৫. রক্তাক্ত পামির

চ্যাপ্টার

মস্কো শহর থেকে তিন মাইল উত্তরে মস্কোভা নদীর একটা দ্বীপে উঁচু প্রাচীর ঘেরা বহুতল বিশিষ্ট বিশাল বিশাল এক বাড়ী। বাড়ীর প্রধান ফটকে ছোট্ট এটা সাইন বোর্ড। অনুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়য় মস্কোভা স্কুল অব রিহাবিলেটেশন প্রোগ্রাম। আসলে এটা একটা বন্দী শিবির। একটু ভিন্ন প্রকৃতির। পার্টির যেই সমস্ত লোক যারা প্রতিভাবান, বয়সে কম, কিন্তু আবেগ তাড়িত হয়ে কিংবা প্ররোচণায় পড়ে, পার্টি লাইন থেকে বাইরে গেছে, তাদেরকে কম্যুনিস্ট সরকার এই বন্দী শিবিরে রাখে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এই সময়ের মাপটা সকলের জন্য এক রকমের নয়। কারো পাঁচ, কারো দশ বছর ইত্যাদি। কেউ সংশোধনের বাইরে বিবেচিত হলে সে হারিয়ে যায় চিরতরে। অর্থ্যাৎ, যারা বন্দী হয়ে এখানে আসে তাদেরকে হয় কম্যুনিস্ট ব্যবস্থার আনুগত্য, নয়তো মৃত্যু -এই দুটোর মধ্যে একটা বেছে নিতে হয়।
দ্বীপটির চার দিক ঘিরেই পানি। মস্কোভা নদীর ধার ঘেঁষে একটা সড়ক মস্কো নগরী থেকে বের হয়ে এই পানির ধার পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে। রাস্তাটা সাধারণের জন্য নয়। আসলে কম্যুনিস্ট পার্টি এবং সরকারের উচ্চ পদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য যে অভিজাত এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে নগরীর উত্তর অংশে, সেখান থেকেই রাস্তাটা বেরিয়ে এসেছে। সুতরাং সাধারণ নাগরিকদের এদিকে আসার কোন সুযোগই নেই। বছরের অধিকাংশ সময়ই মস্কোভা নদীতে বরফ জমে থাকে। তখন নিরাপত্তা রক্ষীরা বিশেষ ধরনের গাড়ীতেই দ্বীপের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। অন্য সময় বোট ব্যবহার হয়।
দ্বীপের সেই বাড়ীটির প্রধান ফটকে ইস্পাতের বিশাল গেট। এ গেট দিয়ে বড় বড় গাড়ী অনায়াসে ঢুকে যায়। গেট পেরুলেই যে প্যাসেজ তার দু’পাশে অনেক ঘর। এগুলো পেরুলে আরেকটি ফটক। এ ফটক পার হলে একটা প্রাচীর ঘেরা প্যাসেজ হয়ে বাড়ীর অভ্যন্তরে বিশাল কারখানা কমপ্লেক্সে গিয়ে পৌছা যায়।
কারখানা কমপ্লেক্সটি একতলা। অনেক হলরুম এবং শতশত কক্ষ আছে এখানে। বন্দীরা সারাদিন এখানে কাজ করে, বিচিত্র সব কাজ। বন্দীদের অপরাধ ও শ্রেণী হিসেবেই তাদের কাজ নির্ধারিত হয়। এ কারখানা কমপ্রেক্সের উত্তর পাশের অংশে পুরুষদের বাস এবং দক্ষিণ অংশ মেয়েদের।
কারখানা কমপ্লেক্সের দর্শন বিভাগের একটি ছোট ঘর। ঘরে ৩টি টেবিল। ২টি টেবিলে দু’জন মেয়ে বসে। মাঝের টেবিলে আয়েশা আলিয়েভা। লোহার ছোট চেয়ারে বসে কাজ করছে সে। টেবিলে মার্কস ও লেনিনের কয়েকটা বড় বড় ভলিয়্যুম।
আয়েশা আলিয়েভার দায়িত্ব হলো তাদের ওঅর্কস-এর উপর একটা ক্রনোলোজিক্যাল কমেন্ট্রি তৈরী করা।
প্রতিদিনের জন্য পাতা সংখ্যা বরাদ্দ আছে। কম হলে শাস্তি। শাস্তির মধ্যে সর্বনিম্ন হলো খাবার বন্ধ হওয়া, শীতের কম্বল না পাওয়া, কাজের টেবিলে বসার চেয়ার না মেলা ইত্যাদি।
লিখছিল আয়েশা আলিয়েভা। ৭দিন পর পর এসে দায়িত্বশীল অফিসার কাজ নিয়ে যায়, কাজের তদারকি করে আজকে সেই সপ্তম দিন। কিন্তু ৭দিনে যে কাজ হওয়া উচিত সে কাজ হয়নি আয়েশা আলিয়েভার।
লিখতে লিখতে আয়েশা আলিয়েভা একটু থামল। কি ভাবতে চেষ্টা করল। তারপর কলমটা ছুঁড়ে ফেলে দিল আয়েশা আলিয়েভা। কি লিখবে সে, লেখা তার আসেনা। যে মতবাদ তার কাছে পঁচা, দুর্গন্ধযুক্ত, তার উপর রং চড়াবে সে কেমন করে!
আলিয়েভার বাম পাশের টেবিলে বসেছিল এক মধ্য বয়সী মহিলা ডাঃ নাতালোভা। মস্কোর লমুম্বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপিকা। ১৭বছর অধ্যাপনা করার পর সে এখন বলছে, মানুষ যেমন সত্য, তার ধর্ম বিশ্বাস তেমনি সত্য। ছাত্রদের সে বলেছে, এ ধর্ম বিশ্বাস থেকে মানুষকে মুক্ত করার চিন্তা অবাস্তব। আমরা এটা শত বছরের চেষ্টাতেও পারিনি। আমরা মানুষকে বেথেলহামে যেতে দিচ্ছিনা বটে, কিন্তু লেনিনের মাযারকেই তারা বেথেলহাম বানিয়ে নিয়েছে। এই বিশ্বাসই নাতালোভার অপরাধ। এই অপরাধেই তাকে আসতে হয়েছে এই বন্দী শিবিরে। ডারউইন এবং মার্কসীয় দর্শনের অনুসরণে মানুষের অলীক বিশ্বাসের ক্রমঃবিবর্তনের উপর গবেষণা করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নাতালোভার উপর।
আলিয়েভার কলম গড়িয়ে পড়ার শব্দে ফিরে তাকাল নাতালোভা। আলিয়েভার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু ভাবল সে। তারপর উঠে দাঁড়িযে মেঝে থেকে কলম তুলে নিয়ে আলিয়েভার দিকে বাড়িয়ে বলল নাও, পাগলামী করোনা।
-পাগলামী নয়, আমি আর পারছি না খালাম্মা।
-না, পারতে হবে, বাঁচতে হবে তোকে।
-না, এমন করে বাঁচতে চাই না, মন আমার মরে যাচ্ছে। এই জুলুমে আয়েশা আলিয়েভার চোখে পানি টলমল করে উঠল। নাতালোভার একটা মেয়ে আছে আয়েশা আলিয়েভার বয়সের। আয়েশার মধ্যে দিয়ে নাতালোভা যেন তার সেই মেয়ের চোখের পানি দেখতে পেল। মাতৃমন উথলে উঠল তার। নাতালোভা আয়েশা আলিয়েভার মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে বলল, তুই ভুল বলছিস আলিয়েভা। কোন বিশ্বাসীর মন কখনও মরে না, কেউ মারতে পারে নারে। অত্যাচার, জুলুম বিশ্বাসের আগুনকে প্রজ্জ্বলিতই করে বেশী।
থামল নাতালোভা। তারপর কলমটা আয়েশা আলিয়েভার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, মন বিশ্বাসের শক্তিতে বাঁচে, কিন্তু দেহকে বাঁচাবার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। তুই দেহের উপর অনেক জুলুম করেছিস, আর নয়। একটু থেমে নাতালোভা বলল, তোর ডান পাশের তানিয়া মেয়েটা কয়দিন আসছেনা কোথায় গেছে বলতে পারিস?
আয়েশা আলিয়েভা মুখ তুলে নাতালোভার দিকে তাকিয়ে বলল, না, খালাম্মা।
-যেখানে গেলে মানুষ আর কোনদিন ফেরেনা, তানিয়া এখন সে জগতে। ল্যাটভিয়ার ঐ মেয়েটা তোর মতই জেদী ছিল।
নাতালোভার স্বরটা ভারী। চোখের কোণ তার ভিজে উঠেছে। আয়েশা আলিয়েভা উঠে দাঁড়াল। নাতালোভার একটা হাত ধরে সে বলল, তুমি ভেবনা খালাম্মা, তানিয়া বেঁচেছে।
হঠাৎ নাতালোভা গম্ভীর হলো। আয়েশা আলিয়েভার চোখে চোখে রেখে বলল, সবাই এভাবে পালিয়ে বাঁচতে চাইলে দেশকে বাঁচাবে কে?
আয়েশা আলিয়েভা বিস্মিত হলো। বিষ্ময়ভরা চোখে নাতালোভার দিকে তাকিয়ে রইল। একি রূপ তার খালাম্মার।
তারপর ধীর কণ্ঠে বলল, দেশকে বাঁচাবার এত বড় চিন্তা তুমি করো খালাম্মা?
-কেন আমি দেশের মানুষ নই? জাতির একজন সদস্য নই?
-কিন্তু তানিয়া, আমরা আমাদের দুর্বল হাতে কি পারতাম, আর কি পারব খালাম্মা?
-কোন হাতই দুর্বল নয়। লেনিনের কাছে বিশ্বাসের শক্তি ছিলনা বলে ষড়যন্ত্র, শঠতা ও জোচ্চুরীর মাধ্যমে জনগণকে তার হাত করতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের বিশ্বাসের শক্তি আছে বলে আমাদের তার প্রয়োজন হবে না। রাশিয়ার ধর্মবিশ্বাস বঞ্চিত বুভুক্ষু জনগণকে বিশ্বাসের শক্তিই সংগঠিত করবে।
বিস্ময় বিস্ফোরিত চোখে আয়েশা আলিযেভা তাকিয়েছিল নাতালোভার দিকে।
নাতালোভা একটু থামর। তারপর কণ্ঠটা আরেকটু নামিয়ে ফিস ফিস করে বলল, আমি জানি, তোদের মধ্য এশিয়া জেগেছে, এই জাগরণ ক্ষীয়মান কম্যুনিষ্ট শক্তি আর রোধ করতে পারবেনা। তোদের জাগরণ ধর্মভীরু রুশদেরও জাগাবে। তাদের অন্তরে দগদগে আগুন, অনুকূল বাতাস পেলেই তা জ্বলে উঠে কম্যুনিষ্টদের ঘুনে ধরা প্রাসাদ পুড়িয়ে ছাড়বে।
একটু হাসল নাতালোভা। তারপর বলল, লেনিনের বিপ্লবে সুযোগ সন্ধানী বুদ্ধিজীবীরা শ্রমিকদের ব্যবহার করেছিল। আর সামনের বিশ্বাস অর্থাৎ ধর্ম শক্তির বিপ্লবে দরিদ্র, বঞ্চিত, শোষিত কৃষক শ্রমিকরা সামনে থাকবে, আর সুবিধাভোগী বুদ্ধিজীবীরা বাধ্য হয়েই তাদের পিছনে এসে কোরাস তুলবে।
নাতালোভা ও আয়েশা আলিয়েভা কেউই টের পায়নি রুম সুপারভাইজার গাব্রিয়ালা কখন এসে দাঁড়িয়েছে।
-ও এইভাবে সময় চুরি করা হচ্ছে। যেন হুংকার দিয়ে উঠলো গাব্রিয়ালার পুরুষালী কণ্ঠ।
গাব্রিয়ালা রুমে ঢুকে দু’জনার টেবিল থেকে দু’টি ডিউটি চার্ট তুলে নিল। তারপর আজকের নরমাল ডিউটির সাথে আরও এক ঘণ্টা যুক্ত করে চার্ট ফেরত দিল। অর্থাৎ নাতালোভা ও আয়েশা আলিয়েভাকে আজ ছুটির পরও এক ঘণ্টা করে বেশী কাজ করতে হবে। আর এই এক ঘণ্টা বেশী কাজ করার কারণে ঠিক সময়ে খেতে যেতে পারবেনা। তার ফলে আজকের রাতে তাদের ভাগ্যে খাবার নাও জুটতে পারে।
গাব্রিয়ালা আয়েশা আলিয়েভার ডান পাশের টেবিল থেকে সব বই ও কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে গেল। ফিরে এল কয়েক মিনিট পরেই। হাতে লাল নতুন একটি ফাইল এবং একটি ডিউটি চার্ট। ওগুলো টেবিলে রেখে সে বেরিয়ে গেল। আয়েশা আলিয়েভা নাতালোভার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। নাতালোভা বলল, আর একজন কেউ আসছে। অল্পক্ষন পরেই ঘরে প্রবেশ করল ষ্টেশন ডিরেক্টর ভ্লাদিমির জোসেফ। তার পেছনে পেছনে একটি মেয়ে। ঘাড় ফিরিয়ে চকিতে একটু তাকিয়েই নাতালোভা ও আয়েশা আলিয়েভা মনোযোগ দিল টেবিলে। এখানকার আইনে অন্য কেউ, অন্য কিছুর দিকে নজর দেয়া নিষিদ্ধ। পিছনের মেয়েটিকে দেখে ধক করে উঠল আয়েশা আলিযেভার বুক। যতটুকু দেখেছে, তাতে মেয়েটি তাদের তুর্কিস্তানের।
ষ্টেশন ডিরেক্টর সবাইকে যেমন বলে সেই রুটিন নির্দেশনামা দিয়ে গেল মেয়েটিকে। সবশেষে বলল, সবাইকে যেমন বলেছে। তোমার মুক্তি নির্ভর করছে তোমার এই টেবিলের কাজের উপর।
বেরিয়ে গেল ষ্টেশন ডিরেক্টর। ধীরে ধীরে মুখ তুলল আয়েশা আলিয়েভা। তাকাল মেয়েটির দিকে। মাথা নিচু করে মূর্তির মত বসে আছে মেয়েটি। বাম পাশ থেকে নাতালোভা ফিস ফিস করে আলিয়েভাকে বলল, তোর দেশী। কথা বল। আহা বেচারী!
মেয়েটা এদিকে তাকাচ্ছেই না। অবশেষে আয়েশা আলিয়েভা তাকে লক্ষ্য করে বলল, এই যে।
মেয়েটা মুখ ঘুরাল। তার সাথে চোখাচোখি হল আলিয়েভার। মেয়েটার চোখে পানি। কাঁদছে মেয়েটা।
-আমিও কেঁদেছি, আপনাকে কাঁদতে নিষেধ করব না। বলল আয়েশা আলিয়েভা।
মেয়েটা একবার মুখ তুলে পরিপূর্ণভাবে তাকাল আয়েশা আলিয়েভার দিকে। মনে হল, একজন অবলম্বন খুঁজে পাওয়ার স্বস্তি তার দৃষ্টিতে।
আয়েশা আলিয়েভা নাতালোভাকে দেখিয়ে বলল, ইনি আমাদের খালাম্মা অধ্যাপিকা নাতালোভা। তারপর একটু থেমে বলল, তোমার নাম কি?
-রোকাইয়েভা।
-মুসলিম তুমি? আনন্দ ঝরে পড়ল আলিয়েভার কন্ঠে।
-আপনি? জিজ্ঞেস করল রোকাইয়েভা।
-আমি আয়েশা আলিয়েভা।
-কোন আয়েশা আলিয়েভা? আপনার বাড়ী কোথায়?
-তাসখন্দ।
আলিয়েভার কথা শুনে উঠে দাড়াল রোকাইয়েভা। সামনে এসে দাড়াল সে আলিয়েভার। বলল, আপনি উমর জামিলভকে চেনেন?
-চিনি। তিনি আমার স্যার, বস ছিলেন।
এক ধরণের আবেগ বিহ্বলতায় অভিভুত হয়ে পড়েছে যেন রোকাইয়েভা। কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলল, আমি তার বোন।
রোকাইয়েভার কথা শুনে চমকে উঠল আয়েশা আলিয়েভা।উঠে দাড়াল সে। বলল,তুমি এখানে!!! স্যার কোথায়?
কোন উত্তর দিতে পারল না রোকাইয়েভা। ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। আয়েশা আলিয়েভা কাছে টেনে নিল রোকাইয়েভাকে। সান্ত্বনা দিয়ে বলল, কেঁদোনা বোন। বলতে হবে না বুঝেছি। বোনকে যখন বন্দী শিবিরে পাঠিয়েছে, তখন সরকারের উচ্চ দায়িত্বশীল ভাই যে কোথায় তা আর বলতে হয় না। কিন্তু, কি অপরাধ ছিল তার?
-তিনি নাকি বিদ্রোহীদের গোপণে সহায়তা করছিলেন।
আনন্দে আয়েশা আলিয়েভার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, আমি জানতাম রোকাইয়েভা, স্যার আমাদের জাতিসত্ত্বাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন।
একটু থেমে বলল, কেঁদোনা বোন, তিনি আমার বস ছিলেন, আমি গর্ববোধ করছি।
নাতালোভা দরজায় পাহারা দিচ্ছিল রুম সুপার ভাইজারকে। শ্রম সময় আজ এক ঘন্টা বেড়েছে, আর যাতে না বাড়ে। আয়েশা আলিয়েভা থামলে রোকাইয়েভা কিছু বলতে যাচ্ছিল। হাত দিয়ে থামতে ইশারা করে নাতালোভা তাড়াতাড়ি এসে চেয়ারে বসল। সেই সাথে আলিয়েভা এবং রোকাইয়েভাও। প্রায় সাথে সাথেই রুম সুপার ভাইজার এসে দরজায় দাঁড়াল।

মস্কোভা বন্দী শিবিরের তৃতীয় তলার ডাইনিং রুম। বন্দী শিবিরের প্রত্যেক তলায় আলাদা আলাদা ডাইনিং রুম রয়েছে। প্রত্যেক তলায় প্রায় দু’শ করে মেয়ে আছে। তাদের একসাথে একত্রিত হবার জায়গা এই ডাইনিং রুম। রাতের খাবারের জন্য ওদের এক ঘন্টা সময় থাকে। খেতে সময় লাগে ১৫ মিনিট, অবশিষ্ট্য সময় তারা একত্রে গল্প করে কাটায়।
কাউন্টার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নিতে হয়। খাবার নিয়ে যে যার মত টেবিলে বসে খাবার খায় এবং গল্প করে। এই গল্পটা সকলের প্রিয়। ৭ টা থেকে ৫ টা এই দশ ঘন্টা খাটুনির পর এটা তাদের জন্য যেন একটা মুক্তির বাতায়ন। শ্বাসরুদ্ধকর একটা গুমোট পরিবেশে এ সময়টুকুই তারা হেসে গল্প করে জীবন ধারণের শক্তি সঞ্চয় করে।
আয়েশা আলিয়েভা সেদিন খাবার লাইনে দাঁড়িয়ে দেখল নাতালেভা, রোকাইয়েভা, আলুলিয়েভা ডান প্রান্তের একটা টেবিলে বসে গল্প করছে। আজ খেতে আসতে আলিয়েভার একটু দেরী হয়েছে। মন ভাল লাগছে না তার। আজ সারাদিনই তার বারবার হাসান তারিকের কথা মনে পড়েছে। কারখানার কাজ থেকে গিয়ে হাতমুখও ধোয়নি সে। জানালা দিয়ে মস্কোভা নদীর দিকে তাকিয়ে ছিল সারাক্ষণ। হাসান তারিখের মুখটা বারবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠে তাকে আকুল করে তুলছে। সে রোকাইয়েভার কাছে শুনেছে হাসান তারিক জেল থেকে বেরুতে পেরেছে। কোথায় সে এখন? তার কি মনে আছে আয়েশা আলিয়েভার কথা? আয়েশা আলিয়েভা কিন্তু তার একটি কথাও ভুলেনি। হাসান তারিক ভাবে কি এমন করে আয়েশা আলিয়েভার কথা? ওঁর হৃদয়টা তো এক দুর্ভেদ্য দুর্গ। ওখানে আমার মত এক সামান্য কেউ প্রবেশাধিকার পাবে? কিন্তু বিদায়ের সময় আয়েশা আলিয়েভা ওঁর চোখে আলো দেখেছে, একটা আবেগের স্ফুরণ দেখেছে। ওটুকুই আলিয়েভার সম্বল। আলিয়েভা ভাবে ও শেষ কথাটা বলার আগে চোখ বুজেছিল কেন? একটা আবেগকে কি সে চাপা দিতে চায়নি? শেষ কথাটা বলার সময় ওঁর গলাটা ভারী হয়ে এসেছিল কেন? ওটা কি তার বিচ্ছেদ বেদনার কান্না নয়? ভালো লাগে ভাবতে এসব আলিয়েভার। সত্ত্বা জুড়ে শিহরণ জাগে তার।
হাসান তারিকের শেষ উপদেশ ভুলেনি আয়েশা আলিয়েভা। যেখানেই থাক কাজ করতে হবে মধ্য এশিয়ার মজলুম মুসলমানদের মুক্তির জন্য। মাঝখানে সে হতাশ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু নাতালোভা তাকে আবার জাগিয়ে দিয়েছে। সে এখন বাচতে চায়। বাচতে চায় তার প্রিয় হাসান তারিকের জন্য, বাচতে চায় তার দেশজোড়া মুসলিম স্বজনদের জন্য।
লাইনের সামনে আরও চারজন আছে। তারপরই খাবার পাবে আলিয়েভা। এই লাইনে দাড়ানোই তার কাছে বড় বিরক্তিকর; ক্ষুধার সময় এটাকে একটা বড় শাস্তি মনে হয় তার কাছে।
আবার চোখ গেল নাতালোভার টেবিলে। আলুলিয়েভার সাথে আজও মারিয়া নেই কেন? ওদের গল্পে আলুলিয়েভাকে আজ তো আগের মত প্রাণবন্ত দেখাচ্ছে না?
লাইন থেকে সামনের শেষ মেয়েটি খাবার নিয়ে চলে গেল। তারপর আয়েশা আলিয়েভা। আয়েশা আলিয়েভা খাবার নিয়ে এসে বসল নাতালোভাদের টেবিলে আলুলিয়েভার পাশে। বসেই চিমটি কাটল আলুলিয়েভাকে। বলল, মারিয়া কোথায়?
-জানোনা আলিয়েভা তুমি? গম্ভীর কন্ঠ আলুলিয়েভার। শংকিত হল আলিয়েভা। বলল, না তো! কি হয়েছে ওর? কথা বলল না আলুলিয়েভা। মুহুর্তকাল নিরবতা। নিরবতা ভাঙল নাতালোভা। বলল, রাক্ষসকে মানুষ ভেট দেবার সেই গল্প আলিয়েভা। এ মাসে তিনবার সেটা ঘটল মারিয়া, নাদিয়া ও নারালোভাকে দিয়ে।
শুনেই মুখটি ফ্যাকাশে হয়ে গেল আলিয়েভার। কোন কথা যোগল না তার মুখে।
মস্কোর কম্যুনিস্ট কর্তাদের চোখ মাঝে মাঝে মস্কোভা বন্দী শিবিরের উপরে পড়ে। ওদের সরকারী প্রাসাদেই বেশ্যালয় পোষা হয়। তারপরও মস্কোভা বন্দী শিবিরের প্রতিভাবান কুমারী সুন্দরীদের প্রতি ওদের নিদারুন লোভ। এর মধ্যে ক্যারেকটার এসোসিয়েশনের মাধ্যমে ‘বেয়াড়া’ মেয়েদের বাগে আনার একটা লক্ষ্যও তাদের থাকে। আলিয়েভা, রোকাইয়েভা, আলুলিয়েভা সবাই নীরব। আবার কথা বলল নাতালোভাই। বলল, দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় মিটিং সিটিং উপলক্ষ্যে কম্যুনিস্ট পুজিপতিরা যখন রাজধানীতে জমায়েত হন, তখনই এ প্রবণতা বাড়ে, যেমনটা গতমাস থেকে বেড়েছে।
-এই জুলুম ওদের কারও মনেই কি কোন দাগ কাটে না? বলল, আলিয়েভা।
আলিয়েভার কথা শুনে হাসল ডঃ নাতালোভা। বলল, কম্যুনিজম শেখানোর কেন্দ্রে লুমুম্বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ বছর আমি ছাত্র পড়িয়েছি। আমি জানি ওদের মানসিকতা। কম্যুনিস্ট নেতৃবৃন্দরা নিজেদের শুধু দেশের অর্থসম্পদেরই অবিসংবাদিত মালিক মনে করে না, দেশের মানব সম্পদেরও মালিক, এই আচরণ তারা করে। যেহেতু মালিক তারা সেহেতু, যাকে যেমন ইচ্ছা তারা ব্যবহার করতে পারে। ব্যাপারটা যখন তাদের অধিকারের, তখন এর মধ্যে তারা কোন জুলুম দেখবে কেন!
আলোচনা আজ জমলো না। আলিয়েভা আর একটি কথাও বলেনি। নিষ্পাপ প্রাণোচ্ছল মারিয়া ও নাদিয়ার ভাগ্যের কথা শুনে মনটা একেবারে ভেংগে গিয়েছিল আলিয়েভার।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সে উঠে দাঁড়াল। তার সাথে রোকাইয়েভাও উঠল। উঠে দাঁড়াল নাতালোভাও। সে আলিয়েভাকে কাছে টেনে বলল, আমি আটটায় তোমার রুমে যাব।
মস্কোভা বন্দী শিবিরের নিয়ম অনুসারে ৯ টা পর্যন্ত ঘরের দরজা খোলা রাখা যায়, দু’জনের বেশী না হলে পাশের রুমে আলাপ করাও নিষিদ্ধ নয়।
তবে রাত ৯টার পরে আর কোন দরজাই খুলবে না, কেউ করিডোরে বেরুবে না। পায়খানা প্রস্রাব তখন চলে ঘরের ভিতরে নির্দিষ্ট পাত্রে।
রাতে মাঝে মাঝেই নাতালোভা আলিয়েভার রুমে আসে। তারা দু’জনে মস্কোভা বন্দী শিবিরের বন্দীদের একটা জীবনবৃত্তান্ত তৈরী করছে। দু’জনে সারাদিনে বা কয়েকদিনে যা সংগ্রহ করে তা রাতে বসে সমন্বিত করে লিখে ফেলে। লেখা শেষ হলে এটা তারা বাইরে পাঠাবার চেষ্টা করবে।
আয়েশা আলিয়েভা চলে এল তার ঘরে। ঘরতো নয়, একটা কুঠুরী। কাপড়-চোপড় রাখার একটা আলনা, খাবার একটা পাত্র, একটা গ্লাস, আর শোবার জন্য ইস্পাতের ফ্রেমে প্লাস্টিকের একটা খাটিয়া। একটা কম্বল বিছানোর, একটা কম্বল গায়ে দেবার। এই নিয়েই তাদের সংসার। দাঁত মাজার একটা ব্রাশ আছে বটে, কিন্তু পেস্ট দুষ্প্রাপ্য। সুতরাং দাঁত মাজার জন্য তাদেরকে নানা জিনিসের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। এসব দৃশ্যমান আসবাব পত্রের বাইরে লেখার জন্য কলম, চিরকুট জাতীয় কিছু কাগজ তাদের আছে। ওগুলো তারা নানা কৌশলে লুকিয়ে রাখে।
আয়েশা আলিয়েভা গড়াগড়ি দিচ্ছিল বিছানায়। সারাদিনের ক্লান্তি ও খাওয়ার পর শোবার সংগে সংগে চোখ জড়িয়ে আসছিল তার। চোখটা একটু ধরেছিল। এমন সময় দরজায় নক হলো। কান খাড়া করল আয়েশা আলিয়েভা। না, এটা নাতালোভার নক নয়। আবার নক হলো। একটু জোরে। বুঝা গেল, বন্দী শিবির কর্তৃপক্ষেরই কেউ।
আয়েশা আলিয়েভা উঠে গায়ের কাপড়-চোপড় ঠিক করল, তারপর খুলতে গেল দরজা। গিয়ে আবার ফিরে এল। নামাজের জন্য যে কাপড়টা সে কেবলামুখী করে বিছিয়েছিল, নামাজের পর তা আর তোলা হয়নি। এ বন্দী শিবিরে কোন প্রকার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান মারাত্মক অপরাধ। এ অপরাধ ধরা পড়লে এমনকি তাকে সংশোধনের বন্দী শিবির থেকে দাস শিবিরে পাঠানো হতে পারে। সুতরাং সব বন্দীরাই এ ব্যাপারে খুব হুশিয়ার। আলিয়েভা দরজা থেকে ফিরে এসে জায়নামাজটি তুলে ফেলল। তারপর খুলে দিল দরজা।
দরজা খুলে দেখল, দরজায় দাঁড়িয়ে এ বন্দী শিবিরের মহিলা ব্লকের সুপার অরলোভা আলেকজায়া স্বয়ং।
প্রথমে তাকে দেখে ভয়ানক চমকে উঠল আলিয়েভা। সবাই আলেকজায়াকে শনির সংকেত বলে জানে। সাড়ে ছয় ফুটের মত লম্বা, আড়াই ফুটের মত চওড়া আলেকজায়ার ঐ বিশাল দেহটার মধ্যে অন্তর আছে বলে কেউ মনে করে না। শাসন ও শাস্তির শানিত ছুরি যেন একটা সে। তার ডাক পড়লে কিংবা কারো দরজায় সে আবির্ভূত হলে সে বুঝে নেয় তার কোন দুঃসময় এসেছে।
সেই অরলোভা আলেকজায়াকে দরজায় দেখে কোন কথা জোগালনা আয়েশা আলিয়েভার মুখে। আয়েশা আলিয়েভার কথা বলার অপেক্ষাও করলোনা আলেকজায়া। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল। ঘরের মেঝেয় দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকাল। ঘরের বিছানা, বালিশ, পানির কলস, আলনা সব কিছুর উপর দিয়েই তার চোখ একবার ঘুরে এল।
বুকটা দুরুদুরু করে উঠল আলিয়েভার। কোন সন্দেহ করেছে কি সে? সন্দেহজনক কোন কিছুর সন্ধান করছে কি? গত পরশু লেখা দশজন বন্দীর জীবন বৃত্তান্ত বালিশের মধ্যে আছে। বালিশটা দেখবে নাকি সে?
মূর্তির মত দরজার সামনেই দাঁড়িয়েছিল আলিয়েভা। তার দিকে ফিরে আলেকজায়া বলল, খুব কষ্ট না?
আলেকজায়ার বাজখাই গলা আজ কেমন মসৃণ মনে হলো। বিস্মিত হল আলিয়েভা। এমন করে কথা বলতে পারে আলেকজায়া! বন্দীকে কষ্ট দিয়েই যার আনন্দ, কোন বন্দীর কষ্টের উপলব্ধি তার আসল কি করে?
বিস্মিত আলিয়েভা চকিতে আর একবার মুখ তুলল আলেকজায়ার দিকে। আলেকজায়া তার মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি হয়ে গেল। আলিয়েভা দেখল আলেকজায়ার ছোট চোখে কেমন একটা কুৎকুতে ঔজ্জ্বল্য। ঠোঁটের কোণায় কেমন একটা ধারাল অফোটা হাসি। আলিয়েভার চোখকে তার চোখ দিয়ে যেন অনেকটা আটকে রেখেই বলল, তুমি মস্কো বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রী, তুমি সুন্দরী, তুমি একটা অনাঘ্রাতা ফুল। তোমার এ কষ্টতো সাজেনা আলিয়েভা।
আলেকজায়ার এই প্রশংসা এবং কথার ঢংগে চমকে উঠল আয়েশা আলিয়েভা। কি মতলব তার, কি বলতে চায় সে।
আলিয়েভাকে আর চিন্তার সুযোগ না দিয়ে আলেকজায়া বলল, তোমার সুদিন আসছে। পার্টির সর্বোচ্চ কর্তা ফার্স্ট সেক্রেটারী স্বয়ং তোমাকে স্মরণ করেছেন। তোমার শিক্ষা জীবনের রেকর্ড তাকে খুব খুশী করেছে, তোমার সুন্দর ফটো তাকে মোহিত করেছে। থামল আলেকজায়া। আলেকজায়ার কথা বুঝতে আর বাকী রইল না আলিয়েভার। দপ করে চারদিকের আলো যেন নিভে গেল আলিয়েভার কাছে। গোটা দেহটা তার অবশ হয়ে এল। চিন্তা শক্তি ভোতা হয়ে গেল তার। সামনে আলেকজায়ার অস্তিত্ব তার কাছে বড় বলে মনে হলো না। সে দাঁতে দাঁত চেপে টলতে টলতে গিয়ে বিছানায় বসল।
আলেকজায়ার মানচিত্রের মত মুখটা খুশীতে যেন আরও বিকৃত হয়ে উঠল। মনে হলো পরিস্থিতিটাকে সে উপভোগ করছে।
এই সময় ব্যাগ হাতে ঘরে প্রবেশ করল আলেকজায়ার সহকারিনী নভোস্কায়া। সে ব্যাগ খুলে আলিয়েভার বিছানায় নতুন পোশাক ও প্রসাধনী দ্রব্য সাজিয়ে রাখল। তারপর সে বেরিয়ে গেল।
আলেকজায়া কয়েক পা এগিয়ে আলিয়েভার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, মহামান্য ফার্স্ট সেক্রেটারী ভ্লাদিমির জিভকভ আজ রাতে তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন। এই বন্দী শিবিরের আর কারও এর আগে এ ভাগ্য হয়নি। তুমি ভাগ্যবান আলিয়েভা।
থামল আলেকজায়া। তারপর হাতের ব্যাগ থেকে একটা সিকুইরিটি কার্ড বের করে আলিয়েভার পাশে রেখে বলল, এ পাশ আজ রাতে তোমার সাথে থাকবে। এর ফলে আজ রাতে তুমি সিকুইরিটির কাছে সম্রাজ্ঞীর মর্যাদা পাবে। তারপর যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াল আলেকজায়া। অনুভুতিশুন্য অভিভুতের মত বসে ছিল আলিয়েভা।
আলেকজায়া দরজায় গিয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, বাথরুমে তোমার জন্য গরম পানি রাখা হয়েছে। সাবান আছে। গোসল করে রাত সাড়ে ৯ টার আগে তৈরী হয়ে নাও। আমি ঠিক সাড়ে ৯টায় আসব। এবার কথাগুলো আলেকজায়ার তীক্ষ্ম ছুরির মত ধারাল। বেরিয়ে গেল আলেকজায়া।
দরজা বন্ধ করে দেবার জন্যও উঠলোনা আলিয়েভা। চার দিকের সব কিছুই তার কাছে অর্থহীন মনে হয়েছে। যেন গোটা জগৎ একটা দ্বীপ। সে দ্বীপে সে একা অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে। অসহায়ত্বের এক অসহ্য যন্ত্রণা তার সত্তাজুড়ে।
আলেকজায়া বেরিয়ে যাবার পরপরই ঘরে প্রবেশ করল নাতালোভা। নাতালোভাকে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল আলিয়েভা। তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ল। নাতালোভা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করল। সান্ত্বনা দিল। তারপর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল, মা কাঁদিসনা, এখন কাঁদার সময় নয়।
-না আমি কাঁদতে চাই, কাঁদতে কাঁদতে মরে যেতে চাই। আমি আর এক মুহূর্ত বাঁচতে চাই না।
-অবুঝ হোসনা। আমি থামের আড়ালে দাঁড়িয়েছিলাম। সব শুনেছি। সব শুনেই আমি বলছি তোকে বাচতে হবে।
-সব শুনে কেমন করে তুমি আমাকে বাঁচতে বলছ খালাম্মা?
-সব শুনেই আমি বলছি। আমিও প্রথমে চমকে উঠেছিলাম, মনটা আমারও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পরে চিন্তা করে এর মাঝে জীবনের ইংগিত অবলোকন করছি।
-এ জীবন কি মারিয়া, নাদিয়ার জীবন খালাম্মা? এক মিনিট বাচবোনা আমি এ জীবন নিয়ে।
নাতালোভা আলিয়েভাকে এনে বিছানায় বসিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বলল, আলিয়েভা তুই মারিয়া, নাদিয়া নস। তোর মধ্যে আল্লাহ বিশ্বাসের যে অজেয় আগুন জ্বলছে তা তাদের মধ্যে ছিল না।
আলিয়েভা নাতালোভার চোখে চোখ রেখেই বলল, তুমি কি বলতে চাও খালাম্মা?
-আমি বলত চাই এ বন্দী শিবির থেকে বেরোবার এক সুযোগ তুই পেয়েছিস। একে মুক্তির সুযোগ হিসেবে তোর ব্যাবহার করতে হবে।
-কেমন করে? চোখটা যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠল আলিয়েভার।
-কেমন করে আমি জানিনা। তবে এটুকু জানি, তুই ফার্স্ট সেক্রেটারীর মেহমান, সিকিউরিটির লোকজন তোকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখবে। এর সুযোগ গ্রহণ করে ফার্স্ট সেক্রেটারীর কাছে পৌছার আগেই যে কোন উপায়ে নিজেকে তোর মুক্ত করতে হবে।
চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল আয়েশা আলিয়েভার। দুনিয়ার এ জাহান্নাম থেকে মুক্তির একটা পথ যেন খুঁজে পেল সে। যে দেহ মনকে এতক্ষন তার নিঃসাড়-নির্জীব মনে হচ্ছিল তাতে শক্তির প্রবাহ যেন ফিরে এল। নাতালোভার সেই কথা ‘তুই মারিয়া, নাদিয়া নস, তোর মনে আল্লাহ বিশ্বাসের অজেয় শক্তি আছে।‘ আলিয়েভার মনে শক্তি-সাহসের এক দিগন্ত খুলে দিল। আলিয়েভা লজ্জা পেল মনে, আল্লার সাহায্য থেকে মুখ ফিরিয়ে তার এমন ভাবে হতাশ হওয়া ঠিক হয়নি। এমন দেখলে হাসান তারিক নিশ্চয় তাকে তিরস্কার করতো। হাসান তারিকের কথা মনে হতেই বাঁচার আকাঙ্খা তার মধ্যে আরও বাড়ল।
বিছানায় পড়ে থাকা কার্ডটা দেখছিল নাতালোভা। খুশিতে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে বলল, তুই সত্যিই ভাগ্যবান আলিয়েভা, আল্লাহ তোকে সাহায্য করেছেন। এ সিকুইরিটি কার্ড সবার ভাগ্যে জোটেনা। তুই ওদের কাছ থেকে খসতে পারলে কার্ড তোকে অনেক সাহায্য করবে।
তারপর দু’জনে মিলে অনেক পরামর্শ করল। নাতালোভা জানেনা তার মেয়ে কোথায় থাকে। তবু মেয়ের জন্য একটা চিঠি লিখল এবং তার মেয়েকে সন্ধান করার কয়েকটা ঠিকানা দিল। বন্দীদের যে জীবন বৃত্তান্ত তৈরী হয়েছে, তা কিভাবে মুক্ত বিশ্বে পাঠানো যাবে, তার নির্দেশনাও দান করল নাতালোভা।
বন্দী শিবিরের ঘড়িতে সাড়ে ৮টা বাজার শব্দ অনেকক্ষণ হল হয়েছে। নাতালোভা উঠে দাঁড়াল। আলিয়েভা তাকে জড়িয়ে ধরল। আবার কাঁদার পালা। আলিয়েভা বলল, খালাম্মা আর কোন দিন তোকে দেখতে পাবনা।
আলিয়েভার দুগন্ড বেয়ে নামছে অশ্রুর বাঁধ ভাংগা স্রোত। এবার নাতালোভার চোখও শুকনো থাকলোনা। তারও দুগাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। নাতালোভা বলল, না দেখা হোক, প্রার্থনা করি তুই মুক্ত জীবন ফিরে পা। তোরা যদি এই কম্যুনিষ্ট ব্যবস্থাকে আঘাত দিতে পারিস, এই জুলুমবাজির বাহুটা যদি তোরা ভেংগে দিতে পারিস, রুশ অঞ্চলের অগনিত আদম সন্তানকে যদি তোরা কমুনিজমের অমানুষিক ব্যবস্থার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার জন্য কিছুও করতে পারিস, তাহলে যেখানে থাকি, যে অবস্থায় তাকি আমার আত্না শান্তি পাবে।
নাতালোভা আলিয়েভার কপালে একটা দীর্ঘ চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেল। নাতালোভার কয়েকফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল আলিয়েভার কপালে।
কপাল থেকে অশ্রু মুছলনা আলিয়েভা। ঘরের চৌকাঠ ধরে আলিয়েভা নাতালোভা যে পথে চলে গেছে সেই অন্ধকারে তাকিয়ে রইল। অন্ধকারে তাকিয়ে মনে পড়ল রোকাইয়েভার কথা, আলুলিয়েভা, মারিয়া, নাদিয়া, তানিয়া অনেকের কথা। রেকাইয়েভার কথা মনে হতেই মনটা তার মোচড় দিয়ে উঠল। ওর সাথে যদি দেখো হতো।
দরজা বন্ধ করল আলিয়েভা। সেই সাথে ৯টা বাজার ঘন্টা ধ্বনি হলো মস্কোভা বন্ধী শিবিরের ঘড়িতে। সাড়ে ৯টার বেশী দেরী নেই। তৈরী হবার জন্য ফিরো দাঁড়াল আলিয়েভা।
ছয় দরজার একটা বড় কার। সামনে ড্রাইভার এবং তার পাশে একটা সিট। পিছনে ২টা করে ৪টা সিট। নীচের বারান্দায় গাড়ী দাড়িয়েছিল। আলিয়েভা পৌঁছতেই ড্রাইভার ত্রস্ত হাতে মাঝের দরজাটা খুলে ধরল। ড্রাইভার মাঝারি বয়সের। খাস রাশিয়ান। রাজধানীর সরকারী ড্রাইভার রাশিয়ান না হবার প্রশ্নই ওঠেনা।
গাড়ীতে পা দিয়েই বুঝল আলিয়েভা এয়ারকন্ডিশন গাড়ী। দামী ভেলভেট মোড়া আরামদায়ক গদী। গাড়ীতে উঠে বসে দেখল পাশেই আরেকটা মেয়ে। বাইরে আলো থাকলেও গাড়ীর ভেতর অন্ধকার। কালো রঙের শেড়ে ঢাকা কাঁচ। ভাবল, মেয়েটা তার মতই একজন কি?
আলিয়েভা উকি দিয়ে পিছন ফিরে দেখল পিছনের সিটে দু’জন বসে। যতটা বুঝা গেল দুজনই পুরুষ। নিশ্চয় সিকিউরিটির লোক। সামনের দুটি সিটই খালি। ড্রাইভার তখনো সিটে আসেনি। অল্পক্ষণ পরেই ড্রাইভারের দরজা খুলে গেল। সংগে সংগে ভেতরের লাইটটা জ্বলে উঠল। সেই আলোতে পাশের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আঁৎকে উঠল আলিয়েভা। এযে রেকাইয়েভা। রোকাইয়েভাও চমকে উঠল আলিয়েভাকে দেখে। প্রথম চমকটা দূর হযে গেলে খুশী হলো আলিয়েভা। একজন সাথী পাওয়া গেল। আর রোকাইয়েভার চেয়ে যোগ্য সাথী কেউ আর হতে পারতোনা।
আলিয়েভা দু’টি হাত তুলে প্রার্থনা করল, হে আল্লাহ তুমি হাফেজ, ক্বাদের। ইহকাল এবং পরকালের তুমিই একমাত্র অভিভাবক। আমি তোমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি।
প্রার্থনা শেষ করে আলিয়েভা হাত বাড়িয়ে একটা হাত তুলে নিল রোকাইয়েভার। হাতটা মনে হল নিঃসাড়। আলিয়েভা বুঝতে পারল, বেচার রোকাইয়েভার অবস্থা। সান্ত্বনা দেবার জন্য হাতটা তুলে নিয়ে চুম্বন করল আলিয়েভা।
তারপর একটু এগিয়ে গেল রোকাইয়েভার দিকে। কিছু কথা রোকাইয়েভাকে বলা দরকার মনে করল আলিয়েভা। গাড়ী চলতে শুরু করায় হিস হিস শো শো শব্দ হচ্ছে। কানে কানে কথা বলা যায়, কেউ শুনতে পাবেনা।
আস্তে রোকাইয়েভার মাথা একটু টেনে নিয়ে আলিয়েভা ওর কানে মুখ লাগিয়ে বলল, ভেবনা রোকাইয়েভা, ওরা আমাদের লাশ নিয়ে যেতে পারে, জীবিত নয়। মস্কোতে পৌছার আগেই হয় পালাব, না হয় মরব-হয় শহীদ নয় গাজী। এর বাইরে কিছু নয় রোকাইয়েভা। প্রস্তুত থেকে, আমাকে অনুসরণ করো এবং সাধ্যে যা কুলায় তা করো।
আলিয়েভার কথা শেষ হতেই রোকাইয়েভা আলিয়েভার একটা হাত তুলে নিয়ে জোরে চাপ দিল। এর মধ্যে দিয়ে বোধ হয় রোকাইয়েভাও তার দৃঢ় সংকল্পের কথা জানিয়ে দিল আলিয়েভাকে। খুশী হল আলিয়েভা।
গাড়ী একটু ঝাঁকুনি খেয়ে দুরে উঠল। আলিয়েভা বুঝল দ্বীপ থেকে গাড়ী ফেরি বোটে উঠেছে। বোট থেকে গাড়ী সড়কে নামার পর তিন মাইল পেরুলেই মস্কো। সব মিলিয়ে সময় পনর মিনিটের বেশী লাগবেনা। যা করার এই পনর মিনিটের মধ্যেই তাকে করতে হবে।
আলিয়েভা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল, বড় কোন সিকিউরিটি ব্যবস্থা তাদের জন্য রাখা হয়নি। দু’জন সিকিউরিটির লোক, একজন ড্রাইভার। ড্রাইভারও যে সিকিউরিটির লোক আয়েশা আলিয়েভা তা প্রথমে দেখেই বুঝতে পেরেছে। ড্রাইভারের কোমরে ঝোলানো আছে পিস্তল। আর পিছনের সিটে দু’জন সিকিউরিটির হাতে স্টেনগান।
সিকিউরিটির এই হালকা ব্যবস্থা দেখে আলিয়েভার মনে হল, অসহায় মহিলা বন্দীদের আনা-নেয়ায় তারা কোন দিনই প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি, অনেক দেখার পর এ রকমটা যে হতে পারে তারা বোধ হয় এমনটা এখন কল্পনাও করেনা। তাদের যে এই শিথিল চিন্তাকে আলিভেয়া তার পরিকল্পনার জন্য একটা বড় শুভ দিক বলে মনে করল।
আরেকটা স্থির বিশ্বাস আলিয়েভার আছে। সেটা হলো, তারা যেহেতু খোদ পার্টি কর্তাদের শিকার তাই সিকিউরিটির লোকেরা যতটা সম্ভব তাদের গুলি করবেনা, হত্যা করতে সাহস পাবেনা। একটা তাদের জন্য একটা বাড়তি সুযোগ। সে আরেকবার আল্লার কাছে প্রার্থনা করল, হে আল্লাহ! এ সুযোগ সদ্ব্যবহারের তৌফিক দান করুন।
কি করলে কি ঘটতে পারে সবগুলো বিষয় আয়েশা আলিয়েভা এক এক করে বিশ্লেষণ করল। তার আত্নবিশ্বাস দৃঢ় হলো, উপরোক্ত সুযোগ-সুবিধা থাকার কারণে পরিস্থিতি তার অনুকুলেই থাকবে। আজ প্রথম বারে আয়েশা আলিয়েভা তার গোয়েন্দা ট্রেনিংকে মূল্যবান মনে করল। ট্রেনিং গ্রহণকালে ভালো অস্ত্র চালনার জন্য বিশেষ অনার পেয়েছিল সে। আজ একে আল্লার মুর্তিমান রহমত বলেই তার মনে হতে লাগল।
গাড়ী ফেরী বোট থেকে নামল। শক্ত মাটির উপরে মৃদু কাঁপুনি তুলে যাত্রা শুরু করল গাড়ী।
মস্কোভো নদীর তীর ধরে গাড়ি এগিয়ে যাবে মস্কো পর্যন্ত। এখান থেকে মস্কো পর্যন্ত জায়গাটা অপেক্ষাকৃত নীচু একটা বিশাল উপত্যাকা। এখানে কোন সিভিলিয়ান বসতি নেই। বলা হয় এ এলাকায় কয়েকটা আন্ডার গ্রাউন্ড ক্ষেপনাস্ত্র সাইলো রয়েছে।
গাড়ী ফুল স্পীডে চলতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই মাইল খানেক চলে এসেছে গাড়ী। আর দেরী নয়, সিদ্ধান্ত নিল আলিয়েভা। হঠাৎ কয়েকবার ওয়াক ওয়াক করে উঠল। যেন প্রবল বমনের বেগ এসেছে তার।
-বমন করব, গাড়ী থামাও।
তার কথা শুনে মনে হল মুখ ভর্তি তার বমন।
মুখ বন্ধ করে ওয়াক ওয়াক সে করেই চলল। মনে হচ্ছে সে জোর করে বমন চেপে রেখেছে। তার দুই চোখ বিষ্ফোরিত। পাশে কিংকর্তব্যবিমুঢ় রোকাইয়েভা।
ড্রাইভার কেবিন লাইট জ্বেলে দিয়েছে গাড়ির। সে আলিয়েভার অবস্থা দেখে বুঝল, হঠাৎ গাড়ীর গতিতে তার বমনের বেগ হয়েছে। গাড়ী থামাল সে। সে তাড়াতাড়ি গাড়ী থেকে বেরিয়ে আলিয়েভার দরজা খুলে দরজার পাল্লা ধরেই দাড়িয়ে থাকল।
আলিয়েভা বাম হাতে মুখ চেপে গাড়ি থেকে বেরুল। গাড়ীর দরজা ধরে দাড়িয়ে থাকা ড্রাইভারের পাশ দিয়ে যাবার সময় আলিয়েভা বিদ্যুৎ গতিতে তার কোমরের খাপ থেকে পিস্তল তুলে নিল এবং তুলে নিয়েই গুলি করল তার বুকে। কিছু বোঝার আগেই ড্রাইভার ঢলে পড়ল মাটিতে।
ওদিকে পেছনের দরজা খুলে একজন সিকিউরিটি সবে মাটিতে পা রেখেছে, স্টেনগান তখনও তার কোলে। আলিয়েভার পিস্তল এবার তাকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করল। লোকটি উঠতে যাচিছল। উঠা আর হলোনা, দরজার উপরেই সে ঢলে পড়ল। মুহূর্তও বিলম্ব না করে আলিয়েভা গাড়ীর পেছনের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল। দেখল, ওদিকের দরজা খুলে বেরিয়ে যাচ্ছে ওপাশের সেই সিকিউরিটি। আলিয়েভার উদ্যত পিস্তল আবার গুলি বর্ষণ করল। লোকটির মাথায় গিয়ে আঘাত করল বুলেট। দরজার উপরেই লোকটি ঢলে পড়ল।
রোকাইয়েভা ততক্ষণে বেরিয়ে এসেছে। উদ্বেগ-উত্তেজনায় কাঁপছে সে। আলিয়েভা গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়েছে রোকাইয়েভা। আয় আলস্নাহর শুকরিয়া আদায় করি।
বলে আয়েশা আলিয়েভা ঐখানেই সিজদায় পড়ে গেল। তার সাথে রোকাইয়েভাও।
সিজদা থেকে মাতা তুলেই আলিয়েভা বলল, চল এখানে আর এক মুহূর্ত নয়। সন্ধানী দল কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটে আসবে।
আয়েশা আলিয়েভা ঠিক করল, এই বিরান উপত্যকা ধরেই তাদেরকে পশ্চিমে এগুতে হবে। মানচিত্র তার যতদূর মনে পড়ে এখান থেকে মাইল চারেক পশ্চিমে গেলেই মস্কো লেলিনগ্রাদ রোডে তারা উঠতে পারবে। রাতেই তাদেরকে মস্কো শহরে পৌছতে হবে। আলিয়েভা এবং রোকাইয়েভা দু’জনেই মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। মস্কো শহর তাদের পরিচিত। নাতালোভার দেয়া ঠিকানা তাদের কাছে আছে। কোথাও প্রাথমিক একটা আশ্রয় তাদের মিলবেই।
যাবার আগে আলিয়েভা সিকিউরিটি দু’জনের পিস্তলও নিয়ে নিল। তারপর তাদের পকেট হাতড়িয়ে তিনজনের মানিব্যাগ বের করে তার থেকে টাকাগুলোও নিয়ে নিল। তিনজনের মিলিয়ে প্রায় কয়েক হাজার রুবল হবে। খুশী হলো আলিয়েভা।
তারপর আলিয়েভা রোকাইয়েভার হাত ধরে পশ্চিম দিকে ছুটলো।

Top