৪৭. বসফরাসে বিস্ফোরণ

চ্যাপ্টার

পাম গার্ডেনের প্রাচীর টপকানোর পর প্রতি মুহুর্তে বিপদের আশংকা নিয়ে এক পা দু’পা করে আহমদ মুসা যখন পাম গার্ডেনের মূল বিল্ডিং-এর দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল,তখন দূরে কৃষ্ণ সাগরের বুকে সোবহে সাদেকের সফেদ আলো ফুটে উঠেছে।
তার সাথে পাম গার্ডেন এলাকার গোটা অবয়বও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
প্রাচীর ঘেরা বিশাল পাম গার্ডেন এলাকা। উত্তর ইস্তাম্বুলের বসফরাসের পশ্চিমে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে জেকেরিয়ার উত্তর-পূর্বে বিশাল এলাকা নিয়ে এই পাম গার্ডেন এলাকা। গোটা এলাকাই উঁচু প্রাচীরে ঘেরা।
আহমদ মুসার চাহিদা অনুসারে জেনারেল মোস্তফার নির্দেশে মধ্যরাত থেকে নিরাপত্তা রক্ষীরা পাম গার্ডেন এলাকা ঘিরে রেখেছে। জেনারেল মোস্তফাও একটু দূরে দাঁড়িয়ে আহমদ মুসার সংকেতের অপেক্ষা করছে।
ঠিক হয়েছে আহমদ মুসা গোপনে একাই ভেতরে প্রবেশ করবে। ভেতরটা অনুসন্ধানের পর করণীয় সম্পর্কে আহমদ মুসা জানানোর পর বাইরের নিরাপত্তা বাহিনী মুভ করবে।
আহমদ মুসা দেয়ালের গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে ওপর দিকে তাকাল। দেয়ালটা ৪ তলার উঁচু পর্যন্ত উঠে গেছে। দেয়াল ডিঙাতে তাকে চারতলা উঁচু পর্যন্ত উঠতে হবে।
পেছন দিকে দরজা আছে কিনা তা দেখার জন্যে আহমদ মুসা দেয়ালের গোঁড়া ধরে হাঁটতে লাগল।
গোটা পেছনটা ঘুরল আহমদ মুসা। কিন্তু সলিড ওয়াল ছাড়া আর কিছুই পেলনা। একতলা পরিমান উঁচুতে কোন জানালা পর্যন্ত নেই। দেয়ালের স্ট্রাকচার অনেকটা গোডাউন বা জেলখানার মত।
দেয়ালের গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে হতাশ ভাবে চারদিকে তাকাল আহমদ মুসা। ভোরের সফেদ আলো নেমে আসলেও তখনও অন্ধকার কাটেনি। তবে বিল্ডিং-এর স্ট্রাকচারগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই আলো-আঁধারের মধ্যে আহমদ মুসার প্রাচীরের ভেতরে কম্পাউন্ডে সিনাগগের স্ট্রাকচার নজরে পড়ল। ভাল করে দেখল সিনাগগই, কিন্তু এত ছোট!
কৌতূহলবশতই সেদিকে এগুলো আহমদ মুসা।
ডিজাইনের দিক দিয়ে বিল্ডিংটি নিখুঁত এক সিনাগগ, এমনকি দরজা, জানালার কারুকাজ পর্যন্ত সিনাগগের।
কিন্তু এত বড় কমপ্লেক্সের মধ্যে এত ছোট সিনাগগ কেন?
দরজার দিকে আরেকটু এগোলো আহমদ মুসা।
দরজার ওপরের মাথায় চৌকাঠে মাকড়সার জাল দেখে বিস্মিত হল আহমদ মুসা। এত সুন্দর করে সিনাগগ তৈরি হয়েছে তার ব্যবহার হবে না কেন?
দরজার আরও ঘনিষ্ঠ হলো আহমদ মুসা।
দরজার মুখোমুখি হতেই দরজার সুশৃঙ্খল ডিজাইনের মধ্যে অসম একটা আঁকাজোঁকার ওপর আহমদ মুসার নজর আটকে গেল। ডিজাইনগুলোর সবই দরজার রংয়ে দরজার ওপর খোদাই করা। সুশৃঙ্খল ডিজাইনের ওপর বিশৃঙ্খল আঁকাজোঁকা সহজেই আহমদ মুসার নজরে পড়ে গিয়েছিল।
আঁকাজোঁকার ওপর নজর স্থির হতেই আহমদ মুসা দেখল ওগুলো অর্থহীন নয় আঁকাজোঁকা নয়। ওগুলো হিব্রু অক্ষর।
হিব্রু অক্ষর দেখে আগ্রহ বাড়ল আহমদ মুসার। অক্ষরগুলো মিলিয়ে আহমদ মুসা পড়ল শব্দটি ইলিরাজ (Eliraz)। হিব্রু ‘ইলিরাজ’ শব্দের অর্থ ‘মাই গড ইজ মাই সিক্রেট’ (আমার ঈশ্বর আমার গোপনীয়তা)।
আহমদ মুসার মনে পড়ল, ইহুদীরা এই কথাকে তাদের গোপনীয়তার শপথ কিংবা গোপনীয়তা রক্ষার দোয়া হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু আহমদ মুসা বুঝতে পারল না, এই কথাটি এখানে এই দরজার উপর লেখা কেন? আহমদ মুসা জানে এই পাম গার্ডেনে গোপনীয়তার কিছু অবশ্যই আছে। কিন্তু গোপনীয়তা রক্ষার দোয়াটা এই দরজায় কেন? তাহলে কি এখানে গোপনীয়তার কিছু আছে?
আহমদ মুসার মন খুশি হয়ে উঠল। প্রশ্ন এলো মনে, এই ছোট্ট স্থাপনার সিনাগগের ডিজাইন কি কোন ক্যামোফ্লেজ?
ভেতরে ঢোকার জন্যে দরজা ঠেলল আহমদ মুসা।
খুলে গেল দরজা।
আহমদ মুসা ভেতরে ঢুকে পকেট থেকে পেন্সিল টর্চটা বের করে জ্বালাল।
ঘরের চারদিক দেখল।
ঘরটি প্রার্থনার ঘরের মতো করেই সাজানো। ঘরের পশ্চিম দিকে একটা বেদি। বেদির ওপর একটা ডেস্ক।
আহমদ মুসা উঠে গেল বেদির ওপর। দেখল বুক সমান উঁচু ডেস্কটি একটা বাক্স বা আলমারির মতো। বাক্স বা আলমারির দু’টি পাল্লা এলুমিনিয়াম প্যানেলের ওপর দাঁড়ানো।
ডেস্কটি দেখলেই মনে হবে উঁচু চেয়ারে বসে ডেস্কে বই, ফাইল ইত্যাদি রাখা হয়। আর অনুষ্ঠানের জিনিসপত্র, কাগজপত্র রাখা হয় ডেস্কের আলমারিতে।
কোন কাগজপত্র কি আছে ডেস্কের আলমারিতে? তাতে গোপনীয় বা প্রয়োজনীয় কিছু থাকতে পারে?
আহমদ মুসা আলমারিটি খোলার জন্যে এলুমিনিয়াম প্যানেলের উপর দাঁড়ানো দু’টি পাল্লা দু’দিকে ঠেলে দিল।
খোলা জায়গা দিয়ে সামনে তাকাতেই বিস্ময়ে হাঁ হয়ে গেল আহমদ মুসার মুখ। দেখল কংক্রিটের একটা সরু সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে।
বিস্ময়-বিমুগ্ধ আহমদ মুসা আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করল। সে ভাবল, নিশ্চয় এই সিঁড়ি পাম গার্ডেন থেকে বেরুবার একটা গোপন এক্সিট পয়েন্ট। তার মানে এই সিঁড়ি দিয়ে পাম গার্ডেনে প্রবেশ করা যাবে।
পকেট থেকে আহমদ মুসা মেশিন রিভলবারটা বের করে হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামা শুরু করল।
আহমদ মুসার বাম হাতে টর্চ এবং ডান হাতে উদ্যত রিভলবার।
সিঁড়িটি মোটামুটি প্রশস্ত, একটা লম্বা ঘরে গিয়ে শেষ হলো।
ঘরটিতে একটা খাটিয়া, পানির পাত্র, ইত্যাদিসহ টুকিটাকি জিনিস রয়েছে। দেখলেই মনে হবে মিনি সিনাগগটির এটা একটা রেস্ট রুম অথবা মালখানা এবং এটা এখানেই শেষ।
কিন্তু আহমদ মুসা এটা মানতে পারল না। নিশ্চয় এখানে একটা গোপন পথ পাওয়া যাবে পাম গার্ডেনের ভেতরে ঢোকার।
আহমদ মুসা ঘরের চারদিকটা ঘুরল। মেঝে, দেয়াল সবটাই সলিড।
খাটিয়াটি ঘরের কোণায়। দেয়াল সেঁটে পাতা আছে।
খাটিয়ার উপর হালকা বেড।
খাটিয়ার নিচটা দেখার জন্যে আহমদ মুসা খাটিয়ার লম্বা লম্বি প্রান্ত ধরে ওপরে তুলল।
খাটিয়ার মাথা তিন-সাড়ে তিন ফুটের মতো ওপরে ওঠাতেই খাটিয়াটি আকস্মাৎ হাত থেকে ছুটে গিয়ে দেয়ালের গায়ে সেঁটে গেল এবং নিচের মেঝেটা চোখের পলকে দেয়ালে ঢুকে গেল। আর তার সঙ্গেই একটা সিঁড়িপথ উন্মুক্ত হয়ে গেল।
আল্লাহর এই সাহায্যের জন্যে তার শুকরিয়া আদায় করে আহমদ মুসা এক হাতে টর্চ অন্য হাতে রিভলবার নিয়ে নামতে শুরু করল। বিশ-বাইশ স্টেপের একটা দীর্ঘ সিঁড়ি।
সিঁড়িটা এবার নেমে এলো বিশাল ফুটবল খেলার মাঠের মতো একটা হলঘরে। মেরিল দুর্গের নিচে আইআরটি’র টেস্ট গ্রাউন্ডের মতোই এটা বিশাল।
বিশাল ক্ষেত্রটির চারদিকে চাইতে গিয়ে একে পরিত্যক্ত মনে হলো। বিশাল ক্ষেত্র জুড়ে মেঝের এখানে-সেখানে ইস্পাত ও কংক্রিটের স্থাপনা। ভাঙাচোরা। দেখেই মনে হচ্ছে, তাড়াহুড়ো করে ভেঙেচুরে কেউ যেন এগুলো থেকে কিছু খুলে নিয়ে গেছে!
এদিক-ওদিক ঘুরে-ফিরে দেখতে গিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা অবস্থায় সরু লম্বা প্লাস্টিকের একটা সাইনবোর্ড পেল। সাইনবোর্ডটি হিব্রু ভাষায়। হিব্রু ভাষা দেখে সাইন বোর্ড হাতে তুলে নিল আহমদ মুসা। পড়ল ‘ফোটন সাইলেন্ট ডেস্ট্রাকশন ডেমন’ (FSDD) টেস্ট কাউন্ট ডাউন।
সাইন বোর্ডের নামে বিস্ময়-বিস্ফারিত হল আহমদ মুসার চোখ। ওদের ফোটন মারনাস্ত্রটি কি এই ‘ফোটন সাইলেন্ট ডেস্ট্রাকশন ডেমন’ (FSDD)? এখানেই কি তার টেস্ট হতো? ল্যাবরেটরি তাহলে কি ওপরে? কিন্তু (FSDD) এখানে কেন? কোথায় গেল ওসব? ওরা কেউ কি এখানে নেই তাহলে? ওপরটা দেখতে হবে। ছুটল আহমদ মুসা ওপরে ওঠার জন্যে সিঁড়ির খোঁজে।
সিঁড়ি পেল না, কিন্তু বিশাল লিফট পেয়ে গেল।
লিফটে উঠে ওপরে চলে এলো আহমদ মুসা।
ওপরে উঠেই আহমদ মুসার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, এ বাড়িতে কেউ নেই।
আহমদ মুসা টেলিফোন করল জেনারেল মোস্তফার কাছে। বলল, ‘আমরা ঠিক ঠিকানায় এসেছি। কিন্তু ইতোমধ্যেই চিড়িয়া উড়ে গেছে। আপনি চলে আসুন এবং দয়া করে আইআরটি’র বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাসকে এখানে আসতে বলুন। সব কিছুই তারা নিয়ে গেছে, কিন্তু যা পড়ে আছে তা থেকে ওদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে বলে আমি মনে করি।’
‘ঠিক আছে মি. খালেদ খাকান। আমি বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাসকে এখনি আসতে বলছি। আর আমি আসছি।’ বলল জেনারেল মোস্তফা টেলিফোনের ওপার থেকে।
জেনারেল মোস্তফা এলে আহমদ মুসা বলল, ‘বিজ্ঞানী ইবনুল আব্বাস আসলে এক সাথে সব দেখা যাবে! আসুন, আমি যা দেখেছি সে বিষয়ে আপনার সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করি।’
গল্প চলল তাদের দু’জনের মধ্যে।
আধা ঘণ্টার মধ্যে বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস এসে পৌঁছলেন।
আহমদ মুসা টাকে স্বাগত জানিয়ে বলল, ‘আপনার জন্যে আমরা অপেক্ষা করছি। ‘থ্রী জিরো’র এটা একটা ঘাঁটি। ওদের যে ফোটন মারনাস্ত্রের কথা আমরা জানি, তার গবেষণা, পরীক্ষা ইত্যাদি বোধ হয় এখানেই হয়েছে। এ বিষয় সুস্পষ্ট ধারনা নেয়ার জন্যে আমরা আপনাকে কষ্ট দিয়েছি। আপনি এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করলে বাধিত হবো।’
‘অবশ্যই, চলুন দেখি।’ বলল বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস।
পাম গার্ডেনের মূল বিল্ডিংটি তিনতলা। তিনতলাটা বসবাসের জন্যে। দু’তলায় ল্যাবরেটরি। গ্রাউন্ড ফ্লোরটা স্টোর। আণ্ডারগ্রাউন্ড দুই ফ্লোরের ওপরের তলাটি হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং শপ। আর তার নিচের ফ্লোরটি টেস্ট গ্রাউন্ড।
বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখল। সময়ের জ্ঞান তার ছিল না। যেন নেশার ঘোর তাকে পেয়ে বসেছিল! সর্বশেষে ‘ফোটন সাইলেন্ট ডেস্ট্রাকশন ডেমন’-এর সাইন বোর্ড নিয়ে বিজ্ঞানী ইবনুল আব্বাস টেস্ট গ্রাউন্ডের মাটিতেই বসে পড়ল। সাইন বোর্ডটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্বগত কণ্ঠে বলল, ‘এ যে দেখছি মানবের সাথে দানবের লড়াই!’ আমাদের অস্ত্রের নাম ‘saviour of world rational demon’ (বিশ্বের মানব সম্প্রদায়ের রক্ষক) আর ওদেরটা হলো ‘foton sailent destrauction demon’ (নিরব ধবংসের ফোটন-দানব)। আমাদেরটা মানুষের শান্তি-স্বাধীনতা রক্ষার জন্যে, আর ওদেরটা ধংসের তাণ্ডব চালিয়ে মানুষকে দাস বানানোর জন্যে।’
শান্ত কণ্ঠে এই স্বগোতক্তি করার পর বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস মুখ তুলে আহমদ মুসার দিকে ফিরে বলল, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন, এখানেই ফোটন মারনাস্ত্র যার নাম ‘ফোটন সাইলেন্ট ডেস্ট্রাকশন ডেমন’-এর গবেষণা, নির্মাণ, টেস্ট ও ব্যবহারের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে ফোটন অস্ত্র ও এর মূল বাহক যন্ত্র এখানে তৈরি হলেও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্টস ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে এসেছে। ট্রাস কর্নারে জমা কার্টুনগুলো থেকে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেসব স্পেয়ার পার্টসের স্পেসিফেকিশনে ওদের ফোটন মারনাস্ত্র, অবয়ব, প্রকার ও শক্তিরও আঁচ করা যাবে। তবে এ ব্যাপারে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।’
থামলেন বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস।
‘আপনি আনন্দের কথা শোনালেন। যদি ওদের মারনাস্ত্রের আকৃতি, প্রকৃতি ও শক্তি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে সেটা হবে আমাদের জন্য বিরাট লাভের। আপনি তাদের সে অস্ত্র এখান থেকেই ব্যবহৃত হয়েছে বললেন। কিন্তু সে রকম সাইলো-টাইলো তো এখানে নেই।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ফোটন অস্ত্রের জন্যে সাইলোর দরকার হয় না। এর জন্যে বিরাট বপুর ভারী ক্ষেপণাস্ত্রেরও দরকার হয় না। জটিল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবস্থাপনায় বিশেষ ধাতব-পরমাণুকে আলোতে রূপান্তরিত করা হয়। সে আলোর ঘনীভুত আঁধারে স্থাপন করা হয় অকল্পনীয় মাত্রার এ্যাকটিভেটেড ও কমপ্রেসড ফোটন পারটিকেলস। তারপর একে পরিচালিত করা হয় লক্ষ্যের দিকে। এর গতি আলোর গতির মত হয় না। গতি নিয়ন্ত্রিত করা যায় বলে এটা মিনিটে গোটা পৃথিবী একবার ঘুরে আসতে পারে, আবার মিনিটে এক মাইল দুরেও পাঠানো যায়।’ বলল বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস।
‘যা বললেন, সেটা ওদের ফোটন মারনাস্ত্রের ফাংশন। ওদের এ অস্ত্র অফেনসিভ। কিন্তু আমাদের ডিফেনসিভ অস্ত্র ‘সোর্ড’-এর ফাংশন কেমন?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ওদের, ‘সাইলেন্ট ডেস্ট্রাকশন ডেমন’ (নিরব ধ্বংস দানব) ও আমাদের ‘সেভিয়ার অব ওয়ার্ল্ড র‍্যাশনাল ডোমেইন’ (বিশ্ব মানবতার রক্ষক) অস্ত্রের মূল কনসেপ্ট একই। উভয়েই ফোটন পারটিকেলস থেকে তৈরি। উভয়ের ধ্বংস ক্ষমতার চরিত্রও একই রকম। তবে দুই অস্ত্রের প্রয়োগ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওদেরটা সবার শক্তিকে ধ্বংস করে সবাইকে দাস বানানোর লক্ষ্যে সৃষ্টি। আর আমাদেরটা মাত্র আক্রমন করতে আসা অস্ত্রকে ধ্বংস করে পৃথিবীর সব মানুষকে রক্ষার লক্ষ্যে তৈরি। নির্মাণ কৌশলের দিক দিয়েও দুই অস্ত্রের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ফোটন পারটিকেলসকে ধ্বংসাত্মক আক্রমনের অস্ত্র হিসেবে তৈরি করা সহজ। ওরা সেটাই করেছে। কিন্তু আমরা ফোটন পার্টিকেলসকে আক্রমণকারী সব অস্ত্রকে ধ্বংস করার আত্মরক্ষামূলক অস্ত্র হিসেবে ডেভেলপ করেছি। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আক্রমণকারী অস্ত্র আক্রমনে ছুটে এলে তাকে আকাশেই বন্দী করে দূর আকাশে নিয়ে গিয়ে ধ্বংস করা হবে যাতে পৃথিবীর কোন ক্ষতি না হয়। এটা অত্যন্ত জটিল এক টেকনোলজিক্যাল উদ্ভাবনির মধ্যমে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।’
‘আল্লাহর রহমতে আমরা গর্ব করতে পারি, দুনিয়াতে এটা আমাদের অদ্বিতীয় এক উদ্ভাবন। দুনিয়ার আর কারও বিজ্ঞান এর ধারে কাছেও যেতে পারেনি। এজন্যে আমাদের সোর্ড’কে বাগিয়ে নেয়া, এর সূত্র ও নির্মাণ কৌশলকে হাত করার জন্যে ওরা মরিয়া হয়ে উঠেছে।’
দীর্ঘ বক্তব্য দিল বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস আব্দুল্লাহ।
‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাদের দুনিয়ার মানুষকে রক্ষার জন্য এ ধরনের অস্ত্র উদ্ভাবনের তৌফিক দিয়েছেন। এর দ্বারা আবার প্রমানিত হলো, আমরা দুনিয়ার সব মানুষ, আল্লাহর সব বান্দাহর স্বার্থ ও শান্তির পক্ষে। আমাদের হাতে বিজ্ঞান ফিরে আসা মাত্র আমরা তাকে ধ্বংস নয়, মানুষের কল্যাণ ও তাদের রক্ষার কাজে লাগিয়েছি।’ বলল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা থামতেই জেনারেল মোস্তফা বলে উঠল, ‘ধন্যবাদ, ড. ইবনুল আব্বাস, ধন্যবাদ মি. খালেদ খাকান। এখন আপনারা একটা পরামর্শ দিন, এই পাম গার্ডেনকে কি আমরা এভাবেই রেখে যাব, না একে আমাদের তত্বাবধানে নেয়া দরকার।’
‘না, না এটাকে ফেলে রাখা বা অরক্ষিত রাখা যাবে না। এখানে এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত এখনও আছে, যা খুবই মূল্যবান। আমি মনে করি, পাম গার্ডেনকে আইআরটির তত্বাবধানে দেয়া উচিত।’ দ্রুত কণ্ঠে জোর দিয়ে বলল ড. ইবনুল আব্বাস।
‘ঠিক আছে। আমরা পাম গার্ডেনকে আপাতত তালাবদ্ধ করে এর চারদিকে পাহারা বসিয়ে রাখছি। তারপর সরকার আপনাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’ জেনারেল মোস্তফা বলল।
‘ঠিক আছে তাহলে আপনি এটাই করুন। আমরা গাড়িতে গিয়ে বসছি, আপনি আসুন।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক আছে। ধন্যবাদ।’ জেনারেল মোস্তফা বলল।
আহমদ মুসা ও বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস পাম গার্ডেন থেকে বেরিয়ে গাড়ির দিকে এগোলো।
আহমদ মুসারা গিয়ে গাড়িতে বসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই জেনারেল মোস্তফা চলে এলো।
জেনারেল মোস্তফা বসেই বলল, ‘মি. খালেদ খাকান, আমরা যাচ্ছি এখন প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। বিষয়টা তাকে ব্রিফ করা দরকার।’
আহমদ মুসা তখন ভাবছিল অন্য বিষয়। জেনারেল মোস্তফার কথায় এদিকে মনোযোগ দিয়ে বলল, ‘জেনারেল মোস্তফা, আপনারা যান। আমাকে একটা জরুরি কাজে যেতে হবে কয়েক জায়গায়।’
জেনারেল মোস্তফা একটু ভাবল। বলল, ‘সেটা নিশ্চয়, আমি মনে করি, এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক আছে মি. খালেদ খাকান। উইস ইউ গুড লাক!’
‘ধন্যবাদ জেনারেল মোস্তফা’ বলে আহমদ মুসা গাড়িতে স্টার্ট দিল।

বসফরাস কলেজ অব টেকনোলজির কার পার্কিং-এ গাড়ি পার্ক করে কলেজ ক্যাফেটেরিয়াটা খুঁজে নিল আহমদ মুসা।
ঢুকল ক্যাফেটেরিয়ায়।
বেশ বড় ক্যাফেটেরিয়া।
ঘড়িতে দেখল বিকেল ৬টা বাজতে কিছু বাকি।
ক্যাফেটেরিয়াটি গমগমে নয়। তবে প্রায় টেবিলেই একজন দু’জন করে বসে আছে।
একটা খালি টেবিল বেছে নিয়ে বসল গিয়ে তাতে আহমদ মুসা।
হান্নাহ হাগেরার জন্যে এখন অপেক্ষা।
টেলিফোনে কথা হয়েছে আধা ঘণ্টা আগে। তিনটায় তার ক্লাস শেষ হবার পর সে হোস্টেলে ফিরেছে। সে বলেছে ছ’টায় সে ক্যাফেটেরিয়াতে থাকবে।
গোটা ক্যাফেটেরিয়ার ওপর একবার চোখ বুলাল আহমদ মুসা। না, হান্নাহ হাগেরা আসেনি এখনও।
চোখ ঘুরিয়ে নিতেই দরজায় চোখ পড়ল আহমদ মুসার। চোখ পড়ল হান্নাহ হাগেরার দিকে। সে দরজায় দাঁড়িয়ে ভেতরে চোখ বুলাচ্ছে।
সেও দেখতে পেয়েছে আহমদ মুসাকে।
হাত তুলে আঙুল নাচিয়ে আহমদ মুসাকে স্বাগত জানিয়ে চলে এলো আহমদ মুসার কাছে।
আহমদ মুসা একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিয়ে বলল, ‘ধন্যবাদ, তুমি ঠিক ছয়টাতেই ক্যাফেটেরিয়াতে এসেছ হান্নাহ।’
‘এ কৃতিত্ব আমার নয়, সময়টা যাকে দিয়েছিলাম তার। এক মিনিট দেরি করার সাহস আমার হয়নি।’ বলল হান্নাহ হাগেরা।
‘বুঝলাম না, আমি ভীতির বিষয় হলাম কেমন করে?’ আহমদ মসা বলল। তার কণ্ঠে বিস্ময়!
হাসল হান্নাহ হাগেরা। বলল, ‘শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা থেকে ভয় ও সতর্কতা আসে।’
‘তা আসতে পারে। তুমি কেমন আছ? তোমার আব্বা কেমন আছেন?’ বলল আহমদ মুসা।
‘জিজ্ঞেস করলেন না, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র আপনি হলেন কি করে?’ আহমদ মুসার কথায় কান না দিয়ে বলল হান্নাহ হাগেরা।
‘আমাদের সমাজে ছোটরা বড়দের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দেয়া স্বাভাবিক নিয়ম।’ বলল আহমদ মুসা।
হান্নাহ হাগেরার ভারী মুখেই হাসি ফুটে উঠল। বলল, ‘আপনাকে ফাঁদে ফেলে কার সাধ্য! সব পথই আপনার জানা। ধন্যবাদ। এখন বলুন, কি জন্যে আমাকে তলব করেছেন?’
‘তলব করিনি। একটা সাহায্য চাইতে এসেছি।’ আহমদ মুসা বলল।
‘সাহায্য? আমার কাছে? তাও আবার আপনি?’ বলল হান্নাহ হাগেরা। তার মুখে বিস্ময়!
একটু থেমে মুখে হাসি টেনে বলল, ‘কি সাহায্য করে সৌভাগ্যবতী হতে পারি বলুন?’
‘ডেভিড ইয়াহুদরা বিধ্বংসী যে মারনাস্ত্র তৈরি করেছে বলে তোমরা বলেছিলে, সে সম্পর্কে কি তোমরা আর কিছু জেনেছ?’ আহমদ মুসার জিজ্ঞাসা।
বিস্ময়ের রেখা ফুটে উঠল হান্নাহ হাগেরার চোখে-মুখে। বলল, ‘না, এ ব্যাপার নিয়ে তো আর আমরা চিন্তা করিনি। কেন এ কথা জিজ্ঞেস করছেন?’
‘জানো তো ডেভিড ইয়াহুদরা আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তাদের হাতের ভয়ানক অস্ত্র আমাদেরই তো আতংকের বিষয়! খোঁজ-খবর তো আমাদের নিতেই হবে। সে কারণেই এ ব্যাপারে আমাদের খোঁজ-খবর নিতে হচ্ছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু আমরা তো আর ঐ ব্যাপারে খোঁজ নিইনি।’ হান্নাহ হাগেরা বলল।
‘ডেভিড ইয়াহুদ বিজ্ঞানী নন আমরা জানি। তার পক্ষে কে এই গবেষণা কাজ করছে বলতে পার তোমরা?’ আহমদ মুসা বলল। আহমদ মুসার দৃষ্টি হান্নাহ হাগেরার ওপর স্থির নিবদ্ধ।
হান্নাহও আহমদ মুসার দিকে তাকিয়ে।
হান্নাহ হাগেরা বলতে চাইল যে, বিষয়টার অত দূর আমরা জানি না। কিন্তু আহমদ মুসার চোখের সামনে মিথ্যা কথাটা গলা পর্যন্ত এসেও আটকে গেল। তার মনে হল আহমদ মুসার মিষ্টি, অথচ অন্তর্ভেদী দৃষ্টি তার অন্তরের কথাগুলো যেন সব পড়তে পারছে!
কোন কথাই বলল না হান্নাহ হাগেরা।
আহমদ মুসাই আবার মুখ খুলল। বলল, ‘প্লিজ হান্নাহ, কারও ক্ষতি আমরা করতে চাই না। আমরা চাই, ঐ ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক অস্ত্র শুধু নয়, কোটি মানুষকে বাঁচাতে চাই সন্ত্রাসীদের দাসত্বের হাত থেকে। প্লিজ আমাদের সাহায্য কর।’
হান্নাহ হাগেরার মনে পড়ল তার পিতার কাছ থেকে শোনা কথা, ডেভিড ইয়াহুদরা দুনিয়ার সবার অস্ত্র ধ্বংস করে দুনিয়ার সবাইকে পদানত করতে চায়। খালেদ খাকান তো চাইছে তাদেরই বাঁচাতে। এমন ভয়ংকর অস্ত্র তৈরি করছে যে বিজ্ঞানী আব্দুর রহমান আরিয়েহ সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে, সেই বিজ্ঞানীর নিরাপত্তা তার কাছে বড় হবে কেন? তার নাম গোপন করে অবশ্যই ঠিক করেননি তার আব্বা।
সোফায় হেলান দিয়ে সোজা হয়ে বসল হান্নাহ হাগেরা। বলল, ‘আমি যতটা জানি, সেই বিজ্ঞানীর নাম আব্দুর রহমান আরিয়েহ। তিনি…।’
‘তিনি পার্টিকেল সাইন্সের একজন রিটায়ার্ড প্রফেসর।’ বলল আহমদ মুসা।
‘তাহলে আপনি জানেন তাকে?’ হান্নাহ হাগেরা বলল।
‘এটুকুই। তিনি কোথায় থাকেন?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘স্যরি। আমার দৌড় নাম জানা পর্যন্তই। আর আমার সাথে তার পরিচয় সিনাগগে। আব্বাও তিনি কোথায় থাকেন জানেন না। তবে আমার ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানতে পারেন।’ বলল হান্নাহ হাগেরা।
হান্নাহ’র শেষের কথাগুলো আহমদ মুসার কাছে পৌঁছেনি। সে তখন ভাবছিল অন্য কথা। আসলেই তার ঠিকানা এদের কারও জানার কথা নয়। ঐ ধরনের ভয়ংকর অস্ত্র যিনি তৈরি করেন, যেখানে বসে তৈরি করেন, তার অবস্থান হান্নাহ ও ডেভিড হারজেলের মতো কিছুটা বাইরের লোকদের জানানো হবে তা স্বাভাবিক নয়। তাছাড়া পাম গার্ডেনই যদি ড. আব্দুর রহমান আরিয়েহর কর্মস্থল-আবাসস্থল হয়ে থাকে, তাহলে তো তিনি সেখানে এখন নেই।
ভাবনার মধ্যে কিছুটা আনমনা হয়ে পড়েছিল। হান্নাহ হাগেরার কথার জবাব দেয়া হয়নি।
হান্নাহই কথা বলল আবার, ‘কি ভাবছেন?’
‘ভাবছি বিজ্ঞানী আব্দুর রহমান আরিয়েহর কথা। কি করে জানব সে কি করছে, কতোটা এগিয়েছে! তবু খুশি হলাম হান্নাহ যে, তোমার কাছে তার নামটি জানা গেল। বলতে পার, বিজ্ঞানী আব্দুর রহমান কোন্‌ সিনাগগের সদস্য ছিলেন?’ বলল আহমদ মুসা।
‘স্যরি! আমি জানিনা। ঠিক আছে আমি আব্বাকে জিজ্ঞেস করছি।’ বলেই হান্নাহ হাগেরা তার মোবাইলে একটা কল করল।
কথা শুরুর আগেই আহমদ মুসা দ্রুত তাকে বলল, ‘তুমি একটু জিজ্ঞেস করবে, সেখানে সদস্যদের রেজিস্টার রাখা হয় কিনা কিংবা যারা আসে সবার রেজিস্ট্রেশন হয় কিনা।’
‘ধন্যবাদ’ বলে মোবাইল কলের দিকে মনোযোগ দিল।
কথা বলল সে তার আব্বার সাথে। সে কোন্‌ সিনাগগের সদস্য, সিনাগগে রেজিস্টার আছে কিনা, নাম রেজিস্ট্রি করতে হয় কিনা ইত্যাদি সব কথাই সে জিজ্ঞেস করল।
কথা শেষ করে, কল অফ করে সিনাগগটির নাম উল্লেখ করে বলল, ‘আব্বার সাথে আব্দুর রহমান আরিয়েহর এই সিনাগগে দেখা হতো। আব্বা বললেন, সিনাগগে কোন রেজিস্টার রাখা হয়না। রেজিস্টার সিনাগগ কাউন্সিলে। সিনাগগ কাউন্সিলই সদস্যদের পছন্দ অনুসারে সিনাগগ বরাদ্দ করেন।’
‘ধন্যবাদ। তোমাকে কষ্ট দিলাম।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ধন্যবাদ দিয়ে উঠতে চাচ্ছেন তা হবে না। আমাদের কেন্টিনের বিকালের নাস্তা খুব ভাল।’ বলল হান্নাহ হাগেরা।
‘নাস্তায় আপত্তি নেই। এর জন্যে ধন্যবাদ পাবেন।’ আহমদ মুসা বলল।
হান্নাহ হাগেরা হেসে উঠল। বলল, ‘ধন্যবাদ সবচেয়ে সহজ ও সস্তা পেমেন্ট।’
‘কারণ এটার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। যেমন রোদ, বৃষ্টি, বায়ু, ইত্যাদির কোন মূল্য লাগে না। কারণ আল্লাহ এগুলো সবার জন্যে অপরিহার্য করেছেন।’ আহমদ মুসা বলল।
আল্লাহর প্রতি আপনার খুব বিশ্বাস, না?’ জিজ্ঞাসা হান্নাহ হাগেরার।
‘হ্যাঁ, যিনি সৃষ্টি করেছেন, পালন করেছেন এবং যাঁর কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে, তাঁর প্রতি বিশ্বাস অবশ্যই থাকবে। তোমার বিশ্বাস নেই?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
গম্ভীর হল হান্নাহ হাগেরার মুখ। বলল, ঈশ্বর একজন আছেন বিশ্বাস করি। কিন্তু সিনাগগে আমি যাই না। কোন আনুষ্ঠানিকতাও পালন করি না। এসবের মধ্যে আমি কোন প্রাণ খুঁজে পাই না। ধর্ম যদি ঈশ্বরের ইচ্ছায় জীবন গঠনের জন্যে হয়, তাহলে জীবন গঠনের কিছু পাই না ধর্মে।’
‘কোন ধর্মেই পাবে না বা নেই, একথা ঠিক নয়। তোমার ধর্মে এটা ঠিক হতে পারে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘সব ধর্মই তো ধর্ম। একই ধরনের। তবে মানি, আপনাদের ধর্মে দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আছে। এটা ইউনিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা আপনাদের ধর্মকে সক্রিয় রেখেছে।’ বলল হান্নাহ হাগেরা।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘হান্নাহ, তুমি আমাদের ধর্মকে আংশিকভাবে দেখেছো। পুরোটা দেখলে বলতে ইসলাম সত্যিই মানুষের জীবন গঠনের ধর্ম!’
হাসল হান্নাহ হাগেরা। বলল, ‘এটা কিন্তু এক ধরনের ধর্ম প্রচার।’
‘ভালোর দিকে ডাকা সব সময়ই ভালো কাজ।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তার মানে ভালোর দিকে যাওয়া সব সময়ই ভালো। অর্থ ভালোর দিকে আমাকে যেতে হবে। তার মানে আপনি আমাকে ‘প্ররোচনা’ দিচ্ছেন ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্যে।’ বলল হান্নাহ হাগেরা। তার মুখে হাসি।
‘ভালো’র দিকে যেতে বলাকে ‘প্ররোচনা’ বলে না, ‘প্রেরণা’ বলে।’ আহমদ মুসা বলল।
নাস্তা এসে গেল টেবিলে।
‘মেনে নিলাম ‘প্রেরণা’ দিয়েছেন। এখন প্রেরণা কাজে লাগলে হয়। আসুন শুরু করি। খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।’ কথা বলার সাথে সাথেই হান্নাহ হাগেরা আহমদ মুসার প্লেটে মাছের গরম কাটলেট তুলে দিল।
‘প্রেরনা’ কাজে লাগা, না লাগা নির্ভর করে গ্রহণকারীর আন্তরিকতার ওপর।’ বলে আহমদ মুসা কাঁটা চামচ হাতে তুলে নিল।
‘ঠিক আছে বলটা আমার কোর্টেই থাক। তবে প্রেরণাদাতাকে বলের খোঁজ-খবর নিতে হবে।
‘কিন্তু এটা শর্ত হওয়া উচিত নয়।’ আহমদ মুসা বলল।
হান্নাহ হাগেরা হাসল। বলল, ‘তথাস্তু।’
বলে হান্নাহ হাগেরাও কাঁটা চামচ হাতে নিল।

মুখ বিষণ্ণ আব্দুর রহমান আরিয়েহর।
তার অফিস রুমের পাশেই বসার ঘরে একটা সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে সে।
বলছিল ডেভিড ইয়াহুদ, ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, ড. আরিয়েহ। আপনি সন্দেহ ঠিকই করেছিলেন। আপনি ঠিক সময়ে সরে আসার সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে সর্বনাশ হয়ে যেত!’
‘সর্বনাশ হয়েছে কিনা কে বলতে পারে?’ সোফায় সোজা হয়ে বসল ড. আবদুর রহমান আরিয়েহ।
‘তার মানে?’ বলল ডেভিড ইয়াহুদ। সেও সোফায় সোজা হয়ে বসেছে।
‘তাড়াহুড়া করে আমাদের সেখান থেকে আসতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব আমরা সরিয়ে এনেছি বটে, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কিছু সেখানে পড়ে আছে এবং আমাদের FSDD-এর স্থাপনার চিহ্ন সেখানে রয়েছে যা থেকে এর ডিজাইন সম্পর্কে একটা ধারনা হতে পারে। তেমনিভাবে অপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে এমন কিছু থাকতে পারে যা থেকে কোন গবেষণার প্রকার-প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যেতে পারে।’ বলল ড. আরিয়েহ।
‘আপনার কথা ঠিক। একটা ধারণা তারা পেতে পারে। তবে সে ধারণা দ্বারা তারা অবশ্যই আমাদের FSDD সম্পর্কে কোন কিছুই আঁচ করতে পারবে না বলেই আমি মনে করি। কিন্তু আমি ভাবছি বাড়িটার ঠিকানা তারা কিভাবে পেল? দ্বিতীয়ত বাড়িটার লোকদের কারও সম্পর্কে তারা কিছু জানতে পেরেছে কিনা, বিশেষ করে আপনার নাম?’ ডেভিড ইয়াহুদ বলল।
‘তা পারবে না। বাড়িটা রেজিস্ট্রি করা আছে পদার্থ বিজ্ঞানের গবেষণাকারী একটা এনজিও’র নামে। এনজিওটা আমার নাম ব্যবহার করেছিল। কিন্তু এ দ্বারা বাড়িটা আমার তা প্রমাণিত হবে না। কারণ রেজিস্ট্রেশনের পরবর্তী রেকর্ডে আমার নাম নেই।’ বলল ড. আরিয়েহ।
‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে, শুরু থেকেই আমরা এতটা সতর্ক ছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের সতর্ক হতে হবে। এক এক করে আমরা পেছনে হটে এই শেষ অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থানকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলল।
‘কিন্তু কিভাবে সেটা আমরা পারব? পাম ট্রি গার্ডেনের ঘাঁটিটাকে আমরা সবচেয়ে নিরাপদ মনে করেছিলাম। কিন্তু সেটাও তো ওদের নজরে পড়ে গেল।’ বলল ড. আরিয়েহ।
‘নিশ্চয়েই অসাধ্য সাধন করেছে খালেদ খাকান নামের শয়তান আহমদ মুসা। সে ইস্তাম্বুলে আসার পর থেকেই আমাদের পিছু হটা শুরু হয়েছে। তার মতো বড় শয়তান আর নেই। তাকে পথ থেকে সরাতে না পারলে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব হবেনা।’ বলল ড. ডেভিড ইয়াহুদ।
‘কিন্তু কিভাবে? চেষ্টা তো কম হয়নি!’ ড. আরিয়েহ বলল।
ড. ডেভিড ইয়াহুদ ভাবছিল। সংগে সংগেই সে ড. আরিয়েহর কথার জবাব দিল না।
একটু ভেবে ডেভিড ইয়াহুদ বলল, ‘তাকে পথ থেকে সরাবার আমরা কোন চেষ্টাই বাকি রাখিনি। হত্যাই তাকে আমাদের পথ থেকে সরাবার একমাত্র পথ। সে চেষ্টা অতীতে বহুবার করা হয়েছে, এবারও কয়েকবার করা হয়েছে। কিন্তু তার ক্ষেত্রে কোন চেষ্টাই সফল হয়নি।’ একটু থামল ড. ডেভিড ইয়াহুদ।
‘তাহলে?’ বলল ড. আরিয়েহ।
‘আমি একটা নতুন চিন্তা করেছি। আমাদের কর্মী স্মার্থা প্রেসিডেন্ট হাউজে আমাদের অত্যন্ত বিশ্বাসী একজন লোককে অনেকদিন আগে সেট করেছে। স্মার্থা আমাকে গতকাল জানিয়েছে, ট্রান্সমিটার সেট করতে গিয়ে প্রোটোকল পদে নিয়োগ করা আমাদের লোক ধরা পড়ার পর বিপর্যয়ের মধ্যে আমরা পড়েছিলাম, সেটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। প্রেসিডেন্টের ব্যবস্থাপনা বিভাগে লোক থাকায় খাদ্য তৈরি বিভাগে দু’জন লোক ঢোকানো গেছে। এরা দু’জন আগে ইস্তাম্বুল সেনা গ্যারিসনের কুকিং-এ কাজ করত। সুতরাং অসুবিধা হয়নি।’
থামল আবার ডেভিড ইয়াহুদ।
‘এখন কি করতে চান?’ জিজ্ঞাসা ড. আরিয়েহর।
‘এবার বড় ঘটনা ঘটাতে চাই। স্বয়ং প্রেসিডেন্টকে কিডন্যাপ করবো এবার আমরা। একমাত্র তাঁকে কিডন্যাপ করলেই আহমদ মুসাকে আমাদের হাতে তুলে দিতে বা বহিস্কার করতে বাধ্য করা যাবে। তাকে হাতে পেলে বা বহিষ্কার করতে পারলে ওদের সোর্ড-এর ফর্মুলা উদ্ধার ও বিজ্ঞানীদের হাতে পাওয়াও সহজ হয়ে যাবে।’ বলল ডেভিড ইয়াহুদ।
‘কিন্তু প্রেসিডেন্টকে কিডন্যাপ করা কি সম্ভব হবে? সফল হলে তার ফল হবে অকল্পনীয়, কিন্তু ব্যার্থ হলে তার কুফলও হতে পারে…।’
ড. আরিয়েহর কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে বলল, ‘স্যার, খারাপ কিছু ভাবার দরকার নেই। এছাড়া আমাদের হাতে আর কোন বিকল্প নেই। দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। আমাদের বিজয়ী হতেই হবে। আর…।’
মোবাইল বেজে উঠল ডেভিড ইয়াহুদের। কথা থামিয়ে মোবাইল তুলে নিল।
‘হ্যাঁ, ওয়েলকাম স্মার্থা। বল।’ বলে স্মার্থার সাথে কথা বলতে শুরু করল ডেভিড ইয়াহুদ। কথা বলতে বলতে আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল ড. ডেভিড ইয়াহুদের মুখ।
স্মার্থাকে ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে কথা শেষ করেই ডেভিড ইয়াহুদ ফিরে তাকাল ড. আরিয়েহর দিকে। বলল, ‘একটা সুখবর ড. আরিয়েহ। আমার চিন্তার সাথে এই সুখবরটা পরিপুরক। স্মার্থা জানাল, প্রেসিডেন্ট ইস্তাম্বুলে থাকার যে সময় নির্ধারিত ছিল, তার আগেই তিনি আংকারা চলে যাচ্ছেন। তাঁর অফিস ও পার্সোনাল স্টাফের অগ্রবর্তী দল ইতিমধ্যেই আংকারা চলে গেছে। দু’একদিনের মধ্যে তিনি চলে যাবেন। একটা মিনিমাম স্টাফ নিয়ে তিনি আছেন।’
থামল ড. ডেভিড ইয়াহুদ।
‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আপনি যে সুযোগ চাচ্ছিলেন, মনে হয় ঈশ্বর সে সুযোগ আপনাকে দিয়েছেন। এখন দেখুন সুযোগ কিভাবে কাজে লাগাবেন।’ বলল বিজ্ঞানী ড. আরিয়েহ।
‘সেজন্যে আরও তথ্য আমাদের দরকার। আমাদের বেন গালিব গিদন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ব্যবস্থাপনা বিভাগে এবং আরও দু’জন কুকিং বিভাগে থাকলেও তাদের টেলিফোন-মোবাইল ব্যবহার করতে না পারা এবং প্রাসাদের বাইরে বেরুতে বিধি-নিষেধ থাকার কারণে তাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা পাওয়া কঠিন। তবে স্মার্থা চেষ্টা করে বেন গালিব গিদনের সাথে যোগাযোগ করতে। তাছাড়া সে খবরটা জেনেছে ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির শিক্ষকদের কাছ থেকে। শিক্ষকরা গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রোগ্রামে নিয়ে আসার জন্যে।’
থামল ড. ডেভিড ইয়াহুদ।
‘প্রেসিডেন্ট কি তাদের দাওয়াত গ্রহন করেছেন? গ্রহন করলে খুব ভাল হয়।’ বলল ড. আরিয়েহ।
‘কেন বলছেন এ কথা?’ ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলল।
‘প্রেসিডেন্ট দাওয়াত কবুল করলে শিক্ষকদের সাথে তাঁর আরও যোগাযোগ হবে। স্মার্থা এই সুযোগ নিতে পারবে। আমি সেই কথাই বলছিলাম।’ বলল ড. আরিয়েহ।
‘ঠিক বলেছেন ড. আরিয়েহ। প্রেসিডেন্ট দাওয়াত গ্রহন করেছেন। স্মার্থা নিশ্চয় এ সুযোগ গ্রহন করতে পারবে।’ ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলল।
‘স্মার্থা কতটা পারবে, সেটাই চিন্তার কথা।’ বলল ড. আরিয়েহ।
‘সেটা চিন্তার কথা বটে, তবে স্মার্থা শিক্ষক হিসেবে খুব পরিচিত। তার ওপর ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে নিউক্লিয়ার বিষয়ের ওপর স্মার্থা একটা কোর্স করছে। সেই সূত্রেও স্মার্থা শিক্ষকদের সাথে পরিচিত এবং তাদের সাথে ব্যাপক ওঠাবসা আছে।’ ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলল।
‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। সত্যই স্মার্থা বড় একটা সুযোগ করে দিতে পেরেছে। ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করুন!’
বলেই হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিজ্ঞানী ড. আরিয়েহ উঠে দাঁড়াল। বলল, দেরি হয়ে গেছে। ওরা ল্যাবে বসে আছে। যাই।’
ড. ডেভিড ইয়াহুদও উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘মি. আরিয়েহ, ওদের সোর্ড-এর পাওয়ারের পরিমাপ করাটা কি সম্ভব হয়েছে? আমাদের ‘ডাবল ডি’ ওদের ‘সোর্ড’-এর ডিফেন্স ভাঙতে না পারলে আমাদের সব প্লান-পরিকল্পনাই তো মাঠে মারা যাবে!’
‘হ্যাঁ, মি. ডেভিড ইয়াহুদ, ওদের ‘সোর্ড’-এর ডিফেন্স পাওয়ার যে এত উঁচু মানের তা আমি ভাবতেই পারিনি। আমাদের ডেমন ‘ডাবল ডি’ যে ৯০ ভাগ অংশ সরাসরি ‘সোর্ড’-এর মুখোমুখি হয়েছিল তার সবটাকেই ‘সোর্ড’ ভয়ংকর ব্ল্যাক হোলের মতো শুধু গিলেই ফেলেনি, আমাদের অ্যাটাকিং ফোটন পার্টিকেলগুলোকে রূপান্তরিত করে তার সহযোগী বানিয়ে ফেলেছে। সোর্ড-এর আওতার বাইরে থাকা মাত্র দশ ভাগ ডাবল ডি গিয়ে ওদের নৌবাহিনীর একটা অস্ত্র ডিপোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ ধ্বংসটুকুই আমাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক আক্রমণ মিশনের ফল।
থামল ড. আরিয়েহ মুহূর্তের জন্যে। পর মুহূর্তেই আবার মুখ খুলেছিল কথা শুরুর জন্যে। কিন্তু তার আগেই ড. ডেভিড ইয়াহুদ বলে উঠল, ‘আপনার সহযোগী বিজ্ঞানী আইতানের কাছে এ ভয়ংকর খবর আমি শুনেছি মি. আরিয়েহ। কিন্তু, ‘সোর্ড’-এর ব্ল্যাক হোলের মতো এমন ভয়ংকর গ্র্যাভিটেশনাল ক্ষমতার কথা তিনি বলেননি। ‘সোর্ড’-এর পাওয়ার কি সত্যিই এতটা ভয়ংকর?’
থামল ড. ডেভিড ইয়াহুদ। তার মুখ উদ্বেগ-আতংকে ভরা।
ড. আরিয়েহর মুখ ভয়ানক বিমর্ষ। সোফায় আবার সে বসে পড়ল। মনে হলো যেন আছড়ে পড়ল তার দেহটা সোফার ওপর। বলল, ‘বিস্ময় আমাদের হতবাক করে দিয়েছে! সর্বোচ্চ শক্তির আলোক পার্টিকেল তারাও ব্যবহার করেছে, আমরাও ব্যবহার করেছি। কিন্তু সেই পার্টিকেল শক্তিকে অতটা মাল্টিপ্লাট করল কি দিয়ে, কিভাবে? অলৌকিক এই গ্র্যাভিটেশনাল পুল (চৌম্বক আকর্ষণ শক্তি) এলো কি করে তাদের পার্টিকেলে? এই শক্তি বলেই সোর্ড যে কোন চলন্ত মরনাস্ত্র বন্দী করে ধ্বংস করতে পারে। আমার মনে হয় আজকের দিনে এটাই বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় বিস্ময়!’
‘আপনারা বিষয়টার পরীক্ষা ও পরিমাপে কতটা এগোতে পেরেছেন?’ জিজ্ঞাসা ড. ডেভিড ইয়াহুদের।
ওটা দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপার। ওটার ওপর কোন সিদ্বান্ত আটকে রাখা ঠিক হবে না। এখন আমাদের হাতে যে অস্ত্র আছে তাকেই কাজে লাগাতে হবে। সোর্ড-এর প্রতিরক্ষা সব কিছুকে বা গোটা দেশকে রক্ষা করতে পারে না। আমাদেরকে এই সুযোগ নিতে হবে। আমাদের শক্তি ছোট নয়। একদিনেই আমরা এদের অস্ত্রাগার, শিল্প-কারখানা, পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি ধ্বংস করে দেশকে বিরান ভূমিতে পরিণত করে দিতে পারি। ওদের ষ্টিল ফ্রেমের আকাশচুম্বি বিল্ডিংগুলো চোখের পলকে ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি মনে করি এরপর তারা আমাদের পায়ে পড়ে আমাদের দাবি মেনে নেবে।’
থামল ড. আরিয়েহ।
ওটা আমাদের সর্বশেষ সিদ্বান্ত। ওদিকে এখন যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ সকল প্রকার আন্তর্জাতিক জানাজানি ও প্রতিক্রিয়া আমাদের এখন এড়িয়ে চলতে হবে। আমাদের সব পরিকল্পনা ফেল করলে শেষ সিদ্বান্ত আমাদের নিতে হবে, তখন পশ্চিমের সাথে আমাদের ‘গিভ এন্ড টেক’- এর ভাগাভাগিতে যেতে হবে। এতে আমাদের মনোপলি থাকবে না এবং আসল লক্ষ্যও আমরা অর্জন করতে পারবো না। সুতরাং আমাদেরকে অন্য উপায়ে লক্ষ্য অর্জনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। আমরা যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেটা সফল হবে বলে আমি মনে করি।’ বলল ড. ডেভিড ইয়াহুদ।
‘ঈশ্বর আমাদেরকে সাহায্য করুন!’ বলে আবার উঠে দাঁড়াল ড. আরিয়েহ। তার চোখে আশার আলো।
ড. আরিয়েহ ও ড. ডেভিড ইয়াহুদ দু’জনেই বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।

Top