৫. রক্তাক্ত পামির

চ্যাপ্টার

তাসখন্দ থেকে সত্তর মাইল উত্তরে আরিস রেলওয়ে জংশন। বেলা তখন সাড়ে তিনটা। ছোট্ট শহর আরিসের উপকন্ঠে এখানকার সাইমুম ঘাঁটিতে হাসান তারিক, আনোয়ার ইব্রাহিম, আরিসের সাইমুম প্রধান আলী খানভ জংশনের একটা মানচিত্র নিয়ে বসে। মানচিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে আলী খানভ। আলী খানভ আরিসের সিভিল ডিফেন্স ইউনিটের একজন ডাইরেক্টর। শেষ বারের মত পর্যালোচনা করছিল তারা আজকের অপারেশন প্ল্যানটার।
মস্কো থেকে খবর এসেছে গতরাত ৯ টায় তাসখন্দ ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস সেখান থেকে ছেড়ে এসেছে। আহমদ মুসার সাথে পরামর্শ করে তাসখন্দ সাইমুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আরিস জংশনেই আয়েশা আলিয়েভা এবং রোকাইয়েভাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে নেয়া হবে। তাসখন্দ রেলওয়ে ষ্টেশনে এই অপারেশনকে সাইমুম বেশী ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছে।
আরিস রেলওয়ে জংশনে মোট ১৫ জন রুশীয় কম্যুনিস্ট অফিসার রয়েছে রেলওয়ে বিভিন্ন বড় বড় পদে। ১০০ জনের মত একটা সিকিউরিটি ইউনিট রয়েছে জংশনে। এদের মধ্যে অর্ধেক রুশ এবং অর্ধেক উজবেক ও কাজাখ মুসলিম। এখানকার উজবেক এবং কাজাখদের সংগ্রামকে সবাই পছন্দ করে। তারা হয়তো পক্ষে আসতে ভয় পাবে, কিন্তু সাইমুমের বিরুদ্ধে কিছুতেই তারা অস্ত্র ধরবে না।
এই অবস্থাকে সামনে রেখেই অপারেশন প্লান তৈরী করা হয়েছে। আরিসের পশ্চিম প্রান্তে শহর থেকে প্রায় দু’মাইল দূরে একটা আর্মি ব্যারাক আছে। সেখানে ৫০০ সৈন্যের একটা ব্রিগেড থাকে। তারা খবর পেয়ে আসার আগেই অপারেশন শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সাইমুম।
অপারেশনে নেতৃত্ব দেবে হাসান তারিক, কিন্তু সিকিউরিটি অপারেশনের দায়িত্বে থাকবে আনোয়ার ইব্রাহিম। তাকে সাহায্য করবে আলি খানভ।
ঠিক সাড়ে তিনটায় আলী খানভের ওয়ারলেস বিপ বিপ করে উঠল। সবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, নিশ্চয় কোন খবর আছে কিজিল গুদা থেকে।
হ্যাঁ ঠিক। ওয়ারলেস থেকে কান সরিয়ে আলী খানভ বলল, কিজিল গুদার সাইমুম প্রধান জানাল তাসখন্দ ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস এখন তাদের শহর অতিক্রম করেছে।
সবাই খুশি হলো। হাসান তারিক বলল, সবাই দোয়া কর আমাদের বোনরা ভাল থাকুক।
তারপর আনোয়ার ইব্রাহিম ও আলী খানভের দিকে চেয়ে বলল, তোমাদের ইউনিট তো চলে গেছে ষ্টেশনে?
-হ্যাঁ।
-তাহলে চল আমাদেরও এবার উঠতে হবে। সবাই উঠে দাঁড়াল।
বাইরে দু’টো মাউন্টেন জীপ দাঁড়িয়ে ছিল। জীপগুলো সাধারণ পাহাড়ী পথে খুব সহজেই চলতে পারে। সবাই গিয়ে গাড়ীতে উঠল। একটাতে উঠল হাসান তারিক এবং দু’জন, অন্যটিতে উঠল আনোয়ার ইব্রাহিম, আলী খানভ এবং আরও কয়েকজন।
ঠিক তিনটা পয়তাল্লিশ মিনিটে হাসান তারিক ও আনোয়ার ইব্রাহিমরা ১নং প্ল্যাটফরমে প্রবেশ করল। এ রকম ৪টা প্ল্যাটফরম আছে। ৪টা প্ল্যাটফরমেই রেলওয়ে সিকুইরিটি লোকেরা ছড়িয়ে আছে। প্রত্যেকটা প্ল্যাটফরমেই ৫ জনের করে একটা সিকিউরিটি টিম টহল দিচ্ছে। টিমের নেতৃত্ব আছে একজন করে রুশ অফিসার। সাইমুমের টার্গেট এই রুশ অফিসার। সাইমুমের টার্গেট এই রুশ অফিসাররাই।
এক নং প্ল্যাটফরমের রয়েছে সিকিউরিটি অফিস। সিকিউরিটির রিজার্ভ লোকেরা এখানেই অবস্থান করে। দেখা যাচ্ছে মেস সদৃশ বিশাল হল ঘরে সিকিউরিটির লোকেরা কেউ বসে আছে, কেউ শুয়ে শুয়ে রেস্ট নেবার চেষ্টা করছে।
এক নম্বর প্ল্যাটফরমের সামনেই বিশাল যাত্রী বিশ্রামাগার। বিশ্রামাগারের দু’পাশ দিয়ে বাইরে যাবার দু’টো গেট। গেটের পরেই সড়ক। সাইমুমের দু’টো গাড়ী প্ল্যাটফরমের উত্তর প্রান্তের অর্থাৎ বিশ্রামাগারের উত্তর পাশ দিয়ে বেরুনোর যে গেট তার মুখেই দাঁড়িয়ে আছে।
হাসান তারিক দেখল, প্ল্যাটফরমের সিকুউরিটির পাঁচ জন লোক টহল দিচ্ছে, তার মধ্যে রুশ অফিসারটি দাঁড়িয়ে আছে বিশ্রামাগারের দক্ষিণ পাশ দিয়ে যে গেট তারই কাছাকাছি জায়গায়। এখানেই যাত্রীর ভীড় বেশী হয়। যাত্রী বেশে সাইমুমের লোকেরাও পরিকল্পনা অনুসারে পজিশন নিয়েছে।
ঠিক ৪ টা ১৫ মিনিটে তাসখন্দ ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস আরিস শহরে প্রবেশ করল। নিয়ম অনুসারে স্পীড তার কমে গেছে। জংশন এলাকায় পৌঁছুতে স্পীড তার আরও কমে গেল। গাড়ী এখানে দাঁড়াবে না বটে, কিন্তু ক্লিয়ারেন্স ডকুমেন্ট নেবার জন্য এটা তাকে করতে হয়।
৪টা ১৭ মিনিট। ট্রেন জংশন এলাকায় প্রবেশ করল। সংগে সংগে ১নং প্ল্যাটফরমের দক্ষিণ প্রান্তে রেল লাইনের উপর বিরাট বিস্ফোরণের শব্দ হলো।
সেখানকার রেললাইন উড়ে গেল। সিকিউরিটির লোকেরা সে দিকে ছুটল, সেই রুশ অফিসারও।
সিকিউরিটি অফিসেও তখন চাঞ্চল্য। যারা শুয়ে ছিল তারা উঠে বসেছে। যারা বসে ছিল তারাও উঠে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তারা বেরুবার সুযোগ পেল না। দেখল তারা, তাদের চোখের সামনে কয়েকজন মুখোশধারী লোক ছুটে এসে দরজা বন্ধ করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিল। হল ঘরের দু’টো গেট, দু’টোই বন্ধ হয়ে গেল।
যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সে এলাকা থেকে গুলির শব্দ এল, সেই সাথে শ্লোগানঃ মুক্তির সাইমুম জিন্দাবাদ, জীবনের সাইমুম জিন্দাবাদ। গোটা প্লাটফরম এলাকা সাইমুমের দখলে চলে গেছে। বিভিন্ন দিক থেকে কিছু গুলি গোলার শব্দ এল। ষ্টেশনের কর্মচারীরা যে যেখানে ছিল সেখানেই বসে থাকল। বেরুলনা অথবা বেরুতে পারলনা। আর বাইরে যারা ছিল সাইমুমের শ্লোগান শোনার পর তারা গা ঢাকা দিল। রুশ অফিসাররা যারা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করল তারা সাইমুম কর্মীদের গুলির মুখে পড়ল।
হাসান তারিক এবং আনোয়ার ইব্রাহিম ১ নং প্ল্যাটফরমের মাঝখানে যেখানে দাড়িয়েছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকল। পরিকল্পনা অনুসারেই ট্রেন থামানোর এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং সকলের মনোযোগের কেন্দ্র বানানো হয়েছিল দক্ষিণে প্ল্যাটফরমের বাইরের অংশকে, যাতে সিকিউরিটির দৃষ্টি সেদিকেই থাকে।
ট্রেনের ডাইরেক্টর সুলেমানভ জানত ট্রেনকে থামাতে বাধ্য করার পদক্ষেপের কথা তাই ট্রেনকে কোন বিপদে পড়তে হয়নি। বিস্ফোরণের সংগে সংগেই ট্রেনকে সামলে নিয়েছিল এবং ঠিকভাবে ট্টেনকে এনে প্ল্যাটফরমে দাঁড় করালো।
একেবারে প্ল্যাটফরমের প্রান্ত ঘেঁষে দাড়িয়েছিল হাসান তারিক ও আনোয়ার ইব্রাহিম। প্ল্যাটফরমে কোন লোক নেই। তাই ট্রেন যেমন নজরে পড়ছে, তেমনি ট্রেন থেকেও প্ল্যাটফরম নজরে পড়ছে।
ট্রেন প্ল্যাটফরমে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। ট্রেনের করিডোরের জানালা কোনটা খোলা, কোনটা বন্ধ। কোন জানালাতেই কোন মুখ দেখছে না হাসান তারিক। চঞ্চল হয়ে উঠল সে, তাহলে কি……….
ট্রেন আরও এগিয়ে এল। প্রায় থেমে গেছে ট্রেন। ট্রেনের পেছনের শেষটা পযন্ত এবার দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ হাসান তারিক দেখল, করিডোরের জানালায় দু’টো মুখ। একজন হাত নাড়ছে হাসান তারিকের দিকে চেয়ে। ছুটে গেল হাসান তারিক সে দিকে। হাত নাড়া মেয়েটি তার মাথার হ্যাট খুলে ফেলছে, আয়েশা আলিয়েভা। চিনতে পারল হাসান তারিক।
চোখাচোখি হল। সর্বাঙ্গে একটা উষ্ণ স্রোত বয়ে গেল তার। আলিয়েভার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে হাসান তারিক করিডোরের দরজা টানাটানি করল। বন্ধ দরজায় তালা দেওয়া। এক মুহূর্ত দেরী তার সইছে না। দরজার কী হোলে গুলি করল হাসান তারিক। তারপর এক লাথিতে খুলে ফেলল দরজা। আয়েশা আলিয়েভা এবং রোকাইয়েভা নেমে এল গাড়ী থেকে।
হাসান তারিক আনোয়ার ইব্রাহিমের দিকে চেয়ে বলল, চল গাড়ীতে। তারপর আয়েশা আলিয়েভার দিকে ঘুরে বলল, এস।
তারা গেটের দিকে ছুটল। তারা দেখতে পেল, উত্তরের গেট দিয়ে কয়েকজন পুলিশ ছুটে আসছে। সাইমুমের রক্ষীরা পাশেই দাঁড়িয়েছিল। উঁচু হয়ে উঠল তাদের স্টেনগান। গেটের সামনে লুটিয়ে পড়ল পুলিশ কয়েকজন। হাসান তারিক দেখল দক্ষিন গেটের সামনেও কয়েকজন পুলিশের লাশ পড়ে আছে। এরা বিস্ফোরণ ও গুলির আওয়াজ শুনে বাইরে থেকে এসেছিল। ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারেনি। সাইমুমের পরিচয় পেলে ঐ উজবেক পুলিশেরা এভাবে আসতো না। হাসান তারিকের দুঃখ হলো ওদের জন্য। সিকিউরিটির লোকদের কাউকেই দেখা গেলনা। রুশরা নিশ্চয় সাইমুমের হাতে প্রান দিয়েছে। আরব, উজবেক, কাজাখরা ঘটনাস্থল থেকে চুপে চুপে সরে গেছে।
গাড়ি স্টার্ট দেয়াই ছিল। একটি জীপের সামনের সিটে হাসান তারিক উঠল, তারপাশে আলী খানভ। পেছনের সিটে আয়েশা আলিয়েভা এবং রোকাইয়েভা উঠে বসল।
অন্য গাড়িতে আনোয়ার ইব্রাহিম এবং অন্যান্যরা। গাড়ী নড়ে উঠল , যাত্রা শুরু করল তারা। হাসান তারিক আলী খানভকে বলল, তোমার লোকজন ফিরবে কখন ?
আলী খানভ বলল, দু নম্বর গেট এবং প্ল্যাটফরমের বাইরের গেটে তাদের গাড়ী আছে। কোন চিন্তা নেই, ওরা আমাদের পেছনে পেছনেই চলে।
গাড়ী তখন ফুলস্পিডে চলতে শুরু করেছে। হাসান তারিক আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। কোন বড় ঘটনা ছাড়াই আল্লাহ্ তাদের সাফল্য দান করেছেন।
গাড়ী শহর থেকে বেরুবার পর একটি পার্বত্য পথে হাসান তারিকের পাশ থেকে আলী খানভ নেমে গেল। পেছনে সাইমুমের কর্মীদের যে দু টো গাড়ী আছে তারাও এখানে আলী খানভের সাথে এসে মিলিত হবে। তাদের কয়েকজন আলী খানভের সাথে এখানে থাকবে, অন্যরা ফিরে যাবে আরিসের সাইমুম ঘাটিতে। অবশিষ্টদের নিয়ে আলী খানভ এ গিরিপথ পাহারা দেবে যাতে শত্রুরা হাসান তারিকের পিছু নেবার সুযোগ না পায়।
হাসান তারিক ও আনোয়ার ইব্রাহিমের দু’টো গাড়ী আলী খানভ কে নামিয়ে দিয়ে কিরঘিজিয়ার রাজধানী ফ্রুনজের পথ ধরে ছুটল পূর্বদিকে। আসলে তাদের লক্ষ্য ফারগানা এবং তাসখন্দের মধ্যবর্তী সাইমুমের শহীদ আনোয়ার পাশা ঘাঁটি। সমরখন্দকে বাম পাশে রেখে যেখানে পামির সড়ক তাসখন্দের দিকে এগিয়ে গেছে , সেখান থেকে ৭০ মাইল পূবে এবং ফারগানা থেকে ৫০ মাইল পশ্চিমে উজবেকিস্তান ও কিরঘিজিস্তানের সংগমস্থলের দুর্গম পার্বত্য উপত্যকায় এই ঘাঁটি। আরিস থেকে তাসখন্দ হয়ে এখানে আসা যেতো, কিন্তু আরিস থেকে সোজা তাসখন্দের পথে আসা হাসান তারিক ঠিক মনে করেনি। গন্তব্য সম্পর্কে শত্রুদের বিভ্রান্ত করার জন্যই হাসান তারিক এ পথে এসেছে। ফ্রুনজের পথে মাইল পঞ্চাশেক এগিয়ে যাবার পর আরেকটা ক্যারাভান ট্রাক পাওয়া যায় যা দিয়ে পামির সড়কে পৌছা যাবে। এ পথে হাসান তারিক শহীদ আনোয়ার পাশা ঘাঁটিতে পৌছাবে ঠিক করেছে।
হাসান তারিকের গাড়ী তখনও দৃষ্টির বাইরে যায়নি। এমন সময় সেই পার্বত্য গিরিপথের এক টিলায় বসে আলী খানভ দেখল বিরাট আর্মি সাঁজোয়া আরিসের দিক থেকে এগিয়ে ছুটে আসছে।
সহকর্মীদের প্রতি সতর্ক সংকেত দিয়ে আলী খানভ টিলা থেকে দ্রুত নেমে পড়ল। তারপর দ্রুত সেই পার্বত্য পথের উপর গিয়ে উপস্থিত হলো। খুঁজে পেতে উপযুক্ত স্থান বেছে নিয়ে পর পর তিনটা রোড-মাইন পাতল। এমন জ্যামিতিক কোণ করে সেগুলো পাতল যাতে করে মিস হবার কোন ভয় রইল না।
মাইন পেতে সে রাস্তা থেকে সরে আসতে না আসতেই সেই সাঁজোয়া গাড়ী এসে পড়ল গিরিপথের মুখে। একটা পাথরের আড়ালে বসে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে আলী খানভ।
গাড়ী এসে গেছে, আর ৫০ গজ, ২০ গজ, হ্যাঁ এসে গেছে সেই কৌণিক অবস্থানে। সংগে সংগে প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণ। একটা খেলনার মত উর্ধ্বে নিক্ষিপ্ত হয়ে ছিটকে পড়ল সাঁজোয়াটি । কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল এলাকাটা। ধোঁয়া যখন মিলিয়ে গেল, দেখা গেল গাড়ীটি টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, মানুষের কোন চিহ্ন নেই।
হাসান তারিকের গাড়ী তখন দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে। আলী খানভ প্রথম বিস্ফোরণের জায়গা থেকে অনেক পশ্চিমে গিরিপথটির মুখে আরো তিনটি মাইন পাতল একটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। কারণ, বাড়তি ব্যবস্থা হিসেবে এক বা একাধিক গাড়ী এই সাঁজোয়াটির পিছনে আসবে সেটাই স্বাভাবিক।
মাইন পাতা শেষ করে সাইমুম কর্মীদের নিয়ে আলী খানভ পার্বত্য উপত্যকার পথে আরিসের ঘাটির দিকে ফিরে চলল। ১৫ মিনিটও পার হয়নি। পিছন থেকে বিরাট বিস্ফোরণের শব্দ কানে এল। তারা পেছনে ফিরে দেখল গিরিপথের ঐ এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী উঠছে। খুশী হলো আলী খানভ, ফাঁদে আরেকটা শিকার পড়েছে। এখন হাসান তারিকের পিছু নেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন তাদের পক্ষে কঠিন হবে।
আরিস শহরে কম্যুনিস্ট সৈন্য এবং ‘ফ্র’ এর সামরিক ইউনিটের লোকজন গিজ গিজ করছে। ভয় এবং অপমান দু’টোই তাদের চোখে মুখে। সাইমুমের একটা চুলও তারা স্পর্শ করতে পারেনি, এই জন্যই ক্রোধটা তাদের খুব বেশী। সব ক্রোধ গিয়ে এখন পড়েছে আরিসের দেশীয় অর্থাৎ উজবেক এবং কাজাখ কর্মচারীদের উপর। উঁচু প্রাচীর ঘেরা আরিসের জেলখানায় তাদের এই জিঘাংসা বৃত্তিরই মহোৎসব চলছে কতগুলো নিরপরাধ মানুষের উপর।
সুলাইমানভকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দু’জন গোয়েন্দা হত্যা ও রেলওয়ে পুলিশদের বন্দী করার ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে। বলা হচ্ছে, তারই পাশের রুমে এটা ঘটেছে, সুতরাং তার যোগশাজস না থেকেই পারেনা, বিশেষ করে তার যখন কিছুই হয়নি।
বৃদ্ধ সুলাইমানভকে কথা বলানোর জন্য প্রথমে নির্মমভাবে প্রহার করা হয়েছে। চোখ বন্ধ করে মুখ বুঁজে পাহাড়ের মত সব সহ্য করেছে সে। নির্মম চাবুকের সাথে পিঠের চামড়া উঠে গেছে। বেদনায় কুকড়ে গেছে তার দেহ, নীল হয়ে গেছে মুখ। কিন্তু মুখ থেকে ওরা একটা কথাও বের করতে পারেনি।
অবশেষে তাকে নিয়ে এল বিদ্যুৎ আসনে। বিদ্যুৎ শকে বেদনায় কুকড়ে গেল তার দেহ, চোখ দু টি তার ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইল। কানেকশন সরিয়ে তাকে বলা হলো এর পরের শকে আগের চেয়েও কঠিন অবস্থা তার জন্য অপেক্ষা করছে। যদি বাঁচতে চায় তাকে বলতে হবে সাইমুম সম্পর্কে সে কি জানে।
প্রথম শকের পরেই বৃদ্ধ সুলাইমানভের মাংসপেশিগুলো গভীর ক্লান্তি ও বেদনায় কাঁপছিল। কিন্তু চোখ তার স্থির, তাতে অদ্ভুত ঔজ্জ্বল্য। সে বলল, যে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, তাকে শাস্তির ভয় দেখিয়ে তোমরা কি করবে? আমাদের এ দুর্ভাগা মুসলিম জাতির মুক্তির আন্দোলনের পতাকা ভূ-লুন্ঠিত ছিল অনেক দিন, তাকে আবার সাইমুম তুলে ধরেছে। আমি তাদের জন্য যদি জীবন দিতে পারি, সেটা আল্লাহর জন্যই জীবন দেয়া হবে, আমি গৌরবান্বিত হবো।
‘ফ্র’ মিলিটারী ইন্টেলিজেন্সের প্রধান সার্জি সোকলভ পাশেই দাঁড়িয়েছিল। তার চোখ দুটি ভাটার মত জ্বলে উঠল, দেহের সমস্ত রক্ত যেন মুখে এসে জমা হলো। সে দু পা এগিয়ে এসে প্রচণ্ড এক লাথি মারল সুলাইমানভের মুখে। সুলাইমানভের বাম গাল থেকে এক খাবলা মাংস উঠে গেল লোহার কাঁটাওয়ালা বুটের আঘাতে। ঝর ঝর করে ছিটকে পড়া রক্ত প্রবাহে ভিজে গেল বিদ্যুৎ আসনের কাঠের পাটাতন।
সুলাইমানভ তার রক্ত ধোঁয়া মুখটি সোকলভের দিকে ফিরিয়ে বলল, আমার কোন দুঃখ নেই। যুগ যুগ ধরে তোমরা আমার দেশকে, আমার মুসলিম জাতিকে এ রকম পদাঘাতেই ক্ষত-বিক্ষত করেছ। আমি আজ তাদের দলে শামিল হতে পেরে আনন্দিত। তোমাদের অনেক হারাম টাকা আমার পেটে গেছে, তা এই ভাবে মাফ হয়ে গেলে আমি খুশী হবো।
চুপ কর কুকুর বলেই পাশ থেকে ভারী লোহার রোলারটি তুলে নিয়ে জোরে ছুড়ে মারল তার মুখে।
কিন্তু রোলারটি সুলাইমানভের মুখে না লেগে প্রচন্ডভাবে আঘাত করল গিয়ে তার কপালে। ‘আল্লাহ’ একটা শব্দই শুধু তার মুখ থেকে বেরুতে পারল। তারপর সব শেষ। থেতলে গুড়িয়ে গেছে তার মাথা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মেঝে।
আরিস স্টেশনের ৫০ জন সিকুইরিটির লোক এবং আরও অনেক সাধারণ কর্মচারী সহ প্রায় পাঁচশ উজবেক ও কাজাখ যুবককে গ্রেপ্তার করে এই জেলখানায় আনা হয়েছে।
গত কয়দিন ধরে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চলছে। ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের উঁচু করে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। উত্তপ্ত ইস্পাতের চাবুক দিয়ে প্রহার করা হয়েছে, ক্ষুধা-তৃষ্ণায় তাদের নিষ্পেষিত করা হয়েছে। তাদের কাছে দাবী একটাই, সাইমুমের সাথে তাদের যোগশাজসের তথ্য ‘ফ্র’ কে দিতে হবে। বেচারারা কিছুই জানে না, কি তথ্য দেবে ‘ফ্র’ কে। সুতরাং তারা মার খেয়েছে আর রোদন করেছে।
অবশেষে ‘ফ্র’ মিলিটারী ইন্টেলিজেন্সের সার্জি সোকলভ এবং ‘ফ্র’ এর নিরাপত্তা প্রধান কলিনকভ এসে উঁচু অবস্থা থেকে নামিয়ে সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে বলল, তোমাদেরকে শেষ বারের জন্য বলা হচ্ছে, তোমরা যদি সাইমুমের কোন খবর না দাও, তা হলে সবাইকে সাইমুমের সদস্য হিসেবে ধরা হবে। এবং আজ রাত ৭টা থেকে প্রতি ঘন্টায় এক একজনকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মারা হবে। আর ইতিমধ্যে স্টেশনের ৫০ জন সিকিউরিটির দন্ডাজ্ঞা কার্যকর করা হচ্ছে।
বলার সংগে সংগে ৫০ সিকিউরিটির লোককে পিছ মোড়া করে বেঁধে কারাগারের দেয়াল বরাবর দাঁড় করানো হলো। তাদের সামনে বন্দুক নিয়ে দাড়াল আরও পঞ্চাশ জন। নির্যাতনে কয়েদীদের কান্নার সাধ্য ছিল না। তাদের চোখে উপায়হীন এক অসহায়তা।
প্রথম সংকেতের সংগে সংগে বন্দুক উচু হয়ে উঠল ফায়ারিং স্কোয়াডের। সেই পঞ্চাশ জনের মধ্য থেকে একজন বলল, আমার শেষ একটা কথা আছে, বলতে চাই।
সার্জি সোকলভের মুখটা উজ্জল হয়ে উঠল, তা হলে ওরা মুখ খুলছে। সে তার দিকে এসে বলল, তুমি বল, আমরা তোমাকে মুক্তি দেব।
-মুক্তির কথা নয়, আমার একটি প্রার্থনা আছে।
-কি প্রার্থনা? এখনও সোকলভের চোখে আশার আলো।
-কোন দিন নামাজ পড়ার সুযোগ হয়নি, শেষ সময়ে দু’রাকাত নামাজের সুযোগ প্রার্থনা করছি।
হো হো করে হেসে উঠল কলিনকভ এবং সার্জিও সোকলভ। দু’জনেই কিছু যেন ভাবল। একটা কৌতুকের হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটে। বলল, আর কে চাস তোরা এই কর্মটি করতে?
সবাই বলল, আমরাও চাই।
সবার হাতের বাধন খুলে দেওয়া হলো। কয়েকজন তায়াম্মুম করল। তাদের দেখে অন্যেরা সেই ভাবে তায়াম্মুম করল। বোঝা গেল, তারা তায়াম্মুম জানে না। জানবে কি করে? হাজার হাজার মাদ্রাসা মক্তব দেশের মাটি থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। আরবী শিক্ষার লোক দুষ্প্রাপ্য। তার উপর কম্যুনিষ্ট আইনের কড়াকড়ি। এমন প্রার্থনা ট্রার্থনার খোজ পেলে জীবন জীবিকার দরজা বন্ধ হয়। সুতরাং জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে এটা চলার পর আজ বিশেষ করে বিপুল সংখ্যক যুবকের এই অবস্থা দাড়িয়েছে। অজু তায়াম্মুম তাদের অনেকে জানেনা।
কিন্তু আল্লাহ আছে, পরকাল আছে, এটা তাদের মন থেকে মুছে ফেলা যায়নি। সম্ভবত এই কারণেই আজ শেষ সময়ে আল্লাহর কাছে একবার হাজির হতে চায় ওরা।
পঞ্চাশ জন এক সাথেই নামাজে দাড়িয়েছে তারা। রুকুতে গেল।
সার্জি সোকলভ আঙুল তুলে কি যেন ইংগিত করল। সংগে সংগে পঞ্চাশটি বন্দুকের মাথা উচু হলো।
রুকু থেকে উঠে দাড়িয়েছে তারা। সিজদায় যাবার জন্যে তাদের দেহ ঝুকেছে মাত্র।
তার আগেই সার্জি সোকলভ নির্দেশ দিল, ‘ফায়ার’।
পঞ্চাশটি বন্দুক এক সাথে গর্জে উঠল। সিজদার জন্য পঞ্চাশটি দেহ ঝুঁকতে যাচ্ছিল। গুলিতে পঞ্চাশটি দেহ মুখ থুবড়ে পড়ে গেল সামনে। পড়ে গিয়ে পড়েই থাকল। নড়লনা কোন দেহ। সেজদা তারা দিতে পারলনা, কিন্তু এ যেন আরেক সেজদা, যে সেজদা থেকে কোন দিনই তারা আর উঠবেনা।
সার্জি সোকলভ এবং কলিনকভ দু’জনেই হো হো করে হেসে উঠল। নিবার্ক স্পন্দনহীন ভাবে দাড়িয়ে থাকা ৫০০ যুবকের দিকে চেয়ে সোকলভ বলল, মুসলমানদের আল্লাহ নাকি সর্ব শক্তিমান, দেখলি তো শক্তির জোর।
বলে আবার হো হো করে হেসে উঠল দু’জনে।
সোকলভ ঘড়ির দিকে চেয়ে বলল, আর এক ঘন্টা আছে, তোরা এদের মত মরবি না বেচে থাকতে চাস ঠিক কর। আমরা এক ঘন্টা পরে আসছি।
চলে গেল ওরা। এদিকে পাঁচশ যুবক বেচে থেকেও মরার মত। এদের অধিকাংশই চাকুরে। ছাত্রও আছে। যুব কম্যুনিষ্ট লীগ এবং কম্যুনিষ্ট পার্টির সদস্যও এদের মধ্যে আছে। এরা আধুনিক জীবন যাপন করে, এদের অনেকেরই হয়তো সাইমুমকে ভালো লাগে, সমর্থনও করে হয়তো আরও অনেকে, কিন্তু সাইমুমের কিছু জানেনা এরা, কোনই সম্পর্ক নেই সাইমুমের সাথে এদের। সুতরাং এরা বুঝতে পারছেনা এদের অপরাধ কি? সুতরাং ভয়, হতাশা এদের আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। আসন্ন পরিণতির কথা ভেবে অধিকাংশই কাঁদছে, বিলাপ করছে।
এই কান্নার মধ্যে একজন বলে উঠল, ভাইসব, কেঁদে কোন লাভ নেই, কান্না আমাদের মৃত্যু ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা। বরং আসুন হাসিমুখে বীরের মৃত্যু বরণ করি। আমাদের পূর্ব পুরুষরা কাপুরুষ ছিলেন না, কিন্তু কম্যুনিষ্ট ব্যবস্থা আমাদের ঈমান আকিদা কেড়ে নিয়ে, জাতীয়তাবোধ কেড়ে নিয়ে আমাদের কাপুরুষে পরিণত করেছে। তাই মৃত্যুকে এমন ভয় পাচ্ছি আমরা। ভাইসব, আমাদের কোন অপরাধ নেই, একটাই অপরাধ, আমরা মুসলিম। আমরা সব বিসর্জন দিলেও জাতীয় পরিচয় বিসর্জন দেইনি। তাই সাইমুমের আমরা কেউ না হলেও আমরা অপরাধী। এটাই যদি আমাদের অপরাধ হয়, তাহলে এ অপরাধ নিয়ে আমাদের গর্ববোধ করা উচিৎ। এর জন্য যদি আমাদের মরতে হয় সে মৃত্যুকে আমাদের হাসিমুখে বরণ করা উচিত। সাইমুম আজ আমাদের সম্মানিত এবং অকুতোভয় পূর্ব পুরুষদের স্বাধীনতা ও মর্যাদার পতাকাকে ভুলুন্ঠিত অবস্থা থেকে উর্ধে তুলে ধরেছে। আমরা বাইরে থাকতে তাদের জন্য কিছু করতে পারিনি, আসুন মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে জাতির গৌরব সে বাহিনীর জয় ঘোষণা করি।
বলে সে তকবির ঘোষণা করল উচ্চ কন্ঠে। সংগে সংগে কারাগারের নিরবতা ভেঙ্গে পাঁচশ কন্ঠে জবাব এল, ‘আল্লাহ আকবার।‘ সম্মিলিত কন্ঠে শ্লোগান উঠল, জীবনের সাইমুম, মুক্তির সাইমুম, জিন্দাবাদ।
কম্যুনিষ্ট কারাগারে বহু বছর, হয়তো বহু যুগ পর সম্ভবত এটাই প্রথম সম্মিলিত কন্ঠের, স্বাধীন কন্ঠের নিরুদ্বিগ্ন এবং উচ্চ কন্ঠ জীবন সংগীত। উদ্যত সংগীন হাতে একদল সৈনিক দাড়িয়ে আছে এই পাঁচশ যুবককে ঘিরে। ওরা এদেশীয় নয়। ওদের চোখে বিস্ময়। বোধ হয় ভাবছে কম্যুনিষ্ট রাজ্যেও এমন কিছু ঘটতে পারে! ওদের চোখে ভয়ও। কে জানে ওদের মধ্যে এদের মতই হারাবার বেদনা আছে বলেই এই ভয় কিনা?
শ্লোগান শেষ হলে সেই যুবকটি বলল, ভাইসব, জাতির জন্য, জীবনের জন্য, আমার ধর্মের জন্য আমিই প্রথম জীবন দিতে চাই। বলে সে মাঝখান থেকে লাইনের প্রথমে এসে দাড়াল।
এ সময় কলিনকভ এবং সার্জি সোকলভ ফিরে এল। সার্জি সোকলভ পিস্তল নাচিয়ে বলল, মরবার আগে তোদের পাখা উঠেছে। ঠিক আছে, আমি যা বলেছি সেটাই এখন হবে। বলে সে একজন রক্ষীকে বলল, লাইনের প্রথমটাকে ধরে এনে উচু মঞ্চটাতে দাঁড় করাও। আমার পিস্তলই আজকের উৎসব উদ্বোধন করবে।
রক্ষী লাইনের প্রথমে দাড়ানো সেই যুবককে ধরতে গেল। যুবক বলল, আমাকে ধরে নিতে হবে না, আমি নিজেই যাচ্ছি। সেখানে সোকলভের এক গুলি কেন হাজার গুলি আমাকে ভয় দেখাতে পারবেনা। বলে পিছ মোড়া করে বাধা সেই যুবক মাথা উচু করে বীর দর্পে মৃত্যু মঞ্চে গিয়ে উঠল। তার মুখে হাসি। ভয় ও উদ্বেগের সামান্য চিহ্নও তার চোখে নেই।
হো হো করে হেসে উঠল সোকলভ। বলল, খুব বীরত্ব দেখাচ্ছিস। মরেও তুই রক্ষা পাবিনা, তোর স্ত্রী ও ছেলে সন্তানকে আমরা শুকিয়ে মারব।
মুহুর্তের জন্য চমকে উঠেছিল যুবক। বুকটা যেন একবার মোচড় দিয়ে উঠেছিল। দুটি মেয়ের নিষ্পাপ মুখ, স্ত্রীর অসহায় ছবি তার সামনে জ্বলন্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু তা মুহুর্তের জন্যই। নিজেকে সামলে নিয়ে যুবক বলে উঠল, আমার স্ত্রী ছেলে সন্তানকে আমি সৃষ্টি করিনি, আমার আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তাদের দেখবেন। তোমাদের উপর আমি…………………।
সোলক্ভ যুবককে কথা বলতে দিলনা। ‘চুপ’ বলে হুংকার দিয়ে উঠল। তার চোখে যেন আগুন জলছে। তার পিস্তল উঁচু হয়ে উঠল। পিস্তলের ট্রিগারে তার তর্জনি স্থাপিত হলো। চারদিক নিরব নিস্তব্ধ। পরবর্তি সেকেন্ডের ঘটনার জন্য রুব্ধশাসে অপেক্ষা করছে সবাই।

Top