৪৪. ব্লাক ঈগলের সন্ত্রাস

চ্যাপ্টার

ভোর ৫টা। সূর্য ওঠার অনেক বাকি।
কয়েক কপি ব্যাংকক টাইমস হাতে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন।
ফজরের নামায পড়ার পর পত্রিকার জন্যে বাইরে গিয়েছিল।
দু’কপি নিজেদের জন্যে রেখে অবশিষ্ট ২ কপি কাগজ পরিচারিকার হাতে দু’তলায় পাঠিয়ে দিল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন।
নামায পড়ে শুয়ে ছিল আহমদ মুসা।
ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন ১ কপি কাগজ আহমদ মুসার দিকে এগিয়ে দিল।
আহমদ মুসা পত্রিকা হাতে না নিয়ে বলল, ‘তুমি পড় আমি শুনি ফরহাদ।’
বেডের পাশে সোফায় বসল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন। বলল, ‘পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ঘটনাকে পত্রিকা লীড আইটেম করেছে স্যার। একদম আট কলাম ব্যানার।’
‘পড়।’ বলল আহমদ মুসা।
‘স্যার হেডিংটা হলো: ‘অনেক সন্ত্রাসী কর্মকা–র সাথে জড়িত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের ৩৬ জনকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে হামলার প্রাক্কালে পাকড়াও করা হয়েছে।’ হেডিং এর নিচে একটা শোল্ডার। তা হলো, ‘সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজশকারী ডিএসপি মহিদলকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে।’
‘আমার অনুমান ঠিক হয়েছে। এখন পড় নিউজটা।’
পড়তে শুরু করল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন, ‘গত রাতে পাত্তানী পুলিশ হেডকোয়ার্টারে হামলার চেষ্টা কালে ‘ব্ল্যাক ঈগল’ নামের এক সন্ত্রাসী গ্রুপের ৩৬ জন সন্ত্রাসী আটক হয়েছে। এর আগে এই রাতেই সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজশকারী ডিএসপি মহিদল পুলিশ হেডকোয়ার্টারে এক সন্ত্রাসী অপতৎপরতা চালানোর সময় আহত হয়ে গ্রেফতার হন।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত রাতে একজন শুভাকাঙক্ষী টেলিফোনে পাত্তানী এসপি উদয় থানিকে জানান যে, তার আশংকা আজ রাতে পাত্তানী পুলিশ হেডকোর্টার সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তিনি আরও জানান, পাত্তানী ডিএসপি মহিদলের সাথে সন্ত্রাসীদের যোগসাজশ রয়েছে। শুভাকাঙক্ষী ব্যক্তিটি তার সন্দেহের সমর্থনে বিভিন্ন তথ্য দেন। ডিএসপি আড়ি পেতে এই টেলিফোন শুনছিলেন অথবা চলার সময় তার কানে কথা আসে। ডিএসপি যখন বুঝতে পারে সন্ত্রাসীদের সাথে তার যোগসাজশের কথা এসপি উদয় থানি জেনে ফেলেছে, তখন সে দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে হত্যার জন্যে গুলী করে এসপি উদয় থানিকে। শেষ মুহূর্তে টের পাওয়ায় উদয় থানি নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ হন। তবে তার হাতে গুলী লাগে। এসপিকে ডিএসপি’র গুলী করাটা একজন পুলিশ অফিসারের কাছে ধরা পড়ে যায়। ডিএসপি দ্বিতীয় গুলী করার আগেই তিনি ডিএসপির হাতে গুলী করেন। মরিয়া ডিএসপি বাম হাতে রিভলবার তুলে নিয়ে পুলিশ অফিসারকেও গুলী করতে যাচ্ছিল, এই সময় পেছন দিক থেকে ছুটে আসা দু’জন পুলিশ ডিএসপির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তার হাত থেকে রিভলবার কেড়ে নেয়। এভাবে ধরা পড়ে যায় ডিএসপি মহিদল।
ডিএসপি মহিদল গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আক্রমণের গোটা প্ল্যান ধরা পড়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন। সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ছিল, ডিএসপি মহিদল বিশেষ ক্লোরোফরম গ্যাস দিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ে আধা ঘণ্টার জন্য সংজ্ঞাহীন করে ফেলবে। ডিএসপি মহিদল নিজেও সংজ্ঞাহীন হবে সন্দেহের বাইরে থাকার জন্যে। এই আধা ঘণ্টা সময়ে সন্ত্রাসীরা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রবেশ করে তাদের ১২ জন বন্দী সহযোগীকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে।
এসপি উদয় থানির কঠোর নির্দেশে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের ঘটনা এবং ডিএসপি মহিদল ধরা পড়ার ঘটনা গোপন রাখা হয় এবং নাটকের দৃশ্য এমনভাবে সাজানো হয় যাতে সন্ত্রাসীরা মনে করে তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ হয়েছে। এই বিশ্বাস নিয়ে সন্ত্রাসীরা যখন হেডকোয়ার্টারে প্রবেশ করবে এবং আটক সাথীদের উদ্ধার করতে যাবে, তখন তাদের জালে আটকানো হবে।
এসপি উদয় থানির পরিকল্পনা শতভাগ কার্যকরী হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রবেশকারী ৩৬ জন সন্ত্রাসীর সকলকেই আটক করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ব্ল্যাক ঈগল এর দু’জন বিদেশী বড় নেতাসহ কয়েকজন বিদেশী রয়েছেন।
সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কিত একটা প্রশ্নের জবাবে পুলিশের একটি সূত্র বলে, ‘পাত্তানী অঞ্চলে সাম্প্রতিক সবগুলো ঘটনায় ব্ল্যাক ঈগল জড়িত। তারা সুপরিকল্পিতভাবে তাদের সন্ত্রাসের দায় চাপাত পাত্তানী মুসলমানদের ঘাড়ে। তাদের এই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জাবের জহীর উদ্দীনসহ বেশ কিছু পাত্তানী মুসলিম গ্রেফতার হয় বলে মনে করা হচ্ছে।’
অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে এসপি উদয় থানি পুলিশকে তথ্য প্রদানকারী শুভাকাঙক্ষী ব্যক্তির পরিচয় প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে বলেন, তিনি থাই জনগণের বন্ধু। তার একক সাহায্যেই সন্ত্রাসীদের ষড়যন্ত্রকে দিনের আলোতে আনা সম্ভব হয়েছে।
বিনা রক্তপাতে বিপুল সংখ্যক ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের ধরার পরিকল্পনা এবং তার সফল বাস্তবায়নে এসপি উদয় থানি সরকারসহ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছেন।
জানা গেছে গত রাতেই ৪৮ জন সন্ত্রাসীকে একটা বিশেষ বিমানে ব্যাংককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এত বিপুল সন্ত্রাসী এভাবে হাতে-নাতে ধরা পড়ার ঘটনা থাইল্যান্ডের ইতিহাসে অনন্য। আজ থেকেই সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবার কথা।’
আহমদ মুসা শুয়ে থেকে খবর পড়া শুনছিল।
ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন খবর পড়া শেষ করতেই আহমদ মুসা বলে উঠল, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আশার চেয়ে ফল আল্লাহ বেশি দিয়েছেন।’
‘হ্যাঁ ভাই, আহমদ মুসাকে আল্লাহ অসীম ভালোবাসেন। আহমদ মুসা নিকষ অন্ধকারে রাখলেও তা সোনালী সোবহে সাদেক রূপ নেয়। তোমাকে ধন্যবাদ ভাই।’
আহমদ মুসা ও ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন দু’জনেই চোখ ফেরাল। দেখল দাদী ও যয়নব যোবায়দা দাঁড়িয়ে। তাদের হাতেও কাগজ।
আহমদ মুসারা তাদের দিকে তাকাতেই দাদী বলল, ‘আমরা এ খবরটা আগেই শুনেছি থাই টিভি’র ওয়ার্ল্ড চ্যানেলে। নিউজের প্রায় সব কথাই দেখছি টিভিতে বলেছে। আমরা কানকে বিশ্বাস করতে পারিনি। খবরের কাগজ দেখে তবেই প্রাণ পেয়েছি। তাই কাগজ নিয়েই ছুটে এসেছি ভাই।’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল দাদী।
‘আল্লাহর হাজার শোকর দাদীমা। সরকারের দিক থেকে অন্তত নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। পাত্তানী মুসলমানদের এখন সরকারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে না। জাবের জহীর উদ্দিনকে তো সরকারিভাবেই নির্দোষ করা হলো।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ভাইয়াকে উদ্ধারের জন্যে তো সরকারও উদ্যোগ নেবেন।’ যয়নব যোবায়দা বলল।
‘অবশ্যই নেবে বোন।’ বলল আহমদ মুসা।
‘স্যার আপনিও সরকারের উপর ভরসা করছেন? আপনি আসার আগ পর্যন্ত সরকার সত্য উদ্ধার করতে পারেনি, চেষ্টাও করেনি। ব্ল্যাক ঈগলের কাঁউকে ধরার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সরকারের কোন কৃতিত্ব নেই। গত রাতে ৩৬ জন সন্ত্রাসী ধরার কৃতিত্বও আপনার। ওরা এটা স্বীকারও করেছে।’ ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন বলল।
‘ভাইয়া আমি সরকারের উপর নির্ভর করিনি। সরকার উদ্যোগ নিতে পারে কিনা আমি সেই কথা বলেছি।’ বলল যয়নব যোবায়দা। তার কণ্ঠে অভিমানের সুর।
আহমদ মুসার ঠোঁটে অস্পষ্ট হাসি ফুটে উঠল। বলল যয়নব যোবায়দার কথার উত্তরে, ‘ফরহাদ আমার সরকার নির্ভরতার কথা বলেছে।’
‘ও ভালো বুদ্ধিজীবী ভাইয়া। সে ‘আপনি’ বলেনি বলেছে, ‘আপনিও’। এটা বলে সে বুঝাতে চেয়েছে আমি যয়নব তো সরকারের উপর নির্ভর করেছিই, আপনিও নির্ভর করলেন?’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘যয়নব যোবায়দা ঠিকই বলেছে ফরহাদ। তুমিও ‘তুমি ভালো বুদ্ধিজীবী’ প্রশংসা পেয়েছ। তুমি আর কথা বাড়িয়ো না।’
‘তুমি ঠান্ডা বিরোধটা মিটিয়ে দিয়ে ভালো করেছ। এই প্রথম ফরহাদকে যয়নবের বিপরীত একটা কথা বলতে দেখলাম।’ দাদী বলল।
‘এটা ভালো দাদী। ওরা একে অপরকে সমান ভাবে, এটা স্বাভাবিক।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আল্লাহ বিপদ দূর করুন। আমার ভাই জহীর ফিরে আসুক। তারপর তোমার উপস্থিতিতে এদের দু’জনকে এক….।’
দাদীর কথার মাঝখানেই বেজে উঠল আহমদ মুসার মোবাইল।
থেমে গেল দাদী।
আহমদ মুসা মোবাইল অন করতেই দেখল স্ক্রীনে পুরসাত প্রজাদিপকের মোবাইল নাম্বার। আহমদ মুসা বলল, ‘গুড মর্নিং স্যার।’
‘গুড মর্নিং বিভেন বার্গম্যান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তোমাকে এই টেলিফোন করছি। তিনি তোমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তুমি শুধু পাত্তানীর মুসলমানদের বাঁচাওনি, তুমি বাঁচিয়েছ থাই জনগণকে বিভেদের হাত থেকে।’ বলল থাই সরকারী গোয়েন্দা প্রধান পুরসাত প্রজাদিপক।
‘তাকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাবেন স্যার। সরকারের পরোক্ষ সহযোগিতা না পেলে আমার স্বাধীনভাবে এগুনো সম্ভব হতো না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘যে ৪৮ জন সন্ত্রাসীকে পাত্তানী থেকে ব্যাংকক আনা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়ে গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশী আছে। আমরা আশা করছি, ষড়যন্ত্রের শেকড়সহ গোটা ছক আমরা পেয়ে যাব। তুমি অসাধ্য সাধন করেছ বিভেন বার্গম্যান। আমরা বিরাট ঋণী হয়ে পড়লাম।’ বলল পুরসাত প্রজাদিপক।
‘এসব থাক স্যার। আমরা এখনও লক্ষে পৌছিনি। আমার থাইল্যান্ডে আসার প্রধান লক্ষের অন্যতম হলো, জাবের জহীর উদ্দিনকে মুক্ত করা। সে লক্ষ্য এখনও অর্জিত হয়নি।’
আহমদ মুসার মোবাইলের রীলে স্পীকার অন ছিল। মোবাইলের এ কথোপকথন দাদী, যয়নব যোবায়দা এবং ফরহাদসহ সবাই শুনছিল। আহমদ মুসা এটা তাদের শোনায় এ কারণে যে, সব বিষয়ের সাথে তারা জড়িত। সব কথা তাদের জানা দরকার।
আহমদ মুসা কথা শেষ করলেও সংগে সংগে উত্তর এল না পুরসাত প্রজাদিপকের কাছ থেকে।
কয়েক মুহূর্ত পর ওপার থেকে শান্ত, ভারী কণ্ঠ ভেসে এল। বলল, ‘বিভেন বার্গম্যান, এদিকে নতুন সমস্যার সৃষ্টি হলো।’
‘কি সমস্যা?’ এই মাত্র পাত্তানী ও ব্যাংকক পুলিশ হেডকোয়ার্টারকে একজন মোবাইল টেলিফোনে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪৮ জন সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেয়া না হলে তারা জাবের জহীর উদ্দিনকে হত্যা করবে এবং আরও কিছু করবে যা থাই সরকার কল্পনাও করতে পারে না।’
আহমদ মুসা টেলিফোন শুনতে শুনতেই তাকাল দাদীদের দিকে। দেখল তাদের চোখে-মুখে নেমে এসেছে আতংক।
সংগে সংগেই উত্তর দিল আহমদ মুসা। বলল, ‘হুমকিটা নিসন্দেহে বড় স্যার। কিন্তু এর দ্বারা তারা তাদের ব্যর্থতা ও দুর্বলতার প্রমাণ দিয়েছে।’
‘কেমন করে?’
‘ওরা জাবের জহীর উদ্দিনকে ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছিল তাকে তাদের পক্ষের প্রমাণ করে মুসলমানদের সন্ত্রাসী বানানোর ষড়যন্ত্র সফল করার জন্যে। কিন্তু সেই জাবের জহীর উদ্দিনকেই তারা প্রধান বিপক্ষ দাঁড় করাচ্ছে। এর অর্থ থাইল্যান্ডে তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।’
‘ঠিক বলেছ বিভেন বার্গম্যান। কিন্তু ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিছু একটা করে ফেলতে পারে, এ আশংকা আছে। এখন তোমার চিন্তা বল। এখানে সবাই এটা জানতে চায়।’
‘প্রতিশোধমূলক সন্ত্রাসী কিছু ঘটনা তারা ঘটাতে পারে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তবে মনে করি, জাবের জহীর উদ্দিন ওদের দরকষাকষির শেষ অস্ত্র। এই অস্ত্রকে তারা শুরুতেই ব্যবহার করবে বলে মনে হয় না।’
‘আমাদের চিন্তাও এই রকম। কিন্তু নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। সরকার খুবই উদ্বিগ্ন। পত্র-পত্রিকার সব সমালোচনা সরকারকেই বিদ্ধ করবে। তাড়াতাড়ি কিছু একটা করতে হবে।’
‘স্যার পাত্তানীর ‘কাতান টেপাংগো’ স্থানটা কোথায়?’
‘ওটা পাত্তানী ও মালয়েশিয়া সীমান্ত এলাকার একটা পাহাড়। এ জায়গার কথা বলছ কেন? জাবের জহীর উদ্দিনকে তারা ওদিকে নিয়ে যেতে পারে?’
‘আমার সন্দেহের একটা স্থান ওটা।’
‘হ্যাঁ বিভেন বার্গম্যান। তোমার সন্দেহের পেছনে যুক্তি আছে। কাতান টেপাংগো’র একটা ইতিহাস আছে। এক সময় পাত্তানীদের ওটা একটি আশ্রয় ছিল। ওখানে কিছু অবকাঠামোও ছিল। কিন্তু ভূমিকম্পে তা নষ্ট হয়ে গেছে বলে শুনেছি। ও এলাকায় কখনও আমি যাইনি।’
‘স্যার পাহাড়ের একটা ম্যাপ এবং ওখানে যাবার পথের বিবরণ দিয়ে আপনি সাহায্য করতে পারেন?’
‘অবশ্যই পারব। আজই তা পেয়ে যাবে। কিন্তু তুমি যেতে চাচ্ছ না কি? শুনলাম তুমি আহত। তুমি এ কাজ কর না। তুমি পরামর্শ দাও। আমরা সেখানে বাহিনী পাঠাব। দরকার হলে তুমি তাদের সাথে যাও।’
‘না স্যার। আপনাদের বাহিনী যাক। কিন্তু আমার পথ হবে ভিন্ন।’ ‘কাতান টেপাংগো’র ম্যাপ ও বিকল্প সব রাস্তার বিবরণ পাওয়ার পর আমি এ নিয়ে আলোচনা করব।’
‘বুঝেছি। ঠিক আছে আলোচনা হবে। বিভেন বার্গম্যান, তুমি একটু কথা বল সিরিত থানারতার সাথে। সে কান্নাকাটি করছে।’
‘ঠিক আছে স্যার।’
ওপার থেকে সিরিত থানারতার কণ্ঠ শোনা গেল। বলছিল, ‘হ্যাঁলো, কেমন আছেন ভাইয়া আপনি?’ কান্নাজড়িত কণ্ঠ সিরিত থানারতার।
‘আমি ভালো আছি। কিন্তু তোমার চোখে পানি কেন?’
‘ভাইয়া আপনি ভালো করে জানেন, ওরা মানুষ নামের পশু। ওরা সব করতে পারে ভাইয়া।’
‘কিন্তু সিরিত থানারতা, সব সময় ‘যা ইচ্ছা তা করা’র ইচ্ছা পূরণ হয় না।’
‘আপনি আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা। তিনি আপনার কথা সত্যে পরিণত করুন।’
‘জাবের জহীর উদ্দিনের বোন ও দাদী আমার পাশে রয়েছেন। তুমি তাদের সাথে কথা বল।’
‘ওরা কথা বলবেন? মন্দ বলবেন না আমাকে?’
‘ওরা সব জানেন। তোমাকে খুব ভালো জানেন ওরা।’
‘ঠিক আছে ভাইয়া।’
আহমদ মুসা টেলিফোনটা দিল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিনকে যয়নব যোবায়দাকে দেবার জন্যে এবং বলল, ‘যয়নব যোবায়দা আগে কথা বল, তারপর দাদীও কিছু বলবেন।’
যয়নব যোবায়দা মোবাইল হাতে নিল। যয়নব যোবায়দা কথা শুরু করার আগেই আহমদ মুসা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
বাইরেটা একটু দেখে আশ-পাশের দোকান ও পুলিশদের সাথে কথা বলে আহমদ মুসা ফিরে এল কয়েক মিনিট পর। দোকান থেকে টুকিটাকি কিছু জিনিসও কিনেছে আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা ঘরে ঢুকতেই দাদী বলে উঠল, ‘এইমাত্র কথা শেষ করলাম সিরিত থানারতার সাথে। তুমি তাকে দেখছি মুসলমান বানিয়ে ফেলছ ভাই। সালাম, কালাম, আল্লাহ হাফেজ সবই যে একদম মুসলমানের মত। খুব ভালো মেয়ে তো থানারতা। কিন্তু জহীর সব কথাই গোপন রেখেছে আমাদের কাছ থেকে।’
‘মনে হয় দাদীমা, জহীর অতটা এগোয়নি যতটা এগুলে আপনাদের বলা দরকার। আমার মনে হয়েছে জহীরের চেয়ে মেয়েটাই বেশি এগিয়েছে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আমারও তাই মনে হয় দাদীমা।’ যয়নব যোবায়দা বলল।
‘দাদীমা, ডাক্তার খালাম্মার বাসাটা কোন জায়গায়?’ আহমদ মুসা জিজ্ঞেস করল দাদীকে উদ্দেশ্য করে।
‘বাসাটা পাশেই। কিন্তু সোজা যাবার পথ নেই। উল্টো দিক থেকে পথ ঘুরে যেতে হয়। কেন জিজ্ঞেস করছ এ কথা?’ দাদী বলল।
‘আপনি, যয়নব যোবায়দা ও ফরহাদ এখনি ওখানে চলে যান।’ বলল আহমদ মুসা।
যয়নব যোবায়দা, দাদী, ফরহাদ সকলের চোখে-মুখে নতুন উদ্বেগ এসে ছায়া ফেলল। যয়নব যোবায়দা বলল, ‘আপনি কি কিছু আশংকা করছেন?’
আহমদ মুসা উত্তর দেবার আগেই তার মোবাইল বেজে উঠল।
আহমদ মুসা যয়নব যোবায়দার উদ্দেশ্যে ‘স্যরি’ বলে টেলিফোন ধরল। মোবাইল কানে তুলেই গলা পেল পাত্তানী সিটি এসপি উদয় থানির।
আহমদ মুসা ‘গুড মর্নিং’ বলতেই উদয় থানি বলল, ‘গুড মর্নিং বলবেন না স্যার, ব্যাড মর্নিং বলুন। গত রাতে আপনার কথায় সেই যে ছেদ পড়ল, তারপর গোটা রাতই বলা যায় দারুণ ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। আপনার সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। বিশেষ করে ঐ মোবাইল সেটটা হারিয়ে যাওয়ায় আপনার নাম্বারটাও হারিয়ে ফেলি। এখন ব্যাংকক থেকে আপনার নাম্বার নিয়ে টেলিফোন করছি। আপনি আমাকে মাফ করবেন স্যার। আমরা আজ যে বিশাল বিজয় লাভ করেছি এবং একজন বিশ্বাসঘাতকও ধরা পড়েছে, সেটা এককভাবে আপনার সাহায্যেই। আপনাকে হাজারো অভিনন্দন স্যার।’ প্রায় এক নিঃশ্বাসে গড় গড় করে কথাগুলো বলে গেল উদয় থানি।
‘অতীত এখন অতীত। আসুন বর্তমানের কথা বলি। এখন কি ভাবছেন আপনি? ওরা বিরাট হুমকি দিয়েছে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘স্যার, এজন্যই তো আমি আপনার কাছে টেলিফোন করেছি। তারা দুটো হুমকি দিয়েছে। একটা স্পষ্ট যে, তাদের লোকদের ছেড়ে না দিলে ২৪ ঘণ্টা পর তারা জাবের জহীর উদ্দিনকে হত্যা করবে। আর দ্বিতীয় হুমকি হলো যা আমরা কল্পনা করতে পারি না, এমন ধ্বংসাত্মক কাজও তারা করবে। আমার কাছে তাদের দ্বিতীয় হুমকিটাই উদ্বেগজনক মনে হচ্ছে।’ উদয় থানি বলল।
‘ঠিক বলেছেন অফিসার। চাপ সৃষ্টির জন্যে কিছু ধ্বংসাত্মক বা ক্ষতিকারক কাজ আগে করবে এবং সর্বশেষে করবে আল্টিমেটাম দেয়া হত্যার কাজ।’ বলল আহমদ মুসা।
‘তাদের মটিভ সম্পর্কে আপনি কিছু ভাবছেন স্যার?’ উদয় থানি বলল।
‘অপরাধী, সন্ত্রাসীদের মতি-গতি সম্পর্কে আপনারাই ভালো জানবেন। তবে এটা স্বাভাবিক যে, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অগ্রাধিকারের স্থানগুলোয় আপনাদের চোখ রাখতে হবে।’
‘ঠিক বলেছেন স্যার। এটাই প্রথম কাজ।’ বলল উদয় থানি।
‘তবে এই প্রথম কাজের আগে আরেকটি কাজ আছে অফিসার, সেটা হলো, পুলিশকে যাতে তারা পণবন্দী করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘সাংঘাতিক কথা বলেছেন স্যার। এ দিকটা তো আমরা ভাবিইনি। ধন্যবাদ স্যার, অসংখ্য ধন্যবাদ। সরকার ও জাতির একটা দুর্বল স্থান এটা। এখানে ঘা পড়লে গোটা জাতিই লাফিয়ে পড়বে। অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার। এ বিষয়টা আমি ব্যাংককে এখনি জানাচ্ছি।’
‘ধন্যবাদ অফিসার, বাই।’
আহমদ মুসা, মোবাইল অফ করতেই যয়নব যোবায়দা বলে উঠল, ‘বুঝেছি ভাইয়া, ওরা এখানে হামলা ও আমাদের কাউকে পণবন্দী করার ভয় করছেন?’
‘হ্যাঁ বোন। ওরা কি করতে পারবে আমি জানি না। কিন্তু আহত বাঘের মত ওদের দশা। ওদের সাধ্যে কুলোয়, এ রকম সব কিছুই ওরা করবে। এর মধ্যে তোমরা তাদের বড় টার্গেট। এর আগেও তোমাকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করেছে। আমি মনে করি, তোমরা গুছিয়ে নিয়ে এখনই এ বাড়ি ত্যাগ কর।’ বলল আহমদ মুসা।
‘তুমিও কি ওখানে যাবে ভাই? তুমি না থাকলে আমরা নিরাপদ বোধ করব না।’ দাদী বলল।
‘চিন্তা করবেন না। আমি আপনাদের সাথে আছি দাদী।’ বলল আহমদ মুসা।
যয়নব যোবায়দা সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠে গেল প্রস্তুত হবার জন্য।
আহমদ মুসা আবার বাইরে এল। একজন পুলিশকে বলল তিনটা অটো রিকশা ডাকার জন্যে। বলল, ‘বাড়ির মেম সাহেবরা একটু মার্কেটে যাবেন।’
একজন পুলিশ চলে গেল। চারদিকটা দেখে দোকানদারের সাথে কথা বলে ফিরে এল আহমদ মুসা। এখানে মোট পাঁচ জন লোককে নতুন পেল আহমদ মুসা। একজন পাশের বাড়ির এক লোকের সাথে দেখা করার জন্যে অপেক্ষা করছে। আর তিন জন এসেছে ভাড়া বাসার খোঁজে। দু’একটা বাড়ির খোঁজ পেয়েছে। কিন্তু বাসাওয়ালাকে একটু পরে পাওয়া যাবে। তারা অপেক্ষা করছে। আর একজন লোক এই মাত্র এসে চা খেতে বসেছে রোড-সাইড টি-ষ্টলে। তাদের সকলের বয়স কাছাকাছি পর্যায়ের নয়, এটাই আহমদ মুসার অসংগত মনে হয়েছে। আহমদ মুসার সন্দেহ সত্য হলে তাদের সকলকে এক বয়সের হতে হবে। তাহলে ওরা কি ছদ্মবেশ নিয়েছে! এই চিন্তা মাথায় উদয় হতেই চমকে উঠল আহমদ মুসা। মন বলল, এটা হতে পারে। তারা বিভিন্ন ছদ্মবেশে এসে জমা হতে শুরু করেছে এখানে।

আহমদ মুসা ড্রইংরুমে বসেছিল। ফরহাদ এসে বলল, ‘আমরা প্রস্তুত ভাইয়া।’
ফরহাদের পেছনে যয়নব যোবায়দা ও দাদীও এসে দাঁড়িয়েছে।
ওদিকে দুটো অটো রিকশাও এসে গেছে।
আহমদ মুসা ভাবনায় ডুবেছিল।
ফরহাদের কথায় চমকে উঠে মুখ তুলল আহমদ মুসা।
ফরহাদও চমকে উঠল। আহমদ মুসাকে এমন অপ্রস্তুত সে কখনও দেখেনি। বলল, ‘স্যার, খারাপ কিছু ভাবছেন?’
হেসে উঠল আহমদ মুসা। বলল, ‘ভাবছিলাম। তবে খুব খারাপ কিছু নয়।’
সবার দিকে তাকিয়ে আহমদ মুসা বলল, ‘তোমরা রেডি? ঠিক আছে তোমরা একটু পরে বের হবে। আমি বেরিয়ে গিয়ে টি-স্টলে চা-খেতে বসতে পারি, এতটা সময় পরে বের হবে। তিনটা পায়নি, দুটো অটো রিকশা পেয়েছে। ফরহাদ তুমি একটিতে ড্রাইভারের পাশে বসবে।’
সবার মুখে-চোখে উদ্বেগ। যয়নব যোবায়দা বলল, ‘বাইরে কিছু কি ঘটার আশংকা করছেন?’
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘সব সময় সবকিছুর জন্যে প্রস্তুত থাকা ভালো।’
বলে আহম মুসা বাইরে বেরিয়ে এল। বেরুবার সময় পকেটের রিভলবার এবং শোল্ডার হোলষ্টারে হ্যান্ডমেশিনগানের অস্তিত্ব অনুভব করল।
আহম মুসা বেরিয়ে সোজা চলল টি-ষ্টলের দিকে। যাবার সময় দেখল আগন্তুকের সংখ্যা আরও একজন বেড়েছে।
ছয় জনের দু’জন বসে পুলিশের সাথে আলাপ করছে। অবশিষ্ট চারজন যে যেখানে ছিল সেখানেই বসে আছে।
আহমদ মুসা পুলিশদের কাছে চা পাঠাতে বলে এবং নিজের জন্য এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসল যয়নব যোবায়দাদের বাড়িকে সামনে রেখে। এখানে বসে ছয়জন আগন্তুকসহ পুলিশ বক্স, দুই অটোরিকশা সবই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে।
দৃষ্টি সামনে রেখে চায়ে চুমুক দিচ্ছে আহমদ মুসা।
ফরহাদরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। বারান্দা থেকে লনে নেমেই দ্রুত গাড়িতে উঠল।
তাদের বাড়ি থেকে বেরুতে দেখে ছয়জনই উঠে দাঁড়িয়েছে। তাদের অবস্থা কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মত। যেন শিকার এভাবে পালাবে তারা আশা করেনি।
অটো রিকশা তখন চলতে শুরু করেছে।
পুলিশের কাছে যে দু’জন ছিল, তাদের একজন হাত দিয়ে একটা সংকেত দিল। সংগে সংগেই ছয় জনের পোশাকের ভেতর থেকে ছয়টি হ্যান্ডমেশিনগান বেরিয়ে এল। দু’জন গুলী করল অটো রিকশার চাকা লক্ষে। পুলিশের কাছের দু’জন চোখের পলকে চা খাওয়ারত পুলিশদের নিরস্ত্র করে পুলিশ বক্সের ভেতর ঠেলে দিল। অন্যজন ফাঁকা আওয়াজ করে ত্রাসের সৃষ্টি করল।
এরা ছয় জনেই এই কান্ড করে বসবে, আহমদ মুসা এটা ভাবেনি। এই অবস্থায় এত বড় কিডন্যাপের ঘটনার জন্যে আরও লোক তাদের চাই এবং তাদেরই অপেক্ষা তারা করছে; খুব বেশি হলে তারা সাথীদের খবর দেয়া এবং যয়নব যোবায়দাদের ফলো করার মত কাজ করতে পারে—এটাই ভেবেছিল আহমদ মুসা। সে ক্ষেত্রে আহমদ মুসা পুলিশ দিয়ে তাদের আটকাবে মনে করেছিল। কিন্তু তারা এল একদম ডাইরেক্ট একশনে।
আহমদ মুসা চায়ের কাপ পিরিচ রেখে এক লাফে রাস্তায় নেমে এল। পকেট থেকে রিভলবার বের করে বাঁ হাতে নিল এবং হ্যান্ড মেশিনগান রাখল ডান হাতে।
আহমদ মুসা প্রথমে টার্গেট করল পুলিশের কাছের দু’জনকে, পরে যে দু’জন অটো রিকশার কাছে চলে গিয়েছিল সে দু’জনকে।
চারটি গুলী করতেই বাকি দু’জন ফিরে তাকিয়েছে আহমদ মুসার দিকে এবং গুলী করতে শুরু করেছে।
আহমদ মুসা শুয়ে পড়েছে একটা বিদ্যুতের পিলারকে আড়াল করে।
ওরা গুলী করতে করতে আহমদ মুসার দিকে ছুটে আসছে।
আহমদ মুসা ডান হাতের হ্যান্ডমেশিনগানের নল বিদ্যুৎ পিলারের বাইরে একটু বাড়িয়ে পিলার বরাবর সামনে অন্ধভাবে গুলী বর্ষণ শুরু করল। লক্ষ্য প্রতিপক্ষের গুলীর টার্গেট সরিয়ে দেয়া।
ওরা ছুটে আসছিল। ওদের কোন আড়াল ছিল না।
আহমদ মুসা গুলী বর্ষণ করলে পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়ে ওরা রাস্তার এক পাশে সরে যেতে লাগল। কয়েক মুহূর্তের জন্যে ওদের গুলীর লক্ষ্য সরে গিয়েছিল।
এই সুযোগই চাচ্ছিল আহমদ মুসা এবং এই সুযোগের সে পুরো সদ্ব্যবহার করল।
বেরিয়ে এল পিলারের আড়াল থেকে। লক্ষ্য স্থির করে এবার গুলী করল। গুলীর বৃষ্টি গিয়ে ছেঁকে ধরল রাস্তার পাশে সরে যাওয়া দু’জনকে।
দু’জনেই মুখ থুবড়ে পড়ল। ওদের গুলী বন্ধ হয়ে গেল।
উঠে দাঁড়িয়ে আহমদ মুসা ছুটল যয়নব যোবায়দাদের দিকে। যাবার পথে পুলিশবক্সের ছিটকিনি খুলে বের করল পুলিশদের।
পুলিশরা আহমদ মুসাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে বলল, ‘স্যার আমরা চা খাচ্ছিলাম। আকস্মিকভাবে ওরা আমাদের আক্রমণ করে। উপযুক্ত ফল পেয়েছে সন্ত্রাসীরা। দেখছি সবাই মারা গেছে স্যার। ধন্যবাদ স্যার। ওঁদের অবস্থা কি?’
‘ওঁরা ভালো আছেন। ওদিকে যাচ্ছি।’ বলে আহমদ মুসা চলল অটো রিকশার দিকে।
অটোরিকশার ড্রাইভার দু’জন গাড়ি থেকে নেমে আহমদ মুসাকে দেখে আতংকে চুপসে গেছে। আহমদ মুসা ওদের লক্ষ্য করে বলল, ‘দেখছি একটা করে টায়ার নষ্ট হয়েছে, বাড়তি চাকা নেই?’
‘আছে স্যার।’ বলল ড্রাইভারদের একজন।
‘তাড়াতাড়ি চাকা লাগাও।’ নির্দেশ দিল আহমদ মুসা।
আর ফরিদদের উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তোমরা ড্রইং রুমে গিয়ে একটু বস। আমি এদিকে পুলিশদের দেখি ওরা হেডকোয়ার্টারকে জানাল কিনা।’
যয়নব যোবায়দা, দাদী ও দুই পরিচারিকা নামল।
‘দাদী আপনারা একটু বসুন। চাকা ঠিক হলে আমি ডাকব।’ বলল আহমদ মুসা দাদীকে।
‘আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করুন ভাই’ বলে দাদী হাঁটতে লাগল। তার কণ্ঠ কান্না জড়ানো।
আহমদ মুসা পুলিশদের সাথে কথা বলল। তারা হেডকোয়ার্টারকে জানিয়েছে। এসপি উদয় থানি নিজে আসছে। আহমদ মুসাও উদয় থানি এবং ব্যাংককে থাই সহকারী গোয়েন্দা প্রধান পুরসাত প্রজাদিপকের সাথে কথা বলল। দু’জনেই বলল আমরা আশংকা করেছিলাম সরকারি স্থাপনা বা সেনা অথবা পুলিশের উপর হামলা হবে। কিন্তু হামলা হলো শাহ পরিবারের উপর। তারা শাহ পরিবারের আরও কাউকে পণবন্দী করতে চায়। তারা মনে করে সরকারের উপর এতে চাপ বেশি পড়বে এবং সন্ত্রাসীদের ছাড়তে বাধ্য হবে। এই অবস্থায় শাহ পরিবার সম্পর্কে কিছু প্রস্তাব পরামর্শ দিয়ে তারা তাদের কথা শেষ করেছে। তারা দু’জনেই আহমদ মুসার আকাশস্পর্শী প্রশংসা শুরু করেছিল। কিন্তু আহমদ মুসা টেলিফোন রেখে দেয়ার হুমকি দেয়ায় সে পথে তারা বেশি এগোতে পারেনি।
ততক্ষণে অটো রিকশার চাকা লাগানো হয়ে গিয়েছিল।
আহমদ মুসা উঠে গেল ড্রইংরুমে।
যয়নব যোবায়দারা কথা বলেছিল।
সবারই চোখে অশ্রু।
আহমদ মুসা কথা শুরুর আগেই দাদী কেঁদে উঠল। বলল, ‘আমরা কোথায় যাব ভাই? শাহবাড়িতে আক্রমণ হলো, এলাম এখানে। এ গোপন বাড়িটির সন্ধানও তারা পেয়ে গেল। ডাক্তার ফাতেমার ওখানে যাব। ওটাও নিশ্চয় গোপন থাকবে না। মাঝখানে তাকেও বিপদে ফেলা হবে। আমাদের জন্যে তো কোন নিরাপদ স্থান দেখছি না ভাই’ কান্নারুদ্ধ কণ্ঠেই কথাগুলো বলল দাদী।
আহমদ মুসা সোফায় বসল। নরম কণ্ঠে ধীরে ধীরে বলল, ‘আমরা জঘন্য এক বেপরোয়া শত্রুর কবলে পড়েছি দাদী। তবে এই আক্রমণ ওদের শক্তির পরিচয় নয। এগুলো ওদের দুর্বলতা ও হতাশা থেকে বাঁচার সর্বশেষ অপচেষ্টা। আমরা জয়ী হবো দাদীমা, ইনশাআল্লাহ।’
একটু থামল আহমদ মুসা।
সোফায় একটু ঠেস দিল। বলতে শুরু করল আবার, ‘নিরাপদ জায়গা আছে দাদীমা। এইমাত্র থাই সহকারী গোয়েন্দা প্রধানের সাথে কথা হলো। এসব ঘটনায় সরকার খুবই উদ্বিগ্ন জানালেন তিনি। সরকারি তরফ থেকে তাকে বলা হয়েছে আপনার পরিবারকে নিরাপদ সরকারি তত্ত্বাবধানে রাখার জন্য। এসপি উদয় থানিও বলেছেন এ কথা। তিনি এখানে আসছেন। দাদীমা আপনারা চাইলে সরকার এই মুহূর্তেই এ ব্যবস্থা করবেন। আপনারা কি করবেন বলুন দাদীমা।’
‘আমি কিছু ভাবতে পারছি না ভাই। যা করার তুমিই করবে।’ বলল দাদী ভাঙা গলায়।
দাদীর কথা শেষ হতেই যয়নব যোবায়দা বলল, ‘পাত্তানী অঞ্চলের শাসক এবং পরবর্তীকালে প্রধান পাত্তানী পরিবার হিসাবে এই পরিবার নান উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে এগিয়েছে, কিন্তু কখনই সরকারি নিরাপত্তা হেফাজত নেয়নি। সব সময় এই পরিবার জনপ্রিয়তাকে তাদের নিরাপত্তা মনে করেছে। এখনকার আমাদের অবস্থা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে খারাপ। এ জন্যই নিশ্চয় আমাদের সাহায্যে আল্লাহ আপনাকে নিয়ে এসেছেন। এ পর্যন্ত আল্লাহর এ ব্যবস্থা আমাদের জন্যে যথেষ্ট হয়েছে। ভবিষ্যতেও যথেষ্ট হবে বলে আমি মনে করি।’
থামল যয়নব যোবায়দা। প্রথম দিকে তার কণ্ঠ ছিল কান্নারুদ্ধ। কিন্তু শেষ দিকে কান্না মুছে গিয়ে তার কণ্ঠ হয়ে উঠেছিল দৃঢ় প্রত্যয়ী।
উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে আহমদ মুসার মুখ। বলল, ‘যয়নব যোবায়দা, তুমি ‘সাকোথাই’ রাজবংশের যুবকদের এবং পাত্তানী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ‘চাউসির বাংগসা’ ওরফে সুলতান আহমদ শাহের যোগ্য উত্তরসূরীর মত কথা বলেছ। তোমাকে ধন্যবাদ। তবে বোন যয়নব যোবায়দা আল্লাহ তাঁর ব্যবস্থা শুধু আহমদ মুসাকে দিয়ে নয়, সরকারকে দিয়েও চালাচ্ছেন। সেই হিসাবে সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা আল্লাহর ব্যবস্থারই অংশ হতে পারে।’
‘ঠিক বলেছেন। আমাকে শুধরে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ। আমি বিষয়টা আপনার উপরই ছেড়ে দিচ্ছি ভাই সাহেব।’ বলল যয়নব যোবায়দা।
‘ধন্যবাদ বোন যয়নব যোবায়দা। ওরা প্রস্তাব করেছে, ব্যাংককে সরকারি নিরাপত্তায় থাকতে। আমি……….।’
আহমদ মুসার কথার মাঝখানেই যয়নব যোবায়দা বলে উঠল, ‘নিজ মানুষদের ফেলে আমরা অন্য কোথাও যেতে পারব না।’
‘আমি সে কথাই বলতে যাচ্ছিলাম। এই যাওয়াকে মানুষ অন্য দৃষ্টিতে নিতে পারে। এজন্যে আমার প্রস্তাব হলো, তোমরা শাহ বাড়িতেই থাকবে। এই বাড়িকে সরকার ফুল সিকিউরিটির মধ্যে নিয়ে আসবে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘হ্যাঁ ভাই, এটাই ভালো হবে।’ দাদী বলল।
‘আমারও এটাই মত।’ যয়নব যোবায়দা বলল।
‘আমারও সুবিধা হলো দাদীমা। এই ব্যবস্থা হলে আমি একটু হাল্কা বোধ করব। আমি একদিন বা কয়েকদিন পাত্তানী শহরে থাকছি না।’ বলল আহমদ মুসা।
দাদী, যয়নব যোবায়দা ও ফরহাদ তিনজনেরই প্রশ্নবোধক দৃষ্টি ছুটে এল আহমদ মুসার দিকে। কথা বলল যয়নব, ‘আপনি কি তাহলে কোথাও যাচ্ছেন ভাই সাহেব?’
‘হ্যাঁ। তোমাদেরকে শাহ বাড়িতে পৌছে দেবার পর সম্ভব হলে আজকেই।’ বলল আহমদ মুসা।
‘কোথায়?’ দাদী বলল।
‘জাবের জহীর উদ্দিনের খোঁজে।’
‘পুলিশের সাথে?’ বলল ফরহাদ ফরিদ উদ্দিন।
‘না। পুলিশের পথ আর আমার পথ ভিন্ন হবে।’
‘আপনি সুস্থ নন। ডাক্তার খালাম্মা কি আপনাকে অনুমতি দেবেন?’
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘এই ‘না’ বলা ডাক্তারের দায়িত্ব, কিন্তু আমার কাজ আমার প্রয়োজনে। ডাক্তারের দায়িত্ব থেকে রোগীর প্রয়োজন সব সময় অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে।’
একজন পুলিশ ড্রইং রুমের দরজায় এসে দাঁড়াল। বলল, আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে, ‘এসপি স্যার এখানে আসতে চান স্যার।’
‘হ্যাঁ, ওয়েলকাম, আসতে বল।’ বলে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল।
যয়নব যোবায়দা গায়ের চাদরটা আরও ঠিক করে নিল এবং কপালে নেমে আসা মাথার রুমালটাকে চোখের উপর পর্যন্ত নামিয়ে নিল।

হাবিব হাসাবাহর সামনে টেবিলের উপর মোবাইল রাখা।
কল চলছে।
মোবাইলের ইনকামিং ও আউটগোয়িং ভয়েস অপশন অন করা।
মোবাইল টেবিলে রেখেই যেমন কথা বলা যাচ্ছে, তেমনি কথা শোনাও যাচ্ছে।
শূন্য অফিস ঘর।
মাত্র হাবিব হাসাবাহই তার চেয়ারে বসে।
মোবাইলে ওপার থেকে কথা ভেসে আসছে।
হাবিব হাসাবাহর বিব্রত মুখ। বিধ্বস্ত চেহারা।
ফোনের ওপ্রান্ত থেকে কথা বলছেন, ইহুদীবাদী বিশ্ব গোয়েন্দা সংস্থা ইরগুন জাই লিউমি’র (ইজালি) প্রধান আলেকজান্ডার জ্যাকব। সে কথা বলছে ইসরাইলী হাইফার গোপন হেডকোয়ার্টার থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ইরগুন জাই লিউমি’র (ইজালি) হেডকোয়ার্টার বন্ধ হওয়াতে হাইফাতেই তাদের গোপন হেডকোয়ার্টার খোলা হয়েছে। এখানে হেডকোয়ার্টার হওয়াতে ইজালি’র লাভ হয়েছে। ইহুদী রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে ব্যবহার করা কিংবা মোসাদের তাদেরকে ব্যবহার করা সহজ হয়েছে।
ওপার থেকে আলেকজান্ডার জ্যাকব বলছিল, ‘এই বিভেন বার্গম্যান কয়েকদিন আগে পর্যন্ত আন্দামানে ছিল। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র থেকে এই মাত্র শুনলাম, বিভেন বার্গম্যান আসলে আহমদ মুসা। এই আহমদ মুসা আমাদের মূর্তিমান যম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জায়নবাদীদের সে উৎখাত করেছে। তার হাতে আমাদের সর্বশেষ বিপর্যয় ঘটেছে আন্দামানে। আমরা সেখানে মহাসংঘকে সহযোগিতা করছিলাম। আমাদের শীর্ষ গোয়েন্দা কোহেনকে সে খুন করেছে এবং সেখানে আমাদের গোটা নেটওয়ার্ক তার হাতে ধ্বংস হয়েছে। থাইল্যান্ডে যা ঘটেছে, আহমদ মুসার জন্যে তা ঘটানো খুবই স্বাভাবিক। সে অদ্ভুত কুশলী। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সে সব সময় সংশ্লিষ্ট দেশের আইনকে অর্থাৎ সরকারকে পক্ষে রাখতে সমর্থ হয়। এই অসাধ্য সাধন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও। তারই কৌশল ও চেষ্টায় সেখানে আমরা জায়নবাদী মানে ইহুদীবাদীরা মার্কিনীদের কাছে বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হই। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সে আমাদের মোকাবিলায় ইহুদীদের ব্যাপক সমর্থন অর্জন করে। ইহুদীবাদীরা রাজনৈতিক সন্ত্রাসী এবং ধার্মিক ইহুদীরা তা নয়- তার এই যুক্তি মার্কিন ইহুদীরাও গলধঃকরণ করে। এহেন ধূর্তের সাথে লড়াইয়ে থাইল্যান্ডে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা খুব বড় নয়। সবচেয়ে অসুবিধার ব্যাপার হয়েছে, থাই সরকারকে সে শুধু পাশে পাওয়া নয়, সেখানকার মুসলমানদের সে নির্দোষ প্রমাণ করতে পেরেছে। এই অবস্থায় থাইল্যান্ডে আমাদের প্রধান কাজ হলো আহমদ মুসাকে হত্যা করা। জাবের জহীর উদ্দিন এবং তার পরিবারের লোকরা হবে আহমদ মুসাকে বাগে পাওয়ার টোপ। সুতরাং জাবের জহীর উদ্দিনকে ধরে রাখা আমাদের জন্য অপরিহার্য। ৪৮ জন বন্দীকে ছাড়লেও তাকে ছাড়বে না। যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আহমদ মুসাকে হাতে পেতে চাই। শাহ পরিবারের লোকদের পণবন্দী করার চেষ্টা অব্যাহত রাখ। আলটিমেটাম ঘোষণার পরেই শাহ পরিবারের সদস্যদের কিডন্যাপ করার আরও একটা উদ্যোগ নিয়েছিলে, এজন্যে তোমাকে মোবারকবাদ। তুমি ব্যর্থ হয়েছ, আমাদের আরও ছয়জন লোকের জীবন গেছে, একে আমি বড় করে দেখছি না। এক…….।’
আলেকজান্ডার জ্যাকবের কথার মাঝখানেই হাবিব হাসাবাহ বলে উঠল, ‘মাফ করবেন এক্সিলেন্সী। একটা কথা। এবার যে প্ল্যান আমরা করেছিলাম, তা প্রায় অব্যর্থ ছিল। কিন্তু পরিকল্পনার মাঝপথেই শাহ পরিবারের সদস্যরা অন্য কোথাও যাবার জন্যে বেরিয়ে পড়ে। তখন পর্যন্ত ওখানে আমাদের জমা হয়েছিল মাত্র ছয়জন লোক। এরাই মরিয়া হয়ে ওদের কিডন্যাপের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপরও আহমদ মুসা না থাকলে তারা সফল হতো, এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি।’
বললাম তো সে আমাদের যম। ওকেই আগে সরাতে হবে। জাবের জহীর উদ্দিন ভালো টোপ। প্রভু জিহোবা আমাদের সাহায্য করুন।’ বলল ওপার থেকে আলেকজান্ডার জ্যাকব।
‘এক্সিলেন্সি, মনে হচ্ছে ওরা আলটিমেটাম না মেনে জাবের জহীর উদ্দিনকে উদ্ধার করার চেষ্টা করবে।’ হাবিব হাসাবাহ বলল।
‘আমরা এটাই চাই।’
‘উদ্ধারের চেষ্টায় তো ঝাঁপিয়ে পড়বে পুলিশ। আহমদ মুসা যদি না আসে!’
‘তুমি আহমদ মুসাকে চেন না। পুলিশের উপর ভরসা করে বসে থাকার লোক আহমদ মুসা নয়। পুলিশ উদ্ধারে আসবে। কিন্তু উদ্ধারের জন্য মূল ভূমিকা সে পালন করবে, এটা দেখতেই পাবে।’ ওপার থেকে বলল আলেকজান্ডার জ্যাকব।
‘ঠিক এক্সিলেন্সী। এ পর্যন্ত সব ঘটনার মধ্যে সে আছে।’ বলল হাবিব হাসাবাহ।
‘এই মুহূর্ত থেকে আহমদ মুসার পেছনে লোক লাগিয়ে দাও। তারা প্রতি পদে তাকে অনুসরণ করবে। সে উদ্ধার অভিযানে এসে তোমাদের দেখতে পাওয়ার আগে তোমরা যেন তাকে দেখতে পাও। এমন হলে তবেই আশা করা যায় তোমরা আহমদ মুসাকে কাবু করার সুযোগ পাবে।’ আলেকজান্ডার জ্যাকব বলল।
‘ধন্যবাদ এক্সিলেন্সী।’ বলল হাবিব হাসাবাহ।
‘ওয়েলকাম। ওকে। বাই।’ ওপার থেকে টেলিফোন রেখে দিল আলেকজান্ডার জ্যাকব।
মোবাইল অফ করল হাবিব হাসাবহও।
যে বিধ্বস্ত চেহারা ছিল হাবিব হাসাবাহর, সেটা অনেকটাই কেটে গেছে এখন। মহাশক্তিধর আলেকজান্ডার জ্যাকব সর্বশেষ কয়েকটি বিপর্যয় ও ব্যর্থতার জন্যে তাকে খেয়ে ফেলবে এই ভয় ছিল হাবিব হাসাবাহর। কিন্তু বিভেন বার্গম্যানই আহমদ মুসা এটা জানার পর তার বিপর্যয় ও ব্যর্থতার অপরাধ আলেকজান্ডার জ্যাকবরা ভুলেই গেছে। এখন তার বিপর্যয়-ব্যর্থতাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে। মনে মনে দারুণ খুশি হাবিব হাসাবাহ। সে ধন্যবাদ দিল আহমদ মুসাকে। আহমদ মুসা অতটা যোগ্য ও ক্ষমতাধর না হলে হাবিব হাসাবাহর আজ অব্যাহত ব্যর্থতা ও বিপর্যয়ের জন্যে কি যে গতি হতো, তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে।
হাবিব হাসাবহ গুনগুনিয়ে একটা গানের কলি গাইতে গাইতে কলিং বেলে চাপ দিল নতুন অপারেশন প্রধানকে ডাকার জন্যে। বস আলেকজান্ডার জ্যাকবকে টেলিফোন করার আগে সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিল নিজের নাজেহাল অবস্থাকে অন্যের কাছ থেকে আড়াল করার জন্যে।

Top