৪৬. রোমেলি দুর্গে

চ্যাপ্টার

একশ’ এক বার্বারোস বুলেভার্ড-এর ৪ তলা বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরের একটা প্রশস্ত কক্ষে বসে আছে ড. ডেভিড ইয়াহুদ।
মাথার চুল তার উস্কো-খুস্কো। মুখ শুকনো। চোখদুটি লাল। ব্লাড প্রেশার বেড়ে গেছে। এর মধ্যে ডাক্তার এসে একবার চেক করে গেছে।
দু’ঘন্টা ধরে বসে আছে এই চেয়ারে। তেলআবিব, ইউরোপের কয়েকটি রাজধানী ও ওয়াশিংটনে অনেকগুলো টেলিফোন করেছে এই দু’ঘন্টায়। জানিয়েছে সে ‘থ্রি জিরো’র মহাবিপর্যয়ের কথা। বিজ্ঞানী ড. আন্দালুসিকে কিডন্যাপ করতে পারার তাদের সাফল্যের কথা। একদিন আগে আইজ্যাক বেগিনও এভাবেই তেলআবিব, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েকটি রাজধানীর গুরুত্বপুর্ণ মহলকে এ কথাগুলো জানিয়েছিল। তারা অভিনন্দন জানিয়েছিল আইজ্যাক বেগিন ও ড. ডেভিড ইয়াহুদকে এবং আশা করেছিল যে, সোর্ড-এর ফর্মুলা হস্তগত করা সম্ভব হবে, যা তাদেরকে গোটা দুনিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অকল্পনীয় এক সুযোগ এনে দেবে। আইজ্যাক বেগিন ও ড. ডেভিড ইয়াহুদ তাদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছিল, তার স্ত্রীকেও যখন আমরা আটক করতে পেরেছি, তখন সাফল্য সম্পর্কে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। একদিন, দুদিন, তিনদিন, কয়দিন সে নির্যাতন সহ্য করবে। নিজে সহ্য করত্রে পারলেও তার চোখের সামনে স্ত্রী লাঞ্ছিত হবার বিভৎস দৃশ্য সে কয়দিন সহ্য করবে! সে মুখ খুলবে, খুলতেই হবে। শুধু তাই নয় তাকে আমাদের ল্যাবরেটরীতে বশংবদের মত কাজ করতে বাধ্য করা হবে। এধরনের কত আশার কথাই না ড. ডেভিড ইয়াহুদ তেলআবিব, ইউরোপ ও আমেরিকার তাদের মুরুব্বীদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু সবই ভণ্ডুল হয়ে গেল। খোদ আইজ্যাক বেগিন নিহত হলেন এবং বিজ্ঞানীকে তারা উদ্ধার করে নিয়ে গেল। সব আশায় গুঁড়েবালি পড়ে গেল! কেন এমনটি হল? আমাদের গোপন ঠিকানার সন্ধান ওরা কি করে পেল? আর উদ্ধার করার ব্যাপারটা এক অসম্ভব কাহিনী। ৬ জন লোক নিজেদের গাড়ির মধ্যকার দুর্ঘটনায় মারা গেছে, ৪ জন গুলিতে। যে রিপোর্ট সংগ্রহ হয়েছে, তাতে মাত্র একজন লোক এই সর্বনাশটা করেছে। কে এই লোক আমরা জানি। ওরা পরিচয় ভাড়িয়ে বলে খালেদ খাকান, আমরাও বলি। বলি এই কারণে যে, খালেদ খাকান নামেই যদি তাকে শেষ করে দেয়া যায়, সেটাই ভালো। তাছাড়া ‘আহমদ মুসা’ নামটা প্রকাশ পেলে ওই পক্ষের ও সাধারণ মানুষের সাহস আরও বাড়বে। আর আমাদের হতাশা তাতে বাড়বে।
এই খালেদ খাকান ব্যাটা আমাদের লোকদের খবর, আমাদের ঘাঁটির ঠিকানা একের পর এক পেয়ে যাচ্ছে কি করে? এ পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে সে যত অভিযান করেছে, সবগুলোই ছিল সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে। কোথা থেকে পাচ্ছে এই খবরগুলো সে।
দুঃখের মধ্যেও ড. ডেভিড ইয়াহুদের সান্তনা হলো, তেলআবিব, ইউরোপ, আমেরিকা তাকে সাহস দিয়েছে। যে কোন মূল্যে সোর্ড-এর ফর্মুলা হাত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সব রকম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে বিজ্ঞানীদের সমেত রোমেলী দূর্গ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে। সে ব্যবস্থাও তারা করেছে। ড. ডেভিড ইয়াহুদরা গ্রীন সিগন্যাল দিলেই তারা কাজ শুরু করবে। তার জন্য আরেকটা আশার কথা হল এনজিও’র পরিচয়ে ইউরোপ থেকে কিছু চৌকশ জনশক্তি পাঠানো হয়েছে তাকে সাহায্য করার জন্য। এটা তার জন্য খুব বড় একটা সুখবর। আহমদ মুসা আসার পর তার হাতে ‘থ্রী জিরো’র মূল্যবান জনশক্তি নষ্ট হয়েছে, যার সংখ্যা পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে।
শেষের চিন্তাগুলো উজ্জ্বীবিত করল ড. ডেভিড ইয়াহুদকে।
এসময় ঘরে প্রবেশ করল শীর্ষ গোয়েন্দা স্মার্থা ও নতুন অপারেশন চীফ সোলেমান স্যামসন।
তারা ঘরে ঢুকতেই ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলল, ‘প্রধান বিচারপতির খবর কি?’
‘এই গ্রাউন্ডফ্লোরের এক সেলে তাকে রাখা হয়েছে। সেলে গ্রীলের গেট। দু’জন স্টেনগানধারীকে সেখানে পাহারায় রাখা হয়েছে। আর গ্রাউন্ডফ্লোর থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডের সিঁড়িমুখেও দু’জন পাহারায় রাখা হয়েছে।’ বলল সোলেমান স্যামসন।
‘বাড়ির বাইরে কি অবস্থা?’ জিজ্ঞাসা ড. ডেভিড ইয়াহুদের।
‘বাড়ির গেটবক্সে পাহারায় থাকবে দু’জন স্টেনগানধারী। আর ৪ জন ছদ্মবেশে বাড়ির চারিদিকে নজর রাখবে। বাড়ির সামনে যেখান থেকে প্রাইভেট রাস্তা বাড়ির গেট পর্যন্ত এসেছে, সেখানে বড় রাস্তার বার্বারোস বুলেভার্ডের একটি তেমাথা। এখানে বিপরীত দিক থেকে আরেকটি রাস্তা এই বুলেভার্ডের সাথে মিশেছে। এই তেমাথায় একটা কক্ষ ভাড়া নিয়ে একটা ইনফরমেশন সেন্টার খুলে স্মার্থা বসছে। সেখানে বসে বুলেভার্ডসহ বাড়ির তিনদিকে সে নজর রাখতে পারবে।’ বলল সোলেমান স্যামসন।
‘ধন্যবাদ। প্রধান গেট ছাড়া ডুপ্লেক্সে ঢোকার কি আর কোন পথ আছে?’
‘না স্যার, এই ডুপ্লেক্সে প্রাইভেট কোন এক্সিট নেই।’
‘ঠিক আছে, চল আমরা প্রধান বিচারপতির ওখানে যাই। চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। প্রধান বিচারপতির কিডন্যাপকে কাজে লাগাতে হবে। বিজ্ঞানী আমাদের হাতছাড়া হয়েছে। এখন খালেদ খাকানকে তুরস্ক থেকে তাড়াতে হবে। প্রধান বিচারপতিকে এই দাবি আদায়ের পণবন্দি বানাতে চাই। প্রধান বিচারপতির এই মর্মে বিবৃতি আদায় করতে হবে যে, জনৈক খালেদ খাকানকে তুরস্ক থেকে না তাড়ালে আমার মুক্তির সম্ভাবনা নেই। প্রধান বিচারপতির এই বিবৃতি সরকারের কাছে এবং সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে পাঠাতে হবে। জনগণের পক্ষ থেকেও দাবি উঠাতে হবে যে, একজন খালেদ খাকানের জন্যে প্রধান বিচারপতির এই অবস্থা চলতে দেয়া যেতে পারে না। তাদের তরফ থেকে দাবি উঠাতে হবে, খালেদ খাকানকে বহিষ্কার করে প্রধান বিচারপতিকে মুক্ত করা হোক।’ বলল ডেভিড ইয়াহুদ।
‘ধন্যবাদ স্যার। চমৎকার একটা কৌশল বের করেছেন। এভাবে চাপ সৃষ্টি করে, গণদাবি তুলে যদি তুরস্ক থেকে খালেদ খাকানকে বহিষ্কার করা যায়, তাহলে বিরাট লাভ হবে আমাদের। আমাদের লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়ে যাবে।’
‘চল যাই।’ বলে উঠে দাঁড়াল ডেভিড ইয়াহুদ।
উঠে দাঁড়াল সোলেমান স্যামসন ও স্মার্থা।
বেরিয়ে এল তারা ঘর থেকে।
আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরের যে সেলে প্রধান বিচারপতি বন্দী আছে, সে সেলের পেছনে এসে দাড়াল তিনজন। সেলের দেয়ালের হাংগার থেকে তিনজনই আপাদমস্তক কাল পোশাক পরল এবং মুখে পরল মুখোশ।
সেলের পাহারায় থাকা দু’জন গার্ড আগেই দেখতে পেয়েছিল তাদের তিনজনকে। ওরা গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়াতেই সেলের দরজা তারা খুলে দিল।
সেলে প্রবেশ করল তিনজন।
প্রধান বিচারপতি খাটিয়ায় শুয়ে ছিল। মুখোশ পরা তিনজন ঘরে ঢুকতেই প্রধান বিচারপতি উঠে বসলো।
প্রধান বিচারপতি ঋজু গড়নের হাল্কা-পাতলা মানুষ, কিন্তু লম্বা হবেন প্রায় ৬ ফুটের মত। সহজ-সরল চেহারার ভদ্রলোক মানুষ।
জল্লাদের পোশাক পরে তিনজনকে ঘরে ঢুকতে দেখে ভীতির একটা ছাপ তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে।
বেডের সামনে একটাই চেয়ার। ড. ডেভিড ইয়াহুদ চেয়ারটিতে বসতে বসতে বলল, ‘অনুমতি ছাড়াই বসলাম স্যার, আপনি তো এখন প্রধান বিচারপতি নন।’
একটু থামল ড. ডেভিড ইয়াহুদ। তারপর পকেট থেকে রিভলবার বের করেই প্রধান বিচারপতির দিকে পরপর দু’টি গুলী করল। একটা গুলী প্রধান বিচারপতির মাথার ডান পাশে, দ্বিতীয় গুলী মাথার বাম পাশের চুল ছুঁয়ে চলে গেল।
ভীষণভাবে চমকে উঠেছে প্রধান বিচারপতি। কেঁপে উঠেছে তাঁর দেহ। প্রবল আতঙ্ক চোখে-মুখে।
ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলল, ‘স্যার, গুলী দু’টি ভেতরদিকে আর আধা ইঞ্চি করে সরে এলে আপনার মাথা গুঁড়ো হয়ে যেত এবং আপনি লাশ হয়ে যেতেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, মৃত্যুটা আপনার কত কাছাকাছি। আপনি যদি আমাদের সহযোগীতা না করেন, তাহলে পরের গুলী মাত্র আধা ইঞ্চি মাথার দিকে সরে আসবে।’
থামল ড. ডেভিড ইয়াহুদ।
‘কি সহযোগীতা?’ শুকনো কন্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রধান বিচারপতি।
‘একজন লোককে তুরস্ক থেকে বহিষ্কারে সাহায্য করতে হবে।’ বলল ড. ডেভিড ইয়াহুদ।
‘কে সেই লোক?’
‘লোকটির নাম মি. খালেদ খাকান।’
‘কে সে?’
‘সে তুরস্কের লোক নয়।’
‘আমি তাকে চিনি না। আমাকে কি করতে হবে?’
‘আমরা তাকে চিনি। আমাদের জন্য সে সাংঘাতিক ক্ষতিকর। তার বহিষ্কারের উপর আপনার মুক্তি নির্ভর করছে। অতএব, সরকারের কাছে আপনি একটা আবেদন জানাবেন যে, তাকে বহিষ্কার করার ব্যাপারে আমাদের দাবি সরকার যেন মেনে নেন।’ ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলল।
‘তাকে বহিষ্কার করা হবে কেন? সে কি বৈধভাবে তুরস্কে নেই? আমি একটা অন্যায় দাবি কিভাবে করতে পারি?’ বলল প্রধান বিচারপতি।
‘আপনি বাঁচার জন্য করতে পারেন। আপনি সরকারকে বলুন, তাকে বহিষ্কার করার উপর আপনার প্রাণে বাঁচা ও নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচা নির্ভর করছে। আপনাকে এই আপিল করতে হবে করুণ সুরে, যেন আপনি অপরিসীম নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্যে এই বিবৃতি দিচ্ছেন।’
বলেই ড. ডেভিড ইয়াহুদ পেছনে দাঁড়ানো সাথীদের একজনকে লক্ষ করে বলল, ‘স্যামসন, রেকর্ডার বের করে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড কর।’
সঙ্গে সঙ্গেই স্যামসন কাল আলখেল্লার ভেতর থেকে রেকর্ডারসহ হাত বের করে এগোলো প্রধান বিচারপতির খাটিয়ার দিকে। সে প্রধান বিচারপতির সামনে খাটিয়ায় বসল। রেকর্ডার অন করে তা তুলে ধরল প্রধান বিচারপতির মুখের কাছে।
প্রধান বিচারপতির হাত দিয়ে রেকর্ডারটি পাশের দিকে ঠেলে দিয়ে বলল, ‘আমি একজন বিচারপতি। নিছক প্রাণ বাঁচাবার জন্যে একজন নির্দোষ লোক সম্পর্কে এমন দাবি আমি করতে পারি না।’
চেয়ারে বসা লোকটির হাতের রিভলবার সঙ্গে সঙ্গে উঠে এল প্রধান বিচারপতির লক্ষ্যে। তার সাথে সাথে একটা গুলীও বর্ষিত হল। এবার ফাঁকা গুলী নয়। প্রধান বিচারপতির বাম হাতের কাঁধ-সন্ধিস্থলের এক খাবলা গোশত তুলে নিয়ে গুলীটা বেরিয়ে গেল।
প্রধান বিচারপতি আর্তনাদ করে উঠে ডান হাত দিয়ে বাম কাঁধ চেপে ধরল।
‘এই গুলীটা নমুনা গুলী ছিল। এরপর বুক ভেদ করে গুলী চলে যাবে। এবার বক্তব্যটা দিন। যে আর্তস্বরে চিৎকার করলেন, সেই আর্তস্বরেই একটা বক্তব্য দিন।’ ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলল।
‘কিন্তু আমি প্রাণভয়ে একজন নির্দোষ মানুষের ক্ষতি করতে পারব না।’ বলল প্রধান বিচারপতি। বেদনার্ত তার কণ্ঠ।
‘সামসন, রেকর্ডারটি স্মার্থাকে দিয়ে চাবুকটা নিয়ে এস। সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।’ নির্দেশ দিল চেয়ারে বসা লোকটি।
চাবুক নিয়ে এল স্যামসন।
‘চাবুক চালাতে থাক, যতক্ষণ না বক্তব্য রেকর্ড করতে রাজী হয়।’
বলে চেয়ার নিয়ে দরজার কাছে সরে বসল ডেভিড ইয়াহুদ। স্মার্থাও।
চাবুক চলল প্রধান বিচারপতির পিঠে, বুকে যেখানে সুযোগ পাচ্ছে সেখানে। প্রথম কয়েক ঘা মুখ বুজে সহ্য করল। কিন্তু তারপরেই তার মুখ থেকে বুক ফাটা আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসতে লাগল।
চাবুক কিন্তু থামল না। অল্পক্ষণের মধ্যেই দেহটা ঝিমিয়ে পড়ল প্রধান বিচারপতির। চিৎকারের শক্তিও আর থাকল না।
চেয়ারে বসা ড. ডেভিড ইয়াহুদ স্যামসনকে থামতে নির্দেশ দিল। তারপর চেয়ার নিয়ে এগিয়ে এল ডেভিড ইয়াহুদ প্রধান বিচারপতির নেতিয়ে পড়া দেহের কাছে। বলল, ‘স্যরি, আমরা এই খারাপ কাজটা করতে চাইনি। আপনিই বাধ্য করেছেন স্যার। বক্তব্যটি দিয়ে দিন। বক্তব্যটি দিলে কয়েকদিনের মধ্যেই আপনি ছাড়া পেয়ে যাবেন।’
প্রধান বিচারপতি চোখ খুলল। বলল, ‘বলেছি তো, আমি একজন বিচারপতি। নির্যাতনের ভয়ে, মৃত্যু-ভয়ে এধরনের বক্তব্য আমি দিতে পারি না। পারব না।’
‘প্রধান বিচারপতি মহোদেয়! মৃত্যুর চেয়েও বড় শাস্তি আমরা দিতে পারি। আমরা কি সে ব্যবস্থাই করব?’ বলল ডেভিড ইয়াহুদ।
‘ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না, যে মৃত্যুকে ভয় করেনা, তাকে আর কি দিয়ে ভয় দেখাবে?’ প্রধান বিচারপতি বলল।
‘আছে। আপনার স্ত্রী-কন্যাকে ধরে আনা হচ্ছে। সহ্য করতে পারবেন, আপনার চোখের সামনে তাদের লাঞ্চনা?’ বলল ডেভিড ইয়াহুদ।
চোখ খুলল প্রধান বিচারপতি। তার চোখে মুখে আতঙ্ক। বলল, ‘তারা নির্দোষ, নিরীহ, আমার দোষ তাদের ঘাড়ে চাপাবেন কেন? না, এটা তোমরা পার না।’ উদ্বেগ-আতঙ্কে ভেঙ্গে পড়া কণ্ঠ প্রধান বিচারপতির।
ডেভিড ইয়াহুদ উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘আমি যাচ্ছি আপনার স্ত্রী-কন্যাকে আনার ব্যবস্থা করতে।’
বলে ডেভিড ইয়াহুদ তাকাল স্যামসনের দিকে। বলল, ‘তাঁকে দশ মিনিট সময় দাও। এ সময়ের মধ্যে তিনি যদি বক্তব্য দিতে রাজী হন, তাহলে আমাকে টেলিফোন করবে। আমি তাহলে তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে ধরে আনার ব্যবস্থা নিয়ে এগোবো না। তোমার টেলিফোন না পেলে বুঝবো উনি রাজী হন নি।’
স্যামসনকে এই নির্দেশগুলো দিয়ে ড. ডেভিড ইয়াহুদ আবার তাকাল প্রধান বিচারপতির দিকে। বলল, ‘প্রধান বিচারপতি মহোদয়! দশ মিনিটের মধ্যে রাজী না হলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে আপনার স্ত্রী-কন্যাকে আপনি এখানে দেখতে পাবেন।’
বলেই কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে ডেভিড ইয়াহুদ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
দশ মিনিট শেষ হতে আর মাত্র এক মিনিট বাকি।
স্যামসন ও স্মার্থা প্রধান বিচারপতির সেলে প্রবেশ করল। স্যামসন বলল, ‘স্যার, দশ মিনিটের আর মাত্র এক মিনিট বাকি। আপনি রাজী হয়েছেন,এই টেলিফোন তাহলে আমি স্যারকে করছি না।’
প্রধান বিচারপতির রক্তাক্ত দেহ বিছানার উপর নেতিয়ে পড়েছিল। চোখ বন্ধ ছিল তার। বলল সে, ‘আমাকে কি বলতে হবে, তোমরা লিখে দাও।’ ক্ষীণ কণ্ঠ প্রধান বিচারপতির। চোখ বন্ধ রেখেই কথাগুলো সে বলল।
‘ধন্যবাদ বিচারপতি মহোদয়! আপনার শুভবুদ্ধির জন্য।’
বলেই স্যামসন স্মার্থার দিকে তাকাল।
স্মার্থা কাল আলখেল্লার ভেতর থেকে এক খণ্ড কাগজ বের করে প্রধান বিচারপতির দিকে তা এগিয়ে দিল।
ঠিক এসময়েই ব্রাশফায়ারের শব্দ হল। চমকে উঠে স্যামসন ও স্মার্থা সেলের দরজার দিকে তাকাল। দেখল, সেলের গেটে দাঁড়ানো দু’জন স্টেনগানধারী প্রহরীকে। তারা স্টেনগান বাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের স্টেনগানের ব্যারেল থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। স্যামসন ও স্মার্থা দ্রুত তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। দেখল সামনে কেউ নেই। সিঁড়ি পর্যন্ত ফাঁকা।
‘কী ব্যাপার? গুলী করলে কাকে?’ জিজ্ঞাসা স্যামসনের।
‘একটা ঢিল ধরনের কিছু গায়ে এসে পড়েছে। তাই সাথে সাথে গুলী চালিয়েছি।’ বলল একজন প্রহরী।
‘কোথায় ঢিল?’ বলল স্যামসন।
প্রহরীর খুঁজতে লাগল ঢিল। পেল না।
‘থাক। চল চারদিকটা খুঁজে দেখি।’ স্যামসন বলল। ঘরটা তালাশ করতে বেরুল চারজনই। তাদের হাতে উদ্যত স্টেনগান ও রিভলবার।

পরবর্তী বই
‘বসফরাসে বিস্ফোরণ’

Top