৫৩. রাইন থেকে অ্যারেন্ডসী

চ্যাপ্টার

‘৪০২’ নাম্বার কক্ষটিই আপনাদের চাই?’ বলল ডেস্ক এ্যাসিস্টেন্ট।
‘হ্যাঁ, ঐ কক্ষটাই চাই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু ঐ সারির সবই ভিভিআইপি কক্ষ। ৪০২-এর চেয়ে ৪০১ নাম্বার কক্ষ তো লোকেশনের দিক থেকে আরও ভালো।’
‘কিন্তু কক্ষটা লাকি। আমার একজন আত্নীয় ওখানে ছিলেন। তার নিরাময় হওয়া ছিল মিরাকল। তাই কক্ষটার প্রতি আমাদের এত টান।’ বলল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসার পরনে খৃস্টান সন্ন্যাসীর পোশাক। মুখ ভরা তার কাঁচা-পাকা দাড়ি। দাড়ির মত গোঁফও তার প্রচুর, ঠোঁটের অস্তিত্বই তা ঢেকে ফেলেছে।
ডেস্কের পাশে এসে দাঁড়াল একজন। ডেস্ক এ্যাসিস্টেন্ট একটু এ্যাটেনশন হয়ে লোকটিকে গুড মর্নিং জানাল ‘স্যার’ বলে সন্বোধন করে।
‘কি বোয়ার, কি সমস্যা?’ বলল এসে দাঁড়ানো লোকটি, উত্তরে গুড মর্নিং বলার পর।
‘না স্যার, তেমন কিছু না। ইনি তার ঐ যে প্যাশেন্ট বসে আছেন তার জন্যে ৪০২ নাম্বার রুমটি চাচ্ছেন। আরেকজনের নামে রুমটি লিখেছিলাম।’ বলল ডেস্ক এ্যাসিস্টেন্ট বোয়ার।
‘দক্ষিণ পাশের রুমটাও তো খালি আছে। ওটা দিয়ে দাও।’ বলল এসে দাঁড়ানো লোকটি।
‘না স্যার। তা নিচ্ছে না। তাদের ধারণা ৪০২ নং কক্ষটি লাকি, তাই ওটাই চায় তারা। ওদের কেউ নাকি একবার এখানে ছিল।’ ডেস্ক এ্যাসিস্টেন্ট বোয়ার বলল।
সাধারণ কৌতূহলবশেই আহমদ মুসা তাকিয়েছিল এসে দাঁড়ানো লোকটির দিকে।
ডেস্ক এ্যাসিস্টেন্টের কথা শুনে লোকটি হাসল। হাসিটা সোজা ও স্বচ্ছ নয়। বলল সে, ‘ঘরটা খুব লাকি, এটা ঠিক আছে। তারা যখন চাচ্ছে দিয়ে দাও না। ঐ পক্ষকে পাশের কক্ষটা দিয়ে দিতে পার।’
কথা শেষ করেই সে ‘ওকে, বাই বোয়ার’ বলে চলে গেল।
লোকটির হাসি এবং কক্ষটি সম্পর্কে তার কথার মধ্যে একটা মিল আছে তা আহমদ মুসার নজর এড়াল না। হাসি ও কথা উভয়ের মধ্যেই একটা প্রচ্ছন্ন বিদ্রূপও আছে। কিন্তু কেন? বিষয়টি আহমদ মুসার কাছে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল।
আহমদ মুসা তাকাল ডেস্ক এ্যাসিস্টেন্ট বোয়ার দিকে। বলল, ‘লোকটি কে? আপনাদের বস নাকি?’
বোয়ার হাসল। বলল, ‘হ্যাঁ, সবারই বস সে। হাসপাতালে তার মত পুরানো আর কেউ নেই। তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর চীফ সুপার।’
‘ওয়ার্ডগুলোর চীফ সুপার? নাম কি?’ বলল আহমদ মুসা। মনে মনে সে বলল, ওয়ার্ডগুলোর চীফ সুপারকেই তাদের দরকার।
‘উনি আলদুস আলারী।’ বলল বোয়ার।
‘আলদুস আলারী? তাকে ধন্যবাদ। তিনি আমাদের সাহায্য করেছেন।’ আহমদ মুসা বলল।
আলদুনি সেনফ্রিড মাথা ও হাত-পায়ের প্রবল স্নায়ুবিক ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেল। তার সাথে এ্যাটেনডেন্ট হিসেবে থাকল ব্রুনা। আর আহমদ মুসা রোগীর প্রয়োজনের দিকটা দেখ-ভাল করার জন্যে মাঝে মাঝে হাসপাতালে আসবে। এ ধরনের ব্যবস্থা পাকা হয়ে গেল।
রুম সার্ভিসের লোকরা রুমের ড্রেসিং এবং রুমের সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়ে বেরিয়ে যাবার পর হাসপাতালের বেডে শুয়ে পড়ে আলদুনি সেনফ্রিড বলল, ‘মি. আহমদ মুসা, আপনি চমৎকার বুদ্ধি বের করেছেন। আমি মনে করি, আমাদের কাজের জন্যে এর চেয়ে কোন ভালো ব্যবস্থা আর হতো না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।’
‘ইতিমধ্যে তাকে চেনাও তো হয়ে গেছে। এখন তার সাহায্য পেলেই হয়।’ আহমদ মুসা বলল।
‘সাহায্য কি করবেন? কেন করবেন? যা তিনি করেছেন সেটা শুধু ভয়ে নয়, টাকার বিনিময়ও নিশ্চয় ছিল।’ বলল ব্রুনা।
‘হ্যাঁ, ব্রুনা ঠিক বলেছ। তাছাড়া সে অবশ্যই স্বীকার করতে চাইবে না যে সে ভয়ানক কাজটিতে জড়িত ছিল।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তাহলে? তাকে কেন্দ্র করেই তো আমাদের একটা বড় আশা ছিল।’ বলল ব্রুনা। তার কন্ঠে হতাশার সুর।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে আগাম হতাশা ঠিক নয়। আর ভাবনার সময় এখনও আসেনি ব্রুনা।’
‘ধন্যবাদ ভাইয়া।’ বলল ব্রুনা হাসতে হাসতে। একটু থামলেও কথা শেষ করল না ব্রুনা। বলে উঠল আবার, ‘একটা কথা আমি বুঝতে পারছি না। আপনি খৃস্টান সন্ন্যাসীর পোশাক কেন নিয়েছেন?’
‘এখানে আমার দু’টি ভূমিকা। খৃস্টান সন্ন্যাসীর কাজ হলো হাসপাতালে তোমাদের খোঁজ-খবর নেয়া। আর আহমদ মুসার কাজ ভিন্ন, যে কাজ নিয়ে আমরা এখানে এসেছি সেই কাজ করা। এক চেহারায় দুই কাজ হতো না ব্রুনা।’ আহমদ মুসা বলল।
‘বুঝেছি। সে কাজ কি তাহলে হাসপাতালের বাইরে?’ বলল ব্রুনা। তার মুখ এবার গম্ভীর। কিছুটা উদ্বেগও তাতে।
‘সেটা ঠিক বলা যাবে না। শুধু বাইরে নয়, হাসপাতালের ভেতরেও আহমদ মুসা কাজ করতে পারে। সেটা নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপর।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আপনি বাইরে থাকবেন কোথায়?’ জিজ্ঞাসা ব্রুনার।
‘এখনও ঠিক করিনি। বাইরে বেরিয়ে একটা কিছু ঠিক করে নেব।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তাহলে আপনি থাকার ব্যাপারটাই আগে ঠিক করে আসুন। আপনার রেস্ট দরকার।’ বলল ব্রুনা।
‘কিন্তু ব্রুনা, এই মুহূর্তে আমার প্রধান কাজ হলো আলদুস আলারী কোথায় থাকেন, তা জানা। তারপর আমার ব্যাপারটা ঠিক করব।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কি করে জানবেন? জিজ্ঞাসা করলেই তো সন্দেহ জাগবে।’ বলল ব্রুনা।
‘আমি ইতিমধ্যেই খোঁজ নিয়েছি উনি ২টা পর্যন্ত হাসপাতালে থাকেন, তারপর চলে যান। সন্ধ্যার পরে একবার আসেন পরের দিনের সব ঠিকঠাক আছে কি না দেখার জন্যে। উনি হাসপাতাল থেকে আর কিছুক্ষণের মধ্যে বের হবেন। এরপর আমি কিছু খোঁজ-খবর নেব।
বেলা ২টা বাজার পর আহমদ মুসা তার ব্যাগটা নিয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকল। ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে এল আহমদ মুসার বেশে। আগের আহমদ মুসা থেকে এতটাই পার্থক্য যে, আগে গোঁফ ছিল না এখন গোঁফ আছে।
আহমদ মুসা বেরিয়ে যাচ্ছিল ঘর থেকে। ব্রুনা বলল, ‘ভাইয়া, আপনি হাসপাতাল থেকে কোথাও যাচ্ছেন?’
‘না। বাইরে বেরুবো তো সন্ন্যাসী সেজে। আসছি অল্পক্ষণ পর।’
বলে আহমদ মুসা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আধা ঘন্টা পরে ফিরে এল আহমদ মুসা।
এসেই আহমদ মুসা পোশাক পাল্টে সন্ন্যাসীর পোশাক পরে পিঠে গেরুয়া একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে তৈরি হলো যাবার জন্যে। আলদুনি সেনফ্রিড রোগীর বেডে এবং ব্রুনা পাশের এ্যাটেনডেন্ট কক্ষে শুয়েছিল।
আহমদ মুসার সাড়া পেয়ে ব্রুনা এ ঘরে চলে এসেছিল। আহমদ মুসাকে তৈরি দেখে বলল সে, ‘ভাইয়া, এবার নিশ্চয় হাসপাতালের বাইরে যাচ্ছেন, আসছেন কখন?’
‘এখনও কিছু ঠিক করিনি? তুমি এদিকটা দেখ।’ আহমদ মুসা বলল।
‘খুব কৌতুহল লাগছে। নিশ্চয় কোন বিশেষ কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। হলো কাজ?’ বলল ব্রুনা।
আহমদ মুসা একটু হাসল। বলল, ‘বলতে পারবো প্রথম মিশনটা সফল হলে।’
‘মনটা যদিও আকুলি-বিকুলি করছে, তবু জানতে চাইবো না মিশনটা কি?’ বলল ব্রুনা।
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘ধন্যবাদ ব্রুনা। পরে অবশ্যই জানবে। আসি।’
বলে আহমদ মুসা বেরিয়ে এল ঘর থেকে।

রাত ৯টা।
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top