৫০. একটি দ্বীপের সন্ধানে

চ্যাপ্টার

ড্রাইভার তেপাওকে পাশের সীটে বসিয়ে আজ আহমদ মুসা নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছিল। আহমদ মুসা শিখ ড্রাইভারের ছদ্মবেশ নিয়েছে। মাথায় পাগড়ি, মুখে দাড়ি, গোঁফ। পোষাক কিন্তু একেবারে ইংলিশ।
হোটেল থেকে বেরিয়ে তাওনোয়া নদী বরাবর হাইওয়ে ধরে এগিয়ে পাপেতি থেকে আসা হাইওয়েতে উঠেছে। এগিয়ে যাচ্ছে না দক্ষিণে।
পাপেতি হাইওয়ে একটা জংশনে গিয়ে প্রিন্স আল-হিন্দি অ্যাভেনিউ-এর সাথে মিশেছে। সেই উপত্যকার সামনেই সুন্দর করে সাজানো গাছ-গাছালিতে ঢাকা একটা সমতল পাহাড়। মনোরম দৃশ্যের এই পাহাড়টি পিকনিক পাহাড় নামে খ্যাত।
এই পাহাড়েই এসেছে মারেভা ও মাহিনরা পিকনিক করতে। এলাকাভিত্তিক তাদের কম্যুনিটির এট বার্ষিক পিকনিক কর্নার। প্রতি বছর এই সময়েই তাদের এই পিকনিক হয়ে থাকে। পিকনিকে আহমদ দাওয়াত পেয়েছে। কুম্যুনিটির পক্ষ থেকে মারেভার মা তার বিশেষ গেষ্ট হিসাবে দাওয়াত করেছে আহামদ মুসাকে।
পিকনিকের সাথে সাথে সারাদিনের উৎসব এটা ওদের। লক্ষ্যহিন ঘুরে বেড়ানো ও রিল্যাক্স মুডে থাকে তার সারাদিন।
আহমদ মুসা দুপুরের খানা তাদের সাথে খাওয়ার দাওয়াত নিয়েছিল।
সেই দাওয়াত রক্ষা করতেই যাচ্ছে আহমদ মুসা।
আহমদ মুসার গাড়ি পাপেতি হাইওয়ে থেকে সরে গিয়ে উঠেছে প্রিন্স আ্যভেনিউ-এর মিলন জংশনে। হঠাৎ এই সময় নারী কন্ঠের ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ চিৎকার তার কানে এল ডান দিক থেকে। কন্ঠ অনেকটা মারেভা মত।
আহমদ মুসা চোখ ফিরিয়ে দেখল, একটি হাইল্যান্ডার জীপ প্রিন্স অ্যাভেনিউ থেকে জংশনে প্রবেশ করেছে। জীপের গতি সোজা পূর্ব দিকে।
পাপেতি হাইওয়ের এই জংশনে প্রিন্স অ্যাভেনিউ-এর সাথে মিলিত হবার পর প্রিন্স অ্যাভেনিউ নাম নিয়ে পূর্ব দিকে এগিয়ে গেছে। হাইল্যান্ডার জীপের গতি সেই পূর্ব দিকেই।
নারী কন্ঠের চিৎকার শোনার সাথে সাথেই আহমদ মুসা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। সে তার গাড়ির মুখ বাম দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে হাইল্যান্ডার জীপকে সামনে থেকে ব্লক করার চেষ্টা করবে।
কিন্তু আহমদ মুসা গাড়ি ঘুরাতে গিয়ে কিছুটা সময় নষ্ট করেছিল। হাইল্যান্ডার জীপের তীব্র বেপরোয়া গতি তাকে বাড়তি সুযোগ করে দিয়েছে। আহমদ মুসার কার যখন জীপের সমান্তরাল হলো, তখনও আহমদ মুসার কার গজ চারেক দূরে।
আহমদ মুসা উপায়ন্তর না দেখে গুলি করল হাইল্যান্ডারের পেছনের চাকায়।
খুবই মূল্যবান ছিল গুলি করা। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো না।
বিকট শব্দে টায়ারটা বাস্ট হয়ে গেল।
কিন্তু তার পরেও গাড়ি সামনে এগিয়ে গেল।
আহমদ মুসার গাড়ি বাঁক দিয়ে সামনে এগিয়ে হাইল্যান্ডারটির পেছনে গিয়ে পৌঁছবার আগেই আরেকটা হাইল্যান্ডের জীপ ঝড়ের বেগে তার পাশ দিয়ে ছুটে গিয়ে আগের হাইল্যান্ডের ডান পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল।
আহমদ মুসা দেখল এতে পরে হাইল্যান্ডারটি বেরিয়ে যেতে পারে, তাই সে আবার তার গাড়িটি আর একটু বামে ঘুরিয়ে নিয়ে আগের হাইল্যান্ডার জীপটির বাম পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। দেখতে পেল এ জীপের তিনজন আরোহী পাশে এসে দাঁড়ানো জীপটায় উঠে গেছে। দেখল মারেভা জীপের এদিকের দরজা খুলে বেরিয়ে আসছে।
আহমদ মুসা তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে মারেভাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে নিজেও বসে পড়ল এবং মারেভা তাড়াতাড়ি গাড়ির পেছনের দিকে সরে যাও, সামনে থেকে ওদের অনেক গুলি আসতে পারে।
আহমদ মুসা মাটিতে বসে পড়ার সাথে সাথে কয়েকটা গুলি তাদের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল।
মারেভার ও আহমদ মুসা গাড়ির পেছন দিকে সরে গেল।
গুলি তখনও আসছিল। গুলি করতে করতেই জীপটা সামনে এগোতে শুরু করেছিল। কিছু গুলি আহমদ মুসার গাড়িতেও লাগল। কিছু গুলি দুই গাড়ির মাঝখান দিয়ে পেছন দিকে ছুটে এল। এ গুলির ভয়টা য় আহমদ মুসা করছিল।
আহমদ মুসার গাড়ির ড্রাইভার তেপাও আগেই গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির আড়ালে লুকিয়েছিল।
আহমদ মুসা তেপাওকে বলল মারেভাকে নিয়ে আশে পাশে কোথাও অপেক্ষা করতে।
তেপাওকে এ নির্দেশ দিয়ে আহমদ মুসা গাড়িতে উঠে বসল। বলল, ‘আহমদ মুসা গাড়িতে ষ্ট্যার্ট দিল।’
চলতে শুরু করল গাড়ি। মারেভা ও তেপাও তখন এগোচ্ছে জংশনের পাশের এক হোটেলের দিকে। উৎসুক কিছু মানুষও চারদিক থেকে এসে জমা হয়েছে জংশনের এখানে সেখানে।
আহমদ মুসার গাড়ি জংশনটা পার হয়ে প্রিন্স রোডে আবার উঠতে যাবে এমন সময় পেছনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পেল।
আহমদ মুসা পেছনে ফিরে দেখল সেই হাইল্যান্ডার জীপটি দাও দাও করে জ্বলছে।
ওরা ওদের একটা আলামত ধ্বংস করে দিল যাতে ওটা আর কারো হাতে না পড়ে। মনে মনে প্রশংসা করল আহমদ মুসা ওদের। ওরা পেছনে কোন আলামত রেখে যায় না। বার বারই এটা প্রমাণ হচ্ছে।
প্রিন্স হাইওয়ে সোজা একটা সরল রেখার মত পূর্ব দিকে এগিয়ে গেছে। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ওদের গাড়ি, যদিও অনেক সামনে এগিয়ে গেছে ওরা।
আহমদ মুসা গাড়িতে সর্বোচ্চ গতিবেগ এনে ওদের কাছাকাছি পৌঁছার চেষ্টা করল।
কিন্তু ওরা টের পেয়ে গেছে যে তাদের ফলো করা হচ্ছে। ওদের গাড়ির স্পীডও বেড়ে গেল। আহমদ মুসার ভাড়া করা ট্যাক্সির চেয়ে হাইল্যান্ডারের গতিবেবগও ছিল বেশি। আহমদ মুসা চেষ্টা করল গতির সমতা রক্ষা করতে। আহমদ মুসার ওদের সাথে হয়তো পারবে না, কিন্তু ওদের ডেষ্টিনেশন জানতে চায়। মারেভাকেই যখন আবার কিডন্যাপ করতে চেষ্টা করেছিল, তখন লোকগুলো সেই কোম্পানির লোক হবে, সে সর্ম্পকে কোন সন্দেহ নেই। আর সেই কোম্পানি অবশ্যই ব্ল্যাক সান সিন্ডিকেট অথবা ব্ল্যাক সান সিন্ডিকেটেরই কেউ হবে। কিন্তু ওরা আবার মারেভাকে কিডন্যাপ করতে চেষ্টা করল কেন? ওরা সান্ড্রাকে সরিয়ে দিয়ে এবং সাপ্লাই অফিস বন্ধ করে দিয়ে পরিচয় লিংকটা তো কাটআপ করেছে। লিংক হয়ে যেতে পারে এমন চেষ্টা আবার তার কেন করল!
নানা ভাবনা আহমদ মুসার মনে মাথা তুলছে। কিন্তু তার চোখটা সামনে নিবদ্ধ। হাইল্যান্ডার জীপটিকে সে হারাতে চায় না।
কয়েক মাইল এভাবে চলার পর হঠাৎ হাইল্যান্ডার জীপটা বামে টার্ণ নিয়ে ঢালু পাহাড়ি পথে চলতে শুরু করল।
আহমদ মুসা ভাবল, বামের ঢাল বেয়ে এগোলে মাইল খানেক পরেই তো হ্রদ। তাহলে তারা হ্রদে নেমে পানি পথে কোথাও যেতে চায়! তাই হবে।
যেখানে গিয়ে হাইল্যান্ডার বামে নেমে গেছে, সেখানে পৌঁছে আহমদ মুসা দেখল রাস্তার মত একটা এবড়ো থেবড়ো চিহ্ন নিচে হ্রদের দিকে নেমে গেছে। হাইল্যান্ডারটা আর্ধেকটা পথ এগিয়ে গেছে। হাইল্যান্ডারের পক্ষেই এত দ্রুত এগোনো সম্ভব হচ্ছে, সাধারণ কারের পক্ষে এভাবে এগোনো সম্ভব নয়।
আহমদ মুসা কারটিকে একটা ঝোপের আড়ালে রেখে পায়ে হেঁটে নামতে শুরু করল নিজেকে যতটা সম্ভব করে। ওরা জানে এপতে তার গাড়ি নামতে পারবে না। অতএব এ পথের শুরু থেকেই আমি ফিরে যাব, এটা তারা নিশ্চিতই ধরে নেবে। কারণ হেঁচে এগিয়ে গিয়ে তো ওদের ধরা যাবে না, তাহলে এগোবো কেন। আহমদ মুসা তাদের এই নিশ্চিন্ত থাকার সুযোগ নিয়েই যতটা সম্ভব তাদের কাছাকাছি পৌঁছাতে চায়। দেখতে চায় যে তারা কি করছে।
আহমদ মুসা সোজাসুজি খাড়া হয়ে হেঁটে নামতে পারছে না। তাই তাকে গাছ-গাছকড়ার আড়ালে নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে অগ্রসর হতে হচ্ছে। চলার মাঝে মাঝে সে উঁকি দিয়ে গাড়িটাকে দেখতে কত দূর পৌঁছল।
এক সময় একটা উঁচু টিলার আড়ালে দাঁড়িয়ে উঁকি দিতে গিয়ে দেখল, গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেছে। ওখান থেকে হ্রদের পাড়টা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। জীপটা হ্রদের পানি ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। লোকজনও নেমেছে দেখা যাচ্ছে।
আহমদ মুসা কাঁধে ঝুলানো দুরবিনটা হাতে নিয়ে চোখে লাগাল সামনে চোখ পড়তেই চমকে উঠল আহমদ মুসা। দেখল হ্রদের পানি ঠেলে তিমি মাছের মত একটা কিছু পানির ভেতর থেকে পানির সারফেসে উঠে আসছে।
যখন সম্পূর্ণটা উঠে এল, মনে হলো যেন আস্ত একটা তিমি মাছ। ওটা আসলে তিমি মাছের আদলে তৈরি একটা সাবমেরিন।
তিমি মাছের মতই সাবমেরিনটা এক সময় হাঁ করল। ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একটা ষ্টিলের ব্রীজ। ব্রীজের সামনের প্রান্তটা উপকূলের এসে লান্ড করল। সংগে সংগেই জীপকে সংকুচিত হতে দেখা গেল। উচ্চতা অর্ধেকের বেশি কমে গেল। তার পর জীপটা সে ব্রীজ দিয়ে সাবমেরিনের পেটে ঢুকে গেল। একে একে পাঁচজন লোকও সেই ব্রীজ দিয়ে সবামেরিনের ভেতরে চলে গেল। তারপর তিমি মাছের করাতের মত দাঁতওয়ালা বিকট হাঁ’টা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেল। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই সাবমেরিনটা পানির নিচে হারিয়ে গেল।
আহমদ মুসার দু’চোখে আনন্দের ঝিলিক। সে এখন নিশ্চিত, কোম্পানিটা ব্ল্যাক সান সিন্ডিকেটের একটা অংশ। সে আরও নিশ্চিত তার আকাক্ষিত সে অ্যাটলটি তাহিতির পূর্ব পাশের তোয়ামতো দ্বীপপুঞ্জের রয়েছে।
এই আনন্দের সাথে আহমদ মুসাকে একরাশ বিস্ময়ও পীড়িত করল। এদর কত রকমের সাবমেরিন রয়েছে! সৌদি আরবের উপকূলে যে সাবমেরিন দেখে এসেছে, সেটা টিউব সাবমেরিন। আর এখানে দেখল তিমি মাছের মত এক উদ্ভুত অবয়বের সাবমেরিন। একটু দুর থেকে দেখলে কিংবা হাঠাৎ দেখলে একে তিমি মাছ ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারবে না কেউ। আর কত ধরনের সাবমেরিন এদের আছে! কোন বেসরকারী সংগঠন এত শক্তিশালী হয়, এতটা রিসোর্সফুল হয়, এমনটা ধারনাতেও ছিল না। এদের আসলে টার্গেট কি? তাদের অ্যাটলকে শক্তির রাজধানী বানাবার পর তারা কি করতে চায়?
এসব প্রশ্ন মাথায় নিয়ে আহমদ মুসা ঘুরে দাঁড়াল।
ফিরে এল সেই রোড জংশনে। দেখল মারেভার মা’সহ পিকনিকের প্রায় সবাই চলে এসেছে এদিকে।
আহমদ মুসাকে ঘিরে ধরল সবাই। পুলিশও এসেছে। পুলিশরাও ছুটে এল আহমদ মুসার কাছে। বলল, ‘স্যার, আপনি মেয়েটিকে উদ্ধার করার পর কিডন্যাপারদের ফলো করেছিলেন। কোন হদিশ পেলেন ক্রিমিনালদের?’
‘ওরা রাস্তা থেকে হ্রদে নেমে যায়। ওখানে ওদের নৌযান ছিল। সে নৌযানে ওরা পালিয়েছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তাহলে ওরা আটঘাট বেঁধেই এসেছিল। আপনাকে ধন্যবাদ স্যার। পুলিশের কাজ আপনি করছেন।’ বলল পুলিশ অফিসার।
‘ঐ কাজ শুধু পুলিশের নয়, সবার।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আপনি ঠিক বলেছেন। কিন্তু একথাটা সবাই বুঝে না। বুঝলে সমাজে অপরাধ থাকতো না।’ সেই পুলিশ অফিসারটিই বলল।
আহমদ মুসা পুলিশের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তাকাল মারেভার মায়ের দিকে।
মারভার মা মারভাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। মারভার সেই ভীত অবস্থা এখন নেই। একেবারেই ভাবলেশহীন মুখ।
‘খালাম্মা, মাহিন কোথায়?’ আহমদ মুসা জিজ্ঞাসা করল মারেভার মাকে।
‘মারেভা ও মাহিন ঘটনার সময় এক সাথেই ছিল। ওদের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তিতে আহত হয়েছে মাহিন। সে একটা ক্লিনিকে ফার্ষ্টএইড নিচ্ছে।’ বলল মারেভার মা। শুকনো কন্ঠ তার।
‘কেমন আহত সে?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘চোখের পাশটা তার কেটে গেছে, কিন্তু চোখ বেঁচে গেছে। দেখা গেছে অন্য তেমন কোন আঘাত তার দেহে নেই।’ বলল মারেভার মা।
‘ওদিকে পিকনিকের অবস্থা কি খালাম্মা?’ আহমদ মুসা বলল।
‘খবর পেয়েই আমরা অনেকে গাড়ির পেছনে পেছনে ছুটে এসেছি। ওদিকের খবর জানি না। ভালোও লাগছে না। এখন বাড়ি ফিরতে চাই।’ বলল মারেভার মা।
‘না খালাম্মা, চলুন পিকনিকে। সবাই নিশ্চয় অপেক্ষা করছে। তা ছাড়া আমারও ক্ষুধা পেছেছে।’ আহমদ মুসা বলল।
আহমদ মুসার কথা শুনেই হঠাৎ জেগে উঠার মত সচেতন হয়ে উঠল মারেভার মা। তাকাল মারেভার দিকে।
‘চল মা পিকনিকে। স্যার আছেন আর ভয় নেই।’ বলে মারেভা উঠে দাঁড়াল।
‘মারেভা, পুলিশ তোমাদের বক্তব্য নিয়েছে?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘আমার বক্তব্য নিয়েছে। তেপাও-এর কথাও রেকর্ড করেছে। মাহিন তার ষ্টেটমেন্ট পুলিশকে আগেই দিয়েছে।’ বলল মারেভা।
‘গুড, এ দিকের কাজ তো শেষ। আমরা তাহলে চলি পিকনিকের দিকে। মারেভা, খালাম্মা আমাদের গাড়িতে আসতে পারেন। পেছনের তিন সীট তো খালিই আছে।’ আহমদ মুসা বলল।
মারেভা ও মারেভার মা গিয়ে গাড়িতে উঠল।
পিকনিকের যারা এদিকে এসেছিল তারা সবাই ছুটল পিকনিক স্পটের দিকে।
হাইওয়ে থেকে উপত্যকার রাস্তায় চলতে শুরু করেছে আহমদ মুসার গাড়ি।
উপত্যকাতেই পিকনিক পাহাড়টা। গাড়ি চলছে।
পেছন থেকে মারেভার মা বলল, ‘ধন্যবাদ দিয়ে ঋণ শোধ হবে না। তাই ধন্যবাদ দেব না। মারেভার কাছ থেকে আজকের ঘটনা সবই শুনেছি। তোমার নিজের কথাও তোমাকে এখন ভাবতে হবে যে বেটা। তুমি নিজের কথাও তোমাকে এখন ভাবতে হবে যে বেটা। তুমি কিন্তু ওদের টার্গেট। তোমার খোঁজেই কিন্তু ওরা আজ এসেছিল মারেভা ও মাহিনের কাছে।’ বলল মারেভা মা।
‘আমাকে পায়নি। আমাকে না পেয়েই কি তাহলে মারেভা ও মাহিনকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিল।’ জিজ্ঞাসা মুসার।
‘তা নয় বেটা, ওরা এস একটু আড়ালে পেয়ে গিয়েছিল মারেভা ও মাহিনকে। ওরা মারেভা ও মাহিনের কাছে তোমার পরিচয় কি, বাড়ি কোথায়, কোথায় উঠেছ, কত দিন থাকবে? এসব বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। ওরা নিজদেরকে মার্কিন গোয়েন্দা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। মারেভা ও মাহিন তাদের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছে তোমার কোন তথ্যই তাদের দেয়নি। এ নিয়েই হট কথাবার্তা। এরই পরিণতিতে তারা মারেভা ও মাহিনকে কিডন্যাপ করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তাদের সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়। তখন আশে পাশের লোকরা টের পেয়ে যায়। বেগতিক দেখে মাহিনকে ছেড়ে দিয়ে মারেভাকে টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চম্পট দেয়।
আমরা কয়েকজন গাড়ির পিছু পিছু ছুঁটতে থাকি। গাড়ি নেবার কথা আমাদের খেয়াল হয়নি। গাড়িটি বিস্ফোরিত হবার পরপরই আমরা ওখানে পৌঁছি। মারেভাকে পেয়ে যেন দেহে প্রাণ ফিরে পাই। শুনলাম তুমি দুষ্কৃতকারীদের ফলো করেছ।’ বলল মারেভা মা।
আহমদ মুসা ভাবল ওরা তাহলে টার্গেট বদলেছে। ওদের হাত থেকে শিকার যে কেড়ে নিয়েছে, তাদের কয়েকজনকে যে গুলিবিদ্ধ করেছে, তার পরিচয় ওরা চায়। এমন ঘটনা বোধ হয় ওদের এটাই প্রথম। তাই প্রতিশোধ নেবার বিষয়টা ওদের কাছে বড় হয়ে উঠেছে। কিন্তু আজ আবার তো সেই ঘটনাই ঘটল। আজও শিকার তাদের হাত ছাড়া হলো।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘খালাম্মা ভাববেন না। এবার আমি ওদের টার্গেট। ওরা মারেভাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল আমার সন্ধান নেবার জন্যে। আজকেও ওরা পরাজিত হয়েছে, ব্যার্থ হয়েছে মারেভাকে কিডন্যাপ করতে। এরপর ওরা শিখ ড্রাইভারেরও সন্ধান চাইতে পারে মারেভার কাছে।’
‘তাহলে বিপদ তো মারেভার থাকছেই। আমার ভয় করছে বেটা। প্রত্যেক দিন তো তুমি থাকবে না মারভাকে রক্ষা করতে।’ বলল মারেভার মা।
‘এবার ওরা যোগাযোগ করলে মারেভা তুমি আমার যে পর্যটক পরিচয় জান, তা এবং আমি কোথায় থাকি সব বলে দিও। আমি চাই ওরা আমার কাছে আসুক। ওদের সাক্ষাত, ওদের ঠিকানা আমার দরকার।’ আহমদ মুসা বলল।
‘এটাই বুঝি হবে স্যারের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ! দু’দুবার যিন আমার প্রাণ বাঁচালেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, তার প্রতি এটাই বুঝি বলল না।’ বলল মারেভা।
‘মারেভা আজ তোমার কিডন্যাপারদের পিছু নিয়ে আমার বিরাট লাভ হয়েছে। আমি যাদের সন্ধানে তাহিতি এসেছি। এরা তারাই। মাহিনের কোম্পানি তাদেরই অংশ। আজ ওদের পরিচয় সর্ম্পর্ণ পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন ওদের পরিচয় যত জানতে পারি ততই আমার লাভ। সম্ভব হলে আমি কালকেই তাহানিয়া দ্বীপটিতে যাব।’ আহমদ মুস বলল।
‘আমি বুঝেছি স্যার। কিন্তু এর ফলে আপনার বিপদে পড়ার সম্ভবনা আছে। যদি তা ঘটে তাহলে আমি নিজেকে মাফ করতে পারবো না স্যার।’ বলল মারেভা।
তাহলে শোন মারেভা, তুমি ও মাহিন কিছুদিন অন্তত বাইরে চলাফেরা বন্ধ করে দাও। আমার সাথে যখন দরকার হবে, তখন আমি তোমাদেরকে বাসা থেকে তুলে নেব। আর তোমাদের কোন কোন সময় ছদ্ধবেশ নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে, ঝামেলা এড়াবার জন্যে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘স্যার, আপনি কি সত্যি কাল তাহানিয়া দ্বীপে যাচ্ছেন?’ বলল মারেভা।
‘চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। চিন্তা করে দেখি।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমি ও মাহিন কি যাচ্ছি আপনার সাথে?’ বলল মারেভা।
‘পর্যটনে গেলে গাইডরা অবশ্যই যাবে। আর যদি অন্য কোন উদ্দেশ্য যাই, তাহলে গাইডরা সাথে যাবার প্রশ্ন নেই।’ আহমদ মুসা বলল।
মারেভা প্রতিবাদে কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেল। এবার গাড়ি থেকে নেমে পাহাড়ের পিকনিক স্পটে উঠেতে হবে।
গাড়ি থেকে সবাই নামল। পাহাড়ে ওঠার জন্য এগোলো সবাই।

Top