৬. রক্ত সাগর পেরিয়ে

চ্যাপ্টার

শাহিন সুরাইয়ার সহপাঠিনী বান্ধবীর ছোট বোন রাইছা। সেই সুত্রে সুরাইয়া গত তিন উইক এন্ড অর্থাৎ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসে রাইছার ওখানে গেছে। রাইছা খুশি হয়েছে, অনেক আলাপ হয়েছে তার সাথে। গত শনিবারে রাইছার রুমে দেখা হয়েছে খোদেজায়েভা এবং তাহেরাভার সাথে। আলোচনায় দেশের প্রসংগও এসেছে। বুঝা গেছে দেশের সব ব্যাপারেই তারা সচেতন। এমনকি সরকারী কর্মচারী ও জননেতৃবৃন্দের গনস্থানান্তর সম্পর্কিত সব খবর তারা জানে। কিন্তু তাদের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারটা অতি সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছে। সাইমুম সংক্রান্ত কোন প্রসংগ তো তোলারই সুযোগ হয়নি। তবে সুরাইয়ার সন্দেহ নেই এই সচেতন মেয়েরা কম্যুনিস্ট সরকারের ধামাধরা হতেই পারে না।
অফিসের টেবিলে বসে শাহিন সুরাইয়া গত তিন সপ্তাহের মস্কো জীবনের হিসাব নিকাশ করছিল। কাল আবার শনিবার রাইছার ওখানে যাবে সুরাইয়া।
দেয়াল ঘড়ি থেকে দশটা বাজার সংকেত এল। দশটা অফিসের কাজ শুরুর সময়। সুরাইয়া সব ঝেড়ে ফেলে সামনের ফাইলের দিকে মনোযোগ দিল।
সুরাইয়া মস্কো এসে কোন বাইরের এসাইনমেণ্ট পায়নি। তাকে অফিসে বসানো হয়েছে। সরকারের প্রশাসনিক নির্দেশের একটা কপি গোয়েন্দা বিভাগে আসে। সেই নির্দেশেগুলো রেকর্ড করা এবং তা গোয়েন্দা বিভাগের নির্বাহী ব্রাঞ্চে পাঠানোই তার দায়িত্ব। কাজটা একদমই একঘেয়ে এবং কষ্টকর। এই কয় দিনেই তার গোয়েন্দা অফিসারের চরিত্র কেরানী চরিত্রে রূপান্তরিত হবার যোগাড় হয়েছে।
সামনের ফাইল খুলে রেজিস্টারে নিতে শুরু করল সুরাইয়া। এ সময় মুভিং ক্যারিয়ারে একটা ফাইল এসে বাম দিকের ডেস্কে ছিটকে পড়ল। হোম মিনিস্ট্রির ফাইল। টপ সিক্রেট এবং ইমিডিয়েট ট্যাগ লাগানো। কেন জানি তৎক্ষণাৎ ফাইলটি দেখার কৌতুলহ সে রোধ করতে পারল না। হাতের কাজ বন্ধ করে ফাইলটি সে টেনে নিল। খুলে দেখল সংক্ষিপ্ত একটা নির্দেশ, ভ্যাকেশনে এশিয়ার সকল মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীর বাড়ি যাওয়া নিষিদ্ধ। তাদের উপর চোখ রাখতে হবে, আটকাতে হবে তাদেরকে কোন বিনোদন ট্যুরের ব্যবস্থা করে হলেও।
পড়া শেষে ফাইল ক্লোজ করে সেটা আবার সেই ডেস্কের উপর রেখে দিয়ে আগের কাজে মনোযোগ দিল সুরাইয়া। এ সময় দরজা ঠেলে দ্রুত প্রবেশ করল সেকশন ইনচার্জ টেনিসভ। সে এসে ডেস্ক থেকে হোম মিনিস্ট্রির সেই ফাইল তুলে নিয়ে বলল, কখন এসেছে এ ফাইল?
-এই মাত্র।
-রেকর্ড করেছ?
-না।
-দেখেছ?
-না।
দেখার কথা অস্বীকার করল সুরাইয়া। অফিসারকে ফাইলটি তুলে নিতে দেখেই সে বুঝেছে ফাইলটা ভুল করে এখানে পাঠানো হয়েছে।
এখন দেখার কথা স্বীকার করলে ঐ ফাইলের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে গোয়েন্দা দফতরের আইন অনুযায়ী অন্তরীণ থাকতে হবে। অন্তরীণ থাকা তার কাছে বড় কথা নয় কিন্তু এই মুহূর্তে অফিসারটির হন্তদন্ত অবস্থা দেখে ঐ তথ্যটিকে তার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে, যা সাইমুমের কাজে আসতে পারে। সুতরাং মিথ্যা কথা বলা এখানে সে দূষণীয় মনে করেনি।
অফিসারটি ফাইল নিয়ে যেতে যেতে বলল, ফাইলটা আমার কাছেই থাকবে। রেকর্ডের সিরিয়াল আমার একথার নোট থাকলেই চলবে।
অর্থাৎ ফাইলটা রেকর্ড করার জন্যে সুরাইয়াকে দেওয়া হবে না। যেহেতু সে তুর্কী এবং বিশ্বাসে মুসলমান তাই তাকে তাদের বিশ্বাস নেই। ঠোঁটে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল সুরাইয়ার। মনে মনে বলল, বিশ্বাস করলে তাকে দেশের মাটির কোল থেকে ছিন্ন করে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে এনে টেবিলে আটকে রাখত না।
অবরুদ্ধ একটা ক্ষোভ দীর্ঘ নিঃশ্বাসের আকারে বেরিয়ে এল সুরাইয়ার বুক থেকে।
সুরাইয়া আবার মনোযোগ দিতে চেষ্টা করল ফাইলে। কিন্তু ফাইলে মন বসছে না। মনে হল এ খবরটা তাড়াতাড়ি সাইমুমের কাছে পৌঁছানো দরকার। আর দিন পরেই ভ্যাকেশান। এখনই ওরা জানতে না পারলে সরকারের ফাদে ছাত্ররা সবাই আটকা পড়ে যাবে, কেউ দেশে যেতে পারবেনা।
সুরাইয়া ভাবল কাল শনিবার, না আজই একবার তাকে রাইছার কাছে যেতে হবে। পথ তাকে বের করতে হবে সাইমুমকে এ খবর জানানোর। আহমদ মুসার নির্দেশের কথা তার মনে পড়ল, পথ বের করার অর্থ আহমদ মুসা সাইমুমকে খুঁজে বের করার কথাই বলেছে। আহমদ মুসা তাকে সাইমুমের খোঁজ দিয়ে দিতে পারতো কিন্তু তা না দিয়ে খুঁজে নিতে বলেছে তাকে। এতে প্রথমে তার মন খারাপ হয়েছিল, পরে বুঝেছে সাইমুমের মত একটা আন্দোলনের জন্য এটাই স্বাভাবিক। এই বোধ আসার পর আহমদ মুসার নেতৃত্বের প্রতি তার দুরদর্শিতার প্রতি সুরাইয়ার ভক্তি শ্রদ্ধা আকাশস্পর্শী হয়ে উঠেছে। সে যে তিন সপ্তাহেও সাইমুমকে খুঁজে পায়নি এটা তার দুর্বলতা, এজন্যে নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে সুরাইয়ার।
সুরাইয়া ঠিক করল আজ অফিস শেষে বাসায় না ফিরে সে সোজা রাইছার ওখানে চলে যাবে। রাইছা ১২ টার দিকেই ক্লাস থেকে হলে ফিরে আসে। দুপুরেই তার সাথে দেখা হবে।
সুরাইয়া একটু আগে সাড়ে ১২ টার দিকেই অফিস থেকে বেরুল, যেতে হবে বাস বদল করে, সময় লাগবে তাতে।
ঠিক দেড়টার সময় সুরাইয়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পৌঁছল। রাইছার হলে পৌঁছতে আরও ২০ মিনিট সময় লাগলো তার। সুরাইয়া যখন রাইছার দরজায় দাঁড়াল, তখন বেলা ১ টা বেজে ৫০ মিনিট।
রাইছা রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। কিছুক্ষণ দাঁড়াল সুরাইয়া কিন্তু ভেতর থেকে সাড়া শব্দ নেই। অবশেষে দরজায় টোকা দিল এক দুই তিন। আবার কছু সময় কেটে গেল। টোকা দিল আবার সেই তিনটা। কোন সাড়া নেই। আবার কিছু সময় অপেক্ষা করল সুরাইয়া। কি ব্যাপার, রাইছা কি ঘুমালো নাকি এই অসময়ে? অসুস্থ নয়তো সে?
আর টোকা নয় এবার নাম ধরে ডাক দিল সুরাইয়া।
এবার একটু পরেই দরজা খুলে গেল। দরজা খুলেই রাইছা বলল, মাফ করবেন একটু দেরি হয়ে গেল।
আমিতো ভাবছিলাম তুমি ঘুমিয়ে গেছ, বলে ঘরে ঢুকল সুরাইয়া। দেখল রাইছার সাথে আরেকটা মেয়ে।
সুরাইয়া রাইসার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাইতেই রাইছা বলল, এ আমার বান্ধবী। নাম ফাতিমা ফারহানা। তাজিক মেয়ে।
ফাতিমা ফারহানার সাথে কুশল বিনিময়ের পর সুরাইয়া বলল, তোমরা বোধ হয় নামাজ পড়ছিলে?
আকস্মিক এই প্রশ্নে রাইছা এবং ফাতিমা ফারহানা দুজনেই চমকে উঠল এবং মুহূর্তের জন্যে অপরাধ ধরা পড়ার মত একটা বিমূঢ় ভাব দেখা গেল তাদের মধ্যে।
তাদের অবস্থা দেখে হেসে উঠল সুরাইয়া। তারপর রাইছার গালে একটা টোকা দিয়ে বলল, তোমরা তো কোন অপরাধ করনি, আমি আনন্দিত হয়েছি।
রাইছা বলল, আপনি জানলেন কি করে আমরা নামাজ পড়ছিলাম?
-জানতে পারিনি, বুঝতে পেরেছি।
-কেমন করে?
-তোমাদের মুখের পবিত্রতা দেখে এবং তোমাদের দুজনের মাথায় ওড়না দেখে।
রাইছা ও ফারহানা দুজনেই এ কথা শুনে মাথায় হাত দিল এবং হেসে ওড়না নামিয়ে নিল।
সুরাইয়া গিয়ে ওদের মাথায় ওড়নাটা আবার তুলে দিয়ে বলল, নামিওনা বেশ লাগছে। আমাদের ঐতিহ্য কত সুন্দর!
-সুন্দর ঐতিহ্য আমরা অনুসরণ করতে পারছি কই? এইতো মাথার এই ওড়না কারও নজরে পড়লে সন্দেহ শুরু হয়ে যাবে যে, আমরা ধর্মের আফিম বোধ হয় আবার গলঃধকরণ করছি।
ঠিক বলেছ ফারাহানা, বলে সুরাইয়া একটু পিছন ফিরে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে বলল, এস তোমরা, বস, আমার জরুরী কথা আছে।
সবাই বসলে সুরাইয়া বলল, আমি একটা খবর নিয়ে এসেছি।
সামনের ভ্যাকেশনে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের দেশে যেতে দেওয়া হবে না, এ সংক্রান্ত অর্ডার খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আসছে।
-সত্যি! প্রায় কপালে চোখ তুলে প্রশ্ন করল ফারহানা।
-সত্যি। উত্তর দিল সুরাইয়া।
তারপর সবাই চুপচাপ।
নিরবতা ভাঙ্গল সুরাইয়াই। প্রশ্ন করল, তোমরা তো ছাত্র, বলতে পার সরকার কেন এই পদক্ষেপ নিচ্ছে?
রাইছা এবং ফারহানা পরস্পর একবার চোখ চাওয়া চাওয়ি করে চুপ করে থাকল। মনে হল তারা এ প্রশ্নে অস্বস্তি বোধ করছে।
সুরাইয়া একটু হাসল। বুঝতে পারছি তোমরা বলতে একটু দ্বিধা করছ। আমার পরিচয় শুন। আমি গোয়েন্দা বিভাগের একজন অফিসার। সারাকায়ার ঘটনা তোমরা নিশ্চয়ই জান। সে ঘটনায় আমার ছোট ভাই রশিদভ সাইমুমের হয়ে শহীদ হয়েছে। শাস্তিমূলক ট্রান্সফারের শিকার হয়ে আমাকে মস্কো আসতে হয়েছে। আসার পথে ভাগ্যক্রমে সাইমুম নেতা আহমদ মুসার সাথে আমার দেখা হয়, এখানে সাইমুমের সন্ধান করা এবং তাকে সাহায্য সহযোগিতা করা তারই নির্দেশ।
রাইছা ও ফারহানার চোখ দুটি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ফারহানা সুরাইয়ার একটা হাত তুলে নিয়ে চুমু দিয়ে বলল, মাফ করুন আপা।
আমরা কি যে খুশি হলাম আপনাকে পেয়ে। একটু থেমে ফারহানা গভীর আগ্রহ নিয়ে বলল, কোথায় ওর সাথে আপনার দেখা হয়েছে?
-উজবেকিস্তানের মরুভূমিতে। বলে সুরাইয়া তার কাহিনীটা খুলে বলল তাদের। ওরা প্রায় মুখ হা করে গোগ্রাসে গিলল সে কাহিনীটা।
আবার প্রশ্ন করল ফারহানাই, ও কেমন আছে, ভাল?
রাইছা অলক্ষ্যে একটা চিমটি কাটল ফারহানাকে। মুখে গাম্ভীর্য টেনে বলল, এসব ব্যক্তিগত প্রশ্ন কেন? ওর প্রশ্ন শুনে উত্তর এখনো দেয়া হয়নি।
ফারহানার মুখে লজ্জার একটা লাল আভা খেলে গেল।
এ দৃশ্যটা নজর এড়াল না গোয়েন্দা অফিসার সুরাইয়ার। কিন্তু তা এড়িয়ে গিয়ে বলল, হ্যাঁ ওটা কি ব্যাপার বলো। ফারহানার দিকে তাকিয়ে নিয়ে রাইছা বলল, সাইমুমের নির্দেশ এসেছে এবার ভ্যাকেশনে সবাইকে দেশে যেতে হবে। কর্মচারী ব্যবসায়ী যারা তাদেরও এ সময় দেশে ফিরতে হবে।
-কর্মচারীদেরকেও?
-হ্যাঁ।
-সবাই কি জানে? আমি তো জানতাম না।
-আপনার সাথে আমাদের পরিচয় না হবার কারনেই আপনি জানতে পারেন নি।
রাইছা কিছু বলার আগেই ফারহানা বলল, ভ্যাকেশনের আর মাত্র ১৫ দিন বাকী। ওরা আট-ঘাট বেধে ফেলার আগেই তো আমাদের কিছু করা দরকার।
-হ্যাঁ তোমরা চিন্তা কর। এ ব্যাপারে যতটুকু সহযোগিতা করতে পারি আমি করব। বলে দাঁড়াল, সুরাইয়া। রাইছা ও ফারহানাও উঠে দাঁড়াল। দুজনেই বলে উঠল, বসবেন না, একটু কিছু……..
-না না, আজ নয়। অফিস থেকে সোজা এসেছি।
সুরাইয়া ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে মুখটা আবার ফারহানার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে তার থুতনিতে একটা টোকা দিয়ে বলল, ওকে ভাল সুস্থই দেখেছি। কবে দেখা হল ওর সাথে তোমার?
আকস্মিক এ প্রশ্নে ফারহানা যেন বিব্রত হয়ে পড়ল। একরাশ লজ্জা ছড়িয়ে পড়ল তার চোখে- মুখে।
ফারহানা কিছু বলার আগেই রাইছা বলল, সে এক বিরাট কাহিনী। আপা ঘুমন্ত রাজকুমার কি করে পাতালপুরীতে এল, কি করে রাজকুমারীর জীবন কাঠির স্পর্শে রাজকুমার জাগল সে এক অপরুপ….
ফারহানা রাইছাকে এক ধাক্কা দিয়ে বলল, রাইছা বড় বেয়াদব। আপা ওকে বিশ্বাস করবেন না।
ফারহানার মুখটা লাল হয়ে গেছে লজ্জায়।
রাইছা তার কথা সমাপ্ত করতে না পারার দুঃখে গলা বাড়িয়ে আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল।
সুরাইয়া হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেরুতে বেরুতে বলল, আজ আর নয়, আরেকদিন এসে তোমাদের কথা শুনব।

মস্কো এয়ারপোর্টের ডোমেস্টিক উইং এর রুমের এক কোণে অনেকটা নিজেদের লুকিয়ে যেন দাঁড়িয়েছিল ফাতিমা, খোদেজায়েভা, তাহেরভা, রাইছা এবং আরও ৫ ছাত্রী। ওদের প্রত্যেকের মুখেই একটা চাঞ্চল্যের চিহ্ন। ৩টায় ফ্লাইট। সবে দেড়টা বাজে। সময় যেন একেবারেই যাচ্ছে না। ঘড়ির কাঁটা আজ নড়ছেনা যেন।
দুটো বাজতেই ভেতরে ঢোকার ঘন্টা ধ্বনি হলো। ফারহানা খোদেজায়েভাকে কানে কানে বলল, তুমি সবাইকে নিয়ে ঢুকে যাও। আমি ওলগার জন্যে আর একটু অপেক্ষা করব।
-কিন্তু বেশী দেরী করোনা, কখন আমরা ওদের নজরে পড়ে যাই, ভয় করছে খুব। বলে খোদেজায়েভা সবাইকে নিয়ে বিমান বন্দরের ভেতর ঢুকে গেল। আরও পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেল।
ফাতিমা ফারহানা অস্থির হয়ে উঠেছে। তাহলে ওলগা আসবে না?
কিন্তু আসবে না তা হতেই পারে না।
হঠাৎ পেছন থেকে মাথায় কে যেন তার টোকা দিল। চমকে ঊঠে পেছন ফিরে দেখল ওলগা হাসছে। হেসে ঊঠে ফারহানা জড়িয়ে ধরল তাকে। এসেছ উঃ কি উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছি। ভাবছি, বোধ হয় তোমার সাথে আর দেখা হলো না।
-উঃ না এসে বুঝি পারি? গাড়ির জন্যে একটু দেরী হয়ে গেল, বলল, ওলগা, জান একটা খবর আছে?
কি খবর? বলে উৎকণ্ঠিত চোখ দুটি ফারহানা তুলে ধরল ওলগার মুখের ওপর।
ওলগা ফারহানার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলল, মাকে ওরা মস্কোভা বন্দী শিবিরে নিয়ে গেছে সপ্তাহ খানেক হলো।
-অর্থাৎ তাকে সাধারণ আসামীর মত কায়িক পরিশ্রমও করতে হবে, ফারহানার কন্ঠ যেন আর্তনাদ করে উঠল। তার মুখটা মুহূর্তের জন্য অন্ধকার হয়ে গেল।
হঠাৎ ভেতরের অবরুদ্ধ আবেগ অশ্রুর রুপ নিল চোখের দু কোণায় এসে।
ওলগা ফারহানাকে সান্তনা দিয়ে বলল, আম্মা আমাকে কাঁদতে নিষেধ করেছেন। আমি আর কাঁদি না। কাঁদলে তো এরা খুশী হয়, আরও শক্তিশালী হয়। অশ্রু নয়, এদের অত্যাচারের সিংহাসন পুড়িয়ে দেয়ার জন্যে চোখে আগুন দরকার।
ফারহানা চোখের কোণ দুটি মুছে নিয়ে ওলগার হাত হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, ঠিক বলেছ ওলগা, অশ্রু এদের কাছে দুর্বলতার প্রতীক।
বলল ওলগা, আরও খবর আছে। মাকে ওরা সাইবেরিয়া পাঠাবার পর আমার স্টাইপেন্ডও বন্ধ করে দিয়েছে।
-স্টাইপেন্ড বন্ধ করে দিয়েছে? এরপর আবার ফ্ল্যাটটাও কেড়ে নেবে নাতো?
-নিপীড়নের দ্বিতীয় অধ্যায় সবে শুরু, কি হবে জানি না।
-এখন তোমার লেখাপড়া কিভাবে চলবে?
-লেখাপড়া বাদ দিব ভাবছি।
-লেখাপড়া বাদ দেবে? না তা হতে পারেনা।
একটু ভাবল ফারহানা। তারপর ব্যাগ খুলে পাঁচ হাজার রুবলের একটা বান্ডিল ওলগার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, বড় বোন ছোট বোনকে এটা দিল। এতে তোমার মাস তিনেক চলবে। পরের ব্যবস্থা যেখানেই থাকি আমি করব।
বিব্রত ওলগাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চকিতে ঘড়িটা একবার দেখে নিয়ে ফারহানা বলল, ওলগা আমি তোমাকে নিয়ে যেতে চাইলে রাজী হবে?
এবার ওলগা ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল।
ফারহানা তাকে বুকে জড়িয়ে বলল, কেঁদো না বোন, আমরা আছি, আল্লাহ্ আছেন।
একটু থেমে ফারহানা আবার বলল, কই আমার জিজ্ঞাসার জবাব দিলেনা?
ওলগা বলল, একটাই খারাপ লাগবে, মার কাছ থেকে আরও দূরে সরে যাব।
ওলগার চোখের উপর চোখ রেখে ফারহানা বলল, শুধু তোমাকে সরিয়ে নেয়া নয়, তোমার মাকেও কাছে আনার চেষ্টা আমাদের থাকবে।
শেষ কথাটায় ওলগার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, তাকি সম্ভব হবে?
অসম্ভব কিছুই দুনিয়াতে নেই, তাছাড়া দিনও সব সময় একরকম যায় না, বলল ফারহানা।
সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফারহানা ওলগাকে একটা চুমু খেয়ে বলল, আমি চললাম, তুমি প্রতি সপ্তাহে কিন্তু চিঠি দিবে, নাহলে আমি ভীষণ রাগ করব।
বলে ফারহানা বিমান বন্দরে ঢোকার জন্যে ফিরে দাঁড়াল। ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে কয়েক কদম গেছে এমন সময় একজন লোক পাশ থেকে তার হাতে একটা চিঠি গুঁজে দিয়ে চলে গেল।
চমকে উঠেছিল মুহূর্তের জন্যে। তারপর স্বাভাবিক গতিতে সে ঢুকে গেল বিমান বন্দরে। চিঠিটা কি তা দেখার জন্যে তার মন বড় উসখুস করছিল। কিন্তু দেরী হয়ে যাওয়ায় বিমানে উঠার আগে চিঠি পড়ার আর সুযোগ পেল না সে। বিমানে পাশাপাশিই তাদের দশজনের সিট পড়েছিল। ফারহানার পাশেই বসেছিল খোদেজায়েভা।
চিঠিটা ছোট্ট। লেখা আছে, বাসে, বিমানে, ট্রেনে তোমরা ভ্যাকেশনের আগেই যে চলে যাছ এ খবর তাদের কাছে এই মাত্র পৌঁছল। তোমাদের ব্যাপারটাও এখনি তাদের জানা হয়ে যাবে। সুতরাং হুশিয়ার থেকো। তাসখন্দ বিমান বন্দরে তোমাদের অবতরণ নিরাপদ নাও হতে পারে।
চিঠিতে কোন স্বাক্ষর নেই। কিন্তু হাতের লেখা দেখেই ফারাহানা বুঝতে পারল এ চিঠি সুরাইয়ার।
চিঠিটা পড়ে ফারহানা সেটা খোদেজায়েভার হাতে দিল। খোদেজায়েভা ওটার ওপর চোখ বুলিয়ে বলল, আল্লাহ্ ভরসা, আমরা এ প্লেনে যাচ্ছি সেটা সাইমুমকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ্যারোফ্লোতের বিমানটি সন্ধ্যা ৬ টায় ল্যান্ড করল তাসখন্দ বিমান বন্দরে।
অজানা এক আশংকা পীড়িত দুরু দুরু মন নিয়ে ফারহানারা বিমানের সিড়ি দিয়ে নিচে নামল। ফারহানা বলল, আমরা তো কোন অপরাধ করিনি, হল কর্তৃপক্ষর বৈধ অনুমতি পত্র নিয়েই আমরা এসেছি। তাছাড়া দেশে আসতে কোন সময় আমাদের নিষেধ ও করা হয়নি। সুতরাং আমাদের বিরুদ্ধে করার তাদের কি আছে? খুব বেশী করলে যেটা পারে সেটা হল আমাদের আবার মস্কো ফিরিয়ে নেয়া।
খোদেজায়েভা এবং রাইছা মাথা নেড়ে সায় দিল ফারহানার কথায়। বিমান বন্দরের লাউঞ্জে প্রবেশ করার পরই একজন পুলিশ অফিসার তাদের কাছে এল। বলল, আপানারা মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের তো? ফারহানা বলল, জি হ্যাঁ।
তারপর পুলিশ অফিসারটি একটা লিস্ট থেকে ১০ জনের নাম পড়ল এবং বলল, আপনাদের এই দশজনকে এখনই আমার সাথে মিনিস্ট্রি অব হোমে যেতে হবে।
যেন আকাশ থেকে পড়ল এমন ভাব নিয়ে ফারহানা বলল, কেন?
পুলিশ অফিসারটি হাল্কা ভাবে বলল, এই তেমন কিছুনা, হয়ত হবে কোন রুটিন চেকিং এর কাজ। আমি বেশি কিছু জানি না।
ফারহানা আগে থেকেই জানে, এ ধরনের ব্যাপারে আপত্তির কোন মূল্য নেই, বরং তাতে আরও ক্ষতির সম্ভবনা বেশী।
তাদের সবাইকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হলো। একজন পুলিশ ড্রাইভিং সিটে বসল। গাড়ি ছেড়ে দিল।
ফারহানারা দেখল, জনা চারেক পুলিশ নিয়ে আরেকটা জীপ পেছন পেছন আসছে। বুঝতে তাদের কারও বাকী রইল না যে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা আর স্বাধীন নয়। ফারহানার মনটা আনচান করে উঠল, দেশমুখী সব ছাত্র-ছাত্রীদের কি এই পরিণতি হচ্ছে!
এক চিন্তা থেকে আরেক চিন্তা তাদের মনে স্রোতের মত আসতে লাগল। ওরা যদি একবার সন্দেহ করে এবং ওদের হাতে পড়া যায় তাহলে কি পরিণতি যে হতে পারে তা তাদের কারোই অজানা নেই। আর সন্দেহ না করলে তো তাদের ধরাই হত না। সুতরাং সবারই মুখ শুকনো। কি ঘটতে যাচ্ছে তার ভয়ে আতংকিত। একবার মস্কোভা বন্দী শিবিরের কথাও ফারহানার মনে পড়ল। এটা মনে করতে গিয়ে আয়েশা আলিয়েভার কথা মনে পড়ল। সেই সাথে ফারহানা কিভাবে গাড়িতে পুলিশ প্রহরীদের পরাভূত করে নিজেকে মুক্ত করেছিল সেটা মনে পড়ল এবং মনে পড়ল ড্রাইভার কে কাবু করে গাড়ি দখলের তার নিজের চোখে দেখা ঘটনা। একটা আলোর সন্ধান যেন সে পেল। মুখটা তার উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আশেপাশে সে তাকাল, না তেমন কিছু নেই। হঠাৎ তার মনে পড়ল, ব্যাগের মধ্যে স্টিলের একটা ব্যাটন আছে যা সে তার ভায়ের ফরমায়েশ হিসেবে কিনেছে। এটা ফোল্ড করলে হাতের মুঠোর মধ্যে এসে যায় এবং আন-ফোল্ড করলে দু’ফুট লম্বা ওজনদার এক মারাত্মক ব্যাটনে পরিণত হয়।
খুশী হয়ে ফারহানা খোদেজায়েভার কানে ব্যাপারটা বলল। খোদেজায়েভাও খুশী হল। কিন্তু পরক্ষনেই তার মুখটা অন্ধকার হয়ে গেল। বলল, ড্রাইভারকে না হয় কাবু করলাম, কিন্তু পিছনের পুলিশের গাড়ি কি হবে? ওর স্পীড তো এ মাইক্রোবাসের চেয়ে অনেক বেশী।
ফারহানা বলল, সে চিন্তা পরে করা যাবে কিন্তু এ পথ ছাড়া তো এদের হাত থেকে মুক্তির কোন পথ দেখি না।
ফারহানার কথা শেষ হতে না হতেই পেছন থেকে হর্নের শব্দ পাওয়া গেল এক সঙ্গে কয়েকবার। ফারহানা ও খোদেজাভার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, এতো সাইমুমের গাড়ির কোড হর্ন। তাহলে তারা এসে গেছে।
ফারহানা তাড়াতাড়ি তার ব্যাগ খুলে সেই ব্যাটনটি বের করল। তারপর ড্রাইভারের পেছনের সিটে একটা আসন খালি ছিল, ফারহানা গিয়ে সেখানে বসল।
এই সময় পিছন থেকে একটা গুলির শব্দ হলো। সংগে সংগে প্রচন্ড শব্দে একটা টায়ার বাস্ট হবার শব্দ পাওয়া গেল এর মুহূর্তকাল পরেই ব্রাস ফায়ারের শব্দ কানে এল।
মাইক্রোবাসের ড্রাইভার পাশের জানালা দিয়ে একবার পিছন দিকে তাকিয়েই গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিল।
ফারহানা জানালা দিয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখল টায়ার ফাটা পুলিশের জীপ রাস্তায় দাড়িয়ে পড়েছে। জীপের দুপাশে দুজন পুলিশের লাশ পড়ে আছে। সাইমুমের জীপটি পুলিশের গাড়ির পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে আসছে।
ফারহানা তার কর্তব্য ঠিক করে নিল। ব্যাটনের মাথার সুইচটায় চাপ দিতেই ব্যাটনটি নিঃশব্দে আন-ফোল্ড হয়ে গেল। প্রায় সের খানেক ওজন হবে ব্যাটনের।
মাইক্রোবাসের ড্রাইভার পেছনে নড়াচড়া বোধ হয় টের পেয়েছিল। চকিতে সে একবার পেছনে ফিওে চাইল। পেছনে ফারহানাকে উঠে দাড়াতে দেখে ড্রাইভিং হুইল থেকে দ্রুত একটা হাত নামিয়ে পাশে রাখা রিভলভারে সে হাত দিতে যাচ্ছিল।
কিন্তু রিভলভার হাতে নেয়ার সুযোগ ফারহানা আর তাকে দিল না, ফারহানার ব্যাটন বিদ্যুৎ গতিতে একবার উপরে উঠে আড়াআড়ি ভাবে গিয়ে আঘাত করল তার বাম কানের ঠিক উপরে। ডানদিকে কাত হয়ে পড়ে গেল ড্রাইভারের দেহটা। ফারহানা তার দেহটা কাত হয়ে পড়ার সাথে সাথে প্রায় ঝাপিয়ে পড়ল ড্রাইভিং হুইলের উপর, পায়ের সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরল ব্রেক। মাইক্রোবাসটা তার মাথা কয়েকবার এদিক ওদিক ঘুরিয়ে রাস্তার একপাশে গিয়ে থেমে গেল।
মাইক্রোবাসের ড্রাইভার আঘাতটা সামলে নিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করছিল। ফারহানা পাশে পড়ে থাকা ব্যাটনটি তুলতে যাবে এমন সময় পাশে এসে একটি গাড়ি থামল। পরক্ষনেই দুজন এসে মাইক্রোবাসের জানালায় দাঁড়াল। তাদের একজনকে দেখে ফারহানা অপূর্ব এক ভাবাবেগে নিশ্চল হয়ে গেল। ব্যাটনটি তুলতে গিয়ে সে যেভাবে ছিল সেভাবেই ছিল।
আহমদ মুসা সেদিকে একবার তাকিয়ে দ্রুত ড্রাইভিং দরজা খুলে ফেলল। ড্রাইভার-পুলিশ ইত্যবসরে তার পিস্তলটি তুলে নিয়েছিল। ওদিকে নজর পড়তেই আহমদ মুসা প্রচন্ড বেগে গাড়ির দরজা বন্ধ করার জন্যে ধাক্কা দিল। ড্রাইভার পুলিশটির একটা পা এবং মাথা দরজার বাইরে এসেছিল, দরজার ধাক্কায় পা এবং মাথা একেবারে থেতলে গেল, রিভলভারটি ছিটকে গাড়ির মধ্যেই পড়ে গেল।
গাড়ির দরজা আবার খুলে ফেলল আহমদ মুসা। তারপর ড্রাইভার-পুলিশকে টেনে বের করে ছুড়ে দিল রাস্তার বাইরে।
তারপর দ্রুত উঠে বসল ড্রাইভিং সিটে। ফারাহানা ওড়না দিয়ে মাথা মুখ প্রায় ঢেকে ফেলে ড্রাইভারের পাশের সিটেই বসে পড়েছিল।
আহমদ মুসা দ্রুত বলল, ফারহানা তোমাকে ধন্যবাদ, গাড়ি দাঁড় না করাতে পারলে অসুবিধা হতো। একটু থেমে বলল, ফারহানা তুমি পেছনের সিটে যাও। তারপর বাইরে মুখ বাড়িয়ে বলল, হাসান তারিক তুমি উঠে বস।
ফারহানা পেছনে চলে গেল। হাসান তারিক এসে বসলে জীপকে লক্ষ্য করে বলল, কুতাইবা একেবারে সোজা লেনিন স্মৃতি পার্কে।
মাইক্রোবাস আবার ফুল স্পীডে চলতে শুরু করল। তার পেছনে কুতাইবার জীপ।
পুলিশের জীপের অবশিষ্ট দুজন পুলিশ গুলি করতে করতে ছুটে আসছিল কিন্তু তারা শীঘ্র পিছনে দৃষ্টির বাইরে হারিয়ে গেল।
শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে সময় কাটল খোদেজায়েভা এবং অন্যান্য মেয়েদের। এর মধ্যেও ফারহানার আকষ্মিক পরিবর্তন, তার লাজ নম্র নির্বাক চেহারা এবং মাথায় ওড়না উঠে আসা তাদের নজর এড়ায়নি। যে ফারহানা ব্যাটন হাতে একজন পুলিশ অফিসারকে কাবু করে গাড়ি দখলের সাহসিকতা প্রদর্শন করতে পারে, সে ঐ লোকটিকে দেখে অমন সংকুচিত হয়ে গেল কেন? এ কৌতুহল তারা দমিয়ে রাখতে পারছিল না।
গম্ভীর খোদেজায়েভাই প্রথম প্রশ্ন করল, কি ব্যাপার ফারহানা, তোমার কি হল?
খোদেজায়েভার প্রশ্ন শেষ না হতেই রাইছা প্রশ্ন করে বসল, ইনিই বোধ হয় আহমদ মুসা? তার মুখে হাসি বিস্ময় দুটোই।
ফারহানা গম্ভীর কন্ঠে বলল, হ্যাঁ, উনিই।
রাইছা কিছু বলতে যাচ্ছিল, ফারহানা তার মুখ চেপে ধরে সেই গম্ভীর কন্ঠেই বলল, এটা আমাদের ড্রইং রুম নয়।
-আচ্ছা ঠিক আছে, আমি কিছু বলব না, কিন্তু বলতো আমি কি করে বুঝলাম উনি আহমদ মুসা? বলল রাইছা।
-নিছক অনুমান করেই।
-না।
-তাহলে কি?
-তোর কাপুনি আর তোর লাল মুখ দেখে। কত নায়ক-নায়িকার মুখোমুখি হবার দৃশ্য আমি উপন্যাসে দেখেছি।
ফারহানা খোদেজায়েভার দিকে ফিরে বলল, আপা, ওকে সামলাও। সীমা লংঘন করছে ও।
-ঠিক আছে, তওবা করছি, এই মুখ বন্ধ করলাম। বলে রাইছা সত্যিই সত্যিই দু আংগুলে ঠোট চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে সিটের উপর শুয়ে পড়ল।
তাসখন্দ এয়ারপোর্ট থেকে লেনিন স্মৃতি পার্ক প্রায় হাজার মাইল। গোটাটাই জনমানবহীন পথ। যাতে শত্রুরা ঠিক করতে না পারে কোথায় তারা যাচ্ছে এজন্যে আহমদ মুসা বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে কেউ অনুসরণ করছে না নিশ্চিত হয়ে তবেই লেনিন স্মৃতি পার্কের পথে গিয়ে পড়ল।

জেনারেল বোরিসের পি এস ভিক্টর কুমাকভ ঠিক সাড়ে আটটায় অফিসে গিয়ে পৌঁছল। জেনারেল বোরিস অফিসে আসেন নয়টায়। তাঁর জন্য সব ফাইল রেডি করা এবং দিনের কাজের একটা আউট লাইন দাঁড় করতে আধা ঘন্টা সময় ভিক্টর কুমাকভের দরকার হ্য়। সেই জন্য ভিক্টর কুমাকভের অফিস আওয়ার সাড়ে আটটা থেকেই।
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top