৪৮. মাউন্ট আরারাতের আড়ালে

চ্যাপ্টার

আহমদ মুসা ও জোসেফাইন পাশাপাশি বসেছে। তাদের পেছেনের সীটে বসেছে লতিফা আরবাকান আহমদ আব্দুল্লাহকে নিয়ে।
‘ম্যাডাম জোসেফাইন, ব্যালকনিতে মাননীয় প্রেসিডেন্ট ও ম্যাডাম দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছেন।’ বলল পেছন থেকে লতিফা আরবাকান।
লতিফা আরবাকান আহমদ মুসাদের সাথে যাচ্ছে প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর নির্দেশে। আহমদ মুসা মাউন্ট আরারাত অঞ্চলে যাওয়ার জন্যে ভ্যানলেক বিমানবন্দরে নেমে যাবে। লতিফা আরবাকান জোসেফাইনের সাথে মদিনা শরীফ যাবেন। জোসেফাইন যতদিন চাইবেন লতিফা আরবাকান তার সাথে থাকবেন। আহমদ আব্দুল্লাহর খুব ভাব হয়েছে লতিফা আরবাকানের সাথে।
সংগে সংগেই আহমদ মুসা ও জোসেফাইন দু’জন দু’পাশের খোলা জানালা ‍দিয়ে পেছনে তাকাল। দেখতে পেল প্রেসিডেন্ট ও তার বেগমকে।
আহমদ মুসা ও জোসেফাইন দু’জনেই হাত নেড়ে বিদায় জানাল।
আহমদ মুসা দেখতে পেল, প্রেসিডেন্টের গাড়ি বারান্দায় তখন দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতি। আহমদ মুসা তাদের উদ্দেশ্যেও হাত নাড়ল। তারাও হাত নাড়ল।
আহমদ মুসাদের গাড়ি প্রেসিডেন্ট হাউজের গেট দিয়ে বেরিয়ে এল।
আহমদ মুসাদের সামনে ছিল জেনারেল মোস্তফা ও দীর্ঘ অসুখ থেকে সদ্য ফিরে আসা জেনারেল তারিকদের দু’টি গাড়ি। আর আহমদ মুসাদের পেছনের একটা মাইক্রোতে গোয়েন্দা পুলিশের একটা দল।
আহমদ মুসা হাতের ঘড়ির দিকে তাকাল। সাড়ে এগারোটা বাজে। শিডিউলের চেয়ে একটু বেশি সময় গেছে প্রেসিডেন্ট হাউজের অনুষ্ঠানে।
প্রেসিডেন্ট তার বাড়িতে জোসেফাইন ও আহমদ মুসার জন্যে প্রায় ঘরোয়া একটা সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল। এর আগের দিন আহমদ মুসারা আংকারা এসেছিল প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে। তাদের সাথে এসেছিল গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল মোস্তফা এবং জেনারেল তাহির তারিক। প্রেসিডেন্টের ফ্যামিলি পরিবেশে ঘরোয়া এ অনুষ্ঠানে হাজির ছিল প্রধানমন্ত্রী, প্রধান সেনাপতি, গোয়েন্দা প্রধান ও পুলিশ প্রধান। অনুষ্ঠানে খোদ প্রেসিডেন্ট আহমদ মুসা ও বেগম আহমদ মুসাকে তার নিজের পক্ষ থেকে ও তুরস্কের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিল। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রেসিডেন্ট বলেছিল, কিন্তু কোন কৃতজ্ঞতাই যথেষ্ট নয়। আহমদ মুসা উত্তরে বলেছিল, ‘ভাইয়ের জন্যে যে কাজ তা নিজেরই কাজ। নিজের কাজের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বা প্রত্যাশা বিব্রতকর। তুরস্ক আমার কাছে একটা স্বপ্নের দেশ। আজ বিদায় বেলায় মনে হচ্ছে, স্বপ্নের এই দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে। তাই নিজেকে মনে হচ্ছে আরও সুস্থ, আরও সমৃদ্ধ।’
আহমদ মুসাকেও আবেগ স্পর্শ করেছিল। তার কণ্ঠও ভারী হয়ে উঠেছিল।
অনুষ্ঠান শেষে মাদাম প্রেসিডেন্ট একটা রূপোর কেসকেটে হীরার নেকলেস উপহার দিয়ে ‘মাই ডটার’ বলে জড়িয়ে ধরেছিল জোসেফাইনকে। আর প্রেসিডেন্ট তার ও তার দেশের পক্ষ থেকে আহমদ মুসার হাতে তুলে দিয়েছিল আহমদ মুসা, জোসেফাইন ও আহমদ আব্দুল্লাহর জন্যে তুরস্কের নাগরিকত্বের তিনটি সনদ ও তিনটি পাসপোর্ট। আহমদ মুসা ধন্যবাদের সাথে গ্রহণ করেছিল তুর্কি প্রেসিডেন্টের এ রাষ্ট্রীয় দান।
বিদায়ের সময়টা হয়েছিল খুবই আবেগঘন।
আবেগের সে উত্তাপ এখনও অনুভব করছে আহমদ মুসা।
গাড়ি ছুটে চলছিল আংকারা বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে। | ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »
Top