৩৪. সুরিনামে মাফিয়া

চ্যাপ্টার

হ্যারিকেন ঝড়ের মত ঘাড়ের উপর এসে আপতিতপ্রায় ট্রাকটি দেখে শেষ মুহূর্তে যে আশঙ্কার চিন্তা আহমদ মুসার মাথায় ঝিলিক দিয়ে উঠেছিল, তা তার অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়া নয় বরং তার ব্রেনের কমান্ড অফিসকে বিদ্যুৎগতির সক্রিয়তা দান করেছিল। আহমদ মুসার ব্রেনের কমান্ড যত দ্রুত ছিল, তার চেয়েও দ্রুত গতিতে গাড়ির ব্রেক কষল আহমদ মুসার পা।
তার মানে ট্রাকের সর্বনেশে মতলবের চিন্তাটা আহমদ মুসার মাথায় ঝিলিক দিয়ে ওঠার সাথে সাথেই সে কঠিন এক ব্রেক কষেছিল গাড়ির। গাড়ি আর এক ইঞ্চিও না এগিয়ে ডেডস্টপ হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু আহমদ মুসার গাড়ির সমান্তরালে চলে আসা গাড়িটা দাঁড়ায়নি। আহমদ মুসার গাড়িকে অতিক্রম করে এগিয়ে গেল সামনে।
আহমদ মুসার গাড়িকে অতিক্রম করে পাঁচ ফুটও এগোয়নি গাড়িটা। ঘটে গেল মর্মান্তিক ঘটনা।
দু’হাতে স্টিয়ারিং ধরে বিমূঢ়ভাবে সামনে তাকিয়ে থাকা আহমদ মুসার চোখের উপর চলন্ত দেয়ালের একটা পর্দা সৃষ্টি করে আহমদ মুসার গাড়ির প্রায় নাক ঘেষে ট্রাকটি গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল গাড়িটার উপর।
আহমদ মুসা সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নামল।
গাড়ির পেছন ঘুরে দ্রুত সে গেল গাড়িটার কাছে যার ঘাড়ে এসে পড়েছে ট্রাকটি।
গাড়িটা দুমড়ে-মুচড়ে একদম ভর্তা হয়ে গেছে।
গাড়ির আরোহীর কি অবস্থা হয়েছে সেটা দেখার জন্যে আহমদ মুসা গাড়িটার ঘনিষ্ঠ হচ্ছিল।
এ সময় ট্রাকটির ইঞ্জিন গর্জন করে উঠল। সেই সাথে নড়ে উঠল ট্রাকটি।
পিছু হটছে ট্রাক।
পালাচ্ছে?
গাড়ির দিক থেকে ট্রাকটির দিকে ঘুরে দাঁড়াল আহমদ মুসা। সেই সাথে আহমদ মুসার হাতে উঠে এসেছে তার রিভলবার।
আহমদ মুসা ট্রাকের টায়ারে গুলী করতে গিয়ে তার চোখ পড়ল ট্রাকের জানালা দিয়ে ড্রাইভিং সিটের উপর। দেখল, একজন নেড়ে মাথা লোকের বাম হাত স্টিয়ারিং হুইলে এবং তার রিভলবার ধরা ডান হাত প্রসারিত হচ্ছে তার দিকে।
দেখেই আহমদ মুসা ঝাপ দিল ট্রাকের গাড়ির বিপরীত দিকে ছিঁড়ে-চ্যাপটা হওয়া গাড়িটির পাশে এবং মাটিতে পড়েই আহমদ মুসা অবিরাম চারটি গুলী করল। তার দুটি ড্রাইভারকে লক্ষ্য করে উইন্ডস্ক্রিনে, অন্য দুটি ট্রাকের সামনের দুই টায়ারে।
প্রথম দুটি গুলীতে উইন্ডস্ক্রিন সম্পূর্ণটাই ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু নেড়ে মাথা লোকটি বেঁচে গেছে। তবে একটা কাজ হয়েছে নেড়ে মাথা লোকটির রিভলবার আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে একটা ব্যর্থ গুলী করার পর তাক করছিল গাড়ির লোকদের যাদের মধ্যে রয়েছে আহমদ হাত্তা ও ওয়াং আলী। কিন্তু আহমদ মুসা গুলীর মুখে পড়ে সে তার রিভলবার সরিয়ে নিয়েছিল এবং শরীরটাকে সিটের সাথে গুটিয়ে ট্রাক পেছনে সরিয়ে নিচ্ছিল।
কিন্তু আহমদ মুসার তৃতীয় গুলী ট্রাকের সামনের একটি চাকা ফাটিয়ে দিল।
ভারী ট্রাকের সামনের চাকা মুখ থুবড়ে পড়ার পর ট্রাক আর এক ইঞ্চিও পেছনে সরতে পারলো না।
ট্রাকের চাকা বিস্ফোরিত হতেই আহমদ মুসা চিৎকার করে বলল, ‘ওয়াং তুমি গাড়ি পেছনে সরিয়ে নিয়ে যাও।’
এই কথাগুলো বলার সাথে সাথেই আহমদ মুসা শোয়া অবস্থাতেই শরীরটাকে দ্রুত গড়িয়ে চিড়ে-চ্যাপটা হয়ে পড়া গাড়ির পেছনে নিয়ে এল।
আহমদ মুসার আশঙ্কা ঠিক, ট্রাকের টায়ার ফেটে যাওয়ার পর যখন গাড়িকে আর পেছনে নেয়া গেল না, তখন ন্যাড়ামাথা লোকটি তার রিভলবার ফেলে স্টেনগান হাতে তুলে নিয়ে সামনে ডানে বেপরোয়া গুলী করতে শুরু করেছে।
ততক্ষনে ওয়াং তাদের গাড়িকে অনেক-খানি সরিয়ে নিয়েছে। আহমদ মুসা গাড়ির পেছনে সরে না গেলে এবং ওয়াং গাড়িটাকে সরিয়ে না নিলে আহমদ মুসা যেমন স্টেনগানের গুলীর মুখে পড়ে যেত, তেমনি গাড়িটাও ঝাঁঝরা হয়ে যেত।
আহমদ মুসা গাড়িতে বসে হাসল। মনে মনে বলল, ন্যাড়া মাথা বন্ধু, তোমার ট্রাকের দুই পাশই এখন এম-১০ এর পাহারায়। তোমাকে তো নামতেই………।
আহমদ মুসার চিন্তা তখনও শেষ হয়নি।
ন্যাড়ামাথা লোকটি বাম দরজার সমান্তরালে স্টেনগানের নল দক্ষিণমুখী করে অবিরাম তার গুলী বৃষ্টির মধ্যে ট্রাক থেকে নেমে ঐ গুলীর কভারে ট্রাকের পুবপাশে ঘেষে উত্তর দিকে ছুটল।
আহমদ মুসা অপ্রস্তুত থাকায় আগেই গুলী বৃষ্টি শুরু করতে পারেনি। ন্যাড়া লোকটির অবিরাম গুলী বৃষ্টির মুখে দরজার সমান্তরালে তার এম-১০ কে আর তুলে ধরতে পারলো না।
কিন্তু আহমদ মুসা গুলীর মুখোমুখি অবস্থান থেকে সরে যাবার বিকল্প ব্যবস্থা ঠিক করে ফেলেছে।
আহমদ মুসা গুঁড়ি মেরে বসা তার শরীরটাকে পুবদিকে দু’বার উল্টিয়ে নিল। বিধ্বস্ত গাড়িটির পুব মাথায় গিয়ে পৌঁছল।
গুলীর নিশানা থেকে বেরিয়ে এল আহমদ মুসা। ন্যাড়া লোকটি তখন পিছু হটে ছুটছিল, আর একই নিশানায় গুলী ছুঁড়ছিল। এরই সুযোগ গ্রহণ করলো আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা এম-১০ রেখে রিভলবার তুলে নিয়ে ধীরে সুস্থে লোকটির স্টেনগান ধরা ডান হাত লক্ষ্যে গুলী করল।
ন্যাড়া লোকটির হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেল স্টেনগান।
আহমদ মুসা রিভলবার বাগিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়াল। বলল চিৎকার করে, ‘শুন ন্যাড়া মাথা বন্ধু, ডান হাতটা গেছে, জীবন হারাতে না চাইলে বাঁ হাত উপরে তুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।’
বলে আহমদ মুসা লোকটির উপর চোখ রেখেই চিৎকার করে উঠল, ‘ওয়াং গাড়ি নিয়ে এসো।’
মুহূর্ত কয়েকের মধ্যেই ওয়াং গাড়ি এনে আহমদ মুসার পাশে দাঁড় করাল।
ন্যাড়া মাথা লোকটি আহমদ মুসার নির্দেশ মানেনি। হাত তোলেনি সে। তাকিয়ে আছে সে আহমদ মুসার দিকে। দু’চোখে তার আগুন ঝরছে।
আহমদ মুসা এগুলো তার দিকে।
লোকটি মরিয়া হয়ে বাঁ হাত দিয়ে স্টেনগান তুলে নিতে যাচ্ছিল।
আহমদ মুসা বেপরোয়া এই লোকটিকে নিস্ক্রিয় করার জন্যে গুলী করে তার বাম হাতকেও নিস্ক্রিয় করে দিল। বলল আহমদ মুসা, ‘তোমাকে মারব না। ধরতে চাই তোমাকে। কার ভাড়া খাটছ তোমরা তা জানতে চাই।’
ন্যাড়া মাথা লোকটি হো হো করে হেসে উঠল।
বলল, ‘মারতে তুমি পার, ধরতে পারবে না আমাদের।’ বলেই তার আহত ডান হাতটি মুখে তুলে কামড়ে ধরল একটা আঙুল।
সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারল আহমদ মুসা, নিশ্চয় লোকটির হাতে সাইনায়েড বিষের আংটি আছে। সেটাই সে কামড়ে ধরেছে।
দৌড় দিয়েছিল আহমদ মুসা লোকটিকে বাঁচাবার জন্যে। কিন্তু পারল না। আহমদ মুসা যখন গিয়ে তার হাতটি মুখ থেকে সরিয়ে নিল, তখন তার নিষ্প্রাণ দেহটি আহমদ মুসার হাতেই ঢলে পড়ল।
লোকটিকে বাঁচাতে না পারা আহমদ মুসাকে যতখানি কষ্ট দিল, তার চেয়ে অনেক বিস্মিত হলো সে ধরা পড়া থেকে বাঁচার জন্যে আত্মাহুতি দেয়ার এ ঘটনায়।
ঝড়ের বেগে অনেক প্রশ্ন অনেক ভাবনা এসে প্রবেশ করল আহমদ মুসার মনে।
কোন পলিটিক্যাল একটিভিস্টরা এ ধরনের কাজ করতে পারে না! তারা রাজনীতি করে জীবনের জন্যে, তারা এভাবে ধরা পড়ার ভয়ে জীবন বিসর্জন দিতে পারে না। কিংবা কোন পলিটিক্যাল ক্রিমিনাল এভাবে জীবন বিসর্জন দেবে কেন? একথা তারাও জানে এবং সবাই জানে যে রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালরা তাদের নিয়োগ করে। সুতরাং তারা ধরা পরলে তাদের ক্ষতি তো তেমন নেই। বিশেষ করে সুরিনামে যারা আহমদ হাত্তাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, তারা তো সরকারের আশীর্বাদ পুষ্ট। তারা ধরা পড়লে থানায় গেলেই ছাড়া পেয়ে যেতে পারে। কিংবা কোর্টে গেলেও তারা বেল পেয়ে যাবে। সুতরাং তারা ধরা পড়ার ভয়ে মরতে যাবে কোন দুঃখে? কিন্তু এ লোক তাহলে এভাবে আত্মহত্যা করল কেন?
অবাক করা এই নতুন চিন্তাগুলো আহমদ মুসাকে পেয়ে বসেছিল।
আহমদ হাত্তা, ওয়াং আলীরা কখন তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে টের পায়নি আহমদ মুসা। অবশেষে আহমদ হাত্তা বলে উঠল, ‘কি ব্যাপার মি. আহমদ মুসা? কি ভাবছেন? লোকটি কি মারা গেল?’
আহমদ মুসা তাকাল আহমদ হাত্তার দিকে। বলল, ‘লোকটি পটাশিয়াম সাইনায়েড খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।’
আহমদ মুসা লোকটির দেহ মাটিতে রেখে উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘চলুন মি. হাত্তা, গাড়ির লোকটির কি অবস্থা হয়েছে দেখি।’
সবাই চলল গাড়ির দিকে।
গাড়িটা একদম চিড়ে-চ্যাপটা হয়ে গেছে, কেউ বাঁচার নয়। গাড়িটা ছিল লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ। তার উপর বাঁ দিক থেকেই আঘাত খেয়েছে।
গাড়ির ড্রাইভিং সিটের আরোহীই একমাত্র আরোহী ছিল।
সবাই গাড়ি ঘিরে দাঁড়াল।
উঁকি দিয়ে দেখা গেল, ড্রাইভার লোকটার শরীরের পেছন দিকের বৃহত্তর অংশ অদৃশ্য, দুমড়ে আসা গাড়ির একটা অংশের নিচে চাপা পড়ে আছে। যেটুকু দেখা যাচ্ছে তা রক্তে ভাসছে।
আহমদ মুসা কোন মতে একটা হাত ঢুকিয়ে পরীক্ষা করে দেখল লোকটা মারা গেছে।
লোকটির বাম হাত প্রায় গুঁড়ো হয়ে গেছে, আর ডান হাতটা কাঁধ ও পিঠের নিচে পড়ে গেছে।
আহমদ মুসা টেনে বের করল তার হাতটা। তার অনামিকায় একটা আংটি দেখতে পেল। পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলো, এটাও ঐ লোকটার মতই সাইনায়েড রিং।
ভ্রুকুঞ্চিত হলো আহমদ মুসার। তার মনে পড়ল এ পর্যন্ত সুরিনামে প্রতিপক্ষের যারা নিহত হয়েছে, তাদের যাদেরকে তার পরীক্ষা করার সুযোগ ঘটেছে, কারও হাতেই এই সাইনায়েড রিং দেখেনি। কিন্তু এখানে দুজনের হাতে সাইনায়েডের রিং পাওয়ার অর্থ হলো, এরা দুজন একদলের শুধু নয়, বিশেষ একটা গ্রুপের অংশ।
আহমদ মুসা এই নতুন ভাবনার সাথে সাথে ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে এগুলো।
গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আহমদ হাত্তার সেক্রেটারীকে লক্ষ্য করে বলল, ‘আপনি মি. আহমদ হাত্তার সেক্রেটারীর পরিচয় দিয়ে পুলিশকে টেলিফোন করুন। বলুন যে, এখানে অন্তর্ঘাতমূলক এ্যাকসিডেন্ট ঘটেছে। দুজন মারা গেছে। আপনারা শীঘ্র আসুন। আমরা অপেক্ষা করছি।’
আহমদ হাত্তার সেক্রেটারী তার মোবাইল তুলে নিল টেলিফোন করার জন্য।
সেক্রেটারীর টেলিফোন শেষ হতেই আহমদ হাত্তা আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে বলে ওঠল, ‘মি. আহমদ মুসা, বিশেষ কিছু আপনি ভাবছেন বলে মনে হচ্ছে?’
‘হ্যাঁ মি. হাত্তা। আমার মনে হচ্ছে গত কয়েকদিন যাদের সাথে আমাদের সংঘাত হয়েছে, গত কয়েকদিন যারা আমাদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করেছে, তারা এবং এরা এক নয়।’ বলল আহমদ মুসা।
‘কেন একথা বলছেন?’ আহমদ হাত্তা বলল।
‘রঙ্গলালদের লোক হলে এরা ধরা পড়ার ভয়ে এইভাবে আত্মহত্যার কথা নয়। যারা কোন মতেই নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করতে চায় না, কিংবা নিজেদের কোন তথ্য বাইরে প্রকাশ হতে দিতে চায় না, তারা এইভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু রঙ্গলালের লোকরা তো এসব চিন্তা করার কথা নয়। তাদের ষড়যন্ত্র এখন সবাই জানে এবং রঙ্গলালের মত রাজনীতিকরা এসবকে ভয়ও করে না।’ বলল আহমদ মুসা।
‘এভাবে বিষয়টাকে তো আমি ভাবিনি! ঠিকই বলেছেন আপনি। রঙ্গলাল ও ‘মাসুস’ – এর ক্যাডাররা এমন প্রফেশনাল নয়।’
একটু থামল আহমদ হাত্তা এবং পরক্ষণেই আবার বলে উঠল, ‘তাহলে এরা কারা?’ রঙ্গলালরা আমাদের রাজনৈতিক শত্রু হওয়া ছাড়া আর তো কোন শত্রু আমাদের নেই।’
‘আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন, লোকগুলোর চেহারা কিন্তু পুরোপুরি সুরিনামের নয়, কলম্বিয়া বা ভেনিজুয়েলানদের সাথে এদের মিল বেশি।’ বলল আহমদ মুসা।
বিস্মিত চোখে তাকাল আহমদ হাত্তা আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘প্রথম দেখে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল। কিন্তু সেটা খুব দুর্বল প্রশ্ন। আপনি বিষয়টাকে এত গভীরভাবে দেখেছেন? ঠিকই বলেছেন, এদের ইউনিফরম পরালে ঠিক কলম্বিয়ান সৈনিক অথবা ড্রাগ বাহিনীর সদস্যদের মত দেখাবে।’
‘ওদের পোশাকের দিকে খেয়াল করেছেন? যে ধরনের শার্ট ও প্যান্ট ওরা পরে আছে, এ পর্যন্ত সুরিনামে কারো পরনে এমন ডিজাইনের শার্ট-প্যান্ট আমি দেখিনি।’
ট্রাকের পাশে পরে থাকা লাশের দিকে আবার তাকাল আহমদ হাত্তা। একটু দেখে নিয়ে বলল, ‘ঠিক বলেছেন মি. আহমদ মুসা, প্যান্টের বটম ফল্ডিংটা সুরিনামে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে একেবারেই অনুপস্থিত। শার্টের কলার ও চেস্ট প্লেটও সুরিনামে নতুন।’
বলে একটু হাসল আহমদ হাত্তা তারপর বলল, ‘কিন্তু আহমদ মুসা এত সব বিষয় এক সাথে আপনার নজরে পড়ল কি করে? আমিও দেখেছি, আমার তো কিছু মনে হয়নি?’
‘সব দেখা, দেখা নয় মি. হাত্তা। আপনি মনোযোগ দিয়ে দেখলে ওসব আপনার চোখেও ধরা পড়তো।’ আহমদ মুসা বলল।
‘সব দেখা যেমন দেখা নয়, তেমনি সব চোখেই সব দেখার আইকিউ থাকে না- এটাও সম্ভবত ঠিক। যাক। এখন বলুন, এরা সুরিনামের লোক না হলে তার অর্থ কি দাঁড়ায়?’ বলল আহমদ হাত্তা।
‘এরা বাইরের এবং প্রফেশনাল। এটা ঠিক হলে বলতে হবে আপনার শত্রু সংখ্যা বাড়লো। এখন দেখতে হবে এই শত্রু কারা, এই শত্রু এবং আগের শত্রুর মধ্যে সম্পর্ক কি, কিংবা দুই শত্রু এক শত্রু কিনা। তবে আমার মনে হচ্ছে এরা বিপজ্জনক। কারণ যারা বিনা দ্বিধায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে, তাদের সামনে ভয় বলে কোন জিনিস থাকে না। এমন বেপরোয়া শত্রুকে সামাল দেয়া খুবই কঠিন।’ থামল আহমদ মুসা।
মুখ শুকিয়ে গেল আহমদ হাত্তার। বলল, ‘আজ ওদের টার্গেট কি ছিল?’
‘ওদের টার্গেট ছিল আমাদের গাড়িকে ধ্বংস করা।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তার অর্থ আমাকে হত্যা করা।’ বলল আহমদ হাত্তা।
‘সাধারণ হিসেব এটাই। কিন্তু শত্রুকে চেনার আগে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টা কোন মিস ফায়ারিং-এর ঘটনাও হতে পারে। আবার নিছক এক্সিডেন্টও হতে পারে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু তাদের আত্মহত্যার ঘটনা এবং এক্সিডেন্টের পর আমাদেরকে হত্যা চেষ্টার কি ব্যাখ্যা হবে তাহলে?’ বলল আহমদ হাত্তা।
‘হ্যাঁ, মি. হাত্তা। এ দুটি ঘটনার ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন। বিষয়টা আমাদের ভাবতে হবে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘পুলিশ তো আসছে, পুলিশকে আমরা কি বলব?’
‘যা ঘটেছে, যা আমরা দেখেছি সব বলব। তবে আমরা যা বুঝেছি সেটা বলব না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমরা কি বুঝেছি?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ হাত্তা।
‘আমরা বুঝেছি এরা পেশাদার সন্ত্রাসী এবং এরা সম্ভবত সুরিনামের বাইরের লোক। আরেকটা জিনিস আমরা বুঝেছি। সেটা হলো, এদের আক্রমণের টার্গেট ছিলাম আমরা। শুধু আমরা বুঝতে পারিনি, আমরাই যদি এদের আক্রমণের টার্গেট হয়ে থাকি, তাহলে কেন এই আক্রমণ? এরা কারা?’ আহমদ মুসা বলল।
এ সময় পুলিশের গাড়ির সাইরেন তাদের কানে এল।
সামনে তাকিয়ে তারা দেখল পারামারিবোর দিক থেকে পুলিশের গাড়ি আসছে। দুটি গাড়ি।
সবাই ঘুরে দাঁড়াল সামনের দিকে।
অপেক্ষা করতে লাগল তারা পুলিশের গাড়ির।

খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে সেদিনের সচিত্র লিড নিউজটার উপর নজর পড়তেই চিৎকার করে উঠল শিবরাম শিবাজী, ‘সর্বনাশ মি. রঙ্গলাল, সর্বনাশ।’
শিবরাম শিবাজীর চোখ সচিত্র নিউজটার একটা ছবির উপর নিবদ্ধ।
বিস্ময় ও আতংক ঠিকরে পড়ছে তার চোখ দিয়ে।
রোনাল্ড রঙ্গলাল উঠে গিয়েছিল তার রাইটিং প্যাড ও কলম আনতে।
ছুটে এল রঙ্গলাল।
বসল শিবরাম শিবাজীর পাশের সোফায়। শিবরাম শিবাজী তার হাতের কাগজটা একটু এগিয়ে সচিত্র খবরটা মেলে ধরল রোনাল্ড রঙ্গলালের চোখের সামনে।
ছবির ন্যাড়া মাথা একটা লোকের উপর চোখ পড়তেই ভীষণ চমকে উঠল। রঙ্গলাল বলল, ‘একি! এযে আমাদের সেই মাফিয়া দুই নেতার একজন!’
দ্রুত নজর বুলাল সে ক্যাপশনের উপর। পড়ল, ‘এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে একজন লোক হত্যার পর ধরা পড়ার ভয়ে পটাশিয়াম সাইনায়েড রিং চুষে আত্মহত্যা করেছে এই অজ্ঞাত পরিচয় লোকটি।’
ক্যাপশন পড়েই তাড়াতাড়ি দৃষ্টি ফেরাল নিউজ আইটেমের হেডিং এর দিকে।
পড়লঃ ‘আহমদ হাত্তাকে হত্যার আবার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতনামা একজন নিহত। হন্তা ট্রাক ড্রাইভারের আত্মহত্যা।’
হেডিং পরে রোনাল্ড রঙ্গলালের ভ্রু-কুঞ্চিত হয়ে উঠল। বলল দ্রুত, ‘আবারও ব্যর্থ? পড়ুন তো মি. শিবরাম শিবাজী নিউজটা।’ কম্পিত কণ্ঠ রঙ্গলালের।
শিবরাম শিবাজী পত্রিকাটা তার দিকে টেনে নিল। পড়তে শুরু করলঃ
গতকাল ব্রুকোপনডো হাইওয়েতে পরনাম শহর ও রাজধানী পারামারিবোর মাঝামাঝি জায়গায় এক ভয়াবহ ঘটনায় একটি ট্রাক একটি কার কে পিষ্ট করলে কারটির একমাত্র আরোহী ড্রাইভার নিহত হয়। হন্তা ট্রাকটির ড্রাইভার ধরা পড়া আসন্ন দেখে পটাশিয়াম সাইনায়েড রিং চুষে আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে ড্রাইভারের অপূর্ব দক্ষতার জন্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার ভাবী জামাতা ওয়াং আলী অল্পের জন্যে সাক্ষাত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান।
তদন্তকারী পুলিশ ও সাংবাদিকদের মতে মর্মান্তিক ঘটনাটি সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমদ হাত্তাকে হত্যারই একটা প্রচেষ্টা ছিল। প্রাপ্ত আলামত ও ঘটনার সুরতহাল রিপোর্টের ভিত্তিতে গঠিত পুলিশের প্রাথমিক ধারণা হলো, হন্তা ট্রাকের আত্মহত্যাকারী ড্রাইভার ও পিষ্ট কার- এর নিহত একমাত্র আরোহী একই গ্রুপের, তাদের উভয়ের হাতেই পটাশিয়াম সাইনায়েড রিং পাওয়া গেছে। পুলিশের মতে ষড়যন্ত্রটা ছিল এই রকম- পিষ্ট কারটি আহমদ হাত্তার গাড়িকে ডান দিক থেকে ব্লক করবে, যাতে আহমদ হাত্তার গাড়ি টের পেয়ে গেলেও দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য শেষ মুহূর্তেও ডান দিকে টার্ন নিতে না পারে। নির্দিষ্ট পয়েন্টে পৌঁছতেই ক্রসিং-এর পথে দ্রুত বেগে আসা ট্রাক আহমদ হাত্তার গাড়িকে আঘাত করবে। আর তার আগেই ব্লক করে থাকা সহযোগী কারটি থেমে যাবে। তার ফলে বেঘোরে পিষ্ট হয়ে যাবে আহমদ হাত্তার গাড়ি সব যাত্রী সমেত।
কিন্তু এ ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। আহমদ হাত্তার অতিদক্ষ ড্রাইভার বিপদ আঁচ করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রেক কষে গাড়ি ডেডস্টপ করতে সমর্থ হয়। ডানদিক থেকে আহমদ হাত্তার গাড়ি ব্লককারী কারটি কিন্তু তা পারেনি। কারটি সামনে এগিয়ে যায়। ফলে ঘটনাটা সেমসাইড হয়ে যায়। ট্রাকটি যেখানে পিষ্ট করার কথা আহমদ হাত্তার গাড়িকে, সেখানে তা পিষ্ট করে তার সহযোগীকে।
আহমদ হাত্তার সেক্রেটারির মোবাইলে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
থানায় আহমদ হাত্তার দায়ের কৃত মামলার বিবরণ থেকে ঘটনার আরও বিবরণ পাওয়া গেছে। হন্তা ট্রাকটি যখন ঘটনার পর পালাতে চেষ্টা করে তখন আহমদ হাত্তার ড্রাইভার ট্রাকটির টায়ার লক্ষ্যে গুলী করে এবং গুলীতে টায়ার ফেটে যাওয়ায় ট্রাকটি থেমে যায়। ট্রাকটির ড্রাইভার তখন আহমদ হাত্তার গাড়ির লক্ষ্যে গুলী করতে করতে ট্রাক থেকে নেমে আসে। আকস্মিক এই গুলীর মুখে পরে আহমদ হাত্তার কারটি দ্রুত পেছনে সরে যায়। এই সুযোগে ট্রাকের লোকটি তার ট্রাকের আড়াল নিয়ে ছুটে পালাতে চেষ্টা করে। তখন আহমদ হাত্তার কারটি দ্রুত আবার সামনে চলে আসে। আহমদ হাত্তার গাড়িকে তার পেছনে আসতে দেখে লোকটি ঘুরে দাঁড়িয়ে গাড়ি লক্ষ্যে স্টেনগানের ব্রাশ ফায়ার করতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই আহমদ হাত্তার ড্রাইভারের গুলী খেয়ে লোকটি আহত হয়ে পড়ে যায় এবং ধরা পড়া আসন্ন দেখে সাইনায়েড খেয়ে আত্মহত্যা করে।
ঘটনাস্থলে পরবর্তীতে উপস্থিত সহকারী পুলিশ কমিশনার একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। তার মতে আক্রমণ করা লোক দুটি সুরিনামের নয়। কলম্বিয়া বা ল্যাটিন অঞ্চলের অন্য কোন দেশের হতে পারে। তবে তিনি এও জানান পরীক্ষার পরেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তিনি বলেন, তাদের এই অনুমান যদি সত্য হয় তাহলে তা দেশের আইন-শৃঙ্খলার জন্যে খুবই উদ্বেগজনক হবে। কারণ আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাইরের কেউ বা কোন গ্রুপ আগ্রহী হলে বা দেশের কেউ বা কোন গ্রুপ যদি তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থের জন্যে বাইরের সন্ত্রাসীদের দেশে ডেকে আনে, তাহলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে।
সব মিলিয়ে নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে উদ্বেগজনক নতুন মাত্রা যোগ হলো বলে ওয়াকিফহাল মহল মনে করেন। তারা মনে করছেন, এই ঘটনার পর রাজনীতিকদের বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমদ হাত্তার জন্যে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা দরকার।’
পড়া শেষ করেই শিবরাম শিবাজী বলে উঠল, ‘এবারও দেখছি ড্রাইভারই বাঁচাল আহমদ হাত্তাকে এবং ড্রাইভারই গুলী করে ফেলে দেয় আত্মহত্যাকারী ন্যাড়া মাথাকে।’
‘তাতো হলো, কিন্তু আমাদের হায়ার করা মাফিয়াদের দুজন পরিকল্পনা করে দুদিক থেকে ঘিরেও কাবু করতে পারলো না এক ড্রাইভারকে?’ বলল রঙ্গলাল।
‘শিখ ড্রাইভারতো, নিশ্চয় তাঁর সামরিক ট্রেনিং আছে। ড্রাইভার ও বডিগার্ড দুয়ের দায়িত্ব পালন করছে।’ বলল শিবরাম শিবাজী।
মুখ তখন ভীষণ গম্ভীর হয়ে উঠেছে রোনাল্ড রঙ্গলালের। বলল, ‘এই আক্রমণটায় আমাদের কোন লাভ হলো না, লাভ হলো শত্রুদের আর ক্ষতিগ্রস্ত হলাম আমরা।’
‘যেমন?’
‘আরও বেশি সহানুভূতি অর্জন করবে আহমদ হাত্তা। অন্যদিকে এই হত্যা প্রচেষ্টার দায় আমাদের ঘাড়েই চাপাবে অনেক মানুষ। আমরা তাদের সমর্থন হারাব। তাছাড়া মাফিয়ারা যে এদেশে প্রবেশ করেছে এবং আমাদের সহায়তার জন্যেই প্রবেশ করেছে, এটাও প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে।’ রঙ্গলাল বলল।
‘এর মধ্যে রাজনৈতিক দিকটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মি. রঙ্গলাল। এমনিতেই বিরাট সমবেদনা ভোট তার দিকে চলে গেছে। এই ঘটনার পর তার সংখ্যাটা আরও বাড়ল।’ শিবরাম শিবাজী বলল।
‘কিন্তু মি. শিবাজী, এই ক্ষতির চেয়েও বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’
‘সেটা কি?’
‘সেটা হলো, এখন আহমদ হাত্তা যেভাবে যেখানেই নিহত হোক, তার জন্যে আমাদেরকেই সন্দেহ করা হবে। ইতিহাসেও এ দায় আমাদের বহন করতে হবে।’ বলল রঙ্গলাল।
‘আহমদ হাত্তাকে যদি এখনই সরিয়ে দেয়া যায়, টেরেক দুর্গের স্বর্ণ যদি আমরা পেয়ে যাই, তাহলে এ দায় বহন করতে রাজি আছি।’ শিবরাম শিবাজী বলল।
‘কিন্তু তা পারছি কই? দুজন মাফিয়ার মৃত্যু বিরাট ঘটনা। কিন্তু লাভ কিছুই হলো না।’ বলল রঙ্গলাল।
‘ক্ষতি হয়েছে মাফিয়াদের কিন্তু একটা লাভ আমাদের হয়েছে।’
‘কি সেটা?’
‘এতে নিশ্চয় ক্ষেপে গেছে মাফিয়ারা। সাপের লেজে পাড়া দিলে সাপ যেমন ছোবল মারে সঙ্গে সঙ্গেই, তেমনি মাফিয়ারাও পাগলের মত ছোবল মারতে ছুটে যাবে আহমদ হাত্তাকে।’
কিছু বলতে যাচ্ছিল রঙ্গলাল, এ সময়ে টেলিফোন বেজে উঠল।
টেলিফোন ধরল রঙ্গলাল। বলল, ‘গুড মর্নিং।’
ওপারের কণ্ঠ শোনা গেল। বলল, ‘গুড মর্নিং স্যার। কিন্তু সময় খুব ভালো ঠেকছে না।’
‘কেন, কি হয়েছে?’ বলল রঙ্গলাল।
‘গতকাল ব্রুকোপনডো হাইওয়েতে যে ঘটনা ঘটেছে, সে রিপোর্ট নিশ্চয় পড়েছেন স্যার।’ বলল ওপার থেকে।
‘হ্যাঁ পড়েছি।’
‘রিপোর্টে পুলিশের বরাত দিয়ে ভিকটিম দুজনকে বিদেশী বলা হয়েছে। আর গোয়েন্দা রিপোর্ট ঘটনাকে একটা হত্যা ষড়যন্ত্র বলেছে। বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন প্রার্থী আহমদ হাত্তাকে হত্যার জন্যেই এই ষড়যন্ত্র করা হয়। এর সাগথে সদ্য ক্ষমতাত্যাগী প্রধানমন্ত্রী রঙ্গলালদের যোগসাজস থাকতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।’ বলল টেলিফোনের ও প্রান্ত থেকে।
‘খুনের চেষ্টা করল বিদেশী সন্ত্রাসীরা। আমাকে জড়ানো হবে কেন?’ রঙ্গলাল বলল।
‘সন্দেহ করা হচ্ছে ওরা ভাড়াটিয়া পেশাদার। আপনারা তাদের নিয়োগ করেছেন।’ বলল ওপার থেকে।
‘সন্দেহ করলেই হলো?’ রঙ্গলাল বলল।
‘তদন্ত শুরু হয়েছে। সাবধানে থাকবেন। আপনি কোথায় যান, কার সাথে চলেন, সব মনিটর করা হচ্ছে। আমি পুলিশের প্রধান হলেও আমার কিছু করার নেই।’ বলল টেলিফোনের ওপার থেকে।
‘করুকগে, কিছুই পাবে না।’ বলল রঙ্গলাল।
‘কিন্তু কয়েকদিন আগে দুজন বিদেশী আপনার ও শিবরাম শিবাজীর সাথে দেখা করেছিল।’
‘তাতে কি প্রমাণ হয়? আমি রাজনীতিক, সেই সাথে বড় ব্যবসায়ীও। বিদেশীরা তো আসতেই পারে আমার কাছে।’ রঙ্গলাল বলল।
‘যারা ব্রুকোপনডো হাইওয়ের ঘটনায় মারা গেল এবং যারা আপনার সাথে দেখা করেছিল, তারা একই গ্রুপের এবং তাদের ব্যবসায়ী বলে মনে করা হচ্ছে না। তারা কোন হোটেলে ওঠেনি। কৌশলে তারা তাদের থাকার জায়গা আড়াল করে রাখছে।’
‘তার মানে তুমিও আমাকে সন্দেহ করছ?’
‘সন্দেহ নয় সাহায্য করতে চাচ্ছি।’
‘বল কি পরামর্শ।’ রঙ্গলাল বলল নরম গলায়।
‘নির্বাচনের আগে আহমদ হাত্তার যাতে কোন ক্ষতি না হয়, আপনি দেখুন। এটা আপনার স্বার্থেই। কারণ মানুষের সব সন্দেহ এখন আপনার দিকে। আইন যাই করুক, তাঁর কিছু হলে মানুষের অসন্তোষ থেকে আপনি বাঁচবেন না।’ বলল টেলিফোনের ওপ্রান্ত থেকে।
‘নির্বাচনের ফল সম্পর্কে কি ভাবছ?’
‘সিমপেথী ভোট আহমদ হাত্তার পক্ষে গেছে! দয়া করে আর বাড়তে দেবেন না। এখনও আপনার হতাশ হবার কিছু নেই বলে আমি মনে করি।’
‘থ্যাংকস অফিসার।’ বলল রঙ্গলাল।
‘থ্যাংকস স্যার।’ বলল টেলিফোনের ওপ্রান্ত থেকে।
কথা শেষ করে টেলিফোন রেখেই রঙ্গলাল শিবরাম শিবাজীর দিকে চেয়ে বলল, ‘এখন কি করা যায়?’
‘কি বলল পুলিশের কর্তা?’ শিবরাম শিবাজী বলল।
‘নির্বাচনের আগে আহমদ হাত্তার যেন কিছু না হয় তা দেখার জন্যে।’
ভাবল শিবরাম শিবাজী একটু। তারপর বলল, ‘কিভাবে সেটা সম্ভব?’
‘পুলিশের কর্তা কথা ঠিকই বলেছেন, কিন্তু ওদের নিষেধ করতে চাইলেও তো সে সুযোগ নেই। ওদের কোন ঠিকানা তো আমরা জানি না।’ বলল রঙ্গলাল।
‘তীর ছোড়া হয়ে গেছে মি. রঙ্গলাল। এখন কি করার আছে।’
‘চিন্তা নেই শিবরাম। ভালটাই আমরা করেছি। আহমদ হাত্তাকে যদি দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়া যায়, তাহলে আর কিছুই ঘটবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে, সবাই ঠিক হয়ে যাবে।’
‘আর ওরা যদি তাকে দৃশ্যপট ঠেকে সরিয়ে দিতে না পারে?’ শিবরাম শিবাজী বলল।
‘যদি নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। তুমি যা বলেছো তীর ছোড়া তো হয়েই গেছে। দেখা যাক। এটাই শেষ তীর নয়। চল উঠা যাক।’
বলে উঠে দাঁড়াল রোনাল্ড রঙ্গলাল।
উঠল শিবরাম শিবাজীও।

Top