৪২. ডুবো পাহাড়

চ্যাপ্টার

আহমদ মুসার বোট পোর্ট ব্লেয়ার থেকে সোজা পূর্বদিকে এগিয়ে গিয়েছিল। রাস দ্বীপ অতিক্রম করার পর পূর্ব দিক থেকে এসে দক্ষিণ উপকূলে প্রবেশ করছিল। দক্ষিণ উপকূল বরাবর তীরের একদম গা ঘেঁষে পশ্চিম দিকে এগিয়ে দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় এসে আহমদ মুসার বোট দক্ষিণমুখী একটা খাড়িতে প্রবেশ করল।
খাড়িটা দশ মাইল পর্যন্ত ভেতরে এগিয়ে গেছে। শেষ হয়েছে পাহাড়-ঘেরা এক সংকীর্ণ উপত্যকায় গিয়ে। উপত্যকাটি নিয়েছে হ্রদের রূপ। বৃটিশ আমলে রাস দ্বীপ আন্দামান প্রশাসনের কেন্দ্র ছিল, তখন এই হ্রদটি পর্যটন-পিয়াসীদের একটা স্বর্গ ছিল। হ্রদটি পাহাড় ঘেরা হলেও এর তিন দিকে মোট পাঁচটি প্রশস্ত গিরিপথ ছিল, যেগুলো দিয়ে গাড়ি করে অনায়াসে হ্রদের উপকূলে পৌছা যেত। রাস দ্বীপ ধ্বংসকারী ভুমিকম্পের সময় এই পাঁচটি গিরিপথের চারটিই সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। মাত্র সোজা উত্তরমুখী মাঝের একটি গিরিপথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করার উপযুক্ত আছে। আহমদ মুসা তথ্যটি শুনেছিল হাজী আবদুল্লাহর কাছে। তিনি আন্দামানে গোয়েন্দা বিভাগের চীফ থাকা কালে ব্যাপক সফরের সময় এই বিষয়টি অবলোকন করেন। মজার ব্যাপার হল উত্তর দিকে এগিয়ে এই গিরিপথের যেখানে শেষ সেখান থেকেই রাস দ্বীপের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রশাসনিক এলাকা শুরু এবং এই এলাকার ফার্ষ্ট সার্কেলে গভর্নরের যে আন্ডারগ্রাউন্ড শেল্টার ছিল সেটা এখন সেখানে যেখানে ‘মহাসংঘে’র হেডকোয়ার্টার উত্তর দিকে মাত্র মাইল খানেক ব্যবধানে।
আহমদ মুসা তার বোট নিয়ে দ্রুত এবং নিঃশব্দে খাড়ির শেষ প্রান্তে হ্রদের মুখে এসে পৌছল।
আহমদ মুসা বেছে বেছে সাইলেন্সার বোট যোগাড় করেছিল। তার সিবিআই আইডেনটিটি কার্ড এ ব্যাপারে তাকে খুবই সাহায্য করেছে।
হ্রদের মুখে পৌছার পর হ্রদের গোটা দৃশ্য আহমদ মুসার সামনে আসার সাথে সাথে আহমদ মুসার দুই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। দেখল, হ্রদের উত্তর-প্রান্তে যেখানে পায়ে হেঁটে পার হওয়ার গিরিপথটি অবস্থিত, সেখানে বড় আকারের দুটি বোট নোঙর করা রয়েছে। দুটি বোটই দোতলা এবং চার ইঞ্জিন বিশিষ্ট।
স্তম্ভিত আহমদ মুসা তাড়াতাড়ি তার বোট খাড়ির কিনারে একটা ঝোপের আড়ালে সরিয়ে নিল।
আড়ালে বসে দূরবিন দিয়ে বোট দুটিকে অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করল। কোন মানুষের নড়াচড়ায় বোট দোল খাওয়ার কথা। কিন্তু মোটেও সেরকম দুলছে না এবং পানির ঢেউও তার নজরে পড়ল না।
প্রায় ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পরও বোটে মানুষ থাকার কোন আলামত না পেয়ে আহমদ মুসা ভাবল, বোটে নিশ্চয় কেউ নেই।
কিন্তু ভাবনা বা ধারণার উপর ভিত্তি করে সে এগোতে পারে না। তার সন্দেহ নেই এই বোটগুলো ‘মহাসংঘ’র হবে। এই সময় তাদের চোখে পড়ার অর্থ তার গোটা প্ল্যান বানচাল হয়ে যাওয়া। সুতরাং আহমদ মুসা সামনে অগ্রসর হবার সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না।
কিন্তু বসে থেকে সময় কাটানোরও সুযোগ নেই।
হঠাৎ আহমদ মুসার মনে হল, সে দুই বোটে ক্লোরোফরম বোম ছুড়তে পারে। সাইলেন্সার লাগানো সে ধরনের মিনি রকেট লাঞ্চার তার কাছে আছে। দুই বোটের লোকদের সংজ্ঞাহীন করতে দুই বোমই যথেষ্ট হবে। তারপর সে নিশ্চিন্তে সামনে এগোতে পারবে। খুশি হল আহমদ মুসা।
ব্যাগ থেকে ক্লোরোফরম বোমার কৌটা বের করলো। খুলল কৌটা। দেখল মাত্র দুটি বোমাই রয়েছে। তার অর্থ এখন দুটি বোমা ব্যবহার করলে এই সুযোগ সে আর পাচ্ছে না। তবু খুশি হল আহমদ মুসা যে, অন্তত দুটি বোমা তার রয়েছে, যার প্রয়োজন এই মুহূর্তে খুব বেশি।
আহমদ মুসা ব্যাগ থেকে টুকরো টুকরো পার্টস বের করে জোড়া লাগিয়ে পিস্তলাকৃতির, কিন্তু লম্বা নলের ক্ষেপণাস্ত তৈরি করল। তাতে বোমা ফিট করে দুটি বোমাই ছুড়ল দুবোট লক্ষ্য করে। প্রথম বোমাটি প্রথম বোটের দোতলা অংশের গোড়ায় ডেকের উপর পড়ল। বেলুন ফাটার মত ছোট্ট একটা শব্দ হল মাত্র। দ্বিতীয় বোমা দ্বিতীয় বোটের নিচ তলার কেবিনের দরজায় গিয়ে আঘাত করল।
পনের মিনিট অপেক্ষা করল আহমদ মুসা। কোন লোক বের হল না। বোটের কোন নড়াচড়াও লক্ষ্য করলো না। মানুষ থাকলে বোমার শব্দ যত ছোটই হোক মানুষ বের হতো। মানুষ কি ঘুমিয়ে আছে? সেটাও হতে পারে। যদি হয় তাহলে চিন্তাই নেই। তারা এখন লম্বা ঘুম দেবে।
আহমদ মুসা বোট চালিয়ে হ্রদে ঢুকে পড়ল। বোট নিয়ে নোঙর করল বোট দুটির পাশে। বোট থেকে নামল পাশের বোটে। দুই বোটই দেখল। দুই বোটেই অনেকগুলো করে বাক্স।
দুই বোটের অবস্থা আয়োজন দেখে আহমদ মুসা ভাবল, বোটগুলো হয় কোথা থেকে এসেছে, কিংবা কোথাও যাচ্ছে। কোনটি ঠিক?
আহমদ মুসা বোট দুটির ইঞ্জিন পরীক্ষা করল। দেখল, অন্তত গত ২ ঘণ্টায় ইঞ্জিন চালু করা হয়নি। ফুয়েল মিটার সাক্ষ্য দিচ্ছে ফুয়েল ট্যাংক একশ ভাগ ভর্তি। সব মিলিয়ে আহমদ মুসা ভাবল, দুই ঘণ্টা আগে বোটটি এলে লোক নেমে যাওয়ার সাথে কিংবা এতক্ষণে মালগুলো সব নেমে যেত এবং ফুয়েল ট্যাংক কিছুতেই পূর্ণ থাকতো না। সুতরাং বোট দুটি যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হয়েছে।
এই চিন্তার পরেই হঠাৎ আহমদ মুসার মনে প্রশ্ন জাগল, ‘মহাসংঘে’র এখানকার লোকেরা পালাবার বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখেনি তো? আর পেছন দিয়ে পালাবার এর চেয়ে সহজ ও নিরাপদ পথ আর নেই।
আহমদ মুসা যতই ভাবল এই বিশ্বাসই তার দৃঢ় হল।
এই বিশ্বাস দৃঢ় হবার সাথে সাথে আহমদ মুসা ভাবল, সে যে এই পথে এসেছে, তার কোন চিহ্ন এখানে রেখে যাবে না। সুতরাং সামনে এগোবার আগে তার বোটটি ডুবিয়ে দিতে হবে।
আহমদ মুসা তার বোটটি ডুবিয়ে দিল সঙ্গে সঙ্গেই।
আহমদ মুসা গিরিপথে উঠে এল।
ব্যাগ থেকে ডিষ্ট্যান্ট সাউন্ড মনিটরিং (উঝগ) যন্ত্র কানে লাগিযে সে গিরিপথ দিয়ে হাঁটতে লাগল। উত্তর প্রান্তে গিরিপথের প্রায় মুখের কাছে এসে একটা গুহা মত স্থান বেছে নিয়ে একটা পাথরের আড়ালে বসল। হাত ঘড়ির দিকে তাকাল আহমদ মুসা। দেখল সকাল ১০টা। বেশ দেরি হয়ে গেছে, মনে মনে ভাবল আহমদ মুসা। কিভাবে এগোবে সে চিন্তা তাকে গুছিয়ে নিতে হবে।
অন্যদিকে কর্নেল সুরেন্দ্রদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ‘মহাসংঘে’র এই হেডকোয়ার্টারের লোকেশন ও বিবরণ তাদের জানাতে হবে। তারপর দুই দিক থেকে এক সাথেই অগ্রসর হতে হবে।
মহামুনি শিবরাম সংঘমিত্র ওরফে বিবি মধাব বলছিল, ‘আসল পক্ষ সিবিআই নয়। সিবিআইকে এখানে যারা আনল তারাই আমাদের আসল দুশমন।’
শিবদাস সংঘমিত্রের সামনে বিশাল টেবিল। টেবিলকে সামনে রেখে তীরের মত সোজা হযে বসে আছে সে। তার সামনে টেবিলের এ পাশে বসে জেনারেল কালিকা কৃষ্ণমূর্তি। ইনিও জেনারেল স্বামীজীর মতই ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অবসর প্রাপ্ত জেনারেল। জেনারেলের মৃত্যুর পর ইনিই এখন আন্দামান ‘মহাসংঘ’র সেকেন্ড ইন কমান্ড।
মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র এবং জেনারেলের গোটা শরীর কাল পোশাকে ঢাকা। মাথায় বাঁধা কাল রুমাল। চোখে কালো গগলাস। মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্রের বাড়তি যে জিনিস আছে সেটা হল দীর্ঘ গোঁফ। শিবদাস সংঘ মিত্রকে বিবি মধাব বলে চেনার কোন উপায় নেই।
শিবদাস সংঘমিত্র থামতেই জেনারেল কালিকা কৃষ্ণিমূর্তি বলল, ‘গুরুজী আসল শত্রুতো আহমদ মুসা। তিনিই কেন্দ্রে কথা লাগিয়ে সিবিআইকে আন্দামানে টেনে এনেছেন। কিন্তু দিল্লী কি আহমদ মুসাকে চেনে না? তার কথা শুনল কেন?’
‘দিল্লী তার কথা শুনেনি। আজ সকালেও আমি খোঁজ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর পি.এ ‘মহাসংঘের’র প্রতি বহুদিন থেকে সহানুভূতিশীল। সে জানাল, গোটা ব্যাপারের পেছনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট। মার্কিন রাষ্ট্রদূত নয়, খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।’ বলল মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র।
‘কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট আহমদ মুসার এত খয়ের খাঁ হল কেন?’ জেনারেল কালিকা কৃষ্ণিমূর্তি বলল।
‘মূর্খের মত কথা বলছ জেনারেল। গত কয়েক বছর আহমদ মুসা সেখানকার জনগণের পক্ষে কি অসাধ্য সাধন করেছে, কিভাবে মার্কিন সরকার টুইন টাওয়ারের ব্যাপারে আহমদ মুসার তদন্ত মেনে নিয়ে নিজেদের মত পাল্টালো, তা তোমার সামনে নেই?’
‘সেটা আছে গুরুজী। কিন্তু আমি বলছি, আহমদ মুসার কথা শুনে ভারতের প্রতি এত কঠোর হওয়ার তৎপর্য কি?’ বলল জেনারেল কালিকা কৃষ্ণমূর্তি।
‘ভারতের প্রতি কঠোর হয়নি, কঠোর হয়েছে ‘মহাসংঘে’র প্রতি। ‘মহাসংঘ’ সম্পর্কে সব রিপোর্ট আহমদ মুসা আমেরিকাকে দিয়েছে। আমেরিকা ‘মহাসংঘ’কে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে ধরে নিয়েছে। তারা ‘মহাসংঘ’কে ‘ডুবো পাহাড়ে’র মত ভয়ংকর মনে করছে। মনে করছে যে, ‘ডুবো পাহাড় মহাসংঘ’ ভারতে জেগে ওঠার সুযোগ পেলে শুধু ভারতের গণতন্ত্র নয়, ভারতের সংখ্যালঘুদেরও বিনাশ হবে। গুজরাটের ঘটনা এবং আন্দামানে সংখ্যালঘু হত্যার অব্যাহত ঘটনাকে সাম্প্রতিক দৃষ্টিন্ত হিসেবে আহমদ মুসা আমেরিকার নজরে এনেছে। আর আমেরিকা এসব এনেছে ভারত সরকারের নজরে। ভারত সরকারও বিষয়টা জেনে ভবিষ্যত চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়েছে। সুতরাং ভারত সরকার আহমদ মুসাকে সাহায্য করছে না, সাহায্য করছে নিজেদেরকেই। তারা এখন সাহায্যকারী শক্তি মনে করছে আহমদ মুসাকে।’
দীর্ঘ বক্তব্য দিয়ে থামল মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র।
‘তাহলে এক সঙ্গে সবাইকে মোকাবিলা করতে হবে দেখছি।’ বলল জেনারেল কালিকা কৃষ্ণমূর্তি।
‘এটা নতুন কথা নয় কৃষ্ণমূর্তি। আমাদের বাপুজি শিবাজীকে সবার বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হয়েছে।’
বলেই শিবদাস সংঘমিত্র টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ল। বলল, ‘থাক এসব কথা। আমাদের করনীয়ের দিকে নজর দাও। আমি ঠিক করেছে আহমদ শাহ আলমগীরকে আন্দামান থেকে মহারাষ্ট্র বা গুজরাটে সরিয়ে নেব। অল্প সময়ে তার মুখ খোলার নতুন কোন ব্যবস্থা করা যাবে না। তার কাছ থেকে বাপুজী শিবাজীর পবিত্র দলিল ও মোগলদের গুপ্ত ধনের নক্সা পাওয়ার আগে তাকে কিছুতেই হত্যা করা যাবে না। কারণ তার ফলে চিরতরে হারিয়ে যাবে বাপুজীর দলিল এবং মোগলদের বিশাল গুপ্তধন।’ থামলো শিবদাস সংঘমিত্র।
‘তাহলে এই মুহূর্তে কি করনীয়?’ বলল জেনারেল কালিকা কৃষ্ণমূর্তি।
‘দিল্লী সরকার যেহেতু আহমদ মুসার দিকে চলে গেছে, তাই যেমন করে ওরা আমাদের দুই বন্দীখানার সন্ধান পেয়েছে, সেভাবে আজ না হয় কাল তারা এ ঘাঁটিরও সন্ধান পেয়ে যাবে। তাই দেরি না করে আজই আহমদ শাহ আলমগীরকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সাত্তার দিঘীতে আমাদের দুটি বোট আছে। বোটে ইতিমধ্যেই এখনকার কিছু সরঞ্জাম তুলেছি। এখনই আহমদ শাহ আলমগীরকে বোটে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করো। আর কিছু লোক তুমি বোট দুটিতে নিয়ে যাও তারপর বোট দুটি টেন ডিগ্রী চ্যানেলে নিয়ে যাও। ওখানে একটি জাহাজ অপেক্ষা করছে। জাহাজটিতে ত্রিরঙ্গা পতাকার পাশে আমাদের বাপুজীর ছবি সম্বলিত একটা পতাকাও দেখবে। ঐ জাহাজে উঠবে। জাহাজ কোথায় যাবে, সে আদেশ জাহাজকে দেয়া আছে।’ থামল শিবদাস সংঘমিত্র।
‘ধন্যবাদ গুরুজী। আমার পর এ ঘাঁটির দায়িত্বে কে থাকবে?’ বলল জেনারেল কালিকা কৃষ্ণমূর্তি।
‘পোর্ট ব্লেয়ার খেকে আজ সন্ধার মধ্যে সাবেক ব্রিগেডিয়ার সুন্দরী সিংহানিয়া এসে পৌঁছাবে। সে আশা পর্যন্ত আমি এখানে থাকছি। আর…।’
কথা শেষ করতে পারলো না মহামুলি শিবদাস সংঘমিত্র ওরফে বিবি মধাব। তার মোবাইল বেজে উঠল।
কথা বন্ধ করে মোবাইল তুলে নিল শিবদাস সংঘমিত্র।
ওপারের কথা শুনতে পেয়েই বলল, ‘বল কমান্ডার সুখদেব কি খবর।’
কমান্ডার সুখদেব রাস দ্বীপের ১নং ন্যাঙাল ডকের ডেপুটি ইনচার্জ। সে অনেক দিন থেকে ‘মহাসংঘ’র পক্ষে কাজ করছে।
‘গুরুজী খবর ভালো নয়। ৫টি বোট নিয়ে চল্লিশ জন সিবিআই অফিসার এখানে নেমেছে প্রায় ঘন্টা দুই আগে। ওরা একটা মহড়ার জন্য এসেছে। কিন্তু এখন দেখছি সবাই সিবিআই- এর ইউনিফরম খুলে পুরাতত্ব কর্মীর ইউনিফরম পরেছে। তাদের কথাবার্তায় এখানকার পুরাতত্ত্ব অফিসের কথা শুনেছি। তাদের রাখ-ঢাক ও চলা-ফেরা দেখে মনে হচ্ছে তারা কোন বড় ও গোপন মিশন নিয়ে এখানে এসেছে।’
টেলিফোনে এই কথাগুলো শোনার সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্রের। চোখে নেমে এল স্পষ্ট আতংক-উদ্বেগের ছায়া। সে বলল, ‘ধন্যবাদ সুখদেব। আমি দেখছি, ব্যাপারটা।’ বলে টেলিফোন রেখে দিল।
‘শিবদাস সংঘমিত্রের চেহারা ও কথার পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল জেনারেল কালিকা কৃষ্ণমূর্তি। শিবদাস সংগমিত্র টেলিফোন রাখতেই জেনারেল বলে উঠল, ‘কোন খারাপ খবর গুরুজী?’
মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র কোন কথা না বলে হাত ঘড়ির দিকে তাকাল। দেখল সকাল সাড়ে ৯টা। সময় দেখেই মুখ তুলল সে জেনারেল কৃষ্ণমূতির দিকে। বলল, ‘আয়োজন কর সবাই আমরা সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে বোটে উঠব। এক বোটে আহমদ শাহ আলমগীর, জিনিসপত্র ও লোকজন নিয়ে তুমি উঠবে। অন্য বোটে দুচারজন ক্রু নিয়ে আমি উঠব।’
মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে জেনারেল কৃষ্ণমূর্তির। নির্দেশের ধরন শুনেই সে বুঝল, সাংঘাতিক কিছু ঘটে গেছে। তাদেরকে ত্যাগ করে পালাতে হচ্ছে। সে আবার জিজ্ঞেস করল, ‘বড় কোন খারাপ খবর গুরুজী?’
‘হ্যাঁ, অর্ধশতের মত সিবিআই সদস্য ল্যান্ড করেছে এক নাম্বার ন্যাঙাল ডকে। তারা পুরাতত্ব কমীর ছদ্মবেশ নিয়েছে এবং তারা এই পুরাতত্ব অফিসে আসবে। মানে, তারা আমাদের হেডকোয়ার্টারের খবর পেয়েছে। এখানে অভিযানের জন্যেই তারা এসেছে।’ বলল শিবদাস সংঘমিত্র।
‘বুঝেছি গুরুজী। বিষয়টি একেবারে পানির মত পরিষ্কার। আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা এবার সিবিআইকে কাঁচকলা দেখাব।’
উঠে দাঁড়াল জেনারেল কালিকা কৃষ্ণমূর্তি। বলল, ‘যাই গুরুজী। আমি ব্যবস্থা করছি।’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল জেনারের কালিকা কৃষ্ণমূর্তি।
মহামুনি শিবদাস সংঘমিত্র ওরফে গভর্নর বিবি মধাব মোবাইল তুলে নিল হতে। মোবাইলের কী গুলোর উপর দ্রুত আঙুল চালাতে লাগল।

পরবর্তী বই
‘পাত্তানীর সবুজ অরণ্যে’

Top