১৮. ব্ল্যাক ক্রসের মুখোমুখি

চ্যাপ্টার

আহমদ মুসার ঘরের বন্ধ দরজায় নক করল ডোনা। তিনবার নক করার পর দরজাটা ঈষৎ ফাঁক করে ডোনা বলল, ‘আসতে পারি?’
‘এস’। ভেতর থেকে ভেসে এল আহমদ মুসার কন্ঠ।
ঘরে প্রবেশ করল ডোনা।
পেছন থেকে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে ডোনা থমকে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, ‘ও হো দরজা তো বন্ধ হওয়া চলবে না’। বলে ফিরে এসে ডোনা দরজা খুলল এবং খুলে রাখল।
দরজা থেকে ফিরে আসতে আসতে ডোনা বলল, ‘সত্যিই কি এর প্রয়োজন আছে? আমরা কি একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারি না? দরজা খোলা রেখে লোকভয়ের পাহারা দাঁড় করাবার সত্যিই কোন প্রয়োজন আছে কিনা?’
‘শুধু আমাদের বিশ্বাসের প্রশ্ন নয় ডোনা, অন্যের বিশ্বাসের কথাও আমাদের ভাবা উচিত। লোকভয়ের পাহারার কথা বলছ কেন, দরজা খোলা রাখার অর্থ অন্যের সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দরজা বন্ধ রাখা। তোমাকে আরেকটা কথা ভাবতে হবে, দুনিয়ার সবাই আমি এবং তুমি এক অবশ্যই নই। তাছাড়া বন্ধ ঘরে আমি তুমি একা থাকি না। আরেকজনও থাকে। সে হলো শয়তান। বন্ধ দরজা তাকে সাহায্য করতে পারে আমাদের পরাজিত করার জন্যে’।
আহমদ মুসার কথায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল ডোনার মুখ। আহমদ মুসা কথা শেষ করলেও ডোনার বিস্মিত-বিমুগ্ধ দৃষ্টি আটকে থাকল আহমদ মুসার চোখের ওপর। কিছুক্ষণ পর বলল, ‘সব বুঝার বিরাট অহমিকা আমার আজ আপনি ভেঙে দিলেন। এই মুহুর্তে আমার মনে হচ্ছে, আমাকেই আমি খুব বেশি চিনি না। আমি বুঝতে পারছি, আপনি যে শয়তানের কথা বললেন, তা তো আমার আপনার সকলের মধ্যেই আছে। সুযোগ পেলেই জেগে ওঠে বীভৎস রূপ নিয়ে। এই নতুন বোধ জাগিয়ে দেয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ’।
বলে ডোনা হাতে করে নিয়ে আসা একটা বই আহমদ মুসার দিকে তুলে ধরে বলল, ‘এটাই মিনিং অব দি কুরআন। এর সবগুলো ভলিয়ম পড়ে আমি শেষ করেছি’।
আহমদ মুসা বইটা হাতে নিয়ে বলল তোমার চয়েসটা সুন্দর হয়েছে ডোনা। কুরআনের যতগুলো ইংরেজি তাফসীর আছে, তার মধ্যে এটাই সব দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ।
‘কুরআনের তাফসীর পড়তে গিয়ে একটা ছোট বিষয় আমার কাছে আজকের দুনিয়ার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। সেটা হলো পরিবার ব্যবস্থা। আজ আমাদের মত দেশের সমাজগুলোতে পরিবার ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসই হয়ে গেছে। কিন্তু কুরআন সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য ও দায়িত্ব এবং পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য ও দায়িত্ব সুস্পষ্ট করে দিয়ে এবং একে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের পুরস্কার ও শান্তির সাথে অবিচ্ছেদ্য করে দিয়ে মানুষের পরিবার ব্যবস্থাকে অক্ষয় করে দিয়েছে’।
‘একে তুমি ছোট বিষয় বলছ কেন ডোনা? মানুষের ইহজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এই পরিবার। এ জন্যেই পৃথিবীর শয়তানী শক্তি এর প্রতি আঘাত করার মাধ্যমেই মানুষ ও মানব সমাজকে বিকৃত করতে চেয়েছে এবং এখনও সে চেষ্টাই করছে’।
থামল আহমদ মুসা। থেমেই আবার প্রশ্ন করল ডোনাকে, ‘একটা ছোট প্রশ্ন করি তোমাকে ডোনা?’
‘করুন’।
‘সমাজ ও পরিবারে নারীদের যে স্থান চিহ্নিত করেছে কুরআন, সে ব্যাপারে তোমার মত কি?’
হেসে উঠল ডোনা। বলল, এটা ছোট প্রশ্ন বুঝি। এটা নিয়েই তো তোলপাড় হচ্ছে গোটা দুনিয়া’।
হ্যাঁ, প্রশ্নটাকে বড়ও বলতে পার, আবার ছোটও বলতে পার’।
‘ঠিক বলেছেন। প্রশ্নটা নিয়ে আমি অনেক চিন্তা করেছি। সুরা নিসা ও সুরা নুরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশ বার বার পড়েছি এবং বর্তমান অবস্থার আলোকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। এই চেষ্টা করতে গিয়ে আমি দেখেছি, আমাদের ইউরোপ যখন নারীকে মানুষ মনে করতো না এবং যখন নারীকে শয়তানের বাহন মনে করতো, সেই সময় কুরআন ‘মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেশত’ বলে নারীকে পুরুষের চেয়ে উঁচুতে স্থান দিয়েছে। আবার ‘স্বামী-স্ত্রী একে অপরের অভিভাবক’ বলে তাদের সমমর্যাদার আসনে সমাসীন করেছে। কিন্তু আবার বিভিন্ন দিকের বিবেচনায় আমার মনে হয়েছে নারী বঞ্চনার শিকার এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ। পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষকে নারীর চেয়ে অগ্রাধিকার দেয়াই আমার এই মনে করার কারণ। আমি অনেক চিন্তা করেও এই বৈষম্যের যৌক্তিকতা পাইনি। অবশেষে এই যৌক্তিকতা আমি খুঁজে পেয়েছি চারপাশের প্রকৃতি থেকে এবং তা পেয়েছি একটা ঘটনার মাধ্যমে। একদিন আমি ভিডিওতে ‘সাগর বক্ষের জীব’ এ ধরণের প্রকৃতি বিষয়ক একটা ফিল্মে দেখলাম, একটা পুরুষ অক্টোপাশ নারী অক্টোপাশকে তাড়া করছে এবং নারী অক্টোপাশ ক্লান্ত হবার পর পুরুষ অক্টোপাশ তাকে বশে নিয়ে এল। ঐ ফিল্মের জানলাম, এটাই অক্টোপাশদের জীবন-প্রকৃতি। এই ঘটনায় হঠাৎ একটা নতুন দৃষ্টি আমি লাভ করলাম। দেখলাম প্রাণী জগতে সর্বত্র এই একই দৃশ্য। একে কি আমি বৈষম্য বলব? মানুষের ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি না হয় ধরা যাক কুরআন কিংবা অন্য কোন ধর্ম করল, কিন্তু প্রাণী জগতের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য সৃষ্টি কে করল? উত্তর পেলাম এ বৈষম্য প্রকৃতি থেকেই। এ বৈষম্য কেউ করেনি। এটাই প্রকৃতি। মানুষও এক ধরণের প্রাণী। সুতরাং মানুষের নারী-পুরুষের মধ্যকার এই পার্থক্যটাও প্রাকৃতিক। এই উপসংহার থেকেই আমি পারিবারিক ও সামাজিক কোন কোন ক্ষেত্রে কুরআনে উল্লেখিত পুরুষের অগ্রাধিকারের যুক্তি খুঁজে পেয়েছি’। থামল ডোনা।
তার দিকে বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছিল আহমদ মুসা। বলল, ‘ধন্যবাদ ডোনা। চমৎকার যুক্তি তুমি এনেছ। এ দিকটির দিকে সম্ভবত খুব অল্প মানুষই দৃষ্টি দিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে যেমন বোনের চেয়ে ভাই পিতার সম্পত্তির দ্বিগুণ অংশ পায়, আল কুরআনের এই বিধানটাকে তুমি কোন দৃষ্টিতে দেখ?’
‘আমার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে বুঝি?’ মুখ টিপে হেসে বলল ডোনা।
তারপর আহমদ মুসার সামনে বসা ডোনা সোফায় একটু নড়েচড়ে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘প্রথমে ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই আপত্তিকর ঠেকেছিল। একদিন আমি আমার কলেজের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রবীণ শিক্ষক ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এ বিষয়ে। তিনি বললেন, ‘এই ধরণের ভাগের কথা শুনতে খারাপই লাগে। কিন্তু এর বুনিয়াদ তো মানব মনের স্বাভাবিক প্রবণতা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। মানব সমাজ-তত্ত্বের গোটা ইতিহাস ঘাটলে তুমি দেখবে অনুল্লেখযোগ্য ও অস্বাভাবিক কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মেয়েরা বিয়ের পর পিতার পরিবার ছেড়ে স্বামীর পরিবারের একজন হয়ে গেছে, আর ছেলেরা গ্রহণ করেছে পিতামাতার দায়িত্ব। পিতামাতাও তাদের ছেলের সংসারকেই নিজের সংসার মনে করে, মেয়ের সংসারকে নয়। আজ আমাদের পাশ্চাত্য সমাজ ছেলে সন্তান ও মেয়ে সন্তানের পার্থক্য মুছে ফেলার শত চেষ্টার পরেও পিতামাতারা তাদের জামাই বাড়িকে নিজের বাড়ি মনে করে না। আমার কথাই ধর, তোমার মতই আমি আমার পিতামাতার একমাত্র সন্তান। বিয়ের পর স্বামীর সাতে স্বতন্ত্র বাড়িতে উঠে এলাম। আমার স্বামীর আব্বা-আম্মা অন্য এক শহরে থাকতেন তাদের আরেকজন ছেলের সাথে। আমি আমার বৃদ্ধ আব্বাকে আমাদের সাথে থাকতে বলেছিলাম। তিনি রাজি হননি। তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমাদেরকে তার সাথে গিয়ে থাকতে। কিন্তু আমার স্বামী এটা মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় আমি একাই আবার আব্বার কাছে চলে যাই। আমি আমার স্বামীকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু আব্বা বাধা দিয়ে বলেছিলেন, আমি তোমাকে বিয়ে বহির্ভূত জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিতে দেব না। যদি তাই হয়, যদি আবার বিয়ে কর তুমি, তাহলে নতুন জামাই এখানে এসে থাকবে, এই গ্যারান্টি তুমি দিতে পার না। সুতরাং এই ইস্যুতে স্বামীকে তালাক দেয়া তোমার ঠিক হবে না। তুমি তোমার স্বামীর কাছে ফিরে যাও। আমার কথা ভেব না। আমি ঠিক করেছি, ভাতিজা ‘জন’ আমার এখানে থেকে কলেজে পড়বে। বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমি আমার স্বামীর ঘরে ফিরে এসেছিলাম। সুতরাং দেখ, আমি আর্থিকভাবে স্বামীর ওপর নির্ভরশীল না হওয়ার পরেও পিতার সংসারকে আমি আপন সংসার বানাতে পারিনি এবং পিতা আমার সংসারকে তার সংসার বানাতে পারেনি। ডোনা, এই বাস্তবতার কারণেই মোহামেডানদের পরিকল্পিত সমাজে ছেলে সন্তানকে পিতামাতার সম্পদের বেশি অংশ দেয়া হয়েছে মেয়ে সন্তানের চেয়ে’। থামল ডোনা। হাসল সে।
হেসে বলল, ‘ম্যাডাম যে কথা বলেছেন, সেটা আমারও কথা’।
আহমদ মুসার মুগ্ধ দৃষ্টি ডোনার ওপর নিবদ্ধ। ফুলহাতা শুভ্র গাউন পরেছে ডোনা। মাথায় শুভ্র রুমাল। রুমালের নিচের প্রান্তদ্বয় গলায় পেঁচানো। ডোনার চোখে-মুখেও একটা শুভ্র পবিত্রতা।
আহমদ মুসা তার দৃষ্টি নামিয়ে নিল। বলল, ‘ডোনা, আমার মনে হচ্ছে কি জান, তোমরা ইউরোপীয়রা যদি ইসলামকে বুঝতে চেষ্টা কর, তাহলে আমাদের চেয়ে ভালো বুঝতে পারবে। আর যদি তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, তাহলে ইসলামের আহ্বানকে তোমরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্যতার সাথে দুনিয়াবাসীর সামনে পেশ করতে পারবে’।
‘ধন্যবাদ। কিন্তু সূর্য বুঝি চাঁদের এভাবে প্রশংসা করতে পারে?’ একটা বিচ্ছুরিত আবেগ ঠিকরে পড়ছে ডোনার চোখ-মুখ থেকে।
‘তোমরা চাঁদ, কে বলল ডোনা? প্রতিটি মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ মানবিকতার অধিকারী। প্রত্যেকেই একেকটি সূর্য’।
একটু থামল আহমদ মুসা। তারপর সোফায় সোজা হয়ে বসল। বলল গম্ভীর কন্ঠে, ‘সত্যি বলছি ডোনা, তোমরা পাশ্চাত্যের লোকেরা যে বুদ্ধিবৃত্তিক মানে পৌছেছ তার সাথে ইসলামের শিক্ষা যদি যুক্ত হয় তাহলে আজ হতে পার তোমরা দুনিয়ার শিক্ষক’।
‘ধন্যবাদ আপনাকে। বড় যারা তারা ছোটদের এভাবে বড় করেই ভাবে’। ঠোঁটে হাসি টেনে বলল ডোনা।
‘না ডোনা, বড়রা বড়দেরই চিহ্নিত করে’।
‘কিন্তু ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করার মত বুদ্ধি কি পাশ্চাত্যের আছে?’
‘ডোনা তো পাশ্চাত্যেরই একজন’।
‘আহমদ মুসা কি পাশ্চাত্যের পথভ্রষ্ট সব ডোনার কাছে যেতে পারবেন?’
হাসল আহমদ মুসা।
কিন্তু গাম্ভীর্য নেমে এল তার মুখে সব মুহূর্তেই। বলল, ‘ঠিক বলেছ ডোনা। ইসলামের সবচেয়ে বড় অসুবিধা এটাই। পাশ্চাত্যের কাছে তার আহ্বান পৌঁছাবার উপযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণের বড় অভাব’।
‘তাহলে কি দাঁড়াল, অভাব কি আহ্বানের প্রতি সাড়া দেয়ার মত উপযুক্ত মনের, না অভাব আহ্বান পৌছাবার মত উপযুক্ত মানুষ ও মনের?’
‘দ্বিতীয়টাই ঠিক ডোনা। আহ্বান উপযুক্ত হলে আজকের ইউরোপে আদর্শিক শূণ্যতায় আহ্বান গ্রহণের উপযুক্ত মন সহজেই সৃষ্টি হতে পারে’।
‘ধন্যবাদ’। বলল ডোনা।
বলে ডোনা উঠে দাঁড়াল। বলল, এখন কি করবেন?
‘কেন বলছ?’
‘চলুন ঘুরে আসি। আমাদের বেজমেন্টেতো যাননি। মজার কিছু জিনিস আছে’।
‘মাটির তলায় কতগুলো রুম আছে তোমাদের? বিল্ডিং-এর সবটা জুড়েই কি?’
‘বলা যায়’।
‘চল যেতে পারি’। বলে উঠে দাঁড়াল আহমদ মুসা।
ডোনা ও আহমদ মুসা পাশাপাশি হাঁটছিল।
‘বেজমেন্টে তো অবশ্যই কেউ থাকে না?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ভয় নেই, ওখানে এখন আব্বা আছেন’। ঠোঁটে একটা দুষ্টুমির হাসি টেনে বলল ডোনা।
‘নিশ্চয় উনি কাজে আছেন, আমরা তাকে বিরক্ত করবো না তো?’
‘কাজ কি! প্রতিদিন একটা সময় তিনি বেজমেন্টে কাটান’।
বাড়ির অভ্যন্তরের একটা স্বতন্ত্র লিফটে তারা মাটির তলায় একটা হলঘরে গিয়ে নামল।
হলঘরেই মাঝ বরাবর একটা টেবিলে বসে কিছু কাগজপত্র নাড়াচাড়া করছিল ডোনার আব্বা মি. প্লাতিনি।
তারা লিফট থেকে নামতেই ডোনার আব্বা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কয়েক ধাপ সামনে এগিয়ে স্বাগত জানাল আহমদ মুসাকে। বলল, ‘আজকেই মনে করেছিলাম তোমাকে আমাদের ফ্যামেলি জাদুঘরে নিয়ে আসব। এসে ভালো করেছ’।
‘না আব্বা, উনি আসেননি। আমি নিয়ে এসেছি’।
ডোনার আব্বা হাসল। বলল, ‘তোমাকে ধন্যবাদ ওকে নিয়ে আসার জন্যে’।
বলে আহমদ মুসার দিকে চেয়ে বলল, ‘আমার এই মা’র কিছুর অভাব নেই, ভিখারী শুধু স্নেহের এবং প্রাপ্য স্নেহ সে আদায় করে ছাড়ে’।
‘ভিখারী বললে আব্বা? আমি তো ঋণ গ্রহণ করি না, প্রাপ্য নেই’।
‘স্নেহের মতে বিষয়গুলো কি বিনিময় যোগ্য পণ্য? তা না হলে প্রাপ্য হয় কি করে?’
‘হয়। একতরফা কাজে আমি বিশ্বাস করি না। এখানেই প্রাপ্যতার প্রশ্ন আসে। তবে আপনার ‘পণ্য’ শব্দ ব্যবহারের সাথে আমি একমত নই’।
‘কেন?’
‘স্নেহের মত অরূপ জিনিসগুলো পরিমাপ যোগ্য নয়, টাকার অংকে বিনিময় যোগ্য নয়। সুতরাং পণ্য শব্দের ব্যবহার এক্ষেত্রে অমর্যাদাকর’।
ডোনার আব্বা হাসল। বলল, ‘তোমাকে ব্যারিষ্টার না বানিয়ে ভুলই করেছি। যাক, মা তুমি আহমদ মুসাকে জাদুঘরের জিনিসগুলো দেখাও’।
লিফট থেকে আহমদ মুসারা যে হলে নেমেছে, সেটা বিরাট একটা হলঘর। হলের চারদিকের দেয়াল জুড়ে শোকেস। হলের মধ্যখানে ডিম্বাকৃতি আরেকটা শোকেস।
ডোনা আহমদ মুসাকে নিয়ে শোকেসের দিকে এগোলো।
শোকেসগুলোতে পরিধেয় বস্ত্রাদি, জুতা থেকে শুরু করে শিরস্ত্রাণ পর্যন্ত নানা উপকরণ, অলংকারাদি এবং হাতে ব্যবহৃত অস্ত্রাদি সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
কয়েকটি শোকেসে আহমদ মুসা দেখল ফ্রান্সের সম্রাট ষষ্ঠ হেনরী ও ত্রয়োদশ লুইয়ের পোশাক-পরিচ্ছদ ও অন্যান্য উপকরণাদি। তার সাথে তাঁর একটা তৈলচিত্র।
এভাবে সে পরবর্তী শোকেসগুলোতে দেখল সম্রাট চতুর্দশ লুই, পঞ্চদশ লুই, ষোঢ়শ লুইয়ের পোশাক-পরিচ্ছদ, তৈলচিত্র, ব্যবহার্য উপকরণাদির সংগ্রহ। আহমদ মুসা মনে মনে হিসেব করল ফরাসি বিপ্লবোত্তর ২০ বছরের ইতিহাস বাদে ২৩৫ বছরের ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়েছে এখানে। এই সময়ে ফ্রান্সে বুরবো রাজবংশে রাজত্ব করেছে। লুই সম্রাটেরা এই বংশেরই শাসক ছিলেন।
আহমদ মুসা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল ডোনার দিকে। বলল, ‘এতো দেখছি বুরবো সম্রাটদের স্মৃতির সংরক্ষণ’।
‘আপনি বুরবোদের ইতিহাস জানেন?’ বলল ডোনা।
‘ইতিহাস যখন, কিছু তো জানতেই হবে’।
‘কেমন লাগে সে ইতিহাস?’
‘সম্রাট অষ্টাদশ লুইকে আমি শ্রদ্ধা করি। তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্রী। গণতন্ত্রের পক্ষে তাঁর উদ্বেগ ও কাজকে ইতিহাস কোনদিনই ভুলবে না’।
‘ইউরোপীয় ইতিহাসের এত বিস্তারিত খবর রাখেন আপনি?’
আহমদ মুসা ডোনার প্রশ্নের দিকে না গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘বুরবো সম্রাটদের সবার স্মৃতি এখানে ধরে রাখা হয়েছে, কিন্তু শেষ সম্রাট দশম চার্লসের কোন কিছু এখানে নেই কেন?’
‘দশম চার্লসকে আমরা বুরবো বলে মনে করি না। তাঁকে আমরা ভুলতে চাই’।
‘কেন?’
‘সম্রাট অষ্টাদশ লুইয়ের উত্তরাধিকারী ফরাসী গণতন্ত্রের মানসপুত্র যুবরাজ ডিউক ডি বেরী লুইকেই সে শুধু হত্যা করেনি, হত্যা করেছিল ফরাসী গণতন্ত্রকে’। বলল ডোনা।
ডোনার আব্বাও এ সময় তাদের সাথে এসে যোগ দিল।
আরেকটু সামনে এগোলো তারা।
শুরু হলো অশাসক বুরবোদের চিত্র কাহিনী।
প্রথমেই দুটি শোকেসে নিহত যুবরাজ ডিউক ডি বেরীর ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদ, তৈলচিত্র ইত্যাদি।
আহমদ মুসা বিস্মিত হলো, শুধু বুরবো রাজবংশ ছাড়া ফ্রান্সের আর কোন রাজবংশের স্মৃতি সংরক্ষণ এখানে করা হয়নি। আহমদ মুসা ডোনার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘বুরবো রাজ বংশের আগে আরও তো রাজবংশ ছিল, তাদের কোন চিহ্ন ও স্মৃতি তো এখানে দেখছি না?’
‘কারণ এটা আমাদের ফ্যামিলি জাদুকর’। বলল ডোনা।
‘ফ্যামিলি জাদুঘরে কি শুধু এক রাজবংশের কথাই থাকতে হবে?’
‘তুমি যে অর্থে ভাবছ, সে অর্থে সে রকম কোন ফ্যামিলি জাদুঘর এটা নয়। এখানে আমরা আমাদের পরিবারের অতীতকেই শুধু ধরে রাখার চেষ্টা করেছি’। বলল ডোনার আব্বা।
আহমদ মুসার চোখে-মুখে নেমে এল এক রাশ বিস্ময়। বলল, ‘অর্থাৎ আপনারা বুরবো রাজবংশের মানে বুরবো রাজাদের আপনারা উত্তর পুরুষ?’
ডোনার আব্বা মিশেল প্লাতিনির ঠোঁটে একটা ম্লান হাসি ফুটে উঠল। বলল, ‘এটাই ইতিহাস’।
বলে মি. প্লাতিনি আহমদ মুসাকে আরেকটু সামনে এগিয়ে নিয়ে একটা বড় শোকেসের সামনে দাঁড় করালো।
শোকেসটিতে ফ্রান্সের বুরবো রাজবংশের বিস্তৃত বংশ তালিকা। ১৫৮৯ সালে সম্রাট ষষ্ঠ হেনরী থেকে এই রাজবংশের শুরু। বংশ তালিকায় প্রথম নাম সম্রাট ষষ্ঠ হেনরীর। বংশ তালিকায় প্রত্যেক নামের সাথে ছবি রয়েছে।
গোটা বংশ তালিকার ওপর নজর বুলালো আহমদ মুসা। সর্বশেষ নাম সে দেখল ‘প্রিন্সেস মারিয়া জোসেফাইন লুই’। তার আগের নাম প্রিন্স মিশেল প্লাতিনি লুই। আহমদ মুসা বুঝল প্রিন্স মিশেল প্লাতিনি লুই ডোনার আব্বা। কিন্তু শেষ নামের সাথে যে ফটো সে দেখেছে, সেটা ডোনার, কিন্তু নাম মেলে না। আহমদ মুসা ডোনার আব্বার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল, ‘প্রিন্সেস মারিয়া জোসেফাইন লুই কে?’
‘ওটাই ডোনার পারিবারিক নাম’। হেসে বলল ডোনার আব্বা।
উত্তরটা দিয়েই ডোনার আব্বা ডোনার দিকে চেয়ে বলল, ‘আমি ওপরে যাচ্ছি, ওষুধ খেতে হবে। লিফটের পাশের ঘরে দু’জন কনডিশনার কাজ করছে। ওদের চেকিং-এর কাজ হয়ে গেছে। ক’মিনিট পরে ওরা চলে যাবে। ওদের বিদায় দিয়ে পরে তোমরা এস’।
বলে ডোনার আব্বা লিফটের দিকে হাঁটতে শুরু করল।
চলে গেল ডোনার আব্বা।
ডোনার চোখে-মুখে কিছুটা লজ্জা ও বিব্রতকর অবস্থার ছাপ।
ডোনার আব্বা চলে যেতেই আহমদ মুসা মাথা নিচু করে শরীরটা সামনে ঝুঁকিয়ে ‘বাউ’ করল ডোনাকে এবং বলল, ‘তাই তো বলি, ডুপ্লেরা তোমাদেরকে অত ‘বাউ’ করছিল কেন, কেন ডুপ্লেরা তোমার আব্বার পাশে গাড়ির সিটে বসেনি এবং কেন ডুপ্লেরা ড্রইং রুমে সোফায় না বসে কার্পেটে বসেছিল। প্রশ্ন তখনি মনে জেগেছিল আমার। জবাব পাইনি’।
ডোনার মুখটা আরও লাল হয়ে উঠেছে। বলল, ‘আব্বা, আমি-আমরা কেউ চাই না, আমাদের সাথে ওরা এই আচরণ করুন। আমরা তাদের পাশে বসাতে চাই। প্রজার স্টাইলে বাউ করতে আমরা নিষেধ করি সব সময়। কিন্তু কেউ শুনে না। আমরা কি এর জন্যে দায়ী?’ ডোনার কন্ঠে প্রতিবাদের সুর।
‘নিষেধ করবে কেন? ওরা তো অন্যায় কিছু করছে না। একটা বাস্তবতাকেই তারা স্বীকৃতি দিচ্ছে মাত্র’।
‘আপনিও বিদ্রুপ করছেন? যে যা নয় তাকে তা বলা তার জন্যে অপমানকর’।
‘তুমি কি বুরবো বংশের রাজকুমারী নও?’
‘কুমারী, কিন্তু রাজকুমারী নই। ওদের সাথে রক্তের সম্পর্ক ছাড়া আর কোন সাদৃশ্য নেই’।
‘এটা তোমার কথা। মানুষের কথা নয়। মানুষের কাছে তুমি বুরবো বংশের রাজকুমারী। মানুষের কাছে মর্যাদা তোমাদের এ কারণেই’।
‘এ মর্যাদা আমরা কারও কাছে কখনও চাইনি’। ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল ডোনা।
‘চাওনি বলেই নিষেধও করতে পার না’।
‘সুতরাং মুখ বুজে আপনার ‘বাউ’ গ্রহণ করে আমাকে প্রিন্সেস সেজে বসে থাকতে হবে বুঝি’। ডোনার কন্ঠে প্রচন্ড ক্ষোভ।
‘একটা বাস্তবতাকে তুমি অস্বীকার করতে চাইছ কেন ডোনা?’
‘আমি ‘ডোনা’ আমি ‘মারিয়া’ হতে চাই না’। ডোনার কন্ঠে ক্ষোভের উত্তাপের চেয়ে এবার অশ্রুর সিক্ততা বেশি।
‘মারিয়া ও ডোনার মধ্যে সংঘাত কোথায় ডোনা?’
‘মারিয়া রাজকুমারী, বুরবোদের এক ধ্বংসাবিশেষ। আর ডোনা আপনার অনেক পরিচিত এক নির্দোষ বালিকা’। আবেগে কাঁপল ডোনার কন্ঠ।
‘কিন্তু ডোনা, মারিয়ার মধ্যে তো আমি কোন দোষ দেখি না। রাজকুমারী হওয়া তার কোন অপরাধ নয়’।
‘কেন, বুরবোদের রক্তাক্ত রাজদন্ড কি রাজকুমারী মারিয়াকেও স্পর্শ করে না?’
‘যার ধর্ম শুধু তার ওপর বর্তায় ডোনা, রক্তের ওপর বর্তায় না। তাছাড়া বুরবোদের রক্তাক্ত রাজদন্ডকে তোমাদের সাক্ষাৎ পূর্বপুরুষ বুরবো যুবরাজ ডিউক ডি বেরী নিজের রক্ত দিয়ে মুছে দিয়ে গেছেন। বুরবোদের সর্বশেষের এই গৌরব রাজকুমারী মারিয়াকেও উজ্জ্বল করেছে’।
‘আপনি ভালো, তাই ভালোটাই আপনি দেখতে পান। কিন্তু সত্যই কি বুরবোদের প্রিন্সেস মারিয়া জোসেফাইন লুই ডোনা জোসেফাইনকে অপরিচয়ের অন্ধকারে ঠেলে দেয় না?’ ভেজা কন্ঠ ডোনার। তার দু’চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু নেমে এল তার দু’গন্ড বেয়ে।
‘এই নতুন পরিচয় ডোনাকে আমার কাছে আরও সুন্দরতর করেছে’।
ডোনা দুহাতে মুখ ঢাকল। কয়েক মুহুর্ত চুপ থাকল। তারপর বলল, ‘বাঁচালে তুমি আমাকে’।
আহমদ মুসা শোকেসগুলোর দিকে মনোযোগ দিল। ডোনা ধীরে ধীরে সামনে এসে দাঁড়ালে আহমদ মুসা বলল, ‘বাঁচলে কি করে ডোনা?’
এতক্ষণে হাসল ডোনা। বলল, ‘সবকিছু আপনাকে জানতে হবে না’।
‘সব কিছু জানব না কিন্তু কিছু তো জানতে পারি?’
‘কি?’
‘তুমি’ কিংবা ‘আপনি’ যে কোন একটা বলা দরকার। দুটোই তো বলছ তুমি’।
‘কখনও না, আপনার সাথে এ বেয়াদবী করতে পারি না’।
আহমদ মুসা ঘুরে দাঁড়াল। মুখোমুখি হলো ডোনার। বলল, ‘এই তো এখনি বললে’।
ডোনা মুখ নিচু করল।
মুখটা তার গম্ভীর হয়ে উঠল। বলল, ‘মাফ করবেন। হয়তো হয়ে গেছে। আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম’।
‘মাফ চাইছ কেন? অপরাধ মনে করছ?’
‘তা নয়, কিন্তু….’।
কথা শেষ করেই হলের ও প্রান্তের দিকে চেয়ে বলল, ‘ঐ যে কন্ডিশনাররা চলে গেল। চলুন আমরা যাই’।
বলে হাঁটা শুরু করল ডোনা।
আহমদ মুসাও চলল।
উপরে উঠে গেল তারা লিফটে।
ফ্যামিলি জাদুঘরের লিফট রুমটা মি. প্লাতিনি ও ডোনার বেডরুমের মাঝখানের করিডোর।
ডোনার বেডরুমের সামনে এসে আহমদ মুসা বলল, ‘আসি ডোনা’।
‘চলুন, আপনাকে পৌছে দিয়ে আসি’।
চলতে শুরু করল দু’জনে।
দু’জনেই নীরবে মাথা নিচু করে হাঁটছিল। এক সময় ডোনা তার চোখ নিচু রেখেই বলল, ‘আপনার প্রশ্নের জবাব পুরো করতে পারিনি কিছু মনে করেছেন?’
‘কেন পারনি?’
‘অনেক সময় অনেক কিছু পাওয়া যায় না’।
আহমদ মুসারা হাঁটছিল ডোনাদের ফ্যামিলি ড্রইং রুমের সামনে দিয়ে।
ডোনার আব্বা ড্রইং রুমে বসে কাগজে নজর বুলাচ্ছিল। আহমদ মুসাদের যেতে দেখে বলল, ‘আহমদ মুসা একটু এস’।
আহমদ মুসা ও ডোনা দু’জনেই প্রবেশ করল ড্রইং রুমে।
আহমদ মুসা বসলে ডোনার আব্বা খবরের কাগজের লাল পেন্সিলে মার্ক করা একটা অংশ তাকে দেখিয়ে বলল, ‘ছোট্ট বিজ্ঞাপনটা পড়’।
আহমদ মুসা পড়ল। বলল, ‘জি, একটা ফার্ম ছোট খাট ভাঙা ও ফুটো হওয়া গাড়ি ক্রয় মুল্য থেকে দশ পারসেন্ট ডিসকাউন্টে কিনছে’।
‘হ্যাঁ, এটাই। খুব লোভনীয় সুযোগ। এ ধরণের গাড়ি শতকরা ৩০ ভাগ ডিসকাউন্ট ছাড়া কেউ নেয় না। এই সুযোগে আমাদের সেদিনের ফুটো হয়ে যাওয়া গাড়িটাকে বিক্রি করে দিতে পারি। আমরা গাড়িটা এখন ব্যবহার করছি না’।
‘অন্যের চেয়ে ২০ পারসেন্ট কম ডিসকাউন্টে নিচ্ছে। এটা স্বাভাবিক নয়’।
‘অস্বাভাবিক হলে তার কারণ কি হতে পারে?’ বলল ডোনার আব্বা।
আহমদ মুসা একটু ভাবল। বলল, ‘আপনি আপনার এই গাড়ি ভুয়া নাম্বার ও ভুয়া ঠিকানা দিয়ে সার্ভিস সেন্টারে পাঠিয়ে দিন। তারপর এই পত্রিকায় এই কলামে একটা বিজ্ঞাপন দিন। তাতে বলুন, গাড়ি আপনি বিক্রি করবেন। পেছনের বডিতে কয়েকটা ফুটো হওয়া ছাড়া নিখুঁত গাড়ি। উপযুক্ত কমিশনে বিক্রি হবে’।
‘ঠিক আছে। বিজ্ঞাপন দিলাম। গাড়ি পাঠালাম। কিন্তু ভুয়া নাম্বার ভুয়া ঠিকানা কেন?’
‘এই বাড়ি এবং আপনাদেরকে দৃশ্যপটে না আনার জন্যে’।
‘ঠিক আছে। দু’টি কাজই আজ করাচ্ছি’।
‘ধন্যবাদ’। বলে আহমদ মুসা উঠল।
ডোনাও উঠল।

আহমদ মুসা তার ড্রইং ১৯ রুমের সোফায় বসে পত্রিকার বিজ্ঞাপনটার কথাই ভাবছিল। সে নিশ্চিত যে, বিজ্ঞাপনটা ব্ল্যাক ক্রসই দিয়েছে। এর অর্থ ব্ল্যাক ক্রস মরিয়া হয়ে উঠেছে তাদের বুলেটে বিদ্ধ গাড়িটা খুঁজে পাবার জন্যে। গাড়িটা তারা খুঁজে পেতে চায় ডুপ্লেকে ধরার জন্যে, না ডুপ্লের সাহায্যকারীদের ধরার জন্যে? ডুপ্লে যদি ইতিমধ্যে ধরা না পড়ে থাকে, তাহলে ডুপ্লেই তাদের প্রধান টার্গেট। আহমদ মুসা নিশ্চিত, ডুপ্লে ধরা পড়েনি। তাদের প্রধান টার্গেট ধরা পড়লে তারা গাড়ি খোঁজার এত গরজ করতো না। আহমদ মুসা যে ডুপ্লেকে উদ্ধার করার ঘটনার সাথে জড়িত আছে, এ কথা ব্ল্যাক ক্রস জানে না। এছাড়া শার্কবে’র জাহাজ, নানতেজ এবং সুরলুরের ঘটনা আহমদ মুসার কাজ, একথাও ব্ল্যাক ক্রস নিশ্চয় জানে না। মুখে হাসি ফুটে উঠল আহমদ মুসার। মি. ক্লাউডে ঠিকই বলেছেন, ব্ল্যাক ক্রস অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। অন্যকে পরোয়া খুব কম করে, তাই শত্রু সম্পর্কে অনুসন্ধানেও তারা যায় না। আহমদ মুসার ক্ষেত্রেও তারা তাই করেছে।
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top