পেছনের তিনটিই জীপ।
মাইক্রোতে সাতজন আরোহী। সবার হাতেই রিভলবার।
ড্রাইভিং সিটের পাশে কালো হ্যাট, কালো জ্যাকেট, কালো প্যান্ট পরা লোকটির হাতে ছিল মাইক্রো মেশিনগান।
মাইক্রোর অবশিষ্ট ছয়জনের দু’জন ছাড়া অন্যদেরও কালো হ্যাট ও কালো জ্যাকেট। পরনেও কালো প্যান্ট।
সামনের কালো পোষাকের লোকটি পাশে ড্রাইভিং সিটের লোকটিকে লক্ষ করে বলল, ‘ওরা তো ঠিকই তিনজন ছিল?’
ড্রাইভিং সিটের লোকটির পরনে নীল প্যান্টের উপর সাদা জ্যাকেট। মাথা খালি। লম্বা চুল মাথায়। চেহারাটা নায়কের মত। কালো পোষাকধারীর প্রশ্নের জবাবে বলল লোকটি, ‘অবশ্যই তিনজন। একজন বয়স্ক, একজন তরুণী ও অন্যজন যুবক। তরুণী ও বয়স্ক লোকটি জার্মান। যুবকটি এশিয়ান।
‘গুলি করেছে শুধু এশিয়ান যুবকটাই তো?’ জিজ্ঞাসা সামনে বসা সেই কালো পোষাকধারীর।
‘হ্যাঁ। তরুণী ও বয়স্ক লোকটির কোন ভূমিকাই ছিল না।’ বলল ড্রাইভিং সিটের লোকটি।
‘ঠিক মিলে যাচ্ছে। আরেকটা কথা, তারা কোন দিক থেকে আসছিল, আপনারা কি খেয়াল করেছিলেন?’ কালো পোষাকের সেই লোকটি বলল।
‘দক্ষিণ থেকে তারা হেঁটে আসছিল।’ বলল ড্রাইভিং সিটের লোকটি।
‘হেঁটে আসছিল, গাড়িতে নয়?’ কালো পোষাকধারী লোকটি বলল।
‘হ্যাঁ তাই।’ বলল ড্রাইভিং সিটের লোকটি।
কালো পোষাকধারী লোকটি খুশি হয়ে উঠল। বলল, ‘সব মিলে যাচ্ছে। নিশ্চয় তারা তাদের গাড়ি নদীতে ফেলে দেবার পর আর কোন গাড়ি পায়নি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। ওদেরকে এখন ওখানে পেলেই হয়।’
‘সময় বেশি যায়নি। আর পুলিশের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ এতক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছে। ওরা কেউ চলে যেতে পারবে না।’ বলল ড্রাইভিং সিটের লোকটি।
‘আমাদের সাথেও পুলিশের যোগাযোগ আছে। ওরা গাড়ি ছেড়ে পালাবার পর আমরাও বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। তারাও ওদের পেলে ছাড়বে না।’ বলল কালো পোষাকধারী।
‘তাহলে তো আর চিন্তা নেই। আমরাও দ্রুতই চলছি।’ বলল ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটি।
‘ধন্যবাদ। আপনাদের চাওয়া শুধু মেয়েটিকেই তো? পেয়ে যাচ্ছেন, চিন্তা নেই।’ কালো পোষাকধারী বলল।
‘এবার মেয়েটিকেই নয়, তার বাবা ও বরের বাবা ও সাথের অন্যদেরও চাই। শাস্তি দিতে চাই আমরা নিজ হাতে। আমাদের ছয় সাতজন লোক গুলিবিদ্ধ। অনেকে পঙ্গু, কারও কারও প্রাণ সংশয়ও হতে পারে। ওদের ছাড়া যাবে না।’ বলল ড্রাইভিং সিটের লোকটি।
গাড়ি তিনটি দ্রুত এগিয়ে চলছিল ফার্মল্যান্ডের প্রশস্ত রাস্তা ধরে।
হঠাৎ সামনের মাইক্রোটি হার্ডব্রেক কষল।
ড্রাইভিং সিটের লোকটির দৃষ্টি সামনের দিকে। সবাই সামনে তাকাল। সামনের সিটের কালো পোষাকের লোকটির দৃষ্টিও সেদিকে।
গাড়ির ব্রেক কষেই ড্রাইভিং সিটের লোকটি বলে উঠল, ‘সামনের তিনটি গাড়ি তো ওদেরই। ঐতো দু’টি ডেকোরেটেড গাড়ি। এই ডেকোরেশন করা গাড়িটি বেশ পরিচিত, কিছুক্ষণ আগেই দেখেছি। ঠিক ওরাই আসছে।’
কথাটা কানে যেতেই তার পাশের সিটের কালো পোষাকধারী লোকটি জানালার দিকে মুখ বাড়িয়ে তীক্ষ্ণ একটা শীষ দিল। তারপর লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নামল মেশিন রিভলবার হাতে নিয়ে।
পেছনের দু’টি গাড়িও থেমে গিয়েছিল।
শীষ দেয়ার সাথে সাথেই ছয় সাতজন কালো পোষাকধারী গাড়িগুলো থেকে নেমে এল।
সামনের কালো পোষাকধারী লোকটি গাড়ি থেকে নেমেই গুলি বৃষ্টি করতে করতে ছুটল সামনের গাড়ি তিনটির দিকে। কালো পোষাকের লোকগুলোও ছুটল সেদিকে।
কালো পোষাকের লোকটি মেশিন রিভলবার থেকে গুলি বৃষ্টি করতে করতে তিনটি গাড়ির প্রথমটির একেবারে কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। গাড়িটির উইন্ড স্ক্রিনের সবটাই গুলিতে ভেঙে পড়েছিল। ভাবছিল তাদের অব্যাহত গুলি বৃষ্টির মধ্যে ওরা গুলি করতে সুযোগ পাচ্ছে না এবং পাবেও না।
কিন্তু হঠাৎ উইন্ড স্ক্রিন ও জানালা ভেঙে যাওয়া প্রথম গাড়িটি গর্জন করে উঠে স্টার্ট নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ল সামনের মেশিন রিভলবারধারী কালো পোষাকের লোকটির উপর। তাকে চাপা দিয়েই থেমে গেল গাড়িটি। তার পরেই রিভলবারের গর্জন। চোখের পলকে সামনের আরও চারটি কালো পোষাকধারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ল। আরও দু’জন কালো পোষাকধারী অন্য পাশে ছিল। গুলি থেকে বাঁচার জন্য তারা মাটিতে শুয়ে পড়ে গড়িয়ে দ্রুত সরে এল এবং তাদের গাড়ির আড়ালে সরে গেল।
তাদের তিনটি গাড়িও দ্রুত ব্যাক ড্রাইভ করে পালাতে শুরু করল। কালো পোষাকের দু’জন লোকও কোন রকমে গাড়িতে উঠল। ড্রাইভিং সিটের সেই লোকটি স্বগত কণ্ঠে বলল, ‘আমরা তো এদের ভরসাতেই এসেছিলাম। ওদের সাথে লড়াই করার অস্ত্র ওখানেই তো আমরা ফেলে রেখে এসেছি। ছুরি, চাকু দিয়ে তো ওদের সাথে লড়াই করা যায় না।’
গাড়ি তিনটি পালিয়ে যেতেই আহমদ মুসা উইন্ড স্ক্রিন উড়ে যাওয়া, জানালা ভাঙা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। তার পাশের বরও ততক্ষণে উঠে বসেছে। পেছনে বসা ব্রুনা, ব্রুনার বাবা ও কনেও উঠে বসেছে। তারাও বেরিয়ে এল।
পেছনের গাড়ি থেকে ছুটে এল বর-কনের বাবারা। তারা বর-কনের কাছে এসে শশব্যস্তে বলল, ‘তোমরা সবাই ভালো আছ তো? স্যার, ভালো আছেন তো?’
‘গাড়ির সামনের দিকে চেয়ে দেখ, স্যার ভালো না থাকলে একজনকে গাড়ি চাপা দিয়ে, আরও চারজনকে গুলি করে হত্যা করলেন কি করে?’ বলল কনে ফ্রিজা।
বর-কনের বাবারা গাড়ির সামনে চাইল। দেখল গাড়ির সামনের চাকার তলে পিষ্ট মানুষের লাশ এবং দেখল সামনে পড়ে থাকা আরও চারজন গুলিবিদ্ধ লোকের লাশ।
তারা কোন কথা বলতে পারলো না। অবাক বিস্ময়ে তাদের বাকরুদ্ধ অবস্থা! ফ্যাল ফ্যালে দৃষ্টিতে একবার লাশগুলো আর একবার আহমদ মুসার দিকে তাকাতে লাগল।
আহমদ মুসা তখন লাশগুলোকে উল্টে পাল্টে পরীক্ষা করছিল।
‘বাবা, মনে হয় কোন বিস্ময় দিয়েই আমরা তাঁর পরিমাপ করতে পারবো না। তিনি শুধু স্যার নন, আসলে তিনি ভগবানের পাঠানো দেবদূত! না হলে ঠিক সময়ে, ঠিক স্থানে আমরা তাকে পেলাম কি করে?’ বলল কনে ফ্রিজা।
‘ঠিক বলেছ ফ্রিজা। আমরাও তাঁকে আমাদের বিপদের সময় ঠিক এভাবেই তাকে পেয়েছি।’ বলল ব্রুনা। বিস্ময় তার চোখে-মুখেও!
‘সত্যিই দেবদূত তিনি। গড ব্লেস হিম! বর উইল ফ্রিড বলল।
‘লাশগুলোতে উনি কি দেখছেন? চল, আমরা ওদিকে যাই।’ বলল বরের বাবা।
সবাই ওদিকে চলল।
আহমদ মুসা কালো পোষাকধারী একজনের কলার ব্যান্ড পরীক্ষা করছিল।
ব্রুনারা, বর-কনেরা, তাদের বাবারা তার পেছনে গিয়ে দাঁড়াতেই আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। পেছনে ফিরে বর-কনের বাবাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এরা তো আপনাদের প্রতিপক্ষ আগের লোক নয়?’
‘না, এরা তারা নয়। কিন্তু এই গাড়িগুলোর মধ্যে সম্ভবত একটা গাড়ি সেই ঘটনাস্থলে দেখেছিলাম।’ বলল কনের বাবা।
‘তার মানে আপনাদের পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বীরা নতুন আক্রমণের জন্যে এই কালো পোষাকধারীদের হায়ার করে নিয়ে এসেছে।’
‘সর্বনাশ! ওরা দেখা যাচ্ছে বিরাট ষড়যন্ত্র করেছিল। পুলিশ আমাদেরকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল বর-কনে বাদে। আর ওরা আসছিল বরের কাছ থেকে কনেকে কেড়ে নিতে।’ বলল বরের পিতা।
‘যাক, আল্লাহ রক্ষা করেছেন। এখন একটা কথা বলুন, ‘ব্ল্যাক লাইট’ নামে কোন সংস্থার নাম কি আপনারা জানেন?’
এ কথা বলে আহমদ মুসা একজন কালো পোষাকধারীর লাশের উপর ঝুঁকে পড়ে জ্যাকেটের কলার ব্যান্ড উল্টিয়ে পাতলা সাদা প্লাস্টিক প্লেটের উপর কালো একটা ফ্রেম দেখালো এবং তার নিচে দশটা রোমান বর্ণ দেখালো। দুই গুচ্ছে বা শব্দে লেখা। বলল, ‘শব্দ দু’টির কোন অর্থ হয় না। কিন্তু শব্দ দু’টিকে সমান্তরাল দিকে উল্টে দিলে মানে শেষটা শুরুতে এবং শুরুটা শেষে নিয়ে আসলে শব্দ দু’টির অর্থ দাঁড়ায় ব্ল্যাক লাইট (Black Light)। ব্ল্যাক লাইট কালো ফ্রেম সিম্বলের সাথে মিলে যায়। এ অঞ্চলে কি ‘ব্ল্যাক লাইট’ নামে কোন সংগঠন আছে?’
‘না, এমন নামের কোন সংস্থা আছে বলে আমরা জানি না। এরা কি কোন সংগঠনের লোক?’ বলল বরের বাবা।
‘এখনও আমি সঠিক জানি না। তবে মনে হচ্ছে কোন না কোন সংগঠনের লোক এরা।’ আহমদ মুসা বলল।
আহমদ মুসার দিকে আগ্রহের সাথে তাকিয়ে ছিল ব্রুনা। তার চোখে কিছুটা বিস্ময় ও উদ্বেগ। কিছু যেন সে বলতে চায় আহমদ মুসাকে। কিন্তু কিছুই বলল না সে।
আহমদ মুসা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বর-কনের বাবাকে বলল, ‘আপনারা পুলিশকে এ বিষয়টা জানান। ঘটনা রেকর্ড হওয়া ও লাশগুলো তাদের জিম্মায় নেয়া দরকার।’
‘ঠিক বলেছেন স্যার। এটা খুব জরুরি।’ বলল বরের বাবা।
বর-কনের বাবা যখন পুলিশকে টেলিফোন করতে উদ্যোগ নিচ্ছিল, সে সময় আহমদ মুসা একটু সরে পকেট থেকে মোবাইল বের করে।
ব্রুনাও পিছু নিল আহমদ মুসার।
ব্রুনা আহমদ মুসার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই আহমদ মুসা বলল, ‘তুমি নিশ্চয় আমাকে কিছু বলবে?’
‘ধন্যবাদ স্যার, আপনি ঠিক বুঝেছেন।’ বলল ব্রুনা।
‘বল কি জান তুমি ‘ব্ল্যাক লাইট’ সম্পর্কে?’ আহমদ মুসা বলল।
‘বিষয়টা এই ব্ল্যাক লাইটের ব্যাপার কিনা আমি জানি না। কিন্তু ব্ল্যাক লাইটের এই রকম ইগসিগনিয়া ও এই নাম আরও এক জায়গায় দেখেছি।’ বলল ব্রুনা।
‘কোথায় দেখেছ?’ আহমদ মুসা বলল।
‘মায়ের পারসে পেয়েছিলাম।’ বলল ব্রুনা।
‘যে মায়ের সাথে তোমাদের বিরোধ হয়েছে, সেই মায়ের?’ আহমদ মুসা বলল।
‘হ্যাঁ, অবশ্যই। কিন্তু স্যার, যে মা বলছেন কেন? আমাদের আরও কোন মা আছে?’ বলল ব্রুনা।
‘এ প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের জন্যে তোলা রইল। এখন বল, তোমার মায়ের হ্যান্ডব্যাগে কি পেয়েছিলে?’ আহমদ মুসা বলল।
‘সেদিন সে সময়ে মা টয়লেটে ছিলেন। গোসল করতে বাথরুমে গিয়েছিলেন। গোসলে মা অনেক সময় নেন। আমি মায়ের ঘরে গিয়েছিলাম মায়ের আইডি কার্ডের নাম্বার নেয়ার জন্যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডকুমেন্টে রেফারেন্স দেয়ার প্রয়োজন ছিল। মা টয়লেটে জেনে ফিরে আসছিলাম। হঠাৎ দেখলাম মায়ের বালিশের তলায় তাঁর পারসের একাংশ দেখা যাচ্ছে। মায়ের পারসেই তার আইডি থাকে। অপেক্ষা করার কোন উপায় ছিল না বলে মায়ের পারস বের করে তা খুলে তার আইডি কার্ডের নাম্বার নিলাম। কার্ড রাখতে গিয়ে ছোট্ট একটা চিরকুট দেখলাম। চিরকুটটির কালো ফ্রেম ও তার নিচের লেখাটাই আমার দৃষ্টি কেড়েছিল। মনে করলাম মনোগ্রামটা কিসের দেখি তো। চিরকুট হাতে নিলাম। কিন্তু কোন সংস্থার নাম পেলাম না। ফ্রেমের নিচের দুই শব্দ থেকে কিছু বুঝলাম না। ভেবে নিলাম কোন কোম্পানীর উদ্ভট কোন নাম হবে।’ বলল ব্রুনা।
‘চিরকুটটিতে কি ছিল?’ আগ্রহের সাথে জিজ্ঞাসা করল আহমদ মুসা।
‘একটা ফিংগার প্রিন্ট ছিল। আর ছিল দু’লাইন লেখা। কিন্তু লেখা রোমান হরফে হলেও পড়তে পারিনি। আমার পরিচিত কোন ভাষা নয়। হয়তো ব্ল্যাক ফ্রেমের নিচের লেখার মতই সাংকেতিক কিছু হতে পারে।’ বলল ব্রুনা।
আহমদ মুসার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বলল, ‘ধন্যবাদ ব্রুনা।’
‘ধন্যবাদ কেন?’ বলল ব্রুনা।
‘কারণ তুমি আমার সামনের অন্ধকার পথের কিছুটা আলোকিত করেছ।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কেমন করে?’ বলল ব্রুনা। তার চোখে-মুখে বিস্ময়!
‘সবই জানবে। তবে এটুকু জেনে রাখ, এ কালো পোষাকধারীরাই হেলিকপ্টারে আমাদের পিছু নিয়েছিল। আর তোমার কথায় প্রমাণিত হলো, তোমাদের সব ঘটনার মূলে রয়েছে এরাই। আহমদ মুসা বলল।
‘মানে ‘ব্ল্যাক লাইট’ নামের সংগঠন?’ বলল ব্রুনা।
‘হতেও পারে, আবার এটা পুরো সত্য নাও হতে পারে। হতে পারে এরাই মূল প্রতিপক্ষ অথবা তাদেরকে কেউ কাজেও লাগাতে পারে।’ আহমদ মুসা বলল।
বর-কনের বাবারা আহমদ মুসার দিকে এগিয়ে আসছিল। আহমদ মুসা তাদের দিকে ঘুরে দাঁড়াল।
বরের বাবা আহমদ মুসার কাছে এসে দাঁড়িয়েই বলল, ‘স্যার, পুলিশ আসছে। আমি সব তাদের জানিয়েছি। আগের সেই পুলিশ অফিসারের সাথেই কথা হলো। তিনিই আসছেন।’
‘ভালোই হলো। কথা বেশি বলতে হবে না।’ আহমদ মুসা বলল।
‘স্যার, একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে।’ বলল বর। বর ও কনে আহমদ মুসার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
‘বলে ফেল।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ওদের গুলি বর্ষণ শুরু হলে ভাবছিলাম, আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি, মৃত্যু এখন মাথার উপর। সবাইকে গাড়ির ফ্লোরে শুয়ে পড়তে বলে আপনিও শুয়ে পড়েছিলেন। তার পরেই গুলি শুরু হয়। কিন্তু আপনি কি করে গাড়ি চালিয়ে লোকটিকে চাপা দিলেন এবং চারজনকে মারলেন?’ বলল বর উইলফ্রিড।
‘কেন তুমি তো আমার পাশেই ছিলে, দেখনি?’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমি তো শুয়েই চোখ বন্ধ করেছিলাম। ভেবেছিলাম কিভাবে মরছি তা না দেখাই ভালো।’ বলল বর।
আহমদ মুসা হাসল।
‘জানার কৌতুহল আমাদেরও। প্লিজ বলুন স্যার।’ বলল কনে ফ্রিজা।
‘বলার তেমন কিছু নেই। আমি আধ শোয়া হয়ে মেশিন রিভলবারের শব্দ লক্ষে গাড়ি চালিয়েছিলাম আকস্মিকভাবে। তার রিভলবারের গুলি বৃষ্টি বন্ধ করার এটাই ছিল সবচেয়ে নিরাপদ ও সহজ পথ। এই ঘটনায় অবশিষ্ট রিভলবারধারীরা মুহূর্তের জন্যে হতচকিত হয়ে পড়েছিল। সেই সুযোগে আমি ওদের আমার রিভলবারের শিকার বানিয়েছিলাম।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কথার কথা বলছি, ধরুন, আপনার এই চেষ্টা যদি কাজে না আসত, তাহলে কি করতেন?’ বলল বর।
‘ব্যর্থতা নিশ্চয় আরেক সুযোগের দ্বার খুলে দিত। কথায় আছে, যত পথ, তত খোলা মানে তত বিকল্প পথ থাকা। বিপদ যিনি দেন, বিপদ উত্তরণের পথও তিনি রাখেন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু বিপদে কি এত কথা মনে থাকে?’ বলল বর।
‘আল্লাহ মনে করিয়ে দেন মানে কি করণীয় সেটা আল্লাহ মাথায় এনে দেন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘এটা কিন্তু ধর্মবিশ্বাসীদের একটা কথা স্যার। এটা কি আসলেই ঘটে স্যার?’ বলল ব্রুনা।
‘জ্ঞান উৎকর্ষ লাভ করার পর এটা কিন্তু এখন মাত্র ধর্মবিশ্বাসীদের কথা নয়। আধুনিক সভ্যতার বিবেক যাকে বলা হয় সেই আর্নল্ড টোয়েনবি বলেছেন যে, আবিষ্কার, উদ্ভাবন, কাব্য-মহাকাব্য, গল্প-উপন্যাসের মত কোন মৌলিক সৃষ্টিই স্রষ্টার অনুপ্রেরণা ছাড়া হয় না। আর্নল্ড টোয়েনবি বিশ্বাসীদের পুরাতন কথাকেই তো নতুন করে বলেছেন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ধন্যবাদ স্যার। কিন্তু স্রষ্টার অনুপ্রেরণা মানুষের কাছে কিভাবে আসে?’ বলল কনে।
‘মানুষের মাথায় নতুন চিন্তার আকারে আসে। একে মুসলিম পরিভাষায় ‘ইলহাম’ বলে। আহমদ মুসা বলল।
পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনা গেল। সবাই সেদিকে তাকাল।
‘চলুন, আমরা গাড়ির ওদিকে যাই।’ বর-কনের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল আহমদ মুসা।
সবাই গাড়ির দিকে চলল।
বৌভাতের মূল অনুষ্ঠান শেষ।
ভাঙা আসরে এখানে-সেখানে গল্পের আসর বসেছে। বর-কনেকে কেন্দ্র করে বসেছে বরের বাবা, কনের বাবা, এলাকার কয়েকজন সমাজপতি এবং বরের বাড়িতে বিয়ের চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্যে আসা ধর্মীয় নেতা হের হেনরি। তাদের সাথে ছিল ব্রুনা ও তার বাবা আলুদনি সেনফ্রিড।
তাদের গল্প-কথার নানা বিষয়ের মধ্যে ধর্মনেতা হের হেনরি বলে উঠল, ‘আপনাদের অতিথি আহমদ মুসা কোথায়?’
কথাটা বলল সে বরের পিতাকে লক্ষ করে।
‘বন থেকে একজন পুলিশ অফিসার এসেছেন, তার সাথে কথা বলতে গেছেন।’ বলল বরের বাবা।
‘আমি বিস্মিত হয়েছি তার প্রার্থনার ধরন দেখে। ভোরে আমি তার ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখলাম তিনি ফ্লোরে কার্পেটের উপর তোয়ালে বিছিয়ে প্রার্থনা করছেন। আবার বিকেলে দেখলাম বাগানে ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে, বসে ও মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রার্থনা করছেন। মুসলমানরা শুধু মসজিদে প্রার্থনা করে, কিন্তু এমনটা তো দেখিনি। এটা দেখে আমাদের অতীতের কথা আমার মনে পড়ে গেছে। আমাদের আদি স্যাক্সন সমাজে যখন আমরা বাস করতাম নিরপদ্রপে ও স্বাধীনভাবে রাইনের ভাটি অঞ্চলে এবং আরও উত্তরে, তখন ব্যক্তিগত প্রার্থনা এভাবেই হতো। সামাজিক প্রার্থনার জন্যে প্রার্থনাগৃহ…।’
কথা শেষ না করেই থেমে গেল স্যাক্সনদের এ অঞ্চলের ধর্মনেতা হের হেনরি।
আহমদ মুসা এ সময় সেখানে এল। বর-কনের বাবাসহ কয়েকজন উঠে দাঁড়িয়ে স্বাগত জানিয়ে আহমদ মুসাকে সেখানে বসালো। হের হেনরি এ সময় তার কথা বন্ধ করে থেমে গেল।
আহমদ মুসা বসলে হের হেনরি বলল, ‘জনাব, আপনার কথাই আমরা বলছিলাম। আমি বলছিলাম যে, বিকালে বাগানে ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে আপনার প্রার্থনা দেখে আমার অতীতের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। জার্মানির স্যাক্সনরা আদিতে এভাবে ব্যক্তিগত প্রার্থনা যত্রতত্র করত। সামাজিকভাবে প্রার্থনার জন্যে প্রার্থনা গৃহ অবশ্যই ছিল। আমাদের পণ্ডিতরা বলেন, এটাই ছিল আমাদের বিশ্বাসের স্বাধীন ও স্বর্ণযুগ।’
‘সে স্বর্ণযুগ আপনাদের উল্লেখ করার মত আর কি ছিল?’ বলল আহমদ মুসা। তার চোখে কিছুটা বিস্ময়।
‘আমাদের সমাজ ছিল গণতান্ত্রিক। প্রত্যেক মানুষের অধিকার ছিল সর্বোচ্চ। সরকার নামের প্রশাসন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা খুবই গৌণ ছিল। একমাত্র যুদ্ধাবস্থাতেই সরকার বা শাসক কর্তৃপক্ষের ভূমিকা সবার উপরে উঠতো, এমনকি যুদ্ধের সময় এলেই ‘ডাচি’ বা ‘রাজা’ নির্বাচিত হতেন। শান্তির সময়ও নির্বাচন হতো, কিন্তু যুদ্ধের সময় একে আবশ্যক মনে করা হতো। জাতির জন্যে জাতির ইচ্ছাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করার জন্যেই এই ব্যবস্থা।’ বলল অঞ্চলের ধর্মগুরু হের হেনরি।
‘এই স্বর্ণযুগ আপনাদের কোন সময় পর্যন্ত ছিল?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘অষ্টম শতাব্দীর সমাপ্তির (৭৯৩ খৃস্টাব্দ) মুখে রোম সম্রাট শার্লেম্যান আমাদের এলাকা দখল করার পূর্ব পর্যন্ত। শার্লেম্যানরা শুধু রাজনৈতিকভাবে আমাদের দেশই দখল করলো না, ক্রমান্বয়ে তারা আমাদের ভাষা, আমাদের ধর্ম, আমাদের প্রার্থনাগৃহ, আমাদের সংস্কৃতি সবই ধ্বংস করে ফেলে। শক্তির জোরে খৃস্টধর্মবিশ্বাস আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়।’ বলল হের হেনরি।
আহমদ মুসার চোখ দু’টি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, ‘জানেন, ঠিক এই সময়েই ইসলামী সভ্যতার বিকাশ হয়েছিল এশিয়ায় ও আরব অঞ্চলে। আপনাদের সেই স্বর্ণযুগের সাথে ইসলামের অদ্ভুত মিল আছে। ইসলামে ব্যক্তির অধিকারকে সর্বোচ্চ মূল্য দেয়া হয়েছে। সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তির ন্যায্য অধিকার যদি সমুন্নত হয়, তাহলে তাদের নিয়ে গঠিত সমাজ ন্যায়ভিত্তিক হয়ে থাকে, রাষ্ট্রও তখন জনকল্যাণমূলক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করার পর আমাদের ধর্ম ইসলাম সামষ্টিক স্বার্থ, সমাজের স্বার্থ, দেশের স্বার্থ দেখার জন্যে, সামষ্টিকের শক্তি দিয়ে ব্যক্তির অন্যায়কে নিয়ন্ত্রিত করার জন্যে সরকার ব্যবস্থাকেও অপরিহার্য মনে করে। ইসলামেও সরকার জনমতের ভিত্তিতেই নির্বাচিত হয়।’
স্যাক্সনদের ধর্মনেতা হের হেনরির চোখে বিস্ময়! বলল, ‘আপনি যেমন প্রার্থনা করলেন, এর বৈশিষ্ট্যের সাথে আমাদের সেকালের প্রার্থনার অনেক মিল ছিল। তাহলে দেখছি আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির সাথে আপনার সমাজ-সংস্কৃতির চমৎকার মিল আছে। মুসলমানদের আমরা দেখি, কিন্তু ইসলামের এই রূপ সম্পর্কে তো আমরা কিছু জানি না। ঠিক কোন সময়ে এই সভ্যতার শুরু হয়?’
‘ছয়শ তেইশ সালের দিকে, যখন ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ স. মদিনায় ইসলামের মানবিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমাদের সভ্যতাও একদম সমসাময়িক। কিন্তু কোন যোগাযোগ ছিল বলে মনে হয় না। তাহলে এই মিল হলো কি করে?’ বলল হের হেনরি।
‘ঠিক জানি না, তবে আপনাদের স্যাক্সনদের এই ট্রেডিশন আরও অতীত থেকে এসেছে। হতে পারে স্যাক্সনদের কাছে অথবা অন্য নামের আপনাদের কোন পূর্বপুরুষদের কাছে আমাদের রসূল স.-এর মতই কোন রসূল এসেছিলেন হয়তো। তার শিক্ষাই স্যাক্সনদের ‘গোল্ডেন এজ’ যা এখন পর্যন্ত চলে আসছে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘কিন্তু স্যার, আপনি যেমনটা বললেন, সে রকম রসূলকে অর্থাৎ যিশুকে, তো খৃস্টানরাও মানে! কিন্তু তাদের মধ্যে তো জনগণের এমন অধিকার মানা হয় না এবং তাদের প্রার্থনাও তো নিরাকারের না হয়ে যিশুর মূর্তিকে সামনে রেখে করা হয়?’ বলল স্যাক্সনদের আঞ্চলিক সরদার সাব-কাউন্সিলের ডিপুটি ডিউক অসওয়াল্ড।
আহমদ মুসা একটু গম্ভীর হলো। বলল, ‘দুর্ভাগ্য যে, যিশুর মূর্তি গড়া হয়েছে, যিশুর শিক্ষার চেয়ে যিশুর ক্রুসিফাইড করাকে যেমন বড় দেখানো হচ্ছে, তাকে যেমন ঈশ্বরের সন্তান বানিয়ে তাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, ঠিক তেমনি তাঁর ঐশী গ্রন্থ ‘ইঞ্জিল’ (যাকে ‘বাইবেল’ বলা হয়)-কে সঠিকরূপে রাখা হয়নি, বিকৃত করা হয়েছে। এ কারণেই সমাজ-সভ্যতার দিক থেকে আমাদের সাথে তাদের মিল নেই, যে মিল আপনাদের সাথে আমাদের আছে।’
‘ধন্যবাদ স্যার, অল্প কথায় সাংঘাতিক একটা বিষয় আমাদের বুঝিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। আমাদের ধর্মগুরু মহোদয় বলেছেন, রোমানরা আমাদের বিশ্বাস, ইতিহাস, সাহিত্য-সংস্কৃতি সবই ধ্বংস করেছে। আমি একটু যোগ করে বলতে চাই, এমনকি ওরা আমাদের বিল্ডিং-এর স্ট্রাকচারও বদলে দিয়েছে। আগে প্রার্থনাগৃহসহ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিংগুলোতে উর্ধ্বমুখী উঁচু স্তম্ভ বা মিনার থাকত। রোমান সভ্যতা মিনারগুলো গুঁড়িয়ে দেয় এবং নিষিদ্ধ করে দেয় মিনার নির্মাণ। এই কথা বলা আমি এ জন্যেই প্রয়োজনীয় মনে করলাম যে, এই ধরনের মিনার নির্মাণের ঐতিহ্য মুসলমানদের রয়েছে। তাদের প্রার্থনাগৃহের জন্যে মিনার প্রধান অলংকার। এদিন দিয়েও স্যাক্সনদের ট্রেডিশনের সাথে মুসলমানদের মিল আছে।’ বলল বর উইলফ্রিড।
‘ঠিক বলেছ। আমিও বিষয়টা খেয়াল করেছি।’ বলল স্যাক্সনদের আঞ্চলিক ধর্মগুরু বা যাজক হের হেনরি।
‘কিন্তু এই অদ্ভুত মিলের কারণ আসলে কি? ব্যাপক যোগাযোগ কিংবা গোড়ায় এক না হলে এই মিল সম্ভব নয়। সকলেরই জানা এমন ব্যাপক যোগাযোগ কখনো হয়নি, সম্ভবও ছিল না। তাহলে গোড়াটা কি?’ কনে ফ্রিজা বলল।
‘গোড়া অবশ্যই আল্লাহ। আমি যেটা বলেছি, যুগে যুগে আল্লাহ পৃথিবীর বিভিন্ন জাতির কাছে রসূল বা বাণীবাহক পাঠিয়েছেন। যুগের চাহিদাসম্মত বিধি-বিধান বাদ দিলে তাদের সকলের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জীবন-কাঠামো একই হয়ে থাকে। কিন্তু একটা কথা আমি ভাবছি মি. হের হেনরি, আমি জানতাম স্যাক্সনরা সবাই স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে খৃস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছে। কিন্তু এখন দেখছি, আপনারা নিজেদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। এখন আপনাদের সংখ্যা কেমন হবে?’ আহমদ মুসা বলল।
‘সম্রাট শার্লেম্যানের শুরু করা খৃস্টান রোমকদের খৃস্টীয় করনের এক মর্মন্তুদ কাহিনী সেটা। সুন্দর নদী রাইনের ভাটি অঞ্চলে স্বাধীনচেতা ও ঐতিহ্যবাহী স্যাক্সনদের সমৃদ্ধ জনপদ বিরান করে দেয়া হয়। যারা খৃস্টধর্ম গ্রহণ না করেছে তাদের বাঁচতে দেয়া হয়নি। এরপরও পালিয়ে নিজের বিশ্বাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করেছে অনেকেই। সুযোগ-সন্ধানী ধনিক ও ক্ষমতালিপ্সুরা দল বেঁধে রোমকদের তাবেদারি ও খৃস্টধর্ম গ্রহণ করলেও সাধারণ মানুষদের অনেকেই নিজেদের ধর্ম ও সমাজ নিয়ে পালিয়ে আত্নরক্ষা করে। আমরা সেই সাহসী ও স্বাধীনচেতা মানুষদেরই উত্তর পুরুষ। সংখ্যা আমাদের এখন কম নয়। কিন্তু সংখ্যা বড় কথা নয়, এ মানুষের সংখ্যা কম হলেও এরা একেকজন একেকটা করে পর্বতের মত বড় মাপের।’ বলল হের হেনরি।
‘হ্যাঁ মি. হেনরি, এই মর্মান্তিক ইতিহাসের ছিটে-ফোঁটা আমরা ইতিহাসে পড়েছি। বিস্তারিতটা সাধারণ ইতিহাসে নেই। তবে বিজয়ী খৃস্টানদের খৃস্টীয় করণের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা আমাদেরও রয়েছে। স্পেনে যখন তারা বিজয়ী হলো, তখন স্যাক্সনদের মতই মুসলমানদের বাঁচতে দেয়া হয়নি খৃস্টধর্ম গ্রহণ না করলে। অথচ মুসলিম বিজয়ের সময়ে কিংবা মুসলিম শাসনের অধীনে স্পেনে খৃস্টানরাসহ সব ধর্মের মানুষ সকল নাগরিক অধিকার ভোগ করেছে। জেরুসালেমে খৃস্টানরা তাদের বিজয়ের পর ৭০ হাজার মুসলিম নাগরিককে হত্যা করে। তাদের ঘোড়ার হাঁটু পর্যন্ত ডুবে যায় মানুষের রক্তে। কিন্তু মুসলমানরা জেরুসালেম বিজয়ের পর একজন খৃস্টান নাগরিককেও হত্যা করেনি। আপনাদের কথা শুনে আমাদের এই অতীত মনে পড়ে গেল।’ আহমদ মুসা বলল।
‘অদ্ভুত ব্যাপার, মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও সাদৃশ্য আছে এই দুই জাতির মধ্যে!’ বলল ফ্রিজা।
‘স্থান-কাল-পাত্রভেদে জালিমদের রূপ বদলায়, কাজ বদলায় না। একটা কথা, স্যাক্সনদের মধ্যে আপনাদের মত যারা তারা এমন বিশেষ অঞ্চলে বাস করেছেন?’ হের হেনরিকে লক্ষ্য করে বলল আহমদ মুসা।
‘বিশেষ অঞ্চল ঠিক আছে। কিন্তু এক অঞ্চলে নয়। কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলে আমরা বাস করছি। সেটা রাইনের ভাটি অঞ্চলেই। তবে তীর থেকে অনেক ভিতরে। অবশ্য ব্রুমসারবার্গের মত শহরাঞ্চলে আমাদের স্যাক্সনরা আত্নগোপন করে ছোটখাট চাকরি, শ্রমিকের কাজ করে যাচ্ছে।’
‘আপনাদের এই হিজরত বা স্থানাস্তর কখন, কিভাবে হয়?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘এই স্থানান্তর হয়েছে শার্লেম্যানের আক্রমণ থেকে পরবর্তী চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরে। ধীরে ধীরে, গোপনে। আমরা সরে গেছি ওদের দৃষ্টির ফোকাস থেকে বেশ দূরে। সে সময় এ অঞ্চলগুলোতে ছিল জংগল ও অকৃষিযোগ্য জমি। তাই মানুষের বসবাসও ছিল না। তাই এ অঞ্চলগুলো ছিল আমাদের জন্যে নিরাপদ আশ্রয়।’ বলল হের হেনরি।
‘আপনারা যারা বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করছেন, তাদের মধ্যে যোগাযোগ ও সংহতি কেমন আছে?’ আহমদ মুসা বলল।
‘আমরা সকলেই একক এক সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থার অধীন। এমনকি বিভিন্ন শহরাঞ্চলে আত্নগোপন করে বিচ্ছিন্নভাবে যারা কাজ করছে, তারাও এই একই ব্যবস্থার অধীন।’ বলল হের হেনরি।
মুহূর্তের জন্যে থেমেই আবার বলে উঠল হের হেনরি, ‘শুনলাম আপনারা যাচ্ছেন ব্রুমসারবার্গে। ওখানেও কিছু স্যাক্সন আছে। তাদের অধিকাংশই ট্যাক্সি ড্রাইভার, তবে দারোয়ান ও সেলসম্যানের কাজ করে অনেকে। ওরাও আমাদের সমাজের অংশ।’
‘খুব ভালো চাকরি করে। আমাদের জন্যে এই সার্ভিসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ আহমদ মুসা বলল।
‘আপনাদের কাজে আসবে?’ বলল হের হেনরি।
‘জানি না। তবে যে কোন অনুসন্ধানের সব ক্ষেত্রেই এ ধরনের সার্ভিস কাজে লাগে।’ আহমদ মুসা বলল।
‘ঠিক আছে। আমরা আপনাদের কথা ওদের জানাব।’ বলল হের হেনরি।
‘ধন্যবাদ। একটা কথা, আপনারা শুধুই আত্নরক্ষা করছেন, না কোন মিশনও আপনাদের আছে?’ আহমদ মুসা বলল।
‘মিশন কিনা জানি না। তবে আমরা চাই, জার্মানি তার নিজের সত্তাকে খুঁজে পাক। আমরা জার্মানির বিশ্বাসের সে সত্তাকে ধরে রেখেছি এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নামের সামাজিক সে শক্তিকেও আমরা রক্ষা করার চেষ্টা করছি। ব্যক্তি স্বার্থ ও সামষ্টিক স্বার্থের ভারসাম্য বিধান স্যাক্সন জার্মানির সবচেয়ে বড় সম্পদ।’ বলল হের হেনরি।
‘ধন্যবাদ। দেশপ্রেমিকরা যা করে, সেটাই আপনারা করছেন।’ আহমদ মুসা বলল।
‘মাঝখানে একটু কথা বলতে চাই, মাফ করবেন আমাকে।’ বলল বরের বাবা বার্টওয়াল্ড।
সবাই তাকাল বরের বাবার দিকে।
বরের বাবা বলল, ‘রীতি অনুসারে এখনি কনে ও বরকে কনের বাড়িতে যাত্রা করতে হবে। অনুষ্ঠান শেষ করে আবার কথা বলব। আমি আপনাদের অনুমতি চাই।’
‘অবশ্যই অবশ্যই। ওটাই তো এখন মূল কাজ। গল্প তো আমাদের অবসরের বিনোদন।’ বলল হের হেনরি।
বলে উঠে দাঁড়াল হের হেনরি। সবাই উঠল। আহমদ মুসাও।
ব্ল্যাক লাইটের অপারেশন কক্ষ।
ব্ল্যাক লাইট সংগঠনেরা অপারেশন চীফ ‘ব্ল্যাক বার্ড’ অর্ধ ডিম্বাকৃতি টেবিলের ওপাশে বিরাট সুশোভিত চেয়ারে বসে আছে।
তার শরীরটা যথারীতি কালো পোষাকে ঢাকা। মাথায় কালো হ্যাট, মুখে কালো মুখোশ।
তার সামনে টেবিলের এ পাশে দু’জন বসে। একজন ব্ল্যাক লাইটের অপারেশন চীফ ডরিন ডুগান এবং অন্যজন সিচুয়েশন এ্যানালিস্ট ও উপদেষ্টা গেরারড গারভিন।
ব্ল্যাক বার্ডের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু অপর দু’জনের মুখে আষাঢ়ে মেঘের অন্ধকার।
কথা বলছিল ব্ল্যাক বার্ড। বলছিল, ‘এভাবে আমাদের শান্ত সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড় উঠেছে তা দেখছ। বাঘের ঘরে এক ঘোগ এসে জুটেছে। ঘোগকে আটকাবার সব চেষ্টা এ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে। শুধু ব্যর্থ নয়, সব চেষ্টায় পাল্টা আঘাতে আমাদের মূল্যবান লোকদের জীবনহানি ঘটেছে। সালজবার্গ থেকে শুরু করে বাদেন ল্যান্ডের দু’টি ঘটনা পর্যন্ত আমাদের কার্যকর শক্তির একটা মূল্যবান অংশ হারিয়েছি। এটা মেনে নেবার মত নয়। কে এই ঘোগ? এর হাতে আমরা এমনভাবে মার খাচ্ছি কেন? আপনাদের কাছ থেকে অর্থবহ কিছু শুনতে চাই।’ থামল ব্ল্যাক বার্ড।
দু’জন মাথা নিচু করে শুনছিল।
সংগে সংগেই কথা বলল না তাদের দু’জনের কেউ।
মুহূর্ত কয়েক পরে মাথা তুলল সিচুয়েশন এ্যানালিস্ট ও উপদেষ্টা গেরারড গারভিন। বলল, ‘স্যার, অতীত বাদ দিয়ে আমাদের সামনে তাকানো দরকার। অতীতকে সামনে আনলে আমরা দুর্বলই হয়ে পড়ব। লোকটি যেই হোক, অজেয় নয় অবশ্যই। আমার মনে হচ্ছে লোকটি দারুণ ধড়িবাজ আর চালাক। সে আহমদ মুসার নাম নিয়ে শখের গোয়েন্দাগিরির পাসপোর্ট নিয়ে একটা তদন্তে জার্মানি এসেছে। কি তদন্ত জানা যায়নি। তবে এই পরিচয় তার একটা মুখোশ। এ পর্যন্ত…।’
গেরারড গারভিনের কথার মাঝখানেই ব্ল্যাক বার্ড বলে উঠল, ‘কেন সে কি আহমদ মুসা হতে পারে না?’
‘কোথায় তাল, আর কোথায় তিল? আহমদ মুসা কি কাজে এখানে আসবে? সে রাজা-বাদশা, প্রেসিডেন্ট, প্রধান মন্ত্রীর বড় বড় মিশনে কাজ করে।
আসলে তার নাম-ডাক হওয়ার পর অনেকেই তার নাম নিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে, দুর্বল করে স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে। ইন্টারনেটে গেলেই দেখবেন তার অনেক রকমের ছবি। কোনটা আসল আহমদ মুসা সেটাই বুঝা দায় হয়েছে। একটা কথা পরিষ্কার আহমদ মুসা যে ধরনের মিশনে যায়, সে রকম কিছু এখন জার্মানিতে নেই। এই জার্মানিতেই সে একবার এসেছিল টুইন টাওয়ারের মত ঘটনার তদন্ত নিয়ে। তাছাড়া সেবার আহমদ মুসা জার্মানিতে এসে স্ট্রাসবার্গের যে ফ্যামিলির সাথে ছিল, যাদের সাথে আহমদ মুসার এখনও যোগাযোগ আছে, আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। আহমদ মুসা জার্মানিতে এসেছেন আসতে পারেন এমন কথার জবাবে তারা বলেছেন, তিনি জার্মানিতে আসতে চাইলে প্রথমে তারাই জানতে পারবেন। আহমদ মুসার সাথে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। সুতরাং আহমদ মুসাকে নিয়ে ভাববার কিছু নেই।’ বলল গেরারড গারভিন।
‘তোমার কথা সত্য হোক গারভিন। আমি চিন্তায় ছিলাম আহমদ মুসাকে নিয়ে। বিপজ্জনক ব্যক্তি সে। ঈশ্বর স্বয়ং যেন তার হাত দিয়ে কাজ করেন। যাক, এবার শুধু কথা নয়, কাজের কথা বল।’ ব্ল্যাক বার্ড বলল।
‘তার আগে একটা কথা, কারিনা কারলিনের স্টেটের আইনি দখলের অবস্থা কি?’ বলল গেরারড গারভিন।
‘এক জায়গায় এসে ঠেকে আছে। কারিনা কারলিন তার স্টেট হস্তান্তর করতে চাইলে তাকে নিজে দেওয়ানি কোর্টে হাজির হয়ে স্বাক্ষরসহ দলিলে দুই হাতের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ লাগাতে হবে। কিন্তু কারিনাকে আদালতে নেয়া তো সম্ভব নয়। আমার যাকে কারিনার জায়গায় বসিয়েছি, তার দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি ন্যানো-প্লাস্টিক সার্জারীর মাধ্যমে হুবহু কারলিনের মত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা হলেই আমাদের সমস্যা চুকে যাবে। আমরা জার্মানির কারিনা কারলিন স্টেটের মালিক হয়ে যাব। কিন্তু দুই বৃদ্ধাঙ্গুলির ঐ ট্রান্সফরমেশন করতে আরও সময় লাগবে। সে সময় আমাদের জন্যে প্রয়োজন। অন্যদিকে আমরা কারিনা কারলিনের উত্তরসূরী তার দুই মেয়ে ব্রুনা ব্রুনহিল্ড ও আনালিসা অ্যালিনা ও স্বামী আলদুনি সেনফ্রিডকে ধরতে পারলে কারিনা কারলিনকে হত্যা করে ওদেরকে স্টেটের মালিক বানিয়ে তারপর ওদেরও হত্যা করে স্টেটের মালিক হওয়া যেত। কিন্তু এক্ষেত্রেও উইলের কপি পাঠ করতে গিয়ে দেখা গেছে তারাও দশ বছর সম্পত্তি ভোগ করার আগে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারবে না। দশ বছর পরে স্টেট হস্তান্তর করতে পারলেও তিনজনে এক সাথে একই পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং সেই পক্ষকে হতে হবে ব্রুমসারবার্গের আদি বাসিন্দা। এই ধরনের শর্ত কারিনা কারলিনের স্টেট হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নেই। তবে সেখানেও একটা ছোট্ট শর্ত আছে। সেটা হলো, কারিনার স্টেট হস্তান্তরে তারা প্রতিবাদ করতে পারবে। এ জন্যেই যে কোন পথেই স্টেট হস্তান্তর করতে যাওয়া হোক না কেন, কারিনা কারলিনের দুই মেয়ে ও তার স্বামীকে হাতের মুঠোয় পেতে হবে অবশ্যই। সে চেষ্টাও আমরা করছি। কিন্তু তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কোথাকার কে একজন নকল আহমদ মুসা।’ থামল ব্ল্যাক বার্ড।
নড়েচড়ে বসল গেরারড গারভিন। বলল, ‘স্বীকার করতেই হবে স্যার, আপনাদের এ পর্যন্ত সুসম্পন্ন ৬টি স্টেট দখলের কোনটিতেই এমন উৎকট জটিলতা হয়নি। এক ক্লোনিং কৌশলেই সব সমাধান হয়ে গেছে। থাক, এ…।’
গেরারড গারিভিনের কথার মাঝখানেই ব্ল্যাক বার্ড বলে উঠল, ‘গারভিন, বড় ফল লাভের জন্যে পরিশ্রম বড়ই করতে হয়। কারিনা কারলিন স্টেটের মত অর্থের খনি জার্মানিতে দু’একটির বেশি নেই। সোনার খনি বলেই এটা সহজলভ্য নয়। আমরা পঁচিশ বছর ধরে এই প্রকল্পের পেছনে বিনিয়োগ করছি। স্টেটটি আমাদের দখলে এসে গেছে। এখন আইনি দখল নিশ্চিত করতে পারলেই হয়। আসলে আমরা প্রকল্পটির শেষ পর্যায়ে। বিজয় আমাদের হাতের মুঠোয়। এক্ষেত্রে সকল বাধাই আমরা নিষ্ঠুরভাবে গুঁড়িয়ে দেব। এখন বল, আশু কি করণীয় আমাদের?’
‘ওরা কোথায় যাচ্ছে, ব্রুমসারবার্গে?’ বলল গেরারড গারভিন।
‘হ্যাঁ, ব্রুমসারবার্গেই যাচ্ছে।’ বলল ব্ল্যাক লাইটের অপারেশন চীফ ডরিন ডুগান।
‘এটা একটা বড় প্লাস পয়েন্ট যে, ওদের গন্তব্যটা আমরা জানি। এখন ওদের থাকার জায়গা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তারপর ওখানেই
ওদের কবর রচনা করতে হবে। আমাদের সমস্ত মনোযোগ এখন এদিকে নিবদ্ধ করতে হবে।’ গেরারড গারভিন বলল।
‘হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। এটাই এখনকার আমাদের প্রধান কাজ। কিন্তু বল, এখন আমাদের কি করা উচিত।’ বলল ব্ল্যাক বার্ড।
‘ব্রুমসারবার্গ ও তার আশেপাশের সব বাড়ির উপর নজর রাখতে হবে কোথায় তারা উঠছে তা যেন আমরা জানতে পারি। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, ওদের পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ জন যারা ব্রুমসারবার্গে আছে তাদের সন্ধান করতে হবে এবং তাদের উপর চোখ রাখতে হবে। ওরা ব্রুমসারবার্গে যখন আসছে, তখন পরিচিত জনদের কারো সাথে যোগাযোগ করেই আসবে অথবা এসে যোগাযোগ করবে। সুতরাং এদের উপর নজর রাখলে ওদের খোঁজ পাওয়ার একটা পথ হবে।’ গেরারড গারভিন বলল।
‘ধন্যবাদ গারভিন। ওদের পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ জন তো ব্রুমসারবার্গে আছেই। ওদের ঠিকানা সহজেই পাওয়া যাবে।’ ব্ল্যাক বার্ড বলল।
‘ওদের ঘনিষ্ঠ জন যারা ব্রুমসারবার্গে আছে, তারা সবাই কারিনা কারলিন মানে আমাদের বন্দী ব্রিজিটিরই লোক হবার কথা। সুতরাং এদের সবার সাথে নকল আহমদ মুসার যোগাযোগ অবশ্যই থাকবে না। তবে কার সাথে যোগাযোগ করবে এটা বলা মুস্কিল। সুতরাং পরিচিত জনদের ছোট-বড় কেউ বাদ পড়ছে না, এটা নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ কারও সাথে যদি আপনাদের মানে নকল কারিনা কারলিনের সম্পর্ক ভালো না থাকে, তাহলে তাদের প্রতিই বেশি নজর রাখতে হবে।’ বলল গেরারড গারভিন।
‘ধন্যবাদ গারভিন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছ। তারা এ ধরনের লোকদের সাহায্যের সুযোগ নেবে। আর কিছু কথা গারভিন?’ ব্ল্যাক বার্ড বলল।
‘অবিলম্বে ব্রুমসারবার্গে পর্যাপ্ত লোক মোতায়েন করুন, বিশেষ করে আমাদের নকল কারিনা কারলিনকে এখন সেখানে থাকতে হবে। কারণ সেই ওখানকার সবাইকে চেনে। আমাদের ব্রুমসারবার্গের বর্তমান মিশনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সে ভূমিকা তাকে পালন করতে হবে। সে প্রয়োজনীয় বুদ্ধি ও সহযোগিতা পাবে, কিন্তু তাকেই সামনে থাকতে হবে। | ← Previous | | | Next → | | সম্পুর্ণ বই এক পেজে »