৯. ককেশাসের পাহাড়ে

চ্যাপ্টার

আমবার্ড দুর্গের প্রিজন এলাকা এবং দুর্গের কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না জর্জ জ্যাকবকে। আমবার্ড দুর্গ থেকে বেরুবার একমাত্র পথ দিয়ে যে সে বেরুতে পারেনি, সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নেই। তাহলে গেল কোথায়? জর্জ জ্যাকবকে যে খুঁজে পেতেই হবে। নেতাদের মধ্যে সেই মাত্র জীবিত বলা যায়। প্রধান সব ঘাঁটি থেকেই খবর এসেছে, অভিযান সফল। হোয়াইট ওলফের কিছু লোক ধরা পড়েছে, অধিকাংশই সংঘর্ষে নিহত হয়েছে।
কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে আছে আলী আজিমভ। আর সেখানে সহযোগিতায় রয়েছে ওসমান এফেন্দী। জর্জ জ্যাকবের সন্ধানে বেরিয়েছে আহমদ মুসা, সালমান শামিল এবং সোফিয়া এ্যাঞ্জেলা। সোফিয়া এ্যাঞ্জেলাই চেনে জর্জ জ্যাকবকে।
সব খোঁজা শেষ করে ফেরার পথে ফাদার পল অর্থাৎ মেরীদের বাড়ির মুখোমুখি হলো আহমদ মুসারা। সালমান দেখাল ঐ বাড়িটা মেরীদের।
চল খবর নিয়ে যাই ওদের। বলল আহমদ মুসা।
হ্যাঁ, যাওয়া যেতে পারে আপনি মনে করলে। ওর মা’র সাথে দেখাটাও হয়ে যাবে।
সালমান শামিল মুখে একথা বলল, কিন্তু তার মনে প্রবল একটা অস্বস্তি। সালমান শামিলের মনে পড়ল গীর্জা থেকে মেরীর চলে আসার দৃশ্যটা। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি তাকে আর হতে হোক সে তা চাইছিল না। কিন্তু এখানে এসে মেরীর মা’র সাথে দেখা না করে চলে যাওয়া কঠিন।
সোফিয়া এ্যাঞ্জেলা নীরব রইল। কোন কথা সে বলল না। কিন্তু তার মুখের উপর সেই কাল ছায়াটা এসে আবার মিলিয়ে গেল।
মেরীর বাড়ির দিকে চলছিল ওরা। বাড়ির সামনে লনটির কাছাকাছি পৌঁছে সোফিয়া এ্যাঞ্জেলা জিজ্ঞেস করল, কোথায় তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে?
লনের মাঝ খানে একটা জায়গা দেখিয়ে দিল সালমান শামিল।
তিন দিন খাদ্য-পানি স্পর্শ না করে এমন সব বাঁধা ডিঙিয়ে ঐভাবে তুমি পালাতে পারলে কিভাবে?
আমারও বিশ্ময় লাগে এখন সোফিয়া।
মনের শক্তি সব শক্তির চেয়ে বড়।
না সোফিয়া, আল্লাহর সাহায্যই সবচেয়ে বড়। দেখ, আমি যে মনের জোরে এ পর্যন্ত এসেছিলাম, সে আমি এখানে পৌঁছার পর শত চেষ্টা করেও নিজের জ্ঞানটা ধরে রাখতে পারিনি। এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহর ইচ্ছা ছিল এ পর্যন্ত পৌঁছি। এখানে পৌঁছার পর মনে হয় আল্লাহ আমার উদ্ধারের প্রয়োজনেই আমার জ্ঞান হারাবার ব্যবস্থা করেছিলেন।
ঠিক বলেছ সালমান। পরিকল্পনা করেই যেন আল্লাহ তোমাকে এনেছিলেন। ভাবতে পারি না, মেরীরা না হয়ে, অন্য কারো হাতে পড়লে কি ঘটত? পালিয়েও আবার শত্রুর হাতে পড়ার নজির আছে।
তাহলে আমাদের আল্লাহর প্রতি তোমার বিশ্বাস বেড়েছে তো! মুখ টিপে হেসে বলল সালমান শামিল।
আল্লাহ কি তোমাদের একার?
একার নয়, কিন্তু তোমরা তো আবার ত্রি- ঈশ্বরে বিশ্বাসী।
বহুবচনে কথাটা বলছ কেন, ‘আমরা’ তো বলছি না।
‘তোমরা’ থেকে তুমি যে ভিন্ন, তোমার সে মনের কথা তো জানি না। ঠোঁটে হাসি টেনে বলল সালমান শামিল।
তোমার জানার তো দরকার নেই, আল্লাহ জানলেই হলো। এই সময় আহমদ মুসা ফিরে এল।
সালমান শামিল ও সোফিয়া লনের মুখে দাঁড়িয়েছিল। আহমদ মুসা সম্ভবত বাড়ির ওপাশটা দেখার জন্যে একটু লনের ওধারে গিয়েছিল।
সে ফিরে এলে তারা লনে প্রবেশ করে বাড়ির দিকে এগুলো।
আগে সালমান শামিল। তার পেছনে সোফিয়া এ্যাঞ্জেলা। সবশেষে আহমদ মুসা।
গাড়ি বারান্দায় পৌঁছে সামনের দিকে চাইতেই চমকে উঠল সালমান শামিল। দরজা খোলা কেন? এইভাবে রাত তিনটায় দরজা খোলা থাকবে কেন? এমন তো হবার কথা নয়।
সালমান শামিল থমকে দাঁড়াল। পাশে এসে দাঁড়াল আহমদ মুসাও। ব্যাপারটা তার চোখেও ধরা পড়ল।
কি ব্যাপার, দরজা খোলা যে! দু’চোখ কপালে তুলে প্রশ্ন করল আহমদ মুসা।
বুঝতে পারছি না মুসা ভাই, এমন তো হবার কথা নয়।
আহমদ মুসা ও সালমান শামিল দু’জনেই রিভলভার হাতে নিয়ে এক পা দু’পা করে সামনে দরজার দিকে এগুলো।
প্রথমেই ড্রইংরুম। খোলা দরজা দিয়ে তারা তিনজনই ড্রইংরুমে প্রবেশ করল। ড্রইংরুম খালি।
ড্রইংরুমে আলো নেই। করিডোরে আলো।
তারা ড্রইংরুম থেকে করিডোরে পা দিল। করিডোরে ছাড়া নিচে আর কোন রুমে আলো নেই।
সোফিয়াকে সিঁড়ির মুখে দাঁড় করিয়ে রেখে আহমদ মুসা ও সালমান দ্রুত নিচের ঘরগুলো দেখল। না, কেউ কোথাও নেই।
উপরে উঠার সিঁড়িতে আলো
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠল। সিঁড়ির মুখেই পারিবারিক ড্রইংরুম। তারও দরজা খোলা এবং ঘরে আলো জ্বলছে। কিন্তু শূন্য ঘর।
সালমান শামিলের চোখে তখন বিস্ময়ের বদলে উদ্বেগ এসে বাসা বেঁধেছে। আহমদ মুসারও কপাল কুঞ্চিত।
সালমান ড্রইংরুমে একবার চোখ বুলিয়েই ছুটল সিস্টার মেরীর রুমের দিকে। মেরীর রুমের দরজাও খোলা। ঘর শূন্য। শূন্য ঘরের দিকে একবার তাকিয়েই সালমান শামিল ছুটল লেডি জোসেফাইনের রুমের দিকে। সেখানেও একই দৃশ্য। দরজা খোলা, ঘর শূন্য।
শূন্য ঘরের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধভাবে দাঁড়িয়ে রইল সালমান শামিল। কিছু আর ভাবতে পারছে না সে। তার চিন্তা শক্তি যেন ভোঁতা হয়ে গেছে।
তার পাশে এসে দাঁড়ালো আহমদ মুসা। তার চোখে বিস্ময়।
পাশে এসে দাঁড়াতেই সালমান শামিল বলল, কিছু বুঝতে পারছেন মুসা ভাই?
বুঝতে পারছি।
কি? ওরা কোথাও চলে গেছেন?
চলে গেছেন তো বটেই, কিন্তু তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কেমন করে বুঝলেন?
সে তো স্পষ্ট, দরজাগুলো খোলা, আলোও নিভানো নয়।
কে তাদের নিয়ে গেল, হোয়াইট ওলফ?
তা বলতে পারবো না, তবে যে বা যারাই হোক, তারা মেরীদের একেবারে অপরিচিত নয়। তাকে বা তাদের ভেতরের ড্রইংরুমে বসানো হয়েছিল। সে ড্রইংরুমে আসেন লেডি জোসেফাইন এবং মেরী। সেখান থেকেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।
এটা তো অনুমান।
অনুমান, কিন্তু এটাই ঘটেছে। দেখ না, ড্রইংরুম থেকে নেমে বেরিয়ে যাবার পথ, সিঁড়ি এবং করিডোরেই শুধু আলো।
এই সময় সোফিয়া এ্যাঞ্জেলা এসে ঘরে ঢুকল। সে ছোট্ট একটি চিরকুট তুলে দিল আহমদ মুসার হাতে।
আহমদ মুসা চিরকুটটিতে নজর বুলিয়েই তা তুলে দিল সালমান শামিলের হাতে।
সালমান শামিল চিরকুটটি হাতে নিয়ে লেখার দিকে তাকিয়েই চিনতে পারল। লেখাটা মেরীর হাতের। পড়ল সালমানঃ
“প্রিয় ভাই, ফাদার পল,
জর্জ জ্যাকব এসেছেন। কোথাও আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন। না গেলে বেঁধে নিয়ে যাবেন। রিভলভার হাতে করেই এসেছেন। সব কথা লেখার সময় নেই। ওদের কাছে অপরাধ আমাদের একটা আছে, কিন্তু সে অপরাধটা আমার জন্যে পরম সৌভাগ্য ভাইয়া।
মেরী।”
চিরকুটটা মুড়ে হাতের মধ্যে নিয়ে সালমান শামিল বলল, ব্যাপারটা পরিষ্কার মুসা ভাই। আমাকে আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারটা হোয়াইট ওলফ নেতৃবৃন্দ জানতে পেরেছে। পরাজিত জর্জ জ্যাকব তাই সম্ভবত প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে ওদের উপর দিয়ে। তাই ওদের ধরে নিয়ে গেছে।
আহমদ মুসা চুপ করে ছিল। সে অন্যমনস্ক। সালমান শামিলের কোন কথাই বোধ হয় কানে গেল না। অনেকক্ষণ পর মুখ তুলে বলল, আমবার্ড দুর্গের এ দিকে প্রাচীরে নিশ্চয় কোন গোপন দরজা আছে।
বলে আহমদ মুসা ঘুরে দাঁড়াল। বলল, চল সব দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে দিয়ে আমরা নিচে নেমে যাই।
গেটের দরজাটা লক করে আহমদ মুসা, সালমান শামিল ও সোফিয়া লনে বেরিয়ে এল। আহমদ মুসার মুখ গম্ভীর। আর একটি কথাও বলেনি আহমদ মুসা।
আহমদ মুসার এ গাম্ভীর্যের সাথে সালমান শামিল ও সোফিয়া ইতোমধ্যেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। আহমদ মুসা যখন কোন সিরিয়াস বিষয় হাতে নেয়, তখন সে এমন গম্ভীর ও অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে।
লনে বেরিয়ে এসেই আহমদ মুসা সালমান ও সোফিয়ার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, আমবার্ড দুর্গের এ দিকের বহির্দেয়াল আমি পরীক্ষা করতে চাই। তোমরা কন্ট্রোল রুমে ফিরে যাও। সোফিয়ার কষ্ট হচ্ছে।
সালমান শামিল ও সোফিয়া একসংগেই বলে উঠল, কন্ট্রোল রুমে আমাদের কোন কাজ নেই। আপনার সাথেই আমরা থাকব।
আহমদ মুসা চোখ বন্ধ করে একবার আরাগাত পর্বত ও আমবার্ড দুর্গের অবস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করল। তার মনে হল, আমবার্ড দুর্গের পূর্ব দিকের আরাগাত পর্বত দুর্গম ও ক্রমশঃ উঁচু হয়ে উঠেছে। পশ্চিম দিকের অবস্থা সে রকম নয়। আহমদ মুসা স্থির করল, দুর্গের পশ্চিম দেয়াল থেকেই তারা অনুসন্ধান শুরু করবে।
আহমদ মুসা পা চালাল দুর্গের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের দিকে।
আহমদ মুসা আগে আগে হাঁটছিল। পেছনে সালমান শামিল ও সোফিয়া।
কি সাংঘাতিক ঘটনা ঘটল বলতো? বলল সোফিয়া।
আমি নিজেকে খুব অপরাধী বোধ করছি সোফিয়া।
হোয়াইট ওলফ তোমাকে ওখানে দেখেছে, এটা জানার পর ব্যাপারটাকে যে গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল, তা দেয়া হয়নি। মেরীকে রাতে ঐ ভাবে ছাড়া, তার বাড়িতে না যাওয়া বোধহয় আমাদের ঠিক হয়নি।
হয়তো তাই। ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিলে, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে, এ মর্মান্তিক ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।
তুমি মেয়েটির মুখোমুখি হতে ভয় করেছ, তাই মেয়েটি যা বলল তা মেনে নিয়ে তার বাড়িতে গেলে না। তাদের নিরাপত্তার কথাও চিন্তা করতে পারনি এই কারণেই।
হবে হয়তো, কিন্তু আমি যা করেছি, আমার জন্যে সেটাই স্বাভাবিক ছিল সোফিয়া।
তুমি তো কোন দিকে চোখ তুলে চাও না, তুমি কি কোন সময় তার চোখের দিকে চেয়েছ?
চেয়েছি। কিন্তু যা দেখেছি, তাতো আমি দেখতে চাইনি।
তোমার চাওয়ার উপরই কি সব নির্ভর করবে? তাদের কথায় ছেদ পড়ল।
আহমদ মুসা প্রিজন ব্রীজের মুখে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। সালমান শামিল ও সোফিয়া কিছু পিছিয়ে পড়েছিল। আহমদ মুসা ডাকল, এখান থেকেই আমাদের কাজ শুরু হবে, এস তোমরা।
আহমদ মুসার হাতে বিরাট রকমের একটা হাতুড়ি।
সালমান শামিল ও সোফিয়া গিয়ে তার কাছে পৌঁছল।
পশ্চিম প্রাচীর ধরে তারা এগিয়ে চলল। যেখানেই সন্দেহ হচ্ছিল আহমদ মুসা হাতুড়ির ঘা দিয়ে প্রাচীর পরীক্ষা করছিল।
আহমদ মুসার বিশ্বাস, কোনও ভাবে প্রাচীর ডিঙিয়ে দুর্গের বাইরের পাহাড়ী নদী অতিক্রম করেই জর্জ জ্যাকব পালিয়েছে। কিন্তু প্রাচীরের কাঁটাতারের বেড়ায় যেহেতু বিদ্যুৎ স্বাভাবিক আছে এবং কোথাও কোন ছেদ পড়েনি, তাই তারা প্রাচীর ডিঙিয়ে যায়নি এটা পরিষ্কার। প্রাচীরের গায়ে নিশ্চয় কোনও গোপন পথ আছে, সেই পথেই জর্জ জ্যাকব পালিয়েছে। কিন্তু পালিয়েছে তা স্পষ্টভাবে না জানা পর্যন্ত এটা অনুমান এবং অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোন পদক্ষেপই নেয়া যায় না।
প্রাচীরের গোড়া দিয়ে হেঁটে তারা প্রাচীর বরাবর চলছিল। এক জায়গায় এসে তাদের গতি রুদ্ধ হয়ে গেল। দুর্গের প্রাচীরের সাথে প্রাচীর ঘেরা আরেকটা বাড়িতে এসে তাদের গতি রুদ্ধ হয়ে গেল।
তারা প্রাচীর ঘুরে বাড়িটির সামনে এল। চারিদিকে টর্চ ফেলে এবং বাড়িটি দেখে বুঝল, এটা হোয়াইট ওলফ নেতা মাইকেল পিটারের বাড়ি। এ বাড়ি তারা কিছুক্ষণ আগেই সার্চ করে গেছে।
আহমদ মুসার মনে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত একটা চিন্তা এল, দুর্গের প্রাচীরের সাথে দেয়াল ঘিরে এ বাড়ি তৈরি কেন? তাহলে কি দুর্গ থেকে নদী পথে বেরুবার মত প্রাচীরের সেই গোপন দরজা কি মাইকেল পিটারের বাড়ির ভেতর দিয়েই? আহমদ মুসার কেন জানি মনে হল, তার এ চিন্তার মধ্যে কোনও ভুল নেই।
আহমদ মুসা সালমান শামিলের দিকে চেয়ে বলল, সালমান, আমরা বোধ হয় প্রাচীরের সেই গোপন দরজা পেয়ে গেছি।
কোথায়?
–আমার মনে হচ্ছে, মাইকেল পিটারের বাড়ির সীমার মধ্যে প্রাচীরের যে অংশ পড়েছে, তার কোথাও সেটা আছে।
সালমান শামিলেরও মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, বলল, ঠিক ধরেছেন মুসা ভাই। দুর্গের প্রাচীরে সেরকম দরজা যদি আর থাকেই, তাহলে সেটা এখানেই। আমারও এটা নিশ্চিত বিশ্বাস।

মাইকেল পিটারের বাড়ি সার্চ করার সময় তখন দেখে গেছে, বাড়িতে মাত্র পিটারের স্ত্রী এবং সাত-আট বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। গুলিগোলার শব্দে তারা ভীত ছিল। আহমদ মুসাদের দেখে তারা আতংকিত হয়ে পড়েছিল। তারা মাইকেল পিটারের মৃত্যুর খবর তখনও জানতো না। আহমদ মুসা দরজায় নক করতেই দরজা খুলে দিয়েছিল।
মাইকেল পিটারের স্ত্রী পঁচিশ-ত্রিশ বছরের একজন মহিলা। ভদ্র-নির্দোষ চেহারা। দরজা খুলে দিয়ে আহমদ মুসাকে দেখেই আঁতকে উঠেছিল। ভযে চোখ তার বড় বড় হয়ে উঠেছিল। চিৎকার করার শক্তিও সে হারিয়ে ফেলেছিল।
আহমদ মুসা খুব শান্ত, নরম কণ্ঠে বলেছিল, বোন, আপনার কোন ভয় নেই। শত্রুতা আমাদের মাইকেল পিটারের সাথে। আপনি যদি শত্রুতা না করেন, আপনার বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হবে না।
আহমদ মুসার কথা শুনে মেয়েটি বোধ হয় সাহস ফিরে পেয়েছিল। বলেছিল, পিটার কোথায়, কেমন আছে?
আহমদ মুসা মাথা নিচু করে বলেছিল, বোন, আপনার জন্যে কোন সুসংবাদ আমাদের কাছে নেই।
মেয়েটি এ কথা শুনে একটা চিৎকার করেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল।
চিৎকার শুনে পিটারের মেয়েও বাড়ির ভেতর থেকে ছুটে এসেছিল। মা’কে ঐভাবে দেখে সেও চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিল।
সোফিয়া পিটারের স্ত্রীর জ্ঞান ফিরাবার চেষ্টা করছিল।
আহমদ মুসা ক্রন্দনরত বালিকাটিকে কাছে টেনে সান্ত্বনা দিয়েছিল, তোমার মা’র এখনি জ্ঞান ফিরে আসবে মা, কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সব ঠিক হয়ে যাবে কথা বলেই আহমদ মুসার মনে অসহনীয় এক খোঁচা লেগেছিল। কি করে সব ঠিক হয়ে যাবে? ওর আব্বা কি আর কোন দিন ফিরে আসবে? যখন মেয়েটি তার পিতার কথা শুনবে তার কি অবস্থা হবে? তার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল অসহনীয় দু:খ-কান্নায় ভেঙ্গে পড়া ছোট্ট এই বালিকার ছবি।
আহমদ মুসার চোখের কোণ ভিজে উঠেছিল।
ছোট মেয়েটি আহমদ মুসার দরদভরা সান্ত্বনা শুনে তার দিকে চেয়ে যেন একটু শান্ত হয়েছিল। প্রশ্ন করেছিল, তোমরা কে? তোমাদের তো দেখিনি!
আহমদ মুসা চোখের কোণ মুছে নিয়ে বলেছিল, তোমার আব্বার শত্রু আমরা মা! দেখবে কেমন করে?
–শত্রুদের তো রিভলভার থাকে। গুলি মারে। তোমাদের বন্দুক কই?
–শত্রু সবাইকে গুলি মারে না। শুধু শত্রুকেই মারে।
–তোমরা এসেছ কেন? আম্মার কি হয়েছে?
–আমরা তোমাদের বাড়িটা দেখব।
–কেন?
–এমনি, কেন দেখতে দেবে না?
–কেন দেব না, তুমি খুব ভাল।
এ সময় পিটারের স্ত্রীর জ্ঞান ফিরে এসেছিল।
আহমদ মুসা সালমানকে বলল, তুমি একে ভেতরে নিয়ে যাও।
তারপর বালিকাকে আদর করে বলল, তুমি তোমার এই চাচ্চুর সাথে ভেতরে যাও। আমরা আসছি তোমার মাকে নিয়ে।
বালিকাটি শান্তভাবে সালমান শামিলের সাথে ভেতরে চলে গিয়েছিল।
বালিকাকে ভেতরে পাঠিয়ে আহমদ মুসা পিটারের স্ত্রীর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল।
জ্ঞান ফেরার পর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল পিটারের স্ত্রী।
আহমদ মুসা নরম, শান্ত কণ্ঠে পিটারের স্ত্রীকে বলেছিল, আমরা ককেশাস ক্রিসেন্টের লোক। কেন আমরা পিটারের শত্রু, কেন পিটার আমাদের শত্রু আপনি জানেন। আপনার দুঃখের সাথে আমরাও দুঃখবোধ করছি বোন, কিন্তু আপনি জানেন কি জন্যে কি হয়েছে। আপনি আমাদের শত্রু নন, সামান্য ক্ষতিও আপনার হবে না। আপনার সহযোগিতা চাই। আমরা শুধু পিটারের জিনিসপত্র সার্চ করতে চাই, যা আমাদের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনি অনুমতি দিন।
পিটারের স্ত্রী চোখ মুছে বলেছিল, পিটার নেই, আমি পিটারের স্ত্রী। তার দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে। পিটার থাকলে যা হতে দিত না, আমি তা হতে দেব কেন?
আহমদ মুসা বলেছিল, আপনার এই মতকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমরা তো সার্চ করতে চাই। তাহলে কি হবে এখন?
–কেন, পিটারকে যেভাবে হত্যা করেছেন, সেভাবে আমাদের মেরে ফেলে শুধু সার্চ করা কেন, সব কিছু নিয়ে যেতে পারেন।
–পিটারের মত আপনাদের কাছ থেকে আঘাত এলে কিংবা আপনারা শত্রু হয়ে দাঁড়ালে আমরা তাও করতে পারি। কিন্তু আপনাদের ঐ নির্দোষ, নির্মল বালিকা কখনোই শত্রু হতে পারে না। ওরা অবধ্য।
–আঘাত দেবার শক্তি আমাদের নেই, কিন্তু মুখ দিয়ে, ঘৃণা দিয়ে প্রতিরোধ আমরা করতে পারি।
–সেটা পারেন বোন। পিটারের স্ত্রী হিসেবে এ অধিকার আপনার আছে। কিন্তু এ অধিকারের জন্যে আমরা তো আপনাদের হত্যা করতে পারি না।
অত্যন্ত নরম কণ্ঠে বলেছিল আহমদ মুসা।
একটু থেমে আহমদ মুসা বলেছিল, আমি আপনার মেয়েকে শত্রু বলেই পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু তবু সে বাড়ি দেখাতে সম্মত হয়েছে। সার্চ করার সময় আপনি আমাদের সাথে থাকুন আমরা চাই।
আমি এখানেই থাকব। বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিল পিটারের স্ত্রী।
আহমদ মুসা মাথা নিচু করে বলেছিল, আমি দুঃখিত মিসেস পিটার। আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করতেই হবে।
বলে চলে গিয়েছিল আহমদ মুসা বাড়ির ভেতরে।
সোফিয়া বসে পিটারের স্ত্রীকে পাহারা দিয়েছিল। তার একটা হাত কাপড়ের ভেতর পিস্তলের বাঁটে ছিল। পিটারের বাড়ির বাইরের গেট বন্ধ ছিল। ভেতরে ঢুকার পরেই দরজা লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল।
সার্চ করতে দশ মিনিটের বেশি লাগেনি।
সার্চ করে যখন বাইরে বেরিয়ে এসেছিল, তার সাথে এসেছিল পিটারের ছোট মেয়েটিও।
পিটারের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় আহমদ মুসা পিটারের স্ত্রীকে বলেছিল, বোন, তোমরা সবদিক দিয়েই নিরাপদ থাকবে। তোমরা এখানেই থাকতে পারো। কিংবা অন্য কোথাও যেতে চাইলে আমরা পৌঁছে দেব। পিটারের যাবতীয় সম্পদ তোমারই থাকবে।
পিটারের স্ত্রী কিছু বলেনি। তার নত মুখটি একবার তুলেছিল। তাকাল আহমদ মুসার দিকে। চোখ দু’টি জলে ভরা।
পাশে দাঁড়ানো বালিকাই কথা বলেছিল, না চাচ্চু, আমরা কোথাও যাব না।
আহমদ মুসা বালিকাকে কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলেছিল, মা, আমরা যাই।
–তোমরা আবার কখন আসবে? আব্বা এলে আমি বলব।
বালিকার কথা শুনে আহমদ মুসা মুহূর্তের জন্যে আনমনা হয়ে গিয়েছিল। একসময় বালিকার দিকে চোখ ফিরিয়ে ধীর কণ্ঠে বলেছিল, তোমার আব্বা যদি না আসেন মা?
–না, এই তো আব্বা এখনি আসবেন।
–তোমার মত হাজারো বালক—বালিকার আব্বা ঘর থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি। তোমার আব্বাও তো এমন হতে পারে?
–না না, তুমি জান না।
আহমদ মুসার চোখ দু’টি ভারি হয়ে উঠেছিল। বালিকাটির আস্থায় সে আর ঘা দিতে চাইল না।
আহমদ মুসা আসার জন্যে ঘুরে দাঁড়াতে দাঁড়াতে অনেকটা স্বগতঃ কণ্ঠেই বলেছিল, দুনিয়ার সব মানুষ যদি এই শিশুদের মত সরল-সহজ, সুন্দর হতো!
আহমদ মুসার কণ্ঠ ভারি হয়ে উঠেছিল। কথাগুলো বলতে বলতেই গেট দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল আহমদ মুসা।

আহমদ মুসারা এখন মাইকেল পিটারের বাড়ির সেই গেটের সামনেই আবার দাঁড়িয়ে।
আহমদ মুসা গেটে চাপ দিয়ে দেখল, গেট ভেতর থেকে বন্ধ।
দরজায় সেই প্রথমবারের মত করেই নক করল আহমদ মুসা।
পরপর তিনবার নক করল। না, কোন সাড়া নেই।
আহমদ মুসা পকেট থেকে লেসার কাটার বের করে তার বাঁটের লাল বোতামটা চেপে ধরে দরজার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত একবার টেনে নিল। দরজার একটা পাল্লা খুলে গেল। ভেতরে ঢুকল তিনজন।
নীরব-নিস্তব্ধ বাড়ী।
প্রাচীরের দিকে যাবার আগে সামনের রুমটির দরজা খোলা দেখে সেদিকে এগুলো। আগেই দেখেছিল, ঘরটা ড্রইংরুম। ড্রইংরুম খোলা। আলো নেই, কেউ নেই।
গোটা বাড়িটাতেই কাউকে পাওয়া গেল না। সবগুলো দরজাই খোলা।
সালমান শামিল বলল, দেখছি মেরীদের মতই ঘটনা।
–আকৃতি এক রকম, কিন্তু প্রকৃতি এক নয়। বলল আহমদ মুসা।
–অর্থাৎ? বলল সালমান শামিল।
–অর্থাৎ মেরীদের জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু এরা গেছে স্বেচ্ছায়।
–ঠিক বলেছেন, তখন সুটকেস, ব্যাগ, কাপড়-চোপড় যা দেখেছিলাম, তার অনেক কিছুই নেই।
ঘর থেকে বেরিয়ে ওরা দুর্গের প্রাচীরের দিকে চলল।
বেশি খুঁজতে হল না।
প্রাচীরের কাছে যেতেই চোখে পড়ল, প্রাচীরের ভিত্তির দুই ফুট উপরে তিনফুট বর্গাকৃতির একটা দরজা। স্টিলের গরাদটা খোলা।
আহমদ মুসা দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বাইরে অন্ধকার। চোখে ইনফ্রা রেড দূরবীন লাগিয়ে দরজা দিয়ে প্রাচীরের ওপারে গেল আহমদ মুসা। ওপারে দাঁড়াবার মত একটা সোপান আছে। বেশ প্রশস্ত।
আহমদ মুসা দেখল, সোপানের পাশে পোঁতা একটি স্টিলের পিলারে নাইলনের একটা মোটা দড়ি বাঁধা। দড়িটা পাহাড়ী নদী ক্রস করে ওপারের দিকে চলে গেছে। বুঝল, ওপারেও আছে এমনি একটি পিলার।
আহমদ মুসা খুঁজতে লাগল এবার একটি রাবারের নৌকা। রাবারের নৌকা করেই ওরা দড়ি টেনে ওপারে পার হয়ে পালিয়েছে।
আহমদ মুসা ওপারের তীরে চোখ ফেলল। খুঁজতে হলো না। পানির কিনারা থেকে একটু উপরেই পাথরের উপর একটা নৌকা।
আহমদ মুসা তাকাল ওপারের পাহাড়ের দিকে। পাহাড়ের ওখানে অপেক্ষাকৃত নিচু। নিশ্চয় এই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে ওপারে এক উপত্যকায় নামার নিরাপদ কোন পথ আছে।
আহমদ মুসা পুনরায় প্রাচীরের সেই দরজা দিয়ে চলে এল দুর্গের ভেতরে। সালমান শামিল এবং সোফিয়া উন্মুখ হয়েছিল। আহমদ মুসা আসতেই জিজ্ঞাসা করল, কি দেখলেন মুসা ভাই?
–সবই দেখলাম। দড়ি টেনে রাবারের নৌকা করে ওরা নদী পার হয়েছে।
–এই ভীষণ স্রোত ঠেলে? বলল সালমান শামিল।
–ওপার—এপার মোটা দড়ি টানা দিয়ে বাঁধা আছে। ঐ দড়ি ধরে থাকলে স্রোতে ভেসে যাবার ভয় নেই।
–ওপারের পাহাড় থেকে সমভূমিতে নামবার তাহলে কোন পথ আছে।
–অবশ্যই।
–না ওপারের পাহাড়ে কোন ঘাঁটি আছে আবার?
–না নেই। থাকলে ওরা দরজা এইভাবে খোলা রেখে যেত না এবং পার হবার ঐ ব্যবস্থাও ঐ ভাবে তারা রেখে দিত না।
–ঠিক বলেছেন মুসা ভাই।
কন্ট্রোল রুমের দিকে ওরা পা চালাল। আহমদ মুসা এবং সালমান শামিল পাশাপাশি হাঁটছিল। তাদের পেছনেই সোফিয়া।
আহমদ মুসা ধীর কণ্ঠে বলল, আমবার্ড দুর্গের কাজ শেষ। এখনি বেরুতে হবে আরেক অভিযানে।
–কোথায়?
–মেরী এবং তার মা, লেডি জোসেফাইনের সন্ধানে। আমার মনে হচ্ছে, সোফিয়ার যে বিচার হোয়াইট ওলফ করেছিল, মেরীর ক্ষেত্রেও সে একই বিচার অপেক্ষা করছে। জর্জ জ্যাকব এখন ক্ষ্যাপা কুকুরের চেয়েও ভয়াল। সুতরাং তাকে কোন সুযোগ দেয়া যাবে না।
–কিন্তু খুঁজবেন কোথায় ওদের মুসা ভাই?
–এ সমস্যাটার সমাধান এখনো হয়নি। তবে আমি অনুমান করেছি, তাদেরকে আর্মেনিয়ার অন্যতম পুরনো ও শ্রেষ্ঠ ধর্মকেন্দ্র এজমেয়াদজিন নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
–আপনার এ অনুমানের যুক্তি কি মুসা ভাই?
–মাইকেল পিটারের নোটবুকে একটা স্কেচম্যাপ পেয়েছি। স্কেচম্যাপটি এজমেয়াদজিনের রিপ সাইম গীর্জার পার্শ্ববর্তী একটি স্থাপনার। ম্যাপের বিবরণ দেখে আমার মনে হয়েছে, এজমেয়াদজিনে হোয়াইট ওলফের দ্বিতীয় হেডকোয়ার্টার নির্মিত হয়েছে। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হলো, হোয়াইট ওলফের নেটওয়ার্কের যে লগ পাওয়া গেছে তাতে এজমেয়াদজিনের নাম নেই। এ থেকে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, সেখানে হোয়াইট ওলফের একটা বিশেষ ঘাঁটি আছে যাকে সবার চোখ থেকে সযতনে গোপন রাখা হয়েছে। আমার এ অনুমান ঠিক নাও হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রথম অভিযান হবে সেখানেই।
–আপনার অনুমান সত্য হোক মুসা ভাই। কিন্তু নতুন অবস্থা, ওদের সব ঘাঁটির উপর আমাদের আক্রমণ থেকে জর্জ জ্যাকব নতুন চিন্তা করবে না তো?
–যে চিন্তাই করুক, যেখানেই যাক তাকে ইনশাআল্লাহ খুঁজে বের করবই।
–এজমেয়াদজিনে আমরা কখন যাচ্ছি মুসা ভাই?
–এই তো যাত্রা শুরু করেছি। কন্ট্রোল রুমে যাব। ডিনামাইট দিয়ে কন্ট্রোল রুম উড়িয়ে দেব, তারপর তোমাদের নিয়ে যাত্রা করব। ইয়েরেভেনে গিয়ে তুমি সোফিয়াকে নিয়ে যাবে সোফিয়াদের বাড়ি, আর উত্তরমুখী এজমেয়াদজিন হাইওয়ে ধরে আমরা চলব এজমেয়াদজিনে।
–মুসা ভাই আমি যেতে পারি না?
–পারবে না কেন? কিন্তু দু’টো কারণে তোমাকে রেখে যেতে চাই। তুমি পুরোপুরি সুস্থ হওনি, তোমার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। তাছাড়া সারারাত ধরে আমাদের ঘাঁটিগুলো কি কি কাজ করল, আরও কি করণীয় এসব ব্যাপারে তোমাকে একটু খোঁজ-খবর নিতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি।
সালমান শামিল আর কিছু বলল না। ভাবল, আহমদ মুসার পরিকল্পনার উপর হাত দেয়া তার ঠিক হবে না। কিন্তু মনটা তার খচ খচ করতে লাগল। মেরী, লেডী জোসেফাইন কি ভাববে! আমার জন্যেই তাদের দুঃখ-দুর্দশা, অথচ আমি তাদের কাছ থেকে দূরে থাকছি! আর, মেরী কি ভাববে! কান্না চেপে টলতে টলতে মেরীর ছুটে পালানোর দৃশ্য সালমান শামিলের চোখে ভেসে উঠল।
কন্ট্রোল রুমে এসে পড়ল ওরা, উদগ্রীবভাবে অপেক্ষমান আলী আজিমভ, ওসমান এফেন্দীর সাথে সালাম বিনিময় করে ওরা ঢুকে পড়ল কন্ট্রোল রুমে।

Top