদ মুসার নির্দেশ শুনে পরিচারিকা নূরী তাকাল যয়নব যোবায়দার মুখের দিকে।
‘তাড়াতাড়ি যাও, উনি যা বলছেন তা কর।’ বলল যয়নব যোবায়দা। তার বিমূঢ় দৃষ্টি আবার ফিরে গেল আহমদ মুসার দিকে। কে এই লোক? কেমন করে সে বুঝল আজ এই সময় আমি আক্রান্ত হবো? গতকাল এই লোকটিও আক্রান্ত হয়েছিল। তাঁকে আক্রমণ করেছিল যারা এবং আমাকে আক্রমণকারী এরা কি একই গ্রুপের? তা কি করে হয়? আমাকে যারা কিডন্যাপ করতে এসেছিল, তারা নিশ্চয় ভাইয়া ও আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী। এ ষড়যন্ত্রকারীরা তার বিরুদ্ধে যাবে কেন? হাজারো চিন্তা যয়নব যোবায়দার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল।
পরিচারিকা নূরী গিয়ে মেয়েটির গুলীবিদ্ধ স্থানের জামা ছিঁড়ে ফেলল। তারপর নিজের ওড়নার অংশবিশেষ ছিঁড়ে আস্তে আস্তে যত্নের সাথে রক্ত মুছে ফেলল।
আহমদ মুসা একটু ঝুঁকে পড়ে আহত জায়গাটা পরীক্ষা করল। আহমদ মুসা পরিচারিকা নূরীকে মেয়েটির বাম কাঁধটা একটু উঁচু করতে বলল। কাঁধটা উঁচু করলে আহমদ মুসা নিচের দিকটাও পরীক্ষা করল। মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আহমদ মুসার। মুখ তুলে বলল, ‘দাদীমা, মিস যয়নব যোবায়দা এর আঘাত সিরিয়াস নয়। গুলীটা হার্টের অনেক বাইরে দিয়ে কোনাকুণিভাবে এগিয়ে কাঁধের নিচে পাঁজরের প্রান্তে চলে এসেছে। সামান্য অপারেশনেই গুলীটা বের করা যাবে। আর মেয়েটা আঘাতের কারণে ভয়ে সংগা হারিয়েছে।’
‘ধন্যবাদ জনাব। তাহলে তো এখনই ডাক্তার ডাকতে হয়?’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘আপনাদের বিশ্বস্ত কোন ডাক্তার আছে?’ আহমদ মুসার জিজ্ঞাসা।
সংগে সংগে উত্তর দিল না যয়নব যোবায়দা।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘বুঝেছি। ডাক্তার ডাকার দরকার নেই। ডাক্তার বিশ্বস্ত না হলে অহেতুক পুলিশের ঝামেলায় পড়তে হবে। আপনারা রাজি হলে গুলীটি আমিই বের করতে পারি।’
দাদী অনেক আগেই এসে আহত মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়েছিল। বলল আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে, ‘তুমি কেমন ছেলে ভাই, তুমি আমাদের সবাইকে বাঁচালে, এখন আরেকজনকে বাঁচার জন্য অনুমতি চাইছ!’
‘ধন্যবাদ দাদী মা। এখনই অপারেশন হবে।’ বলে পরিচারিকা নূরীকে বলল মেয়েটিকে কাত করে শুইয়ে দিতে।
মেয়েটিকে কাত করে শুইয়ে দিল পরিচারিকা।
আহমদ মুসা জ্যাকেটের কলারের একটা গোপন বোতাম খুলে ভেতর থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা ও কোয়ার্টার ইঞ্চি প্রস্তের একটা ছুরি বের করল। ছুরির এ্যান্সিসেপটিক কভার খুলে ছুরিটি আনফোল্ড করে যয়নব যোবায়দার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনার ফাষ্ট এইড বক্স আছে নিশ্চয়। আনিয়ে দিন প্লিজ।’
‘আছে জনাব। নূরী ওঁকে সাহায্য কর। আমি নিয়ে আসছি।’
বলে যয়নব যোবায়দা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
মিনিট খানেকের মধ্যে ফাষ্ট এইড বক্স নিয়ে হাজির হলো।
আহমদ মুসা সংগে সংগে কাজে লেগে গেল।
বুক ও বাহুসন্ধির মাঝামাঝি জায়গায় গুলীটি আটকে আছে।
জায়গাটায় স্পিরিট ক্লিন করে ছুরি চালাবার আগে নূরীকে লক্ষ্য করে বলল, ‘তুমি এর সামনে হাঁটু গেরে বস। এর দেহটাকে তোমার উপর ঠেস দিয়ে রাখ। মাথা ও দেহটাকে শক্ত করে ধরবে। আঘাত পেলে জেগে যাবার সম্ভাবনা আছে। দেখ যেন না নড়ে। এঁকে ক্লোরোফরম করলাম না। কারণ এ রক্ত ক্ষরণে দূর্বল হয়ে পড়েছে।’
যয়নব যোবায়দা মেয়েটির মাথার কাছে বসে পড়ে বলল, ‘নূরী আমি এর মাথা ধরছি, তুই এর শরীরকে তোর সাথে সেঁটে নিয়ে শক্ত করে ধর।’
আহমদ মুসা দ্রুত ও নিমর্মভাবে ছুরি চালার। মেয়েটি সংগা ফিরে পেয়ে চিৎকার করে উঠল, তখন আহমদ মুসা বুলেটটি বের করে ফেলেছে।
আহমদ মুসা দ্রুত ব্যান্ডেজ করে দিল মেয়েটির অপারেশন করা ও গুলীবিদ্ধ স্থানটি।
যয়নব যোবায়দা, দাদী, নূরী সবাই অপার বিস্ময়ের সাথে আহমদ মুসার কাজ দেখছিল। আর মাঝে মাঝেই তাকাচ্ছিল আহমদ মুসার ভাবলেশহীন, সরল, সুন্দর মুখের দিকে।
ব্যান্ডেজ হয়ে গেলে যয়নব যোবায়দার মুখ ফুঁড়েই যেন বেরিয়ে এল, ‘ধন্যবাদ জনাব। আপনি কি ডাক্তারও।’
‘না, ডাক্তার নই। যা দেখলেন এসব আমি দেখে শিখেছি। আমার দেহেও এমন অপারেশন অনেক হয়েছে তো!’
কথা শেষ করেই আহমদ মুসা নূরীকে বলল, ‘তুমি মেয়েটার সামনেটা ধর, আমি পায়ের দিকটা ধরছি। চলো একে এর বিছানায় শুইয়ে দিই।’
‘স্যার একটু দাঁড়ান। আমি এর বিছানাটা ঠিক করে আসি।’
বলে দৌড় দিল পরিচারিকা নূরী।
‘তুমি কে ভাই, আল্লাহর ফেরেশতার মত এভাবে হাজির হলে? তোমাকে ধন্যবাদ দেবার মত উপযুক্ত ভাষা দুনিয়ায় তৈরি হয়নি ভাই।’ নূরী বেরিয়ে যেতেই বলল দাদী।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘দাদীমা আমাদের এই ক্ষুদ্র কাজকে ধন্যবাদ দেবার মত ভাষা যদি না থাকে, তাহলে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমাকে এই জ্ঞান ও যোগ্যতা দান করেছেন, অপার বিস্ময়ের এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন তাঁকে ধন্যবাদ কিভাবে দেবেন!’
‘তুমি মুসলমান ভাই?’ প্রশ্ন দাদীমার। তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
‘হ্যাঁ, আমি এটা দাবী করি দাদীমা।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আলহামদুলিল্লাহ। কাল মেলার মাঠে যখন খেললে, চ্যাম্পিয়ন হলে, তখন তোমাকে বিদেশী ট্যুরিষ্ট বলা হয়েছিল। তবে আমি তোমার অন্য কোন পরিচয় আছে ভেবেছিলাম।’ বলল দাদীমা।
‘জনাব, কালকে মাঠে যারা আপনাকে আক্রমণ করেছিল, তারা এবং এই আক্রমণকারীরা কি এক?’ দাদী থামতেই প্রশ্ন করল যয়নব যোবায়দা।
আহমদ মুসা মূহূর্তের জন্যে মুখ তুলল যয়নব যোবায়দার দিকে। তারপর মুখ নামিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ আমি এক মনে করি। আপনারা কি কাল মেলায় ছিলেন?’
‘না জনাব। আমরা সব সময়ের মত গতকালও বাসায় বসে দূরবীনে খেলা দেখেছি।’
কথা শেষ করে যোবায়দা আবার সংগে সংগেই বলে উঠল, ‘আক্রমণকারীরা কারা?’
‘এরা ব্ল্যাক ঈগল’-এর লোক।
‘ব্ল্যাক ঈগল কারা?’
‘এরাই থাইল্যান্ডে মুসলমানদের নামে সন্ত্রাস করে মুসলমানদের সন্ত্রাসী সাজাবার কাজ করেছে। বিভ্রান্ত পুতুল কিছু মুসলমানকেও তারা তৈরি করেছে তাদের জন্যে।’
অপার বিস্ময়ের এক সয়লাব এসে আছড়ে পড়েছে যয়নব যোবায়দার চোখে-মুখে। সে সংগে সংগে কথা বলতে পারল না। এই বিস্ময় তার বুকটাকেও যেন কাঁপাচ্ছে। গোটা শরীরকে এই বিস্ময় যেন ওজনহীন অনুভূতিহীন করে দিচ্ছে। যে কথা তারা শত চেষ্টাতেও জানতে পারেনি, যার অস্তিত্ব পুলিশও বিশ্বাস করে না, সে বিষয়টা ইনি এমন অবলিলাক্রমে বলে দিলেন?
নূরী এসে পড়েছে। বলল আহমদ মুসাকে, ‘সব ঠিক-ঠাক, চলুন স্যার।’
আহমদ মুসা ও নূরী ধরাধরি করে মেয়েটির দেহ চ্যাং দোলা করে নিয়ে চলল।
চলে গেল তারা ঘরের বাইরে পরিচারিকাটির ঘরের দিকে্
ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই যয়নব যোবায়দা ধপ করে পালংকের উপর বসে পড়ল।
দাদীও তার কাছে এসে বসল। বলল, ‘আল্লাহর হাজার, লাখো শোকর। তিনিই এই ভাইকে অসহায়দের সাহায্যে পাঠিয়েছেন।’
যয়নব যোবায়দার সম্বিত হারা ভাব কেটে গেল। বলল, ‘কে এই লোক দাদী? আল্লাহর ফেরেশতা নয় তো! সব যোগ্যতা তিনি রাখেন, সব কথা তিনি জানেন। কোন লোকের পক্ষে এটা কি করে সত্য হতে পারে!’
‘আমার বিস্ময় লাগছে, তার কলারের ভেতর অপারেশন করার ছুরিও ছিল। তাহলে কি নেই তার কাছে? সত্যি বলেছিস বোন, ও অবিশ্বাস্য এক মানুষ।’ বলল দাদী।
‘বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে এমন লোক একজনই আছেন। কিন্তু তিনি তো……….।’
কথা শেষ করতে পারলো না যয়নব যোবায়দা। ঘরে ঢুকল আহমদ মুসা ও পরিচারিকা নূরী।
ঘরে ঢুকেই আহমদ মুসা দাদীকে লক্ষ্য করে বলল, ‘দাদী লাশগুলোকে কোথায় লূকাতে পারি? অহেতুক পুলিশের ঝামেলায় পড়া ঠিক হবে না।’
‘আমাদের বাড়ির পেছনে একটা অন্ধ কূপ আছে। এ কূপই এর উপযুক্ত জায়গা। কূপের মুখে পাথর আছে। ওটা সরালেই কুপ ওপেন হয়ে যাবে।’
‘ধন্যবাদ দাদীমা। বলেই আহমদ মুসা পরিচারিকা নূরীকে অনুরোধ করল, ‘চলো, তুমি কষ্ট করে কূপটা আমাকে দেখিয়ে দেবে।’
একটা লাশ কাঁধে তুলতে যেয়ে হঠাৎ থেমে গেল আহমদ মুসা। নূরীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘স্যরি নূরী, একটু অপেক্ষা কর। আমি এদের সার্চ করি।’
ঘরের ৪টি লাশের পকেটে ৪টি মানিব্যাগ, বাড়তি গুলী ব্যারেল এবং সবশেষের শিকার ছয়ফুট লম্বা লোকের কাছ থেকে পাওয়া গেল একটা মোবাইলও। তিনটি মানিব্যাগই টাকায় ভর্তি। একটি মানিব্যাগ থেকেই শুধু বেরুল একটি ইনভেলাপ। ইনভেলাপে পোষ্টাল ছাপ নেই। ইনভেলাপটি এখনও পোষ্ট করা হয়নি বুঝল আহমদ মুসা।
টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলল ইনভেলাপের কভার। পেল ইনভেলাপের ভেতর একখন্ড কাগজ। কাগজে দেড় লাইন হিব্রু ভাষায় লেখা। তা হলো: ‘জুদাহ, নিচের রোডম্যাপ তোমাকে ডেষ্টিনেশনে নিয়ে আসবে।’ এই দেড় লাইন লেখার নিচে একটা রোডম্যাপ আঁকা। রোডম্যাপের স্থানিক ইনডিকেশনগুলোও হিব্রুতে লেখা। রোড শুরু হয়েছে পাত্তানী সিটি থেকে। কয়েকটি স্থান টাচ করে ডেষ্টিনেশন লাল ডট ‘কাতান টেপাংগো’ গিয়ে শেষ হয়েছে। মাঝের ডট চিহ্নিত স্থানগুলোর নাম তার পরিচিত নয়। মানচিত্রে এসব নাম নেই। ‘কাতান টেপাংগো’ নামও মানচিত্রে নেই। কিন্তু নামটি শুনেছে ব্যাংককের হোটেল বেয়ারার কাছে। এখানে জাবের জহীর উদ্দিনকে এনে রাখার কথা। রোডম্যাপের কাগজটির এক কোণে দিক নির্দেশের ইনডিকশেন রয়েছে।
আনন্দে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আহমদ মুসার। সে মুখ তুলল উপরে। স্বগতই তার কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এল, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়্যিন কাদির।’
আহমদ মুসা কাগজটি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘মিস যয়নব যোবায়দা, আপনি কি ‘কাতান টেপাংগো’ চেনেন?’
সংগে সংগে জবাব দিল না যয়নব যোবায়দা। সম্ভবত মনে করার চেষ্টা করছিল।
উত্তর দিল দাদী। বলল, ‘হ্যাঁ চিনি ভাই। কিন্তু হঠাৎ এ নামের কথা বলছ কেন?’
‘পরে বলব দাদীমা’ বলে নূরীকে নির্দেশ দিল টাকার মানিব্যাগগুলো ওদের পকেটে রেখে দাও।
আহমদ মুসা ইনভেলাপ এবং মোবাইলটা পকেটে ফেলে বাইরের ৪ জনকে সার্চ করার জন্যে বেরিয়ে গেল।
ওদের পকেটে টাকার মানিব্যাগ ছাড়া কিছুই পেল না।
আহমদ মুসা ঘরের ভেতরে ফিরে এল। বলল দাদীকে, ‘দাদীমা আপনারা ঐ ঘরে আহতের কাছে যান। নূরী আমাকে কূপটি দেখিয়ে দিয়ে ওখানে যাবে।’
আহমদ মুসা একটি লাশ তুলে নিল কাঁধে। চলতে লাগল। নূরী আগে আগে চলছে।
‘কি কাগজ পেয়ে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল দাদীমা? হঠাৎ ‘কাতান টেপাংগো’র কথা জিজ্ঞেস করল কেন? ‘কাতান টেপাংগো’কি, কোথায় দাদীমা?’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘তোদের সম্মানিত পূর্ব পুরুষ সুলতান আবদুল কাদের কামালুদ্দিন রাজ্যহারা হয়ে ওখানে গিয়ে বিদ্রোহী ঘাঁটি তৈরি করেছিলেন। পরে অস্ত্র ত্যাগ করার পর ওখান থেকে সরে আসেন। এখন ওটা সমাজ বিরোধীদের ঘাঁটি।’ দাদী বলল।
‘এমন স্থানের সাথে ওঁর সম্পর্ক কি?’
‘সেই জানে।’
বলে একটু থেমেই আবার বলা শুরু করল, ‘দেখছিস যোবায়দা, এমনভাবে সে কাজ করছে যেন সেই বাড়ির মালিক আর আমরা মেহমান। মনে হচ্ছে কতদিনের পরিচিত সে। তার সবটাই অদ্ভুত।’
‘এখনও তার পরিচয় জানা হলো না দাদীমা?’
‘ধীরে সুস্থে কথা বলার সময় তো এখনো হয়নি।’
‘চলো দাদীমা। উনি এসে যেন না দেখেন যে আমরা ওঘরে যাইনি। তাছাড়া ও একা পড়ে আছে। আমাদের কারো বরং আগেই যাওয়া উচিত ছিল।’
বলে যয়নব যোবায়দা দাদীকে হাত ধরে তুলে নিয়ে তাকে সাথে করে হাঁটতে শুরু করল।
আহমদ মুসা লাশগুলো সব সরিয়ে ফেলল। ইতিমধ্যে নূরী রক্তের সব চিহ্ন মুছে ফেলল।
‘ধন্যবাদ নূরী, অনেক পরিশ্রম করেছ।’ আহমদ মুসা বলল নূরীকে।
‘কিন্তু স্যার, ব্যাপারটা উল্টো হলো, ধন্যবাদ তো আমরাই আপনাকে দেব।’ বলল নূরী।
‘ঠিক আছে, তোমরা ধন্যবাদ দিও। এখন চলো ওঁদের কাছে।’
আহমদ মুসাদের যেতে হলো না। দাদী ও যয়নব যোবায়দারাই এসে গেল।
‘এসো ভাই বস। তুমি ক্লান্ত। এখন পর্যন্ত বসারও সুযোগ পাওনি।’
দাদী আহমদ মুসাকে নিয়ে এসে বসাল তিন তলার বিশাল ড্রইং রুমটিতে।
বসেই আহমদ মুসা ঘড়ির দিকে তাকাল। বলল, ‘দাদীমা, এখন রাত ৪টা। একটা জরুরী কথা আপনাদের বলতে চাই। বলতে পারি কি না?’
‘আমাদের লজ্জা দিও না, বল।’ বলল দাদী।
‘এ বাড়িতে আপনাদের থাকা চলবে না। এমন কোন বাড়ি আপনাদের থাকার মত আছে কি না যার অবস্থান গোপন রাখা যায়?’ আহমদ মুসা বলল। তার কণ্ঠ গম্ভীর।
‘এ প্রশ্ন পরে। আগে আপনার পরিচয় বলুন প্লিজ। আমাদের জন্যে এতটা করছেন, এতটা ভাবছেন কেন?’ বলল যয়নব যোবায়দা। তার কণ্ঠ গম্ভীর।
‘আপনি আমাকে ডেকেছেন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমি আপনাকে ডেকেছি!’ বিস্ময় বিজড়িত কণ্ঠ যয়নব যোবায়দার।
‘হ্যাঁ, বলে আহমদ মুসা জ্যাকেটের ভেতরের পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে যয়নব যোবায়দার দিকে তুলে ধরল। ছুটে এসে নূরী আহমদ মুসার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে যয়নব যোবায়দার হাতে দিল।
যয়নব যোবায়দা চিঠির দিকে তাকাতেই তার চেহারা পাল্টে গেল। বিস্ময়, আবেগ, উত্তেজনায় সে মুষড়ে পড়ল, কণ্ঠ চিরেই যেন তার একটা আর্তস্বর বেরিয়ে এল, ‘এটা আপনি কোথায় পেয়েছেন?’
‘আন্দামানে।’
চোখ দু’টি ছানাবড়া হয়ে উঠল যয়নব যোবায়দার। মুহূর্ত কয়েক পাগলের মত তাকিয়ে থাকল আহমদ মুসার দিকে। মনে পড়ল ম্যাডাম আয়েশার কথা যে, আহমদ মুসা এখন আন্দামানে।
বলল যয়নব যোবায়দা কম্পিত ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে, ‘আপনি কি আহমদ মুসা?’
‘হ্যাঁ, আমি আহমদ মুসা।’
আহমদ মুসার কণ্ঠ শেষ হবার আগেই যয়নব যোবায়দা সোফা থেকে কার্পেটের উপর সিজদায় ঢলে পড়ল। সিজদায় পড়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল সে। আবেগ রুদ্ধ কান্নায় তার গোটা দেহ কাঁপছে।
কারো মুখে কোন কথা নেই।
বিমূঢ় আহমদ মুসা।
কান্না থামছে না যয়নব যোবায়দার।
দাদী ধীরে ধীরে উঠে যয়নব যোবায়দার গায়ে হাত বুলিয়ে বলল, ‘উঠ বোন। কান্না নয়, এখন তো হাসা দরকার।’
যয়নব যোবায়দা উঠে জড়িয়ে ধরল দাদীকে। বলল, ‘দাদী আল্লাহর এত দয়া করেছেন আমাদর! এত ভালবাসেন তিনি তাঁর অসহায় বান্দাদের। আবেদনটা একেবারে পৌছে দিয়েছেন তাঁর খাস সৈনিকের হাতে।’
দাদী যয়নব যোবায়দার মুখটা তুলে ধরে নিজের ওড়না দিয়ে তার চোখ-মুখ মুছে দিয়ে বলল, ‘তাঁকে ডাকার মত ডাকলে তিনি এভাবেই সাড়া দেন বোন। তুই তাঁকে সেভাবেই ডাকতে পেরেছিস।’
দাদী যয়নব যোবায়দাকে তুলে এনে নিজের পাশে বসাল। তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘সবার স্বপ্ন, সবার আশা, সবার মাথার মণি আহমদ মুসাকে কিভাবে সম্বোধন করব?’
আহমদ মুসা ম্লান হাসল। বলল, ‘দাদী তার নাতিকে যেভাবে সম্বোধন করে, সেভাবেই সম্বোধন করবেন। দাদীমা আমি কারও স্বপ্ন, আশা বা মাথার মণি কিছুই নই, আমি সবার পাশের লোক। আমাকে এভাবে না দেখলে আমি দুঃখ পাব।’
বলে আহমদ মুসা মুহূর্তকাল থেমেই আবার বলল, ‘দাদীমা আমি আপনাদের থাকার ব্যাপারে একটা কথা বলেছিলাম, সেটা ঠিক হওয়া দরকার।’
যয়নব যোবায়দা আহমদ মুসার দিকে তাকাল। বলল, ‘স্যার, আপনি যা বলবেন, আমরা সেটাই করব। সুলতান গড়ে থাকার আমাদের বিকল্প জায়গা নেই। তবে পাত্তানী সিটি এবং ব্যাংককে সে ধরনের বাড়ি আছে।’
‘মিস যোবায়দা’ পাত্তানী সিটির বাড়ি কি আপনাদের জন্যে নিরাপদ?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঐ বাড়িটা আমাদের সেটা কেউ জানে না। এমন কি কাগজপত্রও আমাদের নামে নেই। ইদানিং মাঝে মাঝে আমি ওখানে গিয়ে থাকছি।’ যয়নব যোবায়দা বলল।
‘ওখানে আপনারা কে কে থাকবেন?’
‘আমি দাদী এবং কয়েকজন পরিচারিকা।’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘এলাকাটা কেমন?’
‘শতভাগ মুসলিম এলাকা। পাত্তানী সিটির পুরনো অঞ্চল। আমাদের বাসাটা যেখানে, সেখানে রিকশা জাতীয় গাড়ি ছাড়া অন্য কোন গাড়ি যাবার সুযোগ নেই। আর সেখানে একটা ডাক দিলে মুহূর্তেই শত শত লোক হাজির হতে পারে।’
খুশি হলো আহমদ মুসা। বলল, ‘ঠিক আছে। ভালো জায়গা। আজ ভোরেই আপনাদের এ বাড়ি ছাড়তে হবে।’
‘ঠিক আছে স্যার।’ বলল যয়নব যোবায়দা।
কথা শেষ করেই আবার বলে উঠল, ‘বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কি আমি কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারি?’
‘অবশ্যই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ষড়যন্ত্রকারী দলের নাম আপনি ‘ব্ল্যাক ঈগল’ বলেছেন। এদের সম্পর্কে, ভাইয়া সম্পর্কে নিশ্চয় আরও কিছু জানেন।’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘ব্ল্যাক ঈগল’ সংগঠণ আসলে আন্তর্জাতিক একটি জায়োনিষ্ট সংগঠনের তৈরি। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটাচ্ছে মুসলিম পরিচয়ে। পুলিশের কাষ্টডি থেকে জাবের জহীর উদ্দিনকে এরাই ছিনিয়ে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসের নেতা হিসেবে দেখাবার জন্যে। কিন্তু এই বিষয়টা থাই সরকারকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না প্রমাণের অভাবে। সেদিন পাত্তানী শহরের উপকণ্ঠে সেনা ফাঁড়ির যে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটল তা জাবের জহীর উদ্দিনের নেতৃত্বে হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে। তার রক্তমাখা সার্টকে এর প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। সার্ট ও রক্ত জাবেরের তা পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। আসলে এটা একটা ষড়যন্ত্র। আমি থাই গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি জামায় যে রক্তের দাগ আর তার শরীর থেকে বের হওয়ার সময় এবং সন্ত্রাসী ঘটনার সময় এক কিনা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্যে। সময় এক না হলে সে নির্দোষ প্রমাণিত হবে। আর সময় এক হলে প্রমাণ হবে সন্ত্রাসী ঘটনার সময় জাবের জহীর উদ্দিন ঘটনাস্থলে হাজির ছিল। হাজির থাকলেও সে নির্দোষ হতে পারে, কারণ জোর করে এনে হাজির রাখা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এটা প্রমাণ করা কঠিন।’
থামল আহমদ মুসা।
কিন্তু তৎক্ষণাৎ কেউ কথা বলল না।
দাদী ও যয়নব দু’জনেরই মুখ বেদনায় মুষড়ে গেছে।
একটু পর যয়নব যোবায়দাই নিরবতা ভাঙল। বলল, ‘এখন কি করণীয়?’
‘ওদের একজনকে জীবন্ত ধরতে পারলে তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এগোনো যেত। কিন্তু এ পর্যন্ত ওদের দু’ডজনের মত লোক মারা গেলেও কাউকে জীবন্ত ধরা যায়নি। তবে আমি ব্যাংকক আর পাত্তানীতে এসেছি জাবের জহীর উদ্দিনকে সন্ধান করার জন্যেই। আমি ধারণা করছি, ‘কাতান টেপাংগো’র মত কোন জায়গাতেই তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে।’
‘একটি মানিব্যাগ থেকে একটা কাগজ পেয়ে আপনি খুশি হলেন, তাতে কি আছে?’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘কাতান টেপাংগো যাবার একটা রোডম্যাপ আঁকা আছে।’ আহমদ মুসা বলল।
খুশি হয়ে উঠল যয়নব যোবায়দার মুখ। বলল, ‘আমরা এখন পুলিশের আশ্রয় নিতে পারি না?’
‘সমস্যা আছে। পুলিশের আয়োজন দেখে ওরা পালিয়ে যেতে পারে। আবার পুলিশেরই কেউ আগাম ওদের জানিয়ে দিতে পারে যে, পুলিশ ওদের অবস্থান সবই টের পেয়ে গেছে। সুতরাং পুলিশকে দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তাহলে?’ বলল যয়নব যোবায়দা। তার মুখে অন্ধকার নেমে এসেছে।
‘সব ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ কাতান টেপাংগো যাবার রোড ম্যাপও পাওয়া গেল। এভাবেই আল্লাহ সাহায্য করবেন।’
আহমদ মুসা থামল। থেমেই আবার বলল, ‘ভোর হচ্ছে। আপনারা তৈরি হোন। পরে কথা হবে।’
‘আপনি কোথায় থাকবেন?’ জিজ্ঞাসা যয়নব যোবায়দার।
‘যেখানেই থাকি, আপনাদের ওপর চোখ থাকবে আমার।
মোবাইল বেজে উঠল আহমদ মুসার।
মোবাইল হাতে তুলল সে। মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে প্রসন্ন হলো আহমদ মুসার মুখ।
মোবাইল অন করেই আহমদ মুসা বলল, ‘গুড মর্নিং স্যার। কেমন আছেন?’
‘ভাল আছি। তুমি ভোরে নামায পড়তে ওঠো, তাই টেলিফোন করলাম এ সময়। তোমার জন্যে সুখবর আছে।’ ওপার থেকে বলল পুরসাত প্রজাদীপক।
‘সুখবর? কি সেটা?’
‘তোমার কথাই ঠিক। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে জামার রক্তের ও সন্ত্রাসী ঘটনার সময়ের মধ্যে ৩ ঘণ্টার পার্থক্য রয়েছে।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। আপনাকে ধন্যবাদ স্যার। আপনি পরীক্ষার উদ্যোগ না নিলে এটা সম্ভব ছিল না।’
‘আরও সুখবর আছে। সিক্যুরিটি কমিটি তাদের আগের সিদ্ধান্ত রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তোমার কথাকেই এখন তারা গুরুত্ব দিচ্ছে। আই হোপ, তুমি জিতে যাচ্ছ বিভেন বার্গম্যান।’
‘এর পেছনেও আপনারই অবদান স্যার। সিরিত থানারতা কি এটা শুনেছে?’
‘শুনবে না মানে? সে আমার পেছনে লেগেই আছে। সে তোমার একজন যোগ্য লবিষ্ট।’
‘সে খুব ভাল মেয়ে। সে আমার লবিষ্ট নয় স্যার, সে সত্যের পক্ষে লবীং করছে।’
‘অল রাইট, ইয়ংম্যান, আমি রাখি তাহলে।’
‘স্যার আজ রাতে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। ‘ব্ল্যাক ঈগল’রা যয়নব যোবায়দাকে কিডন্যাপ করতে এসেছিল।’
‘ও গড! নিশ্চয় ওরা ব্যর্থ হয়েছে?’
‘জি স্যার।’
‘ধন্যবাদ বিভেন বার্গম্যান। কিন্তু ওরা হঠাৎ যোবায়দাকে কিডন্যাপের সিদ্ধান্ত নিল কেন?’
‘স্যার আমার মনে হয় জাবের জহীর উদ্দিনকে তাদের পক্ষে কাজ করাতে ব্ল্যাক ঈগল ব্যর্থ হয়েছে। তাই যোবায়দাকে ধরে নিয়ে তাকে গিনিপিগ বানিয়ে জাবের জহীর উদ্দিনকে রাজি হতে বাধ্য করতে চেয়েছিল। স্যার ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। ওরা এখন জাবের জহীর উদ্দিনের দাদীকেও কিডন্যাপ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’
‘তুমি ওদের নিরাপদ করার ব্যবস্থা করেছ নিশ্চয়। আমি কি পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা করব?’
‘না স্যার। পুলিশ পাহারা বসালেই জানাজানি হয়ে যাবে তারা কোথায়।’
‘ঠিক বলেছ বিভেন বার্গম্যান। আর কিছু?’
‘না স্যার। ধন্যবাদ।’
দু’জনেই টেলিফোন রেখে দিল।
মোবাইলের স্পিকার অনক করে আহমদ মুসা কথা বলেছে। যয়নব যোবায়দা, দাদী সবাই শুনতে পেয়েছে দু’জনের কথোপকথন।
আহমদ মুসা টেলিফোন রাখতেই যয়নব যোবায়দা বলল, ‘সেদিনের পাত্তানী শহরে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনার দায় থেকে ভাইয়া মুক্ত হয়েছেন, এটা পরিস্থিতি পাল্টে যাবার টার্নিং পয়েন্ট হবে ইনশাআল্লাহ। এই কৃতিত্ব আপনার স্যার। আপনার হাত ধরে আল্লাহ এটা করিয়েছেন।’ শেষের কথাগুলো কান্নায় রুদ্ধ হয়ে গেল।
পরিচারিকা নূরী দাঁড়িয়ে ছিল যয়নব যোবায়দার সোফার পেছনে। যয়নব যোবায়দা থামতেই সে বলে উঠল, ‘শাহজাদী আপা ও দাদী বেগমের আরও বিপদ হতে পারে স্যার?’ উদ্বেগ ভরা কণ্ঠ তার।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘আমি সম্ভাবনার কথা বলেছি। খারাপ, ভাল সব সম্ভাবনাই সামনে রাখতে হয়।’
‘ধন্যবাদ স্যার। উনি কোন এক সিদ্ধান্ত রিভিউ করার কথা বললেন, সেটা কি স্যার।’ চোখ মুছে বলল যয়নব যোবায়দা।
‘থাইল্যান্ডে মুসলমানদের ওপর সন্ত্রাসী ব্লেম দেবার জন্য আবার তৃতীয় পক্ষ কাজ করছে, তারাই সব সন্ত্রাসী ঘটনার জন্যে দায়ী এবং তারাই জাবের জহীর উদ্দিনকে কিডন্যাপ করেছে- যা আগে থাই ন্যাশনাল সিক্যুরিটি কমিটি মেনে নেয়নি। তারা এখন সিদ্ধান্ত রিভিউ করতে রাজি হয়েছে রক্তমাখা জামার ষড়যন্ত্র প্রকাশ হবার পর।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আলহামদুলিল্লাহ।’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘কার সাথে কথা বললে তুমি ভাই।’ জিজ্ঞেস করল দাদী।
‘ইনি থাই গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী প্রধান পুরসাত প্রজাদীপক। তার আরও একটা পরিচয় আছে, তিনি জাবের জহীর উদ্দিনের খুব ঘনিষ্ঠ সিরিত থানারতার পিতা।’
যয়নব যোবায়দা ও দাদী দু’জনেই চমকে উঠে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। যয়নব যোবায়দা জিজ্ঞাসা করল, ‘সিরিত থানারতা কি করেন? লেখা পড়া করেন? কোথায় পড়েন?’
‘জাবের জহীর উদ্দিন ও সিরিত থানারতা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। খুব ভাল মেয়ে সে। জাবের জহীর উদ্দিনের ব্যাপারে সে খুবই আন্তরিক। অনেক সাহায্য করেছে সে আমাকে। গতকাল বিকেলেও টেলিফোন করেছিল এদিকের অবস্থা জানার জন্যে। আমি যদি আপনাদের দেখা পাই, তাহলে তার সমবেদনা ও শুভেচ্ছা আপনাদের দু’জনকে জানাতে বলেছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমাদের শুভেচ্ছা-সমবেদনা তার প্রতি।’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘তাকে না দেখেই গ্রহণ করলেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘জনাব আহমদ মুসা যার পক্ষে বলেন, সে কত বড়, তার কত সৌভাগ্য! তার সম্পর্কে জানা আর কিছু থাকে না স্যার।’ যয়নব যোবায়দা বলল।
‘বোনকে এখনি দেখতে ইচ্ছা করছে আমার।’ বলল দাদী।
‘সে ব্যবস্থাও হয়ে যাবে দাদীমা। এখন দয়া করে আপনারা উঠুন। আপনাদের পৌছে দিয়ে আমাকে সুলতান গড়ে আবার ফিরে আসতে হবে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘সংগে সংগেই কেন?’ জিজ্ঞাসা যয়নব যোবায়দার।
‘ব্ল্যাক ঈগলের লোকরা সকাল থেকে দিনের কোন এক সময় এই বাড়িতে আসবে তাদের লোকদের খোঁজ নিতে, আপনাদের খোঁজ নিতে। আমি ফিরে এসে তাদের জন্যে অপেক্ষা করতে চাই।
‘স্যার, আপনি নিজের কথা ভাবেন না? আপনার এখন রেষ্ট অপরিহার্য।’ বলল যয়নব যোবায়দা। কণ্ঠ তার খুব নরম।
‘কিন্তু মিস যোবায়দা, ঐ কাজটা বেশি প্রয়োজন।’
বলেই আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল।
উঠে দাঁড়াল অন্য সবাই।

Top