২৩. রাজচক্র

চ্যাপ্টার

বন্ধ গেটটির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হর্ণ দিল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসার গায়ে ফরাসি মেট্টো পলিটান পুলিশ ইন্সপেক্টরের পোশাক।
গেটম্যান বন্ধ গেটের ওপাশে দাঁড়িয়ে আহমদ মুসার গাড়ির দিকে তাকাল।
আহমদ মুসা গাড়ি থেকে মুখ বের করে বলল, ‘দরজা খুলে দাও। ম্যাডামের সাথে কথা বলতে হবে।’
গেটম্যান পা ঠুকে আহমদ মুসাকে একটা স্যালুট দিয়ে বলল, ‘ইয়েস স্যার।’
গেট খুলে গেল। ভেতরে প্রবেশ করল আহমদ মুসার গাড়ি। বেশ বড় বাড়ি। চারদিকে প্রাচীর ঘেরা। উঁচু প্রাচীর।
শিন নদীর রয়্যাল ব্রীজ থেকে যে প্যালেস দক্ষিণ দিকে উঠে গেছে, তার দক্ষিণ প্রান্তের দিকে এ বাড়িটি। লুইদের প্রাসাদ অর্থাৎ ডোনাদের বাড়ি এ প্যালেস রোডের মুখে অর্থাৎ নদীর তীরেই।
বাড়িতে থাকত ক্যাথারিন, তার মা এবং ক্যাথারিনের নানা। ক্যাথারিন কিডন্যাপ হওয়ার পর তার মা এবং নানা রয়েছে বাড়িতে।
আহমদ মুসা প্যারিসে আসার পর ক্যাথারিনের বিষয় জানার জন্যে ক্যাথারিনের মা’র সাথে চেষ্টা করেও দেখা করতে পারেনি। প্রতিবার চেষ্টায় একই জবাব পেয়েছে, কারও সাথে উনি কথা বলবেন না। কারও কিছু জানার বা বলার থাকলে তিনি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করুন।
কিন্তু ক্যাথারিনের মা’র সাথে দেখা আহমদ মুসাকে করতেই হবে। অবশেষে আজ পুলিশ বেশে আহমদ মুসা প্রবেশ করল ক্যাথারিনের বাড়িতে।
গাড়ি বারান্দায় গাড়ি থামতেই একজন বেয়ারা ছুটে এসে গাড়ির দরজা খুলে ধরল।
আহমদ মুসা নামল গাড়ি থেকে।
‘আসুন, মহামান্য ডমেস অপেক্ষা করছেন ড্রইংরুমে।’ বলল বেয়ারা, সামনে চলার পথের দিকে ইংগিত করে।
বেয়ারা পুলিশ রূপী আহমদ মুসাকে পৌঁছে দিল ড্রইংরুমে।
ড্রইংরুমে প্রবেশ করে আহমদ মুসা দেখল ষাট-পঁয়ষট্টি বছরের একজন বৃদ্ধা সোফায় বসে আছে। রাজকীয় চেহারা। বসে আছেনও রাজকীয় কায়দায়।
এ বৃদ্ধাই তাতিয়ানার দাদী এবং ক্যাথারিনের মা। নাম গ্রান্ড ডমেস লিওনিদা জিভনা।
আহমদ মুসা প্রবেশ করতেই ক্যাথারিনের মা বলল, ‘ওয়েলকাম, ইন্সপেক্টর।’
তারপর সোফার দিকে ইংগিত করে বলল, ‘বসুন।’
আহমদ মুসা বসল।
আহমদ মুসা বসতেই ক্যাথারিনের মা লিওনিদা বলে উঠল, ‘মিঃ ইন্সপেক্টর, বলুন আমি কি সাহায্য করতে পারি। কালকেও তো আবার জানিয়েছি, যা বলেছি তার বাইরে কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
‘ইয়োর হাইনেস, আপনি কি আমাকে মাফ করবেন যদি আমি বলি আমি পুলিশের বেশ ধরে এসেছি, কিন্তু আমি পুলিশ নই।’ বলল আহমদ মুসা খুব নরম কন্ঠে।
কথাটা শুনেই বিস্ময়ের একটা ছায়া খেলে গেল ক্যাথারিনের মা লিওনিদার মুখের উপর দিয়ে। তার চোখ দু’টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। বলল, ‘তাহলে আপনি কে? ক্যাথারিনকে কিডন্যাপকারীদের কেউ?’
‘আমি পুলিশেরও কেউ নই, কিডন্যাপকারীদেরও কেউ নই। আমি ক্যাথারিনের শুভাকাঙ্খী। আমি চাই সত্বর তিনি উদ্ধার পান।’
‘ক্যাথারিনের বন্ধু তুমি? কিন্ত ক্যাথারিনের বন্ধু ছিল বলে তো জানি না।’
‘আমি ক্যাথারিনের বন্ধু নই। তাঁর সাথে কোনদিন দেখাও হয়নি। আমি তাঁর একজন শুভাকাঙ্খী।’
‘কারণ?’ ক্যাথারিনের মা লিওনিদার চোখে তীক্ষ্ণ জিজ্ঞাসা।
আহমদ মুসা দ্বিধায় পড়ে গেল। সে তাতিয়ানার সাথে সম্পর্কের কথা এখন বলতে চায় না।
আহমদ মুসা তৎক্ষণাৎ কোন জবাব দিতে পারল না।
‘উদ্দেশ্যই সবচেয়ে বড় জিনিস। তুমি যখন উদ্দেশ্যটাই বলতে পারলে না, তখন তোমার বিশ্বাসযোগ্যতা আর থাকল কোথায়?’
‘আপনি ঠিকই বলেছেন। তবে সব সত্য সব সময় প্রমাণ করা যায় না। সব কথা সব সময় বলাও যায় না।’
‘তা যায় না, কিন্ত কেন তুমি আমাদের সাহায্য করতে চাও, এটুকু তো তোমার বলা উচিত।’
আহমদ মুসা গম্ভীর হলো। বলল, ‘অবশ্যই বলা উচিত। কিন্ত বলতে পারছি না। অবিশ্বাস করে যতটুকু বলা যায় ততটুকু কি আমাকে বলতে পারেন না?’
ক্যাথারিনের মা লিওনিদা হাসল। বলল, ‘বলতাম। তোমাকে অবিশ্বাস করলে বলতাম। কিন্তু তুমি সত্য লুকাওনি। তোমাকে খুবই ভালো ছেলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া তুমি এশিয়ান, তোমার এতটা পর্যন্ত পৌঁছা প্রমাণ করছে আর দশ জনের মত সাধারণও তুমি নও। যেহেতু আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, তাই আমি চাই, তুমিও আমাকে বিশ্বাস করো।’
আহমদ মুসা ভাবছিল। জবাব তৎক্ষণাৎ দিতে পারল না। ক্যাথারিনের মা’র আন্তরিকতাপূর্ণ কথাগুলো তার হৃদয় স্পর্শ করেছে। কিন্তু সব কথা খুলে বলতে সে ভরসা পাচ্ছে না। বিশেষ করে তাতিয়ানার মৃত্যুর খবর, আংটি ও ডায়েরীর কথা।
উত্তর দিতে আহমদ মুসার দেরী হলো।
কথা বলল আবার ক্যাথারিনের মা’ই। বলল, ‘ঠিক আছে। বলো, কি জানতে তুমি।’ অসন্তুষ্টির ছাপ তার চোখে-মুখে।
আহমদ মুসা উঠে গিয়ে লিওনিদার পায়ের কাছে কার্পেটের উপর বসল। বলল, ‘আপনি আমার মায়ের মত। আপনি অসন্তুষ্ট হলে আমি কষ্ট পাব। সবই আপনি জানতে পারবেন, কিন্তু আজ নয়।’
লিওনিদা হাসল। বলল, ‘পাগল ছেলে। যাও উঠে বস। তোমার মুখ দেখে যা বুঝেছি, ঠিক তেমন তুমি। বলত কি বিষয় তুমি জানতে চাও?’
‘ক্যাথারিনের কিডন্যাপ হওয়ার পূর্বাপর অবস্থা ও কারণ সম্পর্কে কিছু তথ্য।’
‘এসব তথ্য নিয়ে কি করতে চাও তুমি?’
‘আমি তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা করব।’
লিওনিদা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘মনে হয় বাজে কথা তোমার মুখে মানায় না। তুমি কি বুঝে কথা বলছ বাছা? আমরা এক কঠিন সংকটে পড়েছি। কিন্তু তাই বলে এই নিয়ে কোন প্রকার বিদ্রুপ আমরা পছন্দ করবো না।’
আহমদ মুসার ঠোঁটে সূক্ষ্ম একটা হাসি ফুটে উঠল।
তৎক্ষণাৎ জবাব দিল না। একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বলল, ‘ইয়োর হাইনেস, আমি সামান্য মানুষ। শক্তি সেই রকম ক্ষুদ্র। কিন্তু তাই বলে কাউকে এমন ছোট করে দেখা কি ঠিক?’
হাসল লিওনিদা। সোজা হয়ে বসল। বলল, ‘বাহ তুমি বেশ কথা জান। আমি তোমাকে ছোট করে দেখিনি। তবে তোমার কথাটা অসম্ভব, কিছু মনে হওয়ায় ওভাবে তার প্রকাশ করেছি। যাক, তোমার দৃঢ়তাকে মোবারকবাদ দিচ্ছি বাছা। বল, তুমি কি জানতে চাও।’
‘প্রিন্সেস ক্যাথারিন কিডন্যাপ কেন কার দ্বারা হলো, এ ব্যাপারে আপনার চিন্তা আমাকে বলুন।’
লিওনিদার চোখে সামান্য বিস্ময়ের একটা রেখা ফুটে উঠল। বলল, ‘আমি কি জানি, তা জিজ্ঞাসা না করে আমার চিন্তা জানতে চাচ্ছ কেন?’
‘মানুষ অনেক কিছু না জানতে পারে, কিন্তু অনেক কিছু সে চিন্তা করতে পারে। আর চিন্তার মধ্যে জানা বিষয়ও থাকে, চিন্তাও থাকে।’
‘ব্রাভো, ব্রাভো! তুমি আমাকে অবাক করেছ বৎস। পুলিশ কিন্তু সব সময় জানতে চেয়েছে আমি কি জানি।’
বলে একটু থামল লিওনিদা। তারপর ধীরে ধীরে শুরু করল, ‘পুলিশকে আমি কিছুই বলিনি। কারণ কারা কেন কিডন্যাপ করল কিছুই জানি না। তবে তুমি চিন্তার কথা বলছ। চিন্তা আমার তো কিছু হয়ই।’
আবার থামল।
সোফায় গা এলিয়ে দিল। বলতে লাগল, ‘যখন বুঝলাম, ক্যাথারিন কিডন্যাপ হয়েছে, সংগে সংগে আমার মনে হলো, ‘বহু বছর পর রাশিয়ার রাজ পরিবারের সৌভাগ্য সূর্যের উদয় কি তাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াল? এটাই ছিল আমার প্রথম চিন্তা।’
থামল ডমেস লিওনিদা।
‘সৌভাগ্য সূর্যের উদয়টা কি?’
‘বলছি।’
বলে একটু দম নিল তারপর আবার বলতে শুরু করল, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়া এবং কম্যুনিজমের পতনের পর রুশ দূতাবাসের কাছে আমাদের পরিচয় আর গোপন রাখিনি। ক’মাস আগে নতুন রুশ সরকারের একজন মন্ত্রী বেসরকারী সফরে ফ্রান্সে এসে আমাদের সাথে দেখা করলেন। তিনি জানালেন, সরকার চিন্তা করছেন রাজ পরিবারের সব সদস্যকে রাশিয়ায় ফিরিয়ে নেবেন যথাযথ মর্যাদার সাথে। সরকার ক্রাউন প্রিন্সেস তাতিয়ানাসহ রাজ পরিবারের সকল সদস্যের মতামত জানতে চান। এর কিছু দিন পর রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত এসে গোপনে আমার সাথে দেখা করলেন এবং বললেন, সরকার সংবিধান সংশোধন করে গণতন্ত্রের সাথে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করতে চাচ্ছেন। প্রেসিডেন্টের বদলে থাকবেন রাজা বা রাণী। আর প্রধানমন্ত্রী হবেন রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান। সিংহাসনের প্রথম উত্তরাধিকারী তাতিয়ানা এবং দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী হবেন তৃতীয় ক্যাথারিন। এ ব্যাপারে রুশ সরকার রাজপরিবারের সম্মতি ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন।
দ্বিতীয় এই ঘটনার ঠিক দু’মাসের মাথায় ক্যাথারিন কিডন্যাপ হলো এবং পনের দিন হলো তাতিয়ানারও কোন খোঁজ জানি না। ক্যাথারিন ঠিকানাহীন ভবঘুরে হয়ে পড়লেও সাত দিনে সে একবার আমাদের খোঁজ নেবেই। আমি তার জন্যেও উদ্বিগ্ন।’ থামল লিওনিদা।
‘এ ব্যাপারে আর কিছু আপনার চিন্তায় আছে?’
‘রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত দু’টো জিনিস সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল। সেটা হলো, রুশ সম্রাটদের উত্তরাধিকার বিষয়ক মূল্যবান দু’টি ডকুমেন্ট। আমি বলেছিলাম, রাজ পরিবারের নিয়ম অনুসারে প্রথম উত্তরাধিকারী তাতিয়ানার এ বিষয়টা জানার কথা। অতৎপর এ ব্যাপারে তারা আর কিছু বলেনি।’
‘সে দ’টি ডকুমেন্ট কি?’
‘তারা বলেনি। আমিও জানি না।’
‘এখন কিডন্যাপকারীদের সম্পর্কে আপনার চিন্তা বলুন।’
‘এ ব্যাপারটায় আমি একদম অন্ধকারে।’
‘আপনার মনে কোন কথাই কি জাগে না?’
‘কোন চিন্তাই আমার মনে স্থায়ী হয়নি। কখনও ভেবেছি, ক্যাথারিনের প্রতি আসক্ত কেউ এটা করেছে। কিন্তু নিজেকে এটা বিশ্বাস করাতে পারিনি। মনে হয়েছে, কোন কারণে ক্যাথারিনের প্রতি প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কেউ এটা করতে পারে। কিন্তু চারদিকের সমাজ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ক্যাথারিনের কোন শত্রু আছে বলে মনে করি না।’
‘রুশ সরকার কি কিছু করতে পারে?’
‘এমন চিন্তাও মাথায় এসেছে। কিন্তু তা টেকেনি। রুশ সরকারের যে পরিকল্পনা তার সাথে এই চিন্তা মেলে না। তাছাড়া ক্যাথারিন কিডন্যাপ হওয়ার পর তাদের প্রতিক্রিয়া এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখেও আমার তা মনে হয়নি।’ থামল লিওনিদা।
আহমদ মুসা ভাবছিল। তৎক্ষণাৎ কোন কথা বলল না সে। একটু পর বলল, ‘যে দু’টি গোপন ডকুমেন্টের তারা খোঁজ করছে, সেটি আপনি জানেন না। কিন্তু আপনাদের রাজ পরিবারের এ রকম কোন ডকুমেন্টের কথা কি আপনি জানেন?’
‘না জানি না। রাজ পরিবারের কিছু গোপন জিনিস আছে, যা শুধু জানেন রাজা বা সম্রাট। তাঁর অবর্তমানে জানেন যুবরাজ বা যুবরাজ্ঞী। আরেকটা ব্যাপার, যারা ক্যাথারিনকে কিডন্যাপ করেছে, তারা সারা বাড়ি কি যেন খুঁজেছে। কোন ড্রয়ার কোন বাক্স তারা আস্ত রাখেনি। অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, তারা পাগলের মত মহামূল্যবান কিছু খুঁজেছে।’
‘স্বর্ণালংকার?’
‘না সে সব তারা নেয়নি।’
‘এ সবের চেয়ে মূল্যবান কি থাকতে পারে?’
‘জানি না।’
‘সেই দু’টি ডকুমেন্ট কি?’
‘জানি না।’
‘ধন্যবাদ। যে ঘর থেকে ক্যাথারিন কিডন্যাপ হয়েছে এবং যে পথ দিয়ে কিডন্যাপকারীরা এসেছে গেছে সেটা কি আমি দেখতে পারি?’
‘অবশ্যই বাছা।’ বলে পাশের টিপয়ে রাখা কম্পিউটার প্যানেলের একটা সুইচে চাপ দিল।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একজন রুশ বালক এসে হাজির হলো।
‘আলেক্সি, মেহমানকে ক্যাথারিন-এর ঘর এবং কিডন্যাপারদের আসা-যাওয়ার পথটা দেখিয়ে দাও।’
বালকটি মাথা নুইয়ে বাউ করে বলল, ‘তথাস্ত।’
আহমদ মুসা বালকটির সাথে হাঁটতে শুরু করলে লিওনিদা বলল, ‘তোমার নাম বলনি বাছা। আর তুমি কি করছ তা কি জানার আমার সুযোগ হবে?’
‘গেট যদি বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়, তাহলে অবশ্যই সে সুযোগ আপনার হবে।’
পাশের টিপয়ে রাখা একটা সোনালী কেস থেকে একটা ক্ষুদ্রাকার সোনালী কার্ড বের করে আহমদ মুসার দিকে তুলে ধরে বলল, ‘এটা প্রাইভেট নাম্বার। যখন আসতে চাও তার আগে এই নাম্বারে একটা রিং করো। ঈশ্বর আমাদের সহায় হোন।’
‘এই ‘আমাদের’ মধ্যে কি আমি আছি?’
‘অবশ্যই বাছা। তুমি খুব ভাল ছেলে। খুব সহজেই তুমি মা’দের হৃদয় জয় করতে পার।’ বলে সোফায় গা এলিয়ে চোখ বুজল লিওনিদা।
আহমদ মুসা আলেক্সির পিছ পিছ চলল ক্যাথারিনের শোবার ঘরের দিকে।
সবকিছু দেখার পর বালকটি প্রধান গেট পর্যন্ত এসে আহমদ মুসাকে বিদায় দিয়ে গেল।
আহমদ মুসার গাড়ি বেরিয়ে এল ক্যাথারিনের বাড়ি থেকে।
কিছু দূর চলার পর রিয়ারভিউ-এর পর্যবেক্ষণ থেকে তার মনে হলো, কেউ তাকে অনুসরণ করছে।
আহমদ মুসা গাড়ির গতি দ্রুত করল।
সে পুলিশের পোশাক পরে কারও সাথে লড়াই-এ অবতীর্ণ হতে চায় না। ক্যাথারিনের বাড়ির গেট থেকে যে বা যারা তাকে অনুসরণ করছে, তারা গোয়েন্দা বিভাগের লোক হতে পারে। তার পুলিশ হওয়া সম্পর্কে তাদের মনে সন্দেহ জাগতে পারে। কারণ তার গায়ে পুলিশের পোশাক থাকলেও গাড়িটা পুলিশ বিভাগের নয়।
আহমদ মুসা গাড়ির জানালায় শেড দেয়া কাঁচ তুলে পুলিশের পোশাকটা খুলে ফেলল গাড়ি চালাতে চালাতেই। পরল সৌখিন পর্যটকের পোশাক।
শিন এলাকার পুলিশ অফিসের দিকে চলল আহমদ মুসার গাড়ি।
আহমদ মুসা ভাবল, অনুসরণকারী যদি গোয়েন্দা বিভাগের লোক হয়, তাহলে সেও পুলিশ অফিসে ঢুকবে। আর যদি অন্য কেউ হয়, তাহলে ঢুকবে না। আহমদ মুসা যে নিশ্চিতই পুলিশের লোক, এটা নিঃসন্দেহ হয়ে ফিরে যাবে।
আহমদ মুসা দ্রুত পুলিশ অফিসের প্রবেশ গেট দিয়ে ঢুকে অপর প্রান্তের বাইরে বের হওয়ার গেট দিয়ে বেরিয়ে এল।
সে লক্ষ্য করল অনুসরণকারী গাড়িকে আর দেখল না।
আহমদ মুসা নিশ্চিত হলো অনুসরণকারী তাহলে ক্যাথারিনকে কিডন্যাপকারীদের কেউ ছিল এবং ওরা তদন্তকারী পুলিশের গতিবিধির উপর চোখ রাখছে।
ওরা কারা হতে পারে? রুশ সরকার হতে পারে? কিংবা রুশ সরকারের কোন পক্ষ? রুশ রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বললে কিছু বুঝা যেত? কিন্তু এ আলোচনা তার সাথে করা যাবে কোন উপলক্ষে?
সামনেই ডিপ্লোম্যাটিক জোন।
ডিপ্লোম্যাটিক জোনের দিকে চলতে শুরু করল আহমদ মুসার গাড়ি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল বিকেল ৫টা বাজে।
আহমদ মুসা ভাবল, রাষ্ট্রদূত এ সময় নিশ্চয় তাঁর বাসায় আছেন।
আহমদ মুসা ডিপ্লোম্যাটিক গাইডটি বের করে দেথে নিল ডিপ্লোম্যাটিক জোনের রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় রুশ রাষ্ট্রদূতের বাড়ির লোকেশানটা।
রাষ্ট্রদূতের বাড়ির দিকে চলতে চলতে আহমদ মুসা পরিকল্পনা করে নিল কি বলবে সেখানে? ভালই হয়েছে ডমেস লিওনিদার সাগে আগে কথা বলে। এখন ক্যাথারিনের বন্ধু বলে পরিচয় দেয়ার আর কোন সমস্যা নেই।
রাষ্ট্রদূতের গেটে গিয়ে দাঁড়াতেই গেট বক্স থেকে একজন পুলিশ বেরিয়ে এল। স্যালুট দিয়ে বলল, ‘স্যার, আদেশ করুন।’
‘আপনি রাষ্ট্রদূতকে বলুন, একটা জরুরী প্রয়োজনে আমি তাঁর সাথে দেখা করব।’
‘আপনার নাম পরিচয় বলন।’
‘তেমন নাম পরিচয় আমার নেই, যা উনি চিনবেন। আমি গিয়েই ওকে পরিচয় দেব।’
পুলিশ তার গার্ড বক্সের কাছে ফিরে গিয়ে কিছু বলল ভেতরের লোককে।
অল্পক্ষণ পরে ফিরে এসে বলল, ‘নাম, পরিচয় এবং প্রয়োজন বলন। না হলে দেখা হবে না।’
আহমদ মুসা গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সোজা হয়ে দাঁড়াল। বলল, ‘ওঁকে বলুন, আমার জরুরী প্রয়োজন। অনুমতি না দিলেও আমি প্রবেশ করব। আমাকে গুলি করবেন কিনা তার অনুমতি নিন।’
পুলিশ চোখ ছানাবড়া করে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। তারপর ফিরে গেল আবার।
এবার দু’জন পুলিশ বেরিয়ে এল গেট বক্স থেকে। একজন গেটে দাঁড়াল, অন্যজন এল আহমদ মুসার কাছে। বলল, ‘অনুমতি মিলেছে। আসুন, নিক আপনাকে নিয়ে যাবে।’
আহমদ মুসা এগিয়ে গেল গেটের দিকে।
গেটে পৌঁছতেই গেট বক্স থেকে বেরিয়ে এল লম্বা-চওড়া ষ্টিলবডির একজন রুশ। কিছু না বলেই সে হাঁটতে শুরু করল।
আহমদ মুসা বুঝল এই লোকই নিক।
তার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করল আহমদ মুসা।
বাড়িতে ঢুকে এ করিডোর সে করিডোর ঘুরে একটা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়াল নিক।
নক করতে হলো না দরজায়।
একটা কণ্ঠ ধ্বনিত হলো ঠিক মাথার উপরেই, ‘ভেতরে এস।’
আহমদ মুসা বুঝল, বাড়ির সবখানেই টিভি ক্যামেরার চোখ পাতা আছে। কথাটা হলো ভেতর থেকে মাইক্রোফোনে।
ভেতরে প্রবেশ করল আহমদ মুসা এবং নিক।
রাষ্ট্রদূত বসেছিল সোফায়। উঠে দাঁড়াল। গম্ভীর মুখে একবার আহমদ মুসার দিকে চেয়ে বলল, ‘নিক তুমি যাও। ধন্যবাদ।’
তারপর আহমদ মুসার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বস ইয়ংম্যান। ছেলের বয়সের বলে ‘তুমি’ বললাম কিছু মনে করনি তো?’
রাষ্ট্রদূত চল্লিশোর্ধ। উন্নত কপাল ও পরিচ্ছন্ন চেহারার মানুষ।
‘ধন্যবাদ। ‘তুমি’ সম্বোধন আমাকে আনন্দিত করেছে।’ বলে আহমদ মুসা রাষ্ট্রদূতের বিপরীত দিকের একটা সোফায় বসল।
তোমার কথা আমাকে চমৎকৃত করেছে। এভাবে কথা খুব কম লোকই বলতে পারে।’
বলে একটু নড়ে-চড়ে বসে রাষ্ট্রদূত বলল, ‘কি নাম তোমার? পরিচয় কি? ফ্রান্সে একজন এশিয়ানের কি জরুরী কাজ থাকতে পারে আমার সাথে?’
‘আমি ক্যাথারিনের বন্ধু। আমি তার খোঁজ চাই।’
রাষ্ট্রদূতের চোখে-মুখে নেমে এল বিস্ময়। তার চোখ দু’টি আঠার মত লেগে থাকল আহমদ মুসার মুখে স্থিরভাবে। এক সময় ধীর কন্ঠে বলে উঠল, ‘তুমি বন্ধু না শত্রু প্রমাণ কি?’
‘প্রমাণ ক্যাথারিন করবে। তার মা ডমেস লিওনিদাও বলতে পারেন।’
‘প্রিন্সেস ক্যাথারিনের খোঁজ আমার কাছে চাচ্ছ, তাহলে প্রিন্সেস কোথায় আছে বলে মনে কর?’
‘কোথায় আছে জানি না। তবে তিনি রুশ রাজ পরিবারের মেয়ে। রুশ সরকারের স্বার্থ তার সাথে সংশ্লিষ্ট আছে। সুতরাং হয় সে রুশ সরকারের হাতে, নয়তো রুশ সরকার জেনেছেন বা জানার চেষ্টা করছেন তিনি কোথায়?’
‘ম্যাডাম লিওনিদা কি বলেন?’
‘এক্সিলেন্সী, তার বক্তব্য আমি বলতে পারি না।’
‘ক্যাথারিনের খোঁজ তোমার কেন চাই? তার আর কোন বন্ধু বা আত্মীয় তো আমার কাছে এভাবে আসেনি?’
‘সবাই সব জিনিসকে একইভাবে নেয় না, দেখে না।’
‘তোমার দেখার কারণ কি? কি সে কারণ যার জন্যে তুমি জোর করে আমার বাড়িতে ঢুকতে চাও আমার সাথে দেখা করার জন্যে?’
‘আমি তার পরিবারকে সাহায্য করতে চাই।’
‘আর কিছু?’
‘আর কিছু’ বলতে যদি বিশেষ সম্পর্ক বুঝতে চান তাহলে বলছি, সে ধরণের কোন সম্পর্ক নেই।’
‘আমি যদি বলি ক্যাথারিনকে তোমার মত করেই আমরা খুঁজছি, তুমি বিশ্বাস করবে?’
‘বিশ্বাস করব। কারণ আমার কাছে মিথ্যা বলার আপনার প্রয়োজন নেই।’
রাষ্ট্রদূত হাসল। বলল, ‘ধন্যবাদ। তুমি সাহসী এবং বুদ্ধিমান দুই-ই।’
বলে একটু থেমেই আবার সে বলল, ‘আমার উত্তর শুনলে। এখন তুমি কি করবে?’
‘আমার আরও প্রশ্ন আছে।’
‘কি?’
‘তাকে কে বা কারা কিডন্যাপ করতে পারে?’
রাষ্ট্রদূত তৎক্ষণাৎ জবাব দিল না।
একটু সময় নিয়ে বলল, ‘বিষয়টাকে আমরা সুনির্দিষ্ট করিনি। তবে আমার মনে হয়, কিডন্যাপের ব্যাপারটা অপরাধ না হয়ে রাজনৈতিক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
‘তার মানে, রাজ পরিবারকে রাশিয়ায় ফিরিয়ে নেয়া হোক, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি সেখানে চালু হোক এটা চায় না কোন পক্ষ?’
‘তুমি এসব জান?’
‘এটুকুই জানি। আমার প্রশ্নের জবাব কি দয়া করে দেবেন?’
‘ঐ ধরনের কোন পক্ষকে আমি জানি না।’
‘তাহলে ব্যাপারটাকে রাজনৈতিক বলছেন কোন কারণে?’
‘ঘটনার পেছনে ক্রিমিনাল কোন কারণ খুঁজে পাই না, রাজনৈতিক কারণ তবু কিছু থাকতে পারে।’
‘কেন রাজ পরিবারের সাথে কোন অর্থ যোগ থাকতে পারে না?’
‘তেমন কিছু নেই। জারদের কিছু গোল্ড ছিল পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি সরকারের কাছে। রাজ পরিবার এতদিন এর উপরই চলেছে। সে সঞ্চয় নিঃশেষ বলে আমরা জেনেছি।’
‘আপনারা কি করছেন তাকে উদ্ধারের জন্যে?’
‘আমরা চেষ্টা করছি, ফরাসি পুলিশ চেষ্টা করছে।
একটু থামল রাষ্ট্রদূত। তারপর বলল, ‘আমাদের সরকার খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। ক্রাউন প্রিন্সেস ক্যাথারিন অপহৃত হয়েছে। আজই সরকারের যে মেসেজ পেলাম, তাতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকারের গোটা পরিকল্পনাই শুধু বানচাল হওয়া নয়, অপূরণীয় ক্ষতি হবে যদি এ দু’জনকে পাওয়া না যায়। সুতরাং যে কোন মূল্যে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে।’
থামল রাষ্ট্রদূত মিখাইল পাভেল। কিছু ভাবল। তারপর বলল, ‘এসব কথা তোমাকে বলছি। কারণ তোমার সাহস আমাকে চমৎকৃত করেছে। তুমি আমাদের সাহায্য করতে পার।’
আহমদ মুসা সেদিকে কান না দিয়ে বলল, ‘সরকারের পরিকল্পনা বানচালের কথা বুঝলাম, কিন্ত অপূরণীয় ক্ষতিটা কি?’
‘আমিও জানি না ইয়ংম্যান।’
‘সেটা কি কোন মূল্যবান ডকুমেন্ট?’
রাষ্ট্রদূত পাভেলের চোখ বিস্ময়ে নেচে উঠল। বলল, ‘ডকুমেন্টের কথাও তুমি জান? ম্যাডাম বলেছেন?’
‘শুধু ‘ডকুমেন্ট’ শব্দ টুকুই জানি। আর কিছু না।’
রাষ্ট্রদূত সোফায় গা এলিয়ে চোখ বুজে ছিল। ঐ অবস্থাতেই বলল, ‘অপূরণীয় ক্ষতির কারণ সে মূল্যবান ডকুমেন্ট হতে পারে, আমি জানি না।’
‘ধন্যবাদ, তাহলে উঠি।’ আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল।
রাষ্ট্রদূত পাভেল সোজা হয়ে বসল। বলল, ‘আমার প্রস্তাবের জবাব দিলে না?’
‘প্রস্তাবের তো প্রয়োজন নেই। বন্ধু ক্যাথারিনের সন্ধানে আজ যেমন এখানে ছুটে এসেছি। তেমনি আরও ছুটব।’
‘ধন্যবাদ। যতটুকু পারি আমার সাহায্য পাবে।’
বলে একটা প্রাইভেট নেম কার্ড আহমদ মুসসার দিকে এগিয়ে ধরে বলল, ‘এতে আমার বিশেষ টেলিফোন নাম্বার আছে। তুমি যে কোন সময় টেলিফোন করতে পার।’
আহমদ মুসা এগিয়ে গিয়ে কার্ড নিয়ে হ্যান্ডশেক করে চলে আসার জন্য পা বাড়াল।
‘একটু দাঁড়াও। বাইরে দেখছি আমার স্ত্রী ও মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।’ দরজার উপরে দেয়ালের একটা স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল রাষ্ট্রদূত পাভেল।
কথা শেষ করেই সে বলল হাতের মিনি সাইজের কম্প্যুটারের দিকে তাকিয়ে, ‘এস তোমরা এলিয়েদা।’
ঘরে ঢুকল একজন মধ্য বয়সী মহিলা এবং একজন তরুণী।
তারা ঘরে ঢুকে আহমদ মুসার উপর নজর পড়তেই তরুণীটি উচ্ছ্বসিত কন্ঠে আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে বলে উঠল,‘আপনি? এখানে?’
‘তাই তো, কেমন আছেন আপনি?’ বলল মধ্য বয়সী মহিলাও আহমদ মুসার দিকে সহাস্যে তাকিয়ে।
আহমদ মুসার চোখে-মুখেও বিস্ময় ওদের দেখে।
‘কি ব্যাপার, একে তোমরা চেন?’ স্ত্রী ও মেয়ের দিকে তাকিয়ে রাষ্ট্রদূত পাভেল বলল।
তরণীটি রাষ্ট্রদূতের মেয়ে। নাম ওলগা। আর মধ্য বয়সী মহিলা স্ত্রী। নাম এলিয়েদা।
‘আব্বা, ইনিই তো সেদিন আমাদের বাঁচিয়ে ছিলেন।’ বলল ওলগা।
‘মানে সেদিন উইক এন্ড থেকে ফেরার পথের ঘটনায়?’
‘হ্যাঁ।’ বলল রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী এলিয়েদা।
‘ও! ব্রাভো!’ বলে রাষ্ট্রদূত কয়েক পা এগিয়ে এসে আহমদ মুসার পিঠ চাপড়ে বলল, ‘ইয়ংম্যান, আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। তুমি আমাদের পরিবারকে একটা বিপযর্য় থেকে বাঁচিয়েছ, অপূরণীয় উপকার করেছো আমাদের।’
আহমদ মুসা বিব্রত বোধ করল। বলল,‘ধন্যবাদ। কিন্তু সেটা ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা। যে কেউ ওখানে থাকলে, আমি যা করেছি সে তাই করত।’
‘কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা প্রহরীরা তা পারেনি।’ বলল রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী এলিয়েদা।
‘বোধহয় পারেনি তা নয়। ঘটনার আকস্মিকতায় ওরা বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল।’ বলল আহমদ মুসা।
‘যাই হোক ইয়ংম্যান, এখন তোমার যাওয়া হচ্ছে না। বসতেই হবে। রুশরা খুব অকৃতজ্ঞ, এ কথা কেউ বলে না। মিষ্টি মুখ না করে তুমি যেতে পার না।’ রাষ্ট্রদূত পাভেল বলল।
‘ঠিক। তোমার নাম যেন কি?’
‘আব্দুল্লাহ।’
‘মুসলিম আপনি?’ ওলগার চোখে বিস্ময়।
‘আমার বিস্ময় আরও বাড়ল যুবক। একজন মুসলিম যুবক অথোর্ডক্স খৃস্টান ক্যাথারিনের বন্ধু হতে পারে কি করে?’
‘আপনি প্রিন্সেস ক্যাথারিনের বন্ধু?’ চোখে আরও বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল ওলগা।
‘থাক এ বিতর্ক চল ভেতরে।’ আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে বলল এলিয়েদা।
আহমদ মুসা হাত জোড় করে বলল, ‘মাফ করুন। আজ নয়। আরেকদিন আসব।’
বলেই আহমদ মুসা সবাইকে গুডবাই জানিয়ে বাইরে বেরুবার জন্যে পা বাড়াল।
‘তোমার সম্পর্কে আমার অনুমান মিথ্যা না হলে বলব তুমি সময় নষ্ট করার মত ছেলে নও। ঠিক আছে। এসো তুমি। আমরা তোমার আবার আসার অপেক্ষা করব।’
বলে রাষ্ট্রদূত পাভেল এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে ধরে আহমদ মুসাকে বিদায় জানাল এবং দরজার ওদিকে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তা প্রহরীটিকে আহমদ মুসাকে গেট পর্ন্ত পৌঁছে দিতে বলল।
আহমদ মুসাকে বিদায় দিয়ে ফিরে আসতেই এলিয়েদা বলল,‘সত্যিই ছেলেটা প্রিন্সেস ক্যাথারিনের বন্ধু?’
‘ও বলেছে। আমিও অবিশ্বাস করিনি।’
‘মনে হয় অবিশ্বাস করার মত মানুষ উনি নন।’ বলল ওলগা।
‘আমারও তাই মনে হয়।’ বলল রাষ্ট্রদূত পাভেল।
‘আমি প্রশ্নটা অবিশ্বাস থেকে করিনি, বিস্ময় থেকে বলেছি।’ বলল এলিয়েদা।
‘ঠিকই বলেছ আম্মা। আমারও মনে বিস্ময়। আমরা রাজ পরিবারকে অতি মানুষ হিসাবে দেখি। মানুষ হিসেবে দেখলে বোধ হয় এ বিস্ময় আমাদের হতো না।’ বলল ওলগা।
‘ধন্যবাদ ওলগা। কিন্তু রাজ পরিবার রাজ পরিবারই। স্বাতন্ত্র না থাকলে রাজ পরিবার হতো না।’ বলল এলিয়েদা।
‘ধন্যবাদ আম্মা। এই স্বাতন্ত্রটাও বোধহয় আমরা আমাদের বিশ্বাস থেকে সৃষ্টি করেছি।’ ওলগা বলল।
‘তুমি বলতে চাচ্ছ, বিশেষ কোন মান ও যোগ্যতা ওদের নেই? তাহলে সিংহাসনে ওদের আমরা ফিরিয়ে আনছি কেন?’ বলল এলিয়েদা।
‘ওঁদের বিশেষ মান ও যোগ্যতা নেই বলছি না। ওঁদের রয়েছে ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতার সম্ভার। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি, আমাদের আস্থা ও ভালোবাসা এবং তাঁদের হাতে পাওয়া শক্তি ও সুযোগই তাদের রাজা বানায়।’
‘ব্রাভো ব্রাভো! আমাদের মা ওলগা চমৎকার বলেছে।’
হাঁটতে শুরু করে রাষ্ট্রদূত পাভেল বলল, ‘এস। মা ও মেয়ে দু’জনেই জিতেছ।’
আহমদ মুসা রাষ্ট্রদূত পাভেলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে অকূল সমুদ্রে পড়ল। সে আশা করেছিল, একটা আশার আলো সে দেখতে পাবে। কিন্তু কিছুই হলো না। বুঝলো, সেদিন ক্যাথারিনের বাড়ি থেকে বেরুবার পর তাকে অনুসরণ করেছিল রুশ সরকারের কেউ নয়, অন্য কোন শক্তি এবং তারাই সম্ভবত কিডন্যাপ করেছে ক্যাথারিনকে।
তবে রুশ রাষ্ট্রদূত পাভেলের কাছে আসা অর্হীন হয়নি। বুঝা গেল, তারাও ক্যাথারিনকে খুঁজছে। তাদের সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
কিন্ত এখন এগুবে কোন পথে?
ক্যাথারিনের বাড়ির উপর ওরা চোখ রাখছে? তাহলে ওর বাড়িতে গেলে ওদের দেখা পাওয়ার একটা পথ হতে পারে।
পরদিন আহমদ মুসা ক্যাথারিনের বাড়িতে গেল। চলে এল। কিন্তু কেউ তাকে অনুসরণ করল না। গাড়ির রিয়ারভিউতে বার বার চোখ ফেলল। কিন্তু তার গাড়ির প্রায় গা ঘেঁষে আসা বেঢপ আকৃতির একটা হোম সাপ্লাই-এর গাড়ি ছাড়া কোন গাড়িকেই আহমদ মুসা তার পেছনে স্থির হতে দেখলো না। হতাশ হলো আহমদ মুসা।
হতাশ মনেই গাড়ি চালিয়ে আহমদ মুসা এসে প্রবেশ করল শিন নদী তীরের একটা ট্যুরিস্ট স্পটে।
ট্যুরিস্ট স্পট শূন্য। সকাল দশটার মত ব্যস্ত ওয়ারকিং আওয়ারে ট্যুরিস্ট স্পটে কোন লোক থাকার কথা নয়।
আহমদ মুসা একদম নদীর কিনারে একটা বেঞ্চিতে বসে গা এলিয়ে দিল।
চোখ বুজে গিয়েছিল তার।
চারদিকের অন্ধকারে পথ খুঁজছিল আহমদ মুসা।
কেউ তার গা ঘেঁষে বসার স্পর্শে চমকে উঠে চোখ খুলল।
দেখল, তার গা ঘেঁষে বসেছে একজন মুখোশধারী লোক।
আহমদ মুসা একটু সরে বসল। তার মনে প্রশ্ন, কৌতুককারী কেউ, কিংবা মানসিক অসুস্থ কেউ, না অদৃশ্য কোন… চিন্তা আহমদ মুসার শেষ হলো না। মুখোশধারী লোকটি পকেটে রাখা তার ডান হাতটি বের করল। হাতে রুমাল।
মুখোশধারী লোকটি পকেট থেকে হাত বের করেই বিদ্যুত গতিতে রুমালটি চেপে ধরল আহমদ মুসার নাকে।
কিন্তু রুমালটি নাক স্পর্শ করার সংগে সংগেই উঠে দাঁড়িয়েছিল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসার বুঝতে বাকি ছিল না রুমালটি ক্লোরোফরম ভিজানো এবং মুখোশধারীর মতলব কি?
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়িয়েই তার বাম হাতের কারাত চালাল লোকটির ডান কানের উপরের প্রান্ত ঘেষে।
মুখোশধারী উঠে দাঁড়াতে গিয়েও টলে পড়ে গেল বেঞ্চিতে।
আহমদ মুসা পেছনে পায়ের শব্দ পেল।
তড়াক করে পেছনে ফিরল। দেখল, দু’জন লোক তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তাদেরও মুখে মুখোশ।
লোক দু’টি তার উপর এসে পড়েছে। সরে দাঁড়াবারও সময় নেই।
আহমদ মুসা শরীরটা বেঁকিয়ে উবু হয়ে বসে পড়ল গাছ থেকে ফল পড়ার মত দ্রুত।
ওরা দু’জন আহমদ মুসার উপর দিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল।
ওরা দু’জনও উঠে দাঁড়াচ্ছিল।
ওদের একজন দাঁড়ানো অবস্থাতেই ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মত ঝাঁপিয়ে পড়ছিল আহমদ মুসার উপর।
আহমদ মুসা তাকে দু’হাত দিয়ে ঠেকাবার চেষ্টা করে বা পায়ের একটা কিক চালালো লোকটির তলপেটে।
লোকটি তলপেট চেপে ধরে বসে পড়ল।
দ্বিতীয় লোকটি ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। সে বসে পড়া লোকটির উপর দিয়ে একটা অশ্রাব্য গালি উচ্চারণ করতে করতে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল আহমদ মুসার উপর।
আহমদ মুসা বাম পাশে একটু সরে তার ডান বাহুটা লৌহ দন্ডের মত চালাল ছুটে আসা লোকটির গলা লক্ষ্যে।
প্রচন্ড ঘা খেয়ে লোকটির চলন্ত দেহ চরকির মত ঘুরে গেল এবং চিৎ হয়ে পড়ে গেল বসে পড়া লোকটির উপর।
‘কে তোমরা’ বলে আবার আহমদ মুসা এগুচ্ছিল ওদের দিকে। এ সময় পেছনে কিছুর শব্দ পেয়ে পেছনে তাকাল। দেখল, একটা জাল নেমে আসছে তার উপর। একজন মুখোশধারী দাঁড়িয়ে আছে ক’ গজ পেছনে।
আহমদ মুসা বুঝল সে জালের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে। মাত্র কয়েক মুহূর্ত। নাইলনের বিশেষ জালে সে জড়িয়ে পড়ল।
একটু দূরে দাঁড়ানো লোকটিই ফাঁদ ছুড়েছিল। ফাঁদের নিয়ন্ত্রণী রশিটি ছিল তার হাতে।
ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই পড়ে গেল আহমদ মুসা।
ফাঁদের নিয়ন্ত্রণী রশি টেনে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে লোকটি।
আহমদ মুসা বন্দী হয়ে গেল। পশুরাজ সিংহ জালে আটকা পড়ে যেভাবে অসহায় হয়ে যায় সেভাবেই।
ফাঁদ গুটিয়ে নেবার পর ফাঁদের জালে আহমদ মুসার দেহ গুটি-শুটি খেয়ে গোলাকার হয়ে গেল।
মার খেয়ে ভূলুন্ঠিত তিনজন তখন উঠে দাঁড়িয়েছে। ওরা গরজাতে গরজাতে এগিয়ে এল আহমদ মুসার দিকে। একজন জালে জড়ানো আহমদ মুসার পাজরে লাথি মেরে বলল, ‘শালা গলাটা ভেংগেই দিয়েছে।’
অন্য দু’জনও আহমদ মুসার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল।
ফাঁদের রশি হাতে দাঁড়ানো লোকটি হাত তুলে ওদের নিষেধ করে বলল, ‘বীরত্ব আর দেখাতে হবে না। একটি থাপ্পড়ে সব কুপোকাত। নাম ডুবালে তোমরা।’
‘বস, আমাদের দোষ নেই। ব্যাটার হাত বোধহয় লোহার তৈরি। বিশ্বাস না হলে পরখ করে দেখতে পার।’ বলল তিনজনের একজন।
‘পরখ করে দেখার সময় হবে।’ বলে একজন ইংগিত করে বলল,‘তাড়াতাড়ি একে নিয়ে গাড়িতে তোল, কেউ এসে পড়বে।’
একজন এসে জালে জড়ানো আহমদ মুসাকে কাঁধে তুলে নিল। হাঁটতে শুরু করে সে বলল, ‘সত্যি উস্তাদ এর শরীরে লোহা আছে। না হলে এমন হালকা-পাতলা এশিয়ান এত ভারি হবে কেন?’
‘কথা বল না, দৌঁড়াও।’ বলল বস গোছের সেই লোকটি।
গাড়িটা দাঁড়ানো ছিল ট্যুরিস্ট স্পটটার অনেকখানি ভেতরে। খোলাই ছিল গাড়ির দরজা।
খোলা দরজা পথে লোকটি আহমদ মুসার দেহটা ছুঁড়ে মারল গাড়ির স্টিলের মেঝের উপর।
আহমদ মুসা দম বন্ধ করেছিল।
তার ভাগ্য ভাল পাঁজর গিয়ে পড়েছিল ফ্লোরে। মাথা টোকা খেলে ফেটে যেত নির্ঘাত। পাঁজরটার আঘাতও কম হলো না। তার মনে হলো, পাজরের তিনটি হাড় যেন তার ভেঙে গেল।
কিন্তু আঘাতের মধ্যেও গাড়ি দেখে তার মনে সৃষ্টি হওয়া বিস্ময় দূর করতে পারলো না। তার গাড়ির পিছে পিছে আসা হোম সাপ্লাই-এর গাড়িই শেষ পর্যন্ত শত্রু হলো। গাড়িটা গোটা পথ তার পিছে পিছে এলেও গাড়ির প্রতি তার বিন্দুমাত্রও সন্দেহ জাগেনি।
মনে মনে আহমদ মুসা তাদের ছদ্মবেশের প্রশংসা করল। সে বুঝল, তারা পরিকল্পিতভাবেই তাকে অনুসরণ করেছে। নিশ্চয় তারা চোখ রেখেছিল ক্যাথারিনের বাড়ির উপর। নিশ্চয় এরা ক্যাথারিনকে কিডন্যাপকারীরাই হবে।
খুশী হলো আহমদ মুসা। কিডন্যাপকারীদের মুখোমুখি হবার তার সুযোগ হলো।
কিন্তু এরা কারা? ভাষা প্রমাণ করছে ওরা রুশ। ওরা রাশিয়ার কোন পক্ষ? কোন ক্রিমিনাল গ্রুপ? না রুশ সরকারেরই গোপন কোন পক্ষ?
ওদের একজন উঠে এল গাড়িতে, আহমদ মুসার কাছে। একটা রুমাল চেপে ধরল আহমদদ মুসার নাকে। ক্লোরোফরম ভেজানো রুমাল।
অন্য সময় হলে আহমদ মুসা দম বন্ধ করে প্রতিরোধের চেষ্টা করত। কিন্তু এখন আহমদ মুসা সে রকম কিছু করল না। আহমদ মুসা যেতে চায় ওদের ঘাটিতে।
আহমদ মুসা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলল।

সংজ্ঞা ফিরে পেলে আহমদ মুসা দেখল সে একটা ঘরের মেঝেয় কার্পেটের উপর পড়ে আছে। তার হাত পা বাঁধা। হাত দু’টি এমন ভাবে পিছ মোড়া করে বাঁধা যে, কষ্ট হচ্ছে। সম্ভবত এই কষ্টের কারণেই তাড়াতাড়ি সে সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছে।
কষ্ট হলেও আহমদ মুসা অন্ধকার মেঝেয় গড়াগড়ি দিয়ে শরীরটাকে একটু চাঙ্গা করে নিল। কিন্তু শরীরকে চাঙ্গা করতে গিয়ে প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভূত হলো তার।
সময় এখন কত? ঘড়িটা তারা খুলে নেয়নি। হাতে আছে। কিন্তু পিছ মোড়া করে বাঁধা থাকায় ঘড়িটা দেখে সময় জানার তার কোন সুযোগ নেই।
এখন রাত হবে নিশ্চয়। দিন হলে ঘরে অন্ধকার এত গাঢ় হতো না। অথবা হতে পারে ঘরটি আন্ডার গ্রাউন্ড।
ক্ষুধার চিন্তা মাথা থেকে উবে গিয়ে এবার মাথায় এসে চাপল আরেক চিন্তা। কেন ওরা ধরে আনল তাকে। পথের বাঁধা দূর করতে চাইলে তারা তো খুন করতে পারতো। ধরে আনল কেন? দু’টো কারণ হতে পারে। এক, আমি কে তা তাদের জানা প্রয়োজন, যাতে তারা তাদের আরো বাঁধাকে চিহ্নিত করতে পারে। দ্বিতীয়ত, তারা হয়তো অন্য কিছু জানতে চায়। ক্যাথারিনের বাড়িতে পাহারা বসানোর ব্যাপারটা শুধু তাদের শত্রু পক্ষের উপর চোখ রাখার জন্যে হয়তো নয়। তারা হয়তো আরও কিছু খোঁজ করছে।
শব্দ হলো দরজা খোলার। খুলে গেল দরজা। সলিড ইস্পাতের তৈরি দরজা।
দরজা খোলার সংগে সংগে ঘরের আলোও জ্বলে উঠল।
দেয়ালের অনেক উঁচুতে ভেন্টিলেটর ছাড়া কোন জানালা নেই। ঘরটি দেয়াল জুড়ে শুধু তাক আর তাক।
আহমদ মুসা দেখেই বুঝল ঘরটি একটা আন্ডারগ্রাউন্ড স্টোর।
দু’জন লোক ঘরে ঢুকল। তাদের মুখ আগের লোকদের মতই মুখোশে ঢাকা।
‘তুমি তো বেশ শেয়ানা হে। সময়ের আগেই সংজ্ঞা ফিরে পেয়েছ।’ বলল দু’জনের মধ্যে নেতা গোছের লোকটি।
আহমদ মুসা কোন কথা বলল না।
সেই নেতা গোছের লোকটাই আবার বলল, ‘কে তুমি? একবার প্রিন্সেস ক্যাথারিনের বাড়ি, আরেকবার রুশ রাষ্ট্রদূতের বাড়ি ঘুর ঘুর করছ। পুলিশের লোক তুমি?’
‘তোমরা সে খোঁজ না নিয়েই আমাকে ধরে এনেছ?’
‘প্রশ্ন আমি করেছি। জানা আমাদের প্রয়োজন।’ বলল সেই নেতা গোছের লোকটি।
‘জানা আমারও প্রয়োজন।’
‘কি জানতে চাও?’
‘তোমরা কে? কেন আমাকে ধরে এনেছ?’
‘এ জেনে তোমার কাজ কি?’
‘আমার প্রশ্নের জবাব না দিলে তোমাদের কোন প্রশ্নের জবাব আমি দেব না। আমার কাছে জানাই তোমাদের গরজ বেশি নিশ্চয়?’
‘দেখ আমরা তোমার উপর নির্ভরশীল নই, তুমি আমাদের উপর নির্ভরশীল। কথা কিভাবে বের করতে হয় আমরা জানি।’
বলেই সে পাশের লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘টমকে যন্ত্রসহ ডাক।’
লোকটি বেরিয়ে গেল।
মিনিট খানেক পরেই ভীমাকৃতি এক লোককে নিয়ে সে ফিরে এল। ভীমাকৃতি লোকটির হাতে চামড়ার একটা চাবুক।
নেতা গোছের লোকটি টমকে লক্ষ্য করে বলল, ‘টম তোমার ম্যাজিক দেখাও তো। কথা বলাবার জন্যে তোমার কয় ঘা প্রয়োজন হবে মনে করো?’
‘কয়টি আর স্যার। আট-দশটা ঘা’র পর তো সংজ্ঞাই থাকবে না।’
‘বেশ শুরু কর।’
চাবুকধারী লোকটির ভয়াল চাবুকটি বিদ্যুত বেগে উপরে উঠল।
এ সময় দু’জন লোক ঘরে প্রবেশ করল। তাদের সামনের জন টমকে লক্ষ্য করে বলল, ‘দাঁড়াও।’
তাদের দু’জনের ঘরে প্রবেশের সংগে সংগে নেতা গোছের লোকটিসহ তিনজনেই জড়-সড় হয়ে গেল। একটু সরে দাঁড়াল।
চাবুকধারীকে থামতে বলে কক্ষে প্রবেশকারী সামনের লোকটির দিকে চেয়ে বলল, ‘কি ব্যাপার টমের অস্ত্র প্রয়োগ করছ কেন?’
নেতা গোছের লোকটি বলল, ‘স্যার লোকটি বড় সেয়ানা, পরিচয় সম্পর্কে কোন কথা আদায় করা যাচ্ছে না। উল্টো আমাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বলছে, আমাদের পরিচয় না পেলে কোন কথাই সে বলবে না।’
‘ও তাই? আমি দেখছি।’
বলে সে সাথের লোকটির দিকে চেয়ে বলল, ‘তুমি যাও ওলোর্ভ। আমি আসছি।’
‘ঠিক আছে মায়োভস্কি।’ বলে তার সাথের লোকটি চলে গেল।
মায়োভস্কি আহমদ মুসার দিকে এগিয়ে গেল। তার মুখে কোন মুখোশ নেই, সাথে আসা লোকটিরও ছিল না। তাদের দু’জনেরই নিরেট রুশ চেহারা।
আহমদ মুসার কাছাকাছি গিয়ে ঘরের একপাশে দাঁড়ানো সেই নেতা গোছের লোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এর বাঁধন খুলে দাও প্লেখভ।’
আহমদ মুসার বাঁধন খুলে দিল প্লেখভ নামের লোকটি।
‘আমাদের পরিচয় আপনার কেন প্রয়োজন?’ বলল মায়োভস্কি।
‘কাকে সহযোগিতা করব জানা প্রয়োজন নয় কি?’
মায়োভস্কি হাসল। বলল, ‘আমরা আপনার সহযোগিতা চাই না। আমরা আপনাকে জানতে চাই।’
‘সেটাও একটা সহযোগিতা। এ সহযোগিতা আমি নাও করতে পারি।’
‘যদি আমরা আদায় করি?’
‘সব সময় সব কিছু আদায় করা যায় না।’
‘এসব কথা থাক। আমাদের পরিচয় প্রকাশে কোন আপত্তি নেই। তবে আমরা ভয় করি রাশিয়ার কেজিবি’কে। আমরা একটা মহৎ কাজ করছি। আমরা রুশ রাজ পরিবারের শুভাকাঙ্খী। রুশ সরকার নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নামে প্রিন্সেস তাতিয়ানা ও প্রিন্সেস ক্যাথারিনকে হাত করে ফায়দা লুটতে চায়। আমরা রাজ পরিবারের অপমান হতে দেব না।’
‘তাহলে আমাকে গ্রেফতার করেছেন কেন?’
‘আমরা নিঃসন্দেহ যেন, আপনি রুশ সরকারের গুপ্তচর। তাদের পক্ষ থেকে আপনি রাজ পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করছেন।’
আহমদ মুসা বুঝল, ওরা রুশ দূতাবাসের সাথে তার যোগাযোগের খবর জানে। তবু বলল, ‘আপনাদের একথা সত্য নয়, প্রিন্সে ক্যাথারিন আমার বন্ধু। সে কারণেই তাদের সহযোগিতার জন্যে তাদের বাড়িতে গেছি।’
মায়োভস্কি হাসল। বলল, ‘বটে! সেটা দেখা যাবে। কিন্তু তাতেও আপনি রুশ সরকারের গুপ্তচর নন তা প্রমাণ হয় না। থাক এ প্রসংগ। এখন বলুন, প্রিন্সেস তাতিয়ানা কোথায়?’
মনে মনে চমকে উঠল আহমদ মুসা। এরা কি সব জানে? কিন্তু প্রকাশ্যে বলল, ‘এ প্রশ্ন আমাকে কেন?’
‘কারণ আপনি রাজ পরিবারের অনেক কিছুই জানেন। আর প্রিন্সেস ক্যাথারিনের অন্তর্ধান হবার পর আপনার উদয় ঘটেছে। নিশ্চয় প্রিন্সেস তাতিয়ানাকে খোঁজার প্রয়োজন নেই, তাই প্রিন্সেস ক্যাথারিনের খোঁজে আপনার আবির্ভাব।’
‘আপনার ধারণার গোটা ভিত্তিটাই ভুল।’
আহমদ মুসা থামলেও সংগে সংগে উত্তর দিল না মায়োভস্কি। স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আহমদ মুসার দিকে তাকিয়ে থেকে ধীর কণ্ঠে বলল, ‘দেখুন, যেকোন মূল্যে তথ্যটা আমাদের চাই। রুশ সরকার আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। প্রিন্সেস ক্যাথারিনের সাথে দেখা করার সুযোগ আমরা দিচ্ছি। তার সাথে কথা বলুন। তিনি যদি আপনার বন্ধু হন, তাহলে তাঁর স্বার্থে তথ্যটি আমাদেরকে দিতে হবে আপনার।’
মুখে কৃত্রিম বিস্ময় এনে আহমদ মুসা বলল, ‘প্রিন্সেস ক্যাথারিনকে আপনারা কিডন্যাপ করেছেন?’
‘কিডন্যাপ নয়, রুশ সরকারের এক চক্রের হাত থেকে আমরা তাঁকে সরিয়ে এনেছি। তাঁর নিরাপত্তার জন্যেই নিরাপদ স্থানে তাঁকে রাখা হয়েছে। আপনিও গিয়ে দেখবেন, তাঁকে প্রিন্সেস-এর মর্যাদায় রাখা হয়েছে।’
আহমদ মুসা মনে মনে খুশী হলো হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতই। কিন্তু ভাবল, এত সহজে তাকে তারা প্রিন্সেস ক্যাথারিনের কাছে নিয়ে যাচ্ছে কেন? তাতিয়ানার সন্ধান লাভকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে কেন? তাতিয়ানা কোথায়, এ তথ্য প্রিন্সেস ক্যাথারিনই তো তাদের দিতে পারে। ক্যাথারিন নিশ্চয় তাদের সহযোগিতা করেনি। অর্থাৎ এদের পরিচয় সম্পর্কে এরা যা বলেছে সবটাই মিথ্যা।
‘আসুন, প্রিন্সেসের সাথে কথা বলবেন।’ বলে মায়োভস্কি নামক লোকটি হাঁটতে শুরু করল দরজার দিকে।
আহমদ মুসাও তার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করল। তার পিছু নিল সেই নেতা গোছের লোকসহ আরও একজন। তাদের হাতে পিস্তল। ট্রিগারে আঙুল।
একটা আশংকা আহমদ মুসার মনে জাগল, প্রিন্সেস ক্যাথারিন যদি বলে ফেলে আমি তার বন্ধু নই, সে আমাকে চেনে না!
একটা ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল মায়োভস্কি নামের লোকটি। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল দু’জন প্রহরী। তাদের হাতে স্টেনগান। মায়োভস্কিকে দেখেই তারা দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল।
মায়োভস্কি দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে নক করল দরজায়।
মুহূর্ত কয়েকের মধ্যেই দরজার লুকিং হোল থেকে ধাতব শাটার সরে যাবার নরম একটা শব্দ হলো। তারপরই খুলে গেল দরজা।
মায়োভস্কি দরজায় দাঁড়িয়ে প্রিন্সেসকে একটা বাউ করে ঘরের ভেতর প্রবেশ করল। আহমদ মুসাও।
প্রহরী কয়েকজন দাঁড়াল দরজায়।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে মায়োভস্কি বলল, ‘ইয়োর হাইনেস, এই যুবককে নিশ্চয় চিনেন।’
আহমদ মুসা হাঁটছিল মায়োভস্কির পেছনে পেছনে।
মায়োভস্কি কথাটা উচ্চারণ করার সাথে সাথে বিরক্তি ও অনাগ্রহের চোখে প্রিন্সেস ক্যাথারিন আহমদ মুসার চোখে চোখ রাখল।
বিপদ বুঝল আহমদ মুসা।
দ্রুত আহমদ মুসা তার ডান হাতের তর্জনি ঠোঁটে ঠেকিয়ে প্রিন্সেসকে সাবধান করতে চাইল।
কিন্তু আহমদ মুসা বুঝতে পারল না প্রিন্সেস এই ইংগিত কতটা গ্রহণ করবেন।
তবে আহমদ মুসা ক্যাথারিনের মুখের দিকে একবার তাকিয়েই বুঝল প্রিন্সেস ক্যাথারিন তাতিয়ানার মতই শার্প। তার সারা মুখমন্ডলে তাতিয়ানার মতই রাজকীয় ব্যক্তিত্ব। অবশ্য তার চোখে নেই তাতিয়ানার চোখের সেই সাগরের গভীরতা এবং নেই তার মুখে তাতিয়ানার মুখের সেই ফুলের নরম লাবণ্য। প্রিন্সেস ক্যাথারিনের মুখে শাসকের ছবি, কিন্তু তাতিয়ানার মুখে ছিল শাসকের ছবির সাথে শিল্পীর মমতা।
আহমদ মুসার ইংগিত থেকে ক্যাথারিন যা-ই বুঝুক, তার চোখ দু’টি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল এবং তার মুখমন্ডলে সচেতন হয়ে ওঠার আলেখ্য নেমে এসেছিল।
কোন কথা না বলে চোখ ঘুরিয়ে ক্যাথারিন তাকিয়েছিল মায়োভস্কির দিকে।
‘আপনি নিখোঁজ হবার পর আপনার এই বন্ধু প্যারিসে এসেছে এবং আপনার খোঁজে নেমে পড়েছে। আমাদের বিশ্বাস, প্রিন্সেস তাতিয়ানার খবর সে জানে। কিন্তু আমাদের বলেনি। বার বার আমরা বলছি, আমরা রাজ পরিবারের শুভাকাঙ্খী। আমরা সরকারের চক্রান্ত থেকে দুই রাজকুমারী এবং রাজ পরিবারের সবকিছুকে রক্ষা করতে চাই। আমাদের অনুরোধ, আপিন তাঁকে বুঝান। আমরা পরে আসব।’
বলে মায়োভস্কি কোন জবাবের অপেক্ষা না করে দীর্ঘ একটা বাউ করে দরজার দিকে ঘুরে চলতে শুরু করল।
প্রিন্সেস ক্যাথারিন গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর ফিরে এল তার সিংহাসন সদৃশ চেয়ারে। সামনের একটা কুশন চেয়ারে বসতে বলল আহমদ মুসাকে।
প্রিন্সেস ক্যাথারিন গভীরভাবে নিরীক্ষা করছিল আহমদ মুসাকে। বলল, আপনি মিথ্যা পরিচয় কেন দিয়েছেন? কেনই বা এভাবে এদের হাতে পড়লেন? কে আপনি?’
‘মাননীয় প্রিন্সেস, এতটুকু বলাই কি যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার এক শুভাকাঙ্খী? বিশ্বাস করতে পারেন তা?’ বলল আহমদ মুসা।
‘ওদের আপনাকে ধরে আনা এটা প্রমাণ করেছে।’ নিরেট কণ্ঠে জবাব দিল প্রিন্সেস ক্যাথারিন।
একটু থেমেই ক্যাথারিন আবার বলল, ‘আমার সব প্রশ্নের জবাব আমি পাইনি।’
‘মিথ্যা পরিচয় না দিলে আপনার সাথে হয়তো দেখা করতে পারতাম না।’
‘কেন আমার সাথে দেখা করতে চান? আমার শুভাকাঙ্খী হওয়ার কারণ কি?’
‘আপনার সাথে দেখা করা আমার দায়িত্ব ছিল। কিন্তু জানলাম, আপনি নিখোঁজ হয়েছেন। তারপর আপনাকে মুক্ত করা আমার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াল।’
ম্লান হাসল প্রিন্সেস ক্যাথারিন। পরক্ষণেই তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। মুহূর্তের জন্যে কুঞ্চিত হয়ে উঠল তার কপাল। বলল, ‘দায়িত্ব? কে এই দায়িত্ব দিয়েছে? রুশ সরকার?’
‘না রুশ সরকার নয়। তাতিয়ানা।’
‘তাতিয়ানা?’ বিস্ময়ে ফেটে পড়ল যেন ক্যাথারিনের কণ্ঠ।
সে স্তম্ভিতভাবে অপলক চোখে চেয়ে থাকল আহমদ মুসার দিকে কিছুক্ষণ। বলল অনেকক্ষণ পর, ‘তাঁর কোন চিঠি আছে?’
‘নেই।’
এবার উদ্বেগ নেমে এল প্রিন্সেস ক্যাথারিনের চোখে-মুখে। ধীর-শুষ্ক কণ্ঠে সে বলল, ‘তাহলে কি তাতিয়ানা নেই?’ শেষ শব্দটা ক্যাথারিনের রুদ্ধ কণ্ঠ থেকে খুব কষ্টে বেরুল।
‘আপনি এ কথা বলছেন কেন?’ বিস্মিত কণ্ঠে বলল আহমদ মুসা।
প্রিন্সেস ক্যাথারিন বলল, ‘সে টেলিফোনে কিছু বলবে না, চিঠি দেবে না, অথচ একজন অপরিচিত লোককে দায়িত্ব দেবে আমার সাথে দেখা করার জন্যে এটা অসম্ভব।’
একটু থেমে একটা ঢোক গিলে ভাঙা গলায় বলল, ‘বলুন আপনি কি ঘটেছে?’
আহমদ মুসা নরম কণ্ঠে ধীর স্বরে বলল, ‘আপনার অনুমান ঠিক। তাতিয়ানা নেই।’
‘কেন কেমন করে কি ঘটেছে তার?’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়ল ক্যাথারিন।
আহমদ মুসা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। ভাবল একটু কাঁদা উচিত প্রিন্সেস ক্যাথারিনের।
শান্ত হলো ক্যাথারিন। নিজেকে সামলে নিয়েছে। রুমাল দিয়ে চোখ মুছে বলল, বলুন কি ঘটেছিল? আমি এই সেদিন তার সাথে কথা বলেছি। কোন দিনই তার কোন বড় অসুখ-বিসুখ ছিল না।’
‘আপনি মুক্ত হবার আগে আমি আর কিছুই বলবো না। বলা উচিত হবে না।’
‘কিন্তু তাহলে আমি আপনাকে বিশ্বাস করব কেমন করে? আমাকে অবশ্যই জানতে হবে তাতিয়ানা আপনাকে কি দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে।’
‘এখন আমাকে অবিশ্বাস করলেও এ ভুল আপনার ভেঙে যাবে। আমি মনে করি, বন্দী অবস্থায় আপনি যত বেশি জানবেন, ততই আপনার কষ্ট বাড়বে।’
‘কিন্তু আপনি না বললেও আমি জানি। দু’টি বিশেষ জিনিস বহনের দায়িত্ব তাতিয়ানা আপনাকে দিতে পারেন।’
‘বলেছি, কোন কিছুই আমি বলব না।’
রাজ পরিবারের দায়িত্ব মনে হচ্ছে যেন আপনারই বেশি!’ প্রিন্সেস ক্যাথারিনের কণ্ঠে কিছুটা উষ্মা ঝরে পড়ল।
‘মাফ করবেন প্রিন্সেস। রাজ পরিবারের দায়িত্ব আমার নয়, কিন্তু তাতিয়ানার দেয়া দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হবে।’
‘কিন্তু এদেরকে তো বলবেন। এর বিকল্প মৃত্যুকে অবশ্যই আপনি চাইবেন না।’
আহমদ মুসা হাসল। কিছু বলতে যাচ্ছিল। এই সময় দরজায় নক হলো।
থেমে গেল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসাই গিয়ে এবার দরজা খুলে দিল।
আগের মত মায়োভস্কি এসে বাউ করে প্রবেশ করল এবং আগের মত চারজন প্রহরী দরজায় দাঁড়াল।
‘ইয়োর হাইনেস, সব কথা হয়েছে নিশ্চয়। আশা করি, তাতিয়ানার খবর ইনি আমাদের জানাতে আপত্তি করবেন না।’ প্রিন্সেস ক্যাথারিনকে লক্ষ্য করে বলল মায়োভস্কি।
বলে কোন উত্তরের অপেক্ষা না করে আহমদ মুসার দিকে চেয়ে বলল, ‘চল।’
চলতে শুরু করে মায়োভস্কি পেছনে ফিরে প্রিন্সেস ক্যাথারিনকে বলল, ‘ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার শেষ কথাটা আমি শুনেছি। মুখ না খুললে মৃত্যুই বিকল্প। আর সে মৃত্যু আপনার সামনেই এর হবে।’
বলে মায়োভস্কি বাউ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে চলতে শুরু করল। চারজন প্রহরী নিয়ে চলল আহমদ মুসাকে।