৫৪. আবার আমেরিকায়

চ্যাপ্টার

কোলে ঘুমিয়ে পড়া আহমদ আব্দুল্লাহকে অত্যন্ত আদরের সাথে তুলে নিয়ে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিল সারা জেফারসন।

সারা জেফারসনের বেডে তার বালিশের পাশেই ছোট একটা বালিশ আহমদ আব্দুল্লাহর জন্যে। মারিয়া জোসেফাইন ও সারা জেফারসনের ঘরের মাঝখানের ঘরটি আহমদ আব্দুল্লাহর। সেখানেই তার বেড। কিন্তু সারা জেফারসনকে ছাড়া সে শুতে চায় না। ঘুমানোর পর তাকে তার বেডে রেখে এলেও ঘুম ভাঙলে সে ছুটে চলে আসে। মারিয়া জোসেফাইন শেষে অনুমতি দিয়েছে, ‘ঠিক আছে আহমদ আবদুল্লাহ সারা জেফারসনের কাছে ঘুমাবে। অনেক দিন পর সারা জেফারসনকে সে দেখছে তো তাই কাছে কাছেই থাকতে চাচ্ছে আবার পালিয়ে না যায় সেই ভয়ে।’ বলে মুখ টিপে হেসেছে মারিয়া জোসেফাইন। সারা জেফারসন হেসে প্রতিবাদ করে বলেছে, ‘আমি পালাইনি। আমি আহমদ আব্দুল্লাহকে বলেই এসেছিলাম তুমি বুঝতে পারনি।’ কিন্তু আমার কাছ থেকে পালিয়েছিলে।’ বলেছিল মারিয়া জোসেফাইন। সলজ্জ হেসে সারা জেফারসন মারিয়া জোসেফাইনকে জড়িয়ে ধরে বলেছে, ‘প্লিজ আপা, সে অতীতের কথা তুল না। মাফ কর প্লিজ।’ মাফ তোমাকে তখনি করেছি আমি। আমি তোমার মতোই তো মেয়ে, তোমাকে বুঝব না। কিন্তু ভীষণ কষ্ট লেগেছিল। শুধু আমি নই, উনি মানে আহমদ আব্দুল্লাহর আব্বা, কিছুক্ষণ কথা বলতে পারেনি জান, নিজেকে নিজের মধ্যে কোথায় হারিয়ে ফেলেছিল।’ বলেছে মারিয়া জোসেফাইন। মারিয়া জোসেফাইনের এই কথার পর সারা জেফারসন কোন কথা বলতে পারেনি। আকস্মিক এক বেদনার ঝলকে শক্ত হয়ে উঠে তার মুখ। একটা অজুহাত তুলে সে পালিয়ে বাঁচে।

আহমদ আবদুল্লাহকে শুইয়ে দিয়ে কপালে একটা আদরের চুমু খেয়ে উঠে বসল সারা জেফারসন। কিন্তু চোখ সরাতে পারল না আহমদ আবদুল্লাহর মুখ থেকে। কপাল ও চোখ ঠিক আহমদ মুসার মতো। গাল, ঠোঁট ও মুখের আদল একদম মায়ের, আবার দাঁত ও হাসি একেবারে আহমদ মুসার। দু’জনের অপরূপ প্রতিচ্ছবি ঘুমন্ত আহমদ আবদুল্লাহর দিকে চেয়ে থাকতে গিয়ে এক সময় মিষ্টি হাসিতে ভরে গেল সারা জেফারসনের মুখ। মনে পড়ল আহমদ আবদুল্লাহর আমেরিকা আসার প্রথম দিনের কথা। সে ও তার মা জিনা জেফারসন এয়ারপোর্টে গিয়েছিল ওদের রিসিভ করতে। সারা জেফারসনকে দেখেই আহমদ আবদুল্লাহ ছুটে এসেছিল। সারার হাতে ছিল ফুলের তোড়া। ফুল দিতে গিয়েছিল সে আহমদ আবদুল্লাহকে। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ তার ছিল না। সোজা ছুটে এসে সে জড়িয়ে ধরেছিল সারা জেফারসনকে। ‘মাম্মি মাম্মি’ বলে মিষ্টি চিৎকার দিয়ে উঠেছিল। কিছুটা বিব্রত হলেও সারা জেফারসন নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। হাতের ফুলের তোড়া মেঝের উপর ছেড়ে দিয়ে তুলে নিয়েছিল আহমদ আবদুল্লাহকে। বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে কয়েকটা চুমু খেয়ে ফিস ফিস করে বলেছিল, ‘মাম্মি নয় বেটা; আন্টি বলতে হয়।’ কিন্তু সংগে সংগেই আহমদ আবদুল্লাহ প্রতিবাদ করে বলে, ‘না, আমি মাম্মি বলব। আম্মিকে তো আমি আম্মি বলি।’ সারা জেফারসন আর কোন যুক্তি না দিয়ে আহমদ আবদুল্লাহকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছিল। তারপর থেকে আহমদ আবদুল্লাহ সারা জেফারসনকে মাম্মি বলেই ডাকে। মারিয়া জোসেফাইন বলেছে, ‘আমি আন্টি বলতে বলাতে সে একই যুক্তি দিয়েছে, আপনাকে আম্মি বললে ঐ মাম্মিকে মাম্মি বলব না কেন।’ সারার মা জিনা জেফারসন বলেছে, ‘বাচ্চারা বেহেশতের ফুল। যা ভালো লাগে বলুক। তোমরা তাকে কিছু বলো না।’ বলবে কি সারা তাকে! ওর কচি কণ্ঠের সুন্দর মাম্মি ডাক তার প্রাণ ভরে দেয়। প্রতি ডাকেই ইচ্ছা করে বুকে জড়িয়ে ধরতে।

| | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »
Top