৩৭. গুলাগ থেকে টুইনটাওয়ার

চ্যাপ্টার

সাও তোরাহ।
আজর ওয়াইজম্যানের অফিস কক্ষের পাশের বিশাল হল ঘর।
সত্যিই আনন্দের মহোৎসব চলছে।
চলছে মুক্ত আলোচনা। নানা কথা-বার্তা।
আহমদ মুসার ডান পাশে বসেছে হাসান তারিক। তারপর সুসানরা। আর বাঁ পাশে কামাল সুলাইমান ও তার ছয় সাথী। আহমদ মুসার সামনে মেঝেতে বসেছে বুমেদীন বিল্লাহ।
কথার এক পর্যায়ে কামাল সুলাইমান আহমদ মুসাকে বলল, ‘জনাব, আমরা বিল্লাহর কাছে সব শুনেছি। পরের কাহিনী আপনার কাছে শুনলাম। আমরা আমাদের জাতি কৃতজ্ঞ আপনার কাছে।’ আবেগে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল কামাল সুলাইমানের কণ্ঠ।
আহমদ মুসা কামাল সুলাইমানের কথার কোন জবাব না দিয়ে কামাল সুলাইমান, ওসমান আবদুল হামিদসহ ওদের সাতজনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আপনাদের সাতজনের সম্মেলন আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে। মনে হয়েছে ইতিহাসের কামাল আতাতুর্ক, খলিফা দ্বিতীয় আবদুল হামিদ, মিসরের বাদশাহ ফারুক, লিবিয়ার বাদশাহ ইদরিস, ইন্দোনেশিয়ার আহমদ সুকর্ণ, পারস্যের রেজা শাহ পাহলবী প্রমুখ যেন পুনরায় ফিরে এসে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে মুসলমানদের বর্তমানকে রক্ষার জন্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।’
‘কিন্তু আমরা পারলাম না জনাব। আমরা চেয়েছিলাম মুসলমানদের সন্ত্রাসী সাজানোর যে ষড়যন্ত্র তার মুখোশ খুলে ফেলতে। কিন্তু পারলাম না। যে ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করেছিলাম আজর ওয়াইজম্যানরা তা পুরিয়ে ফেলেছে। একটা অংশ আমরা ব্যাংকের ভল্টে সরিয়ে রেখেছিলাম, সেটাও আজর ওয়াইজম্যান আজ নিয়ে গেল। বুমেদীন বিল্লাহ আমাদের বাঁচিয়েছে, কিন্তু মেরেছে জাতিকে।’
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘না, মি. সুলাইমান। আজর ওয়াইজম্যান যে দলিলগুলো নিয়ে গেছে, সেটা একটা ডুপ্লিকেট অংশ। পূর্ণ কপিটা ম্যাডাম সুলাইমান অন্য একটি ব্যাংকে তার ভল্টে রেখেছেন।’
কামাল সুলাইমানসহ সাতজনই অপার বিস্ময় নিয়ে তাকাল আহমদ মুসার দিকে।
‘আপনারা ধন্যবাদ দিন বিল্লাহকে। সে কিছু ডুপ্লিকেট কপি আজর ওয়াইজম্যানের হাতে তুলে দিয়ে সবাইকে বাঁচাবার একটা পথ বের করেছিল।’ বলল আহমদ মুসা সাতজনকে লক্ষ্য করে।
‘ধন্যবাদের পালা থাক। আজর ওয়াইজম্যান যে বিজয় পকেটে নিয়ে চ্যালেঞ্জ দিয়ে গেল, সে চ্যালেঞ্জের কি হবে?’ বুমেদীন বিল্লাহ বলল।
বুমেদীন বিল্লাহর কথার উত্তরে কেউ কথা বলল না। সবাই চুপচাপ।
আহমদ মুসার ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি।
নিরবতা যখন খুবই বেসুরো হয়ে উঠল, তখন আহমদ মুসা মুখ খুলল। ধীরে ধীরে বলতে শুরু করল, ‘আজর ওয়াইজম্যানের এই চ্যালেঞ্জ অনেক আগেই গ্রহণ করা হয়েছে। অপেক্ষা ছিল সাও তোরাহ থেকে কামাল সুলাইমানদের উদ্ধারের। এখন এদিকের কাজ শেষ। এখন আমি যাব রাজধানী পন্টে দিগায়। সেখান থেকে আমেরিকা।’
আহমদ মুসা একটু থামল। সোফায় সোজা হয়ে বসল। বলতে শুরু করল আবার, ‘ম্যাডাম সুলাইমানকে ধন্যবাদ। তিনি স্পুটনিকের দলিলগুলোর ডুপ্লিকেট সেই সময়ই আমাকে দিয়েছিলেন। আমি পড়েছি দলিলগুলো। দলিলগুলো আসামীকে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু বিচারের জন্যে প্রমাণ হাজির করেনি। এই কাজটাই এখন করতে হবে। বিশ বছর আগে টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়। কিন্তু এই ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাইশ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক শহরে। ষড়যন্ত্রের যাত্রা যেখান থেকে শুরু, সেখান থেকেই সেই ধ্বংস টাওয়ারের নতুন কাহিনী তৈরীর যাত্রা শুরু করতে হবে।’
থামল আহমদ মুসা।
পিন পতন নিরবতা ঘরে। সবার দৃষ্টি আহমদ মুসার দিকে।
হাসান তারিক ও কামাল সুলাইমানদের মুখে আনন্দ। অন্যদের চোখে বিস্ময়।
পলা জোন্সের চোখে বেদনা।
সোফিয়া সুসানের চোখে উদ্বেগ।
নিরবতা ভাঙল কামাল সুলাইমান। বলল, ‘নতুন কাহিনী তৈরীর যাত্রায় আমরাও সাথী।’
হাসল আহমদ মুসা। বলল, ‘অবশ্যই। কিন্তু তার আগে স্পুটনিকের যাত্রা আবার শুরু কর।’
‘সন্ত্রাস বিরোধী সাংবাদিক হিসাবে আমি সফল। সুতরাং নতুন অভিযানে আমি আছি।’
‘সাও তোরাহ ঘটনার রিপোর্ট কেমন লেখ, সেটা দেখার পরই তুমি ছাড়পত্র পাবে।’ হেসে বলল আহমদ মুসা।
আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই এ্যারন বলে উঠল, ‘পাশের ঘরে খাবার প্রস্তুত। আপনাদের সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।’
আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল।
সবাই উঠল।
পাশের ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করে আহমদ মুসা হাসান তারিককে বলল, ‘গোটা ঘাঁটির সার্চ ঠিকমত হয়েছে তো? পুলিশ প্রধানের সাথে আলোচনা করেছি। পুলিশ আসছে। আমাদের সব কাজ তার আগেই শেষ করতে হবে।’
‘হ্যাঁ ভাইয়া। কামাল সুলাইমানদের সাথে আমিও সর্বক্ষণ ছিলাম। এখানে পাওয়া তথ্যগুলো নিয়ে খাবার পরেই আলোচনায় বসব।’ বলল হাসান তারিক।
আহমদ মুসা খাবার নিয়ে বসল এক কোণের এক টেবিলে।
সোফিয়া সুসান খাবার নিয়ে এসে আহমদ মুসার সামনে বসল।
আহমদ মুসা খাবার খাওয়া শুরু করেছে।
সোফিয়া সুসান মুখ নিচু করে বসে আছে। তার মুখ ভারী।
‘খাও সুসান।’ তাকিদ দিল আহমদ মুসা।
‘আমি কমান্ডো ট্রেনিং-এর ডেমোনেষ্ট্রেশন আর কখনও কোথাও দেব না। আমাকে আপনি সাথে নেবেন।’ কণ্ঠে তার কান্নার সুর।
দুচোখ থেকে তার দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
‘পাগল! তোমার চাকুরীও তো আছে।’ বলল আহমদ মুসা। মুখে তার এক টুকরো হাসি।
‘আহত হবার পর আমি ছয় মাসের ছুটি নিয়েছি। আমি…………..।’ কথা শেষ করতে পারলো না সুসান। ধীরে ধীরে তাদের টেবিলে এল শেখুল ইসলাম আহমদ মুহাম্মাদ। সে অসুস্থ।
শেখুল ইসলামকে স্বাগত জানাল আহমদ মুসা।
চোখ মুছল সোফিয়া সুসান।

পরবর্তী বই
ধ্বংস টাওয়ার