৪৪. ব্লাক ঈগলের সন্ত্রাস

চ্যাপ্টার

‘কিন্তু আহমদ মুসা, তুমি সবই বলেছ, তবে তুমি কেন বেতাংগে এসেছ সেটাই বলনি।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
ড্রইং রুমে সবাই গল্প করছিল।
আহমদ মুসা বসেছে বড় একক একটা সোফায়। তার সামনের একটা সোফায় পাশাপাশি বসেছে সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। তাদের পেছনের অন্য একটা সোফায় বসেছে আয়েশা আলিয়া।
আহমদ মুসার ডান বাহুতে ব্যান্ডেজ। আঘাত বড় ক্ষতিকর ধরনের নয়। তবে গুলী বের করতে ছোট খাট অপারেশন দরকার হয়।
‘ঠিক, কথাটা এখনও বলা হয়নি। এটাই শেষ কথা। হয় তো সে কারণেই এ পর্যন্ত বলা হয়নি।’
বলে একটু থামল আহমদ মুসা। গম্ভীর হয়ে উঠল তার মুখ। বলল, ‘আপনি কাতান টেপাংগোর রাস্তা চেনেন?’
‘হ্যাঁ, চিনি।’ সরদার জামাল উদ্দিন বলল।
‘এই পথের সন্ধান নেবার জন্যেই আমি বেতাংগে এসেছি।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ওখানেই কি আমাদের জাবের বাংগসা জহীর উদ্দিন বন্দী আছেন?’ সরদার জামাল উদ্দিন বলল।
‘হ্যাঁ সরদার জী।’ আহমদ মুসা বলল।
সংগে সংগে কোন কথা এল না সরদার জামাল উদ্দীনের কাছ থেকে। কিছুটা আত্মস্থ হয়ে পড়েছিল সে। একটুক্ষণ পরেই মুখ তুলে সে বলল, ‘বেতাংগ থেকে উপত্যকার পথে যে রাস্তাটা কাতান টেপাংগো থেকে পাত্তানী গেছে, সেটা তো তুমি জান। আবার যে রাস্তা পাত্তানীর দিকে থেকে কাতান টেপাংগো এসেছে, সেটাও তোমার জানার কথা। তার মানে………।
আহমদ মুসা সরদার জামাল উদ্দিনের কথার মাঝখানেই বলে উঠল, ‘দুই রাস্তাই চিনি। কাতান টেপাংগোর সঠিক লোকেশান জানি না। আর ঐ দুই পথের কোনটাই নিরাপদ নয়। শুরুতেই ওদের নজরে পড়ার সম্ভাবনা আছে। ওদের নজর এড়িয়ে সেখানে পৌছুতে না পারলে ওরা জাবের জহীর উদ্দিনকে হত্যা করবে এটা নিশ্চিত।’
‘আমি সে কথাই বলছিলাম। ওদের চোখে ধুলা দেবার জন্যে তাহলে ঐ দুই পথ এড়িয়ে তৃতীয় একটি গোপন পথ রয়েছে, সেটারই সন্ধান চাও?’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘ঠিক।’ আহমদ মুসা বলল।
সরদার জামাল উদ্দিন তাকাল নাতি আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনের দিকে। বলল, ‘তুমি কি কাতান টেপাংগো ঢুকেছ?’
‘না ঢুকিনি।’ বলল আবদুল কাদের।
সরদার জামাল উদ্দিন তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘কাতান টেপাংগো পর্যন্ত রাস্তা আমরা জানি। কিন্তু গত তিন বছর আমরা কাতান টেপাংগো ঢুকিনি। অর্থাৎ কাতান পাহাড় পার হয়ে টেপাংগো ঢোকার গিরিপথ পর্যন্ত যেতে পারব। তার পরের এলাকাটা নিষিদ্ধ, কিছু লোক ছাড়া অন্য সকলের জন্যে।’
‘এই ‘অন্য সকলের’ মধ্যে আপনারাও পড়েছেন?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘তুমি যা বল সেই ‘ব্ল্যাক ঈগল’-এর প্রধান হাবিব হাসাবাহর পরামর্শ কমিটির সদস্য এবং তার ষ্টাফরাই মাত্র ওখানে প্রবেশ করতে পারে। এদিকের গিরিপথও তারা বন্ধ করে দিয়েছে।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘ওরা কি উপত্যকার এই দুই পথে আসা-যাওয়া করে? এই পাহাড়ী পথ ওরা চেনে না?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘না এই পথ ওরা চিনে না। আমরা এবং পাহাড়ের কিছু পরিবার ছাড়া এই পথের সন্ধান কেউ জানে না। ননপাহাড়ী কাউকে আমরা এই পথের সন্ধান জানাই না।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘পাহাড়ী, ননপাহাড়ীর এই পার্থক্য কেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘একটা বিশেষ কারণ আছে।’ জবাব দিল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘বিশেষ কারণটা কি জানাবার মত?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘তোমাকে বলা যাবে না এমন কথা আমাদের থাকতে পারে না। ঘটনা হলো, একটা জনশ্রুতি আছে, কাতান পাহাড়ের ‘শাহ রোড’ বা ‘কিং রোডের দু’ধারের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে অঢেল গুপ্তধন লুকানো আছে। এই গুপ্তধনের সন্ধানে আসা মানুষের রক্তে পাহাড়ের গা অব্যাহতভাবে রঞ্জিত হয়েছে। তারপর আল্লাহর ইচ্ছায় একটা ভূমিকম্প পাহাড়ের মানচিত্র পাল্টে দিয়েছে। তারপর শাহ রোড কেন্দ্রিক গুপ্তধনের সব নকশা অচল হয়ে গেছে। এই শাহ রোডের সন্ধান এখন শুধু পাহাড়ি কয়েকটি পরিবারই জানে। গুপ্তধনের সেই হানাহানি পাহাড়কে যেন আর গ্রাস না করে, এ জন্যে এই পথের সন্ধান আর কাউকে জানানো হয় না।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘শাহ রোড বা কিং রোড নামটা কেন? গুপ্তধনের এই জনশ্রুতির রহস্য কি?’ আহমদ মুসা জিজ্ঞেস করল।
‘নাম সম্পর্কেও একটা জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। বলা হয়, থাইল্যান্ড ও মালয় অঞ্চলের রাজ্যচ্যুত বা বিদ্রোহী রাজা-রাজপুত্র, দস্যু-জলদস্যুদের আশ্রয় নেবার গোপন স্থান ছিল গল্পের কোহেতান বা কাতান এই পাহাড়। এই রাজা-রাজপুত্ররা কোহেতান বা কাতান পাহাড়ের যে গোপন পথ ব্যবহার করতো, তাকেই নাম দেয়া হয়েছে শাহ রোড বা কিং রোড। এই নামের সাথে গুপ্তধনের গল্পের সম্পর্ক আছে। মনে করা হয় এত রাজা-রাজপুত্র যখন এসেছে, তখন তাদের রাজকোষও এসেছে। এই রাজকোষেরই সন্ধান করা হতো কিং রোডের দু’পাশে। থামল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘আমার মনে হয় জনশ্রুতির সবটুকুই ভিত্তিহীন গাল গল্প নয়, এর মধ্যে ইতিহাসও আছে। রাজ্যচ্যুত বা বিদ্রোহী রাজা-রাজপুত্ররা এই পাহাড় অঞ্চলে পালিয়ে এসেছেন, এটা ইতিহাস। থাইল্যান্ডের সোকোথাই রাজবংশের রাজপুত্র আবদুল কাদের আহমদ শাহ ওরফে ‘চাওসির বাংগসা’ এ অঞ্চলে পালিয়ে আসা এই ইতিহাসের একটা প্রমাণ।’ বলল আহমদ মুসা।
‘তাহলে তো গুপ্তধনের কথার মধ্যেও সত্যতা আছে ধরে নিতে হয়।’ বলল আয়েশা আলিয়া।
‘এটা ধরে নেয়া কেন, এটাই বাস্তবতা যে রাজার সাথে রাজকোষও থাকবে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তাহলে স্যার আপনিও কিং রোডে গিয়ে গুপ্তধনের সন্ধান করবেন নাতো?’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘রাজা কে না হতে চায়, রাজকোষ কে না পেতে চায়। তবে আমার কাছে এখন জাবের জহীর উদ্দিন যে কোন রাজকোষের চেয়ে মূল্যবান। তাকে বাঁচানো এবং তাকে আবার পাত্তানীদের মাঝে ফিরিয়ে আনার চেয়ে বড় লোভনীয় কাজ আমার কাছে আর কিছু নেই।’
‘ধন্যবাদ স্যার।’ বলল আয়েশা আলিয়া।
‘আল্লাহর শোকর যে, তোমার মত সোনার মানুষ আল্লাহ এ যুগে সৃষ্টি করেছেন। তুমি আমাদের নেতা সম্পর্কে যা ভাবছ, আমরাও তেমন করে ভাবতে পারি না। তার চেয়েও ট্রাজেডি হলো, যারা আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে চাচ্ছে, যারা আমাদের নেতাকে বন্দী করে হত্যা করতে চাচ্ছে তাদেরই আমরা সাহায্য করছি। আমরা আমাদের শত্রুদের চেনার যোগ্যতার হারিয়ে ফেলেছি।’ সরদার জামাল উদ্দিন বলল। ভারাক্রান্ত কণ্ঠ তার।
আহমদ মুসা প্রসংগ পাল্টিয়ে বলল, ‘কাতান-টেপাংগে যারা ঢুকতে পারে, তারা কারা? আমি বলতে চাচ্ছি তারা এ দেশীয় কিনা?’
সংগে সংগে উত্তর দিল না সরদার জামাল উদ্দিন কিংবা আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। তারা পরষ্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। ভাবছিল তারা।
একটু পর কথা বলে উঠল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। বলল, ‘আগে এ বিষয়টা আমাদের মাথায় আসেনি। এখন মনে হচ্ছে, ওদের কারও চেহারা মালয়ী বা পিওর থাই নয়। আর কারও নামই থাই মুসলমানদের মত নয়। কারও কারও চেহারা থাই বা চীনা চেহারার সাথে কিছুটা মিললেও, অধিকাংশের চেহারাই কিন্তু এদেশীয় নয়।’
‘এ এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্র। আহমদ মুসাকে আল্লাহ এখানে না নিয়ে এলে আমরা এ ষড়যন্ত্রের কিছুই জানতে পারতাম না। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের গুটি হিসাবে আমরা যে কাজ করতাম, তাকেই জাতির স্বার্থে পবিত্র দায়িত্ব পালন বলে মনে করতাম। বিস্ময় লাগছে আমার, এত বড় ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে নিশ্চয় অনেক দিন লেগেছে। অঢেল পয়সা ও অনেক শ্রম খরচ হয়েছে। কিন্তু এত সব করে কি লাভ হয়েছে তাদের? আমাদের লোকরা কষ্ট ভোগ করেছে, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে, কিন্তু তাদের কি লাভ হয়েছে?’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘যে লাভ তারা চায়, সে লাভ তারা ষোল আনা পেয়েছে। ইসলামকে তারা সন্ত্রাসের ধর্ম সাজাতে চায়, মুসলমানদের সন্ত্রাসী সাজাতে চায়। সে উদ্দেশ্য তাদের হাসিল হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশের মুসলিম জাতি-গোষ্ঠীর মত থাই মুসলমানদের বিরুদ্ধেও চরম পন্থা ও সন্ত্রাসের কাহিনী জগৎময় প্রচার হয়েছে। থাই মুসলমানদের যে ক্ষতি হবার হয়েই গেছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু স্যার, আপনি তো বলেছেন থাই সরকারের কাছে বিষয়টি এখন পরিষ্কার। তাহলে ক্ষতি ও বদনাম থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি।’ বলল আযেশা আলিয়া।
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘খারাপ খবর পৃথিবীর সবাই জানতে পেরেছে, কিন্তু ভাল খবরটা তাদের কারো কানেই পৌছুবে না। কারণ গ্লোবাল মিডিয়া কমবেশি তাদেরই নিয়ন্ত্রণে। অনেক দেশের প্রেসিডেন্টও তাদের প্রপাগান্ডার শিকারে পরিণত হয়েছেন। এ থেকেই আমাদের অসহায়ত্ব অনুমান করা যায়।’
‘তাহলে আমাদের উপায়?’ আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলল।
‘উপায় খোঁজার অবস্থায় আমরা নেই। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বুদ্ধি বিবেচনায় আমরা পেছনে বলে আমরা যেমন একটা শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। এই কারণেই গ্লোবাল কোন মিডিয়াও আমাদের হাতে নেই। সুতরাং এ দিকটা না ভেবে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে আত্মরক্ষাকেই বড় করে দেখতে হবে। থাই মুসলমানরা ষড়যন্ত্রের কবল মুক্ত হচ্ছে, এটাকেই আমাদের বড় করে দেখা দরকার।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ আহমদ মুসা। সত্যি, ষড়যন্ত্র ও বদনাম মুক্তভাবে বাঁচাই এখন আমাদের কাছে বড়। আহমদ মুসা এখন বল করণীয় কি? তোমার সাথে কাতান টেপাংগো যেতে আমরা প্রস্তুত।’
‘ধন্যবাদ জনাব, আজই রওয়ানা হতে চাই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমি কিন্তু যাচ্ছি।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘সাথী পেলে আমি খুশি হবো। বিশেষ করে তোমাদের মত সাথী। চল তৈরি হই।’ বলল আহমদ মুসা।
সবাই উঠে দাঁড়াল।
‘আমার কি কাজ?’ বলল আয়েশা আলিয়া।
থমকে দাঁড়াল আহমদ মুসা।
হাসল। একটু ভাবল। বলল, ‘তুমি তো একা পড়ে গেছ। মেয়েদের জন্যে একা কোন মিশনে যাওয়ার অনুমতি নেই। ওঁরা দু’জন আমার সাথে যাবার জন্যে তৈরি। তোমার সাথী নেই।’
‘আছে স্যার। ওর কোন মিশন আছে কিনা?’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘মিশন আছে। কিন্তু সাথী পাবে কোথায়? ভাই তুমি একাই, অন্য কোন সাথী চলবে না মেয়েদের জন্যে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আসল সাথী স্যার। যাকে বলতে পারেন জোড়া।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘ভাইয়া, এসব এখন কেন?’ বলে আয়েশা আলিয়া তার ভাই আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনকে থামিয়ে দিতে চেষ্টা করল।
‘আলহামদুলিল্লাহ। সুন্দর সুসংবাদ। কিন্তু সে কোথায়?’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমার সাথে কিছুক্ষণ আগে কথা হয়েছে। আপনার কথা শুনেই ছুটে পালিয়েছে। এখনি এসে পৌছুবে। এ বছরই মালয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছে। ক’দিন হলো শিক্ষকের চাকরি পেয়েছে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়েই।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘সাথী বলছ, জোড়া বলছ, বিয়ে হয়েছে এ কথা বলছ না কেন?’ আহমদ মুসা বলল।
‘সব ঠিক-ঠাক স্যার। শুধু বিয়ের আসনে বসাই বাকি। আপনি বললে……….।’
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে আয়েশা আলিয়া বলে উঠল, ‘এসব কথা থাক। ঠিক আছে, আমি কোথাও যাচ্ছি না।’ বিব্রত আয়েশা আলিয়ার মুখ রাঙা হয়ে উঠেছে লজ্জায়।
‘না বোন আয়েশা, তোমার জন্যে মিশন ঠিক হয়ে গেছে। তুমি অবশ্যই তা থেকে পিছু হটবে না।’ বলল আহমদ মুসা।
গম্ভীর হয়ে উঠল আয়েশা আলিয়ার মুখ। বলল, ‘স্যার আপনার ইচ্ছা ও আদেশের চেয়ে বড় কিছু আমার কাছে নেই। আপনি আমাদের নেতা। আপনার নির্দেশে আমি আগুনেও ঝাঁপ দিতে পারি।’ আয়েশা আলিয়ার শেষ কথাগুলো আবেগে কাঁপছিল।
‘সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। তাহলে বিয়েটা তুমিই পড়িয়ে দাও আহমদ মুসা। তার পরেই আমরা মিশনে বেরুবো। কিন্তু আয়েশা আলিয়াদের মিশন কোথায়, সেটা কিন্তু বলনি আহমদ মুসা।’
‘বলছি, আয়েশা আলিয়ারা দু’জন উপত্যকার পথে কাতান টেপাংগের কিছু দূর নিচে লেক চ্যানেলের এপারের ফেরিঘাটে গিয়ে পৌছুবে। সেখানে বসে তারা পাহারা দেবে চ্যানেলের পথকে, যাতে এদিকে হাবিব হাসাবাহ এবং তার লোকরা পালাতে না পারে। ওরা এ পথে পালাবার চেষ্টা করতেও পারে। এটা খুব বড় একটা কাজ।’ বলল আহমদ মুসা।
‘কিন্তু লেক চ্যানেল অনেক প্রশস্ত। এপারে বসে চ্যানেল পাহারা দেয়া বা এ পথে কাউকে আটকানো সম্ভব নয়। এটা নিশ্চয় তোমার বিবেচনায় আছে।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘ওপারেও ব্যবস্থা আছে। ওপারে ঘাটওয়ালা কয়েকদিন থাকবে না। ঘাটে ও ঘাটওয়ালার বাড়িতে কয়েকজন পুলিশ ঘাটওয়ালা ও তার আত্মীয়ের ছদ্মবেশ নিয়ে থাকবে। আপনার মত করে আমিও এখন বুঝতে পারছি, ঘাটওয়ালারা ওখানে বসে গোটা চ্যানেলে ওদের আটক করতে পারবে না। এজন্যে আয়েশা আলিয়াদের ওখানে পাঠানে হচ্ছে। ওরা পথ-যাত্রীর ছদ্মবেশে ঠিক সময়ে ওখানে গিয়ে পৌছুবে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ঠিক সময়টা আমরা কি করে ঠিক করব?’ বলল আয়েশা আলিয়া।
‘ঠিক সময়টা আমিই ঠিক করে মোবাইলে জানাব। তোমাদের গাড়িটা হবে উভচর। স্থলের গতিতে সে পানিতেও চলতে পারবে। এ রকম একটি গাড়ি বেতাংগোতে এসেছে। তোমরা তা পেয়ে যাবে। আমি তার ব্যবস্থা করে যাব।’ আহমদ মুসা বলল।
‘শহরে থাই সরকারের কমিশনারের সাথে দেখা হয়েছে?’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘কমিশনারকে আমি কি উদ্দেশ্যে এসেছি সেটা ছাড়া সব জানিয়েছি। কমিশনার সাহেব আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। কথা হয়েছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তুমি সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এখানে থাকতে পারতে। তাদের কাছে অনেক সহযোগিতাও পেতে। তুমি তা নাওনি কেন?’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘সরকারি লোকদের উপর অবশ্যই ব্ল্যাক ঈগলের চোখ থাকবে। আবার সরকারি লোকজনদের কেউ কেউ ব্ল্যাক ঈগলের পক্ষে কাজও করতে পারে। এজন্যেই আমি গোপনে থাকছি।’
আহমদ মুসা সরদার জামাল উদ্দিনেরদিকে মুখ তুলে তাকিয়ে বলল, ‘যা করার আমাদের তাড়াতাড়ি করতে হবে জনাব।’
আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বৈঠকখানাটা একটু গোছ-গাছ করছিল। জানালার দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠল, ‘স্যার আবদুল জববার আল যোবায়ের এসে গেছে।’ বলেই সে তাকাল আয়েশা আলিয়ার দিকে। বলল, ‘আয়েশা যাও তুমি তৈরি হও। খালাম্মার ওখানে টেলিফোন করে ওঁদের আসতে বল।’
লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যাওয়া আয়েশা আলিয়া বলল, ‘তুমিই টেলিফোন কর ভাইয়া।’
এই আবদুল জববার আল-যোবায়েরের সাথেই আয়েশা আলিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
আয়েশা আলিয়া থামতেই তার দাদু সরদার জামাল উদ্দিন বলল, ‘পাহাড়ে তো আর খবর দেয়া যাবে না। তোমাদের খালাদের আমি টেলিফোন করছি আসার জন্যে। তুমি ভেতরে যাও বোন। দেখ কি করার আছে। দেখি যোবায়ের আসছে, কথা বলি তার সাথে।’
আয়েশা আলিয়া ভেতরে চলে গেল। তার মধ্যে লজ্জা, আবেগ, উত্তেজনা ও নার্ভাস ভাব। সব মিলিয়ে তার মুখে অপরূপ এক লাবণ্য।
সরদার জামাল উদ্দিন আহমদ মুসাকে নিয়ে বাইরে বেরুবার জন্যে পা বাড়াল।

শাহ রোড বা কিং রোড কোন রোড নয়, উঁচু-নিচু, এবড়ো-থেবড়ো ও ছোট-বড় পাথরে ঢাকা একটা শুকিয়ে যাওয়া নদীর মত প্রলম্বিত চ্যানেল।
দিগন্ত প্রসারিত শাহ রোড বা কিং রোড নামক চ্যানেল ধরে এগিয়ে যাচ্ছে আহমদ মুসা। সাথে সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
আগে হাঁটছিল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। মাঝখানে আহমদ মুসা। আর পেছনে সরদার জামাল উদ্দিন।
চ্যানেলের দু’পাশে উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি, পাথরের স্তুপ এবং মাঝে মাঝেই এদিক-সেদিক গিরি গলিপথ। আবদুল কাদের এক জায়গায় চ্যানেলের পথ পরিত্যাগ করে পশ্চিম দিকের সংকীর্ণ এক গিরিপথে প্রবেশ করল।
‘আমরা কিং রোডের চ্যানেল ছাড়ছি, ভুল হচ্ছে না তো?’ আহমদ মুসা বলল।
‘স্যার সামনে গিয়ে কিং রোড একটা খাদে শেষ হয়েছে।’ পেছনে না তাকিয়েই বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘পূর্ব দিকেও তো গিরিপথ দেখছি। আমাদের তো যেতে হবে পূর্ব দিকেই, কাতান টেপাংগো তো ওদিকেই?’ আবার আহমদ মুসার জিজ্ঞাসা।
‘স্যার পূর্ব দিকের রাস্তা ঘুরে-ফিরে আমাদের ফেলে আসা অনেক পেছনে কিং রোডে গিয়েই উঠেছে। পথভ্রষ্ট করার এক গোলক ধাঁধাঁ ওটা।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
আবদুল কাদেরের পেছন থেকে তার দাদা সরদার জামাল উদ্দিন বলে উঠল, ‘ভাই আহমদ মুসা পশ্চিম পাশে ও পেছনে আরও কিছু পশ্চিমমুখী পথ এই পথের মতই রয়েছে। ওগুলোর কোনটা দিয়েই লক্ষে পৌছা যাবে না। ওসবের সবগুলোই কোনটা পাহাড়ের দেয়ালে, কোনটা গিরিখাদের মুখে গিয়ে শেষ হয়ে গেছে। মাত্র এই একটি পথই নানা গোলক ধাঁধাঁ পেরিয়ে কাতান টেপাংগোর দেয়াল পর্যন্ত পৌছেছে।
পাহাড়ের এই পথ ধরে ঘণ্টা দুয়েক চলল। পথটির দু’পাশে অনেক গলিপথ তারা পেরিয়ে এল। কোন কোন গলিপথ তাদের পথ থেকেও প্রশস্ত। এসব ক্ষেত্রে কোন পথ বেছে নেবে তা নির্ণয় করতে ষোল আনা ভুল হবার সম্ভাবনা। এক জায়গায় তো চলে আসা পথটি ছেড়ে দিয়ে পাশের একটা অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ গলিপথ ধরতে হয়েছে তাদের। আহমদ মুসা জিজ্ঞেস করে জেনেছে চলে আসা পথ ধরে তারা সামনে এগুলে ঘণ্টা তিনেক ঘোরার পর আবার পেছনে ফিরে গিয়ে কিং রোডেই উঠতে হতো।
ঘণ্টা তিনেক চলার পর একটা প্রশস্ত চ্যানেলে তারা ফিরে এল। আহমদ মুসা খুশি হয়ে বলল, ‘তিন ঘণ্টা পর কিং রোড আবার আমরা পেয়ে গেলাম।’
হাসল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন। বলল, ‘স্যার এটা শেষ ধাঁধাঁ। এটা একদম কিং রোডের মত, কিন্তু কিং রোড নয়। এটা ধরে এগুলে পাহাড়ের ডান পাশে অর্থাৎ পশ্চিম প্রান্তের লেকে গিয়ে পড়তে হবে।’
কথা শেষ করেই ‘আসুন’ স্যার বলে চ্যানেলের কয়েক গজ এগিয়ে বাঁ দিকের সংকীর্ণ গিরিপথে প্রবেশ করল।
এক ঘণ্টা চলার পর সামনেই একটা পাহাড়ের পাশ দিয়ে আরেকটা প্রশস্ত চ্যানেল দেখতে পেলো। আহমদ মুসা বলে উঠল, ‘আবদুল কাদের, এবার ভুল হবে না। ওটা নিশ্চয় কিং রোড।’
হাসল আবদুল কাদের। বলল, ‘এবার ঠিক ধরেছেন। আমরা কিং রোডে ফিরে এসেছি। আমরা যতটা পথ এগিয়েছি, আর ততটুকু এগুলেই কাতান টেপাংগো পৌছে যাব স্যার। আমরা অর্ধেক পথ পার হয়েছি।’
আবদুল কাদের কিং রোডে উঠেছে। আহমদ মুসা কিং রোডে উঠতে গিয়ে শেষ পাহাড়টার পাশ দিয়ে গিরি পথ অতিক্রম করছে। হঠাৎ ক্ষয়ে যাওয়া বিছানো পাথরের মাঝামাঝি স্থানে একটা অমসৃণ বৃত্ত, বৃত্তের নিচের দিকে গভীর ও পুরানো কিছু সুশৃঙ্খল রেখা দেখে চমকে উঠল আহমদ মুসা। থমকে দাঁড়াল। এগুলো পাথরটার দিকে।
দাঁড়াল পাথরটার পাশে।
পকেট থেকে টিস্যু পেপার বের করে পাথরের উপরটা মুছল আহমদ মুসা।
মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আহমদ মুসার। যা ভেবেছিল তাই, সুশৃংখল রেখাগুলো আরবী ক্যালিওগ্রাফি।
সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন আহমদ মুসার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের চোখে-মুখে বিস্ময়।
ক্যালিওগ্রাফির লেখা পড়ল আহমদ মুসা। ক্যালিওগ্রাফিতে একটা শব্দই লেখা রয়েছে। সেটা ‘তাহতা’ অর্থাৎ ‘নিচে’।
আহমদ মুসা মুখ ফেরাল সরদার জামাল উদ্দিনের দিকে। বলল, ‘ক্যালিওগ্রাফিক ষ্টাইলে এখানে একটি আরবী শব্দ লেখা রয়েছে।’
‘আরবী শব্দ? কি শব্দ? কি লেখা?’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন। তার কণ্ঠে উত্তেজনা।
আহমদ মুসা বলল, ‘নিচে।’
‘নিচে অর্থ কি?’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
আহমদ মুসা ভাবছিল। বলল, ‘এটা একটা সংকেত হতে পারে। পাথরটার নিচটা দেখতে হবে।’
বলেই আহমদ মুসা হাত দিয়ে চাপ দিয়ে পাথরটা পরীক্ষা করল।
পাথরটা বড়, কিন্তু খুব বড় নয়। পাথরটা তেমন নড়ল না বটে, কিন্তু লুজ মনে হলো তার কাছে।
‘আসুন জনাব আমরা পাথরের তলাটা দেখি।’ বলল আহমদ মুসা সরদার জামাল উদ্দিনকে লক্ষ্য করে।
তিনজনে পাথরটার একটা প্রান্ত ধরে উল্টে ফেলল। পাথরের তলদেশটির চার প্রান্ত এবড়ো-থেবড়ো হলেও মাঝখানটি বিস্ময়করভাবে মসৃণ। এই মসৃণ জায়গায় খোদাই করা গাছের ছবি।
গাছের ছবিটা দেখেই আহমদ মুসা তাকাল চারদিকে। না, কোথাও কোন গাছের চিহ্ন নেই।
‘স্যার, পাথরের তলায় ওটা তো গাছ মনে হচ্ছে।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘হ্যাঁ, আবদুল কাদের।’ বলে আহমদ মুসা টিস্যু পেপারটি কুড়িয়ে নিয়ে পাথরের গা ভালো করে পরিষ্কার করল। গাছটার শাখা-প্রশাখা পরিষ্কারভাবে চোখে পড়ল।
আহমদ মুসা নিশ্চিত যে, ক্যালিওগ্রাফির সংকেত অনুসরণে পাথরের তলায় গাছ যখন পাওয়া গেছে, তখন গাছও একটা সংকেত হবে অথবা এর কোন অর্থ অবশ্যই থাকবে।
আহমদ মুসার দুই চোখ গভীরভাবে দেখতে লাগল পাথরের মাঝে খোদাই করা গাছটিকে।
হঠাৎ আহমদ মুসার চোখ দুটি তীক্ষ্ণ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আনন্দে।
চোখ দুটি তার আরও তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। দেখল যেন আরও ভালোভাবে।
গাছের উপর চোখ রেখেই বলল, ‘মনে হচ্ছে জনাব সুখবর, রাজভান্ডার পেয়ে গেছি।’ আহমদ মুসার ঠোঁটে হালকা হাসি।
সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিনও ঝুঁকে পড়ল পাথরের উপর।
আহমদ মুসা বলল, ‘দেখুন গাছের মাঝ বরাবর ডান থেকে বামে, গাছের খোদাই করা ডালগুলোর সংযুক্ত অংশের উপর ভালো করে চোখ রাখুন, দেখবেন আরবী শব্দ তৈরি হয়ে যাচ্ছে।’
সরদার জামাল উদ্দিন বলল ধীরে ধীরে, ‘হ্যাঁ ভাই আহমদ মুসা সেরকমই তো মনে হচ্ছে। কিন্তু পড়তে পারছি না। ‘আইন’, ‘মিম’ ছাড়া আর কোন অক্ষর স্পষ্ট হচ্ছে না।’
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘স্পষ্ট হবে। আর একটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন। দেখুন আইনের মাথায় একটা গোলাকার আপেল ঝুলছে। ওটাকে নোকতা ধরুন। তাহলে আইনটা ‘গায়েন’ হয়ে যাবে। গায়েনের পর দেখুন বাম দিকে বিলম্বিত হয়ে যাওয়া শাখা কাছাকাছি পাশাপাশি দু’জায়গায় পিরামিড হয়ে উঠেছে। প্রথম পিরামিডের সুঁচালু মাথার উপর দেখুন একটা পাতা গোলাকার অবস্থায় ঝুলে আছে। দ্বিতীয় পিরামিডের নিচে দেখুন দুটি ফুল একই বৃন্তে ফুটে আছে। প্রথম পিরামিডকে ‘নুন’ এবং দ্বিতীয় পিরামিডকে ‘ইয়া’ ধরতে হবে। এবার প্রথম আরবী বর্ণের সাথে পরের বর্ণের মিমকে যুক্ত করুন। তাহলে পাওয়া যাচ্ছে একটা শব্দাংশ ‘গানিমা’। ‘গানিমা’র মিম শব্দের পরে দেখুন তলোয়ারের মত একটা শাখা বাম পাশের শেষ পর্যন্ত গেছে এবং তলোয়ারের শেষ প্রান্তটা বাঁকা হয়ে একটু উপরে উঠে গেছে। আর তলোয়ারের বুকের উপর দেখুন ঝুলন্ত দুটি পাতা কুঁকড়ে বৃত্তাকার হয়ে আছে। ও দুটি বৃত্তকে দুই নোকতা ধরুন। তাহলে ওটা হয়ে যাচ্ছে আরবী অক্ষর ‘তা’। সব মিলে শব্দটা দাঁড়াচ্ছে ‘গানিমাত’।
আহমদ মুসার শব্দটা উচ্চারণ শেষ হতেই সরদার জামাল উদ্দিন বিস্ময় ও আনন্দে চিৎকার করে উঠল, ‘মানে ‘মাল’, ধনসম্পদ’। তাহলে এখানেই কি কিংবদন্তীর সেই ধন-সম্পদের একটা ভান্ডার লুকানো আছে? তুমি কি সেই খবরের কথা বলছ?’
সরদার জামাল উদ্দিনের কথা শেষ হতেই আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলে উঠল, ‘গানিমাত মানে কি ধন-সম্পদ? ‘মালে গানিমাত’ যুদ্ধলদ্ধ ধন বুঝতাম।’
‘গানিমাত’ মানে সহজে যে ধন-সম্পদ লাভ হয়। যুদ্ধ জয় থেকে সহজেই সম্পদ লাভ করা যায় বলে ওকেও মালে গানিমাত বলে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ভাই আহমদ মুসা, সত্যই তুমি মনে করছ এখানে ধন-ভান্ডার আছে? ‘গানিমাত’ শব্দ কি সেই ইংগিতই দিচ্ছে?’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
আহমদ মুসা কথা বললেও তার অনুসন্ধানী চোখ পাথরের গাছ ও আশে-পাশে ‘গানিমাত’ বা সহজলভ্য ধনভান্ডারটি এখানে কিংবা কোথায় তার ইংগিত খুঁজে ফিরছিল।
পাথরের দিক থেকে মুখ না তুলেই আহমদ মুসা বলল, ‘অবশ্যই জনাব একটা ধনভান্ডার আছে। কিন্তু কোন জায়গায় সেটা আছে, তারই সংকেত আমি খুঁজছি।’
হঠাৎ আহমদ মুসার চোখে পড়ল গাছের গোড়ার ঠিক নিচে পাথরের গায়ে খোদাই করে চোখে পড়ার মত স্পষ্ট করে মিম লেখা। মিমের পরেই একটা তীর আঁকা। তীরের মাথায় একটা ‘এক’ লেখা। তারপর আবার ‘তীর’। তীর চিহ্নের পর দুই লেখা। এরপর তৃতীয় তীর এবং তারপর ‘তিন’ লেখা। লক্ষণীয় বিষয় হলো, তৃতীয় তীরের মাথা নিমণমুখী এবং ‘তিন’ অংকের মাথাও নিচের দিকে।
আহমদ মুসা অংকের এই সংকেতটি দেখাল সরদার জামাল উদ্দিনকে এবং আমার অনুমান ভুল না হলে এটাই ধন-ভান্ডারে পৌছার সংকেত।
আগ্রহ ভরে দেখল সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
ভাবছিল আহমদ মুসা। ভাবছিল ধনভান্ডার কোথায় লুকানো আছে, এ নিয়ে নয়। ভাবছিল ধনভান্ডার উদ্ধার আগে, না কাতান-টেপাংগো যাওয়া আগে।
‘ভাই আহমদ মুসা, আমরা কিছু বুঝতে পারছি না অংকের সংকেত থেকে। পাথরকে সামনে রেখে আমরা দাঁড়িয়ে আছি পশ্চিমমুখী হয়ে। তাহলে তীরের সংকেত আমাদের যেতে বলছে দক্ষিণ দিকে। কিন্তু এক,দুই, তিন-এর সংকেতটা বুঝছি না।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন।
‘সংকেত দক্ষিণ দিকের নয়। দেখুন অংকগুলোর আগে ‘মিম’ হল ‘মাগরিব’ এর প্রথম বর্ণ। অথএব ইংগিতটা ‘মাগরিব’ বা পশ্চিম দিকে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘এক, দুই, তিন এর ব্যাখ্যা কি?’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘পশ্চিম দিকে পরপর তিনটি স্থান অথবা তিনটি পাহাড়কে নির্দেশ করা হয়েছে। তৃতীয় স্থান বা পাহাড়ের কোথাও লুকানো রয়েছে ধনভান্ডার।’ আহমদ মুসা বলল।
সবাই তাকাল পশ্চিমের পাহাড়ের দিকে। সামনে পাহাড়ের বহু টিলা। তারা যে টিলায় দাঁড়িয়ে সেখান থেকে প্রথম টিলাটা ২০০ গজের মত দূরে হবে। দ্বিতীয় টিলার দূরত্ব হবে ৫০০ গজের মত। আর তৃতীয় টিলাটি কম পক্ষে আধা মাইল দূরে। তৃতীয় টিলাকে টার্গেট ধরলে আধা মাইল দূরের ঐ টিলাতেই তাদের যেতে হবে।
কিন্তু আহমদ মুসার মনের ভেতর থেকে এর পক্ষে কোন সাড়া পেল না।
আহমদ মুসার দুই চোখ ফিরে গেল আবার সেই অংকের সংকেতে আর কোন ইশারা পায় কিনা দেখার জন্যে।
অংক ও তীরের স্থানটাকে আরো ভালো করে মুছে পরিষ্কার করল। তীরের উপর এবার নজর পড়তেই তার চোখে পড়ল, তীরের কিছু উপরে কনুই পর্যন্ত একটা হাত আঁকা। তীরের উপর থেকে ধুলো-বালি সরে যাওয়ায় আহমদ মুসা দেখতে পেল তীরের দন্ডটা প্লেইন নয়, খাঁজ কেটে অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা। আহমদ মুসার চোখ দু’টি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। গুণে দেখল প্রত্যেকটা তীরে ২০টি করে খাঁজ কাটা আছে। তার মানে তৃতীয় স্থানটা এখান থেকে ৬০ হাত দূরে।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘তিনটি তীর ও তিনটি অংকে তিনটি স্থানকে দেখানো হয়েছে। তিনটি স্থান একটি অপরটি থেকে ২০ হাত ব্যবধানে রয়েছে। আপনারা দেখুন তীরের পাশে হাত আঁকা আছে এবং প্রত্যেকটি তীরে ২০টি করে খাঁজ আছে।’
শুনেই সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন ঝুঁকে পড়ে পাথরের উপর চোখ বুলাতে লাগল।
কথা শেষ করেই আহমদ মুসার মনে হলো সংকেতে তিনটা তীর, তিনটা অংক দিয়ে স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে কেন? পশ্চিমে ৬০ গজ বুঝলেই তো হয়ে যেত? হঠাৎ আহমদ মুসার মনে হল, তিনটি স্থানেও ধাঁধাঁ থাকতে পারে। আহমদ মুসা বলল, ‘আমাদেরকে ২০ হাত থেকে প্রথম স্থানে যেতে হবে। ওখানে নিশ্চয় কোন সংকেত পাওয়া যাবে, সেই অনুসারে আমাদের সামনে এগুতে হবে।
গাছওয়ালা পাথরটি উল্টিয়ে আগের অবস্থায় রেখে আহমদ মুসা ঠিক পশ্চিমমুখী হয়ে ২০ হাত এগুলো। ঠিক বিশতম হাতের জায়গায় এলো-মেলো, এবড়ো-থেবড়ো অবস্থায় তিনটি পাথর পাওয়া গেল। তিনটি আরবী ‘এক’ লেখাও পাওয়া গেল। প্রত্যেকটি ‘এক’ অংকের সাথে রয়েছে একটি দিক নির্দেশক তীর। তীরের ফলকের সামনে একটিতে ‘মিম’ অর্থাৎ মাগরিব, ‘দ্বিতীয়টি ‘জিম’ অর্থাৎ জুনব (দক্ষিণ) এবং তৃতীয়টির সামনে ‘শিন’ অর্থাৎ শেমাল (উত্তর)।
আলোচনা করে পশ্চিমে যাবারই সিদ্ধান্ত নিল তারা। কিন্তু হঠাৎ আহমদ মুসার মনে হলো, পশ্চিমে যেতে হবে আগে থেকেই জানা, তাহলে তিন দিকের এই ধাঁধাঁ সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি?
সন্দেহের কথা সবাইকে বলে আহমদ মুসা তিনটি পাথরের সংকেতের মধ্যে আর কোন সংকেত পাওয়া যায় কিন দেখার জন্য তিন পাথরের সংকেত ভালোভাবে পরীক্ষা করতে শুরু করল। এই পরীক্ষা করতে গিয়ে আহমদ মুসা বিস্ময়ের সাথে দেখল উত্তর দিকে ইংগিতকারী পাথরের সংকেতে একটি ‘মিম’ বাড়তি আছে। সে ‘মিম’টি পাথরটির ‘এক’ অংকের নিচে ছোট্ট করে লেখা।
আহমদ মুসা স্মরণ করল সংকেতওয়ালা পাথরটির গাছের ‘মিম’টির কথা। ‘মিম’টি সেখানে কোন অংকের সাথে ছিল না। ছিল প্রথম ‘এক’ অংকের পেছনের তীরের পেছনে। অর্থাৎ ঐ মিমটি সেখানে শুধু দিক জ্ঞাপক ছিল না, ছিল মূল সংকেত। সুতরাং ‘মিম’কেই অনুসরণ করতে হবে।
‘আমাদেরকে উত্তর দিকে বিশ হাত চলতে হবে।’ বলল আহমদ মুসা।
সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের দু’জনেই বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকাল আহমদ মুসার দিকে।
আহমদ মুসা তাদেরকে ‘মিমের’ রহস্য খুলে বলল।
বিস্ময় তাদের চোখ-মুখ থেকে গেল না। তারা অনুসরণ করতে লাগল আহমদ মুসাকে।
বিশতম হাতের স্থানে এবারও পেল তিনটি পাথর। তিনটি পাথরেই ডানাছাড়া পাখির ছবি আঁকা। একটি পাখি পশ্চিমমুখী, একটি উত্তরমুখী, তৃতীয়টি পূর্বমুখী। পশ্চিমমুখী পাখির চোখের নিচে ঠোটের উপর একটি ছোট ‘মিম’ আঁকা।
সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন দু’জনেই মিমটা দেখল।
এবার পশ্চিম দিকে ২০ হাত যাবার পালা। সবাই তাকাল পশ্চিম দিকে। বিশ হাত দূরে এই পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু অংশ। এটাই মূল অংশ পাহাড়ের। ওখানে পৌছার একটাই সংকীর্ণ গিরিপথ। গিরিপথের দুই পাশে গভীর গিরি খাদ।
সেই সংকীর্ণ গিরিপথ ধরে তারা এগুলো। দশ বারো হাত দূরত্বের স্বল্প পথ পেরিয়ে পাহাড়ের গলিতে গিয়ে পৌছল। গলিটির দক্ষিণ দিকে মূল পাহাড়। আর পশ্চিম, উত্তর এবং পূর্ব দিকে পাহাড়ের দেয়াল। পূর্ব দিকের দেয়ালে মাত্র একটা সংকীর্ণ পথ।
এই গলিপথে তারা এগুলো ২০ হাত পূর্ণ করে।
যেখানে গিয়ে দাঁড়াল তারা, তার সামনে দক্ষিণ পাশের পাহাড়ের দেয়ালে এবড়ো-থেবড়ো বড় একটা পাথর। পাথরটি যেন তিলকের মত পাহাড়ের বুকে ঢুকে গেছে। পাথরের এক স্থানে অমসৃণ গায়েই নিচের দিকে মাথা বাঁকানো তীর আঁকা। তীরের পেছনেও মিম আঁকা।
‘আলহামদুলিল্লাহ আমরা পৌছে গেছি। আমি নিশ্চিত এই পাথরটিই ধনভান্ডারের মুখের তিলক। এটা সরালেই সেই ধনভান্ডার উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠল।
আহমদ মুসা বলল, ‘আমার একটা প্রশ্ন। আমরা একটা মিশনে এসেছি। হঠাৎই আমরা একটা রাজভান্ডারের মুখোমুখি হয়েছি, যদি সংকেতের বক্তব্য সত্য হয়। এখন আমাদের কি করণীয়?’
সংগে সংগেই আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন বলে উঠল, ‘মিশনটাই আগে সমাপ্ত করা দরকার। ওটা বেশি জরুরি।’
আহমদ মুসার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, ‘ধন্যবাদ আবদুল কাদের। তোমার কাছে এই উপযুক্ত জবাবই আশা করছিলাম।’
আহমদ মুসা থামতেই সরদার জামাল উদ্দিন বলল, ‘আমিও তোমাদের সাথে একমত। তবে আমরা সংকেত ধরে এত দূর এলাম সেটা কি, তা আমরা এখনো জানি না। আমি মনে করি আমাদের এই জানার কাজটা কমপ্লিট হওয়া দরকার।’
‘আপনার কথাতেও যুক্তি আছে। জনাব। যে অনুসন্ধিৎসায় আমরা এ পর্যন্ত এসেছি, তা শেষ করা দরকার।’
বলে একটু থামল আহমদ মুসা। তারপর আবার শুরু করল, ‘পাথরের উপর ক্যালিগ্রাফী দেখতে পাওয়া এবং সংকেত অনুসরণে এগিয়ে যাবার জন্যে মনে অনুসন্ধিৎসার সৃষ্টি হওয়াকে আমি আল্লাহর ইচ্ছা হিসাবে গ্রহণ করেছি। আমি মনে করছি আল্লাহ আমাদেরকে কোন ধন-ভান্ডার বা অন্য কোন কিছুর কাছে পৌছাতে চান। এই চিন্তাতেই আমি কিছুটা সময় এর পেছনে ব্যয় করেছি। অতএব যা জানার জন্যে এসব করেছি তা জানা প্রয়োজন।’
‘ধন্যবাদ স্যার। এটাই ঠিক সিদ্ধান্ত।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
‘একার পক্ষে সম্ভব নয়, আসুন সবাই মিলে পাথরটাকে সরাতে চেষ্টা করি।’ বলে পাথরের দিকে এগিয়ে গেল আহমদ মুসা।
পাথরটিকে দেকেই আহমদ মুসা বুঝল, পাথরটি লম্বভাবে পাহাড়ের বুকে ঢুকে আছে। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে মসৃণ সমতল একটি পাথর পাহাড়ের উপর বসে আছে। আরও একটু মনোযোগ দিলে দেখা যাবে পাথরটি ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে, যা পাহাড়ের স্বাভাবিক দৃশ্য। কিন্তু দৃষ্টি একটু প্রসারিত করলেই দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র। যে পাথর ভেতর থেকে প্রাকৃতিকভাবে উঠে আসে, তার নিচের দিকটা সরু ও মাথাটা মাটি থেকে উঠেই মোটা হয়ে যায় না।
তিনজনে মিলে পাথরটা সরিয়ে পাশের একটা পাথরে ঠেস দিয়ে রাখল। পাথর সরাতেই তার নিচে দেখা গেল পাথর কুচি ও মাটিতে নিচটা ভর্তি। স্থানটা গোলাকার।
আগ্রহের সাথে সবাই স্থানটা দেখছিল।
জমাট বাঁধা পাথর কুটি ও মাটির মধ্যে দুটো চেইন সবারই এক সাথে নজরে পড়ল। তিনটি হাত এক সাথেই সেদিকে এগুলো।
আহমদ মুসা হাত টেনে নিয়ে বলল, ‘আমার মনে হয় পাথর ও মাটি কোন কনটেইনারে আটকে আছে। দুই চেইন ধরে টানলেই ওটা বেরিয়ে আসবে।’
তাই হলো। আবদুল কাদের ও সরদার জামাল উদ্দিন, দুজন দুই চেইন ধরে কিছুক্ষণ টানাটানি করতেই টবের মত উপরে প্রসারিত ও পেছনটা সরু একটা কনটেইনার বেরিয়ে এল।
কনটেইনার ও চেইন দু’টিই পিতলের তৈরি। কিন্তু বিবর্ণ হয়ে গেছে, চেনার উপায় নেই।
কনটেইনারটি পাশে রেখে দিল তারা।
পাথর মাটির মধ্য থেকৈ কনটেইনারটি উঠিয়ে নেবার পর ভেতরে দেখা গেল গুহার গোলাকার মুখ জুড়ে কালো একটা ঢাকনা গুহা-মুখের ফুট দেড়েক নিচে।
আহমদ মুসা হাত ঢুকিয়ে ঢাকনাটা স্পর্শ করে বুঝল, ওটা ধাতব। ঢাকনার মাঝখানে হাত দিয়ে ধরার একটি রিং পেল আহমদ মুসা। রিং ধরে ঢাকনা উপরে তোলার চেষ্টা করতেই গুটিয়ে ছোট্ট হয়ে গেল।
সংগে সংগেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল সকলের। গোটা গুহা জুড়ে সোনালী সূর্যের ঝিলিক। গুহাভর্তি অঢেল সোনার মোহর।
তিনজনই বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে।
‘আলহামদুলিল্লাহ।’ বলে উঠল আহমদ মুসা।
‘আলহামদুলিল্লাহ।’ বলল সরদার জামাল উদ্দিন ও আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন এক সাথেই।
স্বর্ণ মুদ্রার উপরে আয়তাকার একটা বাক্স দেখতে পেল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসা ঝুঁকে পড়ে বাক্সটি তুলে নিল। বাক্সটি সোনার।
বাক্সটি উল্টিয়ে আহমদ মুসার মনে হলো এয়ারটাইট লক। বাক্সের মূল অংশ ও ঢাকনা মুখে মুখে ভিড়ানো।
খোলার কৌশল খুঁজতে গিয়ে বাক্সের দুই পাশে মূল অংশের উপরে ঢাকনার প্রান্ত ঘেঁষে নিচে বুড়ো আঙুলের ছাপ আঁকা দেখল।
বুঝল এ দুই স্থানে বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিতে বলা হয়েছে।
দুই বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিল আহমদ মুসা। সংগে সংগেই উপরের ঢাকনাটা ছিটকে উপরে উঠে পড়ে গেল।
সকলের আগ্রহী চোখ গিয়ে আছড়ে পড়ল বাক্সের ভেতরে।
বাক্সে তিন খন্ড চামড়ার কাগজ। সুন্দর, মসৃণ। এক সময় সাদা ছিল, এখন বিবর্ণ। তাতে আরবী লেখা। কালো কালিতে।
সকলের চোখেই অপার অনুসন্ধিৎসা। কি লেখা আছে কাগজটিতে!
সবাই সাবধানে হাতে নিয়ে দেখল চামড়ার কাগজ।
সরদার জামাল উদ্দিন বলল, ‘আমরা যাবার আগে কাগজে কি লিখা আছে জেনে যেতে চাই। ভাই আহমদ মুসা তোমার কি মত? তুমি পড়বে কাগজটা?’
হেসে আহমদ মুসা বলল, ‘আমি সেটাই ভাবছি। না পড়ে, না জেনে সামনে যেতে মন সায় দিচ্ছে না।’
‘তাহলে স্যার পড়ুন। নিশ্চয় এতে ধনভান্ডার যিনি রেখেছেন তার পরিচয় ও তাঁর কথা জানা যাবে।’ বলল আবদুল কাদের কামাল উদ্দিন।
পড়তে শুরু করল আহমদ মুসা।

Top