৬. রক্ত সাগর পেরিয়ে

চ্যাপ্টার

জেনারেল বোরিস নিজের চুল যেন নিজেই ছিঁড়ছিল। রাগে-দুঃখে ক্ষোভে তাকে বড়ই বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে। হাত দুটি পিছনে বেঁধে ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছে সে আহত বাঘের মত। লেনিন স্মৃতিপার্কে তার লোকরা কিছুই করতে পারলনা। উল্টো যে গোয়েন্দাদের পাহারায় দেয়া হয়েছিল তারাই জীবন হারাল। সবচেয়ে অসহনীয় তিরিশ ট্রাক সৈন্যের জীবন হানি। এ ব্যর্থতার কোন কৈফিয়ত তার কাছে নেই। মস্কো থেকে টেলিফোন এসেছিল, কোন জবাব জেনারেল বোরিস দিতে পারেনি। তীব্র তিরস্কার এবং ভৎসনার শিকার হয়েছে সে। মস্কো থেকে ‘ফ্র’ প্রধান বলেছে, রাশিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। শুধু জনগন নয়, খোদ সেনাবাহিনীর মধ্যে থেকেও। মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি সরকারকে ডুবাতে পারে বলে আশংকা করা হয়েছে। সুতরাং কোন ব্যর্থতাই আর ক্ষমা করা হবে না। উদ্বেগ বোধ করেছে জেনারেল বোরিসও। পায়ের তলার মাটি যেন ক্রমেই সরে যাচ্ছে। বলতে গেলে গোটা মধ্য এশিয়ার জনগনই সাইমুমের দখলে চলে গেছে। কয়েকটা শহর ছাড়া সৈনিকরাও আজ আর কোথাও বেরুতে পারছে না। গ্রামাঞ্চলের যে লীডারশীপের উপর ভর করে কম্যুনিষ্ট শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হয়েছিল তা আজ একেবারেই ধ্বসে পড়েছে। তুঘরীল তুগানের মত হারিয়ে গেছে সবাই। ক্ষমতার এই ভিত কি আর গড়ে তোলা যাবে?
নির্বাচন কি তাদের সুযোগ এনে দেবে?
ইন্টারকম কথা বলে উঠল এ সময়। ইন্টারকমে পি.এ বলল, স্যার টিটভ এসেছেন, সাক্ষাৎ করতে চান।
-‘আসতে বল’ বলে জেনারেল বোরিস চেয়ারে এসে বসল। নতুন একটা উদ্বেগ উৎকন্ঠার চিহ্ন ফুটে উঠল জেনারেল বোরিসের মুখে। আজ ছিল সুপ্রিম কংগ্রেস এবং রাজ্য কংগ্রেসের নমিনেশন পেপার সাবমিটের দিন। সম্ভবত টিটভ সেই খবরই নিয়ে আসছে। খবর নিশ্চয়ই ভাল হবে।
দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করল টিটভ। তার মুখটা বিষন্ন, বিধ্বস্ত। ধীরে ধীরে টেবিলে এসে বসল টিটভ।
জেনারেল বোরিস তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। তার দৃষ্টিতে একটা ফুঁসে ওঠা ভাব।
টিটভ বসলে জেনারেল বোরিস বলল, বল কি খবর?
-খবর ভাল নয় স্যার।
-জানতে চাই সেটা কি?
-কোন নমিনেশন জমা পড়েনি স্যার। কান্নার মত করুণ কন্ঠস্বর টিটভের।
-কোন নমিনেশন জমা পড়েনি? কেন রূশীয়দের?
-শহরাঞ্চলে রূশীয়দের নমিনেশন জমা পড়েছে। তাদের সংখ্যা সব মিলে দেড়শ’র বেশী নয়। এর মধ্যে কম্যুনিষ্ট সুপ্রিম কংগ্রেসের ৭০ টি এবং রাজ্য কংগ্রেসের ৮০ টি। রূশীয়দেরই রাজ্য কংগ্রেসে ৭০ টি এবং সুপ্রিম সোভিয়েতে ৩০ টি নমিনেশন জমা পড়েনি। এদেশীয় তুর্কীদের তিনশ’ নমিনেশনের একটিও জমা পড়েনি।
কতকটা মুখ ভেংচিয়েই জেনারেল বোরিস বলে উঠল, জমা পড়েনি। যাদের মনোনয়ন দিলে তারা কোথায় গেল?
ক্রোধে মুখটা বিকৃত হয়ে উঠেছে জেনারেল বোরিসের।
-নমিনেশন পেপার জমা দিতে কেউ আসেনি। বাড়িতে ও পাওয়া যায়নি। সবাই পালিয়েছিল। অনুসন্ধান করে সন্ধ্যার দিকে মোট ১০০ জনকে ধরা হয়েছে। অন্যান্যের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনও।
-এই একশ’ জনের নমিনেশন তো জমা করতে পারতে, করনি কেন? জেনারেল বোরিসের চোখে আগুন।
টিটভ দু’হাত কচলে বলল, স্যার বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে সব তথ্য চলে গেছে, এখন কিভাবে……
ধমকে উঠল জেনারেল বোরিস, বিদেশী সাংবাদিকদের কে এ্যালাও করল?
-স্যার কেন্দ্রের নির্দেশে এই অফিস থেকেই তো তাদের পাশ দেয়া হয়েছে।
-নির্দেশ থাকলেই সব কাজ করতে দেয়া যায় না। আন্তর্জাতিক মুখ রক্ষার জন্য কেন্দ্রকে অনেক কিছুই করতে হয় কিন্তু তোমাদের সে দায়- দায়িত্ব নেই। নির্দেশ দিয়েছে, যেতে দেব না, কি হবে?
-এ রকম কোন নির্দেশ আমাদের উপর থাকলে…।
-সবই নির্দেশ দিতে হবে, তোমরা কি করবে, ঘোড়ার ঘাস কাটবে? জেনারেল বোরিস থর থর করে কাঁপছিল রাগে।
কিছুক্ষন কথা বলতে পারল না জেনারেল বোরিস। একটু দম নিয়ে বলল, সেই ১০০ জন যাদের ধরেছ, কোথায় রেখেছ তাদের?
-জনাবিশেক আমাদের এখানে আছে। অবশিষ্টরা বিভিন্ন শহরে।
জেনারেল বোরিস উঠে দাঁড়াল। বলল, চল দেখব সেই হারাম-জাদাদের ধড়ে কয়টা প্রাণ আছে।
টিটভ জেনারেল বোরিসকে নিয়ে তার স্বরাস্ট্র বিভাগের প্রিজনারস রুমে প্রবেশ করল।
চোরের মত কোমরে দড়ি বাঁধা বন্দীরা বসেছিল। জেনারেল বোরিস ও টিটভ ঘরে প্রবেশ করতেই তারা উঠে দাঁড়াল।
জেনারেল বোরিস ঘরে ঢুকেই তাদের উদ্দেশ্য করে বলল, নিমক হারাম কুত্তার বাচ্চারা, তোদের নমিনেশন পেপার কোথায়? হারামজাদার বাচ্চা, এই বিশ্বাসঘাতকতা করতে একটুকু ও চক্ষুলজ্জা হলো না?
সামনেই ছিল উজবেকিস্তানের আহমদ নূরভ। সে বলল, আমরা কুত্তার বাচ্চা হারামজাদার বাচ্চা কিছুই নই। আমরা বিম্বাসঘাতকতা করিনি। আমরা যা করেছি সেটা হল আমরা জাতির বিরুদ্ধে যাইনি, জনগণের বিরুদ্ধে যাইনি।
ক্রোধে চিৎকার করে উঠল জেনারেল বোরিস। পাগলের মত পকেট থেকে পিস্তল বের করে আহমদ নূরভকে লক্ষ্য করে গুলী করতে লাগল সে। তিনটা গুলী শেষ হতেই গুঁড়ো হয়ে যাওয়া মাথা নিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ল আহমদ নূরভ। তারপর পিস্তল ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জেনারেল বোরিস পাশের প্রহরীর কাছ থেকে সাব মেশিনগান হাতে নিল। ট্রিগার চেপে ধরে একবার সেই সাব মেমিন গানটা ঘুরিয়ে নিল বিস্ফোরিত চোখ সেই ঊনিশ জন বন্দীর উপর দিয়ে। চোখের নিমিষে ঊনিশটি লাশ পড়ে গেল মাটিতে।
রক্তের স্রোত বইল মেঝের উপর দিয়ে।
সাব মেশিন গানটা ফেলে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল জেনারেল বোরিস। তার পিছনে পিছনে বেরিয়ে এল টিটভ। তারা প্রায় ধাক্কা খেল দু’জন বিদেশী সাংবাদিকের সাথে। সাংবাদিকদ্বয় তাদের স্টার্ট দেয়া মোটর সাইকেলে চড়ে দ্রুত সরে পড়ল সেখান থেকে। এটা দেখে জেনারেল বোরিস বিষদৃষ্টিতে তাকাল টিটভের দিকে। টিটভ পাশের দু’জন প্রহরীকে নির্দেশ দিল, দেখ হারামজাদাদের পাকড়াও কর। প্রহরী দু’জন গ্যারেজ থেকে গাড়ি নেয়ার জন্য ছুটল।
প্রিজনারস রুম থেকে বেরিয়ে জেনারেল বোরিস পকেট থেকে একটা অর্ডার শিট বের করে তাতে নির্দেশ লিখল নমিনিশন পেপার জমা না দেয়া বিশ্বাসঘাতকদের গুলী করে হত্যার জন্য এই মুহুর্তে। অর্ডার শিটটি টিটভের হাতে তুলে দিয়ে বলল, এখনই রিলে করে দাও সব জায়গায়।
-‘ইয়েস স্যার’ বলে টিটভ দ্রুত চলে গেল তার রুমের দিকে।
পরদিন গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল এই খবর।
‘সমগ্র মধ্য এশিয়া ‘ফ্র’ পরিচালিত কম্যুনিষ্ট সরকারের প্রতি সার্বিক অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে। সেখানকার জনগন কম্যুনিষ্ট সরকার পরিকল্পিত নির্বাচনে অংশ নেয়নি। যাদের কে একান্ত অনুগত ও বংশবদ মনে করে কম্যুনিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোনয়ন দিয়েছিল, তারাও তাদের নমিনেশন পেপার জমা দেয়নি। মনোনয়ন দেয়া সাড়ে তিনশ’ উজবেক, তাজিক, কাজাখ, কিরঘিজ ও তুর্কমেনের একটি নমিনেশন ও জমা পড়েনি। সুতরাং নির্বাচন করে শেষ রক্ষার উদ্যোগটি ও কম্যুনিষ্ট সরকারের ব্যর্থ হয়ে গেল। ইতিপূর্বে ‘ফ্র’ এর কম্যুনিষ্ট সরকার বিশ্বাসঘাতকতা ও আনুগত্যহীনতার অভিযোগ তুলে সেখানকার সরকার ও কম্যুনিষ্ট পার্টি ভেংগে দিয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের বিবরণে প্রকাশ, পরাজয়ের ক্রোধে অন্ধ হয়ে ‘ফ্র’ নমিনেশন জমা না দেয়া তিনশ’ নেতৃস্থানীয় লোককে হত্যা করেছে।’
ফিলিস্তিনের সাইমুম সরকার এবং মিন্দানাও-এ পিসিডা সরকারের চেষ্টাতেই এ খবর গুলো সংগৃহীত হয় এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তার সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ে মধ্য এশিয়ার অভ্যন্তরের রক্তলেখা হাজারো খবর। হৈ চৈ পড়ে যায় গোটা বিশ্বে। তীব্র চাপ সৃষ্টি হয় মস্কোর উপর।

সেনাবাহিনীর সুদৃশ্য একটি ইয়ট মস্কোভা নদীর ক্রেমলিন ঘাটে এসে ভিড়ল। ইয়ট থেকে প্রথমে নামল মার্শাল পিটার কারেনস্কী। তারপর নামল সেনাবাহিনীর ১০ জন জেনারেল।
মার্শাল পিটার কারেনস্কী বয়সের ভারে দুর্বল। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছেন অনেকদিন। অবসরকালে তিনি পিতা মনশেভিক নেতা কারেনস্কীর আদর্শ অনুসরণে গনতান্ত্রিক ও মানবতাবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। জারের বিরুদ্ধে রাশিয়ার গনতান্ত্রিক বিপ্লবের মহান নেতা কারেনস্কীর পুত্র মার্শাল পিটার কারেনস্কীকে সেনাবাহিনী ও জনগণ শ্রদ্ধার সাথে দেখে। সেনাবাহিনীর একটা সর্বোচ্চ প্রতিনিধি দল গিয়ে তাঁকে নিয়ে এসেছে ক্রেমলিনে দেশের হাল ধরার জন্য।
কারেনস্কী ইয়ট থেকে নেমে গাড়িতে উঠতে গিয়ে পাশে রাস্তায় একটা সবুজ লিফলেট পড়ে থাকতে দেখল। ঝুঁকে পড়ে সে তুলে নিল লিফলেটটা। ভিজে গেছে লিফলেটটা তুষার কণায়। তবু নিল সে। তার মনে পড়ছে, গতকাল বিকেলে যখন সে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিল, তখন রাস্তায় সকলের হাতে এই রঙের একটা কাগজ দেখেছে। তার মনে হল এ সেই লিফলেটটাই। গাড়িতে উথে লিফলেটের উপর চোখ বুলাল কারেনস্কী। লিফলেটে সে যা পড়ল সংক্ষেপে এই-
‘স্বৈরাচারী ‘ফ্র’ প্রথমে আড়াল থেকে শাসন পরিচালনা করে, পরে স্বমূর্তিতে ক্ষমতায় এসে রুশ জাতিকে এবং জাতির মান-সম্মানকে ধূলায় লুটিয়ে দিয়েছে। ওদের কোন হৃদয় নেই, ওদের অবলম্বনই হল বন্দুক। এ বন্দুক দেশের চিন্তাশীল-বুদ্ধিজীবীদের উজাড় করেছে, দেশটাকেও। এদের বন্দুক আজ গোটা মধ্য এশিয়ায় রক্তগঙ্গা প্রবাহিত করেছে। সেখানকার প্রতিটি লোক আজ বিদ্রোহী। সেখানে নির্বাচনের শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ নির্বাচন প্রত্যাহার করেছে। ‘খুনি ফ্র’-এর প্রতিশোধ হিসেবে সেখানে হত্যা করেছে নির্বাচন প্রার্থি হতে না চাওয়া শত শত মানুষকে। মানবতা ও গনতন্ত্রের শত্রু ‘ফ্র’ এর কারণে দুনিয়ায় আজ রুশ জাতির মুখ দেখান ভার হয়েছে। এরা ক্ষমতায় থাকলে দেশ জাতি রসাতলে যাবে। সুতরাং মানবতা ও গনতন্ত্রের বিপ্লবকে সফল করার জন্য আপনারা এক যোগে রাস্তায় নেমে আসুন।‘
কারেনস্কীর গাড়ি তখন চলছিল। লিফলেটটা পড়া শেষ হলে কারেনস্কী মুখ তুলে চারদিকে চোখ রাখতেই বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে গেল। এত মানুষ।! এ যে মানুষের সমদ্র। গাড়ি সামনে যতই এগুচ্ছে, মানুষের ভীর ততই বাড়ছে। রেডস্কয়ারে এসে দেখল কোথাও তিল ধারণের স্থান নেই। জনসমুদ্র জুড়ে একটাই শ্লোগান গণতন্ত্র জিন্দাবাদ, মানবতা জিন্দাবাদ, কারেনস্কী জিন্দাবাদ।
কারেনস্কী এবং অন্যান্য জেনারেলদের গাড়ি জনসমুদ্রের মধ্য দিয়ে পথ করে ক্রেমলিনের বেলকণীতে নিয়ে যাওয়া হল। সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল নিলফ একটা দূরবীন কারেনস্কীর হাতে দিয়ে বলল, স্যার চারদিকটা দেখুন।
দূরবীন চোখে লাগিয়ে কারেনস্কী অভিভূত হয়ে গেল। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু মানুষ আর মানুষ, সকল রাস্তা, লেন, বাইলেন মানুষে পরিপূর্ণ।
কারেনস্কী জেনারেল নিলফের সাথে ফিরে এলেন কনফারেন্স হলে। কনফারেন্স হল তখন পরিপূর্ণ। সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা আছে এক পাশে দাড়িয়ে। বসে আছেন দেশের গণতন্ত্রবাদী ও মানবতাবাদী সকল নেতা ও ব্যাক্তিবর্গ।
কারেনস্কী এসে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসল।……
তারপর জেনারেল নিলফ ধীরে ধীরে মাইকের সামনে দাঁড়াল। বলল, মিঃ প্রেসিডেন্ট এবং সমবেত নেতৃমণ্ডলী, দেশের সেবক হিসেবে জনগণের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর যে টুকু করার সেনাবাহিনী তা করেছে। আমাদের দায়িত্ব শেষ। আমরা ফিরে যাচ্ছি আমাদের কাজে। দেশকে নেতৃত্ব দেয়া, এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব আপনাদের।
কথা শেষ করে জেনারেল নিলফ সমবেত সকলের প্রতি একটা স্যালুট দিয়ে কনফারেন্স হল থেকে বেরিয়ে গেল। তার সাথে অন্যান্য জেনারেলরাও। কারেনস্কী এরপর পরামর্শের লক্ষ্যে এক ঘণ্টার জন্য কনফারেন্স মূলতবি ঘোষণা করল।
এক ঘণ্টা পরে আবার সবাই ফিরে এল কনফারেন্স হলে। কারেনস্কী গিয়ে প্রেসিডেন্টের আসনে বসল। কনফারেন্সের বেলকণীতে শত শত বিদেশী সাংবাদিক। কারেনস্কীর বক্তব্য সরাসরি দেস-বিদেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে দেয়ার জন্য রেডিও টেলিভিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সবাই উন্মুখ হয়ে আছে। অতীত বর্তমান নিয়ে কত কিছু বলবে কারেনস্কী। নীতিনির্ধারণী কত কথা তার মুখ থেকে আসবে।
কারেনস্কী মুখ তুলল। রেডিও টেলিভিশনের ডজন খানেক স্পীকার তার মুখের সামনে। মুখ খুলল কারেনস্কী।
‘জনগণের পক্ষে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের দায়িত্বশীল হিসেবে আমি আমার জনগণের শুভকামনা করছি, তাদের জন্য একটা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নতুন দিনের প্রত্যাশা করছি, যেখানে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক দুই অধিকার ই নিশ্চিত থাকবে। সেই সাথে বিশ্বের সব মানুষের জন্য আমার শুভেচ্ছা এবং কামনা করছি পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার সুন্দর বিশ্ব-পরিবেশ।
এক, অস্বস্তিকর অন্তর্বর্তীকালীন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে জনগণের সরকার প্রয়োজন। আমি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ থেকে ১৫ দিন পর ৬ই নভেম্বর তারিখে সাধারন নির্বাচন ঘোষণা করছি। জনগণের সরকার গঠনের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হবে।
দুই, দেশের সমস্ত বন্দী শিবির, শ্রম শিবির বিলোপ ঘোষণা করছি। একমাত্র ফৌজদারি দণ্ডবিধির অধীনে সাজাপ্রাপ্ত ছাড়া সকলকে মুক্তি দেয়ার কথা ঘোষণা করছি।
তিন, রাজনৈতিক লক্ষ্যে প্রণীত বিবর্তনমূলক বিধি বিধান ছাড়া দেশ পরিচালনায় সাধারণ আইন সমূহ সবই বলবৎ থাকবে।
চার, জনমনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মধ্য এশিয়াকে স্বাধীন সাধারণতন্ত্র ঘোষণা করছি। আজই সাইমুমের হাতে ঐ সাধারণতন্ত্রের দায়িত্ব ভার তুলে দেবার জন্য আমাদের প্রতিনিধিকে নির্দেশ দিয়েছি।
পুনরায় আমরা জনগন ও বিশ্বের সকল মানুষের অশেষ শুভকামনা করে আমি মার্শাল পিটার কারেনস্কী আমার কাজ শেষ করছি।’
যারা মার্শাল কারেনস্কীর কাছ থেকে লম্বা কিছু শোনার আশা করেছিল, একে ওকে গালিগালাজ করার দৃশ্য উপভোগ করতে উন্মুখ হয়েছিল এবং নিজের প্রশস্তি সহ বড় বড় বুলি শ্রবণ করার জন্য নিজেকে তৈরি রেখেছিল, তারা চুপসে গেল। চুপসে গিয়ে ভাবল সত্যি তাহলে নতুন দিনই এদেশে আসছে।
ওলগা টেলিভিশনের সামনেই বসেছিল ওর ছোট্ট রুমটিতে। কারেনস্কীর ঘোষণা শুনে সে চিৎকার করে উঠলো। হৃদয়ের সব উচ্ছ্বাস যেন চিৎকার করে বেরিয়ে এল তার বুক থেকে। মাকে আবার দেখতে পাবে, এই আনন্দ এই আবেগে বুক কাঁপতে লাগল। সবই স্বপ্ন মনে হচ্ছে তার কাছে। হঠাৎ মনে হল ফারহানার কথা। ফারহানা বলেছিল, আল্লাহ সব কিছুই করেন, করতে পারেন। আরও মনে পড়ল তার ভলগার তীরে রেস্ট হাউজে ফারহানা বলেছিল অত্যাচারীদের আল্লাহ এ দুনিয়াতেও শাস্তি দেন, এর দৃষ্টান্তে অতীতের ইতিহাস ভরপুর। ফারহানার কথাই সত্যি হল। উফ ফারহানা যদি এখন থাকত তাহলে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ধর্ম গ্রহণ করে ওর সাথে এক হয়ে যেতাম। পরক্ষনেই ভাবল, কেন, ওকে কি দরকার, ওর আল্লাহকে, ওর ধর্মকে তো আমি একাই গ্রহণ করতে পারি। সেই কালেমা তো সে আমার নোট বইতে লিখে দিয়েছে।
ওলগা দৌড়ে গিয়ে সুটকেস থেকে তার নোট বই বের করল। পাতা উল্টাল ঝরের মত খস খস করে। হ্যাঁ, পাওয়া গেছে। এই তো লেখা আছে আরবী ভাষায়, আবার রুশ ভাষায় সেই কালেমা এবং তার অর্থ ফারহানা বলেছে, আল্লাহকে এক অদ্বিতীয় জেনে, তিনি ছাড়া আর সকলের সার্বভৌম ক্ষমতা অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তার নবীর আদেস-নিষেধ মানার স্বীকৃতি পাঠ করলেই সে মুসলমান হয়ে যায়।
ওলগা এই কালেমা পড়তে গিয়েও থেমে গেল। ফারহানা বলেছে, অজু করে পাক সাফ হয়ে এই কালেমা পড়ে মুসলমান হতে হয়। নোট বুকটা বুক সেলফে রেখে ওলগা বাথরুমে গিয়ে অজু করে এল। তারপর নোট বই হাতে নিয়ে ধীর কণ্ঠে ঐ কালেমা পাঠ করল এবং তার অর্থও পড়ল।
নোট বইটা সুটকেসে রেখে পড়ার টেবিলে এল ওলগা। আগের উত্তেজিত অবস্থা এখন আর তার নেই। ভাবছে সে, এখন আর আগের সেই ওলগা সে নয়, সে মুসলমান। একটা অপরিচিত ধরনের তৃপ্তি বোধ হচ্ছে তার। সেই সাথে মনে হচ্ছে কে যেন তার মাথার উপরে আছেন। তিনি দেখছেন তাকে। ভালমন্দ সব কাজই তিনি দেখছেন, দেখবেন। ভয় হল ওলগার অন্যায় কিছু করে বসবে নাতো? ফারহানাকে সে নামাজ পড়তে দেখেছে, নামাজ নাকি বাদ দেয়া যায় না। কিন্তু সে নামাজ পড়তে জানে না। করবে কি সে এখন? হৃদয়ে একটি যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ল তার। হঠাৎ তার মনে পড়ল ফারহানা একদিন বলেছিল, যে মানুষ যতটুকু জানবে, বুঝবে ততটুকু ন্যায়-অন্যায়ের জন্য দায়ী। মনে সান্ত্বনা পেল ওলগা।
এই সময় টেলিফোন বেজে উঠলো। টেলিফোন ধরতেই ওপার থেকে তার খালাম্মার গলা শোনা গেল। বলল, কেমন আছ ওলগা খবর শুনেছ?
-জি, শুনেছি বলল ওলগা।
-শোন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে টেলিফোন করে জেনে নাও তোমার মা কখন কিভাবে আসছেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-যদি জানতে পার আমাকে জানিও।
ওলগার খালাম্মা আগে এই মস্কোতেই ছিল। কিন্তু মস্কোভা বন্দী শিবির থেকে আয়েশা আলিয়েভা ও রোকাইয়েভা পালানোর পর সন্দেহ গিয়ে ওলগার মা ডঃ নাতালোভার উপর পড়ে। সেই সুত্রে তারা ওলগা এবং খালাম্মাকে সন্দেহ করে। অনুমান কোন প্রমান তারা পায়নি। এরপরও শাস্তি হিসেবে ওলগার স্টাইপেন্ড কাটা গেছে এবং খালাম্মাদের ট্রান্সফার করা হয়েছে দূর স্টালিনগ্রাদে।
খালাম্মার টেলিফোন পেয়ে ওলগা খুশি হল। খুশি হল তার মার অনুসন্ধানের একটা সুত্র পেয়ে।
ওলগা টেলিফোন করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয়ের জনৈক পদস্থ অফিসার ডঃ নাতালোভার মেয়ে ওলগার পরিচয় পেয়ে খুশি হয়ে তার মার মুক্তির জন্য তাকে অভিনন্দন জানাল। তারপর বলল, ওদের আসার ব্যাপারে প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। কালকে তোমাকে জানাতে পারব।
পরদিন ওলগা জানতে পারল আগামী কাল ভোরে তার মা এসে মস্কো রেলওয়ে স্টেশনে নামছেন।
ওলগা খুশিতে যেন শিশু হয়ে গেল। কি করবে না করবে তার কুল কিনারা করতে পারছে না। ফারহানার নামাজের মত হাঁটু মুড়ে বসে সে হাত তুলে প্রার্থনা করল, হে আল্লাহ ! তোমারই সব দয়া, তোমারই অনুগ্রহ সব।
তুমি আমার মাকে নিরাপদে আমাদের মাঝে পৌছাও।
পরদিন সকালে বরফ ঠেলে ওলগা স্টেশনে পৌছাল। আত্মীয় স্বজনদের প্রচন্ড ভীড় স্টেশনে। তাদের লাইন করে দাঁড় করানো হয়েছে। মুক্তি প্রাপ্ত বন্দীদের স্বাগত জানানোর জন্যে সরকারী লোকজনও এসেছে। অনেককে সরকারী ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যাচ্ছে। বহু বছর পর মিলনের সে কি কান্না বিধুর দৃশ্য। যারা ট্রেন থেকে নামছে, যে আত্মীয়-স্বজনরা তাদেরকে রিসিভ করছে সবাই কাঁদছে।
ছোট্ট একটা হ্যান্ডব্যাগ হাতে ডঃ নাতালোভা নামল ট্রেন থেকে।
একজন সরকারী অফিসার তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, ডঃ নাতালোভা, সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে নিতে এসেছি।
ডঃ নাতালোভা মুখ তুলে তাকে ধন্যবাদ জানাল। বলল, আমার ওলগা কোথায়?
সরকারী অফিসার বলল, কালকে আমি কথা বলেছি, সে আসবে, নিশ্চয় এসেছে।
এসময় ওলগা ছুটে এল লাইন থেকে। ডঃ নাতালোভা তাকে দু’হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল। মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ওলগা কাঁদছে। কান্নার আবেগে তার দেহটা ফুলে ফুলে উঠছে। আর ডঃ নাতালোভার দু’চোখ বেয়ে নামছে নিঃশব্দে অশ্রু। অন্তরের বহু বছরের জমাট বেদনা যেন গলে গলে পড়েছে চোখ দিয়ে। মা ও মেয়ে কতক্ষণ যে এইভাবে থাকল।
সরকারী অফিসারটির চোখ দুটিও সিক্ত হয়ে উঠেছে। একটু এগিয়ে নাম সুরে বলল, ম্যাডাম আপনার জন্যে গাড়ি প্রস্তুত। সরকার আপনার জন্য বাড়িরও ব্যবস্থা করেছে।
মায়ের বুক থেকে মুখ তুলে ওলগা বলল, মা আপাতত আমার ওখানেই উঠবেন।
হ্যাঁ, আমি ওলগার ওখানেই উঠবো তারপর অন্যকিছু। বলল, ডঃ নাতালোভা।
ঠিক আছে, আমি আপনাদের পৌছে দেব ওলগার ওখানে।
ডঃ নাতালোভা এবং ওলগা হাত ধরাধরি করে সরকারী অফিসারটির পেছনে পেছনে স্টেশন থেকে বেরিয়ে এল। ওলগার ছোট ফ্লাটে ওদের পৌছে দিয়ে অফিসারটি নিজের কার্ড আর একগোছা চাবি ডঃ নাতালোভার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ম্যাডাম আপনার বাড়ির চাবি এটা এবং এই আমার কার্ড। আপনি যখনই আমাকে বলবেন আমি আপনাকে সেখানে পৌছে দেব।
বলে অফিসারটি চলে গেল।
মায়ের কোলে মুখ গুজে ওলগা বলল, মা এই মুহূর্তে কার কথা সব চেয়ে বেশী মনে পড়ছে জান?
-কার কথা? বলল ডঃ নাতালোভা।
-আয়েশা আলিয়েভা এবং ফারহানা আপার কথা।
-আয়েশার কথা এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলিনি আমি। মেয়েটির কথা কোন দিনই ভুলব না। আর ওদের জন্যেই তো আমাদের এই মুক্তি, দেশের এই স্বাধীনতা, ওদের ঋণ অপরিশোধ্য ওলগা। একটু থেমে নাতালোভা আবার বলল কিন্তু তোমার ফারহানাকে তো চিনলাম না।
-ও আমার সহপাঠী সাইমুমের কর্মী। সেই তো অদ্ভুত সাহসিকতার সাথে খালাম্মার বাড়ি থেকে আয়েশা আলিয়েভা এবং রোকাইয়েভাকে সরিয়ে নিয়ে আমাদের পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে। কোটি লোকের ভীড়ে সেই-আমার একান্ত আপন ছিল যার কাছে মন খুলে কিছু বলতে পারতাম। মা, আমার স্টাইপেন্ড কাটা গেলে সেই আমার সাহায্যে এগিয়ে আসে।
-কোথায় সে ওলগা?
-ওরা সবাই তুর্কিস্তানে চলে গেছে কদিন আগে।
দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকল। তারপর মায়ের একটা হাত হাতে নিয়ে নাড়তে নাড়তে ওলগা বলল, মা জান আমি ফারহানার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি।
ডঃ নাতালোভা বিস্মিত হলো না। এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল ওলগার দিকে। শেষে বলল, কেন বলত?
-আমার ভাল লেগেছে। মনে হয়েছে ওটাই একমাত্র জীবন ধর্ম। ওর মধ্যে গোটা জীবন আছে। মানুষের শান্তি ও সংশোধনের ধর্ম মনে হয়েছে ইসলামকে।
-তুই জীবনটাকে এত বুঝেছিস ওলগা, বলে মেয়েকে একটা চুমু খেল ডঃ নাতালোভা। তারপর বলল, ইসলাম সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পেরেছে এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে সমর্থ হয়েছে। মধ্য এশিয়ার তুর্কী জাতির মত অনেকেই তো কম্যুনিষ্ট শৃংখলে বাধা পড়েছে, তারাও স্বাধীনতা চায় কিন্তু ইসলামের মত জীবন্ত ও অফুরন্ত শক্তির উৎস তাদের নেই বলে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না তারা।
মা তুমিও কি ইসলাম…কথা শেষ না করেই থেমে গেল ওলগা। ডঃ নাতালোভা হেসে বলল, নারে ইসলাম আমি এখনও গ্রহণ করিনি। তবে ইসলামকে আমি ভালবেসেছি। পড়াশুনা করছি এর উপর। রুশ ভাষায় অনুদিত ইসলাম পরিচিতি নামক বইটা আমাকে চমৎকৃত করেছে। ঐ লেখকের তাফহীমুল কোরআন নামক কোরআনের ইংরেজী কমেন্ট্রী আছে, ওটা এখন আমি জোগাড় করতে চেষ্টা করব। খুশি হয়েছি তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ। আমাকে সাহায্য করতে পারবে।
এ সময় টেলিফোন বেজে উঠল।
টেলিফোন ধরে ওপারের কথা শুনেই ওলগা টেলিফোন মুখে রেখেই চিৎকার করে উঠল মা, আয়েশা আপা। তারপর বলল, কেমন আছ আয়েশা আপা? মাকে ফিরে পেয়েছি, এই তিনি আমার পাশে।
ডঃ নাতালোভা গিয়ে টেলিফোন ধরল। ওপার থেকে আয়েশা আলিয়েভা বলল, খালাম্মা আপনি মুক্ত? আপনি এসেছেন? উহ্ আল্লাহ তুমি রহমান।
ডঃ নাতালোভা বলল, আল্লাহ এনেছেরে। আর আল্লাহ তোমাদের দিয়েই তো এটা করালো। তোমাদের সকলের প্রতি আমার মোবারকবাদ। কেমন আছিস আয়েশা তুই?
-ভাল খালাম্মা, তোমাকে যদি এখন দেখতে পেতাম?
-দেখা তো হবেই, সব কিছু ঠিক হয়ে যাক।
একটু থেমে ডঃ নাতালোভা বলল, জানিস আয়েশা, আমার ওলগা কি করেছে?
-কি খালাম্মা?
-ওতো একা একাই ইসলাম গ্রহণ করে বসে আছে, অথচ মুসলমান হয়ে কি করতে হবে না হবে কিছুই জানে না। পাগলী মেয়ে। বসে বসে শুধু হাত তুলে দোয়া করে।
-ওতো আমার বোন, কি যে খুশি হলাম খালাম্মা। ওকে একটু দিন। ওলগা এসে টেলিফোন ধরল। আয়েশা আলিয়েভা বলল, খোশ আমদেদ বোন ওলগা। কাছে থাকলে তোমাকে চুমু খেতাম। কি যে খুশী হয়েছি। ফারহানা দেশের বাড়িতে। জানাবো ওকে আমি। কি যে খুশি হবে শুনলে।
একটু থেমে বলল, একটা ঠিকানা নাও। এ ঠিকানায় গিয়ে তুমি প্রয়োজনীয় উপদেশ পাবে, বই পুস্তক পাবে। তোমার কোন অসুবিধা হবে না। চুমু নিও, আজ আসি, খালাম্মাকে দাও।
ডঃ নাতালোভা টেলিফোন ধরলে আয়েশা আলিয়েভা বলল আজ আসি, আপনি বিশ্রাম নিন। পরে আবার যোগাযোগ করব।
-বেশ তোমাদের কল্যাণ হোক বলে টেলিফোন রেখে দিল ডঃ নাতালোভা।

Top