৩২. অক্টোপাশের বিদায়

চ্যাপ্টার

নোয়ান নাবিলার চোখ দু’টি খবরের কাগজের উপর নিবদ্ধ।
গোগ্রাসে গিলছে নোয়ান নাবিলা নিউজটা।
নিউজ পড়া শেষ হয়েছে।
কিন্তু তার চোখ দু’টি উঠে আসেনি খবরের কাগজ থেকে। তার শূন্য দৃষ্টি নিবদ্ধ খবরের কাগজে। বসে আছে সে পাথরের মত স্থির হয়ে।
তার সামনে গরম চা ঠান্ডা পানি হয়ে গেছে।
নোয়ান নাবিলার শূন্য দৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে তখন গতকাল সন্ধ্যায় তার দেখা নিউ হারমানের গণহত্যার দৃশ্য। খবরের কাগজে যা লিখেছে তার চেয়ে সহস্রগুণ ভয়াবহ তা। লাল রক্তের স্রোত এবং লাশের স্তুপ তার চোখের সামনে আবার জীবন্ত হয়ে উঠল। শিউরে উঠলো নোয়ান নাবিলা। তার গোটা সণায়ুতন্ত্রীতে জাগল একটা শীতল শিহরণ। তার সাথে তার মনে ছুটে এল প্রশ্নের এক তীর-বিদ্ধ-ধাক্কা। আহমদ মুসা এই গণহত্যা সংঘটিত করেছে? ঠান্ডা মাথায় এক এক করে এই মানুষ মারার কাজ আহমদ মুসা করেছে?
জগত জোড়া ক্রোধ, ঘৃণায় ভরে গেল নোয়ান নাবিলার মন। হিটলার যেমন ছিল, আহমদ মুসাও তো সে ধরনেরই কশাই। কিন্তু কেন? হিটলারের একটা রাজ্য ছিল, কমপক্ষে গোটা ইউরোপ নিয়ে তার রাজ্য গড়ার শখ ছিল। তাই ইহুদীদের হত্যা করে তার দেশের, জাতির, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি নিষ্কন্টক করা তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আহমদ মুসা মার্কিন ইহুদীদের উপর এই গণহত্যা চালাল কিসের আশায়? কোন প্রয়োজনে?
বিস্ময়ের শেষ নেই নোয়ান নাবিলার। আহমদ মুসাই, মার্কিন ইহুদীদের আজ কাঠগড়ায় তুলেছে। তার হিংসারতো প্রশমন ঘটার কথা। কিন্তু তা না হয়ে হিংসায় আরও উদ্দীপ্ত হয়ে উঠল কি করে?
কিন্তু আহমদ মুসা কি রক্ষা পাবে?
অপরাধ সে চাপা রাখতে পারেনি। ঘটনার নিউজের সাথে তার অপরাধও প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তাকেও আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং সেটা গণহত্যার দায়ে। তার বাঁচার পথ নেই।
হঠাৎ নোয়ান নাবিলা প্রচন্ড ধাক্কা খেল তার চিন্তায়। তার মনে পড়ল গতকাল বিকেলে জেনারেল শ্যারন ও উইলিয়াম জোনসের আলোচনার কথা। জেনারেল শ্যারন তাকে বলেছিল, আহমদ মুসা মার্কিন ইহুদীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই গণহত্যাই কি সেই ষড়যন্ত্র? আর জেনারেল শ্যারন উইলিয়াম জোনসের সাথে আলোচনায় বলেছিলেন, বিজয়ের আনন্দে আহমদ মুসা এমন কিছু করে বসবে যাতে সে আমেরিকানদের কাছে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হবে। ‘এমন কিছু’ বলতে কি এই ঘটনার দিকেই ইংগিত করা হয়েছিল? এই ঘটনাতো নিশ্চিতই আহমদ মুসাকে আমেরিকানদের ঘৃণার পাত্রে পরিণত করবে। দেখা যাচ্ছে জেনারেল শ্যারনের গতকাল বিকেলের বলা কথা পরবর্তী রাতেই ফলে গেল। এমন নিশ্চিত কথা তিনি বললেন কি করে? এত নিখুঁতভাবে তিনি জানলেন কি করে আহমদ মুসার ষড়যন্ত্র এবং কি ষড়যন্ত্র সেই কথাও? তাছাড়া ষড়যন্ত্রের কথা জানার পর তো প্রতিকার-প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল। তা তিনি করেননি কেন?
আরেকটি ধাক্কা খেল নোয়ান নাবিলা তার চিন্তায়। খুব বড় হয়ে তার সামনে এসে দাড়াল জেনারেল শ্যারন ও শ্যারনের দক্ষিণ হস্ত ইহুদী স্পাই মাষ্টার বেন ইয়ামিনের কথোপকথন। ওরা একটা মিশনের কথা বলেছিলেন। যে মিশনটা যাত্রা করার কথা গতকাল সন্ধ্যা ৬টায়। যে মিশনটা কোন রেসিষ্ট্যান্সের সম্মুখীন হবে না ওরা বলছিলেন। এই ‘রেসিষ্ট্যান্স হবে না’ কথাটার ব্যবহার প্রমাণ করে মিশনটা আক্রমণাত্মক। ভাবল নোয়ান নাবিলা। ওদের কথোপকথনের মাধ্যমে একথা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, মিশনটা যেখানে যাবে সেটা ইহুদী বসতি। এবং তা পূর্ব উপকূলের প্রথম ইহুদী বসতি যেখানে দি গ্রেট ডেভিড দানিয়েল জন্মগ্রহণ করেন।
এ কথা মনে হতেই শিউরে উঠল নোয়ান নাবিলা। দি গ্রেট ডেভিড দানিয়েল তো নিউ হারমানে জন্মগ্রহণ করেন এবং নিউ হারমানই এ অঞ্চলের সবচেয়ে পুরোনো ইহুদী বসতি। ভ্রু কুঞ্চিত হলো নোয়ান নাবিলার। তাহলে কি জেনারেল শ্যারন গত সন্ধ্যায় বেন ইয়ামিনদেরকে নিউ হারমানে কোন আক্রমণাত্মক মিশনে পাঠিয়েছিলেন যা আহমদ মুসার বিরুদ্ধে আমেরিকানদের মনে ঘৃণার সৃষ্টি করবে? ভীষণ কেপে উঠল নোয়ান নাবিলার বুক। নিউ হারমানের ইহুদী বসতিতে কি বেন ইয়ামিনরাই আক্রমণ করেছিল? সেখানকার গণহত্যা কি তাদের কাজ? নোয়ান নাবিলা মরিয়া হয়ে ভাবতে চেষ্টা করল, বেন ইয়ামিনদের মিশন ছিল নিউ হারমানে আহমদ মুসাদের আক্রমণ প্রতিরোধ করা কি। কিন্তু যুক্তিটা নোয়ান নাবিলা মেলাতে পারল না। অভিযানটা নিউ হারমানে আহমদ মুসার আক্রমণ ঠেকানোর জন্যে হলে বেন ইয়ামিন কেমন করে নিশ্চিতভাবে বলেছিল যে, সেখানে কোন রেসিষ্ট্যান্স হবে না। বেন ইয়ামিনের এই কথার অর্থ হলো, নিউ হারমান থেকে তাদের অভিযানের বিরুদ্ধে কোন রেসিষ্ট্যান্স হবে না এবং এটাই প্রমাণ হয়েছে নিউ হারমানের ইহুদী অধিবাসিরা কোন রেসিষ্ট্যান্স করতে পারেনি। জেনারেল শ্যারন ও বেন ইয়ামিনের গোটা কথোপকথনে তাদের মিশন আহমদ মুসাদের বিরুদ্ধে কিংবা তাদের মিশন মোকাবিলায় আহমদ মুসার কোন ভূমিকা থাকবে তার উল্লেখ নেই। বরং যে কথাটা তাদের বক্তব্যে এসেছে সেটা হলো, এমন কিছু ঘটবে যাতে আহমদ মুসা আমেরিকানদের ঘৃণার পাত্র হবে। অন্যকথায় নিউ হারমানের গণহত্যা ঘটনার দায় আহমদ মুসার উপর বর্তাবে। সেটাই বর্তেছে। এবং জেনারেল শ্যারনাই তাদের গণহত্যার দায় চাপিয়েছে আহমদ মুসার উপর।
তাহলে নিউ হারমানের কাজ কি কোন আত্মঘাতি কাজ? জেনারেল শ্যারনরা ইহুদী স্বার্থের রক্ষক সেজে নিরপরাধ ইহুদীদের ছাগল-ভেড়ার মত করে হত্যা করল? এই প্রশ্ন নোয়ান নাবিলার গোটা সত্তা, সমস্ত সণায়ুতন্ত্রীতে যেন আগুন ধরিয়ে দিল।
হাতের কাগজটা ছুড়ে ফেলে লাফ দিয়ে উঠে দাড়াল নোয়ান নাবিলা।
অস্থিরভাবে সে পায়চারি করতে লাগল।
তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে এই জ্বালা যে, আমাদের কম্যুনিটির শীর্ষস্থানীয় যারা কম্যুনিটির স্বার্থরক্ষার জন্যে কাজ করছে তারাই নৃশংসভাবে হত্যা করল কম্যুনিটির লোকদের। অবিশ্বাস্য এটা! কি করে এটা সম্ভব হতে পারে! তার হিসেবে কি কোন ভুল হচ্ছে? সে কি জেনারেল শ্যারন ও বেন ইয়ামিনের কথার ভুল অর্থ করছে? আসলেই বেন ইয়ামিনের মিশন নিউ হারমান না হয়ে অন্য কোথাও ছিল? আহমদ মুসাকে ঘৃণার পাত্র করার মত ঘটনা আরও কোথাও ঘটবে? নিউ হারমানের ঘটনা কি কাকতালীয়ভাবে মিলে গেছে জেনারেল শ্যারন ও বেন ইয়ামিনের কথার সাথে?
নিউ হারমানকে নিয়ে এইভাবে হাজারো কথা ভাবতে গিয়ে হঠাৎ নোয়ান নাবিলার মনে পড়ল নিউ হারমানে একজন নিহত ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া ভিডিও ক্যাসেটের কথা। ওতে কি আছে? কেন মৃত লোকটির হাতে ওটা ছিল?
ক্যাসেটটা জ্যাকেটের পকেটেই ছিল।
ছুটে গেল নোয়ান নাবিলা। ক্যাসেট নিয়ে ফিরে এল। ওটা কম্পিউটারে ঢুকিয়ে সুইচ অন করে সোফায় এসে বসল সে।
কম্পিউটার স্ক্রীনে দৃশ্য ফুটে উঠার সাথে সাথেই গুলীর অনেকগুলো শব্দ শুনতে পেল নোয়ান নাবিলা। শব্দগুলোর কোনটা খুব কাছের, কোনটা অপেক্ষাকৃত দূর থেকে ভেসে আসা। সেই সাথে শুনতে পেল মানুষের কান্না ও চিৎকার।
শব্দের সাথে সাথে স্ক্রীনে যে দৃশ্যটি ফুটে উঠল তাতে সে দেখল দু’জন পৌঢ় নারী পুরুষ, একজন যুবতি ও একজন শিশু একটা দরজা দিয়ে ছুটে এসে একটা বড় ঘরে প্রবেশ করল।
ঘরটি একটা বড় শোবার ঘর।
ঘরে একটা বড় খাট। ঘরের এক কোণে ছোট একটা রাইটিং টেবিল। খাটের শিয়রে দেয়ালে টাঙানো একটা পেইন্টিং। রাইটিং টেবিলের পাশে দেয়ালে একটা আলমিরা।
দৌড়ে সবচেয়ে শেষ ঘরে প্রবেশ করেছে প্রৌঢ় লোকটি। সে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করতে চাইল। কিন্তু পারল না। এক ঝাঁক গুলী এসে দরজাটাকে ছিটকে খুলে দিল। আর গুলীর ঝাঁকে পড়ে গেল পৌঢ় লোকটি।
গুলীতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া দেহ নিয়ে দরজাতেই পড়ে গেল লোকটি।
প্রৌঢ়ের সাথের অন্যেরা তখন মেঝেতে শুয়ে পড়েছে।
গুলী ছুড়তে ছুড়তে একজন লোক ঘরে ঢুকল। লাথি মেরে দরজার সামনে থেকে প্রৌঢ়ের লাশটি এক পাশে একটু ঠেলে দিয়ে মেঝেয় শুয়ে পড়া প্রৌঢ়া মহিলা, যুবতি ও শিশুর দিকে এগুলো। তার ষ্টেনগানের ব্যারেল একটু নিচু করে তাক করল তাদেরকে।
ওদের কারো মুখে তখন আর কান্না নেই।
ভয়ে কুঁকড়ে গেছে ওরা সবাই। ভয়ে চোখগুলো ওদের যেন বেরিয়ে আসতে চাইছে।
লোকটার ষ্টেনগানের নল গুলী বর্ষণ করল। গুলীর ঝাঁক গিয়ে ঘিরে ধরল ওদের তিনজনকে।
মুহুর্তেই রক্তের বন্যায় ডুবে গেল ওরা।
হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে ষ্টেনগানধারী লোকটি ডানদিকে ডাকাল এবং তীব্র কণ্ঠে বলে উঠল, ‘কোন হারামজাদার বাচ্চা তুমি দেখাচ্ছি মজা।’ তার ষ্টেনগানের নল চোখের পলকে ডানদিকে ঘুরে গেল। আর সেই সাথেই নড়ে গেল দৃশ্য। অন্তর্হিত হয়ে গেল ঘরের দৃশ্য। তার বদলে ঝড়ের বেগে একের পর এক দৃশ্য আসছে আর মিলিয়ে যাচ্ছে। কখনও দেয়ালের ছবি কখনো করিডোরের ছবি, ইত্যাদি।
বুঝা গেল ক্যামেরাম্যান পালাচ্ছে।
এক সময় দৃশ্য উঠে গেল।
অন্ধকার নেমে এল কম্পিউটার স্ক্রীনে।
এসব দেখছিল বটে নোয়ান নাবিলা। কিন্তু ষ্টেনগানধারীকে দেখার পর বিস্ময় বিস্ফোরিত নোয়ান নাবিলার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।
কম্পিউটার স্ক্রীনে ষ্টেনগান হাতে গুলী করতে করতে বেন ইয়ামিনকে ঘরে ঢুকতে দেখে প্রথমে ভুত দেখার মত আঁৎকে ওঠে নোয়ান নাবিলা। দৃশ্যটা তার বিশ্বাস হতে চায়নি। মনে হয়েছে সে যেন এক দুঃস্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু দুঃস্বপ্ন তো নয়।
সে সকাল থেকে নিজের বাড়িতে বসে গত সন্ধ্যায় নিউ হারমান থেকে উদ্ধারকৃত ভিডিও ক্যাসেটটি বারবার দেখছে তার নিজের কম্পিউটার স্ক্রীনে।
আরও অবাক হলো নোয়ান নাবিলা যে, গতকাল বিকেলে জেনারেল শ্যারনের সাথে সাক্ষাতের সময় বেন ইয়ামিনকে যে কালো পোশাকে দেখেছিল, এখানে সে পোশাকেই দেখছে।
দৃশ্যটার দর্শন শুরু হলে নোয়ান নাবিলা উত্তেজিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে পড়েছিল, এখন ধপ করে বসে পড়ল। তার দেহের সমস্ত শক্তি যেন কোথায় উবে গেল। দেহের যেন এক ফোটা ওজনও তার নেই। তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও এতটা বিস্মিত হতো না যতটা বিস্মিত হয়েছে সে বেন ইয়ামিনকে নিজ হাতে তার ইহুদী ভাইদের নৃশংসভাবে খুন করতে দেখে।
তার কেবলই মনে হতে লাগল, জেনারেল শ্যারন, বেন ইয়ামিনরা কারা? তাদের আসল পরিচয় কি? ওরা ইহুদী, কিন্তু কি চায় ওরা? ওরা আহমদ মুসাকে ধ্বংস করতে চায়, কিন্তু সেটা কি নিউ হারমানের নারী, শিশু বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলকে হত্যা করে তার দায় আহমদ মুসার ঘাড়ে চাপিয়ে? এদের তুলনায় আহমদ মুসা তো দেবতুল্য নিষ্পাপ। আহমদ মুসা এক মুসলমান হওয়া ছাড়া তার কোন অপরাধ দেখি না। সে তার জাতির জন্যে কাজ করে বটে, কিন্তু অন্য জাতির ক্ষতি করে নয়। দু’একটি ঘটনায় সে আহমদ মুসাকে নিকট থেকে দেখেছে। আহমদ মুসা আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া কাউকে হত্যা করেনা। আহমদ মুসাকে ধরা অথবা হত্যা করার জন্যেই নাবিলা ইহুদী কমান্ডোদের নিয়ে এসেছিল ডা. বেগিন বারাকের বাড়িতে। এদিক থেকে নোয়ান নাবিলাকে আহমদ মুসা জানের শত্রু মনে করার কথা। কিন্তুও সে সাগরিকাকে বলেছে, নোয়ান নাবিলা যেটা করেছে, তার জায়গায় আমি হলে আমিও সেটাই করতাম। কোন দিক দিয়েই সে অন্যায় কিছু করেনি। আহমদ মুসার এই মানবিকতার পাশে জেনারেল শ্যারন বেন ইয়ামিনরা একেবারেই অমানুষ।
ভীষণ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল নোয়ান নাবিলার মন। ডা. বারাক আংকেলরা ঠিকই বলেন, জেনারেল শ্যারন, ডেভিড উইলিয়াম জোনস এবং বিজ্ঞানী জন জ্যাকবরা মার্কিন ইহুদীদের জন্যে ‘শনি’ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। ওরা মার্কিন ইহুদীদের একটা পলিটিক্যাল ইউনিটে পরিণত করতে চাচ্ছে যাদের একমাত্র লক্ষ মার্কিন জনগণের উপর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। নোয়ান নাবিলার মনে হলো, এটা অন্যায় ও অসংগত একটা অভিলাষ। অন্যায় অসংগত বলেই এই লক্ষ অর্জনের পথে নিউ হারমানের নিরপরাধ স্বজাতিকে তাদের খুন করতে হলো। ডা. বারাক ইহুদী হয়েও ঘৃণা করেন জেনারেল শ্যারনদের এবং ভালোবাসেন আহমদ মুসাকে। মনে পড়ল ডা. বারাকের কথা। তিনি বলেন, মুসলমানদের কোন ইসরাইল নেই, প্রমিজড ল্যান্ড নেই। তাই তাদের নেই কোন পিছু টান। তারা যে দেশে যায়, সে দেশেরই হয়ে যায়…………।
‘নাবিলা।’ পেছন থেকে ডেকে উঠল শশাংক সেন।
চিন্তা সূত্র ছিন্ন হয়ে গেল নোয়ান নাবিলার।
ঘুরে বসল সে।
‘হ্যালো নাবিলা কেমন আছ?’ বলে শশাংক এসে নাবিলার পাশে বসে তাকে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘ডার্লিং তোমাকে কিন্তু খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছে।’
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নোয়ান নাবিলা বলল, ‘তুমি তো এ সময় আস না, ব্যাপার কি?’
‘তুমি খুব খুশী হবে, এমন একটা খবর তোমাকে দিতে এসেছি।’
‘কি খবর?’ বলল নাবিলা।
‘আহমদ মুসার খুব বিপদ। খবর তুমি নিশ্চয় আজকের কাগজে পড়েছো। সাগরিকা কিছুক্ষণ আগে টেলিফোনে বলল, আহমদ মুসা নিউ হারমানে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে যাচ্ছে। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম বলে যাই তোমাকে খবরটা।’
চমকে উঠল নোয়ান নাবিলা।
কিন্তুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘তোমার জন্যে এটা তো খুশীর খবর নয়।’
‘অবশ্যই না। আমি মনে করি আহমদ মুসাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সে এ কাজ করতেই পারে না।’
মনে আবার একটা খোঁচা খেল নোয়ান নাবিলা। অস্থির একটা ভাবনা জাগল তার মনে, কে অপরাধ করেছে, আর কে পাকড়াও হচ্ছে। এই প্রথম বারের মত আহমদ মুসার জন্যে একটা দরদের সৃষ্টি হলো নোয়ান নাবিলার মনে। সে ভাবল নিউ হারমান থেকে পাওয়া ক্যাসেটের কথা শশাংক সেনকে বলা দরকার।
মুখ খুলেছিল নাবিলা শশাংককে বলার জন্যে। এ সময় কলিংবেল বেজে উঠল।
কথা বলা হলো না নাবিলার। সে উঠে গিয়ে গেট-ইন্টারকমের সুইচে চাপ দিয়ে বলল, ‘হ্যালো ওখানে কে?’
‘গুড মর্নিং। আমি জেনারেল শ্যারন ম্যাডাম। আপনার সাথে আমার জরুরী কাজ আছে।’ ও প্রান্ত থেকে কথা ভেসে এল।
জেনারেল শ্যারনের কণ্ঠ শুনেই মুখ অন্ধকার হয়ে গেল নোয়ান নাবিলার।
কিন্তু মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে গেট ওপেনের সুইচে চাপ দিয়ে বলল ‘গুড মর্নিং স্যার। ভেতরে এসে ড্রইং-এ বসুন। আমি নিচে আসছি।’ বলে অফ করে দিল গেট-ইন্টারকম।
নোয়ান নাবিলার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে শশাংক সেন। বলল, ‘নাবিলা তোমাকে খুব বিমর্ষ ও ভীত দেখাচ্ছে। তুমি কি অসুস্থ? শশাংকের কণ্ঠে উদ্বেগ।
নাবিলা ধীরে ধীরে চোখ তুলল শশাংকের দিকে বলল, ‘বিপদ শুধু আহমদ মুসার নয়। বিপদ মার্কিন ইহুদীদেরও। জেনারেল শ্যারনদের ষড়যন্ত্র আমাদের ধ্বংস করবে। তোমাকে সব কথা বলার সময় নেই। জেনারেল শ্যারন এসেছেন, আমি নিচে যাচ্ছি।’
কথা শেষ করেই নাবিলা কম্পিউটারের দিকে এগুলো। কম্পিউটার থেকে একটা ক্যাসেট বের করে শশাংকের দিকে তুলে ধরে বলল, ‘এই ক্যাসেটটা নাও। ক্যাসেটটা সাগরিকা অথবা আহমদ মুসার হাতে পৌছাতে হবে। মনে রেখ? এই ক্যাসেটের মুল্য আমার, তোমার জীবনের চেয়ে অনেক বেশী।’
নোয়ান নাবিলার অবস্থা দেখে শশাংকের মুখে বিস্ময় লেগেই ছিল। এবার সেখানে উদ্বেগ দেখা দিল। বলল, ‘এত মুল্যবান জিনিস। তাড়াহুড়া কেন। তুমিই ওদের কাছে এটা পৌছে দিও। আমি অন্য এক জায়গায় যাবার জন্যে বেরিয়েছি।’
নোয়ান নাবিলার চোখ-মুখ উদ্বেগে ভরে গেল। বলল, ‘না শশাংক। ক্যাসেটটা নিয়ে এক্ষনি তোমাকে চলে যেতে হবে। হঠাৎ করে এখানে এ সময় জেনারেল শ্যারনের আগমনের কারণ বুঝতে পারছি না। আমার ভয় করছে। জেনারেল শ্যারন যে কোন মুল্যে এই ক্যাসেট হাত করতে চাইবে। তুমি এই মুহুর্তে ক্যাসেটটি এই বাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাও।’
শশাংকের চোখেও ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠল। বলল, ‘তোমার কোন বিপদ হবে না তো?’
‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না শশাংক। যাই হোক। আহমদ মুসাকে এবং মার্কিন ইহুদীদের বাঁচাতে হবে। ক্যাসেট তুমি তাড়াতাড়ি আহমদ মুসার হাতে পৌছাও।’
‘আমিও তোমার কিছুই বুঝতে পারছি না নাবিলা।’
‘ক্যাসেটটি আহমদ মুসাকে দাও, উনিই সব বুঝিয়ে দেবেন। যাও তুমি, আমি নিচে নামার আগেই তোমাকে বেরিয়ে যেতে হবে।’ অনুনয়ের সুরে বলল নোয়ান নাবিলা।
ক্যাসেটটি হাতে নিয়ে নোয়ান নাবিলার দিকে একবার গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘যাচ্ছি ডার্লিং। গড ব্লেস ইউ।’
শশাংক ঘুরে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
শশাংক বেরিয়ে যাবার কিছু পরে নোয়ান নাবিলা নিচে নেমে এল।
সিড়ি মুখের বিরাট হল ঘরটাই ড্রইং রুম।
‘দুঃখিত স্যার। একটু ঝামেলায় ছিলাম। সেরে আসতে দেরী হলো।’ মুখে হাসি টেনে বিনয়ের সাথে বলল নোয়ান নাবিলা।
‘না, না। অল রাইট। আমিই বরং অসময়ে বিনা নোটিশে এসে গেছি। এটা ঠিক হয়নি। কিন্তু কি করব জরুরী পরিস্থিতি তো!’ বলল জেনারেল শ্যারন।
জেনারেল শ্যারনের কথায় পুরান অস্বস্তিটা বাড়ল নোয়ান নাবিলার।
ভেতরের ভাবটা চেপে নাবিলা বলল, ‘বলুন স্যার। নিশ্চয় কোন জরুরী ব্যাপার?’
‘নাবিলা, আমরা নিউ হারমানের ব্যাপারে তথ্য যোগাড় করতে শুরু করেছি। খবর পেয়েছি, শয়তান আহমদ মুসা জঘন্য গণহত্যা সংঘটিত করার পর তুমিই প্রথম নিউ হারমানে গেছ সেই জন্যেই তোমার কাছে ছুটে এসেছি। তোমার কাছ থেকে কিছু জানা দরকার।’
‘হ্যাঁ, আপনার ওখান থেকে বেরিয়ে একজন ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে ঐ ঘটনার মুখে পড়েছিলাম।’ খুব সহজ কণ্ঠে বলল নোয়ান নাবিলা।
‘তুমি কি দেখলে, কি বুঝলে, তোমার এই কথাগুলো আমাদের জন্য খুবই মুল্যবান।’ জেনারেল শ্যারন শান্ত ও উদগ্রীব কণ্ঠে বলল।
নোয়ান নাবিলা ভাবল, ধড়িবাজ শ্যারনের লোকরা হয়তো তাকে দেখে থাকবে, এমনকি তাকে হয়তো ফলোও করেছে। সবই তারা দেখেছে। এখন তাকে বাজিয়ে দেখতে এসেছে, আমি তাদেরকে কতটুকু দেখেছি। সুতরাং তার সব কথাই বলা দরকার। এই চিন্তা করে নোয়ান নাবিলা বলল, ‘দু’একটা গুলীর শব্দ ও চিৎকারের শব্দে আমি গাড়ি থামাই। যেহেতু শব্দগুলো নিউ হারমানের বিভিন্ন দিক থেকে আসছিল। আমার সন্দেহ হওয়ায় গাড়ি থেকে নামি। এই সময় নিউ হারমানের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েকটা গাড়িকে আমি দ্রুত বের হয়ে যেতে দেখি। এর পরই দেখতে পাই, একজন লোক টলতে টলতে রাস্তার দিকে এগিয়ে আসছে। দেখে আমার মনে হলো, লোকটি আহত। আমি দ্রুত তার দিকে এগুলাম। কিন্তু আমি তার কাছে পৌছার আগেই সে মাটিতে পড়ে গেল। আমি ছুটে গিয়ে তার কাছে যখন বসলাম তখন তার দেহ নিশ্চল-নিথর। আমি হাত দিয়ে পরীক্ষা করে বুঝলাম যুবকটি মারা গেছে। সে ছিল গুলী বিদ্ধ।
আমি উঠে দাড়ালাম। সেই সময় আমার চোখে পড়ল, যুবকটির ডান হাত সামনের দিকে ছড়ানো। তার হাতে একটি ক্যাসেট……………।’
নোয়ান নাবিলার মুখের কথা শেষ না হতেই জেনারেল শ্যারন দ্রুত কণ্ঠে বলে উঠল, ‘ক্যাসেট?’
নোয়ান নাবিলা ধীর কণ্ঠে বলল, ‘হ্যা ক্যাসেট।’
‘ক্যাসেট তোমার কাছে?’ হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত বলে উঠল জেনারেল শ্যারন।
‘বলছি।’
বলে নোয়ান নাবিলা আবার শুরু করল, ‘গুলীর শব্দ শোনা চিৎকার, তারপর এই যুবককে গুলীবিদ্ধ দেখে আমার আন্টির কথা মনে……।’
‘এসব কথা পরে শুনব, আগে বল ক্যাসেটটা কোথায়, তোমার কাছে?’ জেনারেল শ্যারন নোয়ান নাবিলার কথায় বাধা দিয়ে বলে উঠল। তার অধৈর্য্য কণ্ঠ।
এই ভাবে বাধা পেয়ে নোয়ান নাবিলা বিব্রত হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া জবাবে কি বলবে, সেটাও রেডি ছিল না। কি বলবে তা ঠিক করতে একটু সময় গেল। বলল সে, ‘আমি ওটা পুলিশকে দিয়েছি। আমি আহত আন্টিকে নিয়ে ফেরার পথে পুলিশ আমাকে আটকেছিল। আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। আমি তাদের ক্যাসেট দিয়ে বলেছিলাম। একজন মুমুর্ষ লোক মনে হয় এটা কাউকে পৌছবার চেষ্টা করছিল। আমার মনে হয়েছিল পুলিশের ওটা কাজে লাগতে পারে।’
ক্রোধে জেনারেল শ্যারনের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। ক্রোধ ও ক্ষোভের একটা তীব্র ঝড় এক সাথে তার ভেতর থেকে বের হতে যাচ্ছিল। ফলে সে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল। মুহূর্ত কয়েক পরে বলল, ‘পুলিশকে দিয়েছ? পুলিশের নাম চেহারা মনে আছে?’ গর্জন করে উঠল জেনারেল শ্যারনের কণ্ঠ।
‘চারদিকের অবস্থায় তখন আমি দারুণ ভীত। আহত আন্টিকে নিয়ে ব্যস্ত। তার উপর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করায় আমি আরও বিব্রত হয়ে পড়েছিলাম। মনের এ অবস্থা নিয়ে আমি পুলিশের মুখের দিকে মাত্র একবার তাকিয়েছিলাম। তার চেহারা আমার মনে নেই।’ কথাটা এইভাবে বলতে পেরে খুশি হলো নোয়ান নাবিলা। মিথ্যাটা সত্যের মতই হয়েছে।
নোয়ান নাবিলার কথা শুনে মুখটি চুপসে গেল জেনারেল শ্যারনের। উদ্বেগের চিহ্নও তার চোখে-মুখে স্পষ্ট হয়ে উঠল। বলল, ‘ঐ মৃত লোকটি একজন সাংবাদিক। ঐ ক্যাসেটে শয়তান আহমদ মুসাদের সম্পর্কে জীবন্ত সাক্ষ্য পাওয়া যাবে। ক্যাসেটটা আমাদের অবশ্যই চাই। নিউ হারমানে গতকাল যেসব পুলিশ অফিসার গিয়েছিল, তাদের যদি ছবি দেখ বলতে পারবে না?’
‘বলা মুষ্কিল। একেতো রাত, তার উপর তার মাথায় হ্যাট ছিল। হ্যাটের ছায়া ছিল তার চোখে-মুখে। উপরন্তু মুখটা তার আমি ভাল করে দেখিনি।’ দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে বলল নোয়ান নাবিলা।
‘না তাকে খুঁজে পেতেই হবে নাবিলা এবং আজকেই। তুমি তার কণ্ঠ শুনলে অবশ্যই চিনতে পারবে।’ কণ্ঠটা কঠোর শুনাল জেনারেল শ্যারনের।
কথা শেষ করেই জেনারেল শ্যারন তার হাতের মোবাইলে একটা কল করল।
তারপর মোবাইলটা কানে তুলে নিয়ে বলল, ‘গুড মর্নিং বেন ইয়ামিন। শুন, গতকাল যে পুলিশ অফিসাররা নিউ হারমানে গিয়েছিল, তাদের সবার কণ্ঠ আমাদের দরকার। কারা গিয়েছিল তা তো আমরা জেনেই গেছি। আমাদের অডিও লাইব্রেরীতে যদি তাদের কণ্ঠ না থাকে, তাহলে পুলিশ রেকর্ড থেকে এখনি তোমাকে যোগাড় করে আনতে হবে। পারবে না?’
‘অবশ্যই। রেকর্ড কিপার অফিসার আমাদের লোক। বলে দিচ্ছি। আপনি এলেই পেয়ে যাবেন।’ বলল ওপার থেকে বেন ইয়ামিন।
‘ধন্যবাদ বেন। আমি আসছি। বাই।’
বলে জেনারেল শ্যারন মোবাইল অফ করে দিয়ে তাকাল নোয়ান নাবিলার দিকে। বলল, ‘নাবিলা, তোমাকে যেতে হবে আমার সাথে।’ তার কণ্ঠে সুস্পষ্ট নির্দেশ।
নোয়ান নাবিলার মুখ চুপসে গেল। ভয়ও পেল সে। বলল সে, ‘কিন্তু স্যার। এখন তো আমার যাওয়া হবে না।’
‘না, কোন কথা নয়। তোমাকে যেতেই হবে।’ গর্জন করে উঠল যেন জেনারেল শ্যারনের গলা।
‘আমার আব্বা আম্মা দু’জনেই সকালে বাইরে গেছেন, তারা না ফেরা পর্যন্ত……..।’ কথা শেষ না করেই থেমে গেল নোয়ান নাবিলা। ভয় মিশ্রিত তার কণ্ঠ।
‘না নাবিলা। এখনি আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে। এখন প্রতিটি সেকেন্ড আমাদের কাছে এক একটি বছর।’
বলে উঠে দাড়াল জেনারেল শ্যারন।
শুধু ভয় পাওয়া নয়, ভেতরটা তখন কাঁপতে শুরু করেছে নোয়ান নাবিলার। তার চোখে ফুটে উঠেছে নিউ হারমান হত্যার দৃশ্য। নাবিলার চোখে জেনারেল শ্যারনরা কশাই ছাড়া আর কিছুই নয়। তার মিথ্যা ধরা পড়লে তাকে হত্যা করতে এক মুহুর্তও দেরী করবে না।
আনমনা হয়ে পড়েছিল নোয়ান নাবিলা।
জেনারেল শ্যারন তাকে হাত ধরে টেনে তুলল। বলল, ‘এক মুহূর্তও আমি দেরী করতে পারছি না।’
নোয়ান নাবিলা শংকিত হয়ে পড়ল। তাকে জেনারেল শ্যারন জোর করেই নিয়ে যাবে। নিজের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ বোধ করল নোয়ান নাবিলা। হঠাৎ তার মাথায় একটা চিন্তা ঝিলিক দিয়ে উঠল, তাকে যেখানে যেখানে নিয়ে যেতে পারে, তার ঠিকানা শশাংকের কাছে রেখে যাওয়া দরকার। তাহলে উপরে গিয়ে তাকে টেলিফোন করতে হবে মোবাইলে। এবার মনে একটু সাহস ফিরে পেল সে। বলল, ‘স্যার, আপনি একটু দাঁড়ান। আমি কাপড় পাল্টে আসি।’
নোয়ান নাবিলার পরণে তখনও ব্রেকফাস্টের পোশাক। সুতরাং জেনারেল শ্যারন সময় দিতে আপত্তি করল না।
নোয়ান নাবিলা উপরে উঠে গেল।

ডা. বেগিন বারাক ও সাগরিকা সেন পাথরের মত বসেছিল।
| ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »

Top