২৫. আটলান্টিকের ওপারে

চ্যাপ্টার

একজন মধ্যবয়সী শ্বেতাংগ। বসে আছে রিভলবিং চেয়ারে একটা বড় সুদৃশ্য টেবিল সমনে রেখে।

তার বাম পাশের সাইড ডেস্কে টেলিফোন, ইন্টারকম ও ফ্যাক্স। আর ডান পাশে ইন্টারনেট এবং বড় একটি কম্পিউটার। তার পেছনের দেয়ালে তার মাথা বরাবর উঁচুতে একটা লাল পাথরে একটা সাদা বৃত্তের মধ্যে একটা সাদা ‘T’-এর উপর উধ্যত ভঙ্গির একটা সাদা ঈগল নিয়ে সুন্দর একটা মনোগ্রাম খোদাই করে তৈরি।

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে লোকটির সার্টসহ ঘরের টেবিল, টেলিফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি সব কিছুতেই এই সাদা মনোগ্রাম আঁকা।
দীর্ঘকায় লোকটির দেহের গড়ন অত্যন্ত বলিষ্ট।
চোখের দৃষ্টি সাপের মত ঠান্ডা এবং অন্তর্ভেদী।
এই অন্তর্ভেদী দৃষ্টি তার স্থির নিবদ্ধ ছিল সামনে বসা একজন যুবকের প্রতি, যার সাথে সে কথা বলছিল।
যুবকটির গায়ে আর্মি কাট-এর সাদা সার্ট। তারও সার্টের কলারে ঐ হোয়াইট ঈগল-এর মনোগ্রাম আঁকা।
বলছিল রিভলভি চেয়ারে বসা সেই দীর্ঘকায় লোকটি, ‘রাখ তোমার ক্ষয়-ক্ষতির হিসেব। আমি জানি সাউথ টার্কো দ্বীপের তিনটি ঘটনায় ‘হোয়াইট ঈগল’-এর ৩৪ জন মূল্যবান সন্তান হারিয়ে গেছে। আমি জানতে চাই, লাশগুলো পাওয়া গেছে কিনা? হাওয়া হয়ে যাওয়া তিনটি মোটর বোটের সন্ধান পেয়েছ কিনা?’
দীর্ঘকায় বলিষ্ট দেহের সাপ চক্ষুর এই লোকটিই জিজে ফার্ডিনান্ড
(জর্জ জেমস ফার্ডিনান্ড)। দুধষ্য ‘হোয়াইট ঈগল’ দলের ক্যারিবিয়ান এলাকার প্রধান।
‘হোয়াইট ঈগল’ দলটি ‘অল আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশন অব হোয়াইট ক্রস সার্ভিস’ সংক্ষেপে’ হোয়াইট ক্রস সার্ভিস’ – HCS এর সামরিক সংগটন। ‘হোয়াইট ক্রস সার্ভিস’ আমেরিকা জোড়া একটা এনজিও। প্রচার করা হয় এনজিওটি শান্তির স্বার্থে নিবেদিত। হোয়াইট ক্রস-এর প্রকাশ্য ব্যাখ্যা হলো ‘শান্তির ক্রস’। কিন্তু অফিসিয়াল বা গোপন ব্যাখ্যা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এই অফিসিয়াল ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘ক্রস’ এগিয়ে চলার একটা বাহন, বিজয়ের একটা অস্ত্র এবং এই বাহন ও এই অস্ত্র কাজ করবে শুধু শ্বেতাংগদের জন্যেই। ‘ঈগল শ্বেতাংগ স্বার্থের প্রতীক এবং ক্রস তার বাহন। একে মনোগ্রাম হিসেবে গ্রহণ করে হোয়াইট ইগল তার উদ্দেশ্যের কথা পরিস্কার বলে দিয়েছে। এই হোয়াইট ঈগলকেই অর্থ, বুদ্ধি ও জনশক্তি দিয়ে চালায়’ হোয়াইট ক্রস সার্ভিস। ‘তাদের প্রথম টার্গেট তাদের আদর্শের শত্রুকে নির্মূল করা, তারপর বর্ণ শত্রুর গায়ে হাত দেয়া।
হোয়াইট ঈগল নেতা জিজে ফার্ডিনান্ডের প্রশ্নের জবাবে যুবল পল বিনীত কণ্ঠে বলল, ‘স্যার, একটিও লাশ পাওয়া যায়নি। মোটর বোট তিনটিরও সন্ধান লাভ সম্ভব হয়নি।’
‘কে কিভাবে সন্ধান করেছে?’
‘সাউথ টার্কো দ্বীপের বারজন অশ্বেতাংগ খৃষ্টানকে আমরা কাজে লাগিয়েছিলাম। গত কয়েকদিন ধরে পৃথকভাবে সাউথ টার্কো দ্বীপের গোটা দক্ষিণাংশ তারা ঘুরে বেড়িয়েছে। সন্দেহ ভাজন এলাকা তারা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে, নানাভাবে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু পায়নি। খাড়ি ও নদীগুলো খুঁজে দেখা হয়েছে। বোট কোথাও দেখা যায়নি।’
‘সব অপদার্থ। ৩০ জন মানুষ হাওয়া হয়ে গেল? গোলা-গুলীর শব্দ কেউ শুনবে না, কেউ কিছু দেখবে না। জানবে না, এটা কি করে সম্ভব?’
‘সম্ভব নয় স্যার। কিন্তু কোন মানুষের কাছ থেকে এমন কোন কথা বের করা যায়নি, যা দিয়ে সামনে এগুনো যেতে পারে।’
‘এমন তো কোন সময়ই হয়নি।মানুষ সব নতুন হয়ে গেল নাকি?’
‘অনেকটা তাই স্যার। হঠাৎ করে ঐ অঞ্চলের মানুষগুলো যেন নীরব হয়ে গেছে। অপরিচিত এবং বাইরের কাউকে তারা সহজ চোখে দেখছে না। অনেকে বলছেন, ব্যাপারটা পুলিশকে জানানো দরকার।’
‘পুলিশকে কি বলবে?’
‘ত্রিশজন লোক ওকারী ও সিডি কাকেম এলাকায় গিয়ে হারিয়ে গেছে।’
‘পুলিশের কথা বাদ দাও, কেউ যদি তোমাকে বলে এ কথা তুমি বিশ্বাস করবে?’
যুবক পল হোয়াইট ঈগল-এর তথ্য চীফ। জিজে ফার্ডিনান্ডের প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না সে।
হো হো করে হেসে উঠল ফার্ডিনান্ড। বলল তীব্র কণ্ঠে, পল কাপুরুষ তোমরা। পুলিশের আশ্রয় নেয় দুর্বলরা। তোমরা কি হোয়াইট ঈগলকে আক্ষম, দুর্বল ভেবেছ? ধিক তোমাদের! তোমাদের ব্যর্থতা, দুর্বলতার ভার এবার তুলে দিতে চাচ্ছ পুলিশের কাঁধে। যাও, তথ্য চীফের চেয়ারে আর বসবে না। আজ মাফ করলাম। আর কোনদিন এ ধরনের বেয়াদবী করলে রিভলবারের ছয়টি গুলীই তোমার মাথায় ভরব।’
ফার্ডিনান্ড কথা শেষ করতেই ইন্টারকম বেজে উঠল।
পল উঠে দাঁড়িয়ে একটা স্যালুট করে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেল।
কথা বলার মত অবস্থা তার ছিল না। টেলিকমে ফার্ডিনান্ডের পার্সোনাল সেক্রেটারীর কণ্ঠ বেজে উঠল। বলল, ‘স্যার মিটিং রুমে সবাই এসেছেন।’
‘আসছি।’ বলে ফার্ডিনান্ড উঠে দাঁড়াল।
ফার্ডিনান্ডের এই অফিসেরই চার তলায় মিটিং রুম। এটাই বিল্ডিং-এর সর্ব্বোচ্চ তলা।
অফিস রুমেরই নিজস্ব সিড়ি দিয়ে ফার্ডিনান্ড উঠে গেল মিটিং রুমে। মিটিং রুম একটা বিরাট হলঘর।
হলঘরে প্রায় একশ’র মত ছোট সাইজের রিভলবিং চেয়ার।
এই বিরাট হলরুমকে মুভেবল পার্টিশন টেনে ছোট চারটি মিটিং রুমেও বিভক্ত করা যায়।
মিটিং হলের সামনের প্রান্তে বেশ প্রশস্ত একটি মঞ্চ।মঞ্চেও অনেকগুলো চেয়ার।
মঞ্চের পেছনে দেয়ালে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের একটা বিশাল ছবি টাঙানো। কলম্বাসের ঠিক মাথার উপর সেই লাল পাথরে খোদিত ‘হোয়াইট ঈগল’-এর মনোগ্রাম।
মঞ্চের উত্তর পাশের দেয়ালে যে জানালা সেটায় গিয়ে দাঁড়ালে দু’তিন শ’ গজ উত্তরে সাগরের কূলে দাঁড়ানো আকাশ ছোয়া ‘কলম্বাস মনুমেন্ট’ দেখা যায়।
এই সানসালভাডোর দ্বীপে মনুমেন্টে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ স্থানটিতেই ১৪৯২ সালের ১২ই অক্টোবর দুপুর ১২টার সময় কলম্বাসে জাহাজ এসে ভিড়েছিল।
আমেরিকান মহাদেশে ইউরোপীয়দের এটাই ছিল প্রথম আগমন।
এই আগমন স্মরণীয় করে রাখার জন্যেই বাহামা দ্বীপপুঞ্জের সানসালভাডোর দ্বীপে কলম্বাসে জাহাজ ভেড়ানোর ঐ স্থানটিতে তৈরী হয়েছে কলম্বাস মনুমেন্ট।
ফার্ডিনান্ডের হোয়াইট ঈগলের অফিসটি কলম্বাস মনুমেন্ট কমপ্লেক্সেরই একটা অংশ।
মিটিং হলের মঞ্চে ডেস্ক আকারের লম্বা টেবিল। টেবিলের পেছনে
এক সারি চেয়ার।
মিটিং হলের সবগুলো চেয়ার পূর্ণ। কোন সিট খালি নেই।
জিজে ফার্ডিনান্ড মিটিং হলে প্রবেশ করে মঞ্চের পাশে থমকে দাঁড়িয়ে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে মঞ্চে উঠল।
চেয়ারের সারিতে মাঝখানে রাখা প্রেসিডেন্টের আসনে গিয়ে বসল ফার্ডিনান্ড।
তার বসার সাথে সাথেই পাশের কক্ষে অপেক্ষমান হোয়াইট ঈগল-এর অন্যান্য নির্বাহী কর্মকর্তারা বেরিয়ে এসে ফার্ডিনান্ডের দু’পাশের আসনগুলোতে বসল।
ফার্ডিনান্ডের বামপাশে বসা বুদ্ধিদীপ্ত কঠিন অবয়বের এক যুবক ফার্ডিনান্ডের কানে কানে বলল, ‘স্যার মিটিং-এর কাজ এখন শুরু করতে পারি?’
যুবকটি ‘হোয়াইট ঈগল’-এর সেক্রেটারী জেনারেল। নাম ‘হের বোরম্যান’। জার্মান বংশোদ্ভুত শ্বেতাংগ।
প্রেসিডেন্টের অনুমতি পাওয়ার পর যুবক বোরম্যান তার সামনের
মাইকটা অন করে বলল, ‘খৃষ্টীয় হোয়াইট নেশন লং লীভ’। বন্ধুগণ, আজ এক অতি গুরুত্বপূর্ণ সভায় আমরা মিলিত হয়েছি। ‘হোয়াইট ঈগল’-এর সম্মানিত প্রেসিডেন্টের উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আমাদের সভার কাজ শুরু হবে। এখন আপনাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করছেন ‘খৃষ্টীয় হোয়াইট নেশন’-এর দিগ্বীজয়ী বন্ধু ‘হোয়াইট ঈগল’-এর প্রধান জিজে ফার্ডিনান্ড।’
কথা শেষ করে হের বোরম্যান তার মাইকের সুইচ অফ করে দিল।
প্রায় সংগে সংগেই ফার্ডিনান্ডের তর্জনি তার সামনের মাইকের সুইচ অন করল।
কথা শুরু করল ফার্ডিনান্ড, “মহান খৃষ্ট এবং মা মেরী দীর্ঘজীবী হোন।’ দীর্ঘজীবী হোক খৃষ্টীয় হোয়াইট নেশন।’
খৃষ্টীয় ভ্রাতৃবর্গ, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনার জন্যে আমরা এই মিটিং-এ মিলিত হয়েছি।
হোয়াইট ঈগলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে এমন কেউ দুনিয়াতে আছে বলে আমার জানা ছিল না। বিশেষ করে আমেরিকা উপমহাদেশে আমাদের কোন লোকের গায়ে কেউ হাত তুলতে পারে, এটা অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু সে অকল্পনীয় ঘটনাই আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সপ্তাহ দু’য়েক আগে সাউথ টার্কো দ্বীপের ওকারী গ্রামে একজন আগন্তুক এশীয়ানের হাতে আমাদের চারজন লোক খুন হয়। এ খবর পাওয়ার পর আমাদের গ্রান্ড টার্কস অফিস দু’টি মোটর বোটে প্রথমে দশজন, পরে আরও বিশজন সশস্ত্র লোক পাঠায় সেই এশীয়ান ও একটি মেয়েকে ধরে আনা ও ওকারী গ্রামকে উচিত শাস্তি দেবার জন্যে। কিন্তু অস্ত্রপাতি সহ এই ত্রিশজন লোকই হারিয়ে গেছে।’
ফার্ডিনান্ডের সামনে মিটিং হলের চেয়ারে যারা বসে আছে সকলেই ক্যারিবিয়ান হোয়াইট ঈগলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
তাদেরই একজন ফার্ডিনান্ডের কথার মাঝখানে বলে উঠল, ‘এশীয়ান ও মেয়েটি কে? ওরা এখন কোথায়?’
‘এশীয়ান একজন ট্যুরিস্ট মুসলমান হতে পারে। আর মেয়েটিকে আপনারা সবাই জানেন লায়লা জেনিফার। ষড়যন্ত্রমূলক ডেমোগ্রাফিক সমীক্ষা যারা করেছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র সেই এখনও জীবিত আছে। এশীয়ান লোকটা এখন ছিল জেনিফারের বাড়িতে। এখন সেখানে কিংবা কোথায় আছে আমরা জানি না।’ বলল ফার্ডিনান্ড।
‘সেখানে থাকা না থাকার ব্যাপারে আমরা অনিশ্চিত কেন?’ বলল
সদস্যদের একজন।
‘কারণ যাদেরকে খোঁজ নিতে পাঠানো হয়েছে, তারা বাড়ি পর্যন্ত
পৌঁছা নিরাপদ মনে করেনি। সকল অপরিচিত লোককে সেখানে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। আর কাউকে জিজ্ঞাসা করে সেখানে কিছু জানার পরিবেশ এখন নেই। তবে অনুমান করা হচ্ছে, তারা সেখানেই আছে।’
‘এমন বিস্ময়কর পরিবর্তন সেখানে কিভাবে এল?’
‘আমরা বুঝতে পারছি না।’
‘আমাদের ৩০ জন মানুষ হারিয়ে যাওয়া যেমন বিস্ময়কর ঘটনা, তেমনি বিস্ময়কর ঘটনা এই পরিবর্তন।’ বলল আরেকজন সদস্য।
‘ঘটনাটা এত বড় বলেই তো আজকের এই সভা আহবান।’ বলল সেক্রেটারী জেনারেল।
‘কিন্তু কিছু করতে হলে তো কি করবো সেটা জানতে হবে। সেখানকার রহস্যের রূপ কি তা না জানলে আমরা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে কি করতে পারি?’ বলল সামনের একজন প্রবীণ সদস্য।
‘এই পরামর্শের জন্যে আমরা বসেছি। আপনারা বলুন, আমরা কি
করতে পারি?’
একজন তরুণ সদস্য পেছন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি বুঝতে পারছি না হোয়াইট ঈগল কি দুর্বল হয়ে পড়ল যে, একটা গ্রামের একটা ছোট্র ঘটনা নিয়ে আমরা এমন দিশেহারা হয়ে পড়েছি?’
‘চৌত্রিশ জন সশস্ত্র লোক হারিয়ে যাওয়া ছোট ঘটনা নয়।’ বলে
উঠল আরেকজন সদস্য।
‘চৌত্রিশ জন মানুষ হারিয়ে যাওয়া ছোট ঘটনা নয়, কিন্তু ওকারী ও সিডি কাকেম গ্রাম হোয়াইট ঈগলের কাছে বড় কিছু নয়।’
‘সম্মানিত তরুণ সদস্য ঠিক বলেছেন। তাকে ধন্যবাদ। হোয়াইট
ঈগল-এর কাছে ওকারী ও সিডি কাকেম কিংবা সেই এশীয়ান বড় কিছু নয়। কিন্তু আমাদের ৩৪জন সদস্য হারিয়ে যাওয়া হোয়াইট ঈগল-এর জন্যে প্রথম বড় ঘটনা। তাই আমরা পরামর্শ করে অগ্রসর হতে চেয়েছি।’ বলল ফার্ডিনান্ড।
আরেকজন তরুণ সদস্য বলল, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এ ধরণের পরামর্শ করে কাজ হয় না। যখনই আমাদের লোক হারিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া
গেল, সে মুহূর্তেই আমাদের আঘাত হানা উচিত ছিল ওকারী ও সিডি কাকেম গ্রামে। আজ পরামর্শ করে আমরা যখন অগ্রসর হবো, তখন শত্রু নিশ্চয় আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।’
‘আমাদের তরুণ সদস্যকে ধন্যবাদ। তাঁর অভিমতের সাথে আমি
একমত। কিন্তু একটা বিষয় আমি বিবেচনা করতে অনুরোধ করি। ওকারী গ্রামে চারজন লোক খুন হবার পর তড়িৎ ব্যবস্থা হিসেবে এ ধরণের কোন পরামর্শ ছাড়াই শক্তিশালী অভিযান পাঠিয়েছিলাম ওকারী ও সিডি কাকেম গ্রামে। ত্রিশটি স্টেনগান, ত্রিশটি রিভলবার এবং দশ বাক্স বাড়তি গুলীসহ ত্রিশজন জানবাজ সদস্যের এই দল ছোট ছিল না। কিন্তু সে অভিযান আমাদের ব্যর্থ হয়েছে, কিভাবে ব্যর্থ হয়েছে আমরা জানি না। ব্যর্থতার একটা চিত্র আমাদের সামনে থাকলে আমরা চোখ বন্ধ করে সেদিকে পা বাড়াতে পারতাম। কিন্তু তা আমরা পারিনি। আমরা মনে করছি, সকলের জন্যেই এটা বিবেচনার বিষয়। এই জন্যেই এই বৈঠক।’ বলল ফার্ডিনান্ড।
অন্য একজন তরুণ সদস্য বলল, ‘সম্মানিত চীফ-এর কথা আমি বুঝতে পেরেছি। তার যুক্তির সাথে আমি একমত। তবে আমি মনে করি একটা সুস্পষ্ট বিষয় নিয়ে বিরাট আলোচনা করে বিপুল সময় খরচকরার কোন প্রয়োজন নেই। অবিলম্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হোক।’
‘ধন্যবাদ। আপনার মতটা বলুন।’ বলল ফার্ডিনান্ড।
তরুণ সদস্যটি সংগে সংগে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘সিদ্ধান্তের ব্যাপারটা সুস্পষ্ট, যে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের আগের অভিযান ব্যর্থ হয়েছে, সে লক্ষ্য অর্জনের জন্যে এখনই অভিযান পাঠানো হোক। এতে লক্ষ্য অর্জনও হবে, আগের অভিযান সম্পর্কিত আমাদের সব প্রশ্নের জবাবও মিলবে।’
তরুণ সদস্যটি থামতেই লের প্রায় সব সদস্যই একযোগে উঠে দাঁড়িয়ে সমস্বরে বলল, ‘আমরাও এর সাথে একমত।’
‘ধন্যবাদ। সে অভিযানটা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনারা মনে করেন?’
আবার একজন তরুণ সদস্য উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘অভিযানটা কেমন হবে আপনারা ঠিক করবেন। আমরা যেটা চাই, খৃষ্টীয় হোয়াইট নেশন যা চায়, তাহলো, ‘নষ্টের মূল ঐ জেনিফারকে জীবন্ত ধরে আনতে হবে। আর ঐ এশীয়ানকেও কোন সহজ মৃত্যু দেয়া যাবে না। তাকেও জীবন্ত আমরা চাই। আর ওরা যেমন আমাদের ৩৪জন লোককে গায়েব করেছে, তেমন আমরা চাই ওকারী ও সিডি কাকেম গ্রামের কোন অস্তিত্ব থাকবে না সাউথ টার্কো দ্বীপের মানচিত্রে। এরপরের পদক্ষেপ হবে, যে সব গ্রাম বা যারা তাদের সাহায্য করেছে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে এ দ্বীপপুঞ্জ থেকে। আমাদের কোন অখৃষ্টান অশ্বেতাংগ, বিশেষ করে মুসলমানরা থাকতেই পারবে না।’ আবেগ ভরা কণ্ঠ থামল তরুণ সদস্যটির।
সদস্যটি থামতেই এবারও সব সদস্য হাত উঁচু করে একবাক্যে বলল, ‘আমরা একমত। এই কাজে কোন প্রকার দুর্বলতা না দেখানো হোক, আমরা চাই।’
সবাই থামল। নীরবতা কয়েক মুহূর্ত।
সেই নীরবতা ভেঙে ভারি কণ্ঠ শ্রুত হলো ফার্ডিনান্ডের। তার আসনে নড়ে-চড়ে বসে কথা শুরু করেছে ফার্ডিনান্ড, ‘সকলকে ধন্যবাদ। সকলে যা বলেছেন এবং যে আবেগের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তার সাথে আমরা একমত। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, হোয়াইট ঈগল কোন কাজে কখনও দুর্বলতা দেখায়নি, ভবিষ্যতেও দেখাবে না। ‘হোয়াইট ঈগল’ কলম্বাসের সংগঠন এবং আমরা কলম্বাসের সন্তান। আমরা সকলেই জানি, ১৪৯২ সালে কলম্বাস তাঁর যে অভিযাত্রায় আমাদের এই আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন, তাতে তার বড় একটা উদ্দেশ্য ছিল এ থেকে যে ধন-সম্পদ অর্জিত হবে, তা স্পেনে মুসলমানদের চূড়ান্ত পরাজয় ও স্পেন থেকে মুসলমানদের বিতাড়নের কাজে লাগবে। স্পেন থেকে মুসলমানদের চুড়ান্ত উচ্ছেদকারী রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলাকে কলম্বাস এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাদের কাছ থেকে অভিযাত্রার জন্যে অভূতপূর্ব সাহায্য আদায় করেছিলেন। সুতরাং কলম্বাসের সে অভিযাত্রা ছিল এক অর্থে মুসলিম উচ্ছেদের লক্ষ্যাভিসারী। এ লক্ষ্য না থাকলে স্পেন থেকে মুসলিম বিতাড়নের যুদ্ধে ব্যাপৃত রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলা অমনভাবে হাত উজাড় করে কলম্বাসকে সাহায্য করতেন না। পৃথিবীর বড় বড় সমীক্ষকরা বলেছেন, অভিযাত্রী কলম্বাস হঠাৎ করে রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলার কাছ থেকে যে অস্বাভাবিক সাহায্য পেয়েছিলেন, তা পৃথিবীর আর কোন অভিযাত্রীরই ভাগ্যে জোটেনি। বন্ধুগণ, রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলা কলম্বাসের অভিযাত্রাকে যে দৃষ্টিতে দেখেছিলেন, আমরা আমেরিকার খৃষ্টীয় হোয়াইট নেশন কলম্বাসের অভিযাত্রাকে সে দৃষ্টিতেই দেখছি। এই কারণেই বন্ধুগণ, আমেরিকার প্রকৃত আবিষ্কর্তা আমেরিগো ভেসপুসি হলেও আমরা স্মরণ করি কলম্বাসকে। আমরা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের পাঁচশ বছর পূর্তি উৎসব পালন করেছি, কিন্ত প্রকৃতই যারা আমেরিকার মুল ভুখন্ডে পা দিয়েছিলেন, আমেরিকার আবিষ্কার করেছিলেন, তাদের কথা আমরা স্মরণ করিনি। আমরা হোয়াইট ঈগল আমেরিকার এ মানসিকতারই উত্তর সূরী। আমরা কলম্বাসের সন্তান। কলম্বাস এই ভূখন্ডে স্পেন থেকে মুসলিম নির্মূলকারী রাজা ফার্ডিনান্ড ও রাণী ইসাবেলার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন। সেই পতাকাই আমরা বহন করছি। এই পতাকার ছায়ায় গোটা আমেরিকা। এই পতাকার ছায়ায় আর যাই হোক মুসলমানদের কোন স্থান নেই।’ থামল ফার্ডিনান্ড। একটু পানি খেল গ্লাস থেকে।
তারপর আবার শুরু করল, ‘খৃষ্টীয় হোয়াইট নেশন-এর গর্বিত সন্তান বৃন্দ, শক্তিশালী অভিযান প্রেরণের ব্যাপারে আমরা সকলেই একমত। এই অভিযান কার কার নেতৃত্বে কতজন কিভাবে কখন প্রেরিত হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আমরা নিচ্ছি। এইটুকু আমি আপনাদের জানিয়ে রাখছি, জেনিফার ও ঐ এশীয়ানটা দ্বীপের যেখানেই থাক আমরা তাদের ধরবই। আর ওকারী ও সিডি কাকেম গ্রামের মানুষ পরশু দিনের সূর্যোদয় দেখবে না, এ ব্যাপারে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন।’ থামল ফার্ডিনান্ড।
সে থামতেই গোটা হলে একটা হর্ষধ্বনি উঠল। শ্লোগান উঠল, ‘খৃষ্টীয় হোয়াইট নেশন জিন্দাবাদ। জিন্দাবাদ হোয়াইট ঈগল। জিন্দাবাদ ফার্ডিনান্ড।’

সেদিনই দুপুর ১২টা।
সানসালভাডোরের কলম্বাস বন্দর থেকে পাঁচটি বড় মোটর বোট সাউথ টার্কো দ্বীপের দিকে রওনা হলো।
পাঁচটি বোটে শতাধিক মানুষ। প্রত্যেক বোটের পাটাতনের নিচে অস্ত্র ও গোলা-গুলীর বাক্স।
বোটগুলো চলছে বিমানের সম্মিলিত মহড়ার মত সুন্দর সার বেঁধে।
সারিবদ্ধ বোট বহরকে নেতৃত্ব দিচ্ছে যে বোটটি, সবার আগের সেই বোটের মাথায় পাশাপাশি দু’টি ডেক চেয়ার পাতা।
ডান পাশের আসনটিতে বসেছে বোট বহরের কমান্ডার জন ব্ল্যাংক এবং তার বামপাশে সহকারী কমান্ডার জিম টেইলর।
জন ব্ল্যাংক মধ্য বয়সী এবং টেইলর তারুণ্যদীপ্ত যুবক।
‘পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে তো আমাদের কিছু বলা হয়নি স্যার?’
বলল টেইলর তার বস ব্ল্যাংককে লক্ষ্য করে।
‘টার্কস দ্বীপপুঞ্জের বৃটিশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের প্রচুর সমর্থক আছে। তাদের সহযোগিতা আমরা পাই। কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রকাশ্যে আইনের অধীন তাদের থাকতেই হবে। এ জন্যে আমরা কাজ করব তাদেরও চোখের আড়ালে। এ কারণেই রাতকেই বেছে নেয়া হয়েছে। ভোর হবার আগেই আমাদের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
‘আমরা কি সাউথ টার্কো দ্বীপে সরাসরি যাচ্ছি?’
‘না না, আমরা যাচ্ছি এখন গ্রান্ড টার্কস-এ। আমরা মেডিকেল ইউনিট নিয়ে আসিনি। ওখানকার হোয়াইট ঈগল অফিস থেকে একটা শক্তিশালী মেডিকেল ইউনিট নিতে হবে।’
‘আমরা কি ওদের জানিয়েছি?’
‘না জানানো হয়নি। তবে অসুবিধা হবে না। আমরা ওখানে পৌঁছাব রাত আটটার দিকে। রাত ১১টার দিকে আমরা সাউথ টার্কো দ্বীপে রওয়ানা হবো। সুতরাং সময়ের অসুবিধা নেই।’
‘ঠিক আছে। আমি ভাবছিলাম, ওখানকার মেডিকেল ইউনিট যথেষ্ট শক্তিশালী নাও থাকতে পারে।’
‘তা ঠিক। যা সময় আমরা হাতে পাচ্ছি, তাতে প্রয়োজন হলে আমরা ঔষধপত্র সংগ্রহ করতে পারবো। কাছেই কুইন এলিজাবেথ হাসপাতাল। ওখানকার সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরটি সার্বক্ষণিক খোলা থাকে।’
‘আমরা রাত ১২টার দিকে ‘সাউথ টার্কো’র পোর্ট টার্কো’তে নামছি। সেখান থেকে ওকারী ও সিডি কাকেম গ্রাম খুব কাছে নয়।আমরা যাবার জন্যে অতগুলো অটো হুইলার কি তখন পাব সেখানে?’
‘আমরা সেখানে নামছি না টেইলর। অতএব চিন্তার কিছু নেই। আমাদের আগের অভিযান যেখানে নেমেছিল, দক্ষিণের সেই মৎস ঘাটে আমরাও নামব।’
‘ঘাটের অবস্থার খবর না নিয়েই সেখানে ল্যান্ড করা কি আমাদের ঠিক হবে?’
‘তুমি ঠিক চিন্তা করেছ। এ চিন্তা আমরা করিনি বলে মনে করো না। আমাদের এজেন্টরা সেখানে আজ বিকেল থেকে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকবে। আমাদের বোটের হেডলাইট থেকে সংকেত পাওয়ার পর ওরা সবুজ সংকেত দেবে। যদি সে সবুজ সংকেত পাওয়া যায়, তাহলেই আমরা ল্যান্ড করব।’
‘আর একটা কথা স্যার, আগের অভিযানে ওরা শক্তি দু’ভাগ করেছিল, ওটা ঠিক হয়নি।’
‘কিন্তু টেইলর এবারও তাই করতে হবে। ঘাটে নামার পর অর্ধেক বাহিনী নিয়ে তুমি যাবে সিডি কাকেম গ্রামে। অবশিষ্ট অর্ধেক নিয়ে আমি যাব ওকারী গ্রামে। তুমি সিডি কাকেম গ্রাম নিশ্ছিদ্রভাবে ঘিরে ফেলার পর মোবাইলে আমাকে জানাবে। তারপর আমি ওকারী গ্রামে হামলা চালাব। ওকারী গ্রামের অপারেশন শেষে আমরা সিডি কাকেমে পৌছলে, তবেই সেখানে অপারেশন শুরু হবে।’ তার আগে তোমার দায়িত্ব হবে গ্রাম থেকে একটা প্রাণীকেও বের হতে না দেয়া।’
‘কিন্তু অনেক সময় নষ্ট করতে হবে দাঁড়িয়ে থেকে।’
‘সময় নষ্ট হবে না টেইলর। গ্রাম ঘেরাও করার পর বেশ কাজ আছে। গ্রাম ঘেরাও হবার পর আমাদের বিষ্ফোরণ ইউনিট গ্রামে ঢুকে ঘর-বাড়ির প্রতিটি গুচ্ছে বোমা পেতে আসবে। সিডি কাকেম গ্রামে শুধু বোমা পাতা হবে না জেনিফারের বাড়িতে। বোমা পাতার পর ওরা ফিরে এলে ডেনোনেটরের একটা সুইচ টিপলেই গোটা গ্রাম দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে। তখন শুধু আমাদের কাজ হবে বেঁচে যাওয়া লোকগুলোকে হত্যা করা। ৫০ জন লোকের এতে বেশি সময় লাগবে না।’ থামল জন ব্ল্যাংক।
একটা সিগারেট ধরাল সে। তারপর বলল, ‘তোমার সিডি কাকেম গ্রামের অপারেশনও আগেই শুরু করা যায়। কিন্তু দেরী করা এই জন্যে যে, ওখানে জেনিফার ও সেই এশীয়ান রয়েছে মনে করা হচ্ছে। তাদেরকে জীবন্ত ধরতে হবে। অতএব সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন হতে পারে। তবে বোমা পাতার কাজ তোমার সম্পূর্ণ করে রাখতে হবে। যাতে আমরা পৌছার সাথে সাথে অপারেশন শুরু হয়ে যায়।’
আনন্দে মাথা নাড়ল টেইলর। বলল, ‘কিন্তু আমি ভাবছি ৩০ জন সশস্ত্র লোক গায়েব হবার রহস্য কি করে জানা যাবে?’
‘ভেবনা টেইলর। এ জন্যেই ঐ এশীয়ান ও জেনিফারকে আমরা জীবন্ত ধরতে যাচ্ছি।’
জন ব্ল্যাংক কথা শেষ করলেও টেইলর কথা বলল না।
অল্পক্ষণ চুপ থাকার পর সে বলল, ‘মুসলিম ও অশ্বেতাংগ পুরুষ
শিশু কমিয়ে ফেলার মাধ্যমে আমরা জনসংখ্যার যে শ্বেতাংগকরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছি, এটা খুব ধীর। কতদিনে এ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হবে কে জানে। তার চেয়ে আজকের মত ডাইরেকট এ্যাকশনে আমাদের এগুনো উচিত বলে আমি মনে করি।’
‘দেখ তুমি শিশুর মত কথা বলছ। আবেগ নিয়ে এসব কথা বলা যায়, কিন্তু এসব কাজ করা যায় না। দেখ, দু’চারটা গ্রাম জ্বালানো যায়, লোকদেরও হত্যা করা যায় এবং একে দুর্ঘটনা ও পারস্পরিক দাঙ্গার ফল বলে চালিয়েও দেয়া যায় কিন্তু সব গ্রামে তা করা যাবে না। তাহলে গোটা দুনিয়ায় হৈচৈ শুরু হয়ে যাবে। চাপে পড়ে জাতিসংঘ ও শত শত মানবাধিকার ফোরাম ছুটে আসবে এখানে। তাতে সব জারিজুরি আমাদের ধরা পড়ে যাবে। আমরা ব্যর্থ হবো। অন্যদিকে জনসংখ্যা পরিবর্তনের যে পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি, তা কারও চোখে পড়বে না। সময় বেশি লাগলেও অত্যন্ত নিরাপদে জনসংখ্যার শ্বেতাংগকরণ ও খৃষ্টীয়করণ হয়ে যাবে।’
‘বুঝলাম। কিন্ত জনসংখ্যা পরিবর্তনের এ ষড়যন্ত্র তো জেনিফাররা
ধরে ফেলেছে।’
‘ষড়যন্ত্র ধরে ফেলেনি এবং তা পারাও সম্ভব নয়। ওরা যেটা ধরেছে সেটা হলো, ‘মুসলিম পুরুষ সংখ্যার হার কমছে। কিন্তু এটা কোন ষড়যন্ত্রের ফল তা তারা জানতে পারেনি। জানতেও কোনদিন পারবে না।’
‘কিন্তু এই পরিবর্তন কেন, এ নিয়ে অনুসন্ধান হবে তো?’
পৃথিবী জানতে পারলে তো হবে! যাতে জানতে না পারে, তারই তো ব্যবস্থা আমরা করেছি। ওদের রেকর্ডপত্র আমরা ধ্বংস করেছি।
সমীক্ষার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের আমরা হত্যা করেছি। জেনিফার শেষ হলে পরোক্ষ সাক্ষীও শেষ হয়ে যাবে।’
‘আমি ভাবছি স্যার, জেনিফার খুবই ক্ষুদ্র, খুবই দুর্বল, কিন্তু সাউথ টার্কো দ্বীপের ওকারী ও সিডি কাকেম অঞ্চলে যা ঘটল তা খুবই বড়।এর কোন ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাচ্ছি না।’ থামল টেইলর।
জন ব্ল্যাংকও কিছু বলল না।তারও চোখে মনে হয় ঐ একই প্রশ্ন।

Top