৩৩. সুরিনামের সংকটে

চ্যাপ্টার

সুরিনাম নদীর উত্তর তীরে নদীটির একমাত্র ব্রীজের পশ্চিম পাশে সুরিনাম হাইওয়ের গা ঘেঁষে বিশাল এলাকা জুড়ে পার্লামেন্ট কমপ্লেক্স। এখানে পার্লামেন্ট ভবন ছাড়াও আছে এমপিদের হোস্টেল, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সিনিয়র সেক্রেটারিয়েট স্টাফদের বাড়ি এবং প্রধান সেক্রেটারিয়েট ভবন।
তখন সকাল সাড়ে দশটা।
প্রেসিডেন্ট ভবনের ফ্যামিলি গাড়ি বারান্দাটা নদীর গা ঘেষে।
জনসাধারণের জন্যে এটা নিষিদ্ধ এলাকা। প্রেসিডেন্ট ভবনের অফিসিয়াল অংশ হলো সুরিনাম হাইওয়ে সংলগ্ন পূর্ব দিকে।
ফ্যামিলি গাড়ি বারান্দার ঠিক উপরে দুতলায় ফ্যামিলি ড্রইংরুম।
রুদ্ধ দ্বার ড্রইংরুম।
ড্রইংরুমে কথা বলছে তিনজন লোক। একজন জুলেস মেনডেল, সুরিনামের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট। অন্যজন রোনাল্ড রঙ্গলাল, সুরিনাম পিপলস কংগ্রেস (এসপিসি)-এর সভাপতি। আর তৃতীয় জন হলেন দক্ষিণ আমেরিকার চরমপন্থী হিন্দু সংগঠন ‘মায়ের সূর্য সন্তান’(মাসুস)-এর সুরিনাম শাখার সভাপতি তিলক লাজপত পাল।
তিনজনই ভয়ানক গম্ভীর।
কথা বলছিল রোনাল্ড রঙ্গলাল। বলছিল, ‘আমাদের সব আশা দেখি গুড়ে বালি হবার পথে। রিপাবলিকান পার্টির একটা সূত্র থেকে খবর পাওয়া গেল আহমদ হাত্তা নাসুমন গত রাতে পারামারিবোতে পৌঁছেছেন। আগামীকাল নমিনেশন পেপার সাবমিটের মাধ্যমে ভোটে দাঁড়াবার সব প্রস্তুতি তিনি নাকি নিচ্ছেন। দেশের সব এলাকায় নাকি খবর পাঠানো হচ্ছে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য সব প্রার্থীকে নমিনেশন পেপার সাবমিট করার জন্যে। পরে বাছাই করে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হবে। দশটার দিকে টেলিফোন পেলাম, আজ সকাল দশটার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোর্টেরিকো হয়ে যে ফ্লাইট আসছে, তার যাত্রী তালিকায় এফ. নাসুমন নামে একটা মেয়ের নাম আছে। মনে করা হচ্ছে ফাতিমা নাসুমন এই ফ্লাইটে পারামারিবো আসছে’।
থামল রোনাল্ড রঙ্গলাল। থেমেই সামনে থেকে গ্লাস টেনে নিয়ে ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল।
এই ফাঁকে তিলক লাজপত পাল নড়ে-চড়ে বসে বলে উঠল, ‘ফাতিমা নাসুমন আসছে, এই খবরটুকুই দিয়েছে? আর কিছু বলেনি?’
পানি খেয়ে গ্লাসটা টেবিলে রেখে রোনাল্ড রঙ্গলাল বলে উঠল, ‘হ্যাঁ, এয়ারপোর্টের লোকেরা খবর পাঠাবার পরই আমাদের লোকরা ছুটে গেছে এয়ারপোর্টে। ফাতিমা যদি আসেই, তাহলে তাকে ওখান থেকে কিডন্যাপ করা হবে’।
‘হ্যাঁ, এটা খুব দরকার। তাহলে আহমদ হাত্তাকে জব্দ করার একটা পথ হবে। ওয়াং আলী আমাদের হাতে তো রয়েছেই’। বলল তিলক লাজপত পাল।
‘কিন্তু পরিস্থিতি তো পাল্টে যাচ্ছে মি. পাল। কোরাজ নদীর কাছে সিকিমা এলাকায় যে শক্ত ঘাঁটি আমরা পেয়েছিলাম তার পতন ঘটেছে। ওখানে আমাদের বারজন লোকের সবাই খুন হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, পশ্চিম নিও নিকারীর পঁচিশজন মুসলিম যুবককে সিকিমা হ্রদে নিয়ে যাচ্ছিল। যারা ওদের নিয়ে যাচ্ছিল তাদের দুজনের লাশ পাওয়া গেছে আমাদের সিকিমা ঘাঁটির নিচের সমতলে। অপর দুজনের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না, আর সেই পঁচিশজন যুবক নিও নিকারীর দিকে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
তিলক লাজপত পালের মুখ অন্ধকার হয়ে গেছে। বলল সে, ‘আমাদের চারজনের অপর দুজন ওদের হাতে ধরা পড়েছে। আমাদের সিকিমা ঘাঁটির নিচের সমতলে একটা নোটবুক কুড়িয়ে পাওয়া গেছে। নোট বুকটি ওদের হাতে গড়া গায়ানার নিকি এমবার’।
‘ওরা কারা, যারা এই সর্বনাশ ঘটাল?’ আমাদের দুজনের কাছ থেকে তো ওরা সব জেনে নেবে’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল। তার কন্ঠে উদ্বেগ।
‘ওরা কারা জানতে পারলে তো ল্যাঠাই চুকে যেত। দেখে নিতাম তাকে। তবে ঐ দুর্গম অঞ্চলে কে যাবে। আমার যতদূর মনে হয় স্থানীয় কেউ বা কিছু লোক সুযোগ বুঝে এই কাজ করেছে’। বলল তিলক লাজপত পাল।
‘আপনি বিষয়টাকে যত সহজ করে দিলেন, বিষয়টা কি অতই সহজ? বলুন তো গত রাতে আমাদের অত লোককে খুন করে দূর্ভেদ্য স্থান থেকে ওভানডোকে মুক্ত করে নিয়ে গেল কে? মাত্র একজন এসে এতবড় কান্ড ঘটিয়ে গেছে বটে, কিন্তু সে অবশ্যই একা নয়। এদেরকে ছোট করে দেখা যায় না’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
সে থামতেই তিলক লাজপত পালের মোবাইল বেজে উঠল।
মোবাইল তুলে নিল তিলক লাজপত পাল। কথা শুরু করল হাসি মুখে। কিন্তু ওপারের কথা শুনে মুহূর্তেই তার মুখে অমাবস্যার অন্ধকার নেমে এল। সব কথা শুনে মোবাইল রাখতে রাখতে সে বলল, ‘আরেকটা উদ্বেগজনক খবর। ওভানডোর স্ত্রীকে ধরার জন্যে দুগাড়ি লোক পাঠানো হয়েছিল। ওরা কেউ ফিরে আসেনি এবং কোন খবরও দেয়নি’। শুষ্ক কন্ঠ লাজপত পালের।
‘কি বলছেন মি. লাজপত। দশ বারো জন লোক হাওয়া হয়ে গেল? খোঁজ নেবার জন্যে ওখানে লোক যায়নি?’ বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল উদ্বিগ্ন কন্ঠে।
‘ফল বিক্রেতার ছদ্মবেশ একজন লোককে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু স্টেটের ভেতরে গিয়ে অস্বাভাবিক সে কিছুই দেখেনি। স্টেটের চাকর-বাকর স্টেটের জমিতে কাজ করছে। তারাও স্বাভাবিক। থানা ও হাসপাতালেও খোঁজ নেয়া হয়েছে। নগরীতে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। আমাদের মন্দিরের হত্যাকান্ড ছাড়া নগরীতে কোন হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটেনি। ওভানডো বাড়িতে ফিরে আসার ঘটনা পুলিশ জানে। কিন্তু ও বাড়িতে গতরাতে কিছু ঘটার কথা পুলিশ বলেনি’। বলল লাজপত পাল উদ্বিগ্ন কন্ঠে।
সোফায় ঠেস দিয়ে বসল রোনাল্ড রঙ্গলাল। তার চোখে-মুখে হতাশা।
দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে প্রেসিডেন্ট জুলেস মেনডেল বলল, ‘আপনারা কি ভাবছেন জানি না, তবে আমি মনে করছি সিকিমার ঘটনা এবং আহমদ হাত্তা ও ফাতিমা নাসুমনের ফিরে আসার ঘটনা পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। এখন ওভানডো উদ্ধার হওয়া ও ওভানডোর বাড়িতে পাঠানো দুগাড়ি মানুষ গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে আগের তিন ঘটনার সাথে জোড়া দেয়া যায় কিনা দেখুন’।
প্রেসিডেন্ট থামতেই রোনাল্ড রঙ্গলাল বলে উঠল, ‘আগের তিন ঘটনাকে এক সাথে জুড়ে দেয়া যায়। তবে ওভানডো ও ওভানডোর বাড়ি কেন্দ্রিক ঘটনা মনে হয় বিচ্ছিন্নই। ওভানডোদের পরিবার একেবারে অরাজনৈতিক’।
থামল রোনাল্ড রঙ্গলাল। সঙ্গে সঙ্গেই কথা বলে উঠল লাজপত পাল। বলল, ‘আমার মনে হয় ওভানডোর আলোচনা এখন থাক। দুগাড়ি মানুষকে গায়েব করার সাধ্য ওভানডো পরিবারের নেই। সে দুগাড়ি মানুষ কোথায় গেল, ওভানডো মুক্ত হলো কিভাবে এ বিষয়টা আমরা পরে দেখব। যে কোন সময় আমরা হাতে টিপে মারতে পারি ওভানডেো পরিবারকে। আজ রাতে সময় হলে আমি নিজেই আরেক অভিযানে নেতৃত্ব দেব। এ বিষয়টা থাক। এখন আমরা আহমদ হাত্তার আলোচনায় আসি। কালকে নমিনেশন পেপার সাবমিটের গুরুত্বপূর্ণ দিন। যা সিদ্ধান্ত নেয়ার আজকেই নিতে হবে’।
থামল লাজপত পাল।
সংগে সংগে কেউ কথা বললো না। সবাই ভাবছে।
নিরবতা ভাঙল স্বয়ং প্রেসিডেন্ট। বলল, ‘মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে একটা নোট পেয়েছি। নোটে তারা বলেছে, ‘সুরিনামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমদ হাত্তা নাসুমনকে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা বাড়ি হতে বন্দী অবস্থা থেকে উদ্ধার করে।বাড়িটা ইহুদী গোয়েন্দা ও ভারতীয় আমেরিকানদের একটা সংস্থার নিয়ন্ত্রণে ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে সুরিনামের কোন রাজনৈতিক পক্ষের স্বার্থে ওরা তাঁকে ওভাবে বন্দী করে রাখে’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নোটের ভাল মন্দ দুটি দিক আছে। মন্দ দিক হলো, আহমদ হাত্তার যাই ঘটুক, সে ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা আগ্রহ থাকবে আর ভাল দিক হলো, আহমদ হাত্তার যাই ঘটুক, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতুন বলে মনে হবে না। তারা মনে করবে, পুরনো সেই রাজনৈতিক বৈরিতা থেকেই ঘটনাটা ঘটেছে। এই দিকটা সামনে আনার পর আমি যে কথাটা বলতে চাচ্ছি তা হলো, আহমদ হাত্তা নতুন করে পাবলিক প্ল্যাটফর্মে যাবার আগেই যা করার তা করতে হবে। মানুষের একটা মোটামুটি বিশ্বাস দাঁড়িয়েছে যে, আহমদ হাত্তা নিখোঁজ নয় নিহতই হয়েছে। এই অবস্থার সুযোগ নেয়া। আহমদ হাত্তা যদি নতুন করে আবার জনগণের কাছে যাবার সুযোগ পায় এবং জনগণকে তার উপর নির্যাতন ও বন্দী জীবনের কাহিনী বলতে পারে, তাহলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার আরও অনুকুলে চলে যাবে। তার ফলে বিপুল ভোটাধিক্যে বিজয়ের পথ তার জন্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাতে আমার ও আপনাদের সবারই রাজনৈতিক সমাধি রচিত হবে। সে ক্ষমতায় আসতে পারলে তার উপর নির্যাতনের শোধ সে সুদে আসলে গ্রহণ করবে’।
থামল প্রেসিডেন্ট জুলেস মেনডেস।
আবার নিরবতা।
এ নিরবতা ভেঙে রোনাল্ড রঙ্গলাল বলল, ‘মি. লাজপত, এসব ব্যাপারে আমরা আপনার উপরই নির্ভর করি বেশি। বলুন আপনি কি ভাবছেন?’
তিলক লাজপত পাল সোজা হয়ে সোফায় বসল। বলল, ‘আমার কথা হলো, আগামীকাল তাকে কোন মতেই নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে দেয়া যাবে না’।
‘কিভাবে?’ বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
‘আজ দিন ও রাতের মধ্যে তাকে জীবিত অথবা মৃত আমাদের হাতে আনতে হবে। তাকে যদি না পাওয়া যায়, তাহলে কাল নির্বাচন অফিস আমাদের ঘেরাও করে রাখতে হবে। সে ওখানে পৌঁছার সাথে সাথে পাকড়াও করতে হবে। আর আজ ও আগামীকাল নমিনেশন পেপার ফাইলের পূর্ব পর্যন্ত সে যাতে কোন পাবলিক প্রোগ্রামে না যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে চারদিকে পাহারা বসাবার মাধ্যমে। এবং সব শেষ কাজটি হলো, সে যে সুরিনামে ফিরেছে এ ধরনের কোন নিউজ যেন আগামীকালের পত্রিকায় না যায়’। বলল তিলক লাজপত পাল’।
‘ধন্যবাদ মি.লাজপত। আমাদের এগুবার একটি সুন্দর পথ আপনি বের করেছেন’।
কথাটা বলে রোনাল্ড রঙ্গলাল তাকাল প্রেসিডেন্টের দিকে। বলল, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, মি. লাজপতের অভিমত সম্পর্কে আপনি কি ভাবছেন?’
‘মি. লাজপত যা বলেছেন তার বাইরে কোন পথ খোলা নেই। প্রশ্ন হলো এর বাস্তবায়ন কিভাবে? আমি এই সহযোগিতা করতে পারি যে, আপনাদের পাশাপাশি আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের একটা বিশ্বস্ত অংশকে কাজে লাগাব তাকে খুঁজে বের করার জন্যে। পত্র-পত্রিকায় তার প্রত্যাবর্তনের নিউজ যাতে না বের হয়, সে চেষ্টা আপনারাও করবেন, আমাদের গোয়েন্দা বিভাগও করবে। আর কাল নমিনেশন পেপার সাবমিটের সময় আপনারা যাই করুন, আমাদের পুলিশ সেদিকে তাকাবেনা’।
থামল প্রেসিডেন্ট।
রোনাল্ড রঙ্গলাল খুশিতে দু’চোখ উজ্জ্বল করে বলল, ‘ধন্যবাদ মি. প্রেসিডেন্ট। আপনার ঐটুকু সাহায্য পেলেই আমাদের চলবে’।
‘আরেকটা কথা আমরা আহমদ হাত্তাকে নমিনেশন পেপার সাবমিট করা থেকে বিরত রাখতে পারলেও তার দলের লোকেরা নমিনেশন পেপার সাবমিট করেই ফেলবে। নমিনেশন পাওয়া নির্দিষ্ট কেউ থাকলে সেটা রোধ করার চেষ্ট করা যেত। কিন্তু তাতো হচ্ছে না। যেহেতু অনেকেই নমিনেশন পেপার ফাইল করতে আসবে, কাকে আমরা বাধা দেব’। বলল তিলক লাজপত পাল।
‘দরকার নেই কাউকে বাধা দেওয়ার। আহমদ হাত্তা যদি নমিনেশন পেপার ফাইল করতে না পারে, তাহলে ওরা এমনিতেই পালিয়ে যাবে’। বলল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
‘ঠিক বলেছেন মি. রঙ্গলাল’। বলল প্রেসিডেন্ট।
‘আজ অনেক কাজ আমাদের। উঠতে পারি আমরা এখন’। বলল রঙ্গলাল।
‘ধন্যবাদ আপনাদের’। বলল প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট উঠে দাঁড়াল।
সাথে সাথে সবাই উঠে দাঁড়াল।
ড্রইং রুম থেকে বেরুতে বেরুতে প্রেসিডেন্ট বলল, ‘ওভানডোদের ব্যাপারটা আমাকে উদ্বিগ্ন করেছে। ওভানডোর উদ্ধার এবং দুগাড়ি লোক উধাও হওয়া খুব বড় ঘটনা। দেখি আমিও চেষ্টা করব আমার অফিসিয়াল চ্যানেলে ঘটনা কি তা জানার জন্য’।
‘ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট। আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব’। বলল রোনাল্ড ও লাজপত পাল দুজনেই।
হাসল প্রেসিডেন্ট। বলল, ‘আমিও বিনা লাভে কিছু করছি না। আপনারা দেশ পাবেন, আর আমি পাব প্রেসিডেন্টের স্থায়ী চেয়ার। আমার পাওনাটাও খুব ছোট নয়’।
হেসে উঠল তিনজনই।

ডিপারচার লাউঞ্জের কারপার্কে প্রচুর গাড়ি।
সামনের সারিতে পাশাপাশি দুটি গাড়ি। একটা গাড়ি দামী জাপানী পাজেরো, তাতে শেড দেয়া কাঁচ। আরেকটা লেটেস্ট মডেলের আমেরিকান ট্যাক্সি।
পাজেরোর পেছনের সিটে বসে আছে আহমদ হাত্তা নাসুমন। আর ড্রাইভার তার সিটে। ফাতিমা নাসুমন এলে এই গাড়িতেই উঠবে।
ট্যাক্সিটায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিখের পোশাক পরা আহমদ মুসা। তার পাশে দাঁড়িয়ে জোয়াও বার্নারডো, ট্যাক্সির মালিক যার কাছ থেকে ট্যাক্সিটি ভাড়া নিয়েছিল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা, আহমদ হাত্তা নাসুমন, জোয়াও বার্নারডো সকলের দৃষ্টি ডিপারচার লাউঞ্জের গেটের দিকে।
প্লেন ল্যান্ড করেছে ৪৫ মিনিট হলো। অর্ধেকের বেশী যাত্রী বেরিয়ে গেছে। কিন্তু ফাতিমা নাসুমনের এখনো দেখাই নেই। সবার উদগ্রীব দৃষ্টি সন্ধান করছে ফাতিমা নাসুমনকে।
আহমদ মুসার ট্যাক্সির তিন চার গজ দূরে আর একটা প্রাইভেট কার। ডিপারচার লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে দুজন লোক গাড়িটার কাছে এল। দুজনের একজন তার হাতের ব্যাগ ড্রাইভারের হাতে দিয়ে গাড়ির দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, ‘দেশটা দেখছি মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে সকলের চোখের সামনে একটা মেয়েকে এইভাবে হাইজ্যাক করল। পুলিশও কিছুই বলল না। একজন সাবেক প্রধান মন্ত্রীর মেয়ের যদি এই দুর্দশা হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে!’
লোকটির সবগুলো কথাই আহমদ মুসার কানে গেল। তার বুকটা ছ্যাত করে উঠল। সাবেক প্রধান মন্ত্রীর মেয়ে? তাহলে কি…….।
আর চিন্তুা করতে পারল না আহমদ মুসা। ছুটে গেল লোকটির কাছে। বলল, ‘মাফ করবেন, কি বললেন আপনি, একজন সাবেক প্রধান মন্ত্রীর মেয়ে হাইজ্যাক হয়েছে? কোথ্থেকে? কোথায় ওরা?’
লোকটা গাড়ির দরজা খুলেছিল, সে ঘুরে দাঁড়াল। বলল, হ্যাঁ লাউঞ্জের ভেতর থেকে হাইজ্যাক হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমদ হাত্তা নাসুমনের মেয়ে। সবাই দেখেছে। ঐ দেখুন তাকে স্ট্রেচারে করে রোগী সাজিয়ে মাইক্রোতে তুলছে। ঢেকে রাখা কাপড়টা তুললেই দেখা যাবে মেয়েটির মুখ ও হাত-পা বাঁধা’’।
লোকটির অংগুলি সংকেত অনুসরণ করে তাকিয়ে আহমদ মুসা মাইক্রোটি দেখতে পেল। স্ট্রেচার থেকে মেয়েটিকে গাড়িতে তোলা তখন হয়ে গেছে। স্ট্রেচারটি মাটিতে ফেলে দিয়ে পাঁচ ছয় জনকে গাড়িতে উঠতে দেখা গেল।
আহমদ মুসা ছুটল আহমদ হাত্তা নাসুমনের গাড়ির দিকে।
আহমদ মুসাকে আসতে দেখে আহমদ হাত্তা তাড়াতাড়ি গাড়ির দরজা খুলে ফেলল।
আহমদ মুসা একটু ঝুঁকে গাড়ির জানালায় মুখ নিয়ে বলল, ‘মি. হাত্তা, ফাতিমাকে ওরা লাউঞ্জের ভেতর থেকেই কিডন্যাপ করেছে। ওরা পালাচ্ছে। আপনি বাসায় ফিরে যান। আমি ওদের ফলো করছি। আল্লাহ ভরসা’।
বলে আহমদ মুসা আহমদ হাত্তার কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে ঘুরে দাঁড়িয়ে ছুটল তার ট্যাক্সির দিকে।
ট্যাক্সির ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে উঠে বসতে বসতে বলল, ‘বার্নারডো তুমি আমার সাথে যেতেও পার, কিংবা তোমার হোটেলে আমার জন্য অপেক্ষা করতে পার’।
বলে আহমদ মুসা গাড়ির দরজা বন্ধ করে গাড়ি স্টার্ট দিল।
‘অবশ্যই আমি যাব’। বলে জোয়াও বার্নারডো ড্রাইভিং এর পাশের সিটে উঠে বসল।
মাইক্রোটি তখন কারপার্ক পার হয়ে রাস্তায় গিয়ে পড়েছে।
আহমদ মুসার গাড়ি ছুটল তার পেছনে।
এয়ারপোর্টটি পারামারিবো শহর থেকে উত্তর পূর্ব দিকে সাগর তীরের বিস্তৃত এলাকায়।
এয়ারপোর্ট থেকে একটা প্রশস্ত রাস্তা তীরের মত সোজা গিয়ে প্রবেশ করেছে পারামারিবো শহরে।
গাড়ি কম নয় এয়ারপোর্ট রোড়ে। এর মধ্যেও মাইক্রোটি বেশ স্পীড়ে চলছে। কিন্তু আহমদ মুসার গাড়িটিও নতুন। সুতরাং আহমদ মুসা অল্পক্ষণের মধ্যেই মাইক্রোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেল।
‘মাইক্রোটি বোধ হয় সন্দেহ করল আহমদ মুসার ট্যাক্সিকে।
হঠাৎ স্পীড বেড়ে গেল মাইক্রোটির।
আহমদ মুসাও স্পীড বাড়িয়ে দিল।
এই অবস্হায় শহরে প্রবেশ করল দুটি গাড়ি।
মাইক্রোটি এ রাস্তা সে রাস্তা ঘুরে অনেক চেষ্টা করল আহমদ মুসার ট্যাক্সিকে পেছনে ফেলতে, কিন্তু পারল না। আহমদ মুসা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মাইক্রোটির ঠিকানায় অবশ্যই তাকে যেতে হবে। মাইক্রোটি যেখানে যাবে, সেখানেই তার উপর চড়াও হবে। হৈ চৈ গোলযোগ সৃষ্টি হলে তার লাভ। সে মানুষকে বলতে পারবে, ওরা সাবেক প্রধান মন্ত্রী আহমদ হাত্তার মেয়েকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে। আর মানুষ তো জলজ্যান্ত দেখতেই পাবে তাকে। এতে তাদেরই বিপদ বেশি হবে।
মাইক্রো বোধ হয় আহমদ মুসার বেপরোয়া মনোভাব বুঝতে পেরেছিল। এক সময় দেখা গেলো, মাইক্রোটি সোজা পশ্চিম দিকে চলতে শুরু করেছে।
পারামারিবো রাজধানী শহর পার হয়ে আরও পশ্চিমে এগিয়ে চলল মাইক্রোটি।
আহমদ মুসার পাশ থেকে জোয়াও বার্নারডো বলল, ‘স্যার আমরা এখন ব্লুমেস্টেইন হাইওয়ে ধরে এগুচ্ছি। হাইওয়েটি ব্লুমেস্টেইন হ্রদের তীরস্থ ব্রুকোপনডো শহরে গিয়ে শেষ হয়েছে’।
‘মাইক্রোটি নিশ্চয় তাহলে ব্রুকোপনডোতেই যাচ্ছে। ওখানে ওদের একটা বড় ঘাঁটি আছে’। বলল আহমদ মুসা।
উপকূলের সমভূমি এলাকা পার হয়ে গাড়ি তখন প্রবেশ করেছে জংগলাকীর্ণ টিলাময় এলাকায়। উঁচু-নিচু পথ। গাড়ির গতি আগের চেয়ে কমে গেছে।
জংগলাচ্ছাদিত একটা প্রশস্ত টিলায় উঠল আহমদ মুসার ট্যাক্সি।
টিলায় উঠে আহমদ মুসা তার রিয়ারভিউতে দেখতে পেল সামনের মাইক্রোর মতই আরেকটা মাইক্রো টিলার গোড়ায়, উঠে আসছে টিলার উপরে।
অন্যদিকে সামনে তাকিয়ে আহমদ মুসা বিস্মিত হলো যে, সামনের মাইক্রোটি তার স্পীড কমিয়ে দিয়ে আয়েশি ভংগিতে চলছে।
চমকে উঠল আহমদ মুসা, ওরা কি তাকে ফাঁদে আটকালো? এই ফাঁদে আটকানোর জন্যে ওরা শহরের বাইরে এসেছে? এটাই ঠিক। শহর থেকে দূরে সবার অলক্ষ্যে সামনে ও পেছন থেকে আক্রমন করে তাকে ওরা শেষ করতে চায়।
হাসল আহমদ মুসা।
জায়গাটাও ওরা ভাল বেছে নিয়েছে। টিলাটাকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থের দিক দিয়ে একটা বড় চড়াই বলা যায়। জংগল ও বড় বড় গাছ পালায় ঘেরা। কাউকে গুম করার উপযুক্ত জায়গা বটে। নিশ্চয় ওরা মোবাইলে যোগাযোগ করে এই জায়গাটা নির্ধারণ করেছে।
দাঁতে দাঁত চাপল আহমদ মুসা। ওদের খোশ-খেয়াল সফল হতে সে দেবে না। সামনে পেছনে একসাথে লড়াই না করে ভিন্ন ভিন্নভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিল সে।
ট্যাক্সির গতি বাড়িয়ে দিল।
মাইক্রোটি রিভলবারের রেঞ্জে আসার সংগে সংগে আহমদ মুসা ড্যাশ বোর্ডে রাখা এম-১০ রিভলবারটি ডান হাত দিয়ে তুলে নিল এবং জানালায় হাত নিয়ে ধীরে সুস্থে গুলী করল মাইক্রোর পেছনের টায়ারে।
টায়ার সশব্দে ফেটে গেল এবং ঝাঁকি খেয়ে গাড়িটা রাস্তার বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে গেল।
মাইক্রোটি দাঁড়ানোর সংগে সংগেই মাইক্রো থেকে নেমে এল ওরা ছয় জন গুলী করতে করতে।
ছয়জনের হাতেই রিভলবার।
একযোগে আহমদ মুসার ট্যাক্সি লক্ষ্যে গুলী করতে করতে ওরা ছুটে আসছে।
আহমদ মুসা তার হাতের রিভলবার আগেই রেখে দিয়েছিল ড্যাশ বোর্ডে। এবার সে তুলে নিল এম-১০ মেশিন রিভলবার।
জোয়াও বার্নারডোকে আহমদ মুসা আগেই সিটের উপর শুয়ে পড়তে বলেছিল।
আহমদ মুসা মাথা নিচু করে এম-১০ এর ট্রিগারে তর্জনি স্পর্শ করে এর নল জানালার বাইরে নিয়ে ট্যাক্সির মাথার উপর দিয়ে ওদের তাক করল।
ওরা তখন এসে গেছে ট্যাক্সি ও মাইক্রোর মাঝ বরাবর।
আহমদ মুসা তর্জনি চেপে ধরল এম-১০ এর ট্রিগারে।
ট্যাক্সির মাথার উপর দিয়ে গুলির ঝাঁক ছুটে গেল ৬ জন রিভলবারধারীর দিকে।
ওদের লুকাবার কোন জায়গা ছিল না। শুয়ে পড়ারও সময় পেল না। এক ঝাঁক গুলীতে ঝাঁঝরা হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ৬টি লাশ।
আহমদম মুসা বার্নারডোর দিকে তার ড্যাশ বোর্ডের রিভলবার এগিয়ে ধরে বলল, ‘আমি মাইক্রোতে যাচ্ছি। তোমার উপরে দায়িত্ব হলো পেছনের মাইক্রোটি রিভলবারের রেঞ্জে আসার সংগে সংগে যতটা পার গুলী করবে মাইক্রোটির টায়ারে। আমি চাই ওরা গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসুক। পারবে তো?’
‘পারবো’। রিভলবার লাগবে না। আমার কাছে রিভলবার আছে’। বলল বার্নারডো।
‘ধন্যবাদ’। বলে আহমদ মুসা নেমে পড়ল ট্যাক্সি থেকে।
দৌড়ে গিয়ে উঠল মাইক্রোতে।
মুখ ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে ফাতিমা নাসুমন।
তার দুচোখে আতংক ঠিকরে পড়ছিল। আহমদ মুসাকে দেখে যেন প্রাণ ফিরে পেল ফাতিমা নাসুমন। তার দুচোখে আনন্দের বিদ্যুত খেলে গেল।
আহমদ মুসা দ্রুত তার হাতের বাঁধন খুলে দিল। বলল, ‘আরেকটা মাইক্রোতে ওরা আসছে। আমি ওদিকটা দেখি। তোমার বাঁধনগুলো খুলে নাও তুমি’।
বলে আহমদ মুসা ছুটে গেল মাইক্রোর পেছন দিকে। এম-১০ এর বাট দিয়ে মাইক্রোর পেছনের কাঁচ কিছুটা ভেঙে ফেলল।
দেখল পেছনের মাইক্রোটি উঠে এসেছে টিলায়। ছুটে আসছে ট্যাক্সির দিকে। আরও কিছুটা আসতেই রিভলবার গর্জন করে উঠার শব্দ পেল আহদম মুসা। পরপর কয়েকটা গুলির শব্দ।
খুশি হলো আহমদ মুসা। বার্নারডো ঠিক সময়েই গুলী করেছে।
গুলী খাওয়ার পরক্ষণেই বাঁ দিকের চাকা হারিয়ে মাইক্রোটি বাঁ দিকে একটু কাত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল।
সংগে সংগেই মাইক্রোটি থেকে গুলী করতে করতে পাঁচজন লোক নেমে এল, তাদের সবার হাতে স্টেনগান।
তাদের লক্ষ্য ট্যাক্সিটি।
ছুটে আসছে ওরা ট্যাক্সির দিকে গুলী বৃষ্টি করতে করতে।
ওরা তখন ট্যাক্সি এবং ওদের মাইক্রোর মাঝামাঝি জায়গায়।
আহমদ মুসার তর্জনি চেপে ধরল এম-১০ এর ট্রিগার।
গুলীর ঝাঁক বেরিয়ে যেতে লাগল এম১০ থেকে।
ওরা মাইক্রোর দিক থেকে আক্রমণ আশা করেনি। লক্ষ্য ছিল ওদের ট্যাক্সির দিকে।
সুতরাং এম-১০ এর গুলী ওদের অরক্ষিত অবস্থায় পেল। মুহূর্তেই ঝাঁঝরা হয়ে গেল ওদের দেহ। পাঁচটি লাশ আছড়ে পড়ল রাস্তায়।
এদিকে ফাতিমা তার মুখ ও পায়ের বাঁধন খুলে ফেলেছিল।
আহমদ মুসা এগিয়ে গেল ফাতিমার কাছে। বলল, ‘তুমি ঠিকঠাক আছ ফাতিমা?’
কেঁদে উঠল ফাতিমা। কোন কথা বলতে পারল না সে।
‘আর কাঁদা কেন ফাতিমা? আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন’।
বলে মাইক্রো থেকে নামতে নামতে আহমদ মুসা বলল, ‘এস ট্যাক্সিতে যাই’।
আহমদ মুসা ও ফাতিমা এল ট্যাক্সির কাছে। দেখল আহমদ মুসা জোয়াও বার্নারডো শোয়া অবস্থা থেকে উঠেছে। বলল আহমদ মুসা, ‘তুমি ঠিক আছ তো বার্নারডো? মাইক্রোর চাকায় ঠিক সময়েই গুলী করেছিলে। ধন্যবাদ তোমাকে’।
জোয়াও বার্নারডো ড্রাইভিং সিটের পাশেই তার সিটে ফিরে আসতে আসতে বলল, ‘স্যার, আপনি যে অসাধ্য সাধন করলেন, এজন্য কে ধন্যবাদ দেবে আপনাকে?’
আহমদ মুসা হাসল। বলল, ‘আমি ধন্যবাদ চাই না। আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই বার্নারডো’।
বলেই আহমদ মুসা গাড়ির দিকে মনোযোগ দিল। বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ, গাড়ির চাকাগুলো ঠিক আছে। কিন্তু বডি শেষ হয়ে গেছে। আমরা বাঁচলেও তোমার গাড়িটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে’।
গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ফাতিমাকে বসতে বলে আহমদ মুসা ফিরে এল তার ড্রাইভিং সিটে।
গাড়ি স্টার্ট দিল।
ছুটে চলল গাড়ি পারামারিবো শহরের দিকে।
এক সময় মুখটা পেছেনের দিকে একটু ঘুরিয়ে বলল, ‘ফাতিমা বাড়ি যাওয়া তোমার ঠিক হবে না। তোমার আব্বাও বাড়িতে থাকছেন না। তোমাদের পার্টির বেনামী কতগুলো বাড়ি আছে। তারই একটিতে তোমার আব্বাসহ আমরা উঠেছি। সেখানেই আমরা এখন যাব’।
আপনার মত আমার মত ভাইয়া’। বলল ফাতিমা।
সামনেই বাড়ি।
বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছতেই আহমদ মুসা দেখল, বাড়ির সামনে জটলা।
অস্বাভাবিক মনে হলো ব্যাপারটা আহমদ মুসার কাছে।
গাড়ি বারান্দায় পৌঁছার আগেই আহমদ মুসা গাড়ি দাঁড় করাল। এম-১০ কোটের ভেতরে শোল্ডার হোলস্টারে নিয়ে এল।
গাড়ির দরজা খুলল।
গাড়ি থেকে নামার আগে ফাতিমাকে বলল, ‘তুমি গাড়িতে থাক ঘটনা কি আমি দেখি’।
আহমদ মুসা নামল গাড়ি থেকে।
জটলার মধ্যে বাড়ির গেটে দাঁড়িয়েছিল দলের কয়েকজন এবং বাড়ির এটেনডেন্ট সুকর্ণ।
আহমদ মুসা শিখের পোশাকে থাকলেও সুকর্ণ আহমদ মুসাকে চিনতে পারল। কারণ সকালে আহমদ মুসা এই পোশাক তার সামনেই পরেছে।
ছুটে এল সুকর্ণ আহমদ মুসার কাছে। বলল, ‘স্যারকে ধরে নিয়ে গেছে’। বলেই কেঁদে উঠল সুকর্ণ।
শোনার সঙ্গে সঙ্গে আহমদ মুসার গোটা শরীরে শীতল স্রোত বয়ে গেল। বলল সুকর্ণকে লক্ষ্য করে, ‘কে ধরে নিয়ে গেছে, কখন ধরে নিয়ে গেছে?’
‘কারা জানি না। স্যার বিমান বন্দর থেকে এসে কাপড় ছেড়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এই সময় দুটি গাড়িতে দশ বারো জন লোক আসে। তাদের সবার কাছে রিভলবার, স্টেনগান ইত্যাদি ছিল। ওরাই ধরে নিয়ে গেছে’। বলল সুকর্ণ।
‘গেটে পাহারা ছিল না?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘দুজন পাহারায় ছিল। কিন্তু তারা কিছু বুঝে উঠার আগেই তাদের উপর চড়াও হয় এবং বেঁধে ফেলে’। সুকর্ণ বলল।
‘যারা ধরে নিয়ে গেছে তারা কোন কথা বলেছিল?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘কোন কথা বলেনি। গাড়িতে তোলার সময় ওদের সরদার মত লোকটা বলেছে স্যারকে লক্ষ্য করে, আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন স্যার। সে আশা আর পুরণ হলো না। তবে জামাই, মেয়ে নিয়ে একসাথে স্বর্গে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেব’। বলল সুকর্ণ।
‘গাড়ির নম্বর রেখেছ?’ বলল আহমদ মুসা।
‘জ্বি হ্যাঁ’ বলে একটা চিরকুট আহমদ মুসার হাতে তুলে দিতে দিতে বলল, ‘দুই গাড়ির নাম্বারই এতে আছে’।
আহমদ মুসা নম্বর দুটি কাগজে টুকে নিয়ে চিরকুটটা সুকর্ণকে ফেরত দিতে দিতে বলল, ‘এই নম্বর দিয়ে তোমরা থানায় একটা মামলা করবে আজই’।
একটু থেমেই আহমদ মুসা আবার বলল, ‘তোমাদের ছোট ম্যাডাম ফাতিমাকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে এই গাড়িতে আছে। তাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছি। এখানে বা বাড়িতে সে নিরাপদ নয়। আর শোন একজন লোককে আমি এখানে রেখে যাচ্ছি। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই এখানে ফিরে আসছি’।
বলে আহমদ মুসা ট্যাক্সিতে ফিরে গেল।
আহমদ মুসাকে ফিরতে দেখেই উদ্বিগ্ন ফাতিমা নাসুমন বলল, ‘কি ঘটেছে? খারাপ কিছু?’
‘হ্যাঁ, বোন। তোমার আব্বা কিডন্যাপ হয়েছেন। আমি চলে গিয়েছিলাম তোমাকে যে গাড়ি কিডন্যাপ করেছে তার পেছনে, আর তিনি বাসায় ফিরে এসেছিলেন। ফিরে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে উনি কিডন্যাপ হন। আমার মনে হয় বিমান বন্দরে কেউ তাকে দেখেছিল এবং তারা তাঁকে অনুসরণ করে’। বলল আহমদ মুসা।
ফাতিমা নাসুমন কিছু বলল না। আহমদ মুসা দেখল, সে দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকছে’।
আহমদ মুসার বুঝতে বাকি রইল না, ফাতিমা নাসুমন কান্না রোধ করার চেষ্ট করছে।
আহমদ মুসা ফাতিমাকে কিছু না বলে তাকালো বার্নারডোর দিকে। বলল, বার্নারডো তুমি এ বাড়িতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। আমি আসছি’।
গাড়ি থেকে নামল বার্নারডো।
সুকর্ণ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে লক্ষ্য করে বলল আহমদ মুসা, ‘সুকর্ণ একে নিয়ে যাও, আমি আসছি’।
সুকর্ণ বার্নারডোকে নিয়ে চলে গেল।
আহমদ মুসা ড্রাইভিং সিটে উঠে বসল।
ফাতিমা নাসুমন পেছনের সিট থেকে এসে আহমদ মুসার পাশের সিটে বসল।
গাড়ি চলতে শুরু করল।
কিছুক্ষণ পর ফাতিমা চোখ মুছে বলল, ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
গতকাল পারামারিবোতে আসার পরই একজন মা পেয়ে গেছি, একজন দাদী পেয়ে গেছি, সেখানেই আপাতত তুমি থাকবে। তোমাকে ওখানে রেখে আমি বেরুবো মি. হাত্তার সন্ধানে’।
ফাতিমা নাসুমন তাকাল আহমদ মুসার দিকে। তার দুগন্ড বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল অশ্রুর দুটি ধারা। কিছুই বলল না সে।
আহমদ মুসাই আবার কথা বলল। বলল, ‘আল্লাহর উপর ভরসা কর বোন। ইনশাআল্লাহ আমরাই জিতব’।
চোখ মুছল ফাতিমা নাসুমন।
কিছুক্ষণ পর বলল, ‘কোথায় তাদের বাড়ি?’
‘টেরেক স্টেটে। টেরেক স্টেটটাই ওদের’।
‘টেরেক স্টেটের নাম শুনেছি। ঐ স্টেটেই সুরিনামের একমাত্র ও প্রাচীনতম দুর্গের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। তবে টেরেক পরিবারের কাউকে চিনিনা’। বলল ফাতিমা নাসুমন।
‘কিন্তু তোমাদের ওরা চেনে। তোমার আব্বার ভক্ত ওরা। ঐ পরিবারের মেয়ে লিসা টেরেক তো তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ে’। আহমদ মুসা বলল।
‘তাহলে দেখলে হয়তো চিনতেও পারি’। বলল ফাতিমা নাসুমন।তার মুখ অনেকখানি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
‘আমি আশা করি ভালই থাকবে তুমি সেখানে। খুব পুরাতন ঐতিহ্যবাহী পরিবার ওরা। আমার মনে হয় ওদের একটা মুসলিম ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে পারে’। আহমদ মুসা বলল।
‘কেন, কিভাবে?’
‘ওদের বিরান হওয়া দুর্গে নাকি একটা মসজিদ ছিল। দুর্গ বিরান হয়ে গেলেও মসজিদের কিছু দেয়াল এবং মেঝে নাকি এখনো অক্ষত আছে’। বলল আহমদ মুসা।
ফাতিমা নাসুমন বিষ্মিত দৃষ্টিতে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘সুরিনামের প্রাচীন ইতিহাসের উপর আমার অনুসন্ধান আছে। কিন্তু প্রাচীন ও বিরান এই দুর্গের সাথে মুসলমানদের কোন সম্পর্ক থাকার কথা আমি কোথাও পাইনি। দুর্গ সম্পর্কে সকলেই একমত যে, ইউরোপীয়ান কলোনাইজেশনের সেই কালে কোন জলদস্যুদের ঘাঁটি এখানে ছিল। তারাই এই দুর্গ তৈরী করে। তবে, একথা অনেকেই লিখেছে, জলদস্যুরা স্পেন, পর্তুগাল, বৃটেন যে দেশেরই হোক মুসলিম স্থাপত্য সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা ছিল। স্পেনীয় মুসলিম স্থাপত্যের বহু জিনিসের এখানে অনুকরণ করা হয়েছে’।
‘কিন্তু আমি অন্য আরেক কাহিনী শুনেছি ফাতিমা। গত রাতে আমি পারামারিবো পৌঁছার পর রাতেই ওয়াং আলীর খোঁজে ওদের একটা ঘাটিতে ঢুকেছিলাম। সেই ঘাঁটি থেকে বন্দী একজন যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। আমি মনে করেছিলাম সেই ওয়াং হবে। কিন্তু পরে দেখলাম সে ওভানডো টেরেক’।
বলে আহমদ মুসা ওভানডোর স্ত্রী জ্যাকুলিনের ঐ রাতে কিডন্যাপ হওয়া ও উদ্ধার কাহিনীসহ ওভানডো যে কাহিনী অপহরণকারীদের কাছ থেকে শুনছিল সব কথা ফাতিমার কাছে বর্ণনা করে শুনাল।
ফাতিমা বিষ্ময়ে চোখ কপালে তুলে বলল, ‘বলেন কি? ক্যারিবিয়ানের স্পেনীয় গভর্ণর ওভানডোর ডুবে যাওয়া ২০টি জাহাজের একটি তাহলে ডুবেনি এবং সেটা ভেসে এসছিল সুরিনাম উপকূলে? ঐ জাহাজের ক্যাপ্টেন কি কোন মুসলিম ছিল? সেই কি তৈরী করেছিল এই দুর্গ?’
থামল ফাতিমা। তার কন্ঠে প্রবল একটা আবেগ ঝরে পড়ল।
‘আমি কিছু জানি না ফাতিমা। তোমরা সুরিনামের মানুষ। এসব প্রশ্নের উত্তর তো তোমাদের কাছে আমরা চাই। বলল আহমদ মুসা।
‘জাহাজ ভরা সোনা এনে দুর্গের এলাকায় পুঁতে রাখা সম্পর্কে আপনি কি বলেন?’ ফাতিমা জিজ্ঞেস করল।
‘বলা মুশকিল। সেটা এমন একটা সময় ছিল যখন বিশ্বাস করা না করা উভয় অবস্থাই যুক্তিযুক্ত মনে হতে পারে’। বলল আহমদ মুসা।
‘কিন্তু বিশ্বাস করার পেছনে যুক্তিটাই বেশি শক্তিশালী। ওভানডোর সেই জাহাজ বহরে সোনা বোঝাই জাহাজ ছিল, ডুবে যাওয়া থেকে বেঁচে গিয়ে সোনা বোঝাই একটা জাহাজ স্পেনে পৌঁছেছিল, এটা ইতিহাস। ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া একটা জাহাজ যদি স্পেনে পৌঁছেতে পারে, তাহলে আরেকটা জাহাজ ঝড় তাড়িত হয়ে সুরিনামেও পৌঁছতে পারে’। ফাতিমা বলল।
‘তোমার কথায় যুক্তি আছে ফাতিমা। সত্য হলে সেটা খুশির কথাই হবে’। বলল আহমদ মুসা।
‘খুশির কারণ বলছেন কেমন করে? এই সোনা লোভীদের হাতে টেরেক পরিবার ধ্বংস হবার পথে। আমি নিশ্চিত, দুর্গের তলায় সোনা থাকার কথা যখন রটেছে, তখন টেরেক পরিবারের আর রক্ষা নেই। সোনা নিয়ে যে রক্তারক্তি আমেরাকায় হয়েছে, সে রকম রক্তারক্তি আমেরিকার যুদ্ধগুলোতেও হয়নি’। বলল ফাতিমা।
‘আমিও এ ব্যাপারটা নিয়ে উদ্বিগ্ন ফাতিমা’।
বলে একটু থেমেই আহমদ মুসা আবার বলল, ‘আচ্ছা বলতে পার, তোমার আব্বার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আর এই সোনা সন্ধানীরা এক হয়ে গেল কি করে?’
‘এক হয়ে যায়নি। ওরা একটাই শক্তি। আর সম্পদ সংগ্রহে ওরা মরিয়া। ওরা বলে ‘মায়ের’ জন্যে তাদের ওগুলো। এ জন্যেই তারা তাদের রাজনৈতিক দল সুরিনাম পিপলস কংগ্রেসের পাশাপাশি ‘মায়ের সূর্য সন্তান’ (মাসুস) নামে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন গড়েছে। ওরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে যেমন রাজনীতিকে ওদের মনোপলি করতে চায়, তেমনিভাবে ওরা সম্পদও দখল করবে, এটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয় এক জাহাজ স্বর্ণের লোভ ওদের কাছে একটা দেশ দখলের চেয়ে কম নয়। তাই আমরা যে বিপদে পড়েছি, তার চেয়ে টেরেক পরিবারের বিপদ কোন অংশে ছোট নয়’। ফাতিমা বলল।
‘ফাতিমা, তুমি দেখছি আমাকে ভয় ধরিয়ে দিলে’। বলল আহমদ মুসা।
‘তা যদি পেরে থাকি, তাহলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি’।
‘কেন?’
‘তাহলে টেরেক পরিবারের বাঁচার একটা পথ বের হবে। আপনাকে তারা পাশে পাবে, যেমন আমরা পেয়েছি’। হেসে বলল ফাতিমা।
‘ফাতিমা, আমরা্ এসে গেছি। ঐ তো ওদের বাড়ি। দেখো, গেটে দাঁড়িয়ে দুজন এদিকে তাকিয়ে আছে। ওদের একজন ওভানডো টেরেক, অন্যজন তার বোন লিসা টেরেক’।
বলেই আহমদ মুসা গাড়ির জানালা দিয়ে তাদের দিকে হাত নাড়তে লাগল।
উত্তরে ওরাও হাত নাড়ল এবং দৌড়ে আসতে লাগল গাড়ির দিকে।

তৈরী হয়ে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল।
ঘরে উপস্থিত ওভানডোর মা, ওভানডোর দাদী, ওভানডো, ওভানডোর স্ত্রী জ্যাকুলিন, লিসা টেরেক, ফাতিমা নাসুমন সকলেই।
লিসা টেরেক জড়িয়ে ধরে আছে ফাতিমা নাসুমনকে।
আহমদ মুসা যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালে ওভানডোর মা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠল, ‘বাবা গত রাতের সব কথা তো আমি জানি। ফাতিমার কাছ থেকে আজ সকালের কথাও শুনলাম। গত রাত থেকে তোমার শরীরের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, এ শরীর নিয়ে তুমি কেমন করে বেরুচ্ছ?’
ওভানডোর মা থামতেই ফাতিমা বলে উঠল, ‘গত রাত থেকে নয় খালাম্মা, ১৯ তারিখে গায়ানার নিউ আমস্টারডামে পেৌঁছার পর আজ পর্যন্ত যা ওর উপর দিয়ে ঘটে গেছে, তা দিয়ে এক মহাকাব্য লেখা যাবে’।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘কাহিনী শেষ হবার পর তো মহাকাব্য লেখা হয়, কাহিনী তো এখনও শেষ হয়নি। এখন যে বেরুচ্ছি, তা কাহিনীরই একটা অংশ’।
গম্ভীর হলো ফাতিমার মুখ। বলল, ‘আপনি কোথায় বেরুচ্ছেন, আমরা জানতে পারি না?’
‘আমার কাছেও এখনও স্পষ্ট নয় যে, আমাকে কোথায় যেতে হবে। একাধিক বিকল্প আমার কাছে আছে। পথে বের হবার পর আমি আশা করছি আল্লাহই ঠিক করে দেবেন, আমাকে কোথায় যেতে হবে’। গম্ভীর কন্ঠ আহমদ মুসারও।
ঘরের পরিবেশটা হঠাৎ করে ভারী হয়ে উঠেছে।
‘আপনার মত এমন করে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করতে পারি না কেন?’ বলল লিসা। তার দু’চোখ ছল ছল হয়ে উঠেছে।
‘এই যে অনুভূতি তুমি লাভ করেছ, এটাই আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার দিকে তোমাকে নিয়ে যাবে। ভালোবাসলে তার উপর ভরসা করা যায় লিসা’। আহমদ মুসা বলল।
‘আপনার কথা সত্য হোক’। বলল লিসা।
যাবার জন্য ব্যাগটা হাতে তুলে নিল আহমদ মুসা।
ওভানডো বলে উঠল, ‘আমাদের কিছু বলবেন ভাইয়া?’
আহমদ মুসা তার ডান হাতটা ওভানডোর ঘাড়ে রাখল। বলল, ‘সাবধান থেকো। রাত পর্যন্ত আমি ফিরে আসব ইনশাআল্লাহ’।
বলেই আহমদ মুসা তাকাল ফাতিমার দিকে। বলল, ‘চিন্তা করো না ফাতিমা। আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাথে আছে’।
ফাতিমা কিছু বলতে পারলো না। ভিজে উঠেছে তার চোখের দু’কোণ।
‘আসি, সবাই দোয়া করবেন’। বলে বাইরে বেরুবার জন্যে পা বাড়াল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসাকে গাড়ি পর্যন্ত এদিয়ে দিল ওভানডো। বলল, ‘ভাইয়া এ গাড়ি তো শেষ হয়ে গেছে। আমারটা নিয়ে যান’।
আহমদ মুসা গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে বলল, ‘এ গাড়ি নিয়ে যুদ্ধে একবার জিতেছি। এ গাড়ি দিয়েই আবার বিসমিল্লাহ করতে চাই’।
গাড়ির দরজা বন্ধ করে গাড়ি স্টার্ট দিল আহমদ মুসা।
ছুটতে শুরু করল গাড়ি।
পৌছল আহমদ মুসা আহমদ হাত্তার বাড়িতে।
গাড়ির শব্দ পেয়েই বেরিয়ে এল ভেতর থেকে জোয়াও বার্নারডো ও সুকর্ণ। আহমদ মুসা তাদের নিয়ে ভেতরে গিয়ে বসল।
আহমদ মুসা বার্নারডোর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। তুমি রেস্ট নাওনি?’
‘একটু বাইরে গিয়েছিলাম’। বলল জোয়াও বার্নারডো।
‘ও আচ্ছা’ বলে আহমদ মুসা একটু থামল। একটু ভাবল। তারপর বলল, ‘সুকর্ণ ওরা তোমার স্যারকে নিয়ে যাবার সময় বলেছিল যে, জামাই, মেয়ে ও তোমাকে এক সংগে স্বর্গে পাঠাব, একথা ঠিক তো?’
‘জি স্যার’। উত্তর দিল সুকর্ণ।
সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজল আহমদ মুসা। ভাবছে সে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে জোয়াও বার্নারডোর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বার্নারডো ফাতিমা নাসুমনকে ওরা ব্রুকোপনডোর দিকে মানে ব্রুকোপনডোতে নিয়ে যাচ্ছিল তাই না?’
‘হ্যাঁ সার, আমিও তাই মনে করি’। বলল বার্নারডো।
‘আমার মনে হয় ওয়াং আলীকে ওরা ব্রুকোপনডোতেই বন্দী করে রেখেছে’। আহমদ মুসা বলল।
‘কেন মনে করছেন?’ বলল বার্নারডো।
‘ঐ যে ওরা বলেছে তিনজনকে একসাথে স্বর্গে পাঠাবে। মানে তিনজনকে তারা একত্রিত করবে। আমার মনে হচ্ছে আহমদ হাত্তাকেও ওরা ব্রুকপনডোতেই নিয়ে গেছে’। আহমদ মুসা বলল।
বিষ্ময় ফুটে উঠল জোয়াও বার্নারডোর মুখে। বলল আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে, ‘আপনি অদ্ভূত নিখুঁত একটি অংক কষেছেন ওদের একটা উক্তিকে কেন্দ্র করে। ধন্যবাদ আপনাকে’।
‘এ অংকটা নিখুঁত কি করে বুঝলে?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
জোয়াও বার্নারডো একটু হাসল। বলল, ‘আপনি চলে গেলে আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম। আমার পারিচিত মহলে কিছু খোঁজ খবর নিলাম। গাড়ির নম্বর দুটো চেক করে ওরা বলল, এ নাম্বারের দুটি গাড়ি সাড়ে ১১ টার সময় ব্রুকোপনডোর দিকে যেতে দেখা গেছে। আজ সাড়ে ১১টার সময় যে টিলায় ম্যাডাম ফাতিমাকে নিয়ে ঘটনা ঘটল ওরা সেই টিলা অতিক্রম করেছে’।
আহমদ মুসার চোখ দুটো চঞ্চল হয়ে উঠল। সে গভীর দৃষ্টিতে একবার তাকাল বার্নারডোর দিকে। একটু ভাবল। চোখ দুটি এক সময় উজ্জ্বল হয়ে উঠল আহমদ মুসার। বলল, ‘বার্নারডো তুমি তো গোয়েন্দা রিপোর্ট দিলে’।
চমকে উঠে বার্নারডো তাকাল আহমদ মুসার দিকে। কিন্তু পরক্ষণেই তারও মুখে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল। বলল, ‘আপনি এটাও বুঝে ফেলেছেন?’
‘বুঝার কিছুটা বাকি আছে’। আহমদ মুসা বলল।
‘কি?’ বলল বার্নারডো।
‘গোয়েন্দা অফিসারদের মধ্যে আত্মীয় বন্ধু আছে, না তুমিও গোয়েন্দা অফিসার?’ আহমদ মুসা বলল।
বিষ্ময় ফুটে উঠল বার্নারডোর চোখে মুখে। কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আহমদ মুসার দিকে। তারপর বলল, ‘আপনার মত এমন দ্বিতীয় মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। আপনার পরিচয় আমি জানি না। কিন্তু আপনি সাধারণ কেউ নন’।
বলে একটু থামল বার্নারডো। পরক্ষণেই আবার বলে উঠল, ‘আপনার দ্বিতীয় অনুমানটাই ঠিক। আমি একজন গোয়েন্দা অফিসার। তবে আরেকটা পরিচয় আমার আছে। আপনি সেটা অনুমান করতে পারেন নি’। মুখে হাসি বার্নারডোর।
আহমদ মুসার মুখেও হাসি ফুটে উঠল। বলল, ‘আগে অনুমান করতে পারিনি, কিন্তু এই মুহূর্তে অনুমান করতে পারছি’।
‘বলুন তো সেটা কি?’ বলল বার্নারডো হাসি মুখে।
‘তুমি মুসলমান’। আহমদ মুসা বলল।
বিষ্ময় ও আনন্দে চোখ দুটো নেচে উঠল বার্নারডোর। সে ছুটে এসে আহমদ মুসার পায়ের কাছে বসল। বলে উঠল, ‘আপনি অসাধারণ, অসাধারণ আপনি। বিশ্বাস করুন স্যার, শুরু থেকেই আমি গর্ববোধ করছি যে, এ ধরণের অসাধারণ মানুষ আমাদের মুসলমানদের মধ্যেও আছে’।
‘শুরুতে কি করে বুঝলে আমি মুসলমান?’ আহমদ মুসা বলল।
‘আপনি যখন আমার ট্যাক্সিতে উঠেন, তখনই আপনার কপালে সিজদার দাগ দেখে বুঝি যে আপনি মুসলমান। কোন বিশেষ কারণে আপনি শিখের ছদ্মবেশ নিয়েছেন। তারপর আপনি যখন পারামারিবো আসার জন্যে গাড়ি চাইলেন, তখন কেন জানি আমার মনে হয়েছিল, আপনাকে আমার সহযোগিতা করা দরকার’। বলল বার্নারডো।
‘তুমি পারামারিবো আসার সিদ্ধান্ত নিলে কেন? এটা আমাকে বিষ্মিত করেছে’। আহমদ মুসা বলল।
‘গাড়ি ফিরিয়ে নেওয়া একটা কারণ ছিল বটে, কিন্তু সবচেয়ে বড় কারণ ছিল আপনাদের সম্পর্কে আমার কৌতুহল। একজন মুসলিম শিখ সাজা এবং শুধু পারামারিবো যাবার জন্যে একটা গাড়ি কিনে ফেলা কম কথা নয়’। বলল বার্নারডো।
‘কিন্তু তোমার নাম জোয়াও বার্নারডো কেন?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘সে অনেক কথা। কোপেনাস নদী তীরের উইটাগ্রো এলাকায় আমার বাড়ি। উইটাগ্রোসহ চারদিকের লোকেরা ছিল ট্রাইবাল ধর্মে বিশ্বাসী। উইটাগ্রো শহরে ছিল বেশ কিছু ক্যাথলিক খৃস্টান। দূর্গম এলাকা বলেই
হয়তো সেখানে তখনও কোন এশিয়ান যায়নি। উইটাগ্রোতে তখন ছিল একটাই স্কুল। মালিক ছিল ক্যাথলিক খৃষ্টানরা। সেই স্কুলে ভর্তি হতে হলে সবাইকে কোন ইউরোপীয় নাম নিতে হতো। তা না হলে বিনামূল্যে বই, টিফিন ও অর্থ সাহায্য পাওয়া যেতো না। সে জন্যে সবাই ইউরোপীয় নাম নিয়ে স্কুলে ভর্তি হতো। সবার মত আমিও আমার মুসলিম নাম মহসিন মুহাম্মাদ পরিবর্তন করে ইউরোপীয় নাম নিয়েছি’। বলল জোয়াও বার্নারডো।
‘তোমার মুসলিম নাম তো খুব সুন্দর’।
বলে আহমদ মুসা একটু থামল। পরক্ষণেই বলে উঠল, ‘এস এবার কাজের কথায় আসি মহসিন বার্নারডো। কি করা যায় বল তো? এটা বোধ হয় নিশ্চিত যে, আহমদ হাত্তাকে ওরা ব্রুকোপনডোতেই নিয়ে গেছে’।
বার্নারডো একটু ভাবল। তারপর বলল, ‘সুরিনামের অতিরিক্ত আইজিপি এবং পারামারিবোর সহকারী পুলিশ কমিশনার (অপারেশন) সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমদ হাত্তার সমর্থক। তারা ভালোবাসেন আহমদ হাত্তাকে। তাদের একটা পরামর্শ নেয়া যায় কিনা চিন্তা করে দেখুন’।
আহমদ মুসার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, ‘তাদের সাথে কি তোমার জানাশোনা আছে’।
‘হ্যাঁ, অতিরিক্ত আইজি আমার ট্রেইনার ছিলেন। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। গোয়েন্দা বিভাগের জন্য তিনিই আমাকে বাছাই করেন। আর পারামারিবোর সহকারী পুলিশ কমিশনার আমার এলাকার লোক। তিনিই আমাকে উৎসাহ দিয়ে পুলিশে ঢুকিয়েছেন’। বলল বার্নারডো।
‘আলহামদুলিল্লাহ। খুব সুখবর দিলে তুমি। কিন্তু বলত ওরা কোন ধর্মের কোন এলাকার লোক?’ আহমদ মুসা জিজ্ঞেস করল।
‘সহকারী পুলিশ কমিশনার কোন এলাকার তাতো আমি আগেই বলেছি। তিনি আফ্রো-ইউরোপীয় জাতি গোষ্ঠীর এবং খৃষ্টান। সৎ ও স্বাধীনচেতা অফিসার বলে সামরিক সরকারের আমলে তিনি অনেক নিগ্রহের শিকার হন ও তার পদাবনতি ঘটে। সামরিক শাসন পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকারের কাছেও তিনি সুবিচার পাননি। আহমদ হাত্তার সরকার তার সততার মূল্যায়ন করেন এবং তিনি দ্রুত পদোন্নতি পান। তিনি আহমদ হাত্তার সরকারকে পক্ষপাতহীন সুবিচারক সরকার বলে মনে করেন। আর অতিরিক্ত আইজিপি আহমদ হাত্তার এলাকার লোক। অহমদ হাত্তাদের জমিদারীতেই তাদের বাস। অতিরিক্ত আইজিপি সাহেবের বড় ভাই স্কুল থেকে কলেজ জীবন পর্যন্ত আহমদ হাত্তার সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন। পারিবারিক ভাবেই ওরা আহমদ হাত্তার ভক্ত’।
থামল বার্নারডো।
আহমদ মুসা কোন কথা বলল না। চিন্তা করছিল। এক সময় হাসি মুখে বলল আহমদ মুসা, ‘এই দুজন পুলিশ অফিসারের সন্ধান পাওয়াকে আল্লাহর সাহায্য বলে মনে হচ্ছে। বার্নারডো তুমি যাও ওদের কাছে। সব কথা গিয়ে বল। তারা কি বলেন, শুনে এস’। বলল আহমদ মুসা।
খুশি হলো বার্নারডো। বলল, ‘তাহলে যাচ্ছি স্যার’।
বলে বার্নারডো উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের বাইরে চলে গেল।
ফিরে এল বার্নারডো পাকা তিন ঘন্টা পর।
আহমদ মুসা শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিল। বার্নারডো ফিরে এসেছে একথা শুনেই আহমদ মুসা উঠে বসল।
বার্নারডো যেমন ছুটে বেরিয়ে গিয়েছিল, তেমনি ছুটে ঘরে প্রবেশ করল। তার হাতে একটা বড় প্যাকেট এবং মুখে হাসি।
‘তোমাকে তো খুব খুশি দেখাচ্ছে, মিশন সফল?’ বলল আহমদ মুসা।
বার্নারডো বসতে বসতে বলল, ‘মিশন সফলও বলব না, ব্যর্থও বলবনা’।
‘না বার্নারডো, মিশন ব্যর্থ না হলেই তা সফল’। আহমদ মুসা বলল।
‘তাহলে সকলে আমরা আলহামদুলিল্লাহ পড়ব’। বার্নারডো বলল।
‘আলহামদুলিল্লাহ কখনই কন্ডিশনাল নয় বার্নারডো। আলহামদুলিল্লাহে রাব্বিল আলামিন ওয়া আলা কুল্লে হালিন। সুখ-দুঃখে, সাফল্য-ব্যর্থতা সব অবস্থাতেই আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি। বল, তোমার কথা বল’।
‘আমি প্রথম দেখা করেছি, এডিশনাল আইজি’র সাথে। দেখলাম ঘটনা তাঁরা জানতে পেরেছেন। কিন্তু হোম মিনিস্ট্রি এই ঘটনার সাথে পুলিশকে জড়িত হতে নিষেধ করেছে। তিনি বলেছেন এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব নয়। সুতরাং যা কিছু করার বেসরকারীভাবে করতে হবে। বলে তিনি আমাকে নির্দেশ দিলেন সহকারী পুলিশ কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করতে। তিনি যা বলার পুলিশ কমিশনারের কাছে বলে দিলেন। এলাম সহকারী পুলিশ কমিশনারের কাছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্যে তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন। বললেন, আমাদের কিছুই করার নেই। অন্তবর্তীকালীন সরকার কথায় নিরপেক্ষ, কিন্তু কাজ করছেন সুরিনাম পিপলস কংগ্রেসের রোনাল্ড রঙ্গলাল এবং ‘মায়ের সূর্য্য সন্তান’ (মাসুস) এর তিলক লাজপত পালের নির্দেশ ক্রমে। স্যারের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমরা এটুকু করতে পারি, পুলিশের একটা গাড়ি ও কিছু পোশাক তোমাদের দেব। যা কিছু করার তোমাদের করতে হবে’।
একটু দম নিয়েই বার্নারডো তার হাতের প্যাকেটের দিকে ইংগিত করে বলল, ‘এতে পুলিশের পাঁচ সেট পোশাক আছে। আর গাড়িটা ঠিক পাঁচটায় আমাদের গলির মুখে থাকবে’। থামল বার্নারডো।
আহমদ মুসা বলল, ‘মি. হাত্তা এখন কোথায় সে ব্যাপারে কিছু বলেনি?
‘হ্যাঁ, বলেছেন। সর্বশেষ গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুসারে ব্রুকোপনডোর শিবাজী কালী মন্দিরের পেছনে মানে পশ্চিম দিকে একটা বাড়ি আছে। সে বাড়ির পরেই একটা বিরাট জিমনেশিয়াম আছে। জিমনেশিয়ামটা জংগী সংগঠন ‘মায়ের সূর্য সন্তান’ (মাসুস) এর ট্রেনিং কেন্দ্র। এরই আন্ডার গ্রাউন্ড ফ্লোরে মি. হাত্তাকে রাখা হয়েছে’। বলল বার্নারডো।
‘আলহামদুলিল্লাহ। খুব মূল্যবান ইনফরমেশন দিয়েছেন ওঁরা। আমরা গিয়ে খুঁজে মরতাম শিবাজী কালী মন্দিরে। পেতাম না’।
আহমদ মুসা একটু থামল এবং পোশাকের প্যাকেটটা টেনে নিতে নিতে বলল, ‘তোমার মিশন আশাতীত সফল বার্নারডো। পুলিশ নিজে এ্যাকশনে যাবে, তা আমি কোন সময়ই ভাবিনি। তারা যে সাহায্য করেছে তা অমূল্য’। থামল আহমদ মুসা।
‘এখন আপনার পরিকল্পনা কি বলুন’। বলল বার্নারডো।
‘এখন পাঁচ সদস্যের একটা শক্তিশালী পুলিশ টীম গঠিত হবে। পাঁচ সদস্যের মধ্যে আমরা দুজন আছি, আর দরকার তিনজন। তুমি যাও মি. হাত্তার লোকদের মধ্য থেকে তিনজন লোককে বাছাই করে নিয়ে এস। যারা ভালো গুলী চালাতে পারে এবং মি. হাত্তাকে উদ্ধারের জন্যে মরতে রাজী আছে’। আহমদ মুসা বলল।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল বার্নারডো। বলল, আমি এখুনি বাছাই করে নিয়ে আসছি’। চলে গেল বার্নারডো।
আধা ঘন্টা পর মি. হাত্তার বাড়ি থেকে পাঁচজন পুলিশ বেরিয়ে এল।
তাদের ইউনিফর্মে বড় বড় অক্ষরে লেখা সিআইবি পুলিশ।
সিআইবি (সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো) পুলিশ সুরিনামের বেসামরিক প্রশাসনের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী। তারা তদন্তের স্বার্থে যে কোন জায়গায় যে কোন সময় প্রবেশ করতে পারে। বিনা ওয়ারেন্টে যে কোন কাউকে গ্রেফতার করতে পারে।
পাঁচজন পুলিশের মধ্যে একজনের ইউনিফর্মের কাঁধে লাল রংয়ের ডবল স্টার। তার মানে তিনি এসপি পর্যায়ের একজন সিনিয়র অফিসার। তার কোমরে ঝুলানো রিভলবার। শোল্ডার হোলস্টারে ঝুলানো এম-১০। অন্যদের কাঁধে ঝুলানো স্টেনগান।
এসপি’র পোশাকে আহমদ মুসা এবং জোয়াও বার্নারডোসহ অন্যরা সার্জেন্টের ইউনিফর্মে।
তারা গলির মুখে এসে দেখল, ঠিক সিআইবি পুলিশের একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
আহমদ মুসা জোয়াও বার্নারডোকে বসতে বলল ড্রাইভিং সিটে এবং নিজে তার পাশের সিটে গিয়ে বসল। অন্য তিনজন পেছনের সিটে উঠল।
সবাই উঠলে বার্নারডো তাকাল আহমদ মুসার দিকে। আহমদ মুসা বলল, ‘বিসমিল্লাহ’।
গাড়ি স্টার্ট দিল বার্নারডো।
গাড়ি ছুটে চলল পশ্চিমে ব্রুকোপনডোর দিকে।

Top