৪৩. পাত্তানীর সবুজ অরণ্যে

চ্যাপ্টার

পাত্তানী সিটির সাগর তীরের ‘সি ভিউ ইন্টারন্যাশনাল’ হোটেল।
ছ’তলার একটি ভিআইপি স্যুট।
আইজ্যাক জ্যাকব টেলিফোন রিসিভার ক্রাডলের উপর রেখে রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছল। ডীপ এসি সত্ত্বেও ঘাম ঝরছে তার কপাল থেকে।
ধপ করে সোফায় বসে পড়ল।
বস হাবিব হাসাবাহর যত ধমক আজ সে শুনেছে, গোটা জীবনে শোনা সব মন্দ কথা একত্র করলেও তার সমান হবে না। গা থেকে যে ঘাম ঝরেছে, তা শরীরের কষ্টের অসহায় কান্না।
অবশ্য গাল শোনার মতই ঘটনা ঘটেছে।
পরশু দিন মেলার মাঠে আমাদের লোকরা একজন যুবককে সন্দেহ করেছিল। তাকে আটকাবার জন্যে ওরা চারজন আক্রমণ করেছিল যুবকটিকে। কিন্তু যুবকটি চারজনকেই হত্যা করে। আবার গত রাতে জাবের জহীর উদ্দিনের বোন যয়নব যোবায়দাকে ধরে আনার জন্যে গিয়েছিল ৮ জন বাছাই করা লোক। তাদের নেতৃত্বে ছিল শীর্ষ কমান্ডো ড্যান। তাদের বাধা দেয়ার মত কেউ ছিল না বাড়িতে মাত্র ৫ জন মেয়ে ছাড়া। তাদের মধ্যে তিনজনই পরিচারিকা। একজন ছিল আশি বছরের বৃদ্ধা। কিন্তু সেই ৮ জনের কোন সন্ধান নেই। কমান্ডো নেতা ড্যানের মোবাইল নিরব। এই অবস্থায় কারো জন্যেই স্থির থাকার মত নয়।
ঘরের দরজা ঠেলে প্রবেশ করল বেয়ারা। বলল, ‘স্যার, বেনজামিন স্যার এসেছেন।’
‘নিয়ে এসো।’ বলে আইজ্যাক সোফা থেকে উঠে অফিসিয়াল টেবিলের চেয়ারে গিযে বসল।
আইজ্যাক জ্যাকব ‘ব্ল্যাক ঈগল’-এর পাত্তানী সিটির প্রধান। সুলতান গড়ও তারও অধীনে।
ঘরে প্রবেশ করল বেঞ্জামিন বেকার।
টেবিলের সামনে চেয়ার দেখিয়ে তাকে বসতে বলল আইজ্যাক জ্যাকব।
বেঞ্জামিন বেকার হলো পাত্তানী শহর অঞ্চলের কমান্ডো নেতা।
‘কিছু শুনেছ?’ বেঞ্জামিন বসতেই প্রশ্ন করল আইজ্যাক জ্যাকব।
‘জি স্যার। কাতান টেপাংগো থেকে লাদিনো টেলিফোন করেছিল কিছুক্ষণ আগে।’
‘কি ভাবছ তুমি?’
‘স্যার আমার মতে লেভি নিখোঁজ বা নিহত হওয়ার দিন সুলতান গড় ট্যুরিষ্ট হোটেলে যে বিদেশী উঠেছিল, সেই সব নাটের গুরু। সে লেভিকে হত্যা করেছে, মেলার মাঠের আমাদের চারজনকে হত্যাকারী সে, তাও প্রমাণিত হয়েছে। হত্যাকান্ডের পর সে আর হোটেলে নেই। আমার মতে শাহ বাড়ি অভিযানে যে অসম্ভব কান্ড ঘটেছে তার পেছনে সেই রয়েছে।’
‘ধন্যবাদ বেঞ্জামিন, আমাদের সবারও একই কথা। সেই এখন আমাদের প্রধান টার্গেট। এখনই তোমাকে বেরিয়ে পড়তে হবে। নিচে দু’গাড়ি লোক প্রস্তুত আছে। প্রথমে শাহ বাড়ি যাবে। সেখানকার প্রতি ইঞ্চি স্থান সন্ধান করবে। যুবকের এবং যয়নব যোবায়দাদের খোঁজ করবে। বসের নির্দেশ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে সুখবর দিতে হবে। এর জন্যে যা করা দরকার করবে। পাত্তানী শহরাঞ্চলের সহকারী পুলিশ প্রধান মহিদল তোমাকে সবরকম সহায়তা করবে। পুলিশ চাইলেও পাবে। কিন্তু যেভাবেই হোক সেই যুবক ও যয়নব যোবায়দাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাতে পেতেই হবে।’
‘যুবকটি বিভেন বার্গম্যান নয় তো, ব্যাংককে যে আমাদের অনেক সর্বনাশ করেছে?’ বলল বেঞ্জামিন বেকার।
‘সেটা জানার চেষ্ট চলছে। ছদ্মবেশ ধারণে যুবকটি অসম্ভব দক্ষ। সুলতান গড় ট্যুরিষ্ট হোটেল থেকে যুবকটির ফটো পাওয়া গেছে, সেটা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।’ আইজ্যাক জ্যাকব বলল।
‘ধন্যবাদ স্যার, আমি উঠছি।’ বলল বেঞ্জামিন বেকার।
‘এসো। আই উইস ইউ গুড লাক।’ আইজ্যাক জ্যাকব বলল।
বেঞ্জামিন ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
পাঁচ মিনিট পর নিচ থেকে ‘ব্ল্যাক ঈগল’এর কোডেড হর্ন শুনতে পেল আইজ্যাক। জানালা দিয়ে নিচে হোটেলের বিশাল কারপার্কের দিকে তাকিয়ে আইজ্যাক দেখতে পেল যে, ‘ব্ল্যাক ঈগল’এর তিনটি গাড়ি হোটেলের গেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

পরবর্তী বই
‘ব্ল্যাক ঈগলের সন্ত্রাস’

Top