৪৭. বসফরাসে বিস্ফোরণ

চ্যাপ্টার

নৌবাহিনীর আপতকালীন অস্ত্রাগারের অবস্থা দেখে হতবাক হলো আহমদ মুসা। অস্ত্রের স্থানগুলো আছে, কেসগুলো আছে কিন্তু অস্ত্রগুলো নেই, হাওয়া হয়ে গেছে! জানালার ষ্টীল ফ্রেম ও অন্যান্য মেটালিক আসবাবপত্র সবই হাওয়া! স্থানগুলোতে অস্বাভাবিক বর্ণের পাউডারের সূক্ষ্ম আস্তরন লক্ষণীয়। মেঝের পাউডারের মতো ঘরের দেয়াল-ছাদও একটা ভিন্ন বর্ণের সূক্ষ্ম আস্তরণে যেন ঢেকে গেছে, আহমদ মুসার সাথে জেনারেল মোস্তফা, পুলিশপ্রধান নাজিম এরকেন দেখল সব ঘুরে ঘুরে।
গোটা সময়ে কেউ একটা কথাও বলেনি। সবার চোখে-মুখেই অপার বিস্ময়, আর গভীর উদ্বেগের সমাহার!
অস্ত্রাগার ও তাঁর আশপাশটা দেখা শেষ করে আহমদ মুসা জেনারেল মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চলুন, রোমেলী দুর্গে যাই।’
নৌবাহিনীর আপতকালীন এই অস্ত্রাগারের ৫০ ফুটের মাথায় রোমেলী দুর্গের শুরু। শুরুতেই রোমেলী দুর্গের উত্তর টাওয়ার।
দুর্গে প্রবেশ করে আহমদ মুসারা শুরুতেই দেখল দুর্গের উত্তর টাওয়ার। টাওয়ারটা একেবারেই অক্ষত। গোটা দুর্গের কোথাও কোন প্রকার ক্ষতি বা অস্বাভাবিকতা দেখা গেল না।
তারা ইন্সটিটিউট রিসার্চ এন্ড টেকনোলজির আহমদ মুসার কক্ষে গিয়ে বসল।
আহমদ মুসারা বসার পরপরই ঘরে প্রবেশ করল তরুন আলোক-বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস আব্দুল্লাহ সেনুসী।
বিজ্ঞানী ড. ইবনুল আব্বাস আব্দুল্লাহ ইন্সটিটিউটের প্রধান ড. আন্দালুসির প্রধান গবেষণা সহকারী। বলল সে, ‘আমাদের ল্যাবরেটরিসহ ইন্সটিটিউটের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। সব ঠিক আছে।’
‘ড. আন্দালুসিকে আপনি জানিয়েছেন বিষয়টি?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘জি জনাব, আপনার টেলিফোন পেয়েই বিষয়টি আমি ড. আন্দালুসিকে জানিয়েছি।’ বলল ড. ইবনুল আব্বাস।
‘শুনে তিনি কি বললেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘তিনি খুব উদ্বিগ্ন হয়েছেন। বলেছেন, আইআরটিকে লক্ষ্য করেই তারা ফোটন মারণাস্ত্রের হামলা চালিয়েছিল। আমাদের সোর্ড শিল্ড অ্যাকটিভ না থাকলে আমাদের আইআরটি’রও একই দশা হতো।’ ড. বিজ্ঞানী ইবনুল আব্বাস বলল।
‘নৌবাহিনীর আর্মস ডিপো ধ্বংস হওয়ার ব্যাখ্যা কি ড. ইবনুল আব্বাস?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘আমাদের সোর্ড শিল্ডের আওতার বাইরে ছিল ওটা। আর ওদের ফোটন অফেনসিভ আর্মস-এর বিস্তার ছিল আমি মনে করি রোমেলী দুর্গ থেকে দু’শ ফুট বেশি। এই বর্ধিত অংশ দুর্গের দু’দিকেই বিস্তৃত ছিল। কিন্তু দুর্গের দক্ষিন অংশে উল্লেখযোগ্য কোন ধাতব স্ট্রাকচার না থাকায় সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।’ বলল ড. ইবনুল আব্বাস।
‘আপনারা সোর্ড শিল্ডকে অ্যাকটিভ রেখেছিলেন, না অ্যাকটিভ করেছেন?’ বলল আহমদ মুসা।
‘অ্যাকটিভ ছিল না, ঘণ্টা খানেক আগে আমরা অ্যাকটিভ করেছি। হাসপাতাল থেকেই ড. আন্দালুসি এই নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন।’ ড. ইবনুল আব্বাস বলল।
‘মাত্র এক ঘণ্টা আগে? তার মানে গত এক ঘণ্টার মধ্যে ওদের এই আক্রমণটা হয়েছে? ইন্না লিল্লাহ! যদি সোর্ড অ্যকটিভ করা না হতো, তাহলে কি হতো!’
বলল আহমদ মুসা। তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটল। ভাবল সে, হাসপাতালে তাঁদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনার পরপরই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ড. আন্দালুসি আইআরটিকে সোর্ড শিল্ড অ্যাকটিভ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল আহমদ মুসা। ড. আন্দালুসির দূরদৃষ্টিরও প্রশংসা করল।
ভাবতে গিয়ে একটু আনমনা হয়ে পড়েছিলে আহমদ মুসা। জেনারেল মোস্তফার মোবাইল বেজে উঠার শব্দে সে সম্বিত ফিরে পেল।
জেনারেল মোস্তফা টেলিফোন ধরে জি, ইয়েস স্যার বলেই কথা শেষ করল।
আহমদ মুসা বুঝল, প্রধানমন্ত্রীর বা প্রেসিডেন্টের মতো ওপরের কারও টেলিফোন নিশ্চয়ই।
মোবাইল পকেটে রেখে জেনারেল মোস্তফা তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘মি. খালেদ খাকান, প্রেসিডেন্টের ইনার সিকিউরিটি টীমের জরুরী বৈঠক বসেছে। আপনাকে নিয়ে এখনি যাবার জন্য আমার ওপর নির্দেশ হয়েছে। চলুন উঠি।’
আহমদ মুসার সাথে কথা শেষ করেই জেনারেল মোস্তফা পুলিশপ্রধান নাজিম এরকেনকে লক্ষ্য করে বলল, ‘মি. নাজিম এরকেন, আপনি এ ঘটনার উপর প্রধানমন্ত্রীর জন্যে ব্রীফ তৈরি করুন। আর এ দিকটা দেখুন আপনি।’
বলে উঠে দাঁড়াল জেনারেল মোস্তফা।
সাথে আহমদ মুসাও।
সকলের সাথে সালাম বিনিময় করে তারা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলো।
বসফরাসের তীরেই প্রেসিডেন্টের অবকাশকালীন প্রাসাদ। গত পক্ষকাল ধরে প্রেসিডেন্ট এখানেই অবস্থান করছেন। প্রধানমন্ত্রীও এখানে এসেছেন আংকারা থেকে দু’দিন হলো।
আহমদ মুসারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে প্রবেশ করে ভেতরের কার পার্কিং-এ নামতেই একজন প্রোটোকল অফিসার এগিয়ে এলো। বলল জেনারেল মোস্তফা ও আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে, ‘স্যার, মহামান্য প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী মহোদয় আপনাদের জন্যে অপেক্ষা করছেন। আসুন স্যার।’
প্রোটোকল অফিসারকে অনুসরন করল আহমদ মুসা ও জেনারেল মোস্তফা।
হাঁটতে হাঁটতে প্রোটোকল অফিসার বলল, ‘প্রেসিডেন্ট চলে গেছেন তাঁর আন্ডারগ্রাউন্ড অফিস রুমে। সেখানেই আপনাদের ডেকেছেন।’
এ করিডোর, সে করিডোর ঘুরে একটা লিফটের সামনে এসে দাঁড়াল তারা।
ঘুরতে গিয়ে প্রোটোকল অফিসার হোঁচট খেল জেনারেল মোস্তফার সাথে। প্রোটোকল অফিসারের জুতার অগ্রভাগটা ঠোকর খেল জেনারেল মোস্তফার জুতার সাথে।
পড়ে যাচ্ছিল প্রোটোকল অফিসারটি। জেনারেল মোস্তফা তাঁকে ধরে ফেলল।
প্রোটোকল অফিসারটি ‘স্যরি’; ‘স্যরি’ বলতে বলতে বিনয়ে বিগলিত হয়ে গেল।
‘না, না, ঠিক আছে। হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তো! আমি চলা অবস্থায় ছিলাম। এরকম ঘটতেই পারে। এ কিছু না, ঠিক আছে। ওকে লেট আস প্রোসিড।’ বলল জেনারেল মোস্তফা।
আহমদ মুসার মুখে কিন্তু একটা বিরক্তি ভাব ফুটে উঠেছিল। আহমদ মুসা জেনারেল মোস্তফার পাশাপাশি হাঁটছিল। আহমদ মুসা দেখেছে, জেনারেল মোস্তফার সাথে তার এভাবে হোঁচট লাগার কথা নয়। প্রোটোকল অফিসার খুব শর্ট স্পেস নিয়ে ঘুরেছে। ঘোরার সময় জুতাটাও সে চালিয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জোরে। সে কি অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল, না তাঁর কাণ্ডজ্ঞানের অভাব আছে?’
কিন্তু আহমদ মুসা কিছু বলল না।
জেনারেল মোস্তফার কথার জবাবে প্রোটোকল অফিসার বলল, ‘স্যার, আমার আর সামনে এগোবার অনুমতি নেই। লিফটে আপনারা একাই যাবেন। লিফটের গোঁড়ায় প্রেসিডেন্টের পি.এস. আপনাদের রিসিভ করবেন।’
লিফটে উঠল জেনারেল মোস্তফা ও আহমদ মুসা।
সত্যি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী আহমদ মুসাদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন।
আহমদ মুসারা মিটিং রুমে প্রবেশ করতেই প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘ওয়েলকাম, মি. খালেদ খাকান! আপনাদের জন্যেই আমাদের অপেক্ষা। আসুন, বসুন।’
একটা ডিম্বাকৃতি টেবিলের একপাশে একটা কিং চেয়ারে বসে আছেন প্রেসিডেন্ট। তাঁর ডান পাশে প্রধানমন্ত্রী। তার ডান পাশে প্রধানমন্ত্রী। সামনে আরও চারজন। প্রেসিডেন্ট সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন আহমদ মুসাকে। চারজনের একজন তিন বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ, দ্বিতীয় জন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা এ্যাডভাইজার, তৃতীয় জন পার্লামেন্টের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এবং চতুর্থ জন পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতা।
পরে সবাইকে আহমদ মুসার পরিচয় দিতে গিয়ে বললেন, ‘তাঁর সম্পর্কে আমি আগেই আপনাদের ব্রীফ করেছি। তিনি তুরস্কের জন্যে, মুসলিম উম্মার জন্যে যা করেছেন তার জন্যে আমরা কৃতজ্ঞ।’
কথা শেষ করে একটু থামলেন প্রেসিডেন্ট। তারপর মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। বললেন, ‘এবার মিটিং-এর কাজ শুরু হতে পারে মিভ প্রধানমন্ত্রী।’
ঠিক এই সময়েই আহমদ মুসার মোবাইল বেজে উঠল।
বিব্রত হলো আহমদ মুসা। বলল, ‘এক্সকিউজ মি, মিস্টার প্রেসিডেন্ট। মোবাইল আমার অফ আছে। কিন্তু ইমার্জেন্সি অপশনে কলটি এসেছে। আমি কি এ্যাটেন্ড করতে পারি?’ বলল আহমদ মুসা বিনীতভাবে।
‘অবশ্যই মি. খালেদ খাকান। নো ম্যাটার। আপনি কলটি এ্যাটেন্ড করুন।’ বললেন প্রেসিডেন্ট।
‘ধন্যবাদ, একসেলেন্সি।’ বলে আহমদ মুসা মোবাইল নিয়ে একটু দুরে সরে গেল।
স্ক্রীনের নম্বারটি দেখেই বুঝল জোসেফাইনের ফোন। একটু উদ্বিগ্ন হলো আহমদ মুসা। মোবাইল বন্ধ দেখেও ইমারজেন্সী অপশনে কলটি সে করেছে। এ রকম সে করে না। কোন কি বিপদ হয়েছে তাঁর?’
কলটি অন করেই সালাম দিয়ে আহমদ মুসা দ্রুত কণ্ঠে বলল, ‘তোমরা ভালো আছো তো জোসেফাইন?’
‘স্যরি, আমরা ভালো আছি। কিন্তু একটা খবর দেয়ার জন্যে তোমাকে এই কলটি করতে হলো। এইমাত্র জেফি জিনা আমাকে জানাল, তুমি এখন প্রেসিডেন্ট হাউজে থাকতে পার কোন গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ। প্রেসিডেন্ট হাউজের একজন প্রোটোকল অফিসার ‘থ্রি জিরো’ র এজেন্ট। তার উপর বিশেষ নির্দেশ গেছে মিটিংটি মনিটর করার। খবরটি এইটুকুই। ওকে। সালাম। রাখি?’ টেলিফোনের ওপার থেকে বলল জোসেফাইন।
‘ধন্যবাদ জোসেফাইন। বিরাট উপকার করলে তুমি।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমার নয়। ধন্যবাদ প্রাপ্য জেফি জিনার।’ বলল জোসেফাইন।
‘তাকেও ধন্যবাদ।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ঠিক আছে। জানাবো তাকে। রাখছি টেলিফোন। সালাম।’
‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে আহমদ মুসাও কল অফ করে দিল।
আহমদ মুসা ফিরে এলো টেবিলে। সে কানে কানে বিষয়টা জানালো জেনারেল মোস্তফাকে।
চমকে উঠল জেনারেল মোস্তফা। উদ্বেগে ছেয়ে গেল তার চোখ-মুখ। সে উঠে দাঁড়াল চেয়ার থেকে। বলল, ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, জনাব খালেদ খাকান এইমাত্র জানতে পেরেছেন, প্রেসিডেন্টের একজন প্রোটোকল অফিসার ‘থ্রি জিরো’ র লোক। তাঁর উপর দায়িত্ব পড়েছে এই মিটিং-এর আলোচ্য বিষয় মনিটর করার।’
থামল জেনারেল মোস্তফা।
প্রেসিডেন্ট সোজা হয়ে বসলেন। তারও চোখ-মুখ ছেয়ে গেল উদ্বেগে। বললেন, ‘প্রেসিডেন্ট হাউজে এখন তিনজন প্রোটোকল অফিসার। তিনজনই আজ হাজির আছে। এই তিনজনের মধ্যে কে সে? অবস্থার প্রেক্ষিতে মি. খালেদ খাকানের দেয়া তথ্য সত্য বলে মনে করছি। ধন্যবাদ, মি. খালেদ খাকান।’
‘তিন প্রোটোকল অফিসারকেই গ্রেপ্তার করে তাদের কাছ থেকে তথ্য নেয়া হোক!’ বলল প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
হঠাৎ আহমদ মুসার মনে পরে গেল আসার পথে লিফটের সামনে প্রোটোকল অফিসারের সাথে জেনারেল মোস্তফার হোঁচট লাগার কথা। এই হোঁচট লাগাকে তখনই স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি।
ভ্রু কুঞ্চিত হলো আহমদ মুসার। সে কি তাহলে হোঁচট লাগার মহড়া করে জুতার মাধ্যমে জুতায় অথবা হাত দিয়ে কোট প্যান্টের কোথাও ট্রান্সমিটার চিপস পাচার করেছে?
কথাটা মনে আসতেই আহমদ মুসা জেনারেল মোস্তফাকে বলল, ‘নিশ্চয়ই ঐ প্রোটোকল অফিসারটি। তার জুতার সাথে আপনার জুতার হোঁচট লাগিয়ে ট্রান্সমিটার চিপস পাচার করেছে অথবা পোশাকেও তা লাগিয়ে দিতে পারে।’
ভ্রু কুঞ্চিত হলো জেনারেল মোস্তফারও। বলল, ‘সত্যিই তার হোঁচট লাগানোটা আমাকে অবাক করেছে। চলুন দেখি, জুতাটা আগে চেক করি।’
টর্চ আনা হল। ম্যাগনিফাইং গ্লাস আহমদ মুসার কাছেই ছিল।
জুতায় টর্চের আলো ফেলে আহমদ মুসা জেনারেল মোস্তফার বাম জুতা পরীক্ষা করতে লাগল ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে। বাম জুতার সামনের বাম পাশে টপটার তলার দিকে টার্ন নেবার জায়গায় আলপিনের মাথার মতো ক্ষুদ্র একটা চিপস পাওয়া গেল। বিশেষ ধরনের চুম্বক দিয়ে ওটা তুলে নেয়া হল।
আহমদ মুসা জেনারেল মোস্তফার পোশাকের সামনের দিকটার ওপরও চোখ বুলাতে চাইল। আহমদ মুসার মনে পড়ল লোকটিকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্যে যখন তাকে ধরেছিল জেনারেল মোস্তফা, তখন লোকটির বাম হাত জেনারেল মোস্তফার বাম হাত চেপে ধরেছিল। দেহের আর কোন জায়গায় তার হাত পড়েনি।
আহমদ মুসা তার বাম হাত ও কোটের হাতা পরীক্ষা করল। আতিপাতি অনুসন্ধানের পর হাতার বোতামে আরেকটা চিপস পাওয়া গেল। এ চিপসটাও বিশেষ চুম্বক দিয়ে তুলে নেয়া হল।
চিপস দু’টি প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীও দেখলেন ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে।
তারপর আহমদ মুসা লেজার বীমার দিয়ে পুড়িয়ে দিল চিপস দু’টি।
এতক্ষন কেউ কথা বলেনি।
নীরবতা ভাঙলেন প্রেসিডেন্ট। বললেন, ‘মিঃ খালেদ খাকান, ঘটনা কি বলুন তো?’
‘ঘটনাটা জেনারেল মোস্তফার সাথে ঘটেছে। তিনিও বলতে পারেন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আপনিই বলুন মি. খালেদ খাকান। ঘটনা আমার সাথে ঘটলেও গোটা ঘটনা আপনার দেখার সুযোগ হয়েছে।’ বলল জেনারেল মোস্তফা।
‘ধন্যবাদ, জেনারেল মোস্তফা।’ বলে আহমদ মুসা লিফটের সামনে পৌঁছে প্রোটোকল অফিসার পেছন ফিরতে গিয়ে কিভাবে জেনারেল মোস্তফার পায়ের সাথে তার পা হোঁচট খায়, কিভাবে প্রোটোকল অফিসার পড়ে যাচ্ছিল, কিভাবে জেনারেল মোস্তফা তাকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করল, কিভাবে ভারসাম্য রক্ষার জন্যে প্রোটোকল অফিসার তার বাম হাত দিয়ে জেনারেল মোস্তফার বাম হাত আঁকড়ে ধরেছিল, তার বিস্তারিত বর্ণনা করল। ‘প্রোটোকল অফিসারের জুতার মাথায় একটা ট্রান্সমিটার চিপস সাজানো ছিল, সেটা হোঁচট লাগানোর সময় জেনারেল মোস্তফার জুতায় পাচার করেন এবং তার হাতে বাড়তি ব্যাবস্থা হিসেবে আরেকটি চিপস ছিল, সেটা তিনি পড়ে গিয়ে অন্য জুতায় পেস্ট করতে চেয়েছিলেন। পড়ে যেতে না পেরে তিনি জেনারেল মোস্তফার হাতার বোতামে সেটা লাগিয়ে দেন। আমি এরকমই ধারনা করছি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ধন্যবাদ, মি. খালেদ খাকান! আপনি হোঁচটটাকে অস্বাভাবিক মনে করেছিলেন বলেই একটা বড় সিক্রেট আউট হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচলাম, তেমনি শয়তানটাকে ধরা সহজ হয়ে গেল।’ জেনারেল মোস্তফা বলল।
প্রেসিডেন্ট আহমদ আরদোগাল বাবাগলু একটা টেলিফোনে কথা শুনছিলেন। টেলিফোনটা রেখে দিয়ে বললেন, ‘জেনারেল মোস্তফা, শয়তানটা ধরা পড়ল ঠিকই কিন্তু ধরে রাখা গেল না। ধরা পরার সংগে সংগেই সে পটাসিয়াম সাইনাইড খেয়েছে। মি. খালেদ খাকানের কথা থেকে কে কালপিট তা আঁচ করতে পেরেই আমি তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলাম। বোধ হয় কিছু সে আঁচ করতে পেরেছিল। পালাচ্ছিল সে। বাইরে গেটে গাড়িতে ওঠার মুহূর্তে তাকে ধরে ফেলা হয়। কিন্তু লাভ হলো না। আমাদের সিক্রেটটা রক্ষা পেলেও ভয়ানক শত্রু হাতের মধ্য থেকে বেরিয়ে গেল।’
বলে একটু থামলেন প্রেসিডেন্ট। তারপর আবার বলা শুরু করলেন, ‘ধন্যবাদ মি. খালেদ খাকান। আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন! আপনার অদ্ভুত বুদ্ধি-শক্তিকে আল্লাহ আরও বাড়িয়ে দিন!’
আহমদ মুসার উদ্দেশ্যে কথা শেষ করে ঘুরে বসলেন প্রেসিডেন্ট। সবার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘এবার মিটিং শুরু হতে পারে। আমাদের সামনে ভয়াবহ বিপদ দুটি। এক. শত্রুরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে এমনকি প্রেসিডেন্ট ভবনের মতো স্থানেও অবস্থান নিতে পেরেছে। দুই. এক ভয়াবহ মারনাস্ত্র আমাদের মাথার ওপর ঝুলে আছে। সে এমন এক মারনাস্ত্র যা অদৃশ্য এবং তার ধ্বংসলীলাও অদৃশ্য। আমরা কিভাবে এই দুই সংকটের মোকাবিলা করব, সে ব্যাপারে যার যার চিন্তার কথা বলুন।’
সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ আলী আব্দুল্লাহ গুল বলল, ‘আমাদের পরিচিত ও প্রধান সামরিক ঘাঁটিগুলোকে অবিলম্বে সোর্ড শিল্ডের নিরাপত্তা বলয়ে আনা দরকার। আমাদের প্রধান শিল্প-কারখানাগুলোকেও এই নিরাপত্তা আমব্রেলা দিতে হবে। আর এই ভয়ানক শত্রুদের ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়ার জন্যে আমাদের গোয়েন্দা ব্যাবস্থাপনার সর্বাত্মক ব্যবহার হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় ভাই মি. খালেদ খাকানের সাহায্যই হবে আমাদের জন্যে মুখ্য বিষয়।’
থামল সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ আলী আব্দুল্লাহ গুল।
পার্লামেন্টের বিরোধী দলের নেতা, পার্লামেন্টের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির প্রধান, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হোসেন ইসমাইল সেলিক কমবেশি একই কথা বললেন। প্রধানমন্ত্রী তার কথায় একটা যোগ করেছেন, সেটা হল যে, তিনি বিজ্ঞানী ড. আন্দালুসির সাথে আলোচনা করেছেন। তুরস্ককে সোর্ডের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর শেষ কথাটা শুনে প্রেসিডেন্ট ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আহমদ মুসার দিকে তাকালেন। বললেন, ‘বলুন মি. খালেদ খাকান আপনি কি ভাবছেন?’
‘আরও সংকট মোকাবিলার জন্যে সবাই যা বলেছেন তার সাথে আমি একমত। কিন্তু এ সংকটের নিরাপদ ও স্থায়ী সমাধান হলো ধ্বংসের এই অস্ত্রকে শুরুতেই গোড়া সমেত উপড়ে ফেলা। ষড়যন্ত্রের গবেষণাগারকে শেষ করে দেয়া। এই লক্ষ্যে দ্রুত এগুনো দরকার।’ বলল আহমদ মুসা।
প্রেসিডেন্টের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বললেন, ‘এই দুরূহ দায়িত্ব মি. খালেদ খাকান, আপনাকেই নিতে হবে।’
‘একসেলেন্সি, আমি চেষ্টা করছি, চেষ্টা করব। জানি না কতখানি সফল হব!’ আহমদ মুসা বলল।
‘মি. খালেদ খাকান, আমাদের সরকারের সব রকম সাহায্য আপনার সাথে থাকবে। যেখানে যখন প্রয়োজন, সেনাবাহিনীকে ডাকলেও পাবেন।’ বললেন প্রেসিডেন্ট।
‘একসেলেন্সি, আমি কালকের মধ্যেই ইস্তাম্বুলের এমন একটা মানচিত্র চাই, যাতে কোন্‌টা দোকান, কোন্‌টা কিসের কারখানা, তার ইন্ডিকেশন থাকবে। ফাঁকা জায়গাগুলোর মালিক কারা বা কে? তারও জওয়াব থাকতে হবে মানচিত্রে।’ বলল আহমদ মুসা।
প্রেসিডেন্ট তাকালেন জেনারেল মোস্তফার দিকে। প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা বুঝে জেনারেল মোস্তফা বলল, ‘একসেলেন্সি, এ ধরনের মানচিত্র আছে, খুবই সিক্রেট। তবে মি. খালেদ খাকান অবশ্যই এটা পাবেন।’
‘ধন্যবাদ জেনারেল মোস্তফা।’ বললেন প্রেসিডেন্ট।
‘ধন্যবাদ জেনারেল মোস্তফা।’ আহমদ মুসা বলল।
আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘সোর্ড-এর মোতায়েন করা, সেটা কি হয়েছে?’
‘একসেলেন্সি, বিজ্ঞানী ড. আন্দালুসি নিজেই বলেছেন, এটা অবিলম্বে হওয়া দরকার।’ বলল জেনারেল মোস্তফা।
‘মোতায়েন হয়েছে কিনা?’ জিজ্ঞাসা প্রেসিডেন্টের।
‘প্রয়োজনীয় লোকেশনের ম্যাপ মনে হয় পৌঁছে গেছে, একসেলেন্সি। আমি এখনি একবার খোঁজ নেব।’
‘ধন্যবাদ, খোঁজ নিন। আমরা এখন তাহলে উঠতে পারি। মি. খালেদ খাকান, আপনি একটু বসলে বাধিত হবো।’ বললেন প্রেসিডেন্ট।
‘অবশ্যই বসব, মি. প্রেসিডেন্ট।’ বলল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা ছাড়া অন্য সবাই উঠে দাঁড়াল। প্রেসিডেন্টও উঠে চলে গেছেন তার পেছনের দরজা দিয়ে।
সবাই আহমদ মুসার সাথে হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিল।
সবাই চলে যেতেই একজন অফিসার ঘরে ঢুকল। বলল, ‘আপনি আসুন স্যার, মহামান্য প্রেসিডেন্ট আপনার জন্যে অপেক্ষা করছেন।’
অফিসারটির সাথে লিফট দিয়ে উঠে এলো আহমদ মুসা।
প্রাসাদের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ওঠার পর ভিন্ন একটা লিফটে প্রাসাদের দু’তলায় গেল।
অফিসারটি এনে বসাল তাকে একটা ড্রইং রুমে। বলল, ‘ এটা মহামান্য প্রেসিডেন্টের প্রাইভেট ড্রইং রুম। এখানে তিনি তার ব্যক্তিগত মেহমানদের বসান।’
আহমদ মুসা বসল। তার আগে নজর বুলিয়ে দেখেছে, একেবারে বসফরাসের ওপরেই যেন ড্রইং রুমটি! নিচে উঁকি দিলে বসফরাসের পানিতে গিয়ে নজর পড়ে। অসম্ভব সুন্দর জায়গা! বসফরাসের বহু দূর দেখা যায় এখানে বসে। দেখা যায় রোমেলী দুর্গের চূড়াও।
অফিসারটি ড্রইং রুমের একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল।
প্রেসিডেন্ট ঢুকলেন ড্রইং রুমে। সংগে সংগেই অফিসারটি বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
প্রেসিডেন্ট ড্রইংরুমে প্রবেশ করলে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। সালাম দিয়ে হাত বাড়াল হ্যান্ডশেকের জন্য।
প্রেসিডেন্ট হ্যান্ডশেক করে জড়িয়ে ধরলেন আহমদ মুসাকে। বললেন, ‘আপনাকে খালেদ খাকান বলে ডাকতে ভাল লাগে না, মি. আহমদ মুসা।’
বলে আহমদ মুসাকে নিয়ে সোফায় বসতে বসতে বললেন, ‘এখন তো আমাদের নিজস্ব পরিমন্ডলে আপনি আহমদ মুসা হয়ে যেতে পারেন।’
‘হ্যাঁ, যাদের কাছে পরিচয়টা গোপন করতে চেয়েছিলাম, সেই শত্রুরা আমার পরিচয় জানতে পেরেছে নিশ্চয়। সুতরাং বিষয়টা আর গোপন নেই। তবে নামটা গোপনই থাক, তুরস্কের কাজটা খালেদ খাকানই শেষ করুক।’ বলল আহমদ মুসা। তার মুখে হাসি।
‘আপনার এখানে কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো? ম্যাডাম বোর ফিল করছেন নাতো?’ বলল প্রেসিডেন্ট।
‘কোন অসুবিধে নেই। লতিফা আরবাকান খুব চৌকস মেয়ে। তিনি ম্যাডামকে নানাভাবে ব্যস্ত রেখেছেন। আর ইউর একসেলেন্সি, গোল্ড রিজর্টে থেকে কেউ বোর ফিল করে না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে প্রেসিডেন্ট সোজা হয়ে বসলেন তার সোফায়। গম্ভীর হয়ে উঠেছে তার মুখ। বললেন, ‘আমি সত্যিই খুব উদ্বিগ্ন, আহমদ মুসা! সোর্ড মোতায়েন হলে নিরাপত্তা সমস্যার একটা আশু সমাধান হবে! কিন্তু ওদের ভয়াবহ ষড়যন্ত্র নস্যাতের কি হবে? আপন কি ভাবছেন এ ব্যাপারে?’
‘আল্লাহ ভরসা, একসেলেন্সি। আমি অগ্রসর হবার একটা পথ পেয়েছি। সেদিন প্রধান বিচারপতিকে উদ্ধারের জন্যে যে বাড়িতে ঢুকেছিলাম, সেখান থেকে একটা ক্লু পেয়েছি। সেটা ধরেই সামনে এগোব। আমার মনে হয় আমি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুন। আমি ভেবে পাচ্ছিনা, তুরস্কের কারা এ ভয়ানক গবেষণার সাথে জড়িত!’
‘আমি যতটা জেনেছি ‘থ্রী জিরো’র সাথে এখানে জায়োনিস্ট একটা গ্রুপ জড়িত।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু এর জন্যে তো ব্যাতিক্রমধর্মী প্রতিভার বিজ্ঞানী দরকার। ড. আন্দালুসির মত বিজ্ঞানী কি খুব বেশী তৈরি হয়?’ বললেন প্রেসিডেন্ট।
আহমদ মুসার মনে পড়ল বিজ্ঞানী ড. আব্দুর রহমান আরিয়েহের কথা। তিনিও পার্টিকেল ফিজিক্সের বিজ্ঞানী। কিন্তু তিনিই সেই বিজ্ঞানী তা সে জানেনা। সুতরাং আহমদ মুসা সেদিকে গেল না। বলল, ‘নিশ্চয় ওদের কেউ আছে। ইনশাআল্লাহ সবই আমরা জানতে পারব।’
বেয়ারা নাস্তার ট্রলি নিয়ে প্রবেশ করল।
নাস্তার বিশাল আয়োজন দেখে আহমদ মুসা বলল, ‘দেখছি ডিনারের কাজ হয়ে যাবে!’
‘ডিনার পর্যন্ত তো আপনাকে রাখা যাবে না, থাকবেন না। সেই কবে আসার পর মাত্র ১ দিনের জন্য মেহমানদারির সুযোগ পেয়েছিলাম। তারপর আপনাদের আর পাইনি। অনেক ঝড়-ঝাপটা আপনার উপর দিয়ে গেল। সৌভাগ্যবশত আজ আমার বাড়িতে আপনাকে পেলাম। ছাড়ি কি করে?’
‘ধন্যবাদ, মি. প্রেসিডেন্ট। আসুন, দেরি করে লাভ নেই।’
প্রেসিডেন্ট এগিয়ে এসে বললেন, এ সময় এত সব খাবার বয়স আমার নেই। আমি কফি খেয়ে আপনাকে সঙ্গ দেব। আপনি শুরু করুন।
‘ধন্যবাদ, মি. প্রেসিডেন্ট’ বলে আহমদ মুসা নাস্তা খাবার জন্যে কাঁটা চামচ হাতে নিতেই কাঁটা চামচের ব্রান্ড নামের উপর আহমদ মুসার চোখ আটকে গেল। পড়ল, ‘আরিয়েহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ।’ কিছুটা বিস্ময়ের চিহ্ন ফুটে উঠল আহমদ মুসার চোখে মুখে!
নাস্তা খাওয়া শুরু করে আহমদ মুসা বলল, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আপনাদের কাঁটা চামচ কি আপনাদের দেশীয় কোম্পানীর?’
‘হ্যাঁ, মি. আহমদ মুসা। কোম্পানী আমাদের দেশীয়। সুন্দর নয় জিনিসগুলো? এ কোম্পানীর এই প্রোডাক্টগুলো বিদেশেও খুব পপুলার।’
‘কোম্পানীটা কি প্রাইভেট?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘হ্যাঁ, প্রাইভেট।’ প্রেসিডেন্ট বলল।
‘স্যরি, মালিক কে বা কারা কোম্পানিটির?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
হাসল প্রেসিডেন্ট। বলল, ‘মালিক বা মালিকদের নাম আমি জানিনা। তবে বিরাট পুঁজিওয়ালা কোম্পানি ওটা। উত্তর ইস্তাম্বুলে বসফরাসের তীরে পাহাড় অঞ্চলে বিশাল এলাকা নিয়েছে ওদের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির জন্যে। কিন্তু কোম্পানীর বিষয়টি আপনার এভাবে মাথায় ঢুকল কেন?’
কোম্পানীর নামের প্রথম শব্দ আহমদ মুসার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ‘আরিয়েহ’ নামটা হিব্রু। তৌরাতের সৈনিকের আরিয়েহ! তুরস্কের একটি কোম্পানীর নামের আগে হিব্রু শব্দ কেন? এ জিজ্ঞাসা থেকেই আহমদ মুসার প্রশ্নগুলো। কিন্তু আহমদ মুসা এসব কোন কথা না তুলে বলল, ‘আমাদের এশিয়ান প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে বিদেশী তৈজসপত্রই সব সময় দেখে আসছি। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের খাবার টেবিলে দেশী কাঁটা চামচ দেখেই আমি কোম্পানী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে, একসেলেন্সি।’
আরও কথাবার্তা হলো।
নাস্তা শেষ করে কফি খেয়ে বিদায় নিল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসাকে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে বিদায় নেবার সময় প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘মি. আহমদ মুসা, সব ব্যাপারে আপনার যে অনুসন্ধিৎসা, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমি এই কাঁটা চামচ ব্যাবহার করছি অনেক দিন। কিন্তু আমি খেয়ালই করিনি কাঁটা চামচ ঐ কোম্পানির। তবে কোম্পানি সম্পর্কে কোন এক অকেশনে আমি ঐ কথাগুলো জানতে পারি।’
‘আপনার প্রাসাদের এসব কেনাকাটা কার দায়িত্ব?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘ব্যবস্থাপনার একটা উইং আছে। তারাই এসব দেখে।’ প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন।
উইংটির হেড কে জানতে ইচ্ছা হয়েছিল আহমদ মুসার। কিন্তু প্রশ্নটাকে সৌজন্যের খেলাফ মনে করে বিদায় নিয়ে চলে এসেছিল।

Top