৫৪. আবার আমেরিকায়

চ্যাপ্টার

‘আমি জর্জ আব্রাহাম বলছি, মিস অ্যানজেলা তুমি এখন কোথায়?’ বলল মোবাইলে জর্জ আব্রাহাম।

“স্যার, আমি শ্যালন হার্স-এর হাসপাতালে, তার অফিসে। আমরা রক ক্রিক থেকে সোজা গিয়েছিলাম শ্যালন হার্স-এর ফ্ল্যাট। সেখানে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আমরা চলে এসেছি হাসপাতালে।’ অ্যানজেলা বলল।

‘কিন্তু মিস অ্যানজেলা আমরা তোমাদের বাড়ির গেটে। তোমাদের বাড়িতে আমাদের ঢুকতে হবে। গেটে শুনলাম, তুমি কিংবা তোমার বাবা কেউ বাড়িতে নেই। তাই তোমাকে টেলিফোন করলাম।’ বলল আব্রাহাম জনসন।

‘বুঝেছি স্যার। কিন্তু ঘটনার সাথে বাবার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে কি আপনারা নিশ্চিত হয়েছেন?’ জিজ্ঞাসা আলাইয়া অ্যানজেলার।

‘হ্যা নিশ্চিত মিস অ্যানজেলা। রক ক্রিকের যে জংগলের ধার থেকে তুমি আহমদ মুসাকে উদ্ধার করেছিলে, সেখান থেকে অল্প দূরে জংগলের গভীরে মাটির তলায় ফোম ও এইচ কিউব নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের হেড কোয়ার্টার আমরা খুঁজে পেয়েছি। সেখানে যে ম্যাটেরিয়াল ও দলিল-পত্র পাওয়া গেছে, তাতে সংস্থার অফিসিয়াল প্রধান হিসাব তাঁর নাম রয়েছে।’ বলল আব্রাহাম জনসন।

‘ও গড!’ অ্যানজেলার কণ্ঠে ধ্বনিত হলো। বেদনার্ত তার কণ্ঠ।

একটু বিরতি। তারপরেই ওপার থেকে কণ্ঠ ভেসে এলো অ্যানজেলার, ‘স্যার, আমার আম্মা, নোয়ান নাওমি এবং স্টাফ প্রধান মিস বারবারকে বাসায় পাবেন। তাঁরা আপনাদের নিশ্চয় সহযোগিতা করবে। আমরা আসছি।’

‘অনেক ধন্যবাদ অ্যানজেলা। তুমি এলে আমরা খুশি হবো। তোমাদের মতো তরুণ প্রজন্মরাই দেশ ও জাতিকে বাঁচাবে। এস মা।’ বলল জর্জ আব্রাহাম।

‘ধন্যবাদ স্যার। আমি দুঃখিত, মর্মাহত, কিন্তু আমি খুশি ষড়যন্ত্র ধরা পড়ায়। কি ষড়যন্ত্র অবশ্য জানি না আমি। স্যার, ম্যাডাম সারা জেফারসন কি আপনার সাথে আছে?’ বলল অ্যানজেলা। ভারি কণ্ঠ তার।

‘না মা, সে এখন আমাদের সাথে নেই।’ বলল আব্রাহাম জনসন।

‘ঠিক আছে। ধন্যবাদ স্যার। আমি আসছি।’ অ্যানজেলা বলল।

জর্জ আব্রাহাম তার মোবাইলের কল অফ করে তা জ্যাকেটের পকেটে রাখতে রাখতে পাশে অপারেশন কমান্ডার এরিক এন্ডারসনকে বলল, ‘বাড়ির চারদিকে চোখ রাখার ব্যবস্থা হয়েছে এরিক?

‘জি স্যার।’ এরিক এন্ডারসন বলল।

‘ধন্যবাদ। এবার তোমরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ কর। তথ্য পাওয়া যেতে পারে এমন সবকিছুকে লোকেট কর। আমি আসছি।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

জার্মান টাইপে একটা বাউ করে এরিক এন্ডারসন তার লোকদের নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল।

কয়েকটা কল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

কলগুলো শেষ করে জর্জ আব্রাহাম ভেতরে প্রবেশ করল। দেখল ভেতরের লিভিং রুমে এরিক এন্ডারসন তার জন্যে অপেক্ষা করছে।

জর্জ আব্রাহাম লিভিং রুমে প্রবেশ করতেই স্যালুট দিল এরিক এন্ডারসন। তার সাথে এফবিআই-এর অন্যান্য লোকও।

লিভিং রুমে বাড়ির কয়েকজনও দাঁড়িয়েছিল। মাত্র অভিজাত চেহারার একজন মহিলা বসেছিল মাঝের একটি সোফায়। তার চোখ-মুখ ভরা বিরক্তি। তার পেছেনে বসেছিল আরেকজন মহিলা, ভারি ও বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার।

‘ম্যাডাম ইনি জর্জ আব্রাহাম জনসন, এফবিআই প্রধান।’ জর্জ আব্রাহামকে দেখিয়ে বলল এরিক এন্ডারসন ম্যাডাম শিমন আলেকজান্ডারকে।

উঠে দাঁড়াল ম্যাডাম শিমন আলেকজান্ডার।

‘গুড ইভনিং মি. জর্জ আব্রাহাম।’ বলল ম্যাডাম শিমন আলেকজান্ডার।

‘স্যার, ইনি মিসেস নোয়ান নাওমি, ম্যাডাম শিমন আলেকজান্ডার।’ ম্যাডাম শিমন আলেকজান্ডারকে দেখিয়ে বলল এরিক এন্ডারসন জর্জ আব্রাহাম জনসনকে লক্ষ করে।

একটা ছোট্ট বাউ-এর সাথে হ্যান্ডশেক করে জবাব দিয়ে জর্জ আব্রাহাম বলল, ‘স্যরি, মিসেস আলেকজান্ডার আপনাদের কষ্ট দিতে হচ্ছে। আমরা সত্যিই দুঃখিত।’

‘ও.কে মি. জর্জ আব্রাহাম। আপনার যেটা দায়িত্ব সেটা তো করবেনই। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না এসব কি ঘটছে? আমার স্বামী মি. শিমন আলেকজান্ডার মাত্র কয়েক মিনিট আগে প্লেন থেকে জানালেন তিনি আর্জেন্টিনা যাচ্ছেন। তার পরেই আপনারা আসলেন তার খোজে এবং বাড়ি সার্চ করতে। কেন এসব?’ বলল নোয়ান নাওমি, শিমন আলেকজান্ডারের স্ত্রী।

নোয়ান নাওমি যখন কথা বলছিল, তখন নীরবে এসে আলাইয়া অ্যানজেলা সোফায় তার মায়ের পাশে বসেছিল। তার মুখ ভারি। মায়ের কথা যখন শেষ হলো, তখন দেখা গেল তার চোখের দুই কোণ অশ্রুতে ভরে গেছে। তার মা না জানলেও সে তো কিছু জানে কেন তার প্রিয় বাবা আর্জেন্টিনা পালালেন।

‘মিসেস আলেকজান্ডার, আমাদের মনে হচ্ছে একটা বিপজ্জনক সন্ত্রাসী চক্রের সাথে মি. শিমন আলেকজান্ডার জড়িয়ে পড়েছেন। আমরা তার সম্পর্কে আরও তথ্যানুসন্ধানের জন্যে এখানে এসেছি।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

‘আপনাদের ভুল হচ্ছে না তো? আপনারা কি ‍নিশ্চিত? সেই চক্রটি কারা, নাম কি সেই চক্রের?’ নোয়ান নাওমি বলল।

‘নিশ্চিত না হয়ে আমরা আসিনি মিসেস আলেকজান্ডার। নামটা এই মুহূর্তে আমরা প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। তবে রক ক্রিকের গভীর জংগল অংশে ওদের হেড কোয়ার্টার আমরা খুঁজে পেয়েছি। সেখানে পাওয়া দলিল-পত্রে সংগঠনটির অফিসিয়াল প্রধান হিসাবে মি. শিমন আলেকজান্ডারের নাম পাওয়া গেছে। মি. শিমন আলেকজান্ডারও এটা জানতে পেরেছেন। তাই গ্রেপ্তার এড়িয়ে তিনি তড়িঘড়ি করে আর্জেন্টিনা চলে গেছেন।’ বলল জর্জ আব্রাহাম।

‘তাঁর অপরাধটা কি ধরনের মি. জর্জ আব্রাহাম? বিপজনক দলটারই বা এজেন্ডা কি, যার সাথে শিমন জড়িত? জিজ্ঞাসা নোয়ান নাওমির।

‘সব কথা আমরা এখনি প্রকাশ করছি না বিশেষ কারণে। তবে এটুক জেনে রাখুন মিসেস আলেকজান্ডার, রাষ্ট্রের প্যারালাল একটা শক্তি গড়ে তোলা হচ্ছিল।’

‘রাষ্ট্রের প্যারালাল শক্তি? প্রায় এক সঙ্গেই বলে উঠল নোয়ান নাওমি ও আলাইয়া অ্যানজেলা। তাদের চোখে-মুখে অপার বিস্ময়।

‘উদ্দেশ্য কি স্যার?’ অ্যানজেলা বলল। তার ভ্র্য কুঞ্চিত। সে যেন বিশ্বাস করতেই পারছে না তার বাবা এমন ভয়াবহ কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু তার বাবা চলে গেলেন কেন? তিনি কি এর মাধ্যমে প্রমাণ করে গেলেন যে এদের অভিযোগ সত্য? বুকটা খচখচ করে উঠল অ্যানজেলার।

‘আরও অনুসন্ধানের পর বলা যাবে অ্যানজেলা।’

একটু থেমেই আবার বলে উঠল, ‘আমাদের এই অনুসন্ধান কাজে আপনাদের সহযোগিতা চাই আমরা।’

‘বলুন মি. জর্জ আব্রাহাম।’ অ্যানজেলার মা নোয়ান নাওমি বলল।

‘পরীক্ষার জন্যে কিছু জিনিস আমরা নিয়ে যেতে চাই।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

‘কি জিনিস?’ জিজ্ঞাসা নোয়ান নাওমির। জর্জ আব্রাহাম জনসন তাকাল এরিক এন্ডারসনের দিকে। বলল ‘এরিক, তোমার লিস্ট কমপ্লিট?

‘জি স্যার।’ এরিক এন্ডারসন বলল।

‘দুই কপি রেডি?’ বলল জর্জ অব্রাহাম।

‘জি স্যার।’ এরিক এন্ডারসনের জবাব।

‘ম্যাডামকে পড়ে শোনাও।’ বলল আব্রাহাম জনসন।

জর্জ আব্রাহাম ও নোয়ান নাওমির সামনের সেন্টার টেবিলে কয়েকটা জিনিস রেখে এরিক এন্ডারসন বলল, ‘প্লিজ ম্যাডাম, আমরা চার ধরনের ৬ টা জিনিস নিয়ে যাচ্ছি। এক. মি. শিমন আলেকজান্ডারের পার্সোনাল কম্পিউটার ডিস্ক, দুই. সেভার ডিস্ক, কনফিডেন্সিয়াল পার্সোনাল হার্ডফাইল তিনটা এবং সিসিটিভি’র মনিটর ডিস্কের একটা কপি। আরেকটা জিনিস আমরা চাই, কিন্তু সেটা আমরা এখনো পাইনি।’ এরিক এন্ডারসন বলল।

‘কি সেই জিনিসটা?’ জিজ্ঞাসা নোয়ান নাওমির।

‘কম্পিউটারের একটা লগে এবং হার্ডফাইলের একটা রেফারেন্সে মি. শিমন আলেকজান্ডারের পার্সোনাল ডাইরির কথা আছে। কিন্তু সেটা আমরা খুঁজে পাইনি।’ এরিক এন্ডারসন বলল।

প্রায় সংগে সংগেই নোয়ান নাওমি বলল, ‘ওটা উনি সাথেও নিতে পারেন।’

‘ধন্যবাদ ম্যাডাম।’ বলে এরিক এন্ডারসন সিজার লিস্টের দু’টি কাগজ নোয়ান নাওমির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘ম্যাডাম, একটিতে আমাদের দস্তখত আছে, ওটা আপনি রাখুন। অন্যটায় আপনি দস্তখত করে আমাকে দিন, প্লিজ।’

কাগজের শিট দু’টো হাতে নিয়ে নোয়ান নাওমি সেন্টার টেবিলের জিনিসগুলোর সাথে মিলিয়ে নিল এবং কনফিডেন্সিয়াল হার্ডফাইল তিনটির সিরিয়ালগুলোর উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর দস্তখত করে কাগজটা এরিক এন্ডারসনকে দিয়ে দিল।

‘ধন্যবাদ ম্যাডাম!’ বলে কাগজটা হাতে নিল সে।

‘ধন্যবাদ মিসেস শিমন আলেকজান্ডার। ধন্যবাদ অ্যানজেলা। আপনাদের অনেক কষ্ট দিলাম। আমরা উঠছি।’ বলে জর্জ আব্রাহাম উঠে দাঁড়াল।

‘স্যার, আমি আসছি। আমি আপনাদের এগিয়ে দেব।’

বলে অ্যানজেলা ভেতর বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করল।

পাঁচ মিনিট পর সে ফিরে এল।

‘মা ওঁদের এগিয়ে দিয়ে আমি আসছি।’ বলে অ্যানজেলা দ্রুত বেরিয়ে গেল।

গাড়ি বারান্দায় জর্জ আব্রাহাম অপেক্ষা করছিল অ্যানজেলার।

অ্যানজেলা পৌছল গাড়ি বারান্দায়।

এগিয়ে গেল জর্জ আব্রাহামের কাছে।

‘অ্যানজেলা, তুমি নিশ্চয় কিছু বলবে। এখানে বলবে না আমার গাড়িতে উঠবে।’ বলল জর্জ আব্রাহাম।

অ্যানজেলার মুখ গম্ভীর। বৃষ্টিপূর্ব মেঘের মতো অনেকটাই। বলল, ‘আপনার ফেভার পেলে গেটের বাইরে পর্যন্ত আপনার গাড়িতে আমি যেতে চাই।’

‘ওয়েলকাম। এস মা।’

বলে জর্জ আব্রাহাম গাড়ির দরজা খুলে অ্যানজেলাকে বসিয়ে নিজে গাড়িতে উঠে বসল।

গাড়ি স্টার্ট নিল।

আগে জর্জ আব্রাহামের গাড়ি চলল। পেছনে এরিক এন্ডারসনের দল।

‘বল মা কি বলবে? ‍তুমি খুব ভেঙে পড়েছ বলে মনে হচ্ছে।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

‘স্যার, আমার মা সত্যি কথা বলেননি। বাবার পার্সোনাল সেই ডাইরিটা বাড়িতেই রয়েছে।’ বলল অ্যানজেলা। ভাঙা ভাঙা ভারি কণ্ঠ তার। যেন বুক থেকে কথাগুলো অনেক কষ্ট নিয়ে বেরুচ্ছে।

জর্জ আব্রাহাম তাকাল অ্যানজেলার দিকে।

অ্যানজেলার মুখ নিচু।

জর্জ আব্রাহামের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠেছে। অ্যানজেলার বুকের কষ্টটা সে অনুভব করতে পারছে। বলল, ‘মা, ডাইরিটা তুমি নিয়ে এসেছ?’

অ্যানজেলা মুখ না তুলেই মাথা নেড়ে জানাল যে, সে ডাইরিটা নিয়ে এসেছে।

কয়েক মুহূর্ত পরে মাথা তুলল অ্যানজেলা।

তার মুখ ধুয়ে যাচ্ছে অশ্রুতে।

সে শার্টের নিচ থেকে ডাইরিটা বের করে তুলে ধরল জর্জ আব্রাহামের দিকে। বলল, ‘ডাইরিতে কি আছে আমি জানি না স্যার। বাবার বিনা অনুমতিতে বাবার প্রাইভেট কোন কিছুতে আমি কোন দিন হাত দেই না। বাবার প্রাইভেট বিষয় আমার কাছে বাবার মতোই সম্মানের।’

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ল সে।

জর্জ আব্রাহাম অ্যানজেলার মাথায় হাত রেখে বলল, ‘তোমার কষ্ট আমি বুঝতে পারছি মা। যে মেয়ে তার পিতার প্রাইভেট বিষয়কে অত্যন্ত পবিত্র জ্ঞানে সম্মান করে, সে মেয়ে পিতার অতি গুরুত্বপূর্ণ কনফিডেনশিয়াল ডাইরি তার বিরুদ্ধ পক্ষের হাতে তুলে দিতে পারে কেমন করে! তুমি ইচ্ছা করলে মা ডাইরিটা ফেরত নিতে পার। তোমার পিতা সম্পর্কে আমাদের অভিযোগ আছে। কিন্তু একজন মেয়েকে তার বাবার কাছে ছোট করতে চাই না আমরা।’

‘স্যরি স্যার। পিতা আমার কাছে অনেক বড়, কিন্তু দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যদি তার অবস্থান হয়, তাহলে দেশ ও জনগণের স্বার্থ আমার কাছে তার চেয়ে অনেক বড়। স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েই আমি বাবার ডাইরিতে হাত দিয়েছি।’ অ্যানজেলা বলল।

‘কিন্তু তারপরও তুমি কষ্ট পাচ্ছ মা।’ বলল জর্জ আব্রাহাম।

‘কষ্ট পাচ্ছি, কাঁদছিও স্যার। আরও হয়তো কাঁদতে হবে। এই কান্না এক পিতার জন্যে এক কন্যার কান্না। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি শিমন আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে।’ অ্যানজেলা বলল। তার কণ্ঠ কান্নায় রুদ্ধ হয়ে এসেছিল শেষ দিকে।

‘ধন্যবাদ মা। গর্বে আমার বুক ভরে যাচ্ছে তোমার মতো নতুন প্রজন্মের জন্য। তোমরা পারবে মা ফাউন্ডার ফাদারসদের স্বপ্নের আমেরিকাকে তাদের চাওয়ার মতো করে গড়তে। গড ব্লেস ইউ অল।’

‘ধন্যবাদ স্যার। আমি আসি।’ অ্যানজেলা বলল।

‘অনেক ধন্যবাদ মা। এস। কি ঘটছে তোমাকে সব জানানো হবে।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

‘গুড মর্নিং স্যার।’ বলে গাড়ি থেকে নেমে গেল অ্যানজেলা।

অ্যানজেলা এগোলো তার বাড়ির গেটের দিকে। স্টার্ট নিল জর্জ আব্রাহাম জনসনের গাড়ি।

জর্জ আব্রাহাম জনসন তার সহকারীদের নিয়ে শিমন আলেকজান্ডারের বাড়ি থেকে কম্পিউটার ডিস্কগুলো এবং সিসিটিভি’র মনিটর ডিস্কগুলো পরীক্ষা শেষ করেছে। কনফিডেন্সিয়াল পার্সোনাল ফাইল তিনটি নিজেই দেখছে জর্জ আব্রাহাম জনসন। শিমন আলেকজান্ডারের বাড়ি থেকে আসার সময় গাড়িতে বসেই শিমনের ডাইরির উপর চোখ বুলিয়ে নিয়েছে জর্জ আব্রাহাম জনসন। ডাইরির অর্ধেক পর্যন্ত লেখা। কিন্তু কিছু লেখা দেখে বিস্মিত হয়েছে জর্জ আব্রাহাম জনসন। ডাইরিতে কয়েকটা হিব্রু ভাষায় গল্প লেখা। গল্প গুলোর মধ্যে প্রেমের গল্প রয়েছে, বিজ্ঞানের কল্পকথা রয়েছে, রয়েছে পর্যটকদের অভিযানের গল্প। কিছুটা পড়েছেও জর্জ আব্রাহাম। সবচেয়ে বিস্ময়ের যে ব্যপারটা লক্ষ করেছে, সেটা হলো, ডাইরির প্রতিটি পাতায় কিছু শব্দকে মার্কার দিয়ে কালার করা। বিষয়টা বিস্ময়কর ঠেকেছে জর্জ আব্রাহামের কাছে। রাতে শুতে গিয়ে ডাইরির ঐ বিষয়টা নিয়ে ভেবেছে। শেষে আকস্মিকভাবে একটা সমাধান খুঁজে পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছে সে।

জর্জ আব্রাহাম জনসনের দুই চোখ ‍ঘুমে জড়িয়ে এসেছে মাত্র।

তখনদ বেড সাইডে ছোট্ট টেবিলে লাল টেলিফোন বেজে উঠল।

চোখ খুলে একবার তাকাল লাল টেলিফোন সেটটির দিকে। তারপর লাফ দিয়ে উঠে বসেই টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

প্রেসিডেন্টের টেলিফোনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ এই লাল টেলিফোনের।

‘ইয়েস এক্সিলেন্সি। আমি জর্জ আব্রাহাম।’ টেলিফোন রিসিভার তুলে নিয়েই বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

‘মি. জর্জ, আমি ঘণ্টখানেক আগে সফর থেকে ফিরেছি। এসে আপনার রিপোর্ট পেয়েছি। রিপোর্ট আমি কয়েকবার পড়েছি। রিপোর্টের সব বিষয় স্পষ্ট নয়। কিন্তু বিপজ্জনক কিছু তথ্য রয়েছে। আমি এই মুহূর্তেই এ নিয়ে আলোচনা করতে চাই। বুঝতে চাই আমি সবকিছু। প্লিজ, আপনি আধা ঘণ্টার মধ্যে আসুন। সবাইকেই আমি বলছি।’ বলল মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

‘ধন্যবাদ এক্সিলেন্সি প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি আসছি এক্সিলেন্সি।’ জর্জ আব্রাহাম বলল।

‘ধন্যবাদ জর্জ আব্রহাম। আসুন। ও.কে।’ বলল প্রেসিডেন্ট।

জর্জ আব্রাহাম টেলিফোন রিসিভার ক্যাডলে রেখে দ্রুত বেরিয়ে এল বেড থেকে।

তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিয়ে জর্জ আব্রহাম জনসন শিমন আলেকজান্ডারের ডাইরিটা নিয়ে স্টাডিতে গিয়ে বসল। হাতঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে মনোযোগের সবটাই নিবিষ্ট করল ডাইরির মধ্যে। প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকের আগে ডাইরির সবটা বিষয় তার কাছে পরিষ্কার হতে হবে।

বৈঠক বসেছে প্রেসিডেন্ট ভবনের সিচুয়েশন রুমে।

বিশাল হাফরাউন্ড টেবিলের রাউন্ড অংশে বসেছে ছয়জন। বসেছে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা কমিটির ছয়জন সদস্যই। বাম দিকের প্রান্তে বসেছে প্রেসিডেন্টর নিরাপত্তা উপদেষ্ট ড. রন রবার্টসন, তারপর বসেছে সিআই প্রধান এ্যাডমিরাল মাইকেল মরিসন, সশস্ত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল লিংকন লিভিংস্টেন, সশস্ত্রবাহিনীর গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল শেরউড এবং একদম ডান প্রান্তে এফবিআই প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসন। টেবিলের অন্য প্রান্তে প্রেসিডেন্সিয়াল চেয়ার।

প্রেসিডেন্টের চেয়ার খালি।

ঠিক রাত ১২ টা বাজতে এখনও এক মিনিট বাকি। ঠিক ১২ টায় সিচুয়েশন রুমের প্রেসিডেন্সিয়াল দরজা খুলে গেল।

প্রেসিডেন্ট প্রবেশ করলেন সিচুয়েশন রুমে।

সবাই উঠে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাল। সাবার সাথে হ্যান্ডশেক করে নিজের চেয়ারে বসল প্রেসিডেন্ট। বসেই

প্রেসিডেন্ট বলল, ‘ওয়েলকাম অল জেন্টেলম্যান। দুঃখিত মধ্যরাতে সবাইকে কষ্ট দিয়েছি।’

সবাই তাকাল জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে। উপস্থিতদের মধ্যে তিনিই বয়সে সবচেয়ে প্রবীণ, সম্মানিত।

‘ইয়োর এক্সিলেন্সি প্রেসিডেন্ট, মধ্যরাতের এই আহবানে আমরা আনন্দ ও গৌরব বোধ করছি। দেশের বিষয়ে আলোচনায় আপনার সাথে শরিক হবার সুযোগ দেয়ায় আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।

‘ধন্যবাদ জর্জ আব্রাহাম। গড ব্লেস ইউ অল।’

কথার শেষে একটু থেমেই আবার বলে উঠল প্রেসিডেন্ট, ‘আমি সবাইকে সংক্ষিপ্ত ব্রিফ পাঠিয়েছি। অতএব, সমস্যার পরিচয় সবাই জেনেছেন। তবু আমি ড. রন রবার্টসনকে সংক্ষেপে বিষয়টা তুলে ধরতে বলছি।’

প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অন্য সবাইকে সম্বোধন করে বলতে শুরু করল,‘মি. আহমদ মুসাকে যারা কিডন্যাপ করেছিল, তাদের হেড কোয়ার্টার আমাদের কব্জায় এসেছে। সেখানে প্রাপ্ত দলিল দস্তাবেজ থেকে মারাত্মক কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। মি. আহমদ মুসাকে কিডন্যাপকারী মূল সংগঠন Army of Man’s Future-FOAM-এর সামরিক শাখা H3 বা `Hand of the High Hands’-এর দলিল দস্তাবেজ থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে, এটা অস্ত্র গবেষণার একটা প্রতিষ্ঠান। তারা বিপজ্জনক দুই ধরনের অস্ত্র বানিয়েছে বা বানাচ্ছে। তার একটা হলো, ‘ম্যাগনেটিক ফায়য়ার ওয়েভ’ (MFW), অন্যটি ‘ম্যাগনেটিক ডেথ ওয়েভ’ (MDW), প্রথম অস্ত্রটি কি তা আমরা জানলেও এই অস্ত্র আমাদের কাছে নেই। এই অস্ত্র সাইলোতে প্রটেকটেড অবস্থাতেও পারমাণবিক অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্রসহ সব ধরনের অস্ত্র ধ্বংস করতে পারে এই অস্ত্র। দ্বিতীয় ধরনের অস্ত্র MDW আমাদের কাছে।

অত্যন্ত গোপনে ও অত্যন্ত ফলপ্রসূ এই অস্ত্র। এই অস্ত্রের মাধ্যমে টার্গেটের অধীন সব ধরণের অস্ত্র, ইলেকট্রনিক ও মেটালিক সব স্থাপনা নীরবে, লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পূর্ণ অকেজো করে দিয়ে টার্গেটেড দেশগুলোকে হাতের মুঠোয় আনা যায়। এই গোপন অস্ত্র দুনিয়ার আর কারও কাছে নেই। কিন্তু প্রাপ্ত প্রমাণ মতে FOAM-এর ‘এইচ থ্রি’ সংস্থা এই অস্ত্র তৈরি করেছে বা করছে। এই দুই ভয়াবহ অস্ত্রই আমাদের উদ্বেগের বিষয়। এই অস্ত্র কেন, এর নির্মাতাদের উদ্দেশ্য কি? এখন করণীয় কি? এই প্রশ্নগুলোর ত্বরিত সমাধান আমাদের প্রয়োজন।

থামল প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা রন রবার্টসন।

প্রেসিডেন্ট বলল, ‘ধন্যবাদ রন রবার্টসন।

বলে প্রেসিডেন্ট তাকাল অন্য সবার দিকে। বলল, মি. রবার্ট যে তিনটি জিজ্ঞাসা তুলে ধরেছেন, তার বাইরে আরও কিছু প্রশ্ন আছে।

ষড়যন্ত্রকারীদের প্রকৃত পরিচয় কি? তাদের প্রকৃত পরিচয় পেলে তাদের উদ্দেশ্যও সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত এই অস্ত্র নির্মাতারা আহমত মুসাকে কিডন্যাপ করেছিল কেন? আর শেষ জিজ্ঞসাটা আমাদের সামনে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটা হলো আমরা তাৎক্ষণিক কোন বিপদের সম্মুখীন কিনা?‘

একটু থামল প্রেসিডেন্ট। তারপর জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে চেয়ে বলল, ‘গোটা বিষয় প্রত্যক্ষভাবে ডীল করছেন মি. জর্জ আব্রাহাম। তিনিই প্রথম প্রশ্নগুলোর উপর আরোচনা করুন, আমরা চাই।’

সবাই তাকাল জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে।

জর্জ আব্রাহাম সোজা হয়ে বসল। বলল, ‘ইয়োর এক্সিলেন্সি মি. প্রেসিডেন্ট, অস্ত্র দু’টির পরিচয় সম্পর্কে মি. রন যা বলেছেন, সংক্ষেপে তার চেয়ে বেশি বলার কিছু নেই। প্রশ্ন দাঁড়ায় অস্ত্রগুলো কি তৈরি হয়েছে, না তৈরী হচ্ছে। এ বিষয়ে সত্যিকার কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আহমদ মুসা গাড়ি নিয়ে নদীতে জাম্প করার আগে অ্যানজেলকে যা বলেছিল, তা থেকে আমার মনে হয়, অস্ত্রগুলো তৈরি হয়ে গেছে। আহমদ….

জর্জ আব্রাহামের কথার মাঝখানেই প্রেসিডেন্ট বলল, ‘স্যরি মি. জর্জ আব্রাহাম। আহমদ মুসা মিস অ্যানজেলাকে কি বলেছিলেন?

‘আহমদ মুসা বলেছিলেন, আমার ধরা পড়া চলবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি বিষয়ে গুরুতর একটা তথ্য আছে আমার কাছে।’

জর্জ আব্রাহামের কথা শুনের প্রেসিডেন্টসহ অন্য সবার চোখে-মুখে উদ্বেগের কালো ছায়া নেমে এল।

বলল উদ্বিগ্ন প্রেসিডেন্ট, ‘ধন্যবাদ জর্জ আব্রাহাম, আপনি ঠিকই বলেছেন, আহমদ মুসার এই কথার অর্থ অস্ত্র নির্মিত হওয়ার কথাই বুঝায়। কিন্তু আমার আশাংকা হচ্ছে, আর কোন গুরুতর তথ্য আহমদ মুসার কাছে আছে কিনা? তাঁর মতো শান্ত, ঠাণ্ডা মনের মানুষের উদ্বেগ দেখে আমার এ রকমটাই মনে হচ্ছে।’

‘মি. প্রেসিডেন্ট আমার মনও এটাই বলছে।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।

‘ঠিক আছে, ধরে নেয়া হলো অস্ত্র দু’টোই প্রস্তুত হয়েছে, একদম রেডি। কিন্তু উদ্দেশ্য কি তাদের?

‘মি. প্রেসিডেন্ট এ প্রশ্নেরও জবাব আমাদের কাছে নেই। ওরা ওদের হেড কোয়ার্টার ত্যাগ করার আগে সব ডকুমেন্ট ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। ধ্বংসস্তূপ থেকেই অমরা কিছু কিছু তথ্য উদ্ধার করেছি। কিছু ডকুমেন্ট পেয়েছি আমরা শিমন আলেকজান্ডারের বাড়ি থেকে। সেগুলোর অধিকাংশ অজ্ঞাত কোন প্রজেক্ট বড় বড় খরচের হিসাব। আর তার গোপন ডাইরিতে পেয়েছি ‘ফোম’-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু কথা। ‘ফোম’ হবে ভবিষ্যৎ মানব জাতির সেভিয়ার বিশ্বশান্তির রক্ষক, এক বিশ্বরাষ্ট্রের জনক, লর্ড জিহোবার প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ক। এসব থেকে যড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যের কিছু পরিচয় পাওয়া যায়, কিন্তু অস্ত্রের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয় না।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।

‘ঠিক মি. জর্জ, শিমন আলোকজান্ডারের ডাইরি থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের পরিচয় অনকেখানিই জানা গেল, তাদের উদ্দেশ্যও জানা গেল। কিন্তু আমেরিকার মাটিতে এই সব ভয়াবহ অস্ত্রের আয়োজন কেন তা বুঝা যাচ্ছে না। তাহলে করণীয় আমরা কিভাবে ঠিক করবো?’ বলল প্রেসিডেন্ট। তার কণ্ঠে কিছুটা হতাশা।

‘এক্সিলেন্সি, অস্ত্র তৈরি হয় ব্যবহারের জন্যে এবং কোন পক্ষকে টার্গেট করেই। অতএব FOAM-এরও টার্গেট কেউ আছে। সেটা কে? এ প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। আমেরিকার মাটিতে এ অস্ত্র তৈরি হয়েছে, সুতরাং আমেরিকাই টার্গেট, এটা হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন আছে এক্সিলেন্সি। অস্ত্রগুলো যে আমেরিকায় তৈরি হয়েছে বা আমেরিকায় জমা করা হয়েছে, এর কোন প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। যে হেড কোয়ার্টার আমাদের হাতে এসেছে, সেখানে অস্ত্র-গবেষণারও কোন আলামত আমরা পাইনি। অস্ত্র কোথায় তৈরি হয়েছে, কোথায় জমা করা হচ্ছে, সেটাও অনুসন্ধানের মধ্যে থাকবে। সব মিলিয়ে এ বিষয়গুলো আরও অনুসন্ধান ছাড়া নিশ্চিত কিছু বলা ও করণীয় ঠিক করা সম্ভব নয়। একটাই আমি করণীয় হিসাবে সাজেস্ট করবো। সেটা হলো, ঐ দুই অস্ত্র থেকে আমাদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে অবিলম্বে কাজ করা দরকার।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।

গম্ভীর প্রেসিডেন্ট। কপালে তার হতাশার যে বলি রেখা দেখা যাচ্ছিল তার আরও গভীর হলো। বলল প্রেসিডেন্ট সিআইএ প্রধানকে লক্ষ করে, ‘বলুন এ্যাডমিরাল মরিসন।’

‘এক্সিলেন্সি, আমি মি. জর্জ আব্রাহমের সাথে একমত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নগুলো, অস্ত্রগুলো কার জন্যে, উদ্দেশ্য কি, তার কোন নিশ্চিত জবাব আমাদের কাছে নেই। আহমদ মুসাকে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাঁর কাছে মারাত্মক তথ্য রয়েছে, যার কারণে তিনি বলেছিলেন ‘যে কোন মূল্যে তারা আমাকে ধরবে, যে কোন অবস্থায় আমাকে মুক্ত থাকতে হবে।’ তার মুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটির প্রশ্নটিকে। আমার ধারণা এক্সিলেন্সি তথ্য তাঁর কাছে আছে।’ বলল সিআইএ প্রধান।

প্রেসিডেন্ট তাকাল জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে। বলল, ‘মি’ জর্জ আহমদ মুসার ব্যাপারে আপনারা সর্বশেষ কি ভাবছেন। নদীর প্রায় সবটাই আপনারা স্ক্যান করেছেন, কোথায় যেতে পারে, তাঁর কি হতে পারে সব সম্ভাবনা নিয়ে আপনারা ভেবেছেন। সবশেষে বিষয়টা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?’

‘এক্সিলেন্সি মি. প্রেসিন্ডেন্ট, নদীতে স্ক্যান, অনুসন্ধান ছাড়াও আমরা রক ক্রিক নদী এবং পটোম্যাক নদীর মধ্যে যেসব টিউব সাবমেরিন আসা যাওয়া করেছে, তার সবগুলোই চেক করেছি। তারাও এ ব্যাপারে বিছু বলতে পারেনি। আমাদের সন্দেহ, আনসিডিউলড কিংবা অপরিচিতি টিউব সাবমেরিনও চলাচল করে থাকতে পারে। সে রকম কোন টিউব সাবমেরিন তাঁকে তুলে নিয়ে যেতে পারে। এই সন্দেহ আহমদ মুসার অনুসন্ধানকে আরও জটিল করে তুলেছে।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।

জর্জ আব্রাহাম থামতেই সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল শেরউড বলল, ‘এক্সাকিউজ মি এক্সিলেন্সি মি. প্রেসিডেন্ট, আমি আহমদ মুসাকে যতদূর জানি তিনি যদি আবার শশ্রুর হাতে পড়ে গিয়ে না থাকেন, ঈশ্বর করুন তিনি যেখানে যেভাবে থাকুন ঠিক দুঃসময়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন।’

‘আমি জেনারেল শেরউডের সাথে একমত মি. প্রেসিডেন্ট। যে কোন অবস্থায় তার উপর নির্ভর করা যায়। কারও উপর বিপদকে নিজের বিপদ বলে তিনি মনে করেন। ঈশ্বর তাকে সাহায্য করুন।’ বলল জর্জ আব্রাহাম। তার কথাগুলো আবেগে ভারি।

‘আহমদ মুসাকে আমিও জানি। নিঃস্বার্থ এক বন্ধু তিনি আমাদের। পরার্থে জীবন যাদের তিনি তেমনই একজন মানুষ। তাঁর উপর নির্ভর করতে পারি আমরা। কিন্তু সে নির্ভরতার মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা আছে। অথচ আমরা জরুরি অবস্থায় পতিত।’ বলল প্রেসিডেন্ট।

‘এক্সিলেন্সি মি. প্রেসিডেন্ট, এই অনিশ্চয়তার বিষটার কথা আমাদের এই মুহূর্তে ভাবা প্রয়োজন, সেটা হলো MFW বা MDW-এর বিরুদ্ধে আমরা কি করবো? প্রতিকারমূলক আমাদের…..।’

মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল লিংকন লিভিংস্টোনের কথার মাঝখানে উঠে দাঁড়ালো জর্জ আব্রাহাম জনসন। তার হাতে ওয়্যারলেস। বলল, ‘এস্কিউজমি মি এক্সিলেন্সি, স্যরি টু ইন্টারুপট। ওয়্যারলেস জরুরী সিগন্যাল দিচ্ছে। দু’বার রিফিউজ করার পর তৃতীয় সিগন্যাল এসেছে।’

‘মি. জর্জ আব্রাহাম, আপনি কল অ্যাটেন্ড করে আসুন। প্লিজ জেনারেল লিংকন…….।’ সংগে সংগেই বলল প্রেসিডেন্ট।

জর্জ আব্রাহাম সরে গেল ঘরটার একপ্রান্তে।

প্রেসিডেন্ডসহ সবাই নীরব।

অপেক্ষা জর্জ আব্রাহামের ফিরে আসার। ঘরের প্রান্তে পৌঁছেই জর্জ আব্রাহাম ওয়্যারলেসে কল অন করে কথা শুরু করেছে।

কল অন করে নিজের পরিচয় দিয়ে ওপারের কথা শোনার পর তার বিস্ময় বিজরিত কণ্ঠ থেকে একটা উচ্চারণ বেরিয়ে এল, ‘আহমদ মুসা! আপনাকে খুঁজে আমরা হয়রান। কোথায় আপনি?’

জর্জ আব্রাহামের এই উচ্ছাসপূর্ণ কথাগেুলো ঘরের মাঝের টেবিলে বসা প্রেসিডেন্টসহ সবাই শুনতে পেল। সবার চোখ মুখের রং পাল্টে গেল। সবাই তাকাল জর্জ আব্রাহামের দিকে। উন্মুখ হয়ে উঠল সবাই।

কিন্তু কোন কথা নেই জর্জ আব্রাহামের মুখে। সে শুধু শুনছেই। আর মাঝে মোঝে ও.কে, ও.কে করছে। এক সময় চাপা স্বরেই বলে উঠল, ‘ঐ ব্যাপারে কোন নিশ্চিত তথ্য আমাদের কাছে নেই।

আবার চুপচাপ জর্জ আব্রাহাম জনসন। ওপারের কথা শুনছে সে। শোনার এক পর্যায়ে সে বলে উঠল, ‘কিন্ত আপনি একা! ব্যাপারটা কি ঝুকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে না? যদি আপনি………….।’

কথা থেমে গেল জর্জ আব্রাহাম জনসনের। ওপার থেকে আহমদ মুসা তার কথার মাঝখানেই কথা বলে উঠেছে।

আবার কিছুক্ষণ কথা শুনেই চলেছে জর্জ আব্রাহাম জনসন। এক সময় সে বলে উঠল, ‘ও.কে, ঠিক আছে। কিন্তু আপনার সাথে যোগাযোগ রাখব কিভাবে?

আবার ওপারের কথা শুরু হলো। শুনতে লাগল জর্জ আব্রাহাম জনসন। কথা শেষ করে যখন জর্জ আব্রাহাম জনসন টেবিলে ফিরে এল। তখন টেবিলে প্রেসিডেন্টসহ সবাই অপেক্ষার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। সবার চোখ তার দিকে নিবদ্ধ।

কথা বলল প্রেসিডেন্ট, ‘আহমদ মুসা কোথায়? তিনি বন্দি, না মুক্ত। কোথা থেকে কথা বললেন?

জর্জ আব্রাহাম জনসন চেয়ারে বসতে বসতে বলল, ‘এক্সিলেন্সি, ওয়্যাররেসে কথাটা তিনি বলতে চাননি। তবে তিনি বলেছেন যেখানে তিনি আছেন তা সভ্যতার সকল সকল সুযোগ থেকে দূরে। যে ওয়্যারলেসে কথা বলছেন তা অনেকটাই হাতে তৈরি।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

‘এবার বলুন জর্জ আব্রাহাম জনসন, কি জানা গেল আহমদ মুসার কাছ থেকে?’ বলল প্রেসিডেন্ট।

বলতে শুরু করল জর্জ আব্রাহাম জনসন, ‘এক্সিলেন্সি মি. প্রেসিডেন্ট, ফোম- এর অস্ত্র দু’টি সম্পর্কে আরাত্মক তথ্য জানিয়েছেন আহমদ মুসা! বলেছেন, অস্ত্র দু’টিরই প্রাথমিকভাবে টার্গেট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। MFW অস্ত্রটি MDW –এর বিকল্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংসের জন্য দ্বিতীয় অস্ত্রটি ব্যবহার করাই তাদের টার্গেট। কিন্তু ওরা ম্যাহনেটিক ডেথ ওয়েভ (MDW) অস্ত্রটি পুরোপুরি কার্যকরি করতে পারেনি। ট্রিগার পিনটি তাদের সম্পূর্ণ হয়নি। এই অবস্থায় যদি তাদের ষড়যন্ত্র ধরা পড়ে যায় তাহলে তারা বিকল্প হিসেবে ম্যাগনেটিভ ফায়ার ওয়েভি অস্ত্রটি ব্যবহার করবে। এর পরই তিনি জানতে চেয়েছেন, ম্যাগনেটিভ ফায়ার ওয়েভ অস্ত্রটি মোকাবেলার কোন নিশ্চিত ব্যবস্থা আছে কি না? আমি তাকে ইতিবাচক জবাব দিতে পারিনি। কারণ আমি যতটা জানি, এর মোকাবিলায় কোন অস্ত্র আমাদের নেই। এই অস্ত্র কারো কাছে আছে বলে আমি জানিও না। তাই এর প্রতিষেধক নিয়ে আমরা ভাবিনি।’ থামল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

জর্জ আব্রাহাম জনসন থামতেই প্রেসিডেন্ট বলে উঠল, ‘ধন্যবাদ জর্জ আব্রাহাম জনসন আপনি ঠিকই জানেন। এরপর আহমদ মুসা কি বলেছেন?’

MFW যদি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করা থাকে, আর যদি তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা না করা যায়, তাহলে ভয়ানক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আহমদ মুসা ওদের হাত থেকে পালানো অর্থ হলো মার্কিন সরকারের সাথে তার সাক্ষাত হওয়া এবং তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয় মার্কিন সরকার জানতে পারা। এই অবস্থায় মার্কিন সরকার অফেনসিভে যাবার আগেই তারা অফেনসিভে চলে আসবে এবং উন্মাদের মতো MFW কে ব্যবহার করবে। তাদের এই উন্মাদ পদক্ষেপকে ডিলে করানোর একমাত্র পথ হলো তাদের এই ধারণা দেয়া যে, আহমদ মুসা মরে গেছে বা মার্কিন সরকারের সাথে তার কোন দেখা সাক্ষাত হয়নি। তাহলেই শুধু MFW-এর ব্যবহার আপাতত বন্ধ রেখে কারা আহমদ মুসার সন্ধান করবে এবং মার্কিন সরকারের উপরও চোখ রাখবে।’ থামল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

জর্জ আব্রাহাম জনসন থামলেও কেউ কোন কথা বলল না। সবার চোখে স্থির দৃষ্টি। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে। বিপদের আস্মিকতায় স্তম্ভিত ও হতভম্ব যেন সবাই।

ধীরে ধীরে তাদের চোখে-মুখে নেমে এল আতংকের ছায়া। খোদ প্রেসিডেন্টের মনে হলো, তার চারিদিকের আলো যেন দপ করে নিভে গেল। সে যেন েএক গভীর খাদের মুখে দাঁড়িয়ে। কেঁপে উঠল প্রেসিডেন্ট।

‘আহমদ মুসা কি এই জন্যই আত্মগোপনে।’ বলল প্রেসিডেন্ট। তারপর প্রেসিডেন্ট সহজ হওয়ার চেষ্টা করল।

‘এক্সিলেন্সি, তিনি প্রথমে আত্মরক্ষার জন্যেই আংশিকভাবে একটা আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু পরে গোটা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করেছেন, সেই সাথে আড়ালে থাকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এর পেছনে তার আরও উদ্দেশ্য আছে। বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

‘সেটা কি ‘ বলল প্রেসিডেন্ট।

‘আহমদ মুসা নিজের থেকেই খুব বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি একটা স্থানকে MFW- এর মোতায়েন কেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সেখানে তিনি অভিযান চালাতে চান। তার মতে বর্তমান অবস্থায় ওদের মোবাকেলায় এটাই একমাত্র নিশ্চিত পথ। তিনি………….।’

জর্জ আব্রাহামের কথার মাঝখানেই প্রেসিডেন্ট বলে উঠল, ‘স্যরি মি. জর্জ, MFW মোতায়েনের স্থানটা কি আহমদ মুসা জানিয়েছে?’

‘জি না, এক্সিলেন্সি। আমি এ ব্যাপারে তাকে বলেছিলাম। তিনি বলেছেন, ‘বিষয়টা একাধিক কানে যাওয়ার মধ্যে ঝুঁকি আছে আর সেটা এমন জায়গা, যেখানে বাইরে থেকে যে কোন অভিযান পরিচালনা ঝুকির মধ্যে পড়তে পারে। তাদের টর্গেট করে সরকারী তরফের সামান্য অফেনসিভ সম্পর্কে সামান্য সন্দেহ হলেই তারা MFW- কে ব্যবহার করে বসতে পারে। আমি সেই চেষ্টাই করছি।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।

প্রেসিডেন্টের মুখে গভীর চিন্তার ছাপ।

সংগে সংগেই কিছু বলল না প্রেসিডেন্ট। কয়েক মুহূর্ত পরে তাকাল নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. রন রবার্টসনের দিকে। বলল, ‘আপনার ভাবনা বলুন ড. রন।’

‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমরা এক জটিল ও বিপজ্জনক অবস্থায় পড়েছি। যার উপর বলতে গেলে আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আহমদ মুসার উপর নির্ভর করা ছাড়া কোন উপায় নেই আমাদের। আহমদ মুসা লোকেশনটা জানালে হয়তো আমাদের হাতেও একটা অপশন থাকতো। তবে না জানানোর মধ্যে যুক্তি আছে। তথ্য লিক হবে না এমন নিশ্চিত গ্যারান্টি আমরা দিদে পারবো বলে আমার মনে হয় না। আর তথ্যটা যেখানে অত্যন্ত বিপজ্জনক, সেখানে ঐ রকম সাবধানতা অবলম্বন করা স্বাভাবিক। তাছাড়া আহমদ মুসা ঠিকিই বলেছেন, যে ধরণের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তাতে গোপন ও এক বা দু’একজনের ছোট টিমের অপারেশনেই প্রয়োজন।’ প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা রন রবার্টসন বলল।

‘আপনারা বলুন, এ অবস্থা থেকে ওয়ে আউটের আর কি পথ আছে আমাদের সামনে?’ বলল প্রেসিডেন্ট সবাইকে লক্ষ করে।

‘এক্সিলেন্সি মি. প্রেসিডেন্ট, উদ্যত হয়ে ওঠা একটা ধ্বংসকরি অস্ত্রের মুখে যে ধরণের সাবধানতা প্রয়োজর, আহমদ মুসা আমাদের হয়ে সে ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করেছেন, তার জন্য তার প্রতি আমার শত সহস্র ধন্যবাদ। তার সাথে আমিও একমত। তবে আমার আশংকা তাকে কোন ব্যাক আপ না দিলে তার জন্যে এই ভয়ংকর শক্তির বিরুদ্ধে লড়া কঠিন হবে।’ বলল সিআইএ প্রধান এ্যাডমিরাল মাইকেল মরিসন।

‘মি. প্রেসিডেন্ট, এ্যাডমিরাল ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আহমদ মুসার অনিচ্ছায় ব্যাক আপ দেয়ার মতো কিছূ করার সুযোগ আমরা দেখছি না। আমরা তাকে এটুকু বলতে পারি, তার কিছু প্রয়োজন আছে কিনা বা আমাদের কিছু করার আছে কিনা।’ বলল জেনারেল শেরউড, সামরিক গোয়েন্দা সশস্ত্রবাহিনী প্রধান।

জেনারেল লিংকন সমর্থন করল জেনারেল শেরউডকে।

এর মধ্যে জর্জ আব্রাহাম জনসন ইশারায় প্রেসিডেন্টের অনুমতি নিয়ে একটু বাইরে গিয়েছিল।

সে ফিরে এল এ সময়।

‘এক্সকিউজ মি!’ বলে একটা চিরকুট এগিয়ে দিল প্রেসিডেন্টকে।

প্রেসিডেন্ট চিরকুটটা হাতে নিয়ে চোখ বুলাল। তাতে লিখাঃ ‘আহমদ মুসার ওয়্যারলেসের ওয়েভলেংথ একদম অপরিচিত এবং চলমান ধারার সাথে মিলে না। ওয়্যারলেসের লোকেশনটা ডেথ ভ্যালির আশেপাশের কোন এক স্থানে। ওয়্যারলেসটির ওয়েভলেংথে হিট করা হয়েছিল, কোন রেসপন্স নেই। একদম ডেড। মনে হয় প্রাইভেট কোন ওয়্যারলেস, অকেশনালি ইউজ হয়।’

পড়া শেষ করে প্রেসিডেন্ট সবার দিকে তাকিয়ে আহমদ মুসা যে ওয়্যারলেসে কথা বলেছেন, তার তথ্যগুলো সবাইকে জানাল। শুধু লোকেশান সংক্রান্ত তথ্য চেপে গেল।

একটু থেমে প্রেসিডেন্ট আবার বলল, ‘আলোচ্য বিষয়ে আমাদের কি আর কোন কথা আছে?’

‘গোপন সংগঠন ‘ফোম’ ও এইচ কিউব সম্পর্কে আমাদের যে অনুসন্ধান চলছে, তা চলবে। অন্যদিকে আহমদ মুসাকে তার অভিযানে সাহায্য করার সব রকম সুযোগই আমরা গ্রহণ করবো।’ জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।

‘অবশ্যই জর্জ, আমাদের নিজস্ব অনুসন্ধান আমাদের ওয়েতে চলবে। তবে তা যেন কোনও ভাবেই আহমদ মুসার কাজে বাধা সৃষ্টি না করে।’ বলল প্রেসিডেন্ট।

‘ইয়েস এক্সিলেন্সি। সে ব্যাপারে আমরা সাবধান থাকব।’ জর্জ আব্রাহাম বলল।

জর্জ আব্রাহাম কথা শেষ করার পর কয়েক মুহূর্তের নীরবতা। নীরবতা ভাঙল প্রেসিডেন্ট। বলল, ‘আমরা ঈশ্বরকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, একটা ভয়াবহ ষড়যন্ত্র তিনি ধরিয়ে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞ আমরা আহমদ মুসার কাছে। তিনি কিডন্যাপ না হলে এবং শত্রুর কবল থেকে তিনি পালাতে না পারলে ভয়াবহ এই ষড়যন্ত্র আমাদের অজানাই রয়ে যেত। আমরা আহমদ মুসার কাছে আরও কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমেরিকার হয়ে এক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেমেছেন। আমরা তাঁকে এই কাজের অ্যাসাইনমেন্ট দেই নি, অনুরোধও করিনি। তিনি নিজ থেকেই এ দায়িত্ব নিয়েছেন। একেই বলে পরার্থে জীবন। একেই বলে প্রকৃত মানবতা, মানুষকে ভালোবাসা এরই নাম। এই ভালোবাসার পথে স্থান-কাল-পাত্র কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। মানুষকে এমন নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার জন্যে মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে হয়। আহমদ মুসা বলেন, তাঁকে মানুষ বানিয়েছে ইসলাম, মানে তার ধর্ম।’

প্রেসিডেন্ট একটু থামল। তার কণ্ঠ ভারি। মুখ গম্ভীর। চোখে ভাবলেশহীন দৃষ্টি। বলল আবার, ‘অথচ এই ধর্ম ইসলামকে আমরা অনেকে সন্ত্রাসের উৎস বলেছি। আহমদ মুসার মতো নিষ্ঠাবান মুসলমানদের সন্ত্রাসী বলেছি। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজীকে সন্দেহ করেছি। বাস্তবতা ও আমাদের রাজনীতির মধ্যে যে কত দূরত্ব, আহমদ মুসা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন।’ থামল প্রেসিডেন্ট।

তার কণ্ঠে অপরিচিত এক আবেগ।

মুহূর্তকাল চুপ থেকে বলল প্রেসিডেন্ট, ‘প্রিয় সহকর্মী সবাইকে ধন্যবাদ। আমরা উঠছি।’

প্রেসিডেন্ট উঠে দাঁড়াল।

সবাই উঠে দাঁড়াল তার সাথে।

এফবিআই প্রধান প্রেসিডেন্টের ‍রুম থেকে বেরিয়ে সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে করিডোরের এক পাশে সরে গিয়ে টেলিফোন করল সারা জেফারসনকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার সাথে জর্জ আব্রাহামের দেখা হওয়া দরকার এই রাতেই বা সকালে।

পরবর্তী বই

ডেথ ভ্যালি