৩১. ফ্রি আমেরিকা

চ্যাপ্টার

তখন বেলা দশটা পয়তাল্লিশ মিনিট।
অভিজাত জর্জ ওয়াশিংটন স্টেট হাসপাতালের ৩৩ নাম্বার কেবিন ওয়ার্ডের ডক্টর’স লাউঞ্জ থেকে তিনজন ডাক্তার বেরিয়ে এল। অল্প দূরে দাঁড়ানো একজন নার্স তাদের সাথে এসে যোগ দিল।
তারা গিয়ে প্রবেশ করল ৩৩ নাম্বার কেবিন ওয়ার্ডের অফিসে।
অফিসটি কেবিন ওয়ার্ডের প্রবেশ মুখেই। এর সামনে দিয়ে একটা করিডোর দরজা পেরিয়ে ভেতরে চলে গেছে। এই করিডোরের দু’পাশে কেবিন।
কেবিন ওয়ার্ডের অফিসে তখন বসেছিল শুধু হেড নার্স। ডাক্তারের আসন খালি।
একজন নার্সসহ তিনজন ডাক্তার অফিসে প্রবেশ করতেই হেড নার্স উঠে দাঁড়াল। বলল ডাক্তারকে লক্ষ্য করে, ‘গুড মর্নিং স্যার। কিছু প্রযোজন? আম কি সাহায্য করেতে পারি?’
তিনজন ডাক্তারের দুজন এবং নার্সটি সামনের কাঁচের দেয়াল আড়াল করে দাঁড়িয়েছে।
তৃতীয় ডাক্তার অফিসের হেড নার্সের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল। হেড নার্সের প্রশ্নের জবাবে সে বলল, ‘এ্যাটেন্ডিং ডাক্তার স্টিফেন কোথায়?’
‘তাকে দরকার? উনি গিয়েছেন ২১ নাম্বার কেবিনে। রুটিন…’
কথা শেষ করতে ারল না হেড নার্স। তার সামনে দাঁড়ানো ডাক্তার একটা ক্লোরোফরম ভেজা রুমাল চেপে ধরল হেড নার্সের নাকে।
মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
নার্সের সংজ্ঞাহীন দেহ পড়ে যাচ্ছিল। ডাক্তার দু’হাতে তুলে নিল তার দেহ। তারপর দেহ নিয়ে সে প্রবেশ করল এটাচড বাথে। বাথরুমে দেহটা রেখে বাইরে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল ডাক্তার।
ডাক্তারদের সাথে আসা নার্স ইতিমধ্যেই হেড নার্সের চেয়ারে বসেছে।
ডাক্তার বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল, ‘মিস নোয়ান নাবিলা, আমরা সারা জেফারসনকে নিয়ে বাইরে বেরুনো পর্যন্ত এই অফিস আপনাকে দখলে রাখতে হবে।’
এই সময় একজন ফাদার প্রবেশ করল অফিসে। বলল, ”আইজাক, আমি নাবিলার সাথে অফিসে বসছি। আমি একটা প্যাশেন্ট ট্রলি নিয়ে এসেছি। ওটা নিয়ে তোমরা দ্রুত চলে যাও ২১ নাম্বার কেবিনে। একজন আগে যাবে ডাক্তারকে ট্যাকল করার জন্যে। অবশিষ্ট দু’জন যাবে ট্রলি নিয়ে।
ডাক্তার তিনজন বেরিয়ে গেল।
ওরা বেরিয়ে যাবার দু’মিনিট পরেই দুজন লোক এল কেবিনের অফিসে। তারা ডিউটি টেবিলের নার্স অর্থাত্ নোয়ান নাবিলাকে দু’টি কার্ডৃ দেখিয়ে বলল, ‘আমরা এফবিআইেয়ের লোক। এই নিন সারা জেফারসনের রিলিজ অর্ডার। রিলিজ সার্টিফিকেট দিন। আমরা তাকে নিয়ে যাব। গেটে সবাই অপেক্ষা….’
এফবিআই-এর লোকটি কথা শেষ করতে পারল না। ফাদার-এর পোশাক পরা লোকটি পেছন দিক থেকে তার ভারী মেশিন রিভলবারের দুটি ঘা মারলো দুজনের মাথায় পূর্ণ শক্তিতে। দুজনেই টলে উঠে পড়ে গেল মেঝেতে।
সংগে সংগেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল নোয়ান নাবিলা। দৌড়ে গিয়ে বাথরুমের দরজা খুলে ফেলল। তারপর দুজন দ্রুত সংজ্ঞাহীন এফবিআই-এর দুজনের দেহ নিয়ে বাথরুমে ঢুকল।
ওদিকে তিনজন যাক্তারের একজন আগেই ঢুকে গিয়েছিল কেবিনে।
গট গট করে হেঁটে সোজা গিয়ে সে ঢোকে ২১ নাম্বার কেবিনে। দেখে, ডাঃ স্টিফেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সারা জেফারসনের কেসকার্ডে কিছু লিখছেন।
পায়ের শব্দ পেয়ে ডাঃ স্টিফেন মুখ তুলল। অপরিচিত একজন ডাক্তারকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে বলল, ‘ডক্টর…. কোন খবর?’
‘হ্যাঁ মিঃ স্টিফেন। ডাঃ এলিস আপনাকে জরুরী কল করেছেন।’
ডাঃ এলিস হাসপাতালের মেডিকেল বিভাগের ডাইরেক্টর।
‘জরূরী কল’-এর কথা শুনেই ডাঃ স্টিফেন তড়িঘড়ি করে সারা জেফারসনের কেসকার্ডটা ঝুলিয়ে রেখে দরজার দিকে হাঁটা শুরু করে বলল, ‘চলি তাহলে।’
ডাঃ স্টিফেন আগন্তুক ডাক্তারকে অতিক্রম করার সাথে সাথেই আগন্তুক ডাক্তার পেছন থেকে অদ্ভুত ক্ষিপ্রতার সাথে বাম হাত দিয়ে ডাঃ স্টিফেনের গলা পেঁচিয়ে ধরল এবং ডান হাত দিয়ে ক্লোরোফরম ভেজা রুমাল ডাঃ স্টিফেনের নাকে চেপে ধরল।
ডাঃ স্টিফেন ছাড়া পাওয়ার জন্যে কিছু সময় ধ্বস্তাধ্বস্তি করল। তারপর ধীরে ধীরে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ল।
আগন্তুক ডাক্তার সংজ্ঞাহীন স্টিফেনের দেহ টেনে নিয়ে এটাচ্ড বাথরুমে রাখল।
বাথরুমের দরজা বন্ধকরেই সে ছুটে এল সারা জেফারসনের কাছে। হাতের ক্লোরোফরম ভেজা রুমালটি এবার সে চেপে ধরল ঘুমন্ত সারা জেফারসনের নাকে।
সারা জেফারসন ঘুম ভেঙে যাওয়ায় চোখ মেলল ও নাক ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু অল্প কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তারও দেহ নিস্তেজ হয়ে গেল। সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলল সে।
ডাক্তার বেমের অপর দু’জন এসময় ট্রলি নিয়ে সারা জেফারসনের কক্ষে পৌছে গেল।
দ্রুত তিনজন ধরাধরি করে সারা জেফারসনের দেহ ট্রলিতে তুলল এবং একটা সাদা চাদর দিয়ে সারা জেফারসনের আপাদমস্তক ঢেকে দিল।
ওরা বেরিয়ে এল কেবিন থেকে।
এসে পৌঁছল কেবিনের বাইরের করিডোরটিতে।
কেবিন ওয়ার্ডের অফিস অতিক্রম করতেই অফিস থেকে বেরিয়ে এল ফাদার–এর পোশাক পরা লোকটি এবং নার্স-এর পোশাক পরা নোয়ান নাবিলা।
ফাদার হাঁটতে শুরু করল ট্রলির আগে আগে। ট্রলির আগে দুজন ডাক্তার, পেছনে একজন। আর নার্স হাঁঁটছে ট্রলির মাঝ বরাবর।
ডাক্তারবেশী একজন জজ্ঞেস করল ফাদারকে, ‘ডেথ সার্টিফিকেট তৈরী করে নেয়া হয়েছে তো?’
‘হ্যাঁ। ওটা আমার কাছে আছে। আমিই গেটে দেখাব। আমি বলব, আমার একজন আত্মীয়া মারা গেছে। তোমরা লাশ পৌাছাতে আমাকে সাহায্যকরছ।’
তারা এসে পৌঁছল হাসপাতালের ডিপারচার লাউঞ্জে। ডিপারচার লাউঞ্জে বেশ অনেক পুলিশ। লাউঞ্জের ডিপারচার গেটে দুজন গেটরক্ষী ছাড়াও অনেক কজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।
একদম দ্বিধাহীন ভাবে তারা ট্রলি নিয়ে গেটে পৌছল।
‘ফাদার ডেথ সার্টিফিকেট বের কের গেটম্যানের হাতে দিল। বলল, ‘আমার বোন মারা গেছে। আমি একা মানুষ। ওরা আমাকে সহযোগিতা করছেন।’
গেটম্যানটি ডেথ সার্টিফিকেট অন্য গেটম্যানের হাতে দিয়ে বলল, ‘রিলিজ সার্টিফিকেট দিন।’
ফাদার রিলিজ সার্টিফিকেট পকেট থেকে বের করে গেটম্যানের হাতে দিল।
গেটের পুলিশরাও ডেথ ও রিলিজ সার্টিফিকেট দেখল।
একজন গেটম্যান ওকে বলে গেট খুলে দিল।
ট্রলি নিয়ে বের হয়ে এল তারা।
বাইরেই ধীর্ঘ ও প্রশস্ত গাড়ি বারান্দা।
ডিপারচার গেট-সোজা গাড়ি বারান্দায় রাখা আছে তাদের গাড়ি।
গাড়িতে তোলা হয়েছে সারা জেফারসনকে।
গাড়ির পেছনটা লক করেদুজন এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ির সামনের দিকে উঠার জন্যে। নোয়ান নাবিলা এবং আরেকজন আগেই গাড়িতে উঠেছে। ফাদারের পোশাকধারী শুধু দাঁড়িয়ে তখনও গড়ি বারান্দায়।
এ সময় অনেক কয়জন পুলিশকে ছুটে আসতে দেখা গেল গাড়ির দিকে।
আসতে আসতে একজন চিত্কার করে বলল, ‘একটু দাঁড়ান ফাদার।’
ওরা এল।
চারজন এসে ফাদারের সামনে দাঁড়াল এবং আরও দু’জন গিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়াল গাড়ির গতিরোধ করে।
একজন পুলিশ ফাদারকে বলল, ‘গাড়ি খুলুন, আমরা লাশ দেখব।’
ফাদার দেখল আরও কয়েকজন পুলিশ এগিয়ে আসছে।
ভেতরটা জ্বলে ্উঠল ফাদারের। দাঁতে দাঁত চাপল সে। শক্ত হয়ে উঠল মুখমন্ডল। দ্রুত তার হাত চলে গেল আলখাল্লার ভেতরে। সামনে দাঁড়ানো পুলিশরা কিছু বুঝে উঠার আগেই মেশন রিভলবারের নর তাদের উপর দিয়ে ঘুরে এল।
চারজন পুলিশই গাড়ি বারান্দায় লুটিয়ে পড়ল।
গুলী করেই ফাদার ছুটে এসে গাড়িতে উঠল।
এদিকে গাড়ির সামনে দাঁড়ানো দুজন পুলিশ ফাদারকে গুলী করতে দেখে তাদের বন্দুক তুলেছিল ফাদারকে লক্ষ্য করে।
কিনন্তু গাড়ির ভেতর থেকে দুটি গুলী এসে তাদের নিরব করে দিল। ছিটকে পড়ল তাদের দেহ দু’টি রাস্তার উপর। তাদের উপর দিয়ে ফাদারদের গাড়িটা তীর বেগে বেরিয়ে এল হাসপাতালের এলাকা থেকে।
গাড়ি স্টার্ট নেবার সময় পেছনে চোখ রাখা ফাদারের চোখে পড়ল, এইমাত্র গাড়ি বারান্দায় প্রবেশ করল একটি গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে এল আহমদ মুসা এবং জর্জ আব্রাহাম জনসন।
একটা ক্রুর হাহসি ফুটে উঠল ফাদারের মুখে। গা থেকে ফাদার আরখাল্লাখুলে ছুড়ে ফেলে গাড়ির সকলকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘একটা সুখবর তোমার তোমাদের জন্যে, আহমদ মুসা ও জর্জ আব্রাহাম জনসন এইমাত্র হাসপাতালের গাড়ি বারান্দায় গাড়ি থেকে নামল।’
‘মি: জেনারেল শ্যারন আমাদের সেদিনকার ব্যর্থতার ছেঅট হলেও একটা প্রতিশোধ নেয়া হলো।’ বলল নোয়ান নাবিলা।
‘এটা খুব ছোট প্রতিশোধ নয় মিস নাবিলা। আহমদ মুসা যখন গিয়ে দেখবে তার প্রেমিকা সারা জেফারসন নেই এবং যখন জানবে তর চোখের সামনে দিয়েই আমরা তাকে নিয়ে গেছি, তখন হৃদয়টা তার খসে যাবে।’ জেনারেল শ্যারন বলল।
‘প্রেমিকা, না বন্ধু?’ বলল নোয়ান নাবিলা।
‘বন্ধুর শোকে অসুস্থ হয়ে কেউ হাসপাতালে আসে? আহত আহমদ মুসা আবার শত্রুর হাতে পড়েছে, অথবা কোথায় গিয়ে কি হলো এই চিন্তাতেই সারা জেফারসন অসুস্থ হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে হাসপালালে নিয়ে আসতে হয়।’ জেনারেল শ্যারন বলল।
‘একজন ক্রিমিনালের জন্যে এটা কি স্বাভাবিক? জেফারসন কন্যা এমন একজন লোকের জন্যে পাগল হবেন?’ বলল নোয়ান নাবিলা।
‘কাকে ক্রিমিনাল বলছেন? আহমদ মুসা আমাদের জানি দুশমন, তাকে আবার হাতে পেলে হত্যাও করতে পারি, কিন্তু তাকে ক্রিমিনাল বলতে পারবো না। অত্যন্ত বর্নঢ্য বিপ্লবী জীবন তার। শুধু জেফারসন কন্যা কেন যে কোন কন্যাই তার সান্নিধ্যে আসতে গৌরব বোধ করবে।’ জেনারেল শ্যারন বলল।
‘তাহলে সে চরিত্রহীন?’ বলল নাবিলা।
‘তাও হয়তো নয়। আমরা যতদুর জানি, কন্যারা তার সান্নিধ্যে যায় বটে, কিন্তু সে কারও দিকে ফিরে তাকায় না। সে স্ত্রীর প্রতি অত্যন্ত বিশ্বস্ত, আইডিয়ালিস্ট।’
নাবিলা একটু চিন্তা করে বলর, ‘আপনার কথা বোধ হয় ঠিক। আমাদের সাগরিকা সেন নিশ্চয় বোল্ড আউট হয়েছে। তার মধ্যে আগের সেই উত্সাহ নেই। সে একেবারে ম্লান হয়ে গেছে। ঘটনার পর একবার দেখা হওয়াতেই এটা আমি বুঝেছি।’
বরৈ একটু থেমে আবার শুরু করল, ‘তাহলে সারা জেফারসনের ব্যাপার কি?’
‘বিষয়টা আমাদের কাছে এখনও দুর্বোধ্য।’ বলর জেনারেল শ্যারন।
‘নিশ্চিত না হয়ে সারা জেফারসনকে কিডন্যাপ করলেন?’ নাবিলা বলল।
‘কিডন্যাপ আমাদের ঠিক হয়েছে। সারা জেফারসনকে আমাদের হাত থেকে উদ্ধারের জন্যে আহমদ মুসা নিজের জীবনও বাজী রাখবে। এ বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নেই। দেখুন বন্দীত্ব থেকে মুক্ত হবার পর আহমদ মুসা প্রথম সুযোগেই ছুটে এসেছে সারা জেফারসনের কাছে।’
‘আমরা যেখান থেকে এসেছি, সেখানেই যাব স্যার?’ জিজ্ঞেস করল ড্রাইভিং সিটে বসা আইজ্যাক।
‘না, মিঃ জোনসের নতুন কেনা ওয়ামিংটন এভেনিউ-এর নতুন বাড়িতে নিয়ে চল। ওখানেই ওকে রাখা হবে।’ বলল জেনারেল শ্যারন। থামল সে।
সবাই চুপচাপ।
ছুটে চলেছে গাড়ি।

নিজের বেডের পাশে একটা ইজি চেয়ারে বসেছিল সারা জেফারসন। বলছিল সে, ‘আমাকে কিডন্যাপ করলেই কি আপনাদের কালো কাজ সাদা হয়ে যাবে?’
‘তা হবে না, কিন্তু আহমদ মুসার শাস্তি হবে। যাতনা-যন্ত্রনায় তাকে যতটুকু বিপর্যস্ত করা যায় সেটুকুই আমাদের লাভ।’ জেনারেল শ্যারন বলল।
‘আমাকে কিডন্যাপ করে আহমদ মুসাকে কিভাবে শাস্তি দেবেন? যাতনা-যন্ত্রনায় কেন সে বিপর্যস্ত হবে?’ বলল সারা জেফারসন।
হাসল জেনারেল শ্যারন। হাসল ডেভিড উইলিয়াম জোনসও।
উত্তরটা দিল ডেভিড উইলিয়াম জোনস। বলল, ‘এ উত্তর কি আমাদের কাছ থেকে শুনতে চান? আপনি কি জানেন না মিস জেফারসন আপনার কাছে আহমদ মুসা কি? আর আহমদ মৃসার কাছে আপনি কি?’
ম্লান হাসল সারা জেফারসন। বলল, ‘আপনারা আহমদ মুসাকে জানেন না। দায়িত্ববোধের কাছে কোন দুর্বলতা তার কাছে প্রশ্রয় পায় না। আর সে রকম কোন দুর্বলতা তার আছে বলে আমি জানি না।’
শ্যারন হাসল। বলল, ‘আহমদ মুসাকে আমি বহু বছর ধরে চিনি। যে দায়িত্ববোধের কথা আপনি বললেন, সেই দায়িত্ববোধই এখানে তাকে হিড় হিড় করে টেনে আনবে।আমরা হিসেবে একটুও ভুল করিনি মিস জেফারসন। আহমদ মুসার কাছে আপনি কতটুকু তা আপনি জানেন, আহমদ মুসা আপনার কাছে কতটুকু তাও সে জানে। আর আহমদ মুসার কারনেই যে আপনার এ অবস্থা তা বুঝতে আহমদ মুসার এক মুহূর্তও দেরী হয়নি। এই অনুভূতি তাকে অসহনীয় যন্ত্রনায় জর্জরিত করছে। এই যন্ত্রনা তাকে পাগলের মত টেনে নিয়ে আসবে। নিজেকে যে কোন ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষেপ করে সে আপনাকে মুক্ত করতে চাইবে। আমরা এটাই চাই।’
‘আপনারা যা চান ঈশ্বর তা চান না। আপনাদের সব অপকীর্তি ঈশ্বর প্রকাশ করে দিয়েছেন।’ বলল সারা জেফারসন।
‘ঈশ্বর করেন নি, আহমদ মুসা করেছে। আহমদ মুসা আমেরিকায় না এলে আমাদের কিছু হতো না। আপনাদের ফ্রি আমেরিকা, এফ বি আই আমাদের কিছুই করতে পারতো না। আহমদ মুসা আমাদের সকল সর্বনাশের মূল। তাকে হাতে পেয়েছিলাম, হত্যা না করে আমরা ভুল করেছি। এ ভুল আর আমরা করব না। এবার আর বন্দী করে রাখা নয়, প্রথম সুযোগেই তাকে আমরা এবার হত্যা করব।’ তীব্র কন্ঠে বলল জেনারেল শ্যারন।
সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল সারা জেফারসনের। জেনারেল শ্যারনের কথার একবিন্দুও তার অবিশ্বাস হলো না। জেনারেল শ্যারন ফ্রাস্ট্রেশনের যে পর্যায়ে পৌঁচেছে, সেখানে এমন কিছু করা তাদের জন্যে স্বাভাবিক। সারা জেফারসন নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘আহমদ মুসার উপর এই রাগ ঝেড়ে আপনাদের কি লাব হবে? তার হাতে তো এখন কিছু নেই। আপনাদের বিরুদ্ধে বিচারের আয়োজন করছে সরকার, আহমদ মুসা নয়।’
‘কিন্তু আহমদ মুসার জন্যেই এসব হচ্ছে।’ বলর শ্যারন।
‘কিন্তু আহমদ মুসাকে হত্যা করলে তো এসব বন্ধ হচ্ছে না।’ সারা জেফারসন বলল।
‘আহমদ মুসাকে সরিয়ে দিতে পারলে আমাদের জন্যে অনেক কিছু করার সুযোগ আসবে। মার্কিন পলিটিশিয়ান ও মার্কিন আমলাদের মধ্যে আমাদের লোক কম নেই।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘আচ্ছা মিঃ শ্যারন, আমেরিকা ও আমেরিকানদের ক্ষতি আপনারা কেন করছেন?’
‘আমরা কারও ক্ষতি করছি না। আমরা আমাদের কিছু উপকার করছি। নিজের উপকারের জন্যে কিছু করার অধিকার সকলেরই আছে।’ শ্যারন বলল।
‘তাহলে আহমদ মুসাকে দোষ দিচ্ছেন কেন? সে আমেরিকানদের উপকারের জন্যে কিছু করেছে।’
‘সে আমাদের সর্বনাশ করেছে।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকানদের উপকার মানে আপনাদের সর্বনাশ। আর আপনাদের উপকার মানে আমেরিকানদের সর্বনাশ। আমেরিকা ও আমেরিকানদের মোকাবেলায় এমন অবস্থান আপনারা বেছে নিলেন কেন?’
‘আপনাদের ফ্রি আমেরিকা যে কারনে বলে আমেরিকা আমেরিকানদের। আপনাদের কাজকে আপনারা জাতিপ্রেম বলেন, আমাদের কাজকেও আমরা বলি জাতিপ্রেম।’ বলল জেনারেল শ্যারন।
‘এটা ঠিক নয়, আমরা করছি আমাদের দেশপ্রেম থেকে। কিন্তু আপনাদের কাজ পরিষ্কার ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের সাথে শতকরা আশিভাগ আমেরিকান ইহুদী নেই। দেখছেন তো চারদিক থেকে অবিরাম বিবৃতি আসছে আমেরিকান ইহুদী সম্প্রদায়ের। তারা আপনাদের নিন্দা করছে এবয় বলছে, আপনাদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং জাতিপ্রেম থেকে আপনারা কাজ করছেন, এটা ঠিক নয়। আপনারা শুধু আমেরিকানদের সাতে বিশ্বাসঘাতকতা করেন নি, নিজ সম্প্রদায়ের সাথের আপনারা বিম্বসঘাতকতা করেছেন।’
ক্রোধে জ্বলে উঠল জেনারেল শ্যারনের দুই চোখ। উঠে দাঁড়াল সে। আবার বসল। তার লাল চোখে-মুখে তীব্র রাগ ও অপমানের চিহ্ন।কথা ভলল না কিছুক্ষন। পরিশেষে বোমা ফাটার মত তীব্র কন্ঠে বলল, ‘মিস জেফারসন, এটা আপনার বাড়ির ড্রইং রুম নয়। আপনি আমাদের বন্দী এবং বন্দীর মতই কথা বলবেন। আপনি জেফারসন কন্যা বলে আপনাকে আমি যথেষ্ঠ সম্মান করছি। আপনার গ্রেট গ্রান্ড ফাদার টমাস জেফারসনের উদার গনতন্ত্র আমাদের অসীম উপকার করেছে। তাই জেফারসন পরিবারকে আমরা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু দেখছি সে শ্রদ্ধার পাত্র আপনি নন। আহমদ মুসা আপনাকে গিলে খেয়েছে। সাবধান করে দিচ্ছি আপনার কোন ওদ্ধ্যত্য আমরা বরদাশত করবো না।’
‘কিন্তু মিঃ শ্যারন, আহমদ মুসার সাথে আমার পরিচয় হওয়ার আগে আপনারা আমাকে কয়েকবার খুন করার চেষ্টা করেছেন।’ বলল দৃঢ়কন্ঠে সারা জেফারসন।
‘সেটা ছিল একটা ভুল বোঝাবুঝির ফল। আমরা বলেছিলাম আপনাকে ভয় দেখাবার জন্যে কিছু করার। কিন্তু আঞ্চলিক নেতারা বুঝেছিল অন্যরকম।’
‘ধন্যবাদ জেনারেল শ্যারন।’ বলল সারা জেফারসন।
‘মিস জেফারসন আপনি কি আহমদ মুসাকে চিঠি লিকতে চান?’
‘তাতে আপনাদের স্বার্থ?’
‘আমাদের স্বার্থ তেমন নেই। তবে প্রিয়তমার চিঠি পেলে প্রিয়তমার কথা নতুন করে মনে পড়বে।, প্রিয়তমাকে উদ্দারের জন্যে অস্থির হয়ে উঠবে, এটা আমাদের লাভ।’
‘আরেকটা লাভ আছে। সেটা হলো চিঠিতে আমার অনুরূপ হস্তক্ষরে এটা ভুয়া ঠিকানা লিখা থাকবে। যে ঠিকানায় আমাকে উদ্ধারের জন্যে আহমদ মুসা ছুটে যাবে এবং আপনাদের ফাঁদে আটকা পড়বে।’
‘কিন্তু আহমদ মুসা যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে, তত তাড়াতাড়ি আপনার মুক্তি। আহমদ মুসা আমাদের হাতে না আসা পর্যন্ত আমরা আপনাকে ছাড়ছি না। আহমদ মুসাকে আপিনি রক্ষা করতে পারবেন না। তাকে আসতেই হবে। আর ফ্লোরিডার জ্যাকসন ভিলে আমাদের যে ভুল হয়েছে, যার কারনে লায়লা জেনিফার ও ডঃ মার্গারেটকে সে মুক্ত করে নিয়ে যায়, সেই ভুল এবার আমরা করছি না।’
বলে উঠে দাঁড়াল জেনারেল শ্যারন।
ডেভিড উইলিয়াম জোনস উঠতে উঠতে বলল, ‘শেষ কথাটাও ওকে বলে দিন মিঃ শ্যারন। আমরা এক মাসের বেশী আহমদ মুসার জন্যে ওয়েট করবো না। আহমদ মুসাকে একটা আলটেমেটাম দেয়ার পর সে না এলে এবং এক মাস পার হয়ে গেলে কি হবে সেটাও মিস জেফারসনকে বলে দিন।’
জেনারেল শ্যারন যাবার জন্যে পা বাড়িয়েছিল, থেমে গেল। বলল, ‘ভাল কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মিঃ জোনস। দন্যবাদ আপনাকে।’
বলে ফিরল সে মিস সারা জেফারসনের দিকে। বলল, ‘আমরা তো অনির্দিষ্টকাল আপনার মত সুন্দরী ও বিবাহযোগ্যা মেয়েকে আমাদের সামষ্টিক কেয়ারে রাকতে পারবো না। তাই আমরা ঠিক করেছি, ৩০ দিন পার হওয়ার পর একত্রিশতম দিনে আপনাকে নিয়ে একটা লটারী হবে। লটারী হবে এইজন্যে যে, আমাদের সবাই আপনাকে চায়। কেউই তাদের দাবী ছাড়তে রাজী নয়। তাই আমরা যারা প্রার্থী তাদের মধ্যে লটারীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার ভাগ্যে আপনার নাম উঠবে, সে ভাগ্যবানই হবে আপনার মালিক। আমরা তার হাতে তুলে দেব আপনাকে। আপনার মর্যাদার কথা চিন্তা করে বিয়ের চির বন্ধনে আপনাকে না বাধার সিদ্ধান্ত হয়েছে। লিভ টুগেদারের সুবিধা হলো আপনারা কোন উপযুক্ত সময়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারবেন। আপাতত এই বন্দীখানাই হবে আপনাদের লিভ টুগেদারের ঠিকানা।’
কথাগুলো একটা একটা করে অত্যন্ত শীতল কন্ঠে বলল জেনারেল শ্যারন। প্রতিটি কথা চাবুকের মত আঘাত করল সারা জেফারসনকে। একজন নারীর দুর্বলতম স্থান যেটা সেখানেই আঘাত করেছে সে। জেনারেল শ্যারন ও ডেভিড উইলিয়াম জোনসের লোলুপ দৃষ্টি দেখেই সারা জেফারসনের মন বুঝল জেনারেল শ্যারনের একটা কথাও মিথ্যা নয়।
বুকের ভেতরটা কাঁপতে শুরু করেছে সারা জেফারসনের।
কথা শেষ করেই জেনারেল শ্যারন আবার ঘুরে দা৭ড়াল। চলতে শুরু করল।
ডেভিড উইলিয়াম জোনস হাঁটার জন্যে পা বাড়িয়ে আবার মুকটি ঘুরিয়ে সারা জেপারসনের দিকে চেয়ে বলল, ‘একমাসের মধ্যে মুক্তি চাইলে আমাদের মতে আপনাকে চলতে হবে মিস জেফারসন। আপনি ভাবুন।’
বলে ডেভিড উইলিয়াম জোনসও হাঁটতে শুরু করল।
ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ওরা।
দরজা বন্ধ হয়ে গেল ঘরের।
বুকের কাঁপুনি সারা জেফারসনের গোট দেহকেই অসাঢ় করে তুলতে চাইল। তার মনে হলো, গেটা পৃথিবী তার সামনে বদলে যাচ্ছে।
সারা জেফারসন ইজি চেয়ার তেকে উঠে টলতে টলতে বিছানায় গিযে লুটিয়ে পড়ল। অসহায় এই সময়ে আহমদ মুসার অনুরূপ ছবিটিহুদয় জুড়ে দেখা দেয়ার সাথে সাথে তার হৃদয় জুড়ে নেমে এল এক প্রশান্তিও। মন থেকে স্বস্তির এক কন্ঠ বলল, ৩০ দিনের মধ্যেই তার আহমদ মুসা তাকে উদ্ধার করবে।
তার আহমদ মুসা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে কথাটা ভাবতে গিয়ে আবার কেঁপে উঠল সারা জেফারসন। কেমন করে আহমদ মুসার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে সে? আহমদ মুসাকে এখন তার মনে হচ্ছে এক নিষিদ্ধ ফলের মত। ওদিকে তার হাত বাড়াবার কোন অধিকার নেই। আহমদ মুসা বিবাহিত সে জানতো না। লায়লা জেনিফাররা তাকে হাসপাতালে দেকতে না এলে এতদিনেও কথাটা তার জানা হতো না। এ কথাই বোধ হয় আহমদ মুসা বার বার বলতে চেয়েছে, কিন্তু বলা হয়নি। শেষে কথাটা বলা আহমদ মুসার জন্যে বোধ হয় কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এই আহমদ মুসার সামনে সে তার অসীম অপরাধ নিয়ে কেমন করে দাঁড়াবে? আহমদ মুসাকে বিব্রত করা আর তার ঠিক হবে না।
তাহলে কি করবে সে? দুচোখ বেয়ে আবার অশ্রু গড়াল তার। তার অপরাধ নিয়ে তাকে হামদ মুসার চোখের আড়ালে সরে যেতে হবে। কিন্তু তারপর কি হবে? তার অপরাধের প্রতিকার কিসে? সে কি আহমদ মুসাকে ভুলে যেতে পারবে? কেমন করে ভুলে যাবে? নিজের হৃৎপিন্ড ছিড়ে ফেলে কেউ কি বাঁচতে পারে?
বালিশে মুখ গুঁজল সারা জেফারসন।
নিরব কান্নার স্রোত নামছে তার দুচোখে।

আহমদ মুসা ও জর্জ আব্রাহাম জনসন গাড়ি থেকে গাড়ি বারান্দায় পা দিয়েই বিস্ময়ের সাগরে হাবুডুবু খেতে লাগল।
চারজন পুলিশের লাশ তাদের সামনে। আরও দুজন পুলিশের পিষ্ট হওয়া লাশ তারা দেখতে পাচ্ছে একটু দুরে রাস্তায়। দুরে একটা গাড়িকে পাগলের মত ছুটে পালাতে দেখতে পেল তারা।
এফ বি আই চীফ জর্জ আব্রাহাম জনসনকে দেখে এফ বি আই ও পুলিশ অফিসাররা ছুটে এল।
একজন এফ বি আই অফিসার ব্যস্ত কন্ঠে জর্জ আব্রাহামকে জানাল, ‘স্যার, সাংঘাতিক ঘটনা ভোজবাজীর মত ঘটে গেল।’
‘পুলিশদের কে মারল? কি করে ঘটল বলত?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
এফ বি আই অফিসারটি কিভাবে তিনজন ডাক্তার, একজন নার্স ও একজন ফাদার কাপড়ে ঢাকা একটা ডেডবডি নিয়ে এল এবং ডেথ ও রিলিজ সার্টিফিকেট দেখিয়ে গেট দিয়ে নিয়ে চলে গেল, তার বিবরন দিয়ে বলল, ‘তারা চলে যাবার পরই একজন ডাক্তার বলল দুটি সার্টিফিকেটেরই সই জাল। তারপরই পুলিশ পাঠানো হয় গাড়ি থামাবার জন্যে। আমরা মনে করেছিলাম ডেডবডি চেক করতে হবে। পুলিশ যাবার পরই এমন ঘটনা ঘটল।’
তার কথা শেষ হতেই আহমদ মুসা বলল, ‘মিস সারা জেফারসনকে নিয়ে যাবার জন্যে আপনারা এসেছেন শুনলাম। কি হল? তার রিলিজ হয়েছে।?
‘তার রিলিজ নেবার জন্যে দুজন এফ বি আই অফিসার গেছেন। আমরা তাদেরই অপেক্ষা করছি।’ বলর এফ বি আই অফিসারটি।
‘মিস সারা জেফারসন কত নাম্বার কেবিনে আছেন? আহমদ মুসা জিজ্ঞেস করল।
‘তিনি ২১ নাম্বার কেবিনে আছেন।’ বলল এফ বি আই অফিসারটি।
‘আর ডেডবডি কত নাম্বার কেবিন থেকে এসেছিল?’ আহমদ মুসা জিজ্ঞেস করল।
‘ঐ ২১ নাম্বার কেবিন থেকেই।’ বলল অফিসারটি।
‘আপনার অফিসারদের এতক্ষনে ফেরার কথা তাই না?’ দ্রুত কন্ঠে বলে উঠল আহমদ মুসা।
‘অবশ্যই। কাগজপত্র সব রেডি আছে, এখন শুধু নিযে আসা।’ বলর অফিসারটি।
আহমদ মুসা দ্রুত মুখ ঘুরাল জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে। বলল, ‘আমার মনে হচ্ছে, একটা বড় ঘটনা ঘটে গেছে। চলুন ২১ নাম্বার কেবিনে কি ঘটেছে দেখি।’
ভ্রুকুঁচকে গেল জর্জ আব্রাহাম জনসনের। বলল আহমদ মুসাকে, ‘তার মানে আপনি মিস জেফারসন সম্পর্কে খারাপ কিছু ভাবছেন?’
বলেই জর্জ আব্রাহাম জনসন হাসপাতালের দিকে হাঁটতে শুরু করল।
সবাই চলল তার সাথে।
২১ নাম্বার কেবিন হাসপাতালের মাঝ বরাবর ভি আই পি সেকশনে অবস্থিত।
২১ নাম্বার কেবিনের কাছাকাছি হতেই আহমদ মুসারা ডাক্তার ও নার্সদের ছুটাছুটি দেখতে পেল।
আহমদ মুসারা আরও কাছাকাছি হতেই একজন প্রবীন ডাক্তার ছুটে এল এফ বি আই প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসনের দিকে। বোধ হয় সে চিনেছে জর্জ আব্রাহাম জনসনকে। বলর সে হাঁপাতে হাঁপাতে, ‘স্যার মিস সারা জেফারসনকে তার কেবিনে পাওয়া যাচ্ছে না। তার কেবিনের ডাক্তারকে বাথরুমে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া গেছে। এদিকে এই ওয়ার্ডের হেড নার্স ও দুজন এফ বি আই অফিসারকে পাওয়া গেছে ওয়ার্ড অফিসের বাথরুমে সংজ্ঞাহীন অবস্থায়।’
মুখ ম্লান হয়ে গেল জর্জ আব্রাহাম জনসনের। তাকাল সে আহমদ মুসার দিকে।
আহমদ মুসার ভাবলেশহীন মুখ। বলল, ‘বুঝা গেছে মিঃ জর্জ আব্রাহাম। তবু চলুন ওয়ার্ড অফিস এবং মিস সারা জেফারসনের কেবিন দেখে আসি।’
ওয়ার্ড অফিস এবং মিস সারা জেফারসনের কেবিন দেখে ফেরার পথে এফ বি আই প্রধান আহমদ মুসাকে বলল, ‘নতুন কিছু বোঝা গেল মিঃ আহমদ মুসা?’
‘তেমন কিছু না। অন্যদের মত মিস জেফারসনকেও তারা ক্লোরফরম করে কিডন্যাপ করেছে। মসি জেফারসন সেসময় ঘুমিয়ে ছিলেন।’
‘দেখা যাচ্ছে, ওরা ছিল পাঁচজন লোক। কিন্তু এতজন লোককে ওরা ক্লোরফরম করল, কোন গোলাগুলী হলো না, ধ্বস্তাধ্বস্তি হরো না? কেমন করে ঘটল?’ বলল আব্রাহাম জনসন।
‘ডাক্তারের ছদ্মবেশ নেয়ার কারনে সুবিধা হয়েছে। অতর্কিত চড়াও হয়ে কাজ সেরেছে। সবাই বলছে ফাদার হোয়াইট নয়। অন্যরাও পিওর হোয়াইট নয়। আমার ধারনা ‘ফাদার’ ছদ্মবেশে জেনারেল শ্যারন এসছিল। অন্যরাও আমেরিকান ইহুদী।’ আহমদ মুসা বলল।
‘গাড়ির নাম্বারও কেউ বলতে পারছে না।’ জর্জ আব্রাহাম বলল।
‘তাতে লাভ হতো না মিঃ জর্জ আব্রাহাম। গাড়ির নাম্বার ভুয়া ছিল।’
‘একরন কি করনীয় বলুন তো? ইহুদীদের পরিচিত সব সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের উপর আমাদের চোখ আছে।’
‘আমার ধারনা ইহুদীদের কোন পরিচিত বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে মিস জেফারসনকে রাখা হবে না। যেমন আমাকেও তারা রাখেনি। আমাকে সবসময় তারা ভারতীয় আমেরিকানদের আশ্রয়ে রেখেছে।’
‘আমি অবাক হচ্ছি ভারতীয় আমেরিকানরা কেন এভাবে ইহুদী একটি গ্রুপের সকল কুকর্মের সহযোগী হয়ে গেল?’
‘এই দুটি জাতির জাতিগত বৈশিষ্ট্য ও রাজনৈতিক লক্ষ্যের মধ্যে প্রচুর মিল আছে। দুটি জাতিই বিশ্বাসগত ভাবে সাম্প্রদায়িক। জন্মগত হলেই কেউ যেমন ইহুদী হতে পারে, তেমনি হিন্দুদেরকেও জন্মগতভাবে হিন্দু হতে হয়। হিন্দুদের কাস্ট সিস্টেমটা জন্মগত। কনভারশনের মাধ্যমে কেউ হিন্দু বা ইহুদী হতে পারে না। আমেরিকায় দুই জাতির রাজনৈতিক লক্ষ্যও এক। অর্থনীতি ও তথ্য-মাধ্যমের মত ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোকে দখল করে তাদের সংখ্যালঘু আধিপত্য কায়েম করা।’ আহমদ মুসা বলল।
‘হ্যাঁ মিঃ আহমদ মুসা, তাদের আচরন দ্বারা এটাই তারা আমাদের বলে দিচ্ছে।’
বলে একটু থামল জর্জ আব্রাহাম। একটু ভাবল। বলল, ‘মিঃ আহমদ মুসা প্লিজ আমাদের অফিসে চলুন, আলোচনা আছে।’
তারা এফ বি আই হেড কোয়ার্টারে পৌছল।
অফিসে বসেই জর্জ আব্রাহাম প্রেসিডেন্টসহ প্রয়োজনীয় সবার কাছেমিস জেফারসনের কিডন্যাপ হওয়ার খবর জানিয়ে দিল।
তারপর আহমদ মুসার মুখোমুখি হয়ে বলল, ‘মিঃ আহমদ মুসা সারা জেফারসন কিডন্যাপ হওয়ার খবর এখনি জনগনকে জানানো ঠিক হবে না বলে মনে করছি।’
‘কেন?’ বলল আহমদ মুসা।
‘সারা জেফারসন কিডন্যাপের সংবাদ মার্কিন জনগন ও ‘ফ্রি আমেরিকা’ আন্দোলনের সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে এবং তা খারাপ দিকে টার্ণ নেতে পারে বলে আমি, আশংকা করুছি।’
জর্জ আব্রাহাম জনসন বলল।
‘খারাপ টার্ণটা কি?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘খবর প্রচারিত হওয়ার সংগে সংগেই সবাই ধরে নেবে এই কিডন্যাপের কাজ শ্যারন ও উইলিয়াম জোনসদের। ক্ষুদ্র একটি ইহুদী গ্রুপ কিডন্যাপের সাথে জড়িত, কিন্তু মানুষের ক্রোধ গিয়ে ড়পতে পারে সাদারনভাবে ইহুদি কম্যুনিটির উপর। বিশেষ করে ‘ফ্রি আমেরিকা’র সদস্যরা ত্বরিত প্রতিশোধ গ্রহনে এগিয়ে আসতে পারে।’ বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন। চিন্তিতি কন্ঠ তার।
‘আপনার অনুমান ঠিক মিঃ জর্জ আব্রাহাম। আমারও এখন তাই মনে হচ্ছে। কিন্তু এখন তাহলে কি করনীয়? খবরটি তো গোপন রাখা যাবে না।’ বলল আহমদ মুসা।
‘না, যাবে না। আমরা সরকারী ভাবে কিছু না জানালেও হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সুত্রে খবরের কাগজগুলো নিউজটি পেয়ে যাবে।’ জর্জ আব্রাহাম বলল।
‘তাহলে?’ বলল আহমদ মুসা।
‘আপনাকে দ্রুত কিছু কাজ সারতে হবে আহমদ মুসা।’ জর্জ আব্রাহাম বলল।
‘কি কাজ?’
‘বেঞ্জামিন বেকনসহ ‘ফ্রি আমেরিকা’র শীর্ষ নেতাদের সাথে আপনি অবিলম্বে বসুন। তাদের মাধ্যমে আঞ্চলিক নেতাদের কাছে আপনি একটা মেসেজ পাঠান। তাদের কাছে আপনি আবেদন করে বলুন, সারা জেফারসনকে মুক্ত করার সার্বিক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। আপনারা শান্ত থেকে এই কাজে সহযোগিতা করুন। বিশেষ করে কেউ যেন ইহুদীদের উপর কোন প্রতিশোধ নিতে না যায়।’
থামল জর্জ আব্রাহাম জনসন।
আহমদ মুসা বলল, ‘আমি বুঝতে পারছি না আমি এ আবেদন করব কেন? তারা আমার এ আবেদন শুনবে কেন?’
জর্জ আব্রাহাম একটু নড়ে চড়ে বসল। একটা বিব্রতভাব দেখা গেল তার চোখে-মুখে। পরক্ষনেই তার চোখে-মুখে নেমে এল দায়িত্বের গাম্ভীর্য। বলল, ‘আপনি জানেন না মিঃ আহমদ মুসা, ‘ফ্রি আমেরিকা’ আন্দোলনের নেতা কর্মী সকলেই জানে তাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রী সারা জেফারসন আপনাকে ভালবাসে। আপনি জেনারেল শ্যারনদের হাতে বন্দী হলে সারা জেফারসনের অবস্থা সবাই দেখেছে। ‘ফ্রি আমেরিকা’ আন্দোলনের নেতা কর্মীরা সারা জেফারসনের মত আপনাকেও ভালবাসতে শুরু করেছে। আপনার এই মুহূর্তের যে কোন আবেদনকে তারা তাদের নেত্রীর নির্দেশ বলেই মনে করবে।’ থামল জর্জ আব্রাহাম জনসন।
আহমদ মুসার চোখে-মুখে বিব্রত ভাব। তার মুখে লজ্জার একটা লাল আভাও ফুটে উঠেছে। বলল আহমদ মুসা, ‘আমি দুঃখিত মিঃ জর্জ আব্রাহাম। সবাই যেভাবে ভাবছে, ব্যাপারটা তেমন নয় মোটেই। তবে, আপনি যে আবেদন জানানোর কথা বলছেন, সে আবেদন আমি অবশ্যই জানাব।
কিছু বলতে যাচ্ছিল জর্জ আব্রাহাম জনসন। তার টেলিফোন বেজে উঠল। মোবাইলটা হাতে তুলে নিল জর্জ আব্রাহাম জনসন। ওপারের হ্যালো শুনেই জর্জ আব্রাহাম জনসন সোজা হয়ে বসল। বলল, ‘গুড মর্নিং মিঃ প্রেসিডেন্ট।’
‘গুড মর্নিং জর্জ। আমি সারা জেফারসনের কিডন্যাপরে খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। খবরটা আমার কাছে পৌঁছার পর তোমাকে টেলিফোন করছি। কি ভাবছ তোমরা এখন?’ বলল ওপার থেকে প্রেসিডেন্ট।
‘আমি আহমদ মুসাকে নিয়ে বসেছি। কোন ভাবেই চেষ্টার কোন ত্রুটি হবে না মিঃ প্রেসিডেন্ট। এটা এখন আমাদের নাম্বার ওয়ান অগ্রাধিকার।’ জর্জ আব্রাহাম বলল।
‘দেখুন জেফারসন পরিবারের মেয়ে মানে আমারও মেয়ে। সে উদ্ধার না পাওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাব না।’ বলল প্রেসিডেন্ট।
‘আমরা অনুভব করছি মিঃ প্রেসিডেন্ট। সর্বশক্তি ও সকল উপায় প্রয়োগ করে আমরা চেষ্টা করব।’ জর্জ আব্রাহাম বলল।
‘আর শ্যারন-জোনসদের কেসের অগ্রগতি কি? ওদের অপরাধ তো আরও একটা বাড়ল।’
‘আশা করছি দুএকদিনের মধ্যেই কোর্টে কেস উঠবে মিঃ প্রেসিডেন্ট। আসামীদের অনুপস্থিত রেখেই বিচার কাজ শুরু হবে।’
‘ধন্যবাদ মিঃ জর্জ। টেলিফোনটা আহমদ মুসাকে দিন।’
আহমদ মুসা টেলিফোন নিয়ে বলল, ‘গুড মর্নিং মিঃ প্রেসিডেন্ট।’
‘গুড মর্নিং আহমদ মুসা। ওয়েলকাম।’
‘ধন্যবাদ মিঃ প্রেসিডেন্ট।’
‘মিঃ আহমদ মুসা, আপনার মুক্তির জন্যে যে সবচেয়ে উৎগ্রীব ছিল, তার কিন্তু আপনার মুক্তি দেখা হলো না। তার আগে সে নিজেই কিডন্যাপ হলো।’
‘খুবই দুঃখজনক, উদ্বেগজনক ঘটনা মিঃ প্রেসিডেন্ট।’ বলল আহমদ মুসা।
‘তার উদ্ধারের ব্যাপারে আমরা আপনার উপর অনেকখানি নির্ভর করছি আহমদ মুসা।’
‘এটা আমার দায়িত্বও মিঃ প্রেসিডেন্ট।’
‘আমি জানি মিঃ আহমদ মুসা। ধন্যবাদ আপনাকে।’
‘ধন্যবাদ মিঃ প্রেসিডেন্ট।’
টেলিফোন অফ করে জর্জ আব্রাহামের হাতে দিতে দিতে আহমদ মুসা বলল, ‘প্রেসিডেন্ট সারাকে নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। কি করা যায় বলুন তো?’
‘আমি সেটাই ভাবছি। ইহুদী গ্রুপটির সাথে ভারতীয় আমেরিকানরা যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি আরও জটিল হয়েছে।’ বলল জর্জ আব্রাহাম।
জর্জ আব্রাহাম থামলেও আহমদ মুসা কথা বলল না। ভাবছিল সে। অনেক্ষন পর সে বলল, ‘এগুবার এখন একটাই পথ আমি দেখতে পাচ্ছি।’
‘সেটা কি?’ উদগ্রীব কন্ঠে বলল জর্জ আব্রাহাম।
‘আমি আমার নিজেকে ওদের হাতের নাগালের মধ্যে নিয়ে যাওয়া।’
‘তাতে কি হবে?’
‘তাতে আমি ওদের ধরার সুযোগ পাব, কিংবা আমি ওদের হাতে ধরা পড়ব।’
‘এর অর্থ?’
‘আমি ওদের ধরতে পারলে সারাকে মুক্ত করতে পারবো। আর যদি ধরা পড়ি, তাহল্রে সারা মুক্তি পাবে।’
‘ওদের ধরতে পারলে সারাকে মুক্ত করার সুযোগ পাবেন, এটা বুঝলাম। কিন্তু আপনি ওদের হাতে ধরা পড়লে সারা কিভাবে মুক্তি পাবে?’
আহমদ মুসা ম্লান হাসল। বলল, ‘জেনারেল শ্যারনকে আমি জানি। আমি নিশ্চিত যে, আমাকে ফাঁদে ফেলার টোপ হিসেবে ওরা সারা জেফারসনকে বন্দী করেছে। ওদরে বিশ্বস সারাকে উদ্ধার করার জন্যে অবশ্যই আমি যাব এবং সেই সুযোগ তারা গ্রহন করবে। সারা একজন জনপ্রিয় আমেরিকান। সারার উপর কিছু ক্রোধ থাকলেও তারা সারার কোন ক্ষতি করতে চাইবে না জনমতের ভয়ে। আমাকে ধরার সংগে সংগেই তারা সারাকে মুক্তি দেবে।’
‘বুঝলাম আহমদ মুসা। আমি আপনার যুক্তির সাথে একমতও। কিন্তু আমরা তো এটা চাই না। আমরা চাই সারাকে মুক্ত করতে, ওদের হাতে সারার সাথে আপনাকে বিনিময় করতে নয়।’
‘আমিও চাই না। কিন্তু আমি এছাড়া কোন উপায় দেখছি না। সারা ওদের হাতে একদিনও থাকুক তা আমাদের কারও কাম্য নয়।’
‘তা নয়, ঠিক। কিন্তু আহমদ মুসার মূল্যে আমরা সারা জেফারসনকে উদ্ধার করব, এটা আমি মেনে নিচ্ছি না।’ বলল জর্জ আব্রাহাম দৃঢ় কন্ঠে।
‘কিন্তু আমার সামনে এটাই এখন একমাত্র পথ। এই পথেই আমাকে অগ্রসর হতে হবে। আমার কারনেই সারা জেফারসন আজ চরস বিপদগ্রস্থ। তাকে উদ্ধার করার নৈতিক দায়িত্ব আমার উপরই সবচেয়ে বেশী বর্তায়।’ থামল আহমদ মুসা।
জর্জ আব্রাহাম উঠল। উঠে গিয়ে আহমদ মুসার পেছনে দাঁড়াল। একটা হাত রাখল আহমদ মুসার কাঁধে। বলল, ‘তাহলে আমরাও বলতে পারি আহমদ মুসা, আমরেকিার কারনে, আমেরিকার জন্যেই আজ আপনি একটি ইহুদী গ্রুপের চরম শত্রুতে পরিনত হয়েছেন। সুতরাং ওদের হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করা আমাদেরও প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব।’
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘আমি আমেরিকার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি বন্দী হবার পর আমাকে মুক্ত করার কোন চেষ্টাই সে বাদ রাখেনি। আবারও যদি বিপদে পড়ি আবারও তা করবে। কিন্তু আমি বিপদে পড়ব এই যুক্তি তুলে আমেরিকা সারাকে উদ্দার করার আমার চেষ্টায় বাধা দেবে, তা হয় না, হওয়া উচিত নয়।
জর্জ আব্রাহামের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল। বলল, আপনি সিদ্ধান্ত নিলে সেখান থেকে আপনাকে ফেরানো যাবে না সেটা আমি জানি। পরার্থে এমন করে নিজেকে বিলিয়ে দেয়াই বোদহয় আপনার বৈশিষ্ট্য। মনে পড়ছে অনেকদিন আগের কথা আহমদ মুসা। আমার বালক নাতিকে রক্ষার জন্য সেদিন ওহাইও নদীর বিপজ্জনক ঘূর্ণি স্রোতে আপনাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখেছিলাম। সেই আপনি আজ আরও মহৎ হয়েছেন। আমি আপনাকে অভিবাদন করি আহমদ মুসা।’ আবেগ কম্পিত ভারী কন্ঠে বলল জর্জ আব্রাহাম জনসন।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল।
মুখোমুখি হলো জর্জ আব্রাহাম জনসনের। বলল, ‘আপনার স্নেহের দৃষ্টির জন্যে আমি কৃতজ্ঞ মিঃ জর্জ আব্রাহাম জনসন।’
জর্জ আব্রাহাম জনসন দুহাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল আহমদ মুসাকে। বলল, ‘আমি প্রেসিডেন্টকে সব বলে দেব। তিনি খুশী হবেন। অমানুষের ভীড়ে মানুষের সাক্ষাৎ আজ দুর্লভ হয়ে উঠেছে।’

Top