৪৫. বসফরাসের আহ্বান

চ্যাপ্টার

রোমেলী দুর্গে আহমদ মুসার অফিস কক্ষ।
চেয়ারে বসে আছে আহমদ মুসা।
তার সামনে একটা ফাইল খোলা। ফটোসহ বায়োডাটা টাইপের কাগজপত্র সে ফাইলে।
ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে আহমদ মুসা। কিন্তু দৃষ্টি তার ফাইলে নেই। মন-মনোযোগটা হারিয়ে গেছে অন্য কোথাও।
ভেতরে তার এক প্রবল অস্বস্তি এবং তোলপাড়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার, কিন্তু ঘুরে-ফিরে তার সন্দেহের দৃষ্টি সেদিকেই পড়ছে কেন?
আহমদ মুসার অফিস কক্ষে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করল জেনারেল তাহির তারিক এবং তার সাথে ডঃ শেখ আবদুল্লাহ বিন বাজ।
তাদের দু’জনের পায়ের শব্দেও আহমদ মুসার হারিয়ে যাওয়া ভাব কাটল না। মুখ তুলল না আহমদ মুসা। নিশ্চল, নিস্পন্দ সে। যেন ফাইলের দিকে তাকিয়ে পাথর হয়ে গেছে সে।
জেনারেল তাহির তারিকরা যতটা দ্রুত আহমদ মুসার অফিস কক্ষে ঢুকেছিল, ততটাই থমকে গেল তারা আহমদ মুসার নিজেকে হারিয়ে ফেলা তন্ময় ভাব দেখে।
তারা কয়েক মুহূর্ত দাঁড়াল। বুঝল তারা যে, আহমদ মুসা গভীর চিন্তায় নিমগ্ন।
জেনারেল তাহির তারিক তাকাল ডঃ শেখ বাজের দিকে।
ডঃ শেখ বাজ একটু সচল হলো। আর দু’একধাপ এগিয়ে টেবিলের ধারে গিয়ে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম, স্যার।’
চমকে উঠে মুখ তুলল আহমদ মুসা।
সামনে জেনারেল তাহির তারিক এবং ডঃ শেখ বাজকে দেখে উঠে দাঁড়াল। হেসে বলল, ‘স্যরি, আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন। আমি একটু আনমনা হয়ে পড়েছিলাম। প্লিজ, বসুন আপনারা।’
বসল জেনারেল তাহির তারিক ও ডঃ শেখ বাজ।
আহমদ মুসাও বসল।
‘আপনার এমন আপনহারা চেহারা আমি আর কখনও দেখিনি। গত রাতে আপনার উপর দিয়ে যে ধকল গেছে, তাতে আপনি আজ অফিসে না আসলেও পারতেন। আপনার যথেষ্ট বিশ্রাম হচ্ছে না বলে আমি মনে করি।’ বলল জেনারেল তাহির তারিক।
‘না, সেরকম কিছু নয়। আমি কোন ক্লান্তি অনুভব করছি না। আমি আমাদের সমস্যাগুলো নিয়েই ভাবছিলাম।’ আহমদ মুসা বলল।
‘যার মন ক্লান্ত হয় না, তার দেহ ক্লান্ত হওয়ারও সুযোগ পায় না। আপনার মন কখনও ক্লান্ত হবার নয়, আমি জানি খালেদ খাকান। তবু কাজ ও বিশ্রামের একটা অংক আছে, সে অংক মানতে হয় আমাদের। যাক, মিঃ খালেদ খাকান। আমি এখানে আসার আগে টেলিফোন পেলাম হাজী জেনারেল মোস্তফা কামালের। তিনি সাংঘাতিক খুশি। তিনি জানালেন, আপনার অনুমান শতভাগ ঠিক। ঐ পাঁচটি ফিংগার প্রিন্ট আমাদের পাঁচজন গোয়েন্দার। তাদের গলিত দেহাবশেষও পাওয়া গেছে। আর….।’
জেনারেল তাহিরের কথার মাঝখানে আহমদ মুসা বলে উঠল, ‘কোথায় পাওয়া গেছে তাদের দেহাবশেষ?’
‘খাদের ফ্লোরে যে পাথরটা দেখিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন যে, পাথরটা কোন সুড়ঙ্গ বা সিঁড়ি পথের মুখ হতে পারে। ঠিকই পাথরটা সরিয়ে একটা সিঁড়িপথ পাওয়া গেছে। সিঁড়িটা সিনাগগ থেকে বেরুবার একটা গোপন পথ। ঐ সিঁড়ি দিয়ে একটা স্যুয়ারেজ পথও পাওয়া গেছে। সেখানেই পাঁচটি লাশ পাওয়া গেছে।’
একটু থামল জেনারেল তাহির তারিক। বলে উঠল সংগে সংগেই আবার, ‘যা বলছিলাম, সিনাগগ সার্চ করে কিছু মূল্যবান ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সবাই মনে করছে, আপনার দেখা দরকার ওগুলো।’
‘আলহামদুলিল্লাহ্‌। আমি দেখব ওগুলো। আচ্ছা, সিনাগগে যারা মারা গেছে, তাদের পরিচয় পাওয়া গেছে?’ বলল আহমদ মুসা।
‘সে চেষ্টা হচ্ছে। তবে লাশের মধ্যে আপনি যার কথা বলেছিলেন, সেই ডঃ ডেভিড ইয়াহুদের লাশ নেই।’
‘ওদের কথা-বার্তায় শুনেছিলাম যে উনি সিনাগগের বাইরে আছেন, তবে এসেছেন কিংবা এসে পৌঁছেছিল কিনা এটা নিশ্চিত হবার জন্যেই লাশের মধ্যে তাকে সন্ধান করার কথা বলেছিলাম।’ আহমদ মুসা বলল।
‘জনাব খালেদ খাকান, রাতেই প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী আপনার সিনাগগ অপারেশনের রেজাল্টের কথা শুনেছেন। ভোর রাতেই তারা আমাকে টেলিফোন করে তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনাকে জানাতে বলেছেন। আপনি তাদের কল করলে তারা খুশি হবেন। ভোর রাতে টেলিফোন করে আপনাকে কষ্ট দিতে তারা চাননি।’
‘ঠিক আছে, আমি তাদের টেলিফোন করব। কিন্তু আমরা আসলে খুব একটা এগোইনি। ওদের খবর দেবার মতো তেমন কিছু নেই।’ আহমদ মুসা বলল।
‘বলছেন কি আপনি! আমরা গত কয়েক মাসে এক ইঞ্চি এগোতে পারিনি। আপনি মাত্র কয়েক দিনে শুধু ষড়যন্ত্রটাকেই সামনে এনে ফেলা নয়, তাদের উপর আপনি শক্ত আঘাতও করেছেন।’ বলল জেনারেল তাহির তারিক।
‘কিছুটা আমরা এগিয়েছি বটে। কিন্তু তাদের দিকে এগোবার দরজা আমরা পেয়েছিলাম। সেটা আল-আলা সিনাগগ। কিন্তু গত রাতের পর সে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আমি বন্ধ করতে চেয়েছিলাম না, মাত্র একটা গোপন অনুসন্ধানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার যাওয়াটা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় বড় ঘটনা ঘটে গেল এবং সে দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। এখন আমাদের সামনে দু’টি দুর্বল অবলম্বন অবশিষ্ট আছে, সে দু’টা হলো ….।’
বলে হঠাৎ থেমে গেল আহমদ মুসা। তার মনে হলো, সিনাগগে যাবার বিষয়টা এভাবে বলেই জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। সেদিনও তার সিনাগগে যাবার খবরটা জেনারেল তাহির তারিক ও ডঃ শেখ বাজের কাছে আহমদ মুসা বলেছিল। সেভাবে আর কোন কথা বলা যাবে না।
আহমদ মুসাকে হঠাৎ থেমে যেতে দেখে জেনারেল তাহির ও শেখ বাজ উৎসুক হয়ে উঠল। আহমদ মুসাকে খুব চিন্তিত দেখে এ বিষয়ে কিছু না বলে জেনারেল তাহির তারিক জিজ্ঞেস করল, ‘জানা-জানির বিষয়টা কিভাবে ঘটল? ওদের কাছে খবরটা কিভাবে পৌঁছল? আমার কাছে বিষয়টা খুব সাংঘাতিক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তায় কোন ফুটো আছে। এ ফুটো বন্ধ না করলে তো আমরা সামনে এগোতে পারবো না।’
গম্ভীর হয়ে উঠল আহমদ মুসার মুখ, ‘আমি এ বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্যেই আপনাদের ডেকেছি।’
বলে নড়ে-চড়ে বসল আহমদ মুসা। বলল, ‘এ পর্যন্ত আমার মনে হয়, খবর পাচার বা লীক-আউট হওয়ার তিনটি ঘটনা ঘটেছে। আমি আল-আলা পাহাড়ের পুলিশ আর্কাইভসে কি উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম, সেটা শত্রুরা জেনে ফেলে। পরে আমি ডাঃ ইয়াসারের বাসায় যাওয়ার খবরও পাচার হয়ে যায়। তৃতীয় ঘটনা গত রাতে। আমি যে সিনাগগে যাচ্ছি, সেটাও শত্রুদের আগাম জানা হয়ে যায়। এর অর্থ আমাদের অফিসে কোন লিকেজ রয়েছে এবং বাইরের কারো সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে।’ থামল আহমদ মুসা।
চোখে-মুখে উদ্বেগ ফুটে উঠল জেনারেল তাহির তারিক ও ডঃ শেখ বাজ দু’জনেরই।
‘সাংঘাতিক কথা! তাহলে তো আমাদের সব তথ্যই শত্রুরা পেয়ে যাচ্ছে! এমন কি এই কথা-বার্তাও হয় তো!’ বলল ডঃ শেখ বাজ।
‘শেখ বাজ, তোমার শেষ কথাটা আতংকজনক। এতটা সন্দেহ করার কি আছে?’ বলল জেনারেল তাহির তারিক।
‘আমার একথা বলার কারণ হলো, খালেদ খাকান স্যার তথ্য পাচারের যে তিনটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন, সেখানে স্যারের যাওয়ার বিষয়ে আমাদের সাথেই আলাপ হয়েছে। অফিসের আর কেউ এসব বিষয় জানার প্রশ্নই ওঠে না।’ বলল ডঃ শেখ বাজ।
‘বিষয়টা তাহলে তো গুরুতর অবস্থার দিকে টার্ন নিচ্ছে। আমাদেরকে সামনে রেখেই তাহলে সন্দেহের যাত্রা শুরু করতে হবে।’ জেনারেল তাহির তারিক বলল।
‘জেনারেল তাহির তারিক দুইয়ে দুইয়ে চার হওয়ার মতো অংকের কথা বলেছেন। কিন্তু অংক ও ষড়যন্ত্র এক জিনিস নয়। ষড়যন্ত্রের অন্ধকার গলি অংকের নিয়মে চলে না। এখানে যা দৃশ্যমান হয়, বাস্তবতা তার চেয়ে ভিন্ন হয়ে থাকে। আপনাদের দু’জনের সাক্ষাতে যে কথা হয়, তা পাচার হওয়ার উৎস অনেক কিছুই হতে পারে। আমাদের দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ হওয়া দরকার।’ বলল আহমদ মুসা।
‘তাহলে করণীয় বলুন মিঃ খালেদ খাকান।’ জেনারেল তাহির তারিক বলল।
আহমদ মুসা তার ফাইলের তলা থেকে একখণ্ড কাগজ বের করে জেনারেল তাহিরের হাতে তুলে দিয়ে বলল, ‘এই কাজটা এখনি এই মুহূর্তে সম্পন্ন করতে হবে। সেনাবাহিনীর এ বিষয়ক একজন এক্সপার্ট এসেছেন। তিনিই কাজটা করবেন। তার অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ কোন কথা আর বলব না।’
জেনারেল তাহির তারিক আহমদ মুসার দেয়া কাগজখণ্ড তার চোখের সামনে তুলে ধরল। পড়ল, ‘আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ফ্লোরে সবগুলো প্রশাসনিক কক্ষের প্রতিটি ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা, অফিসের জিনিসপত্র সবকিছু ট্রান্সমিশন-সেনসেটিভ স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করে প্রমাণ করতে হবে, অফিসের কোথাও কোন গোপন ট্রান্সমিটার নেই। অনুসন্ধানের এই সময়টা অফিসের সবাইকে তাদের স্ব স্ব জায়গায় ডিউটিরত অবস্থায় থাকতে হবে। এ বিষয়টা লিখে দিলাম এই কারণে যে, শত্রুদের কাছে এ তথ্য যাতে না যায়, আমরা আমাদের অফিসে ট্রান্সমিটার থাকার বিষয় সন্দেহ করেছি এবং তার সন্ধান করছি।’
পড়ে জেনারেল তাহিরের মুখ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, ‘ধন্যবাদ মিঃ খালেদ খাকান। এ বিষয়টি যে আপনার মাথায় এসেছে, এজন্যে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।’
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘কাজটা শেষ হবার আগে আমরা কেউ কথা বলব না জেনারেল তাহির তারিক।’
চমকে উঠল জেনারেল তাহির। বলল, ‘স্যরি, উৎসাহের বশে ভুলে গিয়েছিলাম। সত্যিই স্যরি।’
বলে জেনারেল তাহির তারিক কাগজখণ্ড তুলে দিল ডঃ শেখ বাজের হাতে। শেখ বাজও পড়ল কাগজখণ্ড। তার মুখও আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌, স্যার ঠিক পথে এগোচ্ছেন।’
‘আবার কথা!’ বলল জেনারেল তাহির তারিক ডঃ শেখ বাজকে লক্ষ্য করে।
ডঃ শেখ বাজ জিভ কাটল।
সবাই যে যার টেবিলে চলে গেল।
দু’ঘন্টা ধরে চলল ট্রান্সমিশন-সেনসেটিভ স্ক্যানার (TSS)-এর অনুসন্ধান। TSS যন্ত্রটি ট্রান্সমিশন-সেনসেটিভ ডিটেক্টরের (TSD) উন্নততর সংস্করণ। এই যন্ত্রটি দুই বর্গফুট এরিয়ার মধ্যে আলপিনের আগার চেয়েও সূক্ষ্ম ট্রান্সমিটার যে কোন কভারের মধ্যেই থাক, তা বের করে ফেলতে পারে।
দুই ঘন্টার অনুসন্ধান শেষে অনুসন্ধান টিমের প্রধান কর্নেল জামালী ওনাল আহমদ মুসার কাছে এসে তার হাতে একটা এনভেলাপ তুলে দিয়ে বলল, ‘স্যার, অত্যন্ত পাওয়ারফুল একটা ট্রান্সমিটারের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমার রিপোর্টে তার সব বিবরণ রয়েছে।’
‘ধন্যবাদ’ বলে আহমদ মুসা এনভেলাপটি নিয়ে বলল, ‘প্লিজ কর্নেল, একটু বসুন।’
বসল কর্নেল জামালী ওনাল।
আহমদ মুসা এনভেলাপ খুলে রিপোর্টের উপর চোখ বুলাতে গিয়ে মুখ মলিন হয়ে গেল তার। ডঃ শেখ আবদুল্লাহ বিন বাজের কোট-পিনে ট্রান্সমিটার। তার সন্দেহ তাহলে সত্য প্রমাণ হলো! কিন্তু এই সত্য হওয়াটা খুবই বেদনাদায়ক। ঘরের পরিবেশ বৈরি হলে তার চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কিছু নেই। আহমদ মুসা বলল, ‘কর্নেল, এই ট্রান্সমিটারের মেসেজ কতদূর পৌঁছতে পারে এবং এই মেসেজ একাধিক জন রিসিভ করতে পারে কিনা?’
‘শহরাঞ্চলে এর রেঞ্জ দশ বর্গমাইলের বেশি নয়। কিন্তু শহরের বাইরে এর রেঞ্জ চার গুণ বেশি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এর মেসেজ ট্রান্সমিটটা টার্গেটেড। এর মেসেজ রিসিভ করার জন্যে এর গোপন কোডের ফ্রিকোয়েন্সি জানা থাকা দরকার।’
‘ধন্যবাদ কর্নেল।’ বলল আহমদ মুসা।
‘ধন্যবাদ স্যার।’ বলে উঠে দাঁড়াল কর্নেল জামালী ওনাল।
কর্নেল উঠে যেতেই আহমদ মুসা কর্নেলের দেয়া এনভেলাপ নিয়ে ছুটল জেনারেল তাহির তারিকের কক্ষে।
আহমদ মুসা জেনারেল তাহিরের কক্ষে গিয়ে তাকে এনভেলাপ দিয়ে সবকিছু বলল। সব শুনে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল জেনারেল তাহির তারিকের। বলল ভারি, ভাঙা কণ্ঠে, ‘শেষ পর্যন্ত ডঃ শেখ বাজ এই বিশ্বাসঘাতকতা করল!’
‘না মিঃ জেনারেল তারিক, ডঃ শেখ বাজ নিরপরাধ। ওর ‘কোট-পিন’ যে একটি ট্রান্সমিটার, তা উনি জানেন না, আমি নিশ্চিত।’ আহমদ মুসা বলল।
‘তাহলে?’ জিজ্ঞাসা জেনারেল তাহির তারিকের।
‘বলছি। তার আগে ডঃ শেখ বাজকে এখানে ডাকুন।’
কথা শেষ করে একটু থেমেই আবার বলল, ‘তাকে বলুন, আসার আগে তার কোটটা যেন তিনি খুলে রেখে আসেন।’
‘কেন মিঃ খালেদ খাকান?’ বলল জেনারেল তাহির তারিক।
‘তার কোটে ‘কোট-পিন’ আছে। সেটা থাকলে কোন কথা বলা যাবে না।’
‘বুঝেছি, ধন্যবাদ।’ বলে জেনারেল তাহির ডঃ শেখ বাজকে তার নিজের কক্ষে আসতে বলল এবং বলে দিল, আসার সময় যেন সে তার কোট কক্ষে খুলে রেখে আসে।
মিনিটখানেকের মধ্যেই ডঃ শেখ বাজ জেনারেল তাহিরের কক্ষে এল।
ডঃ শেখ বাজ বসলে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘এক মিনিট, আমি আসছি।’
আহমদ মুসা ঘরের বাইরে এসে সোজা গিয়ে ঢুকল শেখ বাজের কক্ষে। দেখল, ডঃ শেখ বাজের কোট তার হ্যাংগারে টাঙানো এবং কোট-পিনটা জ্বলজ্বল করছে তার কোটে। খুশি হলো আহমদ মুসা।
ফিরে এল সে জেনারেল তাহিরের কক্ষে।
ডঃ শেখ বাজ কোট-পিনটা পকেটে নিয়ে এসেছে কিনা, সেটা নিশ্চিত হবার জন্যেই আহমদ মুসা ডঃ বাজের কক্ষে গিয়েছিল। এটা নিশ্চিত হবার তার প্রয়োজন ছিল দুই কারণে—এক. ডঃ শেখ বাজের নির্দোষিতা সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া, দুই. আরও সাবধানতা অবলম্বন করা যে, কোট-পিনটা তার সাথে ভুলক্রমেও আসেনি।
আহমদ মুসা এলে জেনারেল তাহির তারিক বলল, ‘মিঃ খালেদ খাকান, শুরু করুন।’
‘মিঃ শেখ বাজ, কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করলে তো কিছু মনে করবেন না?’ আহমদ মুসা বলল।
‘স্যার, ব্যক্তিগত কিংবা যে কোন প্রশ্ন করার অধিকার আপনার আছে।’ বলল ডঃ শেখ বাজ।
‘ধন্যবাদ ডঃ শেখ বাজ।’
বলে একটু থামল আহমদ মুসা। তারপর শুরু করল, ‘বিয়ের আগে আপনার স্ত্রীর সাথে প্রথম দেখা আপনার কোথায় হয়?’
‘প্রথম দেখা হয় লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে এক আন্তর্জাতিক ছাত্র-সেমিনারে। তারপর জার্মানিতে আমরা একসাথে পিএইচডি করি।’ বলল ডঃ শেখ বাজ।
‘আপনার স্ত্রীর জন্মস্থান লেবাননের বেকাতে। কখনও আপনি সেখানে গেছেন?’
‘না, যাইনি। এমন কি বিয়ের পর লেবাননেও আর যাওয়া হয়নি।’ ডঃ শেখ বাজ বলল।
‘আপনি কি আপনার স্ত্রীর একাডেমিক রেকর্ডগুলো দেখেছেন?’
‘একসাথে পিএইচডি করার সময় গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট, মার্কসশীট দেখেছি। অন্যকিছু দেখার কখনও প্রয়োজন হয়নি।’ বলল ডঃ শেখ বাজ।
‘বৈরুতে হায়ার স্কুলে ঢোকার সময় আপনার স্ত্রী শুধু নাম নয়, গোটা একাডেমিক রেকর্ড বদলে ফেলেন, এটা কি আপনি জানেন?’
বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখে ডঃ শেখ বাজ তাকাল আহমদ মুসার দিকে। বলল প্রতিবাদী কণ্ঠে, ‘এটা কি ঠিক স্যার?’
‘দুঃখিত ডঃ শেখ বাজ। আমি যা বলেছি, তা সম্পূর্ণ সত্য। শুধু তাই নয়, আপনার স্ত্রী বেকাতে এক লেবাননী ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক স্কুল তিনি শেষ করেন ইসরাইলে। তারপর ফিরে আসেন লেবাননে। তখন তার নাম ছিল আলিশা দানিয়েল। লেবাননে তিনি ফেরার পর ‘আয়েশা আজিমা’ নামে একজন প্রাথমিক স্কুল পাস ছাত্রী রহস্যজনকভাবে খুন হয়। অন্যদিকে এই ছাত্রীর গোটা পরিবারের সবাই এক বিস্ফোরণে নিহত হয়। আয়েশা আজিমা খুন হওয়ার পর আলিশা দানিয়েল হয়ে যান আয়েশা আজিমা। এই নাম ও আয়েশা আজিমার একাডেমিক রেকর্ড নিয়ে তিনি ভর্তি হন বৈরুতের হায়ার স্কুলে। ফিলিস্তিনের গোয়েন্দা বিভাগের অনুরোধে লেবাননের গোয়েন্দা বিভাগ অনুসন্ধান করে এ তথ্য জানিয়েছে। আমি ফিলিস্তিন সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম এ তথ্য জানার জন্যে।’ থামল আহমদ মুসা।
ডঃ শেখ বাজ নির্বাক, নিস্তব্ধ। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আহমদ মুসার দিকে। তার চোখে-মুখে অসীম বিস্ময়। এক অসহায় ভাব ফুটে উঠেছে তার চেহারায়।
আহমদ মুসা তার একটি হাত ডঃ শেখ বাজের কাঁধে রাখল। সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘মন শক্ত করুন ডঃ শেখ বাজ। আপনার স্ত্রী গুরুতর কাজে আপনার অজান্তে আপনাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন।’
আহমদ মুসা একটু থামল। থেমেই আবার বলে উঠল, ‘আপনি আপনার ‘কোট-পিন’টা কোথায় পেয়েছিলেন ডঃ বাজ?’
‘আমার স্ত্রী সংগ্রহ করেন। তিনিই আমাকে এটা ব্যবহারের জন্যে দেন।’ বলল শুকনো কণ্ঠে ডঃ শেখ বাজ।
‘আপনি জানেন না শেখ বাজ, আপনার কোট-পিনটা একটা ট্রান্সমিটার। অফিসে আপনি যত কথা বলতেন, যত কথা আপনাকে বলা হতো, ঐ ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সব চলে যেত আপনার স্ত্রীর কাছে রক্ষিত গ্রাহক যন্ত্রে। আপনার স্ত্রী সেগুলো সংগে সংগেই জানিয়ে দিতেন ষড়যন্ত্রকারী……।’
আহমদ মুসার কথায় বাঁধা দিয়ে আর্তকণ্ঠে বলে উঠল ডঃ শেখ বিন বাজ, ‘আর বলবেন না স্যার। আমি সহ্য করতে পারছি না। আমার বুক ভেঙে যাচ্ছে। আমি সব বুঝতে পারছি। কেন সে কোট-পিনটার প্রতি এত লক্ষ্য রাখত, কেন সে প্রতিদিন কোটে আমার কোট-পিনটাকে ঠিকঠাক করে দিত। আমি ভাবতাম, কোট-পিনে যেহেতু ‘কাবা’ শরীফের প্রতিকৃতি আছে, তাই এর প্রতি তার এই যত্ন।’
থেমে গেল ডঃ শেখ বাজ। কান্নায় রুদ্ধ হয়ে গেল তার কণ্ঠ।
সান্ত্বনা দেবার জন্যে ডঃ শেখ বাজের কাঁধে হাত রাখল আহমদ মুসা।
এই সান্ত্বনায় সে আরও ভেঙে পড়ল। তার দু’চোখ থেকে নেমে এল অশ্রুর বন্যা। দু’হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে।
জেনারেল তাহির তারিক তার চেয়ার থেকে উঠে এল এবং ডঃ শেখ বাজের পাশে বসল। কয়েকখণ্ড টিস্যু পেপার তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘চোখ মোছ ডঃ শেখ বাজ। তুমি কি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই তুখোড় ছাত্রনেতা নও, যে জাতির কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করার শপথ নিয়েছিল! তুমি কি সেই ডঃ শেখ বাজ নও, যে এই গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাকরিকে যুদ্ধ হিসেবে নিয়েছিল! তুমি বরং এখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর যে, তোমার প্রতি, তোমার জাতির প্রতি, মানবতার প্রতি তোমার স্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতা আল্লাহ যথাসময়ে ধরিয়ে দিয়েছেন আরও কোন বড় ক্ষতি হবার আগেই।’
ডঃ শেখ বাজ চোখ মুছল। বলল, ‘আমার কষ্ট অন্য জায়গায় স্যার। আয়েশা আজিমা আমার এত কাছের হয়েও এত দূর হতে পারল কি করে! সে তো মানুষ।। হৃদয় ছাড়া তো কোন মানুষ নেই! সেই হৃদয়কে পদদলিত করে কোন স্বার্থে সে আমার সাথে, আমার পরিবারের সাথে এই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারল!’ বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ল সে।
‘তোমার এই কষ্ট স্বাভাবিক ডঃ বাজ। কিন্তু সে তার হৃদয়বৃত্তি, প্রেম-ভালোবাসা এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্বের চাইতে তার জাতিগত পরিচয় ও দায়িত্বকেই বড় করে দেখেছে। তোমাকেও শক্ত হতে হবে শেখ বাজ। ন্যায়ের প্রতি তোমার দায়িত্বকেও সবার উপরে স্থান দিতে হবে তোমাকে। তোমার ক্ষেত্রে যা ঘটল, ষড়যন্ত্রের রঙ্গমঞ্চে এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে।’ বলল আহমদ মুসা।
চোখ মুছে সোজা হয়ে বসল ডঃ শেখ বাজ। সে বলল জেনারেল তাহিরকে লক্ষ্য করে, ‘স্যার, আয়েশা আজিমা এখন বাড়িতে আছে। তিনটায় যাবে সে আমার মেয়েকে আমার বোনের বাড়ি থেকে আনতে। তার আগেই তাকে আপনারা গ্রেফতার করুন।’
থামল। একটা দম নিল। তারপর সে হাতজোড় করে বলল, ‘আমি আপনাদের সাথে যেতে পারবো না। আপনারাই তাকে গ্রেফতার করে আনুন। আমি তার দিকে চাইতে পারবো না। আমি সহ্য করতে পারবো না অসহ্য সেই দৃশ্যটাকে। আমার এই দুর্বলতাকে আপনারা ক্ষমা করুন।’ আবার কান্নায় ভেঙে পড়ল ডঃ শেখ বাজ।
আহমদ মুসা ও জেনারেল তাহির তারিক দু’জনেই দু’দিক থেকে ডঃ শেখ বাজের পিঠে সান্ত্বনার হাত রাখল। জেনারেল তাহির তারিক বলল, ‘ঠিক আছে ডঃ বাজ, তুমি যেভাবে চাচ্ছ, সেভাবেই হবে। তবে আমরা তোমার বাসায় যাব আরও ঘণ্টা দুয়েক পর। এ দুই ঘণ্টা আমাদের ব্যস্ত থাকতে হবে। আজ টেস্ট ল্যাবে আমাদের একটা আবিষ্কারের ল্যাব-প্রদর্শনী হবে। সেখানে ওআইসি চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি জেনারেল, তুর্কি প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী আসছেন।’
থামল জেনারেল তারিক।
‘কিন্তু তাকে ধরাটাই আপনাদের এই মুহূর্তের প্রথম প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। তাকে ধরলে ষড়যন্ত্রটাকেও আপনারা ধরতে পারবেন। আমি জানি না, আমাদের এই চিন্তা-ভাবনা সে জানতে পারছে কিনা। কিন্তু তাকে কোনভাবেই পালাবার সুযোগ দেয়া উচিত নয়।’ বলল ডঃ শেখ বাজ শুকনো, ভাংগা কণ্ঠে।
শুনেই জেনারেল তাহির তারিক একবার আহমদ মুসার দিকে চেয়ে মোবাইল তুলে একটা কল করল। কল পেয়ে সালাম বিনিময়ের পর বলল, ‘স্যার, ল্যাব-প্রদর্শনীটা দু’ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে হবে। একটা ইমারজেন্সি কাজ দেখা দিয়েছে। মিঃ খালেদ খাকানকে এখনি বেরুতে হবে। আমি তার সাথে যেতে পারি। মাননীয় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এই ডিসপ্লেতে খালেদ খাকানের উপস্থিত থাকা খুব জরুরি। আপনি যদি যোগাযোগ করে একটা সিদ্ধান্ত নেন ভালো হয়।’
বলে ওপারের কথা শুনে টেলিফোন রেখে দিল জেনারেল তাহির তারিক। বলল, ‘ডক্টর বিজ্ঞানী আমির আবদুল্লাহ আন্দালুসী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হাউজের সাথে যোগাযোগ করে এখনি জানাবেন।’
‘প্রদর্শনীতে আজ কোন বিষয়টা দেখানো হবে?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা।
‘আমাদের ‘সোর্ড’-এর ফোটন-নেট যে কোন উড়ন্ত বস্তুকে আটকে আরো উপরে সরিয়ে নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। আমাদের বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেছিল এই বিস্ফোরণটা পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডলের বাইরে নিয়ে গিয়ে করার। সে ক্ষেত্রে আমরা সফল হয়েছি। আজ সেটাই ল্যাব-ডিসপ্লেতে দেখানো হবে।’ বলল জেনারেল তাহির।
‘শুরু থেকেই আমার একটা জিজ্ঞাসা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘এসডিআই’ এবং আমাদের ‘সোর্ড’-এ দু’য়ের পার্থক্য কি? দু’টিই তো উড়ে আসা অস্ত্র ধ্বংস করে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘দু’য়ের মধ্যে যোজন যোজন পার্থক্য। মার্কিন ‘এসডিআই’ হলো কাউন্টার ক্ষেপণাস্ত্র যা আক্রমণকারী ক্ষেপণাস্ত্রকে পূর্বাহ্নে আঘাত করে ধ্বংস করে। আর আমাদের ‘সোর্ড’ কোন অস্ত্র নয়। এটা উড়ন্ত সকল বস্তুকে গ্রেফতার করার একটা ব্যবস্থা। ‘সোর্ড’-এর ফোটন-নেট উড়ন্ত বস্তুকে বন্দী করে মানুষের পৃথিবী, পৃথিবীর আবহাওয়া থেকে অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে ফোটন-চুম্বক ডেটোনেটরের মাধ্যমে উড়ন্ত অস্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিস্ফোরণ ঘটায়। ‘সোর্ড’-এর এই কীর্তিটা আজ নিজ চোখে দেখবেন ‘সোর্ড’-এর ল্যাব-ডিসপ্লের সময়।’
টেলিফোন বেজে উঠল জেনারেল তাহির তারিকের।
‘নিশ্চয় ডক্টর আন্দালুসী টেলিফোন করেছেন’ বলে টেলিফোন ধরল জেনারেল তাহির তারিক।
টেলিফোনে কথা বলার পর রিসিভার রাখতে রাখতে বলল, ‘হ্যাঁ, ল্যাব-ডিসপ্লে দু’ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, খালেদ খাকান চাইলে দু’ঘণ্টা কেন, দু’দিন পেছাতেও আমাদের আপত্তি নেই। তাহলে তো হয়ে গেল। এখন মিঃ খালেদ খাকান, বলুন কি করতে হবে আমাদের? আমরা ডক্টর শেখ বাজের কোট-পিনটা এখন নিয়ে নেব এভিডেন্স হিসেবে?’
‘এখন নয়। এখন পিন ট্রান্সমিশন বন্ধ রাখা যাবে না। ‘কোট-পিন’ ধরা পড়েছে সন্দেহ হলে ঘটনা ভিন্ন দিকে যেতে পারে। ডঃ শেখ বাজ এখন কোট-পিন সমেত কোট পরে স্বাভাবিকভাবে অফিস করবেন। আমার মনে হয় ডঃ বাজ, আপনি আইটি ইঞ্জিনিয়ার ইসমত কামালকে সাথে নিয়ে গত মাসের ডোরভিউ-এর মনিটরিং রিপোর্ট তৈরি করে ফেলুন।’ বলে আহমদ মুসা ইন্টারকমে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিল ইসমত কামালকে এবং নির্দেশ দিল এখনি ডঃ শেখ বাজের কক্ষে আসতে।
‘ধন্যবাদ’ বলে উঠে দাঁড়াল ডঃ শেখ বাজ। বলল, ‘স্যার, ওদিকে দেখছি। আই উইশ ইউ অল গুডলাক, স্যার।’ ভারি কণ্ঠ ডঃ বাজের। বেরিয়ে গেল সে ঘর থেকে।
‘খুব ভালো ছেলে। অসহনীয় এক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ল। কাজ যাই হোক, ওকে সাথে নিয়ে ব্যস্ত রাখার ব্যবস্থা করে গেলাম।’ বলল আহমদ মুসা। উঠে দাঁড়াল আহমদ মুসা।
উঠে দাঁড়াল জেনারেল তাহির তারিকও।
‘জেনারেল, আপনি হাজী মোস্তফা কামালকে বলুন আমাদের পুলিশী সাহায্য দরকার। কিন্তু পুলিশ যেন আমরা পৌঁছার পরে পৌঁছে।’
মনে মনে বলল আহমদ মুসা, এখন আয়েশা আজিমাই আমাদের প্রধান দরজা লক্ষ্যে পৌঁছার। তাকে হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না। ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও দরজা হতে পারেন, আয়েশা আজিমার পরেই তার পালা আসবে। ‘থ্রী জিরো’র কাছে পৌঁছার জন্যে তার বাড়তি হাতিয়ার সাবাতিনি ইয়াসার। কিন্তু তাকে নিয়ে বেশি দূর যাওয়া যাবে না।
‘কিছু ভাবছেন আহমদ মুসা?’ বলল জেনারেল তাহির তারিক।
‘ভাবছি থ্রী জিরো’র ষড়যন্ত্রের কথা। হিসেব কষলে খুব একটা এগোতে পারিনি আমরা। কতগুলো বিকল্প নিয়ে তারা এগোচ্ছে, বিস্তারিত না জানলে প্রতিরোধ দাঁড় করানো যাবে কোন পথে? চলুন, আয়েশা আজিমাকে হাতে পাওয়ার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।’
‘চলুন।’ বলল জেনারেল তাহির তারিক।

সাইমুম সিরিজের পরবর্তী বই
‘রোমেলী দুর্গে’

Top