৪০. কালাপানির আন্দামানে

চ্যাপ্টার

পোর্ট ব্লেয়ারের লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে বাইরের লবীতে এসে দাঁড়াল আহমদ মুসা।
লাউঞ্জের এক পাশের দেয়ালে একটা বিশাল বোর্ডে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মানচিত্র।
আহমদ মুসা একটু এগিয়ে মানচিত্রটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দেখল, শুধু আন্দামান-নিকোবরের মানচিত্র নয়, ইনসেটে পোর্ট ব্লেয়ার শহরেরও একটা মানচিত্র আছে। আন্দামান নিকোবরের মানচিত্রে শহর, গ্রাম, পাকা রাস্তা, কাঁচা রাস্তা, পায়ে চলার রাস্তা, ফেরী যোগাযোগ, পাহাড়, বন, ঝরনা, হ্রদ, দ্বীপসমূহের অবস্থান ইত্যাদি সুন্দরভাবে চিহ্নিত। আর পোর্ট ব্লেয়ারের মানচিত্র রাস্তা, এলাকার নাম, হোটেল, সরকারী অফিস ও দর্শনীয় স্থানগুলোর অবস্থান ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সবকিছুই রয়েছে। আহমদ মুসা খুব খুশি হলো। সে ইন্টারনেট থেকে যে মানচিত্র যোগাড় করেছে তা এত বিস্তারিত নয়।
আহমদ মুসা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল মানচিত্র। আপাতত পোর্ট ও এর আশে-পাশের অঞ্চল সম্পর্কে একটা ধারণা সে মাথায় গেঁথে ফেলতে চায়।
আহমদ মুসা অনুভব করল তার দুপাশে কিছু লোক এসে দাঁড়াল।
তাকাল আহমদ মুসা। দেখল, তরুণ ও যুবক বয়সের কয়েকজন। তাদের পরনে ইউনিফর্ম। বুঝল, তারা ট্যাক্সি চালক। আহমদ মুসাকে বিদেশী ট্যুরিষ্ট ভেবে ছুটে এসেছে।
আহমদ মুসা তাদের দিকে চাইতেই হাস্যোজ্জ্বল একজন তরুণ তড়িঘড়ি করে ভাঙা ইংরেজীতে বলে উঠল, ‘স্যার, আমার গাড়ি একেবারে নতুন। এসি আছে। ভাড়ার মিটার একদম নিখুঁত।’
তার কথার মধ্যেই অন্যেরাও একসাথে কথা বলা শুরু করল।
আহমদ মুসা হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘ও আগে কথা বলেছে, ওর সাথে কথাটা শেষ করি, কেমন?’
সবাই চুপ করল।
আহমদ মুসা তাকাল তরুণটির দিকে। বলল, ‘তোমার গাড়ির বিবরণ পছন্দ হয়েছে, কিন্তু তুমি কেমন তার বিবরণ দাওনি।’
তরুণটি সলজ্জ হাসল। বলল, ‘স্যার, আমাকে তো দেখতেই পাচ্ছেন?’
‘কিন্তু তুমি কেমন তাতো দেখতে পাচ্ছি না।’ আহমদ মুসা বলল।
তরুণটির মুখে সলজ্জ বিব্রতভাব আরও গভীর হলো। বলল, ‘স্যার, ওটা মুখে বলার নয়, কাজে প্রমাণ হয়।’
তরুণটির উত্তরে খুশি হলো আহমদ মুসা। বলল, ‘বা! তুমি তো খুব বুদ্ধিমান ছেলে!’
আহমদ মুসা কথা শেষ করতেই কার পার্কিং এলাকা থেকে একটা চিৎকার ভেসে এল, ‘হাইজ্যাকার, হাইজ্যাকার, বাঁচাও, বাঁচাও।’
আহমদ মুসা দ্রুত তাকাল ওদিকে। দেখল, তিনজন লোক একজনকে জোর করে একটা মাইক্রোতে তুলছে। লোকটির গায়ে শেরওয়ানি।
চমকে উঠল আহমদ মুসা। সে নিশ্চিত, লোকটি ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহ।
আহমদ মুসা দেখতে পেল, কার পার্কিং এর বিপরীত প্রান্তে দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো। একজন মানুষের আর্ত চিৎকারকে তারা ভ্রুক্ষেপই করছে না।
আহমদ মুসা দ্রুত তাকাল তরুণটির দিকে। বলল, ‘যাবে তুমি? চল। দৌড়।’
বলে আহমদ মুসা দ্রুত হাঁটতে লাগল কার পার্কিং-এর দিকে।
তরুণটিও দৌড় দিল। বলল, ‘স্যার আপনি আসুন। আমাদের ভাড়া গড়িগুলো বাইরের পার্কিং-এ আছে। আমি নিয়ে আসছি গাড়ি।’
আহমদ মুসা যখন তরুণটির গাড়িতে উঠল, ‘তখন ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহকে হাইজ্যাক করা কারটা অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। পোর্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়া রাস্তাটা তীরের মত সোজা বলে গাড়িটা চোখের আড়ালে যেতে পারেনি।
আহমদ মুসা ড্রাইভার তরুণটির পাশের সিটে বসেছিল। তরুণটিকে লক্ষ্য করে সে দ্রুত কণ্ঠে বলল, ‘ঐ মাইক্রোটার পিছু নাও। গাড়িটাকে হারানো চলবে না।’
‘সাংঘাতিক ঘটনা স্যার। আমি এ ধরনের ঘটনা আন্দামানে আর দেখিনি। একজন লোককে হাইজ্যাক করল, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। স্যার, লোকটা কি আপনার পরিচিত?’ বলল ড্রাইভার তরুণটি।
‘পরিচিত নয়, আসাবর সময় জাহাজে দেখা হয়েছিল।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আপনি কি করতে চান স্যার। তাকে উদ্ধার করবেন? তাহলে তো মারামারি হবে?’
‘মারামারিকে ভয় কর নাকি?’
‘ভয় করি না। কিন্তু আমার চিন্তা গাড়ি নিয়ে। অনেক কষ্টে গাড়িটা করেছি স্যার।’ তরুণটি উদ্বেগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।
কথা শেষ করেই ছেলেটি চিৎকার করে উঠল, ‘স্যার, মাইক্রোটি শহর ছেড়ে সাউথ আন্দামান হাইওয়ের দিকে যাচ্ছে।’
সাউথ আন্দামান হাইওয়েটি পোর্ট ব্লেয়ার থেকে বেরিয়ে দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত হয়ে লেক ব্লেয়ার ঘুরে সাউথ আন্দামান দ্বীপের উত্তরাংশে বহুদুর পর্যন্ত এগিয়ে গেছে। এই হাইওয়ে ধরে সাউথ আন্দামানের কালিকট, ওলিগঞ্জ, হায়বারতাবাদ, উইমবারলিগঞ্জ শহরগুলোতে কিংবা তার কাছাকাছি যাওয়া যায়।
‘শোন, গাড়িটার সামনে গিয়ে আটকাবার চেষ্টা করার দরকার নেই। গাড়িটাকে অনুসরণ করে, গাড়িটা যে পর্যন্ত যেতে চায়, আমরা সে পর্যন্ত যাব।’
‘ঠিক আছে স্যার।’
‘তোমার নাম কি?’
‘কোন নাম বলব স্যার, ফ্যামিলী, না অফিসিয়াল?’
‘তোমার নাম বল। দুটো মিলেই তো একটা পূর্ণ নাম হয়।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু আমার দুটো নামই আলাদা ও পূর্ণ নাম।’
‘দুই নামই বল।’
‘দুই নাম বলা যাবে না স্যার। ফ্যামিলী নাম শুধু ফ্যামিলীর জন্যে। আমার অফিসিয়াল নাম হলো গোপী কিষাণ গংগারাম।’
‘ঠিক আছে গংগারাম। একটু স্পিড বাড়াও। সামনে রাস্তা মনে হচ্ছে আঁকা বাঁকা। কাছাকাছি না থাকলে হারিয়ে যাবে গাড়িটা।’
‘ঠিক স্যার। সামনে রাস্তা খুবই জিগজ্যাগ।’ বলে সে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিল।
ঠিক এ সময়ে এক বাঁকে গাড়িটা আহমদ মুসাদের চোখের আড়ালে চলে গেল।
গংগারাম বলল, ‘স্যার, সামনের ঐ বাঁক না পেরুলে গাড়িটা চোখে পড়বে না। কিন্তু আমরা যখন ঐ বাঁক পার হবো, তখন ঐ গাড়িটা আরেকটা বাঁকের আড়ালে চলে যাবে।’
‘গাড়ির স্পিড বাড়াও গংগারাম। গাড়িটাকে ধরতে হবে।’
গংগারামের গাড়ির স্পিডোমিটারের কাঁটা লাফ দিয়ে ৬০ থেকে ৯০ তে গিয়ে উঠল। এরপর কাঁপতে কাঁপতে তা উঠল একশ’তে।
ঠিক আছে গাড়ির স্পিড এখানে রাখ গংগারাম। নিশ্চয় ওই গাড়ি আমাদের দেখতে পায়নি। সুতরাং ওরা এই ঝুঁকিপূর্ণ স্পিডে যাবে না।
দুতিনটা বাঁক পার হবার পর গংগারামের গাড়িটা একটা সোজা রাস্তার মুখে এসে দাঁড়াল। কিন্তু সামনে কোন গাড়ি তারা দেখতে পেল না।
সঙ্গে সঙ্গে গংগারাম বলে উঠল, ‘স্যঅর, গাড়ি নিশ্চয়ই সামনে যায়নি। আমার ছোট নূতন গাড়ি যে স্পিডে এসেছে এই আঁকা-বাঁকা রাস্তায়, বড় মাইক্রোটা ঐ স্পিডে যাওয়া অসম্ভব। সুতরাং সামনের লম্বা পথটায় তাকে দেখা পাবারই কথা। দেখা যখন যাচ্ছে না, তখন আমার মনে হয় পেছনে কোথাও ওরা লুকিয়েছে।’
‘ঠিক বলেছ গংগারাম। গাড়ি ঘুরাও।’
গংগারাম গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলতে শুরু করল।
‘গংগারাম, মাইক্রোটা চোখের আড়ালে যাবার পর পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথে আমরা যতটা এগিয়েছি তার মধ্যে দুপাশে সরে পড়ার কোন রাস্তা আছে?’ বলল আহমদ মুসা।
‘না স্যার, এরকম রাস্তা নেই। তবে পাহাড়ের গলি আছে কয়েকটা যা দিয়ে গাড়িও চলতে পারে।’
‘দ্রুত আগাও গংগারাম। গলিগুলো চেক করতে হবে।’ আহমদ মুসা বলল।
গাড়ির স্পীড বাড়ল। ছুটে চলল গাড়ি সামনের দিকে।
এক স্থানে এসে গাড়ির গতি স্লো হয়ে গেল।
গংগারাম বলল, ‘স্যার ডান দিকে একটা প্রশস্ত করিডোর আঁকা বাঁকা হয়ে পূর্বদিকে চলে গেছে।’
গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল।
‘স্যার, এখানেই গিরি করিডোরটা। ওদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নেব?’ বলল গংগারাম।
সামনের রাস্তাটার উপর আহমদ মুসার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। এক টুকরো কাদামাটি তার নজরে পড়ল।
ভ্রুকুঞ্চিত হলো আহমদ মুসার।
দ্রুত নামল গাড়ি থেকে।
গাড়ির সামনে গিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখল কাদামাটির ছোট্ট খ-টির উপর। দেখেই বুঝল মাটিটি কোন গাড়ির চাকা থেকে খসে পড়া।
কাদামাটিটা একদম তাজা।
আশে-পাশে নজর বুলাল। চোখে পড়ল কংক্রিটের রাস্তার উপর গাড়ির ভেজা চাকার শুকিয়ে ওঠা অস্পষ্ট দাগ। কংক্রিটের রাস্তার পাশেই মাটির উপরের ঘাস দুমড়ানো মুচড়ানো।
ঘাসের উপরের এই দাগ অনুসরণ করে আহমদ মুসা তাকাল পূর্ব দিকে। দেখল সামনে একটা প্রশস্ত গিরিপথ।
গংগারাম এসে দাঁড়িয়েছে আহমদ মুসার পাশে।
‘কি দেখছেন স্যার?’ জিজ্ঞাসা গংগারামের।
‘সামনে কোন জলাভূমি আছে গংগারাম?’ গংগারামের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞাসা করল আহমদ মুসা।
‘স্যার, এখান থেকে সাগর খুব কাছে। এই গিরিপথটা এঁকে বেঁকে সাগর পর্যন্ত নেমে গেছে। সামনে কোন জলাভূমি নেই। তবে পাথে ঝরনা ধরনের পানির ধারা আছে।’ বলল গংগারাম।
‘সেটা কতদূর?’
‘কাছে। সামনের টিলার পরেই। কি হয়েছে স্যার?’ কেন জিজ্ঞাসা করছেন?’
আহমদ মুসা গংগারামকে কাদা খ-, রাস্তায় গাড়ির চাকার ভিজা দাগ এবং দলিত-মথিত ঘাস দেখিয়ে বলল, ‘হাইজ্যাকার গাড়িটা নিয়ে এদিকে লুকিয়ে ছিল, এইমাত্র চলে গেছে মনে হয়।’
গংগারামও ঝুঁকে পড়ে চাকার দাগ পরীক্ষা করল। বলল, ‘মনে হয় স্যার, আপনি ঠিকই বলেছেন, এটা ঐ মাইক্রো গাড়িরই চাকার দাগ।’
‘তাহলে আর দেরি নয়, গঙ্গারাম এস। গাড়িটাকে ফলো করতে হবে।’
বলে আহমদ মুসা ছুটল গাড়ির দিকে।
গংগারামও দৌড় দিয়ে গাড়িতে ফিরে এল। গাড়ি ষ্টার্ট দিতে দিতে বলল, ‘আমরা দশ মিনিটের পথ সামনে চলে গিয়েছিলাম, ফিরতে লেগেছে দশ মিনিট। মাইক্রো এতক্ষণ লুকিয়ে থাকার কথা নয়। সুতরাং স্যার আমি আশাবাদী নই যে, মাইক্রোটির দেখা আমরা পাব।’
গংগারামের কথাই সত্য হলো। আহমদ মুসারা গাড়ি নিয়ে আবার পোর্ট পর্যন্ত এল। এ ছাড়াও আরও এদিক-সেদিক ঘুরল। কিন্তু মাইক্রোটির দেখা তারা পেল না।
আহমদ মুসা হতাশভাবে হোটেলে এল।
হোটেলটা গংগারামই চয়েস করে দিয়েছে। বলেছিল, ‘খাওয়া থাকায় দামের দিক দিয়ে সেরা না হলেও পোর্ট ব্লেয়ারে এটাই সেরা হোটেল স্যার। মালিক খুব ভাল লোক, পোর্ট ব্লেয়ারের আদি মানুষ। বসবাসের জন্যে ভারতের অন্য এলাকা থেকে আসা নয়। পোর্ট ব্লেয়ারে আসা মানুষকে তিনি মেহমান মনে করেন। ব্যবসায় করেন, মানুষের পকেট কাটেন না।’
‘তুমি ট্যাক্সি ক্যাব চালাও। তাঁকে এমন ঘনিষ্ঠভাবে জান কি করে? তিনি বুঝি খুব জনপ্রিয় লোক?’ জিজ্ঞাসা করেছিল আহমদ মুসা।
‘ভাল লোককে সবাই ভাল বলে জানে, কিন্তু অনেকে না মানতেও পারে।’ বলেছিল গংগারাম।
হোটেলের দুতলার সুন্দর অবস্থানে একটা ঘর পেয়েছিল আহমদ মুসা। পূবের জানালা খুললে বিল্ডিং-এর দেয়ালে আছড়ে পড়া পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শোনা আর দেখা যায় আন্দামান সাগরের অথৈ নীল জল। আর উত্তরের জানালা খুললে নিচেই সুন্দর বাগান নজরে পড়ে।
আহমদ মুসা ফজরের নামাজের পর গিয়ে দাঁড়িয়েছিল পূবের জানালায়। আন্দামান সাগরের শান্ত নীল পানির দিকে তাকিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল। এই গোটা আন্দামান ছিল একদিন জেলখানা। এই সাগর পথেই অসহায় বন্দীদের আনা হতো এই জেলখানায়। এই বন্দীদের মধ্যে ছিল সুলতান-শাহজাদা, রাজা-রাজপুত্র, বিচারক-ক্রিমিনাল, মওলানা-মুর্খ, রাজবন্দী-ডাকাত সবাই।
আহমদ মুসার এই আপন-ভোলা অবস্থা কতক্ষণ থাকতো কে জানে! কিন্তু চোখের উপর রোদের সরাসরি ছোবল তার সম্বিত ফিরিয়ে আনল।
আহমদ মুসা জানালা থেকে সরে এল। জায়নামাজ হিসাবে ব্যবহৃত সফেদ কাপড় খ-টি মেঝে থেকে তুলে গুছিয়ে টেবিলের একপাশে রাখল এবং টেবিল থেকে ক্ষুদ্র কুরআনটি তুলে নিয়ে ব্যাগে পুরল। ব্যাগটি লাগেজ কেবিনে রাখতে গিয়ে জানালা দিয়ে বাগানটি দেখতে পেল আহমদ মুসা।
পর্দা পুরোটা গুটিয়ে জানালায় গিয়ে দাঁড়াল আহমদ মুসা।
সুন্দর, পরিচ্ছন্ন বাগান। ফুলের গাছ মাঝে মাঝে থাকলেও পরিকল্পিত ফলের গাছই বেশি। আন্দামানে সমভূমির পরিমাণ কম বলে সমভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহারে আন্দামানীরা যতœবান।
বাগানের উত্তর প্রান্তের একটা ছোট্ট স্থাপনা আহমদ মুসার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা দশ ফুট আয়তাকার ক্ষেত্রটি দুফুটের মত উচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। চারটি খুঁটির উপর দাঁড়ানো একটা টিনের চালা ক্ষেত্রটির উপর দাঁড়িয়ে আছে।
‘ওটা কি কবর?’ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশ্নটি বেরিয়ে এল আহমদ মুসার মুখ থেকে।
প্রশ্নটার রেশ আহমদ মুসার মন থেকে মিলিয়ে না যেতেই সে দেখতে পেল এক দীর্ঘাঙ্গ সৌম্যদর্শন বৃদ্ধ একটা গাছের ওপাশ দিয়ে কবরের পাশে এসে দাঁড়াল। কবরটা ঘুরে সে পূর্ব পাশে চলে গেল। কবরকে পাশে রেখে সে পশ্চিমমুখী হয়ে দাঁড়াল। মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর তার দুটি হাত উপরে উঠল। দোয়া করছে বৃদ্ধ। সন্দেহ নেই কবরবাসীর জন্যে সে দোয়া করছে।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিল আহমদ মুসা দৃশ্যটা।
বিস্ময়ও এসে তার মনকে আচ্ছন্ন করেছে। বুঝাই যাচ্ছে বাগানটা হোটেলের অংশ। হোটেলের বাগানে কবরটাকে এমন পরিপাটি করে রাখা কেন? হোটেলের মালিক কি কোন মুসলিম কেউ? সৌম্যদর্শন ঐ বৃদ্ধটি কে? হোটেলের কেউ?
দরজায় নক হলো।
ভাবনায় ছেদ পড়ল আহমদ মুসার।
দরজার দিকে এগুলো আহমদ মুসা। দরজায় পৌছে বাইরে কে তা দেখার জন্যে ডোর ভিউ-এ চোখ রাখল। বাইরে কাউকে দেখতে পেল না। কে তাহলে নক করল? দ্রুত দরজা খুলল আহমদ মুসা।
দরজার গোড়ায় খবরের কাগজ পড়ে থাকতে দেখে মনে মনে হেসে উঠল। হকার নিশ্চয় কাগজ দেয়ার পর নক করে তা জানিয়ে দিয়েছিল।
কাগজ নিয়ে আহমদ মুসা ঘরে প্রবেশ করল।
বসল গিয়ে সোফায়।
আন্দামানের একমাত্র ইংরেজী দৈনিক ‘দি আন্দামান’-এর প্রথম পাতাটা চোখের সামনে তুলে ধরল আহমদ মুসা।
কাগজের প্রথম পাতায় চোখ বুলাতে গিয়ে পত্রিকার ডান কোনার একটা টপ ছবির উপর আহমদ মুসর চোখ আটকে গেল। ছবিটা ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহর।
আহমদ মুসা কৌতুহল নিয়ে তাকিয়েছিল ছবির ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহর দিকে। কিন্তু ছবির নিচের ক্যাপশনে চোখ পড়তেই আঁৎকে উঠল আহমদ মুসা। নিউজের শিরোনাম পড়ল, ‘সেই সাগর তীরেই আরেকটি রহস্যজনক মৃত্যু।’
নিউজটি রুদ্ধশ্বাসে পড়ল আহমদ মুসা। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৪০ মাইল দূরে হাইওয়ের অদূরে সমুদ্র উপকূলে অর্ধডোবা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া গেছে। পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট অনুসারে জলে ডোবার কারণে শাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে সে। তার শরীরে অন্য কোন আঘাত পাওয়া যায়নি।
একটা দুঃখ গুমরে উঠল আহমদ মুসার হৃদয়ে। সরল, সহজ ও অনড় আদর্শ-নিষ্ঠ লোকটাকে চেন্নাইতে কিছু সাহায্য করতে পারলেও এখানে তার জন্যে কিছুই করতে পারল না সে। ভাবল আহমদ মুসা, কাল হাইওয়ের উপর কাদাওয়ালা গাড়ির যে দাগ তারা দেখেছিল, সেটা ছিল লোকটাকে হত্যা করে ওদের ফিরে যাওয়ার চিহ্ন। ওদের অনুসন্ধান করার জন্যে তাড়াহুড়া করে ফিরে না এসে যদি তারা সাগর কূলে যেত, তাহলে কালকেই তারা ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহর লাশ পেয়ে যেত।
একটা বিষয় আহমদ মুসর কাছে খুবই স্পষ্ট হয়ে গেল, মাদ্রাজে যারা ইয়াহিয়ার উপর আক্রমণ করেছিল এবং যারা আন্দামানে তাকে হত্যা করল তারা একই গ্রুপ। এর অর্থ যারা আন্দামানে হত্যাকা- চালাচ্ছে, যারা আহমদ শাহ আলমগীরকে কিডন্যাপ করেছে এবং যারা রাবেতার স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে, তারা আন্দামানের কোন বিচ্ছিন্ন গ্রুপ নয়, ভারতের মূল ভূখ-ে কার্যরত কোন ষড়যন্ত্রেরই একটা অংশ। এবং এটাই যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে, ভারত-উদ্ভুত কোন ষড়যন্ত্রেরই নতুন বিস্তার ঘটেছে আন্দামানে। এটাই যদি ঘটনা হয়, তাহলে এটা আন্দামানবাসী, বিশেষ করে আন্দামানের মুসলমানদের জন্যে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই দুর্ভাগ্যের মোকাবিলা হবে কঠিন।
দরজায় নক হলো এ সময়।
আহমদ মুসা হাত ঘড়ির দিকে তাকাল। দেখল সকাল ৭টা পার হয়ে গেছে। সাতটার সময় গংগারাম তার গাড়ি নিয়ে আসার কথা। নিশ্চয় নকটা সেই করেছে।
আহমদ মুসা টেবিলের উপর থেকে লকারটা টেনে নিয়ে দরজা আনলক করার সুইচ টিপে দিয়ে বলল, ‘এস গংগারাম।’
কিন্তু গংগারাম নয় দরজায় দেখতে পেল সেই সৌম্যদর্শন বৃদ্ধকে, যাকে কিছুক্ষণ আগে আহমদ মুসা বাগানে দেখেছিল।
‘আসতে পারি মি. বেভান বার্গম্যান?’ দরজা থেকে বলল সৌম্যদর্শন বৃদ্ধটি।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘ওয়েলকাম স্যার।’
বৃদ্ধ এল। আহমদ মুসা তাকে সোফায় বসিয়ে নিজে বসল।
বৃদ্ধ বসেই বলে উঠল, ‘আমি হাজী আবদুল আলী আবদুল্লাহ। আমার এই হোটেল ‘সাহারা’ আপনাকে স্বাগত। কাল বিকালে এসেছেন, কিন্তু খোঁজ নেবার সময় করতে পারিনি। কোন অসুবিধা নেই তো?’
গংগারাম কথিত হোটেল মালিকের হঠাৎ মুখোমুখি হয়ে এবং তার মুসলিম পরিচয় পেয়ে একটু আনমনা হয়ে পড়েছিল আহমদ মুসা।
উত্তর দিতে একটু দেরি হলো। যখন উত্তর দিতে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় আবার দরজায় নক হলো। আহমদ মুসা দরজার দিকে একবার তাকিয়ে হাজী আবদুল আলী আবদুল্লাহকে ‘মাফ করবেন স্যার’ বলে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত দরজার দিকে এগুলো।
দরজা খুলে দেখল গংগারাম দাঁড়িয়ে।
আহমদ মুসা ফিরে তাকাল হাজী আবদুল আলী আবদুল্লাহর দিকে। বলল, ‘জনাব ট্যাক্সি ক্যাব-এর গংগারাম এসেছে। তাকে একটু পরে আসতে বলি?’
‘না তা কেন? আমার তেমন কোন কথা নেই। আসতে বলুন গংগারামকে। আমাদের গংগারাম খুব ভাল ছেলে।’ বলল হাজী আবদুল আলী আবদুল্লাহ।
‘ধন্যবাদ স্যার’ বলে গংগারামকে নিয়ে আহমদ মুসা চলে এল।
আহমদ মুসা বসল তার সোফায়।
গংগারাম বসল একটা সোফার পাশে কার্পেটের উপর।
‘কি করছ গংগারাম! সোফায় বস।’ বলল দ্রুত কণ্ঠে আহমদ মুসা।
‘থাক মি. বার্গম্যান, কার্পেটেই থাক। খুব লাজুক ছেলে আমাদের গংগা। গুরুজনদের সামনে সে চেয়ারে বসে না।’ আবদুল আলী আবদুল্লাহ বলল।
হাসল আহমদ মুসা। বলল গংগারামকে লক্ষ্য করে, ‘তুমি তো ঠিক সময়ে আসনি গংগারাম।’
‘ম্লান হাসল গংগারাম। বলল, ‘স্যার আমি একটু ওদিকে গিয়েছিলাম। এই লোকই তো কাল কিডন্যাপ হয়েছিল স্যার।’
গম্ভীর হলো আহমদ মুসর মুখ। আহমদ মুসা টেবিলের খবরের কাগজটি টেনে নিয়ে ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহর ছবি গংগারামকে দেখিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ গংগারাম, এ লোকটি সেই লোক।’
‘ও, তোমরা আজকের রহস্যজনক মৃত্যুর খবরের কথা বলছ? ও তো ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহ। আহা, সে নীরব, শান্তিপ্রিয় একজন ধর্মপ্রচারক, শিক্ষাবিদ।’ বলল হাজী আবদুল আলী আবদুল্লাহ।
‘আপনি তাকে চিনতেন, জানতেন?’ জিজ্ঞাসা করল আহমদ মুসা হাজী আবদুল্লাহকে লক্ষ্য করে।
‘সে বহুবার এখানে আমার কাছে এসেছে। যে রাবেতা কমপ্লেক্সে সে চাকুরি করতো, সে ট্রাস্টের আমি একজন ট্রাষ্টি ছিলাম। আমি সাধ্যমত নিয়মিত কিছু সহযোগিতা করতাম। সেটাই সংগ্রহ করতে সে মাঝে মাঝে আসত। সে আন্দামানেরই ছেলে, আমাদেরই ছেলে। তাছাড়া সে ভারতের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী আন্দামানে দ্বীপান্তরিত ও মৃত আহমাদুল্লাহ ইবনে ইয়াহিয়ার বংশধর।’ আবদুল আলী আবদুল্লাহ বলল।
‘ধন্যবাদ জনাব। আমি নিউজটা পড়েছি। আমি উদ্বেগ বোধ করছি। আমি নিশ্চিত এটা মেরে ফেলার ঘটনা। ভাল লোকটির এমন পরিণতি হলো কেন?’ বলল আহমদ মুসা।
‘তুমি বিদেশী এ কথা বলছ, কিন্তু আমাদের পুলিশ এ কথা বলে না। এ ধরনের মৃত্যু আরও ৩৫টি ঘটেছে। কিন্তু পুলিশ পরিষ্কারভাবে এসব মৃত্যুকে নিহত বলছে না। মৃত্যুর ঘটনার উপর শুধু প্রশ্ন তুলে রাখছে, প্রশ্নের সমাধান করছে না।’ বলল হাজী আব্দুল্লাহ। তার কণ্ঠে হতাশা ও উদ্বেগ।
‘এ ধরনের আরও ৩৫টি মৃত্যু ঘটেছে?’ চোখে-মুখে কৃত্রিম আতংক টেনে বলল আহমদ মুসা।
‘আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই। এই মৃত্যুগুলো বিশেষ শ্রেণী থেকে হয়েছে ও হচ্ছে।’ বলল হাজী আবদুল্লাহ।
‘কেমন?’ আহমদ মুসার জিজ্ঞাসা।
‘মৃত্যুর শিকার যুবকরা সবাই মুসলমান। এর মধ্যে মোপলা বংশোদ্ভুত যুবকের সংখ্যাই বেশি। অবশিষ্টের মধ্যে কিছু ভারতীয়, কিছু মালয়ী বংশোদ্ভুত। সবচেয়ে বড় ঘটনা এক জনপ্রিয় যুবকের কিডন্যাপ হওয়া। সেও মোঘল বাদশাহদের বংশোদ্ভুত একজন মুসলিম যুবক।’
‘আহমদ মুসার চোখে-মুখে কৃত্রিম ভয় ও বিস্ময়ের চিহ্ন। বলল, ‘সাংঘাতিক ব্যাপার? মুসলিম যুবকদের এই অব্যাহত হত্যার ঘটনার কারণ কি? কারা জড়িত?’
‘আপনার মত আমাদেরও প্রশ্ন এটাই। এ প্রশ্নের জবাব পুলিশ কিংবা সরকার কেউ দিচ্ছে না।’ হাজী আবদুল্লাহ বলল।
‘আপনি মুসলিম কম্যুনিটির একজন নেতৃস্থানীয় লোক। আপনার অভিমত কি? আপনি কাদের সন্দেহ করেন?’ বলল আহমদ মুসা।
‘আমরা আশংকা করছি একটা বড় ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের কি উদ্দেশ্য, এর পেছনে কে বা কারা আছে আমরা জানি না। আমরা চরম আতংক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমি যুবক নই, বোধ হয় এ কারণেই এখনও ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহর পরিণতি থেকে আমি বেঁচে আছি।’ বলল হাজী আবদুল্লাহ।
হাজী আবদুল্লাহ থামতেই গংগারাম বলে উঠল, ‘যারাই এর পেছনে থাক, তারা আন্দামানের বাইরে থেকে এসেছে। আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম, কাল যারা ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহকে কিডন্যাপ করেছে, তাদেরকে সেখানে উপস্থিত অনেকেই দেখেছে। তাদের পোশাক, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ আন্দামানীদের মত নয়।’
‘একথা তুমি পুলিশকে বলেছ গংগারাম।’ দ্রুত কণ্ঠে বলল আহমদ মুসা।
‘বলে কিছু হবে না স্যার। কালকে দুজন পুলিশের সামনে কিডন্যাপের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দুজন অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখে কিডন্যাপের সুযোগ করে দিয়েছে।’ গংগারাম বলল। তার কণ্ঠে ক্ষোভ।
‘গংগারাম ঠিকই বলেছে। হঠাৎ করেই পুলিশের মধ্যে এই পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই যে তিন ডজন রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, পুলিশ তার কিছুই বলতে পারছে না। আহমদ শাহ আলমগীর নিখোঁজ হবার ব্যাপার নিয়ে কয়েকদিন একটু নড়াচড়া করে এখন একেবারে চুপ হয়ে গেছে।’ বলল হাজী আবদুল্লাহ।
বলতে বলতে হাজী আবদুল্লাহ উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘আপনার অনেকখানি সময় আমি নিয়েছি। খুব ভাল লাগল আপনার সাথে কথা বলে। আপনাকে আমেরিকান মনেই হচ্ছে না- চেহারায় নয় কথাতেও নয়। কোন বিদেশীকেই দেখিনি আমাদের ব্যাপারে আমাদের সাথে এমন আন্তরিক হতে। ধন্যবাদ।’
আহমদ মুসাও উঠে দাঁড়াল।
হাজী আবদুল্লাহকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ফিরে এসে বসতে বসতে বলল, ‘তুমি ঠিকই বলেছিলে গংগারাম। হোটেল মালিক হাজী সাহেব সত্যি ভাল লোক।’
‘ধন্যবাদ স্যার।’
বলে একটু থামল গংগারাম। একটু ভাবল। তারপর বলে উঠল আবার, ‘স্যার, আপনার কক্ষে কি আর কেউ এসেছিল?’
‘না তো। কেন বলছ?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘আমি আসার সময় করিডোরের ওপ্রান্ত থেকে দেখলাম হোটেলেরই একজন বাসিন্দা সোমনাথ শম্ভুজী আপনার দরজার দিক থেকে করিডোরে উঠল। মনে হলো আপনার রুম থেকে বেরিয়ে গেল।’ গংগারাম বলল।
আহমদ মুসা একটু ভ্রুকুচকালো। তারপর বলল, ‘সব ফ্লোরের ডিজাইন ও দরজাগুলো তো একই রকম। ভুল হতে পারে। কেমন বয়স ভদ্রলোকের?’
‘পঞ্চাশ বছরের মত হবে।’
‘যাক। নাস্তা করেছ তুমি?’
‘না স্যার। আপনি তৈরি হোন। আমি নিচে গিয়ে নাস্তা করে নেব।’
‘আমি নাস্তা করিনি। চল নাস্তা করে নেই।’
‘স্যার, প্রোগ্রাম ঠিক আছে তো?’
‘হ্যাঁ গংগারাম। তবে প্রোগ্রামে আরও একটা আইটেম যোগ হয়েছে। আমি আহমদ শাহ আলমগীরের বাড়ি থেকে ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহর বাড়িতেও একটু যাব। অসুবিধা নেই তো?’ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল আহমদ মুসা।
‘স্যার কি সাংবাদিকও?’
‘কেন বলছ?’
‘এই যে এত খোঁজ খবর নেন। আবার খোঁজ নিতে বা জানতে যাবেন। ট্যুরিষ্টরা তো দেখি, চারদিকে কি হচ্ছে, সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করে না।’ বলল গংগারাম।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘সাংবাদিকতার চাকুরী করি না। কিন্তু সাংবাদিকের চরিত্র আমার আছে।’
‘তার সাথে নিশ্চয় সমাজ সেবকের চরিত্রও।’
‘কেমন করে?’ হেসে বলল আহমদ মুসা।
‘কোন ট্যুরিষ্ট বা সাংবাদিক কোন অপহৃতকে উদ্ধারের জন্যে ছোটে না, আপনি সেটাও করেন।’ বলল গংগারাম।
‘তুমি খুব বুদ্ধিমান ছেলে গংগারাম। তোমার আরও বড় কিছু করা উচিত ছিল।’
বলে হাঁটতে শুরু করল দরজার দিকে। নাস্তার ও খাওয়ার ব্যবস্থা এই দ্বিতীয় তলাতেই। গংগারামও হাঁটতে শুরু করল আহমদ মুসার সাথে।

Top